#ডেস্টিনি,Part-5 ( last part)
#tani_tass_ritt
আরহানের হসপিটালে পৌছোতে ৮ টা বেজে গেলো আরহান সব শুনে বেশ শক খেয়েছে।তার এতো আদরের ছোট ভাই এতো জঘন্য কাজ করেছে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
এতোক্ষণে রিশার জ্ঞান ফিরেছে। রিদিতা এবং তার মা রিশার পাশে বসে আছে।বাকি সবাই বাহিরে। আরহান সোজা কেবিনে ঢুকে গেলো। রিশাকে দেখে তার বড্ড খারাপ লাগছে। আরহান কে দেখেই রিদিতা উঠে দাড়ালো। তারপর আর মাকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। আরহান রিশার পাশে যেয়ে বসলো। রিশা একবার ও আরহানের দিকে তাকালো না। আরহান রিশার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
” এই বাচ্চা খুব কষ্ট হচ্ছে?” আরহান রিশাকে সব সময় বাচ্চা বলেই ডাকতো।
আরহানের মুখে বাচ্চা ডাক শুনে রিশা আরহান কে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে। আরহানের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। আল্লাহ তাকে এই কোন অবস্থায় ফেললো। সে গিয়েছিলো ডিভোর্সের কাগজ রেডি করতে।আর এখন কি হয়ে গেলো।
রিশা অনেক কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলোনা। কাঁদতে কাঁদতে আবার সেন্সলেস হয়ে গেলো। ডক্টর এসে আবার চেকাপ করলো।
আরহান কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখলো রিদিতা চুপ করে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। আরহান রিদিতার কাছে গেলো। কিন্তু কি বলবে বুঝতে পারলোনা।
রিদিতা নিজ থেকেই বললো,” তোমার ভাই আমার বোনের এই অবস্থা করেছে। তোমার ভাইকে আমি পুলিশে দিবো।”
নিলয়ের কথা বলতেই আরহানের টনক নরলোম চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো নিলয় নেই। আরহান নিলয়কে ফোন দিলো কিন্তু পেলোনা।
রিদিতা আবারো বললো,”কই তোমার ভাই? নিশ্চই পুলিশের ভয়ে পালিয়েছে।”
রিদিতাকে কিছু বলতে যেয়েও আরহান চুপ করে গেলো।কেনোনা আরহান খুব ভালো করেই জানে নিলয় আর যাই হোক পালিয়ে যাবার ছেলে নয়।
আরহান তার বাবার কাছে যেয়ে নিলয়ের কথা জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু তারাও কিছু জানেনা। আরহান ভাবলো তারা বাবা মা কে বাসায় রেখে এসে নিলয়কে খুঁজতে বেরোবে। তারা বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো।
বাসায় যেতেই তারা বড়সড় ধাক্কা খেলো। ভিতর থেকে লক করা কিন্তু কেউ দরজা খুলছেনা। আরহানের বুকে চাপ দিয়ে উঠলো। সে জলদি করে তার কাছে এক্সট্রা রাখা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ফেললো।
“নিলয়! নিলয়। এই নিলয়?”
