#ডেস্টিনি,পর্ব-১
#tani_tass_ritt
আরহান নিজের পাশে রিশাকে শুয়ে থাকতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকালো। রিশা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। শুধুমাত্র একটা চাদর দিয়ে দিয়ে ঢাকা। পাশের রিশার পরনের শাড়ি পরে আছে।
আরহানে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। তার পড়নের পাঞ্জাবিটাও মেঝেতে পরে আছে।আগা মাথা কোনো কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। প্রচন্ড মাথায় ব্যাথা হচ্ছে। আরহান খেয়াল করলো বাহিরে বেশ চেচামেচি হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ দরজাটা এখন ভেঙে ফেলবে। প্রচন্ড শব্দে আরহানের মাথা ব্যাথাটা যেনো আরো বেড়ে গেলো। আরহান পাঞ্জাবিটা পরে কোনো রকমে উঠে দরজার কাছে গেলো।তার শরীরে যেনো এতোটুকুও শক্তি নেই। দরজা খুলতেই সবাই যেনো হরহর করে রুমে ঢুকে পড়লো। রুমে ঢুকতেই সবাই চমকে গেলো। রিশা তখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
“আমার মেয়ের কি হয়েছে। আমার মেয়ের এই অবস্থা কেনো? ” বলেই আমেনা বেগম রিশার কাছে দৌড়ে গেলেন।মেয়েকে চাদর দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিলেন। রিশা তখনো অবচেতন হয়ে শুয়ে আছে।
সবাই নানান রকম কথা বলছে। কানাঘুষো করছে। এতো সব কিছুর ভিরে আরহানের চোখ গেলো রিদিতার দিকে। পরনে লাল বেনারসি। হাত ভর্তি চুরি। মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। দেখে মনে হচ্ছে কোনো হুর পড়ি।
আরহান রিদিতার সামনে যেতেই কেউ তাকে সজোরে থাপ্পর দিলো। আরহান ব্যালেন্স রাখতে না পেরে মাটিতে পরে গেলো।
রিদিতাএ ভাই রিয়াদ যদি পারতো হয়তো আজ আরহানকে মেরেই ফেলতো। সকলে মিলে রিয়াদ কে থামালো।
রিশা এতোক্ষোনে উঠে পড়েছে। তার এই অবস্থা দেখে সে যেনো কিছু বিশ্বাস করতে পারছেনা। তার মা কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। রিয়াদ সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নিজেও বেড়িয়ে পরলো। আমেনা বেগম তড়িঘড়ি করে রিশাকে জামা পড়িয়ে দিলেন।
রিদিতা এখনো ঠাই সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।সে বুঝতে পারছেনা। সে কি স্বপ্ন দেখছে। নাকি তার সাথে আসলেই এগুলো হচ্ছে। আরহান তাকে বলেছিলো আজ থেকে তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। কিন্তু তাই বলে এভাবে শুরু হবে! রিদিতা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
রিদিতার যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলো সে বিছানায় শুয়ে আছে। পাশেই তার মা বসা। তিনি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন। রিদিতার পরনের লাল শাড়িটি আর নেই। তার পড়নে এখন সুতি ঘরে পড়ার থ্রিপিস টা।
পরোক্ষনেই মনে পরলো রিদিতার সব কিছু। সে দৌড়ে কোনো রকমে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। বেরোতেই সে যেনো আরো ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেলো। আরহান সোফায় বসে আছে। তার পাশে তার ই ছোট বোন রিশা বসা। এবং রিশার পরনে সেই লাল ওরনা। যেই ওরনাটা আরহান তাকে গিফট করেছিলো। যেই ওরনা পরে সে বউ সেজেছিলো।
রিদিতা এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে রিশাকে হেচকা টান দিয়ে উঠালো। রিশা প্রচন্ড ব্যাথা পেলো।
” এই এখানে কি হচ্ছে? তুই আরহানের পাশে বসে আছিস কেনো? আর এই লাল ওরনা তুই পড়েছিস কেনো? খুল বলছি।” বলেই টান দিয়ে ওরনা টা নিয়ে নিলো।
ঘটনা টা এতো জলদি ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারলোনা।
রিদিতা আরহানের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।
