তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১১তম_পর্ব

0
1115

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১১তম_পর্ব
#written_by_Liza

দোয়া ইচ্ছে করে তানাফের হাত নিজের হাতের সাথে মুষ্টিবদ্ধ করে তানাফের সাথে হাসছে।

তানাফ বুঝতে পেরেও কিছু বলে না,তানাফ চাইছে মনে প্রানে অনু সবটা বুঝে দূরে সরে যাক। অনু রাগে ফুঁসছে তাদের দেখে। অনু,’ তানাফ ও দোয়াকে এড়িয়ে চলে গেলো ভেতরে। ইনান ক্লিনিক এর ভেতর থেকে বেরিয়ে এক গাল হেসে বলে ” তানাফ স্যার,দোয়া ম্যাম।কখন এলেন আপনারা?”

দোয়া,’ ইনানকে দেখে বলে
“মাত্র আপনার স্যারের সাথে আসলাম, আপনার স্যার বলছিলো ‘ওগো চলেন আমার ক্লিনিক টা দেখিয়ে আসি আপনাকে। এরপর একটু ঘুরবো।’ আমিও আর নিষেধ দিলাম না চলে এলাম আপনাদের দেখতে”

দোয়ার এমন কথায় ইনান থ বনে গেলো, ইনান মনে মনে বলছে ” হঠাৎ দোয়া ম্যামের কী হলো? এত চেঞ্জ? সব কী ঠিক হয়ে গেলো? নাকি লোক দেখানো সব?আল্লাহ জানে এই দোয়া ম্যামের মাথায় কী চলছে”

তানাফ,’ ইনানের এই অবস্তা দেখে হাসছে মিটমিট করে, তানাফ সবার সাথে আলাপ করে নিজের ল্যাবে দোয়াকে নিয়ে ঢুকলো। ল্যাবের ভেতর অনু বসে আছে,অনু হাতে কলম নিয়ে টেবিলে ঘষছে আর রাগে কাঁপছে।

দোয়া খেয়াল করে তানাফকে বলে ” আপনি বলেছিলেন, বিয়ের পর ঐ চেয়ারটাতে শুধু আমি বসবো। তাহলে এই মেয়ে কেন এই চেয়ারে? কে ওঁ?”

তানাফ চোখ বড় বড় করে দোয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে মনে মনে বলছে “কিহ আমি কবে বলেছি এই কথা? এখন দেখছি আমার চেয়ারটাতে ভাগ বসাতে তৈরি হচ্ছে সে”

দোয়া রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “কথা বলছেন না কেন? আমার চেয়ারটাতে সে কেন বসলো”

অনু রেগেমেগে দাঁড়িয়ে পরে আর বলে “তানাফ খুব বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু,এর ফল খুব খারাপ হবে”

তানাফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই দোয়া তানাফকে থামিয়ে দিয়ে বলে
” যাস্ট শাট আপ, ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট ওকে?”

তানাফ দোয়ার মুখে ইংলিশ স্পিকিং শুনে হা করে আছে,ইনান সবে মাত্র ল্যাবে ঢুকেছে। ইনান দোয়ার কথা শুনে ঢোক গিলছে। দোয়া,’ অনুকে বলছে
“এটা আমার প্রাপ্য কোনো বাহিরের পরনারীর প্রাপ্য নয়। যা ছিলো সব অতীত। তার বর্তমান, ভবিষ্যৎ এখন আমি। এর বাহিরে যদি আরেকটাও কথা শুনেছি তবে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।মাইন্ড ইট মিস অনু”

অনু কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। ছলছল চোখে তানাফের দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করছে। ইনান পেছন থেকে তালি দিয়ে বলে “একদম ভাবি সঠিক কথা বললেন।এখন থেকে আপনার রাজত্ব চলবে”

তানাফ কে অনু বলছে “এই অপমান গুলো করার জন্যই কী তুই এমনটা করেছিস তানাফ? তোকে আমি ভালোবাসি,তুই জেনে বুঝে বিয়েটা করলি আমাকে আঘাত করার জন্য। এখন গাইয়া মেয়েটাকে দিয়ে আমাকে অপমান করাচ্ছিস”

