ডেভিল,18,19 অন্তিম পর্ব

0
816

#ডেভিল,18,19 অন্তিম পর্ব
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
[18]

নেহা ছাদের কার্নিশ ধরে দারিয়ে কখন যে ভোরের আলো অন্ধকারকে ভেদ করে তার মুখে ছিটে আসলো সেদিকে তার খেয়াল নেই।বিষন্ন মনে সে তাকিয়ে আছে রাস্তার পানে।বিবাহের ২য় রজনীতে তাকে এরকম একটি মূহুর্ত পার করতে হবে সেটা ভাবতেও পারেনি নেহা।হাতের পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে নিচে নেমে আসলো।যত্ন করে নীলের জন্য পর পছন্দের লুচি আর খাসির কসা মাংস রান্না করে টিফিনবাক্সে ভরলো।এতো ভোরে তখনো বাইরে কেউ ছিলো না।নেহা তার শ্বশুরের ঘরের দিকে উঁকি দিতেই দেখলো ঘরের দরজা খোলা।তিনি মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছেন।তাদের কিছু না জানিয়েই নেহা রওনা হলো থানার অভিমুখে।

এখন বাজে সকাল ১০ টা।রিক্সা না পাওয়ায় হেটেই চলে এসেছে নেহা।থানায় আসতেই বুকটা কেমন ধুক করে উঠলো।এর আগে কখনো থাকায় আসতে হয়নি।জীবনের প্রথম সে থানায় এসেছে।চোখের নোনা জলের সমুদ্র আঁচল দিয়ে মুছে ভেতরে ঢুকলো।ওসি সাহেব তখন বসে ঝিমাচ্ছেন।নেহা তার সামনে গিয়ে হলা খাকারির শব্দ করে তাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করলো।ওসি সাহেব বিরক্তির চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে বললেন

‘কি সমস্যা? ‘

‘জি আমি এসেছি আমার স্বামীর কাছে,ওনার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছি’

‘কে আপনার স্বামি’

‘ওনার নাম নীল’

ওসি সাহেব একজন হাবিলদারকে বললেন নেহাকে নীলের কাছে নিয়ে যেতে।নীল জেলের আলোআঁধারি ঘরে হাটু মুড়ে বসে আছে।নেহা নীলকে দেখেই হুহু করে কেঁদে ফেললো।নীল চমকে উঠে জেলের রেলিং ধরে দারালো।নেহা নীলের হাত শক্ত করে ধরে অনবরত কেঁদেই চলেছে।

‘এই পাগলি কাঁদছো কেন?এভাবে কেউ কাদে নাকি?’

‘তোমায় এভাবে দেখবো কখনো ভাবতেও পারিনি,আমি তোমার জন্য কিচ্ছু করতে পারছি না’

‘কানা থামাও নেহা,আমার কিচ্ছু হবে না দেখে নিও’

‘তোমার কিচ্ছু হবে না।কিভাবে হয় হোক আমরা তোমায় বেড় করিয়ে নিয়ে যাবোই।তোমায় ছাড়া আমার এক মূহুর্তও বিষের সমতূল্য লাগছে।আমি পারছি না নীল,তোমায় ছাড়া থাকতে পারছি না’

‘তোমার হাতে কি নেহা? ‘

‘তোমার জন্য লুচি আর কসা মাংস নিয়ে এসেছি। তোমার পছন্দের খাবার।তোমার অনেক ক্ষিদে পেয়েছে না?

‘তা তো পেয়েছে একটু একটু’

‘তুমি হা করো আমি খাইয়ে দিই’

নেহা নিজ হাতে খাওয়াচ্ছে,নীল বাধ্য ছেলের খাচ্ছে আর নেহার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘নেহা,রাতপ ঘুমোওনি তাই না?’

