তবু_কেন_এত_অনুভব?,১১,১২

0
1745

#তবু_কেন_এত_অনুভব?,১১,১২
#written_by_Liza
#১১তম_পর্ব

নাদিম শেখ বাড়ি এসে পিও’র বিয়ের কথাবার্তা শুনে ভেতরে ভেতরে রেগে যায়। নাদিম শেখ মনে মনে বলে “সমস্যা নেই দোয়ামনিকে বিক্রি করে যা পাবো তাতেই আমার চলবে”

এভাবে চলছে দিন,
পিও’র মায়ের অবস্তা আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ। হাটতে চলতে পারছে। দুপুরে খাবার টেবিলে আজীম শেখ’কে বলছে নাদিম ” আজ দোয়াকে দেখতে আসবে,তৈরি থাকতে বলিও। বড় পরিবারের ছেলে উড়নচণ্ডী পছন্দ করলেও প্রশ্রয় ততটা দেবে বলে মনে হচ্ছে না। দোয়াকে একটু ভালোভাবে ওদের সামনে আসতে বলিও।”

আজীম শেখ খেতে খেতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়। নাদিম শেখের মুখে বিচ্ছিরি হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে যে যার রুমে আড্ডা দিচ্ছে। পিও দোয়াকে বলছে ” হ্যাঁ রে দোয়া, এতদিন অব্দি একটা ছেলেকেও তোর মনে ধরলো না? ভেবেছিলাম তুই অন্তত লাভ ম্যারেজ করবি। তুই যে এত সাধাসিধা গোপাল ভারের বউয়ের মতো মোটকু গোপালের আশায় থাকবি কে জানতো! ”

কথাগুলো বলে পিও,রিধী দুই বোন হো হো করে হাসছে, দোয়ার মন ভালো নেয়,দোয়া চুপচাপ বসে আছে। চোখের নিচে কালচে দাগ পরেছে দোয়ার নির্ঘুমতার কারণে।

পিওর মা এসে পিওকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয় আর বলে ” ওকে একা থাকতে দে,”

পিও রিধী চলে যায় অন্যরুমে, দোয়ার কাকিমনি দোয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ” আচ্ছা দোয়ামনি তোর কোনো পছন্দ আছে? তুই কি এই সম্মন্ধে রাজি? তুই রাজি হলে আমি এই বিয়ে ভাঙ্গচি দিতে পারবো না। যদি রাজি না থাকিস তবে বলিস ”

দোয়া ছলছল চোখে পিও’র মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত দুটো ধরে বলে ” কাকিমনি আমার জীবনে কখনো প্রেম ভালোবাসা আসে নি। আমি কখনো ভাবিনি গুরুতে দেই নি। কিন্তু কাকিমনি আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। আমিও কেউকে ভালোবাসতে চাই, বুঝতে চাই,অনুভূতিটা নিতে চাই পিও’র মতো। তুমি এ বিয়েটা ভেঙ্গে দাও কাকিমনি”

দোয়ার কথায় যেনো স্বস্তি ফিরে পেলো পিও’র মা৷ পিও’র মা মুচকি হাসি দিয়ে দোয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো ” বিকেলে তৈরি হয়ে তাদের সামনে যাবি,যেভাবে যেভাবে বলবো। বুঝতে দিবি না ওদের। বাকিটা আমি করবো যা করার।”

দোয়া পিও’র মায়ের কথা কিছুটা আশ্বাসের আলো দেখতে পেয়ে মনে স্বস্তি অনুভব করে।

বেলা গড়িয়ে গেছে, নাদিম শেখ সবাইকে বলছে চিৎকার করে “দোয়াকে তৈরি করে দাও তোমরা, এতক্ষণ বসে বসে কি করছো?”

অমনি দোয়া রুম থেকে বেরিয়ে নাদিম শেখ’কে বলে “কাকাই আমি রেডি,দেখো তো আমায় কেমন লাগছে”

দোয়া লেহেঙ্গা পরে চারদিকে ঘুরছে খুশিমনে, রাতারাতি দেয়ার পরিবর্তন দেখে নাদিম শেখ কিছুটা আশ্চর্য হলো। পরক্ষণে কি ভেবে যেনো মৃদু হাসি দিয়ে বললো ” বেশ সুন্দর লাগছে দোয়ামনিকে,বিয়েতে তাহলে খুব খুশি?”

