ডেভিলস গার্ল,৫ম পর্ব

0
3219

ডেভিলস গার্ল,৫ম পর্ব
Tasmima Yeasmin

আলোর ছটা চোখে পড়ায় হাসিবের ঘুম ভেঙে গেল। বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। ঘন জংগলের মাঝে তেমন আলোর দেখা নেই কিন্তু কিছুকিছু জায়গায় পাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে তির্যকভাবে আলো এসে ঢুকেছে। আলোর তীব্রতা অনুযায়ী হাসিব বুঝলো সকালের পরও অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। হাসিব সাথে আনা ড্রাইফুড ও পানি খেয়ে নিয়ে আবার হাটা শুরু করলো। শুকনো ডালপালা হাসিবের পায়ের নিচে পড়ে মটমট করে ভাঙছে আর তার শব্দে ও নিজেই মাঝেমাঝে চমকে উঠছে। ওর মনে হচ্ছে কে যেন ওর পিছু নিয়েছে তাই একটু পরপর পিছন ফিরে তাকাচ্ছে। একটু পর নিজেই বুঝলো এ গহীন জংগলে কে নিবে ওর পিছু। হাসিব সারাদিনই হাটতে থাকে। হাটতে হাটতে একেবারে জংগলের শেষ মাথায়। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সামনে একটা ছোট নদী। এবারে নদীটা পাড় হতে হবে। নদীর ওপাশে একটা কুটির। কুটিরের সামনে বোধহয় মোমবাতি বা কুপি বাতির মত কিছু একটা জ্বলছে। আবার আগুনও হতে পারে। দূর থেকে আলোর একটা ক্ষীণ রেখা দেখা যাচ্ছে। হাসিব ভাবছে ওখানে যখন আলো জ্বলছে নিশ্চয়ই ওখানে কেউ থাকে। হয়ত নীলার বাবা মাও থাকতে পারে। এখানে বসে তারা নিশ্চিন্তভাবে নির্দ্বিধায় নিজেদের কাজ চালাতে পারবে। হাসিব ভেবে নিলো সন্ধার পরে ও নদীটা পার হবে। নদীর ওপাড়ে ঘাটের পাশে একটা নৌকা বাধা। সবটুকু আঁধার যখন নেমে এলো হাসিব এবার নদীটা পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। এতক্ষণে নিজের জন্য একটা ভেলা বানিয়ে নিয়েছে। হাসিব স্রোতের দিকেই ভেলাটা ভাসিয়ে নিলো যার ফলে তির্যকভাবে গিয়ে বাড়িটা ছাড়িয়ে আরো অনেকটা দূরে গিয়ে নদীর ওই পাড়ে উঠলো। বেশখানিকটা ভিজে গিয়েছে। বাঁশের ভেলাটা ভাসিয়ে দিলো স্রোতের সাথেসাথেই। এরকম অচেনা অজানা একটা যায়গায় ও একা। তবুও যতটা ভয় লাগার কথা তার অর্ধেকও লাগছে না। হাসিব আন্দাজ করে সেই কুটিরটার দিকে হাঁটা শুরু করে। ছোটছোট ঝোপের মাঝখান দিয়ে হাটার সময় লতাপাতা যেন হাত পা পেঁচিয়ে ধরতে চায়। হাসিব বাড়িটার প্রায় কাছাকাছি এসে পড়ে। ঝোপের আড়াল থেকে দেখতে পায় সেই কুটিরের উঠোন। সেখানে আগুন জ্বলছে। ত্রিভুজাকৃতির মতো একজন লোক ও দুইটি মেয়ে বসে আছে। মেয়ে দুইটা সম্ভবত জমজ কারন একই চেহারা। দুজনার পরনেই টুকটুকে লাল রঙের জামা পড়া। আর পাশের লোকটা হাসিবের দিকে পিছন ফিরে থাকায় হাসিব ওর মুখ দেখতে পাচ্ছেনা। মুখ না দেখলেও হাসিব সিওর এইটাই নীলার বাবা। তিনি উচ্চস্বরে কিছু মন্ত্র পড়ছেন। কিছুক্ষণ মন্ত্র পড়ার পর তিনি কিছু একটা ঐ জমজ মেয়ে দুইটাকে খেতে দিলেন। এরপর তিনি জংগলের দিকে হাটা দিলেন। এবার হাসিব স্পষ্ট দেখলো যে এইটা নীলার বাবা। মেয়ে দুইটা সম্মোহিতের মত তাকে অনুসরণ করছে। আড়াল থেকে হাসিবও নীলার বাবাকে অনুসরণ করতে লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি একটা গাছের সামনে থামলেন। সামনে একটা বিশাল আকারের শয়তানের মূর্তি। মূর্তিটার সামনে একটা বেদী। অদ্ভুত বিষয় হলো সেই মূর্তির একটা মাত্র চোখ। নীলার বাবার হাতের মশালের আলোয় মূর্তিটার চোখের মণিটা আগুনের ফুলকির মত লাল হয়ে জ্বলছে। হাসিব এবার খেয়াল করলো নীলার বাবার কাধে একটা ঝোলার মতো কি যেন আছে। তিনি কি একটা মন্ত্র আওড়াতে আওড়াতে ঝোলা থেকে চাপাতির মত কিছু একটা বের করলেন। এবার তিনি উচ্চস্বরে মন্ত্র পড়া শুরু করলেন। জমজদের ভেতর থেকে একটা মেয়ে এসে নিজেই বেদীতে মাথা পেতে দিলো। সাথে সাথেই নীলার বাবা সেই অস্ত্রটা দিয়ে একটা কোপ দিলেন। একটা ছোট্ট আর্তনাদ করলো মেয়েটা তারপর সব নীরব। হাসিব চিৎকার করতে গিয়ে একটুর জন্য থেমে গেলো। নীলার বাবা ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সেই রক্ত দিয়ে অন্য মেয়েটার কপালে তিলক একেঁ দিলেন। ঝোলা থেকে একঠা সুতলি বের করে সেই তাজা রক্তে ভিজালেন। এরপর সেই সাথে থাকা মেয়েটার হাতে বেধে দিয়ে পথ চলতে শুরু করলেন। হাসিব ভেবেছিলো এই মেয়েটাকেও হয়তো বলি দেবে। হাসিব আবার তাদের অনুসরন করতে শুরু কিরলো। কুটিরের সামনে এসে হাসিব হাসিব দেখলো সেই মেয়েটা আগের মত নেই। হুট করেই যেন চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তবে কপালে বড় করে তিলক আঁকা আছে হাতে সেই সুতলিটা আছে কিনা অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটাকে এখন বাচ্চাদের মত লাগছে। একটুপর ঘর থেকে কে যেন বের হলো। হাসিব চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো এটা তার নীলা। ছয় ছয়টা বছর পর নীলাকে দেখলো হাসিব। এই ছবছরে নীলার একটুও পরিবর্তন হয়নি। সেই আগের মতই সুন্দর। শুধু আগের মত চঞ্চলতাটা নেই। নেই হলুদ ঠোঁটে হাসি। নীলা রোবোটের মত হেটেহেটে তাদের কাছে এসো দাঁড়ালো। এরপর নিচু হয়ে বসে সেই বাচ্চা মেয়েটাকে কোলের মধ্যে টেনে নিলো। একটুপর সেই ঘর থেকে রুহি বের হয়ে এলো। নীলার কোলের মধ্যে থেকে বাচ্চা মেয়েটা মাথা বের করলো। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে মেয়েটাকে এখন ঠিক রুহির মত লাগছে। যেন জমজ রুহি। হাসিবের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা পানির স্রোত নেমে গেল।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here