তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১২তম_পর্ব

0
917

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১২তম_পর্ব
#written_by_Liza

তানাফ হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে “দ্যাটস গুড” পরক্ষণেই তানাফ কী যেনো ভেবে বলে “ভাইরাস?মানে? আমি ভাইরাস?আপনাকে তো আমি দেখাচ্ছি মজা”

দোয়া দৌড়ে ল্যাব থেকে বেরিয়ে পরে,তানাফ মনে মনে বলছে “একবার সময় আসুক তারপর ভাইরাস কাকে বলে মজা দেখাবো”

রাতে দোয়া,তানাফ ঘোরাফেরা করে ডিনার সেরে ঘরে ঢুকে, ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে আজমাইন খান।
তানাফকে ঘরে ঢুকতে দেখেই আজমাইন খান বলেন “এই ঘরের রুলস দেখছি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে,রাত বেরাতে দেরী করে ফেরা নিজের ইচ্ছামত চলাফেরা করা। বাহ আমাকে মানুষের মতো মনেই হচ্ছে না কারো”

তানাফ কথা না বাড়িয়ে দোয়াকে নিয়ে রুমে চলে যায়, আজমাইন খান রাগে ফুঁসছে। দোয়া ফ্রেস হয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করছে। তানাফ বেলকনিতে বসে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।

দোয়া খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে গুনগুন করে গান গাইছে,ঠিক অমন সময় তানাফের মা তড়িঘড়ি করে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে “তানাফ শিগগির চল তোর বাবা কেমন যেনো করছে”

তানাফ দৌড়ে তার বাবার কাছে গেলো,আজমাইন খান সোফায় কাঁপছে। তানাফ তার বাবার দিকে তাকিয়ে মাকে বলে “বাবার প্রেশার বেড়েছে,সারাদিন মিলে কী খেয়েছে?”

তানাফের মা তানাফকে বলতে বলতে এদিকে দোয়া,ফ্রীজ থেকে তেতুলের বয়াম বের করে শরবত গুলে খাইয়ে দিয়েছে আজমাইন খান’কে।

তানাফ দোয়াকে রেগেমেগে বলে “কী করলেন আপনি এটা? আন্তাজি কী খাইয়ে দিলেন? সবকিছুতে বাড়াবাড়ি ভালো লাগে না দোয়া”

দোয়া কষ্ট পেয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে,দোয়ার চোখে পানি টলমল করছে।

আজমাইন খান মাথা চেপে ধরে বসে আছে,তানাফ তার বাবার পিঠে মালিশ করছে আলতো করে।
দোয়া তেল ও ঠান্ডা পানি হাল্কা মিশিয়ে আজমাইন খানের মাথায় লাগাতে শুরু করে, প্রথমে আজমাইন খান হুংকার করে উঠলেও মুহুর্তে আরাম লাগাতে চুপ করে রইলো।

আজমাইন খান চোখ বন্ধ করে মাসাজ নিচ্ছে দোয়ার। খানিকক্ষণ পর আজমাইন খান সোফায় ঘুম। দোয়া ঘুম পাড়িয়ে কেউকে কিছু না বলে রুমে চলে আসে,
তানাফ হা করে আছে দোয়ার কান্ডে।

তানাফের মা মুচকি হেসে তানাফকে বলে “তোর চেয়ে বড় ডাক্তার তোর বউ।মুহুর্তেই তোর বাবাকে বশ করে ফেললো।যা গিয়ে ক্ষমা চাইবি। এভাবে কথা বলা তোর ঠিক হয়নি”

তানাফ ঢোক গিলে চলে যায় রুমে,দোয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে তার।
চোখের টলমল করা পানির ফোটা নিচে পরার আগেই তানাফ হাত দিয়ে মুছে নিলো।
দোয়া সরে যেতে চাইলেই তানাফ শক্ত করে দোয়ার হাত ধরে আছে। দোয়া অভিমান করে পাশ ফিরে আছে, তানাফ আস্তে করে দোয়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে
“সরি দোয়া,আমি বুঝতে পারিনি”

দোয়া কোনো কথা না বলে তানাফের হাত ছাড়িয়ে রুমে চলে যায়।

তানাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দোয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে “তো ডাক্তারি কোত্থেকে শিখলো মেয়েটা? এত কিছু জানে কীভাবে?”

দোয়া অভিমানের স্বরে বলে “সবকিছু ডাক্তারদের হাতে ছেড়ে দিলে হয়না,গ্রামের মানুষের এত সামর্থ্য নেয় ডাক্তার দেখানোর। এসব ঘরোয়া টোটকা প্রত্যেক নারীই জানে”

তানাফ ভ্রু কুঁচকে ভেঙ্গচি কাটে,দোয়া গাল ফুলিয়ে খাটে বসে আছে।

পরেরদিন…
__________________
সকাল বেলা কিচেনে গিয়ে দোয়া সকলের জন্য খাবার তৈরি করে,সবার জন্য ডালভাজি,রুটি করেছে,সাথে পায়েশ।
সবাই টেবিলে খেতে বসেছে,দোয়া সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। আজমাইন খান টেবিলে এসে খাবার দেখে চিৎকার করে ওঠে আর বলে “এসব খাবার আমি খাইনা,এসব কে বানিয়েছে? সরাও এখান থেকে”

তানাফের মা বলে “একবার খেয়ে দেখো,সারাজীবন তো ব্রেড খেয়ে এলে,এগুলো খেয়ে দেখো ব্রেডের চেয়ে দ্বিগুণ স্বাদ”

বাহিরের লোকের জন্য এখন আমার খাবার রুটিন পরিবর্তন করতে হবে? এটাই বলতে চাইছো তুমি? (আজমাইন খান)