দোয়া খিলখিল করে হেসে বলে “অনেক খুশি,সিঙ্গেল জীবনের সমাপ্তি। আমারো একটা হাসবেন্ড হবে যাকে নিয়ে বান্ধবীর সামনে গিয়ে বলতে পারবো, দেখ আমারো আছে হু,”

দোয়ার কথায় সবাই লজ্জায় পরে যায়, দোয়ার আম্মু দোয়াকে ডাক দিতে গেলেই নাদিম শেখ বলে ওঠে “ওর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে এখানে বাঁধা দিও না ভাবি।ওকে হাসতে দাও”

দোয়াকে দেখতে আসে পাত্রপক্ষ, পাত্রপক্ষকে দেখে দোয়ার আম্মুর মোটেও ভালো লাগে নি,অদ্ভুত চাহনি তাদের।
আজীম শেখ ও নাদিম শেখ পাত্রপক্ষদের সাথে আলাপ করছে। দোয়ার আম্মু এসে পিও’র মাকে বলে ” ছোটু তোর ভালো লেগেছে? আমার মোটেও ভালো লাগে নি রে, কেমন যেনো দেখতে তারা৷ ”

পিওর মা দোয়ার আম্মুকে আশ্বাস দিয়ে বলে ” দেখে যা আপা, কীভাবে বিয়ে বন্ধ করি। এখন কিছু বুঝতে দিস না।”

দোয়াকে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে আসা হলো, দোয়া দৌড়ে এসে একটা লোকের পায়ের কাছে গিয়ে শশুরআব্বা বলে বসে পরলো মাটিতে। সবাই দোয়ার কান্ডে হতবাক। দোয়ার কাকা নাদিম শেখ মনে মনে বলছে ” জানতাম দোয়া ঘরবর করবে,তাই তো খানিকক্ষণ আগে এত শান্ত রুপ দেখালো। হাহা লাভ নেই দোয়ামনি এই বিয়ে তবুও ভাঙ্গবে না যতই যাই কর”

সবাই দোয়ার কান্ডে মুখ টিপে হাসছে, দোয়ার টেবিলে থাকা খাবার হাতে নিয়ে শশুড়কে দিয়ে বললো ” খান শশুড়,পুত্রবধুর হাতে শেষ খাবার থুক্কু প্রথম খাবার”

যেই না খেতে যাবে লোকটা অমনি খাবারগুলো দোয়া মুখের ভেতর দিয়ে খেতে শুরু করে, লোকটির বেশ রাগ হয় তবুও রাগ হজম করে দোয়াকে পাচার করার জন্য। আজীম শেখ ডাক দিতে গেলেই নাদিম শেখ ইশারায় নিষেধ করে।

দোয়া পাত্রের সামনে গিয়ে বলে ” আপেলগুলো খাবেন? না খেলে আমি খেয়ে ফেলি?”

লজ্জায় সবার মাথা কাটা। দোয়া বসে বসে দুই পা তুলে গুটিসুটি মেরে আপেলের প্লেট থেকে আপেল ফিনিশ করে দেয়। একেক করে সব খাবার ফিনিশ করে দেয় সে। কেউ কিছু খেতে পারে নি।দোয়া একাই খেয়ে ঢেকুর তুলে বলে ” শশুর আব্বা চিকেন গ্রীল টা ইয়াম্ম ছিলো, আপনার তো দাঁত নেয় তাই কষ্ট করে খাওয়ার দরকার নেই।আমি হলাম সচেতন পুত্র বধু। তাই আগে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিচ্ছি,এবার থেকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে আমার, দোয়া করবেন।”

পাচারকারী লোকজন নাদিমের দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে,নাদিম কপালে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করছে। পিওর মা নাদিম ও দোয়ার কান্ডে মুখে ওড়না গুজে হাসছে অন্যদিকে।

