#ডেস্টিনি,পর্ব-২
#tani_tass_ritt
রিশা জোড়ে চিৎকার দিলো। আরহান ড্রয়িং রুমে বসে তার মা বাবার সাথে কথা বলছিলো। রিশার চিৎকার শুনে দ্রুত রুমে ঢুকে লাইট অন করলো। দেখলো নিলয় দাঁড়িয়ে আছে। নিলয় আরহানের ছোট ভাই।
আরহান বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো,”কি হলো এমন চেচাচ্ছ কেনো? ”
রিশা নিলয় দেখে যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।
” আবছা আলোয় নিলয়ের হাতে ছুড়ি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
সবাই এতোক্ষনে নিলয়ের হাতের ছুড়ি টা লক্ষ করলো।
নিলয় হেসে বললো, ” আরে বান্ধুবির থেকে ভাবি হয়ে গিয়েছিস। ভাবলাম একটু দেখা করে আসি। কিছু লাগবে নাকি! তাছাড়া আমি এখন কিচেনে যাবো স্যান্ডুইচ বানাতে। ” বলেই সেখান থেকে হেসে চলে গেলো।
এক এক করে আরহানের বাবা মা ও চলে গেলো।
আরহান দরজা আটকে দিলো। রিশার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে টেবিলের উপর রাখা সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে বারান্দায় যেয়ে বসলো। একের পর এক সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে। কেমন যেনো ওলোট পালোট লাগছে তার সব কিছু।ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু তার ইচ্ছে করছে কাঁদতে। খুব কাঁদতে। কিন্ত পারছেনা। অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে তার বুকে। সে মনে করার চেষ্টা করছে কি হয়েছিলো।
সে তো দিব্বি বর সেজে বসে ছিলো। হঠাৎ এক পিচ্চি একটা চিরকুট হাত গুজে দিয়ে গেলো। চিরকুটে লিখা ছিলো “নিচতালার রুমটাতে একটু আসো। আমি চাই বউ সেজে তুমি ই আমাকে প্রথম দেখো।”
এরপর রুমে যাওয়ার পর রুম বেশ অন্ধকার ছিলো।কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছিলোনা।হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড জোড়ে আঘাত লাগে। এরপর আর কিছু মনে করতে পারছেনা আরহান। কে এই কাজ করলো। আরহান দ্রুত উঠে রুমে গেলো।রিশা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। আরহান হেচকা টান দিয়ে রিশাকে ফেলে দিলো নিচে।
” এই মেয়ে আমার জীবন তছনছ করে তুই এখানে আরামে শুয়ে আছিস? আমার ছোট বোনের মতো দেখতাম তোকে।আর তুই কি করলি আমার জীবনটাই শেষ করে দিলি। তোর জন্য হয়েছে সব কিছু।তুই সব করেছিস।তোর বাবা মা জোড় করে তোর সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে।এই মেয়ে তুই বলতে পারলিনা তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।তুই এমন চুপ করে ছিলি কেনো?” বলেই রিশাকে ঠাস করে থাপ্পর লাগালো। রিশা কেবল ই উঠে দাড়িয়েছিলো।আবারো মেঝেতে পড়ে গেলো।
“আমাকে মেরো না।বিশ্বাস করো আমার কোনো দোষ নেই।আমি জানিনা ঐ রুমে আমি কিভাবে গিয়েছি। এখন তো আমরা স্বামী স্ত্রী বলো। তাহলে কেনো এমন করছো?”