নিলয়ের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে তারা বেশ ভয় পেয়ে গেলো।
আরহান নিলয়ের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।
নিলয় ফ্যানের সাথে ঝুলছে। ছেলের এই অবস্থা দেখে ফারজানা বেগম চিৎকার দিলেন। আরহান এবং তার বাবা মিলে দ্রুত নিলয় কে নামালেন। কিন্তু বেশ দেড়ি হয়ে গিয়েছে। আরহান খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো তার ভাই এই দুনিয়াতে আর নেই। আরহান কেনো যেনো কাঁদতে পারছেনা। কথায় আছেনা অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়। আরহানেরও একই অবস্থা হয়েছে। টেবিলের উপর চোখ পড়তেই আরহান একটি কাগজ দেখতে পেলো। লেখাটা পড়ে আরহান সব বুঝতে পারলো। তার জন্য সবকিছু যেনো বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
১ মাস পর
সবকিছু এখন কিছুটা স্বাভাবিক। রিদিতা দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কথা ছিলো আরহান আর রিদিতা একসাথে যাবে বিয়ের পর। কিন্ত ভাগ্য হয়তো অন্য কিছুই লিখে রেখেছে।
রিশা চিঠিটা পড়ার পর থেকে কারোসাথে আর কোনো কথা বলেনে। কেউ তাকে কিছু বলতে বাধ্য ও করেনি। ডক্তর বলেছে রিশাকে হাশিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে।
রিশা এখন ওর বাপের বাড়িতেই আছে৷ আরহান এর মাঝে বেশ কয়েকবার এসে তাকে দেখে গিয়েছে। রিশা কোনো কথা বলেনি। শুধু চোখ দিয়ে পানি পরেছে। হয়তো সে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত৷
রিদিতার ফ্লাইটের ডেট প্রায় চলে এসেছে৷ আরহান এর মধ্যে অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলার। কিন্তু রিদিতা বলেনি। কি করেই বা বলবে! সে খুব ভালো করেই জানে তার বোন অপরাধ করেছে। কিন্তু সেটার শাস্তি ও তো সে পেয়ে গিয়েছে। হয়তো এটাই ভাগ্যে ছিলো। হয়তো আরহান কোনোদিন তার ভাগ্যে ছিলোই না। এইসব ভাবতে ভাবতেও রিদিতা ব্যাগ গোছাচ্ছিলো। হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো রিশা দাঁড়িয়ে আছে।
” আপি আসতে পারি? ”
অনেকদিন পর রিশার মুখে আপি ডাক টা শুনে রিদিতার চোখে পানি চলে এলো। ঐ ঘটনার পর তো রিশার সাথে তার আর কথাই হয়নি।
“আমার রুমে আসার জন্য আবার পারমিশন চাচ্ছিস যে! আয় আয়।”
রিশা রুমে এসে চুপ করর খাটের এক কোণায় বসলো। কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলোনা। রিদিতা নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করলো, “কিছু বলবি?”
” আপু আসলে আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দে। তুই বিদেশ যাস না। আমি সব ঠিক করে দিবো।”
রিদিতা রিশার পাশে এসে বসলো।
” যা হবার হয়েছে। এটা নিয়ে এখন কিছু বলে লাভ নেই।”
” কেনো লাভ নেই। অবশ্যই লাভ আছে। আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ঐদিন হরতালের মধ্যে তুই শুভ্রকে নিয়ে বেরিয়েছিস বলেই ও আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমি কোনোভাবেই শুভ্রেই মৃত্যুটাকে মানতে পারছিলাম না। কিন্তু নিলয়ের চিঠি পড়ে…. ”
আর কিছু বলতে পারলোনা রিশা। রিদিতাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ফেললো।
রিদিতা চুপ করে রইলো। কি বলবে সে! এখানে কি ই বা বলার আছে। যেভাবেই হোক আরহান এবং রিশার বিয়েটা তো আর মিথ্যে না। এখন সে যদি সেল্ফিশের মতো রিশা এবং আরহানের মাঝে চলে আসে তাহলে তো রিশার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে৷ কিন্তু আরহানকে সে কি করে ভুলে যাবে৷ আরহান যে তার ভালোবাসা। ভালোবাসা যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই সে আরহানকে ভালোবাসে৷ তাদের এতো দিনের ভালোবাসাটাও যে মিথ্যে না। কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা রিদিতা।
★★★★★★★★