টেবিলে থাকা স্প্রাইট গ্লাসে ঢাললো দোয়া এক এক করে, প্রতিটা গ্লাসে ঢালার পর দোয়া সবার হাতে তুলে দিলো। সবাইকে বলছে দোয়া ” নিন স্প্রাইট খান,এত খাবার খেলেন হজম এর জন্য তো স্প্রাইট খেতে হয় তাই না? নিন খান।”
স্প্রাইট মুখে দিয়ে সবাই একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। স্প্রাইটের বদলে তাদের পানি খেতে দিয়েছে দোয়া।

দোয়া পানির বোতলে স্প্রাইট ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো, দোয়া মুচকি হাসি দিয়ে পাত্রকে চোখ টিপ মেরে বললো ” হরানের স্বোয়ামী,আমারে আন্নের লগে লইয়া যান।”

সবাই ওঠে দাড়ালো, নাদিম শেখ’কে তারা বললো
” একটু বাহিরে আসো নাদিম। ”

সবাই চলে যাচ্ছে, দোয়া পিও’র মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয় একটা, নাদিম তাদের পিছু পিছু যায় এগিয়ে দেওয়ার জন্য।

আজীম শেখ রেগেমেগে রুমে চলে যায় দোয়ার এমন কান্ডে।

দোয়া সোফায় বসে ঢেকুর তুলে বলে “উফফ তোদের চিকেনটা দিতে ভুলেই গিয়েছি। যাক বাপু অনেকদিন পর মন ভরে খেলাম,আগামী তিন চারদিন না খেয়ে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।”

নাদিম শেখ রুমে ঢুকতেই পরিস্থিতি ঠান্ডা,নাদিম কেউকে কিছু না বলে আজীম শেখের রুমে সোজা ঢুকে পরলো। পিও’র আম্মু দোয়ার গালে চুমু খেয়ে বলে ” বিয়ে ক্যান্সেল হয়তো,তোর কাকার মুখের অবস্তা ভালো না। তোর বাবাকে বলতে গেছে”

সবাই ভেতরে ভেতরে খুশি। নাদিম শেখ আজীম শেখ’কে গিয়ে বলে “ভাইজান কিছু কথা বলতে এসেছি”

আজীম শেখের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ,আজীম শেখ হতাশ হয়ে বলে ” কি আর বলবি,এই বিয়ে হচ্ছে না এটাই তো? হবে কি করে, দোয়া যা করেছে হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছি। বল কি বলবি”

নাদিম শেখ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “তারা দোয়াকে বেশ পছন্দ করেছে,দোয়ার বাচ্চামো তাদের ভালো লেগেছে।বিয়ের ডেট বলেছে তারা। পরশুদিন পিও আর দোয়ার বিয়ে হবে।এবার তুমি কি বলো”

আজীম শেখ নাদিমের কথা শুনে হতবাক, এ যেনো অবিশ্বাস্য। এত কিছু করার পর কীভাবে রাজি হয়েছে এটাই আজীম শেখের মাথায় ঢুকছেনা। আজীম শেখ খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে সকলকে এই ব্যাপার জানিয়ে দেয়।

দোয়া আর পিও’র মায়ের প্লান ভেস্তে। পিও’র মা ও দোয়ার আম্মু এবার চিন্তায় পরে গেলো। দোয়া ভয়ে চুপসে আছে। পিওর মা দোয়ার আম্মুকে বলছে
” চিন্তা করিস না, ঐ ডক্টর তানাফকে বললে ও নিশ্চয় সাহায্য করবে।”

দোয়ার আম্মু পিও’র মাকে বলছে “ছোটু ফ্যামিলি বিষয়ে ওকে টানা কী ঠিক?”

