তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,সূচনা_পর্ব

0
2359

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,সূচনা_পর্ব
#written_by_Liza

রাত বাজে এগারোটা বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পরছে আনমনে বসে আছে দোয়া,ছক কষছে কী করে ঘর থেকে বের হওয়া যায়! দোয়া মনে মনে ভাবছে “ইসস রে এবার বোধহয় আম কুড়োতে যেতে পারবো না। মা একদম কড়া নজর রেখেছে আমার উপর”

অমনি জানালায় খটখট আওয়াজ শুরু হলো। ফিসফিসিয়ে কে যেনো বলছে “দোয়া আমরা এসেছি, চল বের হো। এখন অনেক আম ঝড়ে পরেছে। কুড়োতে যাবো”

দোয়া একলাফ দিয়ে জানালা খুলে দেয়, জানালার অপাশে ইভা, মায়া গায়ে সাদা চাদর জড়িয়ে কাঁপছে। দোয়া ফিক করে একগাল হেসে দেয় তাদের দেখে আর বলে “তোরা এমন ভুত সেজেছিস কেন? তোদের দেখে নির্ঘাত আজ কেউ হার্ট এট্যা*ক করবে”

ইভা,মায়া ভেঙ্গচি কেটে বলে “ধুর এসব রাখ,চল দেরি করিস না। বজ্রপাত শুরু হলে প্লান ভেস্তে তখন, অনেক রিস্ক নিয়ে এসেছি”

দোয়া পা টিপে টিপে সবাইকে ঘুমে রেখে, গায়ে সাদা চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে পরে তাদের সাথে। ইভা, মায়া ও দোয়া তিনজন আস্তে আস্তে গাছতলায় চলে যায়।

নাদিম শেখ বাহিরে টর্চ জ্বালিয়ে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে,অমনি নাদিম শেখের নজর পরে দূরের সেই আমগাছের নিচটাতে। নাদিম শেখ টর্চ এর আলো মায়া,ইভা তাদের তিন জনের দিকে তাক করে
চেচিয়ে বলে
“কে রে ওখানে? কার বাড়ির আম চুরি করতে এসেছিস তোরা? দাড়া আমি আসছি।”

অমনি ইভা দোয়াকে বলে উঠে “বোন ধরা পরে গেছিরে পালা এবার।নয়তো তোর কাকা আমাদের এখানেই মেরে ঝুলিয়ে দেবে”

দোয়া ইভাকে থামিয়ে দিয়ে বলে “আরে আরে ভয় পাস কেন?আমি আছি তো, তোদের দোয়া।দেখ আমি কী করি”

দোয়া সাদা চাদর মেলে ধরে দুইহাত নাড়ছে আর বলছে ” তোরা কে কোথায় আছিস, ওঁকে ধর, ঐ উঁচু মগডালে নিয়ে গিয়ে রোস্ট করে খাবো হিহিহিহি”

নাদিম শেখ এমন আওয়াজ শুনে বেশি দেরি করলো না আর, সোজা বাড়িতে ঢুকে পরলো।

ইভা, মায়া, দোয়ার এমন কান্ডে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আর বলছে “তোর কাকাই দেখছি আস্ত ভীতুর ডিম,চল ঐ পাড়ায় যায় ওখানে বেশ বড় বড় আম হয়েছে। ওগুলো পেরে নিয়ে আসবো”

যেই বলা সেই কাজ, সবাই অন্য পাড়ায় হামলা দেয়। বৃষ্টির কারণে সবাই বেঘোরে ঘুম,বাহিরে বজ্রপাত হচ্ছে আলোর জলক পরছে। এদিকে দোয়া মায়া ও ইভা গাছের উপর উঠে আম পারছে।

দোয়া উড়নার ঝুলিতে বেশ পাকা পাকা আম কুড়িয়ে নিয়েছে, দুধওয়ালা কাজ সেরে সাইকেলে করে এদিকটা আসছে,আশেপাশে নিরব ঝিঝি পোকার আওয়াজ।

ইভা মায়া দোয়া তিনজন গাছে চড়ে বসে আম পেরে নিচ্ছে। দুধওয়ালা সাইকেলে করে আসতেই খেয়াল করে দেখে, আমগাছের উপর তিনটা সাদা কী যেনো বসে আছে

দুধওয়ালা সাইকেল দাড় করিয়ে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে। হাতে সিগারেট জ্বালিয়ে কোনো লাভ হলো না অতিরিক্ত ঝড় বাতাসের কারণে সিগারেট ভিজে নিভে গেছে।

দুধওয়ালা আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সাইকেল নিয়ে এগোতে লাগলো।মায়ার হঠাৎ চোখ যায় দুধওয়ালার দিকে। মায়া দোয়াকে বলে “এই রে আবার ফাঁসলাম, দেখ দুধ ওয়ালা ভাই সাইকেল নিয়ে এদিকটা আসছে। কাল নিশ্চয় নালিশ দিবে আমাদের নামে”