‘নিশ্চুপ’

‘দেখো পাগলামি করো না।এরকম করলে তো শরীর খারাপ করবে’

‘করুক,তোমায় ছাড়া এই শরীর দিয়ে আমি করবো টাই বা কি’

ওসি সাহেব কিছুক্ষন পর এসে নেহাকে সময় শপষ বলে যেতে বললে নেহা কাঁদো কাঁদো চোখে নীলের দিকে তাকায়।নীলের চোখ থেকে ২ফোটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।এ যেনো এক স্তব্ধ মুহূর্ত।যেখানে ভালোবাসা অসীম,আছে হারানোর তীব্র ভয়।

নেহা বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলো কেউ একজন বসে আছে।সামনে বসে আছেন তার শ্বশুর।নেহা মাথা নামিয়ে যেতেই তাকে উদ্দেশ্য করে নীলের বাবা বললেন

‘নেহা মা,এদিকে আয় তো,বস এখানে’

নেহা এসে সোফায় বসলো।

‘ইনি হলেন বেরিষ্টার সাজিদ।আমার ছোটো বেলার বন্ধু।নীলের হয়ে এ লেইচ লরবে।তোর থেকে কিছু শুনতে চায়’

‘জি বলুন, ‘

‘আপনি নীলের স্ত্রী? ‘

‘জি’

‘সেদিন সাথে আপনিও ছিলেন তাই না? ‘

‘জি’

‘কি ঘটেছিলো ঘটনাটা বলুন তো।একটা তিল ও যেনো বাদ না পড়ে।’

নেহা সেদিনের ঘটনাটা পুরোটাই বললো।বেরিষ্টার সাজিদ বললেন,

‘সেই ফ্যাক্টরিটার ঠিকানা আমায় মেইল করে দিন’

‘তোর কি মনে হয়? নীল ছাড়া পাবে তো?’নীলের বাবা

‘দেখ এসব একটু ভিন্ন ব্যাপার।খুন যেহেতু হয়েছে সেহেতু বেড় করিয়ে আনা তেমন কিছুই না।মুশকিল হলো যে খুন করেনি তাকে বেড় করা’

‘মানে?’

‘মানে বুঝতে হবে না তোর।কিছু তদন্ত করতে হবে।আজ উঠি।কাল কোর্টে দেখা হবে’

বলে তিনি চলে গেলেন।পরেরদিন সকালে নীলকে আদালতে হাজির করানো হলো।নীলের বিপরীতে থাকা উকিল তার মন্তব্য পেশ করছেন।

‘মহামান্য আদালত, এই যে দারিয়ে আছেন মিঃনীল।যিনি কুকুরের মতো গুকি করে আমার মক্কেল কে গুলি করে।আমার মক্কেল সেই স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এই যে রিপোর্ট।এবং মহামান্য আদালত আমি একজন সাক্ষীকে আনতে চাই’

বিচারপতি অনুমতি প্রদান করলে বিপক্ষে থাকা উকিল কাঠগড়ায় নেহাকে ডাকলেন।নেহা কাঠগড়ায় দারাতেই

‘মিস নেহা,কেমন আছেন? ‘

‘নিশ্চুপ’

‘আপনি তো তখন ওখানেই ছিলেন,যখন মিঃনীল আমার মক্কেল আদনানকে গুকি করে’

নেহা ভয়ার্ত কন্ঠে কাপাকাপা কন্ঠে বললো ‘জি’

‘আপনার চোখের সামনেই তো গুলি করেছে তাই না? ‘

নেহা হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।

‘গুলি করামাত্রই আমার মক্কেল মাটিতে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।এটাও তো আপনার সামনেই ঘটেছে তাই না?

‘জি’

‘মহামান্য আদালত, আমার আর কিছুই জিগ্যেস করার নেই।তার স্ত্রী যেখানে নিজেই স্বীকারোক্তি দিলেন সেখানপ বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকে না যে খুনটা মিঃনীল করেনি।মহামান্য আদালত,এই খুনের তীব্র বিচার আশা করছি।মহামান্য আদালত, মিঃনীলকে ফাঁসির আদেশ দাবী করছি’

বিচারপতি বললেন-

‘সমস্থ সাক্ষ্য,প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আসামী নীল কে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে মৃত্যুদন্ডের…

বিচারপতির কথা শেষ না হতেই নেহা চিৎকার দিয়ে ‘না’ বলেই অজ্ঞান হয়ে কাঠগড়াতেই পড়ে যায়।

চলবে?