পিওর মা হেসে বলে “বলা তো যায় না ও হয়তো আমাদের’ই ফ্যামিলির একজন হয়ে ওঠবে”

দোয়ার আম্মু কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না পিওর মায়ের এই কথায়,এদিকে দোয়ার প্লান ভেস্তে যাওয়াতে দোয়া ভেঙ্গে পরেছে। দোয়া মনে মনে বলছে “আর বোধহয় বিয়েটা আটকানো যাবে না।শেষমেশ আমি বলির পাটা হবো”

রাতে পিও’র মা তানাফকে সবটা ফোনে বলে দেয় সাথে পিওর বিয়ের ইনভাইট দেয়।

তানাফ সবটা জানতে পেরে পিও’র মাকে আশ্বাস দিয়ে বলে ” কিছুই হবে না আন্টি। আমি অলরেডি আমার কাজ শুরু করে দিয়েছি”

পিওর মা কথা শেষ করে ফোন রেখে দেয়।
হঠাৎ তানাফের ফোনে রিং পরতে থাকে,তানাফ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কে যেনো বলে ওঠে
“ভুলেই তো গেলি আমায়। এখন দেখাও করিস না আড্ডাও দেওয়া হয় না কারো”

তানাফ প্রতুত্তরে বলতে শুরু করে ” আরে রিয়ান তুই? অনেকদিন পর হারামী। ভুলি নি রে, কাজের ব্যাস্ততা। তো বল কি খবর। এতদিন পর কি মনে করে?”

আমার বিয়ে সামনে, যেই মেয়ের কথা তোকে বলেছিলাম তার সাথে। এখন কথা হলো তোকে আমি ছাড়ছিনা। তোকে আমার পাশে চাই। (রিয়ান)

নিশ্চয় বল কবে, কত তারিখ? তোর গার্লফ্রেন্ডের নামটা যেনো কী? ভুলেই গিয়েছি। (তানাফ)

চার তারিখ বিয়ে এই মাসের আর মাত্র তিনদিন আছে। দেখা কর জলদি অনেক শপিং করা বাকি। তোর ভাবির নাম পিও (রিয়ান)

পিও নামটা শুনে তানাফ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে “কিহ পিও?”

কেন? তুই চিনিস নাকি? চিনবি আই থিংক আমার ফোনে ওর অনেক ছবি আছে হোস্টেলে পড়তো তখন,দেখা করতে যেতাম (রিয়ান)

বুঝেছি,দোয়ার কাজিন পিও? বিয়ে তাহলে পিওর সাথে তোর? কেয়া বাথ হে। আমার রাস্তা ক্লিয়ার (তানাফ)

তুই কেমনে চিনিস? (রিয়ান)

তানাফ এক এক করে সব বলতে লাগলো রিয়ানকে। রিয়ান সবটা শুনে তানাফকে বলে “আরে বন্ধু আগে বলবি না এইকথা। শশুড়কে তাহলে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। আমার শালীকা দোয়া কী জানে তুই যে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস”

তানাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “সে আমাকে ভালোবাসেই না,তবুও তাকে চাই। ঠিক আছে দেখা করিস আমারো শপিং করা লাগবে।”

ভালো না হয় পরে বাসবে, তুই বিয়ে করে ফেল। এতে ওর ফ্যামিলি কিছুটা চিন্তামুক্ত হবে। এদিকে তুই ভালোবাসার মানুষটাকেও পেয়ে গেলি। দোয়ার যেহেতু কেউ নেই সেহেতু তোকে মানতে ওর কষ্ট হবে না।।যদি প্রাক্তন বা ভালোবাসা থাকতো তবে সময় নিতে পারতি।এখন নেই যেহেতু বিয়ে করে নে। আর ভাবিস না তানাফ। ঐ ব্যাটাকে চরম শিক্ষা দিতে হবে। এখন সাথে আমিও আছি, চরম শিক্ষা দিয়েই তবে ছাড়বো (রিয়ান)

তানাফ রিয়ান কথোপকথন সেরে ফোন রেখে দেয়, তানাফ মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে “দোয়া অপেক্ষা করুন আমি আসছি।”

রিয়ান তানাফের ছোটবেলার বন্ধু,ব্যস্ততা সময়ের কারণে খানিকটা দুরত্ব বেড়েছে তবে বন্ধুত্ব আগের মতোই আছে। হুট করে রিয়ান ফোন দিয়েছে তানাফকে, রিয়ানের নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে তাই একমাত্র বন্ধু তানাফকে জানানোটা রিয়ানের দরকার।

