তবু মনে রেখো ১৩,১৪

0
388

তবু মনে রেখো ১৩,১৪
লেখা: জবরুল ইসলাম
(১৩ পর্ব)
.
পুষ্পিতা করপুটে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে যায়। কনুই দুই হাঁটুতে ঠেকানো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খোঁপা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইমাদ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, বিরক্ত ছিল। পুষ্পিতা পাশে এসে বসায়, একবার তাকালো ওর দিকে। কিছুই বললো না সে। পুষ্পিতা খানিক পর হাত সরিয়ে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘তুমি আসলেই কিছু জানতে না?’

ইমাদও আরও খানিকটা বিরক্ত হলো।

– ‘পুষ্পিতা এই বিষয়টা নিয়ে এভাবে কথাই বা বলছো কিভাবে আমি বুঝতে পারছি না। আমি কি কখনও এগুলো চেয়েছি? তোমাকে কি আমি কখনও এগুলোর ইঙ্গিত করেছি? তাহলে আন্টি কিভাবে এগুলো বললেন? উনার মাথায় কেন এলো আমাকে এগুলো দিলে সুখে রাখবো। তাছাড়া বললেন কিভাবে যা চাই তা পাব। শুধু তোমাকে সুখে রাখতে হবে। এসবের মানে কী!’

পুষ্পিতার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। সত্যিই যদি ইমাদ এগুলো না জেনে থাকে। তাহলে বড়োই অন্যায় করা হয়েছে। আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘আমি তো জানি না।’

ইমাদ খানিক ভেবে বললো,

– ‘তুমি নিশ্চয় কিছু বলেছো, না হলে ওরা কেন এগুলো ভাববে।’

পুষ্পিতা আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘আসলে আড়াই দিন পর আমরা যখন বেড়াতে গিয়েছিলাম, মা কেন যেন অদ্ভুত সব কথা বলতে শুরু করেছিলেন। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করছিলেন। একপর্যায়ে বললেন নাতি-নাতনিদের কথা। এরপরই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বলে দিয়েছিলাম আমাদের মাঝে সেরকম কোনো সম্পর্ক নেই। আলাদা বিছানায় থাকি।’

ইমাদের রাগে-অপমানে চোখে জল চলে এসেছে। ওরা ভেবেছিল পুষ্পিতাকে সে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি৷ তাই মন-ভোলানোর জন্য এগুলো দিতে চেয়েছে। তার বাবাও সেগুলো মৌখিকভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন৷ আর সে যখন পুষ্পিতার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মিশেছিল। সবাই তখন ভুল বুঝেছে। কাকতালীয় তার অজান্তেই এত ঘটনা ঘটে গেল৷ ইমাদ দুইহাত মাথার নিচে রেখে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ে। খানিক পর পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল দেয় তার বাবাকে, দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হয়।

– ‘হ্যালো।’

– ‘হ্যাঁ ইমাদ তোমরা কি চলে গেছো বাবা।’

তার শরীর রীতিমতো কাঁপছে। ইমাদ খানিক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

– ‘বাবা, তুমি আমার সঙ্গে এমন করলে কেন?’

হায়দার সাহেব অবাক হয়ে বললেন,

– ‘কি হয়েছে বাবা? তোমার কথা এরকম শোনা যাচ্ছে কেন?’

ভেতর থেকে গুলিয়ে আসা কান্না আঁটকে ইমাদ বললো,

– ‘বাবা, আমি বাড়ি ফেরার আগে তুমি একটা কাজ করতে হবে।’

– ‘কি?’

– ‘পুষ্পিতাদের সকল আসবাবপত্র ফিরিয়ে দিতে হবে।’

পুষ্পিতা বিস্ফোরিত চোখে ইমাদের দিকে তাকায়। হায়দার সাহেব ফোনের ওপাশ থেকে অবাক হয়ে বললেন,

– ‘কি বলো এসব? কি হয়েছে? পুষ্পিতা মায়ের সাথে কি কোনো ঝগড়া হইছে?’

– ‘কিছুই হয়নি বাবা, তুমি আমাকে আর কত ছোটো বানাবে? তোমার কথা কবে আমি শুনিনি? সব কথাই মেনে চলেছি। তাই বলে আমার স্ত্রী, শ্বশুরবাড়িতে আমাকে এভাবে ছোটলোক বানাবে তুমি।’

হায়দার সাহেব অবাক হয়ে বললেন,

– ‘কি বলো এসব? হয়েছে কি?’

