তবু_কেন_এত_অনুভব? #৪র্থ_পর্ব

0
1690

#তবু_কেন_এত_অনুভব?
#৪র্থ_পর্ব
#written_by_Liza

“স্যার ছেলেভাবির জন্য কাল একগাদা গোলাপ নিয়ে যাবেন প্লিজ। হাফ ছেলেদের গোলাপ পছন্দ।আমাদের ছেলেভাবি জানের ও খুব পছন্দ হবে নিশ্চয়”

এই বলে ইনান দৌড় দেয় মার খাওয়ার ভয়ে, আজমী ইনানের কান্ডে হাসতে শুরু করে।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পরেছে,দোয়া শুয়ে শুয়ে ভাবছে “রাফির জন্য আবার ফাঁসবো না তো? মনটা কেমন কেমন কাঁচুমাচু করছে। যাবো? না যাই, খাওয়া মিস দেওয়া যাবেনা। রাফি টাকা দিয়ে ট্রিট দিচ্ছে কার কি? নো ঝামেলা ডু ফুর্তি”

দোয়া ভাবতে ভাবতে কবে যে ঘুমিয়ে পরে তার আয়ত্তা নেয়,

এদিকে ইনান বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরেছে,কাল তানাফ স্যারের সাথে চো*র ধরতে যেতে হবে।
ইনানের মনে দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো, ইনান তানাফ স্যারকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে “স্যার কাল আমি কি পড়ে যাবো?”

এটা বলার জন্য কি এত রাতে ম্যাসেজ দিয়েছো ইনান? (তানাফ আজমী)

ইয়ে মানে স্যার কাল যদি সুন্দর করে না যাই, তাহলে তো আমাদেরকেই চো*র ভেবে মানুষ গণপিটুনি দেবে (ইনান)

“তোমার কি মজা লাগছে খুব?ঠিক আছে শাড়ি পড়ে এসো কাল, তাহলে কেউ বুঝতে পারবে না” তানাফ রাগান্বিত হয়ে ম্যাসেজগুলো লিখে পাঠিয়ে দেয়।

স্যার ম্যাসেজটা কি দিয়েছেন দেখতে পারছিনা, পুরোটাই ব্লাংক দেখাচ্ছে, টিপ্পনী কেটে ইনান অফলাইনে চলে যায়।

তানাফ বুঝতে পেরেছে ইনান তানাফকে জ্বালাতে এসেছে। এই ইনানের কাজ হলো আগুনের ভেতর তেল ঢেলে দেওয়া।
তানাফ কাজ বাজ সেরে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাতের প্রায় দেড়টা দোয়ার মেঝো কাকা নাদিম শেখ রুমে রুমে টহল দিচ্ছে আর দেখছে সবাই ঘুমিয়েছে কি না।

এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে খুব,নাদিম শেখ দোয়ার বাবার রুমে উঁকি দিয়ে ভালো করে আয়ত্ত করে নিচ্ছে সবটা। পা টিপে টিপে রুমের ভেতর প্রবেশ করে চারপাশ দেখতে লাগলো নাদিম শেখ। অন্ধকার হওয়াতে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
দেয়াল ধরে ধরে আলমারির কাছে গেলো, আলমারিতে তালা না দেওয়ার ফলে নাদিম শেখ আস্তে আস্তে আলমারির দরজা খুলতে লাগলো। দোয়ার বাবা আজিম শেখ নড়েচড়ে এপাশ থেকে ওপাশে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে আবার। নাদিম শেখ মনে মনে বলতে লাগলো “রিস্ক হয়ে যাচ্ছে বেশি,এখন কিছু করা যাবেনা। যা করতে হবে দোয়াকে দিয়ে করতে হবে৷ ও হচ্ছে একমাত্র হাতিয়ার।আপাতত এখন যাই। দোয়ামনি তৈরি থাক মা।”

নাদিম শেখ রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো, বিছানায় মেঝো কাকিমা শুয়ে আছে। নাদিম শেখ বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার স্ত্রী চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাদিম শেখ ভয়ে উঠে বসে।

এলে কেন? যাও বাড়ির দলিলপত্রের খোঁজ করো যাও। (মেঝো কাকিমা)

তু তুমি কি যা তা বলছো এসব? মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? (নাদিম শেখ)

কি ধরা খেয়ে গেলে? যার ঘরে থাকছো তার বুকেই ছুরি মারতে যাচ্ছো? (মেঝো কাকিমা)

নাদিম শেখ রেগে গলা টিপে ধরে তার স্ত্রীর। কোনোভাবে নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও ছাড়াতে পারছেনা নাদিম শেখের কাছ থেকে। দরজার ধাক্কা খেতেই নাদিম শেখ ভয়ে গলা ছেড়ে দেয়।