তানাফ অনুকে ধমক দিয়ে বলে “মুখ সামলে কথা বলবি অনু, ও আমার ভালোবাসা, কাকে গাইয়া বলছিস? তোর যতটুকু ম্যানার্স নেই সেন্স নেই। ওঁর ততটুকু আছে। আর শোন তোকে আঘাত করার জন্য আমি বিয়ে করিনি। আমি ওঁকে ভালোবাসি তাই বউ করে আমার লাইফে এনেছি। তুই থার্ড পার্সনের মতো এন্ট্রি নিস না বোন। তোকে আমি কখনো ভালোবাসি নি।এজ এ ফ্রেন্ড ছিলি,কিন্তু তুই বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারলি না।সো আমার আর দোয়ার মাঝখানে আসার চেষ্টা করবি না।”

ইনান তানাফের কথা শুনে মুচকি হেসে দেয় আর মনে মনে বলে ” প্রাউড অফ ইউ তানাফ স্যার, আপনি মানুষটা অন্যরকম। নিজের ওয়াইফকে কারো কাছে নিচু করতে চান না। খুশি হলাম খুব।একদিন আপনার সব কথা সত্য হয়ে যাবে স্যার। তখন সত্যি সত্যিই মনে প্রাণে এই দোয়া ম্যামকেই চাইবেন আপনি”

এদিকে অনু চোখ মুছে তানাফের কথায় মনে মনে বলছে “এই সুখ বেশিদিন সইবে না তানাফ,আমি থাকতে তোদের এক হতে দেবো না ”

দোয়া অনুকে সরিয়ে ভেঙ্গচি কেটে তানাফের চেয়ারে বসে পরলো। তানাফ দোয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে “দোয়া কী কোনো কিছু লুকোচ্ছে? দোয়ার কথাবার্তা চালচলনে কখনো বুঝতে পারিনি সে স্পিকিং এ দক্ষ। তার মানে, কী দোয়া লুকোচ্ছে? আমার জানতে হবে”

অনুর আর তর সইছেনা,অনু রাগে ক্ষোভে ল্যাব থেকে বেরিয়ে গেলো। এদিকে ইনান, অনুর এমন অবস্তা দেখে হেসে লুটোপুটি।

অনু যাওয়ার পর তানাফ,ইনানকে বলছে “দেখেছো এই মেয়ের কান্ড? অনুকে কীভাবে কাঁদিয়েছে? আচ্ছা এটা কী ঠিক হলো?”

ইনান তানাফকে বলে “আলবাত ঠিক স্যার,আপনি এখন দোয়ার লিগ্যাল হাসবেন্ড, আপনার উপর দোয়া ম্যামের অধিকার আছে। আর আপনাদের মধ্যে ভালোবাসা থাকুক বা না থাকুক,রেস্পেক্টেশন ঠিকই আছে। কোনো মেয়েই চাই না তার স্বামীর ভাগ দিতে। তেমন’ই দোয়া ম্যাম ও চায়না আপনি কারো হোন। নাহলে বলুন তো,যে দোয়া ম্যাম আপনাকে সহ্য করতে পারতো না, আপনাকে দেখলে রাগে কাঁপতো। সেই দোয়া ম্যাম বিয়ের পর কেন রাতারাতি সব ভুলে আপনার হাত ধরেছে? কারণ সে আগের দোয়া নয়,সে এখন একজন স্ত্রী। তার উদ্দেশ্য আপনাকে আগলে রাখা দুষ্টু নারীর কাছ থেকে। যেটা প্রত্যেক স্ত্রী’রা করে। তার কর্তব্য পালন করছে। আপনার ও উচিৎ আপনি একজন ভালো স্বামী হয়ে তাকে আগলে রাখবেন,তাকে সুখে রাখবেন। এই শহরে আপনার হাত ধরেই তো আসা দোয়া ম্যামের। ভরসার হাতটুকু শক্ত ভাবে ধরতে দিবেন তাকে,যাতে কেউ আপনাদের আলাদা না করে। স্বামী স্ত্রীর বন্ধণ পবিত্র,এই পবিত্র জিনিসের উপর অনু নামের কলঙ্কের দাগ লাগাতে দিয়েন না স্যার।”

তানাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ইনানকে “বাহ বাহ কত বুঝো তুমি। দাড়াও তোমার বিয়ের ব্যাবস্থা করছি”

ইনান লজ্জা পেয়ে চলে যায়। তানাফ ইনানের বলা কথাগুলো ভেবে মুচকি হেসে মনে মনে বলে “আমি একজন ভালো স্বামী ও ভালো বাবা হয়েই বাঁচবো ইনান।”