– ‘তোমার কথা শুনে শুনে আমার কি সর্বনাশ হতে চলেছিল৷ যাইহোক এগুলো বলতে চাই না৷ আমি ফেরার আগেই চাই সবকিছু ফেরত পাঠাও।’

– ‘মাতব্বরি করবে না ইমাদ। যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলো না। তুমি আমাকে হুকুম দিচ্ছ আজ তাই না?’

– ‘বাবা আমি হুকুম দিচ্ছি না। তোমার কথায় তো আমি বিয়েও করেছি। আসবাবপত্র তোমার সঙ্গে কথা বলেই দিয়েছে ওরা। তাই তোমাকে ফের‍ত পাঠিয়ে দিতে বলেছি।’

– ‘তুমি আমার কথা শুনে বিয়ে করেছো, তাই না? লম্পট কোথাকার, তুমি ওকে পছন্দ করতে তাই তোমার দিকে চেয়েই বউ করে এনেছি৷ বউ পেয়ে তুমি আসমানের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হয়েছো। এখন বলছো আমার কথায় রাজি হয়েছো। আমি যে বাবা হয়ে তোমার জন্য এই মেয়েকে গ্রহণ করেছি এটাই তো অনেক। কোনো বাবা আছে এমন ঘটনার পর এই মেয়েকে বউ করে মেনে নিবে? আমি কেন এনেছি, তোমার জন্যই৷’

ইমাদ খানিক নিভে গেল৷ তবুও জোর দিয়ে বললো,

– ‘বাবা এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না৷ বিয়ে হয়ে গেছে শেষ। তুমি এসব ফেরত পাঠাও।’

– ‘চুপ বেয়াদব, এগুলো ফেরত পাঠাও৷ কোথাও দেখেছিস এগুলো না দিতে? আর এখন বাড়ি থেকে এসব ফেরত পাঠালে মানুষ কি বলবে? আর তোমার বউয়ের কি ইজ্জত থাকবে? শ্বশুরবাড়ির মান-ইজ্জত থাকবে। লোকে শুনলে ভাববে ঝামেলা হয়েছে৷ এখন মাতব্বরি না করে বলো কি হয়েছে৷ ঝগড়া হলে আমরা আছি শেষ করে দেয়া যাবে৷ তাই বলে মাল ফেরত পাঠিয়ে দিতে হবে এটা কেমন কথা?’

ইমাদ আর কোনো কথা না বলে ফোন রেখে দিল। পুষ্পিতার ভয় ভয় করছে। সে ফোনের ওপাশের কথআ কিছুই শুনতে পায়নি। তবুও বুঝতে পারছে ইমাদ রেগে আছে৷ আসবাবপত্র সব ফেরত পাঠাতে বলছে। এত শান্তশিষ্ট একটা মানুষ এরকম রেগে গেল কিভাবে! পুষ্পিতা দুরুদুরু বুকে একটা বালিশ নিয়ে এসে ইমাদের মাথার নিচে রাখে। ইমাদ বিছানা থেকে লাল পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকেই চোখ স্থির রেখে বললো,

– ‘পুষ্পিতা, আমি জানি আসবাবপত্র এখন ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না৷ তাই সেগুলো নিয়ে আর কিছু বলছি না৷ তবে এই বাসা আমার নামে লিখে দেওয়া, ইতালি পাঠানোর আলাপ এবং জমি যা কিনেছিলেন আঙ্কেল সেগুলো কাগজ করে না আনা। এর কোনোকিছুই যেন না হয়। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি, বিক্রি বসার ইচ্ছা আমার নেই।’

পুষ্পিতা শঙ্কিত গলায় বললো,

– ‘স্যরি, আম্মুর এভাবে বলাটা হয়তো ঠিক হয়নি।’

– ‘এভাবে-ওভাবে যেভাবেই হোক। আমাকে তোমরা লোভী ভেবেছো। এটা বুঝতে আমার আর বাকি নেই।’

– ‘কি যে বলো লোভী ভাববো কেন।’

– ‘শোনো পুষ্পিতা, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার কথা বলতেই লজ্জা লাগছে। আর তোমারা ভেবেছো এসব পেয়ে আমি খুবই খুশি হয়েছি। দয়া করে এই বিষয়ে আলাপচারিতা বন্ধ করবে। আঙ্কেলকেও তুমি বলে দিয়ো। আর ওরা তো তোমাকে সুখী দেখতে চায়। তুমি কিভাবে সুখে থাকবে জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সুখে রাখার৷’

পুষ্পিতা আমতা-আমতা করে বলল,

– ‘একটা প্রশ্নের জবাব দেবে?’