“এই তুমি ওর পাশে বসে আছো কেন? আমি তোমার পাশে বসবো। আজ আমাদের বিয়ে। দীর্ঘ পাঁচ বছর অপেক্ষা করে আমি আজ এই দিন এসেছে। তুমি আমায় বিয়ে করবে।তুমি ওর পাশে বসে আছো কেনো?” চিৎকার করতে লাগলো রিদিতা।
সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।রিদিতার এই রুপ যেনো আগে কেউ দেখেনি। রিদিতা শান্ত ঠান্ডা মেয়ে। কেউ যদি ওকে দুটো থাপ্পর ও মেরে চলে যায় মেয়েটা একটা ফোটা আওয়াজ করবেনা।আর আজ সেই মেয়ে পাগলের মতো চিৎকার করছে।
রিদিতা সামনে রাখা ফুলদানি টা আছাড় মেয়ে ভেঙে ফেলো।
“এই তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো। আমাদের বিয়ে দিচ্ছোনা কেনো? আর রিশা তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস এখানে? তোর লজ্জা করেনা? আমার চোখের সামনে থেকে যা বলছি। অসভ্য মেয়ে।”
আরহান ভেবে পাচ্ছে না রিদিতাকে কি বলে সামাল দিবে। কি বললে সে শান্ত হবে। আরহান রিদিতাকে নিজের বুকে টেনে নিলো।মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,” প্লিজ শান্ত হও রিদি। শান্ত হও। তা না হলে তোমার শরীর খারাপ করবে তো। ”
রিদিতা বাচ্চাদের মতো আরহানের বুকে লুটিয়ে পরলো। তখনি রিশা এসে হেচকা টান দিয়ে রিদিতাকে মেঝেতে ফেলে দিলো।
” এই তোর লজ্জা করে না ছোট বোনের স্বামীর বুকে এমন ঝাপিয়ে পড়তে। আরহান এখন আমার স্বামী।আমি ওর স্ত্রী। আমাদের তিনবার কবুল পড়ে বিয়ে হয়েছে।”
রিদিতা যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। রিশার এমন আচরণে উপস্থিত সবাই যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো। আরহান এবং রিশার বিয়ে হলেও সবাই জানে যে কি পরিস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়েছে। যেই মেয়ে একটু আগে বিয়ে করবে না বলবে কাঁদছিলো বিয়ে হতে না হতেই এমন পল্টি খেলো। চারিদিকে আবারো কানাঘুষো শুরু হয়ে গেলো।
রিদিতা উঠে রিশাকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলো। তার মধ্যে যেনো কোনো দানবের শক্তি ভর করেছে। আরহান রিয়াদ কেউ যেনো তাকে আটাকে রাখতে পারছে না। রিদিতা রিশাকে এতো জোড়েই ধাক্কা দিয়েছে যে রিশার মাথা ফেটে গিয়েছে। রক্ত পড়ছে।
আমেনা বেগম মেয়ের মাথার রক্ত আটকানোর জন্য কাপড় বেধে দিলেন।
রিশা আরহানের হাত ধরে বললো,” আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে চলো।আমি আর এক মূহুর্ত ও এখানে থাকবোনা। তুমিতো আমায় ভালোবাসো তাইতো আমাকে বিয়ে করেছো।তা না হলে ঐ রুমে তুমি আমাকে কেনো ডেকে পাঠাতে বলো।”
রিশার কথা শুনে আরহানের মেজাজ আরো বিগ্রে গেলো।এই নিয়ে হাজারবার এই এক কথা বলেছে রিশা। আরহান ছেলে বলে কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না।
আরহান আর এক মূহুর্ত ও দেড়ি না করে সেখান থেকে বেড়িয়ে পরলো। রিশাও তার পিছু পিছু বেড়িয়ে পরলো।
রিদিতা আবারো সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। এই কষ্ট কোনোভাবেই সে নিতে পারছেনা।
★★★★★★★
রিশা রুমে বসে আছে। রুমটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আরহান খুব যত্ন করে সাজিয়েছে রিদিতার জন্য। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যেখানে তার বোনের থাকার কথা আজ সে বসে আছে। ভাবতেই তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো। যেভাবেই বিয়েটা হোক না কেনো। আরহান হয়তো তার বোন কে ঠকিয়েছে।কিন্তু আরহান তো এখন তার স্বামী। এই সত্যিটা তো সে অস্বীকার করতে পারবেনা। এইসব ভাবতে ভাবতেই সে দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেলো। রুমে আবছা আলোয় ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে না। কে রুমে এসেছে। কিন্তু তার হাতে থাকা চাকুটা বেশ ছায়াতে বেশ ভালো করেই দেখা যাচ্ছে। রিদিতার বুক ধক করে উঠলো। তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
চলবে……..