দোয়া আম গাছের ঢালে ঝুলে পরে আর বলে
” এদিকে আয় তোর ঘাড় মটকে র*ক্ত খাবো, আয় বলছি,এই কই ভাগিস? কাছে আয় তোকে চিবিয়ে খাই”

দুধওয়ালা ঝুলন্ত কাফন পরা মৃত ব্যাক্তি আকৃতি মানুষ দেখে সেখানেই সাইকেল ফেলে বেহুশ।

দোয়া লাফ দিয়ে নেমে পরে। গাছের সকল আম সাবাড় করে দিয়েছে তিন বান্ধবী মিলে।
দোয়া আম ভাগ বাটোয়ারা করে যে যার বাড়িতে নিয়ে খাটের তলায় শুকোতে দিয়েছে।

রাত তিনটা, ইভা মায়া দোয়া তিন বান্ধবী একত্রিত হয়ে ছক কষতে লাগলো। মায়া দোয়াকে বলে উঠে “ঐ দুধওয়ালা ভাই এখন কোথায় আছে,কী হালে আছে, চল দেখে আসি৷ বেঁচে আছে নাকি ম*রেছে, আল্লাহ জানে। এমন ভয় দেখালি ব্যাটা হার্ট এট্যাক করলো”

মায়ার কথা থামিয়ে দিয়ে ইভা বলে “তোরা যা ভাই,আমি যাবো না। কালকের কথা ভাবতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। তার উপর এখন গিয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারবো না”

দোয়া ইভার হাত শক্ত করে ধরে মায়াকে ইশারা দেয়, মায়া দোয়ার ইশারা অনুযায়ী ইভাকে ধরে তাদের সাথে নিয়ে যায়। ইভা আকুতি মিনতি করছে বারবার। দোয়া ইভাকে ধমক দিয়ে বলে “চুপ বিপদে পরলে একসাথে পরবো। চুরি করলে একসাথে করবো। তুই বাদ যাবি কেন? চল তুই ও সামিল থাকবি আমাদের সাথে,কী বলিস রে মায়া?”

মায়া খিলখিল করে হেসে বলে “ঠিক, ভীতুর ডিম আমাদের ফেলে পালাতে চাইছিস”

ইভা, দোয়া ও মায়ার জেদের কাছে শেষমেশ হার মানলো, সামিল হলো তাদের দুষ্টমিতে।

ঐ পাড়ায় আম গাছতলায় গিয়ে দেখে, দুধওয়ালা ভাই যেমনভাবে পরেছিলো এখনো সেই ভাবেই পরে আছে বেহুশ।

দোয়া ইভা মায়া তারা তিনজন টানতে টানতে দুধওয়ালাকে বাড়ির উঠোনে রেখে চলে আসে।

_____________

পরেরদিন সকালে দোয়ার বাড়িতে ঠকঠক ঠোকা পরছে,দোয়ার মা দরজা খুলে দিতেই আম গাছ ওয়ালার মালিক চেচিয়ে বলে “তোমার ডানপিটে নবাব মেয়ে কোথায় শুনি? আমার গাছের সকল আম খালি করে এখন আরামে ঘুমোচ্ছে? ডাকো ওঁকে”

দোয়ার মা ভ্রু কুঁচকে বলে ” খবরদার, আমার দোয়ার নামে এসব কথা কইবেন না,আমার মাইয়া জ্বর নিয়া কাল থেইকা বেহাল অবস্তা। দেহেন গিয়া ঘরো ঘুমাইতেছে জ্বরে”

ঘরে এসে ঠিকঠাক দেখতে পায় দোয়া জ্বরে কাঁপছে। আম গাছওয়ালার মালিক বলে ” জ্বর হবে না-ই বা কেন? সারারাত ভিজে আম সাবাড় করেছে তাই জ্বর হয়েছে। ডাকো তোমার মেয়েকে। আজ একটা না একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো”

কথাগুলো বলে রুম থেকে দ্রুত প্রস্থান নেয় আম গাছওয়ালার মালিক।

দোয়ার মা দোয়ার হাত টেনে ঘুম থেকে উঠিয়ে বলে “ঐ ব্যাডা যা কইছে তা কি সত্য কইছেনি রে দোয়া?

দোয়া তার মাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে ” আম্মা কাল তোমার লগেই ঘুমাইছি তাইলে তুমি আমারে এই কথা জিগাও ক্যান?”