– ‘কি?’

– ‘ওইদিন বাবা আঙ্কেলকে এসব বললেন। উনি বাজারে গিয়ে তোমাকে পাঠালেন। তখন যদি সবকিছু তুমি না জেনেই থাকো। ওইদিনের পর থেকে পালটে গেলে কেন?’

ইমাদ অতি শোকে মলিন মুখে হেঁসে বললো,

– ‘তুমি ভেবেছিলে এসবের লোভে পালটে গিয়েছিলাম? যাইহোক তোমার কোনো দোষ নেই। আমার কপালেই এগুলো ছিল।’

পুষ্পিতা ওর মাথায় হাত রেখে বললো,

– ‘স্যরি, আসলে আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। তুমি হয়তো শুরুর দিকে আমার পালিয়ে যাওয়ার জন্য মানতে পারোনি। শেষে ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছিলে। আমিই ভুল বুঝেছিলাম।’

বাবার কথা সে বলতে চাইল না আর পুষ্পিতাকে। কিন্তু বাবার তার প্রতি প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে৷ পুষ্পিতার সঙ্গে তার বিয়ে দেয়ায় সে খুশি হয়েছিল। মনে হচ্ছিল উনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। ইমাও শুরুতে মানেনি। বলেছিল এরকম ঘটনার পর বিয়ে করালে এলাকায় চলাফেরা করবে কিভাবে। বাবা তাকে ধমক দিয়ে বন্ধ করেছিলেন। শেষে ইমাও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। আত্মীয়-স্বজন সহ এলাকার মানুষ নানান কথা বলেছিল। বাবা নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। মামা-খালাকে রীতিমতো তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বারবার মনে হয়েছে বাবা বটবৃক্ষের মতো তাকে ছায়া দিচ্ছেন৷ আকাশ থেকে ছিনিয়ে এনে দিচ্ছেন পূর্ণিমার চাঁদ। উনি ছাড়া এতকিছু সম্ভব হতো না। ইমাদের এসব দেখে শ্রদ্ধা, ভক্তি বেড়ে পাহাড় সমান হয়ে গিয়েছিল। উনার কথা মানেই মনে হয়েছিল ঐশ্বরিক বাণী৷ যাই বলেছেন, মনে হয়েছে তাতে অবশ্যই কোনো মঙ্গল আছে। কিন্তু আজ সে ভেবেই পাচ্ছে না উনি কেন পুষ্পিতাকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে না করেছিলেন। আর কেন সেদিন নিজেই আবার বলেছিলেন এখন থেকে পুষ্পিতার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে। উনি এটাও বলেছিলেন, বড়োলোকের মেয়ে, একটু গরম থাকতে বলেছি না হলে দাম পেতে না। এখন ওরা বুঝেছে জামাই গরিব হলেও নরম না। যা ইচ্ছা বলা যাবে না। বাবার এই ব্যখ্যা নিয়ে তার মনে এখন ক্ষীণ সন্দেহ আছে। উনি হয়তো এই বাসা, আসবাবপত্র, জমি-জমার জন্যই সেদিন খুশি হয়ে বলেছিল কথাটা। ইমাদ পরক্ষণেই আবার নিজের পিতাকে নিয়ে এসব বাবার কারণে মনে মনে শাসিয়ে অন্যকিছু ভাবতে চেষ্টা করলো। পুষ্পিতা তার মাথায় এখন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এটা কি শুধু একজন রাগান্বিত পুরুষকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য? গতরাতে পুষ্পিতার মুখের সেই অভিব্যক্তি তার এখনও মনে আছে। ইমাদ চোখ মেলে পুষ্পিতার দিকে তাকায়। মুখটা লাল হয়ে আছে ওর। ভীষণ আদর করতে ইচ্ছা করে তার। পুষ্পিতা তার গালে হাত দিয়ে বললো,

– ‘এভাবে তাকাচ্ছো কেন?’

– ‘এমনিই।’

পুষ্পিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

– ‘আচ্ছা যদি তোমার কোনো কিছুর প্রতি লোভই না থাকে। তাহলে কেন বিয়ে করলে? আঙ্কেলের চাপে?’

– ‘এগুলোর উত্তর দিয়েছিলাম তো।’

– ‘না ইমাদ, তখন আমি এভাবে বুঝিনি, এখন আবার হলো।’

পুষ্পিতার মুখে নিজের নাম শুনে তার মনটা ভালো হয়ে গেল। ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘বাবার চাপে না।’

পুষ্পিতা ধরা গলায় বললো,

– ‘তোমার মা-খালাও তো আমাকে চ*রিত্রহীন বলে গেছেন। তাহলে তুমি কেন আমাকে গ্রহণ করলে?’