#ডেভিল
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

[অন্তিম পর্ব]

বিচারপতির মুখে মৃত্যুদন্ড শব্দটি শুনা মাত্রই নেহা কাঠগড়ায় চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।এদিকে ঘড়ির কাটা টিক টিক শব্দ হচ্ছে। অর্থাৎ আজকের আদালত এই পর্যন্তই।রায় দেওয়া হবে সামনের দিন।নীল বিপরীত কাঠগড়া থেকে লাফ দিয়ে নেহার কাছে আসে।তাকে তিন-চারটা পুলিশ আটকাতে ধরলেও নীল তাদের ঝটকে ফেলে দিয়ে কাড়গড়ার ওপর দিয়ে লাফ দিয়ে নেহার কাছে এসে নেহার মাথা তার কোলে নেয়।

‘নেহা,এই নেহা,কি হয়েছে তোমার? নেহা চোখ খুলছো না কেন? এই নেহা’

সেখানকার কর্মকর্তা জলের বোতল এগিয়ে দিলো।নীল সেই বোতল থেকে জল নেহার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিতেই নেহা পিটপিট করে চোখ মেললো।এটা দেখে নীল ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।তারা এজনই এখন প্রচুর কাঁদছে।

সেদিন রাত ১১ টা বাজে।পুরোনো সেই ফ্যাক্টরিতে তদন্তের জন্য আবারো রওনা হলো সাজিদ।নীলের বিষয়ে সকল প্রমান চাক্ষুষ, যার কারনে সে কিছুই করতে পারেনি।কিন্তু সেও হেরে যাওয়ার পাত্র না।রাত ১২ টা।সে পৌঁছে গেলো পুরনো সেই বিল্ডিংটায় যেখানে নীল খুল করেছিলো।সেখানে নীলকে বাঁচাতে এরকম কোনো তথ্যই সে পেলো না।মুখ গম্ভীর করে যখন ফ্যাক্টরি থেকে বেড় হবে এমন সময় পায়ে লেগে কি যেনো একটা টুংটুং শব্দ করে কংক্রিটের মেঝেতে গড়িয়ে গেলো। টর্চ দিয়ে দেখতেই সে দেখতে পেলো একটি বুলেট।পাশের কাঠের ভাঙা চেয়ারটায় আরো একটি বুলেট পাওয়া গেলো।সেগুলিকে সাথে নিয়ে সে চলে আসলো ওখান থেকে।এই বুলেট হয়তো নীলের হয়ে কিছু বলতে সাহায্যে করবে।

রাতে নীলের সাথে দেখা করার জন্য নেহা,নীলের বাবা অনেক চেষ্টা করলেও দেখা করার কোনো সুযোগ পায়নি।নেহা সারাদিন ঘরে নিজেকে আটকে রাখে।খাওয়া দাওয়া সব একদম বন্ধ। শুধু সে নয়।তাদের পরিবারের কেউ এখন আর স্বাভাবিক নেই।নীলের মা কে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে অজ্ঞান করে।কেননা জেগে থাকলে সে কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এদিকে বেরিষ্টার সাজিদ সেই বুলেট দুটি নিয়ে পরিক্ষা করতে দিলেন।যদি সেখান থেকে কোনো তথ্য বেড়িয়ে আসে,যেটা নীলকে বাঁচাতে পারে।এবং সে রাতেই সে আরো কিছু খোঁজ খবর নেয়।

পরেরদিন কোর্টে নির্ঘুম,তৈলাক্ত,বিষন্ন মুখে নেহা বসে আছে।নীল দারিয়ে আছে অসহায়ের মতো।সাজিদকে দেখে বিপরীতপক্ষ উকিল মুচকে হাসছেন।বিচারপতি আসতেই সবাই দারিয়ে যায়।তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন,”কোর্ট শুরু করা হোক”।সাজিদ বলে উঠলেন-

“মহামান্য আদালত,আমার মক্কেল মিঃনীল।সে পুরোপুরি নির্দোষ” কথাটি শুনে কোর্টে উপস্থিত সবার চেহারা বিগড়ে যায়। নেহা তার আচল দিয়ে মুখ ঢেকে আৎকে উঠলো।নীল একবার অসহায় দৃষ্টিতে সাজিদের দিকে তাকাতেই সাজিদ মুচকি হেসে বিচারপতিকে একটি প্লাস্টিক প্যাকেটে ২টা বুলেট দেখিয়ে বললো-

‘মহামান্য আদালত,এই সেই বুলেট,যেগুলি ব্যাবহার করা হয়েছিলো সেই রাতে।এই বুলেটটি স্পেশালভাবে অ্যামেরিকা থেকে আনা হয়েছে।এই বুলেটটা এমন ভাবে তৈরী যে এটি শরীরে লাগলে সেই জায়গাটা অন্তত কিছুটা কেটে যাবে।কখনোই কোনো ব্যাক্তি মারা যাবে না।বুলেটটির রিপোর্ট আদালতে পেশ করছি’