এদিকে দোয়া আপনমনে তানাফের ফাইলের উপর থাকা খাতার মধ্যে কী যেনো লিখছে,তানাফ’ দোয়ার চেয়ারের পেছনে হাত দিয়ে দোয়ার কান্ডকারখানা দেখছে। এদিকে দোয়া তিন বান্ধবীর নাম লিখে পাশে একটা হার্ট লিখেছে।

তানাফ ভেঙ্গচি কেটে মনে মনে বলে “আমার অফিসে এসে আমার টেবিলের আমার খাতার উপর তাদের নাম খোদায় করে যাচ্ছে, অথচ আমার নামটা তার নামের পাশে জায়গা হয়নি। হিংসুটে টর্নেডো।”

দোয়ার হাত থেকে কলম নিয়ে দোয়ার পাশে তানাফের নামটা লিখে দেয় তানাফ,দোয়া কিছু বলতে গেলেই তানাফ বলে “অনু এসে দেখবে,থাকুক”

দোয়া অনুর নাম শুনতে হেসে দিয়ে বলে, “তাহলে আপনার নামের পাশে একটা হার্ট শেপ এঁকে দেই।আফটার অল কাপল কাপল ভাব আসবে”

তানাফ দোয়াকে বলছে “এতকিছু কী অনুকে দেখানোর জন্যই করছেন?”

দোয়া মুচকি হাসি দিয়ে বলে “হ্যাঁ, ছোট থেকেই মানুষকে জ্বালাতে আমার অনেক ভালো লাগে। কেউ যখন আমার উপর রেগে যায়। তখন তাদেরকে আরো রাগিয়ে দেই। এখন পেয়েছি আপনার বান্ধবী অনুকে, এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনা”

তানাফ থ বনে গেলো দোয়ার কথায়, তানাফ মনে মনে বলছে “ভেবেছি কী, হলোটা কী। ভেবেছিলাম দোয়া স্ত্রীর মতো অধিকার চাইতেই এমন করছে,এখন দেখছি দোয়া তার বাচ্চামো স্বভাবগুলোই অনুর উপর এক্সপেরিমেন্ট করছে। আল্লাহ এই বাচ্চা মেয়েটাকে কবে সুবুদ্ধি দিবা তুমি”

দোয়া তানাফকে ঝাকুনি দিয়ে বলে “ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?”

তানাফ মৃদু হেসে বিড়বিড় করে বলে “খুব ইন্টারেস্টিং, এদিকে ইনান আমাকে কত বড় রচনা বলে গেলো,ভেবেছিলাম সব সত্য।এখন দেখছি বউ আমার উল্টো। গ্রাম থেকে আসার পরপর’ই মুখ দিয়ে যেনো খৈ ফুটছে গড়গড় করে ইংলিশ বলছে। এতদিন কোথায় ছিলো এই ইংলিশ?”

কিছু বলছিলেন? (দোয়া)

না কিছু না,তোহ! ভাবছিলাম আপনার কথাবার্তার ধরণ এত পরিবর্তন কেন? শহরে এসে কী শহরের হাওয়া গায়ে লেগে গেলো? গ্রামে যতদিন ছিলাম কখনো আপনার মুখে এসব শুনিনি। (তানাফ)

গ্রামের লোকরা এসব বুঝেনা,আঞ্চলিক ভাষায় তাদের কাছে প্রাণ।তাই এসব ভাষা বলার মতো জো নেই। পড়াশোনা করেছি তাই এসব জানি। (দোয়া)

তানাফ বুঝতে পেরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে “তা ঠিক,আপনার সাথে আমার এমনিতেও কখনো কথায় হয়নি, ঝগড়া ছাড়া। এত পরিবর্তন দেখে আমি শিহরিত”

দোয়া মৃদু হেসে বলে ” আজ্ঞে ঝগড়া করে তো আর বাপের বাড়ি যেতে পারবো না,তাই ভালো হোক, মন্দ হোক ভাইরাসের সাথেই মানিয়ে নিতে হবে”

তানাফ হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে “দ্যাটস গুড” পরক্ষণেই তানাফ কী যেনো ভেবে বলে “ভাইরাস?মানে? আমি ভাইরাস?আপনাকে তো আমি দেখাচ্ছি মজা”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here