– ‘এটাও বলেছিলাম।’

– ‘আবার বলো প্লিজ।’

মুচকি হাসলো ইমাদ। তারপর বললো,

– ‘তুমি কাউকে অন্ধভাবে ভালোবেসেছো, বিশ্বাস করেছো, এটা সবাই পারে না। এগুলো পারে বোকারা। ম*তলববাজ মানুষের ভীড়ে এই বো*কারা হয়তো বসবাসের অযোগ্য। তারা বিশ্বাস করে বসে, সবাইকে নিজের মতো ভালোই মনে করে। বিশ্বাস করে প্র*তারিত হয়। অথচ আমরা প্র*তারক রেখে তাদেরকেই নানান কথা বলি। আমি সেসব মানি না। আমি বড়োজোর বলবো তুমি বোকামি করেছো বিশ্বাস করে, মা-বাবাকে কষ্ট দিয়েছো পালিয়ে গিয়ে। তাই বলে চ*রিত্রহীন না।’

পুষ্পিতার ছলছল চোখ। ঝাপসা লাগছে সবকিছু। ইমাদের মুখটা দেখতেই পারছে না সে। দুইহাতে মুখ ঢেকে ইমাদের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। ইমাদ ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যায়। তারপর পিঠে হাত রেখে বললো,

– ‘কাঁদছো কেন? দেখি উঠো, উঠো।’

ইমাদ ওর মাথা তুলে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,

– ‘কি হয়েছে, চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে।’

– ‘নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে ইমাদ। তোমাকে নিয়ে কি না কি ভেবেছিলাম।’

– ‘তোমার কোনো দোষ নেই পুষ্পিতা। আমি হলেও ভাবতাম।’

পুষ্পিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

– ‘মাত্র গতকালই মানুষের প্রতি তীব্র ঘৃণা ছিল। মনে হয়েছিল এক প্র*তারকের থেকে আরেক লোভীর ঘরে এসেছি সংসার করতে। আমার এখন গিল্টি ফিল হচ্ছে।’

ইমাদ হেঁসে ফেললো।

– ‘তাহলে আমাকে নিয়ে এগুলো তোমার মনে ছিল?’

পুষ্পিতা লজ্জায় ইমাদের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,

– ‘স্যরি, সত্যিই এখন লজ্জা হচ্ছে।’

__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

তবু মনে রেখো (১৪ পর্ব)
.
সন্ধ্যায় দু’জন বাইরে এসেছে। বিকেলে ইমাদের বুকে ঘুমিয়ে পড়েছিল পুষ্পিতা। পুরোটা সময় জেগে ছিল ইমাদ৷ দীর্ঘ সময় থেকে কেউ নিজের বুকে ঘুমিয়ে আছে, এটা যে কি ভীষণ যন্ত্রণার আজ সে হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছে। নড়তেও পারছিল না। দমবন্ধ অবস্থা। শেষদিকে প্রস্রাবেরও চাপ পায়। বুক থেকে নামিয়ে রাখতেও ইচ্ছা করছিল না, যদি ওর ঘুম ভেঙে যায়। পুষ্পিতার ঘুম ভেঙেছে মাগরিবের আজান শুনে। ইমাদ উঠে বাথরুমে গিয়ে অজু করে এসে নামাজে দাঁড়ায়। পুষ্পিতা হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে গিয়ে নিজেই চা বসায়। ইমা আর সাবিনা বেগম আসেন ওর কাছে।

– ‘আছিয়ারে কল দিয়েছো মা? রান্না করবে না এসে?’

– ‘হ্যাঁ কল দিয়েছি, ও আজ আসতে পারবে না। কাল ভোরে চলে আসবে।’

পুষ্পিতা ইমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘স্যরি তুমি হয়তো বোর হচ্ছ। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’

– ‘না না, আন্টির সঙ্গে গল্প করে কাটছে।’

সাবিনা বেগম পুষ্পিতার আরও কাছে এসে বললেন,

– ‘কিরে জামাই বাবাজীর রাগ কমেছে? কি থেকে হয়ে গেল। লজ্জায় এখন আমি আর যেতে পারছি না।’

পুষ্পিতা ফিক করে হাসলো।

– ‘ও অনেক রাগ করেছে। আঙ্কেলের সাথেও রাগারাগি করেছে। আসবাবপত্র ফের‍ত পাঠাতে চাইছিল।’

– ‘বলিস কি, এরপর কি হল?’