চলবে

#তবু_কেন_এত_অনুভব?
#written_by_Liza
#১২তম_পর্ব

রিয়ানের নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে তাই একমাত্র বন্ধু তানাফকে জানানোটা রিয়ানের দরকার।

চারদিকে বিয়ের তোড়জোড়। রিধী পিওয়ের শাড়িতে পিন-আপ করছে। দোয়া রুমে চুপচাপ বসে আছে। চোখ দুটো বেশ ফুলে আছে দোয়ার, বোধহয় কান্না করেছে অনেক। নিচে ডেকোরেট করা হয়েছে।মেহমান আসছে এক এক করে চারদিকে মেহমানের সমাগম।
নাদিম শেখ নিচে সবাইকে মেহমানদারি করছে। আজীম শেখ হাসোজ্জল মুখে সবার সাথে কথা বলছে।

পিও’র মা মনে মনে মেয়ের বিয়ে নিয়ে খুশি হলেও দোয়াকে নিয়ে বেজায় চিন্তিত। আজ পিও দোয়ার বিয়ে। কখন কী ঘটবে তা ভাবতেই পিওর মায়ের বুক মুচড়ে উঠছে।

এদিকে তানাফ দোয়ার ফ্রেন্ড দলবলকে প্লান বলে দিয়েছে,ইনান বেশ তৈরি তাদের সাথে।

রিয়ান তানাফকে ফোন করে বলছে “তানাফ আন্টি আংকেল আমাদের সাথে বরযাত্রা চলে যাবে বুঝলি? তুই তোর মত করে আয় গুছিয়ে। এদিকটা আমি সামলে নিবো”

তানাফ স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলে “থ্যাংক দোস্ত, নিশ্চিত হলাম।”

তানাফ পিও’র মাকে ফোন দিয়ে বলে “দোয়াকে সামনে আনবেন না আন্টি। আমি পৌছে যাবো।”

পিও’র মা খুশি মনে দোয়ার আম্মুর সাথে হাত মিলিয়ে প্লান মাফিক কাজ করছে।

পার্লার থেকে দুটো মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে,নাদিম শেখ রিস্ক নিতে চায় না তাই মেয়ে দুটোকে হায়ার করেছে পিও ও দোয়ার জন্য।

দোয়াকে তৈরি করানো হচ্ছে। দোয়া অনবরত কেঁদেই চলেছে আজীম শেখ’কে আকুতি মিনতি করেও কোনো লাভ হয় নি দোয়ার। দোয়ার নিয়তির উপর সবটা ছেড়ে দিয়ে কাঁদছে।

বরপক্ষ চলে এসেছে,রিয়ানকে দেখার জন্য রিধী জিজু এসেছে বলে দৌড়ে গেলো। পিও মনে মনে খুব খুশি আজ তার প্রিয় মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাবে।

তানাফের বাবা-মাকে স্পেশালি দোয়ার আম্মু খাতিরদারি করছে। নাদিম শেখের খটকা লাগলেও এতটা গুরুত্ব দেয় না।

এদিকে পিও ও দোয়া তৈরি। মেইন গেইটে দোয়ার ফ্রেন্ড দলবল সবাই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। নাদিক শেখ ভাড়া করা গুন্ডা লাগিয়েছে পাহারাদার হিসেবে। গুন্ডাগুলো পায়চারি করছে এদিক ওদিক। রাফি বোরকা নিকাব পরে গেইটে প্রবেশ করে। নাদিম শেখের গুন্ডা রাফির পথ আটকে দাড়ালে রাফি বলে ওঠে মেয়েলি স্বরে “এমা এ কেমন বিয়ে বাড়ি! মেহমানদেরকে ঢুকতেও দেয় না। দেখি সরে যাও আমার বান্ধবীকে দেখতে যাবো।”

ভাড়া করা গুন্ডাগুলো নাদিম শেখকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে আর বলে ” স্যার এই মহিলারে ভালো লাগে নি। ঢুকতে দেবো?”