আরহান ৩০ মিনিট ধরে একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে। সময় যেনো যাচ্ছেই না। এতোদিন পর রিদিতার সাথে তার কথা হবে সেই খুশিতেই আরহান একটু আগে আগে চলে এসেছে৷ কেনোনা দেখা প্রতিদিন হলেও কথা হয়না। কথা হয়না বললে ভুল হবে। আরহান কথা বলতে চাইলেও রিদিতা বলে না। এইসব ভাবতে ভাবতে রিদিতা এসে পরলো।
দুজনেই চুপ করে বসে আছে। কেউ কোনো সাউন্ড করছেনা। এমনকি পুরো রেস্টুরেন্টেও কেউ নেই। আরহান আগে থেকেই পুরোটা বুক করে রেখেছে।
রিদিতা আরহানের দিকে না তাকিয়েই বললো,”কি বলবে? জলদি বলো।আমার আর দুদিন পর ফ্লাইট। অনেক কাজ আছে।”
আরহান দু হাটু তে ভর করে রিদিতার সামনে যেয়ে বসলো। রিদিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। রিদিতা হাত সরানোর চেষ্টা করেও পারলোনা। আরহানের শক্তির সাথে পেরে উঠলোনা।
” রিদিতা আর কি কোনো রাস্তা নেই আমাদের এক হওয়ার? তুমি বুঝতে চেষ্টা করো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি মনে প্রাণে তোমাকেই স্ত্রী হিসেবে মেনেছি। আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ঐ জায়গা দিতে পারবোনা। ”
রিদিতা ঠোঁটে ঠোঁট কাঁমড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। তাকে কোনোভাবেই দুর্বল হলে হবেনা।
” দেখো আরহান আমার হাত টা ছাড়ো । তুমি ভুলে গেলেও আমি ভুলে যাইনি তুমি আমার ছোট বোনের স্বামী।আর আমি তোমার প্রাক্তন। তোমার অতীত। তোমার বর্তমান রিশা। ওকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করো। মানুষ পারেনা এমিন কোনো কিছুই নেই। ”
বলেই হাত টা ছাড়িয়ে নিলো।
আরহান আবারো হাত ধরে ফেললো।
” আর আমার ভালোবাসা কিছুইনা? তোমার বোন যে আমার জীবনটা শেষ করলো তার বেলায় কিছুনা? তুমি পারবে আমাকে ভুলতে? অন্য কাউকে বিয়ে করতে?”
” তোমার ছোট ভাইও আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করেছে। এটা ভুলে যেও না। রিশা অনেক ভালো মেয়ে। হ্যা আমি মানি ও আমার উপর রিভেঞ্জ নিতে গিয়ে সবার জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। কিন্তু ও নিজেও তো খুশি নেই। তুমি প্লিজ ওকে এক্সেপ্ট করে নাও। ”
আরহান তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,” আমি কিন্তু এখনো আমার উত্তর পেলাম না।তুমি কি পারবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে?অন্য কারো সংসার করতে?”
রিদিতা উঠে দাড়ালো। এবং সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। এই উত্তর দেওয়া যে তার পক্ষে সম্ভব না। যেই মানুষটাকে ছাড়া তার দম বন্ধ হয়ে আসে। সেই মানুষটার জায়গায় অন্য কারো কথা কিভাবে ভাবতে পারবে সে!
৬ মাস পর…….
রিদিতা কানাডাতে একাই থাকে একটি ফ্ল্যাটে। প্রতিটা দিন যেনো তার বছরের সমান মনে হয়। এর মাঝে রিশা এবং তার মা বাবার সাথে কথা হলেও আরহানের সাথে কথা হয়নি। কথা বলার চেষ্টা করেও নি।
হঠাৎ কলিং বেইলের আওয়াজ পায় রিদিতা। এই রাতে তো কারো আসার কথা না। কে আবার এলো এখন। এই সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রিদিতা দরজা খুলে যেনো ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খায়। তার সামনে আরহান দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না। সে ভুল দেখছে না ঠিক দেখছে।
আরহান ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,” বাহ বেশ সুন্দর তো বাসা টা। ভালোই সাজিয়েছো। ” বলেই সোফাতে গা এলিয়ে দিলো।
রিদিতা আরহানের দিকে বড়বড় করে তাকিয়ে আছে৷ এখনোনি বুঝি চোখ খুলে এসে পড়বে।
” ওমা ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আমাকে কি এর আগে দেখোনি?নাকি আমি এতো হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছি যে চোখ ই ফেরাতে পারছো না। ” বলেই চোখ টিপ দিলো।
রিদিতা পুরো বেকুব হয়ে গেলো।
“তুমি এখানে কিভাবে এলে?”