– ‘আঙ্কেল মনে হয় বুঝিয়েছেন। সেও পরে আমাকে বললো মাল ফেরত পাঠালে এখন লোকে নানান কথা বলবে। এগুলো থাক। বাসার বিষয় বা এরকম আর কোনো আলাপই শুনতে চায় না সে।’

– ‘আমি তো ভেবেছিলাম জামাই বাবা সবকিছু জানে। তাই এগুলো নিয়ে কথা বলেছি। তাছাড়া এখন তো নিজ থেকেই বরপক্ষ যৌতুক চেয়ে বসে। আমি ভেবেছিলাম সে খুশিই হবে।’

পুষ্পিতা মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘তুমি না শুধু মা, আমিও ভেবেছি। এখন এরকম নির্লোভ মানুষ আছে ভাবা যায় না৷’

ইমা পাশ থেকে বললো,

– ‘ভাইয়া আসলে একেবারে সাদাসিধে ধরনের মানুষ৷ এতো বড়ো হয়ে গেছে৷ অথচ বাবা যা বলেন তাই শুনে। তুমি দেইখো এখন তুমি যা বলবে তাই শুনবে। আর লো’ভ, হিং’সা, চাকচিক্য এসব তার একেবারেই নাই। জন্মগতই এরকম সে। ছোটবেলায় তো সবাই বোকা বলতো। এখন অবশ্য দোকানপাট চালাতে গিয়ে কিছুটা স্মার্ট হয়েছে।’

সাবিনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

– ‘এই জামানায় এরকম সাদাসিধে হলে হয় না কিরে মা?’

পুষ্পিতা চা ঢালতে ঢালতে বললো,

– ‘সমস্যা নেই, তাকে আমি সাদাকালো থেকে রঙিন করে নিব।’

সবাই হেঁসে উঠলো। পুষ্পিতা তাদেরকে চা দিয়ে ট্রে-তে করে দুই কাপ নিজেদের জন্য নিয়ে গেল। ইমাদ নামাজ পড়ে সোফায় বসে আছে। পুষ্পিতা ওকে চা দিয়ে পাশে বসলো। ইমাদ কাপে চুমুক দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘এতো ঘুম তোমার। কয় ঘণ্টা ঘুমিয়েছো খেয়াল আছে?’

পুষ্পিতাও মুখ টিপে হেঁসে বললো,

– ‘হ্যাঁ অনেক্ষণ ঘুমিয়েছি৷ কিন্তু আমি ঘুমপোকা না।’

– ‘সে তো প্রমাণই পেলাম।’

– ‘না না, আজ কেন এতো ঘুমিয়েছি জানি না। আজকের ঘুম দিয়ে কোনকিছুই প্রমাণ হয় না।’

– ‘আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে৷’

পুষ্পিতা ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘তোমার দাড়ি চুল তো লম্বা হয়েছে। বাইরে চলো কেটে আসবে।’

– ‘এখন?’

– ‘হ্যাঁ, সমস্যা কি? এসে গোসল করে নিবে। তাছাড়া কাল বেড়াতে যাব। ছবি-টবি তোলা হবে।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আর আরেকটা কথা, তুমি মোবাইল ব্যবহার করতে পারো, আমার বাঁধা নেই।’

পুষ্পিতা ম্লান মুখে বললো,

– ‘তোমাকে ওইদিন পুরো কথাটা বলিনি, বাবা আমার মোবাইল পানিতে ফেলে দিয়েছিলেন।’

– ‘বলো কি! ফেলে দিলেন কেন?’

– ‘আমার মোবাইল কেড়ে নিয়েছিলেন আর তুমিও না-কি চাওনি ব্যবহার করি তাই ফেলে দিছেন।’

– ‘ওই ছেলে তোমার সোনা-টাকা নিয়ে পালিয়েছে। মোবাইল ব্যবহার করলেও ওর সঙ্গে তোমার যোগাযোগ হবে না এটা তো জানা কথা। তাহলে মোবাইল ব্যবহারে সমস্যা কোথায়।’

– ‘ওই একটু রাগ মেটালেন আরকি। মোবাইল ফেইসবুকের জন্য এতকিছু হয়েছে। তাই রাগ মেটালেন।’

ইমাদ চায়ের কাপ রেখে ওর পিঠের দিকে হাত নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,

– ‘আমি তোমাকে মোবাইল কিনে দেবো। কেউ কিছু বলবে না ওকে?’