নাদিম শেখ রাফিকে বোরকা পরিহিতা অবস্তায় উপর থেকে নিচ অব্দি পর্যবেক্ষণ করে, রাফি তা দেখে ফোড়ন কেটে বলে “ছি ছি,আমার বান্ধবীর চাচার এত নজর খারাপ ছি। মেয়ের বয়সী মেয়েকে কীভাবে চোখে গিলে খাচ্ছে।”

নাদিম শেখ ধমক দিয়ে বলে “এই মেয়ে বেশি কথা বলো না।তুমি কে? এখানে তোমার কি কাজ?”

বারেহ আমার বান্ধবীর বিয়ে শুভকামনা জানাবো না? দাওয়াত দিয়ে এত অপমান এই বলে রাফি কান্নার ভং করে। নাদিম শেখ থামিয়ে দিয়ে বলে “তা বলে বোরকা পরে কে বিয়ে বাড়িতে আসে?”

আমি হুজুরের বউ। তাই আমি এভাবেই চলাফেরা করি।দেখি সরে যান। উফফফ এই বলে রাফি নাদিম শেখকে এড়িয়ে ঢুকে পরে গেইটের ভেতর। নাদিম শেখের কেমন যেনো লাগলো। নাদিম শেখ এত গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়।

রাফি সোজা দোয়ার রুমে ঢুকে দোয়াকে বলে “কিরে বান্ধবী তুই আমাকে ভুলে গেছিস?”

দোয়া চিনতে না পেরে রাফির নিকাব খুলতে গেলেই পার্লারের সেই মেয়ে দুটো বলে “দেখি বের হোন। এখানে অনেক কাজ বাকি। পরে বান্ধবীর সাথে আলাপ করবেন”

নাদিম শেখ মেয়ে দুটোকে ফোন করে আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তাই মেয়েদুটো নাদিম শেখের কথামতো রাফিকে রুম থেকে বের করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

দোয়াকে রাফি চিমটি কেটে দিয়ে কানে কানে বলে আস্তে করে “এই দোয়া আমি রাফি। আমাকে বাঁচা। তোকে নিতে এসেছি মামা”

দোয়া এবার বুঝতে পেরে মেয়েদুটোকে বলে “আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলে আপনাকে ডাকবো।আপনারা এখন একটু বাহিরে যান”

মেয়ে দুটো বেশি বাড়াবাড়ি করলো না ধরা খাওয়ার ভয়ে,মেয়ে দুটো দোয়ার কথায় বাহিরে গিয়ে নজর রাখলো। এদিকে দোয়া দরজা বন্ধ করে রাফির নিকাব খুলে দেয়। দোয়া রাফিকে দেখে কান্নারত মুখে ফিক করে হেসে দেয়। রাফি দোয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে “তোকে নিতে আসছি,বাহ বউ বেশে দারুন লাগছে পুরাই খাদক বউ”

দোয়া রাফির পেটে ঘুষি দিয়ে হেসে দেয়,রাফি দোয়াকে বলে “এই বেলকনি দিয়ে তোকে নামতে হবে। মেইন গেইটে তোর কাকা দাড়িয়ে আছে। ইভা, মায়া সবাই এসেছে তোকে নিতে। গাড়ি পেছনের গেইটে আছে। চল প্রথমে তুই নাম।”

দোয়া ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে কোনোভাবে মই দিয়ে নেমে যায়, অমনি মেয়ে দুটো দরজা খুলে ঢুকে পরে,দোয়া নেমে গেলেও রাফি আটকে আছে। রাফি এক চড় দিয়ে একটা মেয়েকে বেহুশ করে দেয়। অন্য মেয়েকে মুখে টেপ লাগিয়ে হাত পা বেধে রাখে।

দু’জনকেই হাত পা দড়ি দিয়ে বেঁধে এসেছে, মুখে টেপ লাগানো। মেয়েগুলোর কাছ থেকে টাকা পয়সা ফোন সব হাতিয়ে রাফি বেলকনি দিয়ে পালিয়েছে।

মেয়েগুলোর ফোনে রিং পরছে বারবার, নাদিম শেখ ফোন দিয়েই চলেছে। নাদিম শেখের এবার বড়সড় ধাক্কা লাগে মনে। নাদিম শেখ দৌড়ে উপরে উঠে, দোয়ার রুম ভেতর থেকে বন্ধ। নাদিম শেখ খানিকটা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে “ওহ দোয়া তাহলে ভেতরেই আছে। সাজাচ্ছে হয়তো তাই ফোন ধরে নি।”

