#তবু_কেন_এত_অনুভব?,০৭,০৮
#written_by_Liza
#৭ম_পর্ব
আপনি বললে আমি দরজার বাহিরে পাহারাদার হয়ে থাকবো। আপনাকে নজরে রাখবো। (ইনান)
বেশি কথা না।যা বলেছি তাই করো তুমি,দোয়াকে পাঠিয়ে দিও। (তানাফ)
আচ্ছা বলে ইনান সার্ভেন্টদের’কে ডাকতে চলে যায়। তানাফ রুমে গিয়ে তার বাবাকে ফোন দেয়,
আব্বু ক্লিনিকে অনেক কাজের চাপ তাই আসতে পারবো না,আপনি আম্মুকে জানিয়ে দিয়েন, আম্মু নাহলে চিন্তা করবেন। (তানাফ)
ঠিক আছে,কাজ সেরে যদি পারো ফিরে আসার চেষ্টা করো। বাহিরের দিনকাল ভালো না তানাফ। তোমাকে নিয়ে আমাদের খুব ভয় হয়।সাবধানে থেকো (তানাফের আব্বু তোহিদ আজমী)
তানাফ ফোন রেখে দেয় কথা শেষ করে,এদিকে ইনান এসে তানাফকে খাবার এগিয়ে দেয় আর বলে “স্যার খেয়ে নিন খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে”
তুমি খাবেনা? তুমি কী এখন হাওয়া খাবে? তোমার প্লেট কই? (তানাফ)
স্যার রাফি ভাইয়ের ছুছু দেখে আমার খাওয়ার স্বাদ মিটে গিয়েছে। জোর করবেন না স্যার তখন এখানেই ব*মি করে দেবো (ইনান)
তানাফ খাবার এক চামচ মুখে দিতেই ইনানের কথা শুনে বেসিনের দিকে দৌড়ে যায়, ইনান বুঝতে পেরে বলে “হায় আল্লাহ স্যার কি করে এটা সম্ভব?আমি মানতে পারছিনা। দাড়ান স্যার আমি প্রেগ্ন্যাসি কিট টা নিয়ে আসি। একবার চ্যাক করে দেখুন সত্য কি-না। কবে কিভাবে স্যার এই আকামটা করলেন আপনি। আমি মুখ দেখাবো কি করে,থুক্কু আপনি মুখ দেখাবেন কি করে”!
তানাফ মুখ ধুয়ে রাগান্বিত চোখে ইনানের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে ” ইনান তুমি এখান থেকে যাও এক্ষুনি”
ইনান মুখে হাত গুজে ফিল্মি স্টাইলে স্লো মোশনে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে, ইনান দৌড়াতে দৌড়াতে বলছে “না, এ হতে পারে না।এ বাচ্চা মেনে নেওয়া যায় না”
ওদিকে সবাই অন্যরুমে শিফট করেছে, রাফি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। রাফির বা*ম বাতাস করছে রাফির বন্ধুরা হাতপাখা দিয়ে।
তাদের রুমে খাবার আসতেই সবাই ওঠে বসে খাওয়ার জন্য। এদিকে রাফি বলে ওঠে “মনে হচ্ছে আমার বা*ম আমাকে খেতে দিবে না। মাগো এত জ্বালাপোড়া হচ্ছে।”
_________________________
নাদিম শেখ বেলকনিতে দাড়িয়ে প্ল্যান করছে আজীম শেখ’কে মা*রার। নাদিম শেখ মনে মনে বলছে “আমার পথের কাঁটা প্রথম তুই। তোকে উপড়ে না ফেলা অব্দি আমি নিস্তার নেই,তুই উপড়ে গেলে সম্পত্তি আমার। তোর বউ বাচ্চা আমার দাসী”
পকেটে রিভলবার ঢুকিয়ে রুমের দিকে চললো৷ আজীম শেখ ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। নাদিম শেখের উপর কড়া নজর রেখেছে তার স্ত্রী। নাদিম শেখ যেই না রুমে ঢুকতে যাবে, তার আগেই নাদিম শেখের হাত চেপে ধরে তার স্ত্রী। নাদিম শেখ ভয়ে আৎকে ওঠে।