– ‘না আমিও বাবার উপর রেগে ঠিক করেছি আর মোবাইল ব্যবহার করবো না।’

– ‘রাগারাগির দরকার নেই ম্যাডাম, তুমি না হয় ওদের লুকিয়ে ব্যবহার করবে, সমস্যা কি। নতুন সিম দিব।’

– ‘না আমার ইন্টারেস্ট নেই। আঙ্কেলও না-কি চান না।’

– ‘তাদের কথা বাদ দাও তো। তুমি ফেইসবুক টেইসবুক ব্যবহার না করে গান-টান না হয় শুনবে। একেবারে মোবাইল ছাড়া কি করর হয়।’

পুষ্পিতা চায়ের কাপ রেখে আদুরে বিড়ালের মতো ওর বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,

– ‘তুমি বলছো যেহেতু তাই ব্যবহার করবো। তবে সেটা শুধু কল আর গান, ইউটিউব। ফেইসবুকে ঢুকবোই না।’

ইমাদ হেঁসে বললো,

– ‘কেন? এতো কড়া প্রতিজ্ঞার কারণটা কী?’

– ‘মাঝে মাঝে আমার নিজের প্রতিও রাগ হয় জানো? এত বড়ো ভুল করলাম কি করে। তাই নিজের শাস্তি এটা৷’

ইমাদ ওর মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে গালে হাত রেখে বললো,

– ‘আচ্ছা তোমার যেরকম ইচ্ছা।’

পুষ্পিতা উষ্ণ গলায় বললো,

– ‘তোমার বুকে কি ঘুমের ওষুধ আছে? আমার এখন আবার ঘুম পাচ্ছে। এতো শান্তি।’

ইমাদ হেঁসে ফেললো। ভেতরে ভেতরে অবাকও হচ্ছে। গতরাতেই পুষ্পিতার মুখের অভিব্যক্তি তাকে আহত করেছিল। এখন বুঝতে পারছে সে। পুষ্পিতা তাকে লোভী ভেবে বুকে ঘৃণা জমিয়ে রেখেছিল। সেটা ওর অনিচ্ছায় হলেও প্রকাশ পেয়েছিল। আজ ঘৃণাকে জয় করে নিয়েছে অন্যকিছু। সেটা ভালোবাসা না হলেও তার হয়তো প্রাথমিক ধাপ। ভালোবাসার দ্বারে হয়তো প্রবেশ করেছে পুষ্পিতা। ইমাদ ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। খোলা চুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে চারপাশ।

– ‘ম্যাডাম বাইরে যাবে বলছিলে যে।’

– ‘ইচ্ছা করছে না৷ এভাবে বুকে মিশে থাকতে ভীষণ ভালো লাগছে।’

পুষ্পিতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় ইমাদ। তারও প্রচণ্ড ভালো লাগছে৷ সবকিছু যেন একটা মিষ্টি স্বপ্ন। স্বপ্ন এক সময় ভেঙে যায়। এটা ভাঙবে না। পুষ্পিতা মাথা তুলে তাকায়,

– ‘কি ভাবছো।’

– ‘কিছু না।’

পুষ্পিতা স্মিথ হেঁসে বলে,

– ‘তুমি এই কয়দিন আমাকে চাইছিলে তাই না?’

– ‘হ্যাঁ, কিন্তু তুমি বুঝলে কিভাবে।’

– ‘বুঝা যায় এগুলো।’

ইমাদ ওকে টেনে কোলে এনে গাল দু’টো টিপে ধরে বললো,

– ‘বুঝেও কষ্ট দেয়ার কারণ কি?’

পুষ্পিতা দুইহাতে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

– ‘তুমিও তো চাওনি সেভাবে।’

– ‘কাল রাতে চুমু দেয়ার সময় এরকম করছিলে কেন?’

পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে বললো,

– ‘কিরকম?’

– ‘যেন জোর করে দিচ্ছি। অথবা তুমি অনিচ্ছায় চুমু খেতে দিচ্ছ।’

পুষ্পিতা ম্লান মুখে বললো,

– ‘তাই না-কি। আর আজ?’