এদিকে রাফি, দোয়া, মায়া ও ইভা সবাই গাড়িতে, গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে। দোয়ারা সবাই গাড়িতে গান ছেড়ে দিয়ে চিল করছে।

তানাফ ইনান গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে মেইন রাস্তার মোড়ে,
অন্যদিকে সব জানাজানি হয়ে গিয়েছে দোয়া পালিয়েছে। রিয়ান তানাফকে ফোন করে আপডেট দিচ্ছে একের পর এক।

রাফি তানাফের কাছে দোয়াকে নিয়ে আসে, রাফি তানাফকে বলে “চলে আসছি ভাই। নেন আপনার খাদক বউ”

নাদিম শেখ ভাড়া করা গুন্ডাকে পাঠিয়েছে খোজ নেওয়ার জন্য। এদিকে রিয়ান নাদিম শেখ’কে থ্রেড দিয়ে বলছে “এই বিয়ে যদি এখন না হয় তাহলে আমি পরে আর বিয়ে করবো না”

আজীম শেখ নাদিম শেখ বিপদে পড়ে পিও’র বিয়েতে সামিল হয়।
দোয়ার আম্মু ও পিওর মা নাদিম শেখের কার্টুন ফেস দেখে হেসে কুটিকুটি।

পিওর আম্মু মনে মনে বলে “এবার বুঝ ঠ্যালা। এতক্ষণে ওরা পৌছে গেছে। আর খুঁজে লাভ নেই নাদিম”

দোয়া রাফির দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে পারছে না রাফির গলা টিপে দিতে। দোয়া রাফিকে একপাশে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে “এই মক্কেলের কাছে নিয়ে না এসে আমায় একেবারে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে আসতি তাহলে ভালো ছিলো”

ইনান রাফির আর দোয়ার কথোপকথন শুনে ফিক করে হেসে বলে “ম্যাম বুড়িগঙ্গা নদী অনেক দুর নাহলে এই আইডিয়া মন্দ না। নদীতে ডুবে গেলে আপনাকে কেউ খুঁজে পেতো না। সমস্যা নেই ম্যাম আশেপাশে কোনো নদী পেলে গাড়ি দাড় করিয়ে আপনাকে ধাক্কা দেবো।”

দোয়া ইনানের কথায় ভয়ে ঢোক গিলে চুপ করে আছে,তানাফ সবাইকে বলে “গাইস গাড়িতে বসে পরো,মনে হচ্ছে ওরা আমাদের পিছু নিয়ে এখান অব্দি পৌঁছে যাবে”

যেই বলা সেই কথা। গুন্ডারা ঘিরে ধরেছে সবাইকে, ইনান গাড়ি থেকে বালু হাতে নিয়ে গুন্ডাদের সামনে গিয়ে বলে “ফকির দরবার থেকে এনেছি,যাদের মাথায় চুল নেই তাদের চুল গজাবে।”

এই বলে ঠাক মাথা ওয়ালা গুন্ডার কাছে গিয়ে এক মুষ্টিবদ্ধ বালু চোখে আর মাথায় ছুড়ে মারে, অমনি ইনানকে বাকিগুন্ডারা ঘিরে ফেলে।

এদিকে তানাফ ও রাফি সবাই গুন্ডাদেরকে মারছে। ইভা, দোয়া,মায়া বাকি মেয়েরা গাড়িতে বসে আছে ভয়ে। তানাফের ফাইট দেখে দোয়া ভয়ে কাঁচুমাচু করছে।

ইনানকে গুন্ডা যেই না মারতে যাবে ইনান গুন্ডাকে বলে উঠে “ওয়েট ওয়েট হ্যাড-টস করি আমরা চল। যে আগে আসবে সে মারবে”

গুন্ডারা বিরক্তি নিয়ে বলে “আচ্ছা”