টর্চ জ্বালিয়ে তার স্ত্রীর মুখ দেখার পর, রেগে গলা টিপে মাথা দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেয় নাদিম শেখ। মাথায় খানিকটা আঘাত পাওয়ার পর পিও’র মা মাথা চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পরে।
নাদিম শেখ হাটু গেড়ে বসে চুলের মুঠি ধরে বলে “আমার খেয়ে অন্যের জন্য চামচামি তোকে করতে বলেছে কে? আরেকবার যদি বাঁধা হতে আসিস তাহলে তোকে প্রথম খু**ন করবো”
আজকের প্ল্যানটাই ভেস্তে গেলো নাদিম শেখের। নাদিম শেখ রুমে এসে বসে আছে, পিও ওয়াশরুমে যেতেই মেঝেতে কেউকে পরে থাকতে দেখে সামনে এগিয়ে আসে। মোবাইলের ফ্লাশ দিয়ে দেখে তার মা মেঝেতে পরে আছে। পিও চিৎকার করে ওঠে। ফ্লোরে র*ক্তে ভেসে যাচ্ছে। পিওর চিৎকারে সবাই ঘুম থেকে ওঠে যায়।
নাদিম শেখ হায় তুলতে তুলতে ঘুমের ভান ধরে এসে সামনে দাড়ায় আর বলে “কি হয়েছে মা এত রাতে কি করছিস এখানে?”
পিও কান্না ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে “দেখো না বাবা মাকে কে যেনো আঘাত করেছে”
নাদিম শেখ মুহুর্তেই কান্নার ভঙ্গি করে কপাল চাপড়াতে শুরু করে আর বলে “এ আমার কি হলো৷ আমার পিও’র মাকে কারা এভাবে মেরেছে।ওগো উঠো। কতবার বলেছি রাত বেরাতে বের হইয়ো না। কে শুনে কার কথা।”
দোয়ার মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাদিম শেখের দিকে তাকিয়ে আছে, দোয়ার মায়ের চোখের উপর চোখ পরতেই কান্নার আওয়াজ বেড়ে যায় নাদিম শেখের। দোয়ার মা স্পষ্ট বুঝতে পারছে এটা নাদিম শেখের কাজ। দোয়ার মা উপযুক্ত প্রমাণ হাতের কাছে না পাওয়াতে চুপ করে আছে।
পিও’র মাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আর্জেন্ট অপারেশনের তলব পড়ে।
এদিকে তানাফ তড়িঘড়ি করে বেরোচ্ছে, কে যেনো ফোন করে যেতে বলেছে।
তানাফ ইনানকে সকল কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে যায়। ইনান সবাইকে নিয়ে থেকে যায় রুমে তানাফের কথামতো৷
পিও’র মাকে ওটিতে ঢোকানো হয়েছে। তানাফ অপারেশন সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছে, স্যাভলন দিয়ে হাত পরিষ্কার করছে, ওটির পাশে নাদিম শেখ ঘুরঘুর করছে। দোয়ার মায়ের কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভালো ঠেকছে না।।
আজীম শেখ’কে দোয়ার মা বলে “তোমার ভাইকে এখানে বসতে বলো। ওটির সামনে এভাবে পায়চারি করছে কেন? আমার কেমন যেনো লাগছে”
আহ সবকিছু নিয়ে এত ভেবো না। ওর ওয়াইফ, ওর চিন্তা হচ্ছে বলেই তো এমন করছে। পজিটিভ নিতে শেখো (আজীম শেখ)
দোয়ার মা কথা না বাড়িয়ে কান্ড দেখছে নাদিম শেখের, ওটির ভেতর থেকে নার্স বের হয়ে আসে হাতে একটা ফাইল নিয়ে,আর বলতে থাকে
” পেশেন্টের হাসবেন্ড বা বাবা থাকলে সাড়া দিন। ”
নাদিম শেখ তড়িঘড়ি করে বলে ” আমি হাসবেন্ড, বলুন। পেশেন্ট কী মা*রা গিয়েছে? কখনো বের করবে লা*শ?”