গ্রামবাসী বৈঠক বসেছে আজ দোয়ার একটা না একটা হেস্তনেস্ত তারা করেই ছাড়বে।
শালিসে সবাই উপস্থিত হয়েছে, মেইন কর্তা হলো দোয়ার বাবা। পুরো গ্রামবাসী দোয়ার বাবার কাছেই বিচার চাইতে এসেছে।

দোয়ারা জমিদার পরিবারের,ছোট থেকে দোয়া ডানপিটে। কারো গাছে ফলের নাম শুনলেই ঝাপিয়ে পড়ে পুরো গ্যাং নিয়ে। গ্যাংয়ের মধ্যে মূল মাস্টারমাইন্ড হলো দোয়া। বাকি দুজন ইভা মায়া হলো দোয়ার এসিস্ট্যান্ট।

পুরো গ্রামবাসী দোয়ার এমন ডানপিটে স্বভাবের জন্য অতিষ্ঠ।

এদিকে দোয়ার বাবা নামকরা জমিদার,রাগী এবং সৎ। সেই রাগী বাবার নাকের নিচ দিয়ে দোয়া দিনের পর দিন দুষ্টুমি চালিয়ে যাচ্ছে।

সমাবেশে দোয়ার পরিবার ও দোয়ার বান্ধবী ইভা,মায়ার পরিবার হাজির। গ্রামবাসী এক এক করে বলতে লাগলো “আজিম চাচা আমার তেতুল গাছের একটা তেতুল নেই।সব খাইয়া লাইছে আফনার মাইয়া”

কেউ কেউ বলছে “আমার পুকুরের বড় তেলাপিয়া মাছডা আর ফাই(পাই) না, মনে অয় আফনার মাইয়া চ্যালাপেলা নিয়া রাইন্ধা খাইয়া লাইছে”

দোয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,মাটিতে আঙ্গুল দিয়ে সার্কেল আকঁছে। আজিম শেখ সবার বিচার শুনে চিৎকার করে বলে “নাদিম গিয়া বড় বেতটা লইয়া আসো,আজকা আমি দেখমু এই হাত দিয়া আর কত চুরি করতে ফারে”

নাদিম শেখ বড় ভাইয়ের কথায় বাধ্য হয়ে বাশের আল কেটে বেত বানিয়ে নিয়ে এসেছে, নাদিম শেখের স্ত্রী বেতটা হাতে নিয়ে বলে “এভাবে বড় মাইডারে তুমি মাইর খাওয়াইবা পিও’র বাপ? মাইয়াডা এহন কী ছুডু আছে? ভাইরে বুঝাও। আর করবো না আমাগো দোয়া”

নাদিম হাত থেকে বেত কেড়ে নিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো। দোয়ার মনে কিঞ্চিৎ পরিমাণের ভয় নেই। দোয়া চুপচাপ নাদিম শেখের অপেক্ষা করছে। নাদিম শেখ আজিম শেখের হাতে বেত দিয়ে বলে “আনছি ভাইজান এই লন”

অমনি দুধ ওয়ালা মাঝখানে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে “দোষ দোয়ামনির না,গাছের আম দোয়া মনি খাইছে না। গাছের আম খাইছে তিনটা রাক্ষসী। আমি নিজে দেখছি।”

সবাই দুধওয়ালার কথা শুনে থ বনে গেলো,দোয়া ইভা ও মায়াকে চোখ টিপ দিয়ে গাল মিটমিট করে হাসছে।

আম গাছ ওয়ালা, দুধওয়ালাকে ধমক দিয়ে বলে “কী যা তা কন,আমার আম এই তিনটা মাইয়াই খাইছে আমি জানি”

দুধওয়ালা লোকটি সেদিন রাতের কথা এক এক করে বলতে লাগলো,তখন নাদিম শেখ তাল মিলিয়ে বলে উঠে “আমিও দেখছি এডা,ডরাইয়া কাউরে কইনায়।”

সবাই এবার রাক্ষসীর কথা শুনে চুপসে গেলো।নাদিম শেখের স্ত্রী এসে মাঝখানে বলে ওঠে “মাফ করবেন ভাইজান একটা কথা কইতাম চায় আফনাগো”

আজিম শেখ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়, নাদিম শেখের স্ত্রী বলে
“আম যদি দোয়া নিতো তাইলে আম রাখলো কই? আমাগো বাড়িতে তো আম দেখলাম না”

সবাই এবার চিন্তায় পরে যায়, সবাই বলাবলি করছে। দুধওয়ালা কাঁপতে কাঁপতে বলে “আমি কইছিলাম না এই গ্রামে রাক্ষস আছে? এত এত ফলফূসল, মাছ সবডি রাক্ষসীই খাইতাছে।”

দুধওয়ালার কথায় সবাই বিশ্বাস করে শালিস বন্ধ করে,যে যার মত চলে যায়। এদিকে দোয়া খিলখিল করে আপনমনে হেসে বলে
“হিহিহিহি আমিই সেই রাক্ষসী ঘাড় মটকে র*ক্ত খাবো
মু হাহাহাহা”

চলবে?

[প্রথম একবার গল্প ডিলেট করেছি কিছু ব্যাক্তিগত প্রব্লেমের জন্য, প্রব্লেম শেষ হতেও বেশি সময় লাগে নি, সাথে সাথে স্টেপ অনুযায়ী কাজ হয়েছে। থিমটা চেঞ্জ করলাম, কারণ আমি চাইছি সিজন -১ শহুরে টাইপ থাকুক,সিজন- ২ গ্রাম্য পরিবেশ টাইপ। দুটোর স্বাদ ভিন্ন ধাচের হবে। ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। যারা পড়ছেন তারা কাইন্ডলি একটু রেস্পন্স করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here