ইনান টস নেওয়ার পর ইনান ফাইট করার জন্য তৈরি হচ্ছে, ইনান প্রথমে তাদের সামনে এক বোতল পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো। এরপর বসে বসে গাড়ির ভেতর থাকা ফ্রুট নিয়ে খেতে লাগলো। মার্সাল বের করে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে আর হাটছে। হাফ গুন্ডার ইনানের খাওয়া দেখে মুখ দিয়ে লোল ঝড়ছে। আরেকটা গুন্ডা ইনানকে বলে “তোর খাওয়া শেষ হয়েছে? এবার চল মারবি আই”

ইনান ক্যাবলার মতো হাসি দিয়ে বলে “আরে দাড়া আরেকটু”
এই বলে ইনান চিপস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে ইনান ঢেকুর তুলে বলে “এবার খেয়ে শক্তি করেছি,এমন মার মারবো না,বাপের নাম ভুলে যাবি।”

গুন্ডাগুলো ইনানের দিকে তেড়ে আসে অমনি ইনান গাড়ির পেছন থেকে গাড়ির টায়ার তাদের গলায় পরিয়ে দিয়ে দু’জনে ঘুরছে। ইনান ও গুন্ডা একে অপরকে ধরে ঘুরছে। গুন্ডার গলায় টায়ার পরানো।
ইনান গুন্ডার মাথায় টায়ার ধরে ঘুরে ঘুরে বলছে “মেলা গো মেলা, আমরা সবাই খেলায়। একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে যার কোনো সাথী নেই”

ইনান ও গুন্ডা দু’জনেই ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে ধপ করে পড়ে যায়, বাকি অর্ধেক গুন্ডা কাঁদছে বসে বসে, ইনান ঢুলতে ঢুলতে তাদের কাছে গিয়ে বলে “কিরে কাঁদছিস কেন?”

গুন্ডা গুলো ইনানকে কেঁদে কেঁদে বলে “ছুডু বেলায় আমরাও এই কবিতা কইয়া খেলতাম আইজ ছুডু বেলার কথা মনে পইরা গেলো”

ইনান গুন্ডার ঠাক মাথায় দুটো চড় মেরে বলে “কাঁদিস না আজ আমরা একসাথে খেলমু”

অমনি পেছন থেকে ইনানকে এট্যাক করতে আসে আরেক গুন্ডা। ইনান সরে যাওয়াতে ঠাক মাথাওয়ালা গুন্ডার মাথায় গিয়ে পড়ে এট্যাক।

টায়ার পরা অবস্তা গুন্ডা উঠে দাড়িয়ে বলে “তোকে তো আমি শেষ করবো। তুই আমার সময় নস্ট করলি”

ইনান ক্যাবলার মতো দাড়িয়ে টায়ার পরা গুন্ডাটা’কে বলে “উঠো গো উঠো চোখের পানি মুছো,হাতে কী? কমলা? কই তোর হাতে কমলা নাই। টায়ার আছে”

গুন্ডা ইনানের কথায় টায়ারের দিকে তাকিয়ে ইনানের দিকে যেইনা টায়ার ছুড়ে মারবে তার আগেই ইনান সরে গিয়ে আরেকটা গুন্ডাকে এনে দাড় করিয়ে দেয়।

ইনান বাকিগুন্ডাদের বলছে “দেখলি? তোদের সাথে ছোটবেলার খেলা খেলতে দিলো না। মার ওদের। তোদের লোক তোদেরকে কীভাবে মারলো দেখলি?”

গুন্ডারা বোকার মতো ইনানের কথায় তাদের দলে লোকের সাথে মারপিট লাগিয়ে দিলো।
এদিকে ইনান আস্তে আস্তে কেটে পরলো। তানাফ রাফি মারপিট করে হয়রান।ইনান বুক ফুলিয়ে ভাব নিয়ে এসে বলে তানাফ আর রাফিকে

“এভাবে বাচ্চাদের সাথে গ্যাঞ্জাম করে লাভ আছে? আমার মতো কৌশলে শিক্ষা দেওয়া দরকার। ঐ যে দেখুন তারা নিজেদের মধ্যেই মারপিট করছে। স্যার চলুন আমরা কেটে পরি”

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here