নাদিম শেখের এমন আচরণে নার্স ভ্রু কুঁচকে ফেলে, অনিচ্ছাসত্ত্বে নার্স বলে ওঠে “এখানে সাইন লাগবে,পেশেন্টের মাত্র অপারেশন শুরু হবে৷ পেশেন্টের কিছু হলে আমরা দায়ী নয়৷ তাই সাইন লাগবে কেউ করে দিন ”
নার্সের হাত থেকে ছোঁ মেরে ফাইল নিয়ে সাইন করে নাদিম আর বলতে থাকে ” কোনো সমস্যা নেই, মা*রা গেলে কি আর করার। আমরা কেউ দায়ী করবো না। যা ইচ্ছা করুন ”
নার্স বিড়বিড় করে ওটিতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়, তানাফ অপারেশন সাক্সেস করে ওটি থেকে বেরিয়ে পড়ে, তানাফকে বের হতে দেখে নাদিম শেখ দাড়িয়ে যায়। তানাফকে নাদিম শেখ জিজ্ঞেস করে “বাঁচাতে পারেন নি নিশ্চয়? জানতাম ও বাঁচবে না। কপালের দোষ। ম*রে গেলো পিও’র মা।”
তানাফের মনে খানিকটা খটকা লাগে নাদিম শেখের এমন কথায়৷ তানাফ শান্তস্বরে নাদিম শেখ’কে বলে “চিন্তা করবেন না অপারেশন সাক্সেস। পেশেন্টের জ্ঞান ফিরলে দেখা করতে পারবেন”
এই বলে তানাফ চলে যায় ডক্টর রুমে। নাদিম শেখ দাঁতে কিড়মিড় করে চুপ করে আছে। দোয়ার আম্মু সবটা খেয়াল করে।
আজীম শেখ এসে নাদিম শেখের কাঁধে হাত রাখে আর বলে “ডক্টর কি বলেছে?”
অপারেশন সাক্সেস,জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা (নাদিম শেখ)
আজীম শেখ খুশি হয়ে শুকরিয়া ফরিয়াদ করে আল্লাহ’র কাছে। সবাইকে বলে আজীম শেখ “অপারেশন আলহামদুলিল্লাহ। দোয়া করো যাতে জ্ঞান ফেরে”
নাদিম শেখ মনে মনে বিড়বিড় করে বলে “আমি থাকতে এখান থেকে জীবিত বের হতে পারবে না সে,জ্ঞান ফেরা তো দূরের ব্যাপার।”
নাদিম শেখ সকলের মাঝখান থেকে চলে যায়। তানাফ ইনানকে ফোন করে বলে “ইনান আবারো সাক্সেস আমরা।”
ইনান খুশি হয়ে তানাফকে বলে “আপনি থাকলে এভাবেই সাক্সেস হবো। আমাদের কোনো চিন্তার কারণ নেই।”
তানাফ ফোনে কথা বলছে এদিকে নাদিম শেখ ডক্টর রুমে ঢুকে পরে, না বলে। তানাফ নাদিম শেখ’কে দেখে ফোন রেখে দেয়। তানাফ মনে মনে বলে
“এই লোকটাকে আমার মোটেও ভালো লাগছেনা। কথাবার্তা খুব’ই অদ্ভুত। কী চায় ইনি!”
নাদিম শেখ বিশ্রী হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে তানাফের সামনে বসে, তানাফ কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নাদিম শেখ কিছু টাকার বান্ডিল টেবিলে রাখে আর বলে “টাকাগুলো তোমার জন্য। আমার একটা কাজ করে দাও। তাহলে দ্বীগুন পাবে”
তানাফ মুখের মাস্ক খুলতে চেয়েও খুলেনি,তানাফ নড়েচড়ে বসে মনে মনে বলে “যা ভেবেছি তাই,এই লোক অত্যন্ত জঘন্য মনে হচ্ছে। যাক জিজ্ঞেস করে দেখি আগে কী কাজ”
হুম বলুন কী কাজ? কী করা লাগবে আমার? (তানাফ)
নাদিম শেখ কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
” কি*ডনি নিয়ে ফেলুন পেশেন্টের,যত চাইবেন তত দেবো। ডিল করুন আপনার’ই লাভ ”
চলবে….