দোয়ার মেঝো কাকিমা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে, নাদিম শেখ গাল চেপে ধরে বলে “আওয়াজ যেনো বাহিরে না যায়।নাহলে তোর গলা টিপে রক্ত চুষে খাবো। যদি মুখ খুলেছিস তোর একদিন কি আমার একদিন”

দোয়ার মেঝো কাকিমা মুখে কাঁপড় গুজে দিয়ে ওপাশ ফিরে কাঁদছে।

ভোর ফুটে উঠেছে,চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ৷ সবাই ঘুম থেকে ওঠে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।

খাবার টেবিলে মেঝো কাকিমা খাবার সার্ভ করছে৷ দোয়া ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে খেতে বসেছে, আজীম শেখ পত্রিকা পড়ছে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। নাদিম শেখ ব্যাবসার কাজের কথা বলছে আজীম শেখের সাথে।

সবাই খাওয়াদাওয়া কর‍তে ব্যাস্ত, হঠাৎ দোয়ার মা সবার মাঝখানে বলে ওঠে, “কিরে ছোটু তোর গলায় ওটা কিসের দাগ?”

মেঝো কাকিমা তথমথ খেয়ে উড়নার দিয়ে ঢেকে ফেলে, নাদিম শেখ চোখ রাঙ্গিয়ে তার স্ত্রীকে বলছে “উড়না ঠিক করে পর‍তে পারো না? কোনদিন যে ফাঁসি খেয়ে মরে যাও কে জানে”

দোয়ার মেঝো কাকিমা ঢোক গিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছে সবার, চোখে পানি ছলছল করছে।
দোয়ার মায়ের চোখ এড়ায়নি এই বিষয়টি। দোয়ার মা সব বুঝতে পেরে চুপ করে আছে।

খাবার সেড়ে যে যার রুমে চলে গিয়েছে। মেঝো কাকিমা বেসিনে প্লেট পরিষ্কার করছে, পেছন থেকে কে যেনো জড়িয়ে ধরলো তাকে। ভয়ে আৎকে ওঠে মেঝো কাকিমা। পেছনে ফিরে দেখে তার বড় মেয়ে পিও দাড়িয়ে আছে। মেয়েকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় মেঝো কাকিমা।

পিও তার মাকে বলছে “মা একেবারে চলে এসেছি হোস্টেল থেকে। আর যাবো না তুমি খুশি তো এবার?”

পিও’র মা পিওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে “হ্যাঁ মা অনেক খুশি। যা তোর বাবার সাথে দেখা করে আয়।রুমে হবে হয়তো”

পিও তার মায়ের কথামতো বাবার সাথে দেখা করতে চলে যায়। নাদিম শেখের সবচেয়ে আদরের মেয়ে হচ্ছে, তার বড় মেয়ে পিও।

পিওকে দেখে নাদিম শেখ খুশিতে গদগদ করছে।পিও বাড়ি ফিরে আসাতে পুরো ঘর খুশিতে হৈ-হুল্লোড়।

দুপুরে দোয়া খেয়ে রেডি হচ্ছে ক্যাফে যাওয়ার জন্য। অলরেডি চারটা মিসড কল দিয়ে দিয়েছে রাফি। দোয়া তৈরি হয়ে সবাইকে মিথ্যে বলে বেরিয়েছে।

ক্যাফে ইভা,মায়া,রাফি আরো কয়েকজন বন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছে আর অপেক্ষা করছে দোয়ার জন্য। দোয়ার পুরো গ্যাং এসেছে ট্রিটের জন্য আজ।

এদিকে তানাফ তৈরি হয়ে বেরিয়েছে ইনানকে নিয়ে, লোকেশন বের করে ফেলেছে তানাফ।
গাড়ি চলছে লোকেশন অনুযায়ী। ইনান তানাফকে বলছে
“স্যার গোলাপ ফুল নেবেন না?ছেলেভাবি জানের খুব পছন্দ হবে”

তানাফ চোখ গরম করে ইনানের দিকে তাকাতেই ইনান কাঁশতে শুরু করে, ইনান আমতা আমতা করে বলে “ছেলেভাবি জান বলতে ওটা বলি নি স্যার। স্যার ভাবুন তো যদি গিয়ে দেখেন, চার পাঁচটা মেয়ের মতো না ভাবি। একদম আমাদের মতো ছেলে। আপনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বিশ্রি হাসি দিয়ে জান বলছে আপনাকে।তখন সিন টা কেমন হবে স্যার যাস্ট ভাবুন একবার। আমি তো ওদিকেই হাত তালি দিয়ে ভাবিকে কংগ্রাচুলেশনস জানাবো”

তানাফ রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলে “হোয়াট দা”

অমনি ইনান কথা থামিয়ে ফেলে, গাড়ির জানালার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাঁসছে।
ইনান মনে মনে বলছে “স্যার ছেলেভাবি জানের জন্য শুভকামনা রইলো। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে মা কে হবে!তবে আমি মানিয়ে নেবো স্যার আপনার জন্য৷ আমার প্রিয় স্যার আপনি। আপনার জন্য একটা দামড়া পুরুষকে ভাবি ডাকতে কোনো সমস্যা নেই আমার। গুড লাক স্যার”