‘দিয়েই দেখি আজ’ কথাটি বলে ইমাদ চুমু খেল ওর কপালে। পুষ্পিতা চোখবুজে নিল। যেন সে পরম যত্নে চুমুটা গ্রহণ করেছে। ইমাদ আরেকটু কাছে টেনে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তার হৃদয়ে অলিক কোনো প্রশান্তির ছোঁয়া আঁচড় কাটছে৷ মৃদু কেঁপে উঠছে শরীর। গায়ের নতমুখী লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। দু’জন দীর্ঘ সময় এভাবে রইল। দরজায় নক পেয়ে কেঁপে উঠলো দু’জনই।
ইমা বিরক্তি চেপে বললো,

– ‘কে, আসো।’

ইমা এসে বললো,

– ‘আন্টি ডাকছেন।’

পুষ্পিতা গেল সেদিকে। কি রাঁধবেন জিজ্ঞেস করলেন তাকে। পুষ্পিতা বলে আবার চলে এলো।

– ‘আচ্ছা চলো বাইরেই যাই।’

ইমাদ উঠে দাঁড়ায়। পুষ্পিতা আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঠিকঠাক করে বের হয়ে গেল। পুষ্পিতা নিজের মতো ওর চুল-দাড়ি কাটিয়ে শপিং করে ফিরলো বেশ রাত করেই। ইমাদ গোসলে করে খালি গায়ে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে বের হয়ে অবাক হয়ে দেখে পুষ্পিতা একা একা শাড়ি পরছে। পুরো পিঠ ওর নগ্ন৷ শাড়ির আঁচল কামড়ে ধরে ব্লাউজের বোতাম লাগাচ্ছে সে। ইমাদ মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে গিয়ে পিছু থেকে বাহুডোরে বেঁধে নিল ওকে। শাড়ির আঁচল খসে পড়লো মুখ থেকে। আয়নায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে উম্মুক্ত মেদহীন পেট। পুষ্পিতা ব্লাউজ চেপে ধরে বুক ঢেকে রেখে বললো,

– ‘কি করছো ছাড়ো। আমি ব্লাউজ লাগিয়ে নিই।’

ইমাদ ডান হাত ওর পেটে রেখে ঘাড়ে নাক-মুখ ডুবিয়ে দিল। কেঁপে উঠলো পুষ্পিতা।

– ‘করছো কি, ছাড়ো এবার। প্লিজ ছাড়া।’

ইমাদ যেন বেপরোয়া৷ পুষ্পিতা আচমকা পেছনে এক হাত নিয়ে ওর তোয়ালে ধরে হাসতে হাসতে বললো,

– ‘খুলে ফেলবো কিন্তু, ছাড়ো বলছি।’

ইমাদ মুচকি হেঁসে ছেড়ে দিল।
পুষ্পিতা তাড়াতাড়ি ব্লাউজের বোতাল লাগিয়ে বললো,

– ‘শাড়ি পরতে তো হেল্প করবে না, উল্টো নষ্ট করতে এসেছো। এমনিতেই আমি পারি না।’

ইমাদ প্যান্ট পরতে পরতে বললো,

– ‘তা এই অসময়ে শাড়ি পরার কারণ কি?’

– ‘আমার ইচ্ছা করছে তাই।’

– ‘এখন কি আক্রমণ করবো? প্যান্ট তো পরে নিয়েছি৷ আর খুলতে পারবে না কিছু।’

– ‘একদম না৷ খেতে যাও। মা ভাত দিচ্ছে।’

ইমাদ বিছানায় লম্বা হয়ে পড়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে পুষ্পিতার শাড়ি পরা দেখছে। খানিক পর বললো,

– ‘তুমি কিন্তু খেয়ে এসে পরতে পারতে। ওরা এই অসময়ে শাড়ি পরছো দেখে কি বলবে?’

– ‘বলুক, আম্মু উল্টো খুশি হবে। বর আর মা এক সঙ্গে খুশি। এক ঢিলে দুই পাখি শি*কার।’

– ‘আমি খুশি হব কেন মনে হলো?’

– ‘শুনেছি শাড়ি পরলে সব বাঙালি বরই খুশি হয়।’

– ‘ফা*লতু কথা এসব। আসল কথা হলো। থাক বলবো না।’

পুষ্পিতা আয়না থেকে মুখ সরিয়ে বললো,

– ‘আসল কথা কি বলো।’

– ‘না বাজে কথা বলতে চাচ্ছি না।’

– ‘তুমি এত দুষ্ট দেখে কিন্তু মনেই হয় না৷’

– ‘বউয়ের কাছে স্বামী কত দুষ্ট সেটা বউ ছাড়া পৃথিবীর কেউই জানে না। তুমি তো বউ ছিলে না আগে, তাই জানতে না।’

– ‘ও আচ্ছা তাই, প্রেমিকাও জানে কিছু কিছুটা।’