#তবু_কেন_এত_অনুভব?
#written_by_Liza
#৮ম_পর্ব
নাদিম শেখ কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
” কি*ডনি নিয়ে ফেলুন পেশেন্টের,যত চাইবেন তত দেবো। ডিল করুন আপনার’ই লাভ ”
তানাফ টাকার বান্ডিল গুলো হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে,নাদিম শেখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খেয়াল করছে সব। তানাফ নীরবতা ভেঙ্গে নাদিম শেখ’কে বলে
“এই অল্প টাকায় কেউকে খু*ন করতে পারবো না,আরো টাকা নিয়ে আসুন ”
নাদিম শেখ তোতলাতে তোতলাতে বলে
” মা মা মানে? কিসের খু*ন? আমি কি*ডনি নিতে বলেছি, খু*ন কেন? ”
আমি এত জিলাপির প্যাচ বুঝিনা,আমি সোজা স্ট্রিক্ট ফরওয়ার্ড। কি*ডনি নেওয়া মানে সুস্থ ব্যক্তিকে মৃ*ত্যুর কাছে ঠেলে দেওয়া। একেবারে না মে*রে আস্তে আস্তে মে*রে ফেলা যাকে বলে। আমি সেই জিনিস টা’কেই শর্টকাটে খু*ন বলি৷ ক্লীয়ার? (তানাফ)
নাদিম শেখের কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে, নাদিম শেখ কপালের ঘাম মুছে অস্ফুট স্বরে বলে
” আমি বাকি টাকা নিয়ে আবারো আসবো ”
নাদিম শেখ টাকাগুলো রেখে চলে যায়, তানাফ টেবিলের একপাশে কোনায় বসে চেয়ারে পা রেখে বলে ” আমি জানতাম আপনার ভেতর ঘাপলা আছে,তাই সুযোগ খুঁজছিলাম। এবার আমি আমার ওয়েতে চলবো। ”
____________________________
সবাই এক রুমে বসে আছে, সকলের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে রাফির চিৎকারে, গভীর রাত। রাফি চিৎকার করছে “আমার বা*ম গেলো রে গেলো৷ কেউ আমার বা*মকে ধর একটু বুঝা এভাবে যেনো না জ্বলে। মাগো।”
ইভা বিরক্তি নিয়ে রাফিকে থামিয়ে দিয়ে বলে “উফফ তোর জন্য আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো,কি সুন্দর সালমান খান এসে আজ আমায় প্রপোজ করেছিলো। যেই না চু*মু খাবো তার আগেই স্বপ্ন মাটি করে দিলি ধ্যাত”
ইভার কথায় ইনান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলছে
” এরা একেকটা দেখছি সেই লেভেলের চাপা*বাজ।”
ইভা এবার বলতে শুরু করে “জানিস সেদিন রাতে শাহরুখ খান আমার রুমে এসেছিলো। আমি তো ভয়ে শেষ। এত রাতে প্রেস মিডিয়া আমার ঘরের সামনে দাড়ালে আমার তো মানসম্মান শেষ। তাই শাহরুখ খানকে বললাম, ওগো এভাবে রাত বেরাতে দেখা করতে এসো না। লোকে মন্দ বলবে। শাহরুখ কী বললো জানিস?”