গাড়ি এসে পৌছেছে,ততক্ষণে দোয়া চলে এসেছে ক্যাফে। রাফি দোয়াকে দেখে দাড়িয়ে বলে “ইয়ো মামা আজ ট্রীট হবে ট্রীট। একাউন্টে পাঁচহাজার ঢুকেছে৷ কি খাবি বল। সব তোর জন্য আয়োজন। আজ আর কেউ তোকে বাঁধা দেবে না”

দোয়া চেয়ারে বসে বলে রাফিকে “জন্মের খাবার খাওয়াবি মনে হচ্ছে ভাই। আমার তো কেমন কেমন লাগতেছে। আজকে মনে হয় আমি আবারো বিপদে পরবো।”

দোয়ার কথা থামিয়ে দিয়ে ইভা,মায়া বাকিরা বলে ওঠে “আরে ড্যুড আমরা থাকতে ভয় কিসের? নো প্যারা ডু ফুর্তি। ”

এই ওয়েটার মামা এদিকে আসো তো, এখানে যা যা ডেজার্ট আছে সব গুলা দাও৷ টাকা নিয়ে চিন্তা কর‍তে হবে না। তুমি যাস্ট দিয়ে যাও (রাফি)

ওয়েটার রাফির কথামতো এক এক করে সব আনতে লাগলো টেবিলে, টেবিলে খাবার রাখার জায়গা নেয়। রাফি দোয়াকে বলছে “নে মামা শুরু কর। আজকের পর ঢপ মারমু না আমি তওবা করছি। এটাই লাস্ট খানাপিনা আমাদের”

দোয়া খেতে লাগলো মনের সুখে এক এক করে, এদিকে তানাফ ও ইনান হাতে ফুল নিয়ে ক্যাফের ভেতর ঢুকেছে,কিছু খাবে একটু বসবে তার জন্য।

ইনান তানাফকে বলছে “স্যার স্যার ঐ যে দেখুন আমাদের ম্যাডামের মত লাগছে,মানে রিয়াল ম্যাডাম। আপনি তো ফে*ইক ম্যাডামের ফাঁদে পরলেন,”

তানাফ ইনানের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে যেনো গিলে খাবে। ইনান তানাফের চোখ দেখে বাকিকথা গিলে নেয়।

তানাফ চালাকি করে ফেইক একাউন্ট থেকে বিকাশ নাম্বার দেওয়া ফোন নাম্বারটিতে ফোন দেয়, অমনি রাফি খাওয়া বন্ধ করে এদিক ওদিক তাকায়।

তানাফের একটু সন্দেহ লাগছে,তানাফ আবারো ফোন দেয়। রাফির বান্ধবী ইভা আর দোয়া বলে ওঠে “আগে দেখ বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছে কি না,রিসিভ কর। পরে খাস”

রাফি ফোন হাতে নিয়ে, কল কেটে দেয় আর বলে “চিনিনা এডা ক্যাডা,দূর খাইতে থাক মামু। খা খা। দোয়া তোরে কি দিমু বল।”

তানাফের কল রিজেক্ট করাতে তানাফ এবার শিউর হয়ে গিয়েছে। তানাফ তাদের কান্ড দেখছে বসে বসে। এদিকে ইনান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ইনান তানাফকে বলছে “স্যার ঐ যে চুলে লাল ব্যান্ড বাঁধা হাতে রুমাল বাঁধা ছেলে ভাইটিই মনে হয় আমাদের ছেলেভাবি জান। বাহ কি সুন্দর হাসি যেনো মুক্তো ঝড়ছে। দেখুন না স্যার কিভাবে খাচ্ছে,আহহ মনে হচ্ছে খাবার গুলো ব্যাথা পাবে বলে আস্তে আস্তে চিবোচ্ছে”

তানাফ রাগে হাতের সামনে থাকা গ্লাস এক হাতে চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। হাত গড়িয়ে র*ক্ত পরছে। ইনান ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বিড়বিড় করে বলছে “ছেলেভাবি জানকে মনে হয় পছন্দ হয় নি স্যারের।স্যারের কান্ড দেখে আমার মনে একটাই গান বাজছে, আমি পারি না আর পারি না।আমি কেন মরি না।”

চলবে…

(আজমী নামটা অনেকে গুলিয়ে ফেলছে,তাই তানাফ আজমী নাম থেকে তানাফ ডাকা হবে। পিও আর রীধী দুই বোন, দোয়ার মেঝো কাকার মেয়ে। পিও বড় আর রীধী ছোট। কারো বুঝতে সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিয়েন। আর হ্যাঁ নেক্সট না বলে গঠনমূলক মন্তব্য করিয়েন প্লিজ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here