কাজের বুয়া ব্রেড করে এনে দিয়েছে আজমাইন খানকে, সবাই রুটি ডালভাজি খাচ্ছে৷ আজমাইন খান ব্রেড দিয়ে নাস্তা সেরে রুমে চলে যায়।

দোয়া চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে, তানাফের মা দোয়াকে বসিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে “কষ্ট পাস না,একটু রাগী তবে মন ভালো তোর শশুড়ের। একটু মানিয়ে নে মেয়ে”

তানাফ,’ দোয়ার ও তার মায়ের কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসে।

খাওয়া শেষ করে দোয়া আজমাইন খানের খাবারগুলো ফ্রীজে রেখে দেয়। সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত।

তানাফ ক্লিনিকে গিয়েছে তার কাজে। দোয়া দুপুরের রান্নাগুলো বুয়ার সাথে হাত মিলিয়ে করছে।

আজমাইন খান রুমে এসে পায়চারি করছে,খাবারগুলো আজমাইন খানের চোখে ভাসছে।
আজমাইন খান এদিক ওদিক পায়চারি করছে আর বলছে “খাবারটা একটু করে মুখে দিতে পারতাম তাহলে আফসোস লাগতো না। আমাকে জোর করে একটু সাধলো ও না। সাধলে ঠিকই খেয়ে নিতাম। খাবারের সাথে আমি রাগ করিনা হুহ”

তানাফের মা রুমে এসে বলে “খিদে পেয়েছে? এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?”

যাও তো ঘ্যানঘ্যান করে মাথা খাবে না বলে দিলাম যাও (আজমাইন খান)

আজমাইন খান আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে সকলের দৃষ্টির অগোচরে নিচে গিয়ে ফ্রীজ খুলে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকে দরজার আলতো করে আটকে দিলো।

রুমে এসে আয়েশ করে খাচ্ছে আর বলছে “আহা কী স্বাদ অনেকদিন পর মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পেলাম।ব্রেড আমার জীবন তেজপাতা করে দিয়েছে।”

খেতে খেতে কাঁশতে শুরু করে,পাশে টেবিলে থাকা গ্লাসে পানি নেই। আজমাইন খান পরলো মহা বিপদে।

পাশ ফিরতেই দেখে চোখের সামনে গ্লাস ভর্তি পানি। আজমাইন খান গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি সবটুকু খেয়ে নিলো। খাওয়ার পর ঢেকুর তুলে উপরে তাকাতেই আৎকে ওঠে,

দোয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে আর বলে “কেমন দিলাম আব্বু? খাবেন যখন এত রাগ দেখান কেন? আমাকে বললেই পারতেন আমি খাবার নিয়ে আসতাম। এত কষ্ট করে ফ্রীজের ঠান্ডা খাবার খেয়ে লাভ আছে?”

আজমাইন খান ধমক দিয়ে বলে “কে তোমাকে আমার রুমে আসতে বলেছে? বের হও এখান থেকে”

আব্বুজান আস্তে চিৎকার করেন,এমনিতে তো হাই প্রেশার জুটোলেন কপালে এখন চেচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলার কোনো দরকার নেই। আম্মু এসে যদি দেখে আপনি খেতে গিয়ে ধরা পরেছেন কী লজ্জায় না পরবেন বলুন? তাই বলছি কী চুপচাপ গুডবয় হয়ে থাকুন নাহলে আম্মুকে বলে দেবো (দোয়া)

আজমাইন খান ঢোক গিলে চুপসে যায় দোয়ার কথায়। দোয়া খাবার প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরে। আজমাইন খান মনে মনে বলে
“কী সাংঘাতিক মেয়ে! আমাকে থ্রেড দিয়ে গেলো। আমার প্রেস্টিজের উপর থ্রেড টা দিয়ে গেলো কত বড় সাহস দেখেছো?”

দুপুরে টেবিলে খেতে বসেছে সবাই,দোয়া গ্রাম্য স্টাইলে সব খাবার রেঁধেছে। আজমাইন খান খাবার দেখে আবারো রাগে কিড়মিড় করছে। দোয়া সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তানাফের মা ভয়ে ভয়ে বলছে আজমাইন খান’কে “খেয়ে নাও সিনক্রিয়েট করো না”

আজমাইন খান রেগে চোখ বড় বড় করে যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই দোয়া গলাঝাড়ি দিয়ে বলে “আব্বু খাবেন? নাকি খাবেন না? একটা বলেন তারপর নাহয় আমি”

দোয়াকে মাঝপথে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে আজমাইন খান হাত ধুয়ে খাবারগুলো খেতে লাগলো, তানাফ থ বনে গেলো তার বাবার এমন কান্ডে।

তানাফের মা ইশারা দিয়ে দোয়াকে বলে “কী করেছিস তোর শশুড়কে?”

দোয়া মুচকি হাসি দিয়ে আজমাইন খানের প্লেটে রুই মাছের মাথা তুলে দিয়েছে, আজমাইন খান মনের স্বানন্দে তৃপ্তি মিটিয়ে খাচ্ছে।
আবার চারপাশে উঁকি দিয়ে রাগী চোখে দেখছে সবাইকে।

আজমাইন খান মনে মনে বলছে ” মেয়েটা বেশ ভালোই রাঁধে। যাক এখন থেকে আমার আর রেস্টরন্টে খেয়ে টাকা খোয়াতে হবে না”

খাবার শেষে আজমাইন খান ঢেকুর তুলে বলে “না পারতে খেয়েছি,কী রেঁধেছে এগুলা। নেহাৎ খিদা লেগেছে না খেয়ে পারলাম না।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here