সবাই ইভার আষাড়ে গল্প শুনার জন্য ওৎ পেতে আছে, ইভা আবারো নড়েচড়ে ওঠে বসে আর বলে “শাহরুখ বলছিলো, জাব থাক হে জান,মে তোমারে সাথ হি রাহুঙ্গি। আমি তো খুশিতে জড়িয়ে ধরেই ফেললাম। তারপর শাহরুখ খান প্রেস মিডিয়ার জন্য আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো মুম্বাই”
সবাই গাল টিপে হাসি থামিয়ে স্যাড স্যাড ফেইস করে বলছে “আহারে ইভু এক রাতের মধ্যে শাহরুখ স্যার তোর কাছে এসেও গেলো আবার চলেও গেলো। ইসস, ব্যাপারটা খুব খারাপ হলো”
ইনান ডাগর ডাগর চোখ করে ইভার কথাগুলো গিলছে। রাফি বা*ম মাজতে মাজতে দাড়িয়ে পরে আর বলে “তোরা আছিস ইভুর নাটকীয় মিথ্যা কাহিনি নিয়ে, এদিকে আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছি ”
ইনান রাফির কথায় সাড়া দিয়ে বলে ” কিসের চিন্তা রাফি ভাই? ”
রাফি ফিল্মি ভাব নিয়ে হাটতে হাটতে বলছে ” আমার বাবা দু’টো বি এম ডব্লিউ কিনে দিয়েছিলো।গাড়ির চাবি গুলো হারিয়ে ফেলেছি। ”
সবাই রাফির কথায় হা করে আছে। সবাই একে অপরকে বলাবলি করছে “কিরে রাফির বাবার তো সি এন জি আছে শুনেছিলাম, সি এন জির কারখানা আছে জানতাম। রাতারাতি বি এম ডব্লিউ এলো কেমনে? মনে হয় এই শালা চাঁপা* মারতেছে”
এদিকে রাফি বলেই যাচ্ছে একের পর এক ” জানিস তোরা, তোদের আজ এ দিন দেখতে হতো না। যদি আমার বাবার বিল্ডিংটা তৈরি হতো। উফফ এসিটা কেউ বাড়িয়ে দাও,আমার আবার এসি ছাড়া থাকতে সমস্যা হয়। চিন্তা করিস না কাল আমার বাবার একটা উড়োজাহাজ ল্যান্ড করবে মাটিতে,তোদের নিয়ে ওটা করে আফগানিস্তান ট্যুর দেবো। আমার আবার রিকশাতে চড়ার অভ্যাস নেই। ”
ইনান নীরব দর্শকের মতো বসে আছে আর শুনছে রাফির কথা। ইনান মনে মনে বলছে ” ভাগ্যিস এখানে বিলগেটস নেই। নাহলে এই রাফি ভাবির চাঁপা শুনে সে দেড়মাস পাগল থাকতো ”
সবাই রাফির কথায় খুশিতে গদগদ করছে আর বলছে, “রাফি ভাই তুমি আসলেই একটা চিজ। বি এম ডব্লিউ থাকা স্বত্তেও কত সাধারণ ভাবে চলো ”
রাফি হেসে হেসে সবাইকে বলছে “বুঝতে হবে আমি একটা আগু*ন তাই নিভে থাকি ঠান্ডা হয়ে। নয়তো তোরা জ্বলে যাবি ”
ইনান মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলে “এইতো আমি সিলিন্ডার আছি তো। আমি আপনার সব আগু*ন নিভিয়ে দেবো তানাফ স্যারকে দিয়ে। ”
তানাফের কথা ইমানের মুখে শুনতেই রাফি খানিকটা চুপসে যায়। রাফি আমতা আমতা করে বলে
” আরে ইনান ভাই আপনার তানাফ স্যার তো আমার ছোট ভাই। আগে প্রতিবার মহল্লার ছেলেগুলোর থেকে মার খেয়ে এসে আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসতো। আমি ও কী করবো ছোটভাই বলে কথা তাই গিয়ে সবার ঝগড়া মিটমাট করতাম। ”
ইনান মনে মনে বলে “ব্যাটা তুই বড়ই চাঁপাবাজ। দাড়া আমি রেকর্ড করি” ইনান ফোনে রেকর্ড চালু করে দেয়।