“আরে রাখ তোর স্বামী স্ত্রী।তোর জীবন যদি আমি নরক না বানিয়েছি দেখিস।তুই সব করেছিস। আর এটা আজ হোক কাল হোক আমি প্রমাণ করবো। আমি ও দেখবো তোর #ডেস্টিনি তোকে কোথায় নিয়ে যায়।”
বলেই আরহান রিশাকে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে দিলো। আরহান দরজা বন্ধ করে দিলো।
রিশা নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই কেউ তাকে ধরে ফেললো। রিশা খেয়াল করলো নিলয়। নিলয়ের চোখ দেখে সে ভয় পেয়ে গেলো।লাল রক্ত বর্ণ জমে আছে। নিলয় কোনো কিছুই না বলে রিশাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
★★★★★★★
এইদিকে রিদিতা কতবার সেন্সলেস হয়েছে হিসেব নেই। শুধু আরহান আরহান করে প্রলাপ করছে। মেয়েটাকে দেখে হয়তো শত্রুর মন ও গলে যাবে। রিদিতার বাবা মায়ের ও যে কিছু করার ছিলোনা। ছোট মেয়ের সম্মান বাচাতে বড় মেয়েকে বলির পাঠা করলো।
★★★★★★★
রিশা নিলয়ের বিছানায় বসে আছে। ড্রয়ের থেকে ফার্স্টেএইড বক্স বের করে রিশার যেসব জায়গায় কেটে গিয়েছে তাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। আর তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
নিলয় ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলো, ” তুই আরহানকে ভাইকে বিয়ে কেনো করলি?”
নিলয়ের এমন প্রশ্নে রিশা ভরকে গেলো।
“কি বলছিস তুই? তুই তো সবই জানিস। ”
“আসলেই কি আমি সবটা জানি? ” বলেই নিলয় রিশার দিকে তাকালো। নিলয়ের চাহনির মধ্যেই কি যেনো একটা লুকিয়ে আছে। রিশার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো।
নিলয় এক ঝটকায় রিশাকে নিজের বুকে টেনে নিলো। ” “দেখতো কিছু শুনতে পাশ নাকি?”
ঘটনা টা এতোটাই আচমকা ঘটলো যে সে ভেবে পেলো না কি করবে।
নিলয় রিশাকে আবারো বললো,” কি রে কি শুনতে পাশ বল। তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না আমার ভেতরটা ভাঙার আওয়াজ? নাকি শুনেও না শুনার ভান করে আছসি?”
রিশা নিলয়কে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত চলে গেলো। নিলয় সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো।
নিলয় পাগলের মতো হাসছে। এবং বিড়বিড় করে বলছে,
” রিশা আমি তোর জন্য কাউকে মারতেও পারি আর নিজেও মরতে পারি। লাগলে তোকেও মেরে ফেলতে পারি। ”
নিলয় আর নিজেকে সামাল দিতে পারলো না। ঘরের সব কিছু ওলোট পালোট করে ফেললো।
এইদিকে রিশা ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো আরহানের রুমের দরজার সামনে। নিজের মনের আগুন নিভাতে গিয়ে সে তো নিজেকে পুরো আগুনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দেখাযাক সে যে আগুনের খেলায় মেতে উঠেছে এই খেলা তাকে কোথায় নিয়ে দাড় করায়।
রিশা দরজা ধাক্কাতে লাগে। কিন্তু আরহান দরজা খুলছে না। রিশার দরজাটা ভেঙে ফেলতে মন চাচ্ছে। সে আরো জোড়ে জোড়ে ধাক্কাতে লাগে। একটা সময় আরহান আর থাকতে না পেরে দরজা টা খুলে দেয়। আরহানকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিশা হনহন করে রুমে চলে যায়। ব্যাগ থেকে টিশার্ট আর প্লাজো বের করে শাওয়ার নিতে চলে যায়।
প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর রিশা বেরিয়ে এলো। ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করলো। কি জানি একটা হাতে নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেলো। আরহান দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলো।যা ইচ্ছে করুক গিয়ে৷ আরহানের তো মন চাচ্ছে রিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। একবার চিন্তাও করলো।কিন্তু কার্যকর করতে পারলো না।কেনোনা আর যাই হোক এতো বড় অমানুষ সে না।
রিশা দোলনায় বসেই গা এলিয়ে দিলে।সে বড্ড ক্লান্ত। চোখে রাজ্যের ঘুম।কিন্তু ঘুমোতে পারছে না। রিশা হাতে থাকা ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অঝোরে তার গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
চলবে……