বিচারপতি রিপোর্টটা হাতে নিলো।বিপরীতপক্ষ বলে উঠলেন,

‘মহামান্য আদালত, এই বিষয়টি নিশ্চিত তা কিভাবে মানবো?হতে পারে বুলেটটা সে নিজেই এনেছে’

‘অবজেকশন মাই লট,আমার বক্তব্যর মাঝে তার কথা বলার কোনো অধিকার নেই’ সাজিদ বললো

‘আপনাকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে।’বিচারপতি কথাটি সাজিদের বিপরীতপক্ষকে বললেন।সাজিদের উদ্দেশ্য বললেন ‘আপনি বলুন’

‘ধন্যবাদ মাই লট।যখন পুলিশ প্রথমে তদন্ত করে তখন যে রিবালবারটা পেয়েছিলো সেটার সাথে এই বুলেটটির পরিক্ষা করে জানা গেছে এই বুলেটটি ওই রিবালবার থেকে ছোড়া হয়েছে’

সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।নেহা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীলের মুখে এখন কিছুটা স্বস্তির আভাস।নীলের বাবা উৎসুক দৃষ্টিতে সব দেখছেন।

‘মাই লট,আমার বিপরীতপক্ষের মতে আদনানের খুনটা হয়েছিলো ১৫ তারিখ।কিন্তু মাই লট আমি যখন খোঁজ নিলাম তখন দেখলাম ১৬ তারিখ মিঃআদনানের নম্বর অনুযায়ী সে তখন ছিলো লন্ডনে।টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারলাম পরেরদিন সকালের ফ্লাইটেই সে চলে গিয়েছিলো লন্ডনে।এই যে রিপোর্ট। ‘ বলেই বিচারপতির নিকট একটি রিপোর্ট পেশ করলো সাজিদ।

‘মহামান্য আদালত,এই উক্ত বিষয়টি সাজানো হয়েছে।সে রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আননান মারা যায় নি।তদন্তে যে পুলিশ গিয়েছিলো তাদের ঘুস দিয়ে এসব চক্রান্ত করা হয়েছে।’

বিচারপতি বিপরীতপক্ষ উকিলকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘আপনার কিছু বলার আছে?’ উত্তরে সে চুপ করে রইলো।বিচারপতি আগের রায়টি কেটে নতুন রায় লিখলেন।বললেন

‘সমস্ত সাক্ষ,অভিযোগের ভিত্তিতে কোর্ট আসামি নীলকে সম্পুর্ন নির্দোষ প্রমান করে বেখাসুর খালাস করছে।সেই সঙ্গে উক্ত তদন্তে যে পুলিশ ছিলো তাদের চাকরি থেকে অবসর করার আদেশ দিচ্ছে।আজকের কোর্ট এই পর্যন্তই’

সাজিদ নীলের কাছে গিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বললো,”কনগ্রাচুলেশনস ইয়ং ম্যান”। নীল কাঠ গড়া থেকে বেড়িয়ে এসে সাজিদের সাথে হ্যান্ডসেক করলো।নেহা দূরে দারিয়ে হুহু করে কেঁদেই চলেছে।আজ তার সুখের কান্না।তার শরীরে যেন প্রান ফিরেছে।নীলের বাবার চোখ থেকেও অনবরত জল ঝরছে।নীল দৌড়ে গিয়ে তাদের জরিয়ে ধরে সে নিজেও খুব কাদলো।আজ তাদের সুখের কান্না।নীলের বাবা ফোন করে সেই খবর সবাইকে দিতে লাগলো।এদিকে নেহার কপালে চুমু একে দিয়ে নীল বললো “আই লাভ ইউ পাগলি,আজ থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করবো,যেখানে থাকবে না কোনো মারামারি, হানাহানি।সারাজীবন তোমার সাথেই থেকে যেতে চাই।উত্তরে নেহা কেঁদে কেঁদে বললো ” আই লাভ ইউ টু পাগল”

একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে নীল এবং নেহা।আনন্দভরা চোখ নিয়ে নীলের বাবা দেখছে।সাজিদ ওদের কাছে এস বললো “ভালোবাসা সুন্দর,অনেক সুন্দর”।

_____________________সমাপ্ত_______________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here