– ‘আমার তো প্রেমিকাও নাই। তাই আমি যে দুষ্ট, সেটা পৃথিবীর একটা নারীই জানবে। সেটা তুমি।’

পুষ্পিতা বলতে যাচ্ছিল তোমার না প্রেমিকা আছে শুনলাম। সেই বিষয় আর সামনে আনলো না সে। মা এই কথা কার না কার থেকে শুনেছেন। সে চুড়ি কয়েক গোছা দুইহাতে দিয়ে৷ কপালের মাঝখানে একটা টিপ পরে বললো,

– ‘চলো খাবে।’

– ‘খাওয়ার আগে মানুষ হাত ধুয়ে টেবিলে যায়। কিন্তু সেজেগুজে যেতে হয় জানতাম না।’

পুষ্পিতা মুখে হাত ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘হ্যাঁ সাজতে হয়, আসো তুমিও শাড়ি চুড়ি পরে সেজে খেতে যাও, আসো।’

ইমাদ উঠে গিয়ে দুই হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে এনে কপালে চুমু খেল।

– ‘তুমি সত্যিই অনেক মিষ্টি পুষ্পিতা। তুমি নামের মতো সুন্দর ফুল। আর শিমুল ফুলের তুলোর মতো নরম।’

– ‘এতো চুমু যে খাচ্ছ তোমার ডায়বেটিস হবে তাহলে।’

‘হোক তবুও মিষ্টি খাব’ বলে ইমাদ ওর অধরে শুকনো চুমু খেল। পুষ্পিতা হঠাৎ চোখে চোখে তাকাতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিল। তাই বুকের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘চলো খাবে।’

ইমাদ আরও কাছে টেনে বললো,

– ‘মনেই হচ্ছে আজ আমরা প্রথম মন থেকে মিলেছি। কত দিনের চেনা যেন তুমি।’

পুষ্পিতা চোখে চোখে না তাকিয়ে বললো,

– ‘ওরা কেউ খাওয়ার জন্য ডাকতে আসবে, ছাড়ো এবার।’

ইমাদ কৃত্রিম হতাশার শ্বাস ছেড়ে বললো,

– ‘জি ম্যাডাম খেতে চলো।’

পুষ্পিতা শাড়ি পরেছে দেখে সাবিনা বেগম ভীষণ খুশি হয়েছেন। মুখ টিপে বারবার হাসছেন। পুষ্পিতা কারও দিকেই তেমন তাকাচ্ছে না৷ সে প্রথমে ভাবেনি এই সময়ে শাড়ি পরলে লজ্জা লাগবে। এখন অস্বস্তি লাগছে। সবাই যেন বুঝে ফেলছে সব। কিছুই যেন আর গোপন নেই। নিজের অজান্তেই নববধূদের মতো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে এভাবে আবিস্কার করবে বুঝতেই পারেনি। সবার আগেই সে খেয়ে উঠে চলে এলো বিছানায়। ইমাদ আসতেই উপুড় হয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে বালিশে মুখ লুকিয়ে নিল পুষ্পিতা।
ইমাদ দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে বললো,

– ‘ওরে বাবা, এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন?’

পুষ্পিতা বালিশে মুখ লুকিয়েই বললো,

– ‘ফ্লোরে বালিশ নিয়ে গিয়ে ঘুমাও। এটা তোমারই নিয়ম।’

ইমাদ অনেকটা লাফ দিয়ে বিছানায় পরে ওকে টেনে উপরে নিয়ে আসে। পুষ্পিতা তার কাঁধে মুখ লুকিয়ে নিল। ইমাদ টেনে এনে আঁজলা করে ওর মুখটা ধরে চেয়ে রইল দীর্ঘ সময়। তারপর আচমকা চুমু খেতে শুরু করলো পুরো মুখে। তারপর যত সময় যায়, ক্রমশই দু’জন ধাবিত হয় এক আদিম খেলার দিকে। অনাবৃত হতে থাকে দু’জনই। চরম মুহূর্তে একেবারে বিবস্ত্র হওয়ার ঠিক আগে পুষ্পিতা তার কানের কাছে ঠোঁট এনে বললো,

– ‘স্যরি, আজ ওসব হবে না৷’

ইমাদ উত্তপ্ত গলায় বললো,

– ‘কেন?’

পুষ্পিতা লজ্জায় লাল হয়ে বললো,

– ‘গোপন অসুখ। এতো ভেঙে বলতো পারবো না। প্লিজ আজ না।’

_চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here