এদিকে রাফি বলেই চলেছে ” তানাফ সেই ছোটবেলায় হাফ প্যান্ট একটা পরতো। নাক দিয়ে লোল পরতো তখন, আমার কাছে আসতো আমাদের ব্যাচের ছেলের সাথে তাকে খেলায় নেওয়ার জন্য। এদিকে আমি তানাফ এর বড় ভাই ছিলাম তাই আবদার ফেলতেও পারছিলাম না। খুব কান্নাকাটি করতো খেলায় নেওয়ার জন্য। তাই পকেট থেকে বিশ টাকার নোট একটা ধরিয়ে দিতাম আর বলতাম, যা কিছু খেয়ে নে। পরে আবার আসিস আবার টাকা দেবোনে তোকে। ”
ইনান কথাগুলো কোনোভাবে হজম করে হাসি চেপে রেখেছে,ওদিকে সবাই রাফির কথায় থ বনে গেলো। দোয়া সবার মাঝখানে বলে ওঠলো “তাহলে ক্যাফে চিনলি না কেন মামা? ”
আরে ক্যাফে কীভাবে চিনবো? এখন তো বড় হয়ে গেছে। চেনার উপায় আছে আর? আজ যখন রুমে নিয়ে গেলো তখন হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে নিজের পরিচয় দিলো (রাফি)
সবাই একে অপরের মুখ দেখছে৷ ইভা রাফিকে বলে ওঠে
“এই তোরা চুপ করবি? তোদের জন্য তোদের জিজু শাহরুখ কিন্তু রাগ করছে। তোরা একটু চুপ কর। তোদের জন্য শান্তিমতো কথাও বলতে পারছিনা তার সাথে ”
সবাই ইভার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলছে “সত্যি? শাহরুখ খান কল দিয়েছে? প্লিজ প্লিজ কথা বলিয়ে দে একবার। ”
ইভা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো,ফোনে কোনো কলের ছিটেফোঁটা নেই। ইভা বারান্দায় গিয়ে সকলকে দেখিয়ে বিড়বিড় করছে, সবাই ইভার পেছনে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে, ব্যাপারটা সত্য কি না মিথ্যা যাচাই করার জন্য। সবার সাথে সাথে ইনান ও পেছনে দাড়িয়ে আছে। অমনি ইভার ফোনে সিম কোম্পানি থেকে কল আসে।
সবাই হতভাগার মতো একে অপরের মুখ দেখছে। ইনান হেসে বলে
” কথার বলার সময় আবার কল আসে কীভাবে, এটা কি নতুন সিস্টেম হয়েছে নাকি নেটওয়ার্কের? ”
ইভা আমতা আমতা করে বলে ” আমার বয়ফ্রেন্ড শাহরুখ নতুন অপারেটর চালু করেছে, এমন সিস্টেম আমার মোবাইলে আছে৷ দামী মোবাইল শাহরুখ গিফট করেছে। তোমাদের মতো গরীব নাকি আমি? ”
ইনান ইভাকে বলে ” আরে কী বলেন? সত্যি? আমার ফোনেও এমন আপডেট আছে, আমার নানা বিল গেটস বলেছিলো এমন আপডেট একমাত্র আমার ফোনেই দিবে। আমি কিন্তু বিল গেটস এর নাতি বুঝলেন। আমি গরীব নয়। এইতো সেদিন আমার নানাকে বললাম, মেসির সাথে দেখা করবো। আমার নানা মেসিকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আসছে। তারপর মেসি আমাকে বললো,
‘এত কষ্ট করে নানাকে ইনফর্ম করার কী দরকার ছিলো, আমাকে ফোন দিলেই হতো। আমি খেলার মাঠ ছেড়ে দৌড়াতে দৌড়াতে প্লেনে উঠতাম আপনার জন্য’।
আমি মেসিকে বললাম, আরে সমস্যা নেই, ইনান এখন খুব বিজি চোর ধরতে। মেসি হাতজোড় করে বললো আমাকে, আপনি যখন ডাকবেন তখন’ই আমি আসবো, আপনার নানা বিল গেটস বড় ভালো মানুষ। চোর ধরে দেশকে বাঁচান। আমি ও খেলা বাদ দিয়ে আপনার সাথে সি আই ডি রুপে যোগ দিতে চাই।
আমি মেসির কথায় এতটা খুশি হলাম যে ফিফা তে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিয়েছিলাম। ”
ইনানের কথায় সকলের মুখে তালা পড়ে গেছে,সবাই এক এক করে রুমে এসে
চলবে।