” এইতো রিকশা দিয়ে চলে এলাম।”
” এইসব কি বলছো?”
আরহান তার ব্যাগ থেকে একটি খাম বের করে রিদিতার হাতে দিলো।
” এই নাও এটা তোমার জন্য।”
বলেই সোজা রিদিতার রুমে ঢুকে গেলো।
।রিদিতা খাম টা ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। খামটা খুলে দেখলো একটি চিঠি।
প্রিয় আপি,
তোমার আমানত আমি তোমার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি। তুমি ঠিক ই বলেছিলে বিয়ে কোনো ছেলেখেলা না। আসলেই তো। আমরা কি করে একটা সম্পর্কে থাকতে পারি যেখানে কেউ কাউকে ভালোবাসি না। আদৌ ভালোবাসা হবে নাকি তাও জানিনা। আর সে আমার সাথে থাকবে শুধু মাত্র দায়িত্ববোধ থেকে। কেনোনা তার ভাইয়ের দোষ হয়তো সে সারা জীবন বয়ে বেড়াবে৷ যেটা আমি কখনোই চাইনা।আমি আরহান ভাইয়াকে জোর করে বিয়ে করেছিলাম। এখানে তো ভাইয়ার কোনো দোষ নেই। তাহলে কেনো সে নিজের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। সবার ই তো নিজের জীবনে সুখি হওয়ার অধিকার আছে। আর আমি যেমন তোর জীবনটা নষ্ট করেছিলাম। আমি ই আবার তোর জীবনটা গুছিয়ে দিবো। আমাদের ডিভোর্সের প্রসেসিং তু যাওয়ার পএ পর ই শুরু হয়ে গিয়েছে।আমরা দুজনেই সাইন করে দিয়েছি। এখন তুই আরহান ভাইয়াকে মেনে নে প্লিজ। আর জিদ করিস না। বিশ্বাস কর আমি আরহান ভাইয়ার সাথে কোনো দিন ও সুখী হতে পারবোনা। আমার গিল্ট আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। তোরা তোদের নতুন জীবন শুরু কর প্লিজ।
আর একটা কথা। তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস। আমি প্রেগন্যান্ট। জানি তুই রাগ করবি এতোদিন কেনো বলিনি। তুই যাওয়ার কদিন পর ই জানতে পারি। বাচ্চাটা নিলয়ের হলেও আমি ওকে নিজের পরিচয়ে বড় করবো। এই বাচ্চা নিয়েই আমি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। আমাকে আমার জীবন টা আমার মতো করে গোছাতে দে। তোরাও তোদের মতো ভালো থাক। আমি জোর করে আর কোনো সম্পর্ক বয়ে বেড়াতে পারবো না আপি। প্লিজ আপি আমার রিকোয়েস্ট টা রাখ। হয়তো এটাই আমাদের #ডেস্টিনি”।
★★★★
আরহান গোসল করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে সিগারেট। আরেক হাতে ফোন। মাত্রই রিশার সাথে কথা হলো তার।
রিদিতা রুমে এসে দেখলো আরহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সে আর এক মূহুর্ত ও দেড়ি করলো না। আরহানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আরহান চোখ বন্ধ করে ফেললো। দুজনের চোখ ই ভেজা। এতোদিন পর যেনো সে অদ্ভুত এক শান্তি পাচ্ছে। দুজনেই নিশ্চুপ। হয়তো এই নিশ্চুপের মধ্য দিয়েই তারা তাদের সব কথা বলে ফেলছে।
সমাপ্তি।
( কেমন হয়েছে জানাবেন।)