তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৩তম_পর্ব

0
930

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৩তম_পর্ব
#written_by_Liza

খাবার শেষে আজমাইন খান ঢেকুর তুলে বলে “না পারতে খেয়েছি,কী রেঁধেছে এগুলা। নেহাৎ খিদা লেগেছে না খেয়ে পারলাম না।”

আজমাইন খান খাবার খেয়ে রুমে চলে গেলো,তানাফ দোয়ার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি করেছেন আব্বুকে? হঠাৎ দমে গেলো কেন আব্বু?”

দোয়া কিছু না বলে খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের কাজ করতে চলে গেলো,তানাফের মা তানাফকে বলছে “দেখলি? কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়। তোর বাবাকে এই মেয়েই পারবে শায়েস্তা করতে”

বিকেল বেলা তানাফ ইনানকে ফোন দিয়ে বলে “ইনান জলদি ঘরে এসো কিছু কাজ আছে।”

ইনান ফোন পাওয়া মাত্র ফরেন চলে আসে বাসায়,আজমাইন খান বসে বসে তার ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছে তখন। ইনানকে দেখে আজমাইন খান বলে “তোমাকে আজকাল দেখাই যায় না ইনান। তানাফ যা করেছে তা তো জানোই। পারলে ওঁকে একটু বোঝাও”

ইনান আজমাইন খানের পাশে বসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে “আংকেল অনু নামের মেয়েটি প্লান করেছে, তানাফ স্যারকে বিয়ে করে আপনাদের বাড়ি ছাড়া করবে। আমি একটা ভিডিও এনেছি পরে দেখাবো”

আজমাইন খান ভ্রু কুঁচকে বলে “মানে”

পরে বলবো আগে তানাফ স্যারের সাথে দেখা করে আসি,আপনি কথা বলুন এদিকে (ইনান)

ইনান কথাগুলো বলে উপরে চলে গেলো তানাফের কাছে,তানাফ রুমে বসে ফাইল ঘাটাঘাটি করছে।

আসবো স্যার? (ইনান)

ভেতরে এসো,এটা আমার ল্যাব না, রুম।পারমিশন লাগবে না (তানাফ)

না স্যার,প্রাইভেসির ব্যাপার স্যাপার এই আর কি (ইনান)

তানাফ ভ্রু কুঁচকে ইনানকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে “বেশি পেকেছো দেখছি”

ইনান একগাল হাসি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে,অমনি দোয়া রুমে এসে ইনানকে দেখে বলে “আরে ইনান ভাইয়া আপনি? কবে এলেন?”

মাত্র আসলাম ম্যাম।আপনার কী অবস্তা ভালো আছেন? (ইনান)

দোয়া মিটমিট করে হেসে কোনো উওর না দিয়ে চলে যায়। দোয়া যাওয়ার পরেই ইনান, তানাফকে বলে “স্যার আপনাকে বলেছিলাম না! অনু ম্যাম আপনাকে ফাঁসাতে চাইছে। উনি ভালো না”

কেন? কী হয়েছে? ওঁ আমার ফ্রেন্ড, একসাথে বড় হয়েছি আমরা। ওঁ আমাকে কেন ফাঁসাবে? কী উদ্দেশ্য ওঁর? ক্লিয়ারলি বলো (তানাফ)

স্যার,আজ সকালে অনু ম্যাম ক্লিনিকে এসেছিলো সাথে একটা লোক ছিলো। ঐ লোকের সাথে কথা বলছিলো অনু ম্যাম, তখন আমি পেশেন্টকে ব্লাড ডোনাট করে দিয়ে মাত্র এসেছি। (ইনান)

তারপর কী হলো? (তানাফ)

তারা দু”জন কথা বলছিলো,অনু ম্যাম লোকটাকে বলছে ‘তানাফ গাইয়া মেয়েকে বিয়ে করে আমার প্লান ভেস্তে দিলো,চেয়েছিলাম ওঁর বাবাকে হাত করে বিয়েটা করে দলিলটা আমার হাতে করবো। তা আর হলো না। এখন এক মাত্র রাস্তা হলো তানাফের বাবা৷ আজমাইন খান’কে হাত ধরে তানাফের কাছ থেকে দোয়াকে আলাদা করতে হবে।’

তারা এই কথাগুলো বলছিলো আমি রেকর্ড করে এনেছি দেখুন স্যার। এখন আপনার বাবাকে দেখাবো (ইনান)

বুঝলাম। এখন দোয়াকে কিছু বলো না। আর আব্বুর সাথে আলাদা কথা বলে দেখো।আমি যে এসব জানি আব্বুকে বলো না (তানাফ)

ঠিক আছে স্যার, এই বলে ইনান আজমাইন খানের রুমে চলে গেলো। আজমাইন খান ক্লাইন্টদের সাথে ডিল করে রুম চলে এসেছে বেশ খানিকক্ষণ আগে।

ইনান আজমাইন খান’কে বলছে “আংকেল সাবধানে থাকবেন”

কেন, কী হয়েছে? প্রতুত্তরে আজমাইন খান বলে উঠে। ইনান আজমাইন খান’কে ভিডিও রেকর্ড টি প্লে করে দেয়। আজমাইন খান ভিডিও দেখে চুপ করে আছে।ইনান আজমাইন খান’কে বলছে “শিক্ষিত চোরের চেয়ে মুর্খ ভালো মেয়ে অনেক ভালো আংকেল। এবার বুঝলেন কেন আমি এই কথা বললাম?”

আজমাইন খান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে “তোমার স্যার তানাফ জানে?”

না,উনি জানলে আপনাকে ভুল ভাববে। মনে করবে অনুকে দিয়ে আপনিই করাচ্ছেন। যেহেতু দোয়া আর তানাফ স্যারকে আপনি মেনে নেন নি (ইনান)

আজমাইন খান খানিকক্ষণ ভেবে অস্ফুট স্বরে বলে “ঠিক ঠিক,ওঁকে বলো না। আমি দেখছি কী করা যায়”

কী আর করা যাবে? আপনি অনুকে প্রশ্রয় দেবেন না,নয়তো আপনাকে ফাঁসাবে। অনুর প্লান দোয়া ম্যামকে কিডন্যাপ করা। এখন যদি আপনি প্রশ্রয় দেন তাহলে তানাফ স্যার আপনাকে দায়ী করবে। ইনান কথাগুলো বলে রহস্যময় হাসি দেয়।

আজমাইন খান, ইনানকে বলে “আমি অনুর সাথে কথা বলা বন্ধ কর‍তে পারবো না”

কেন আংকেল? আপনি চান দোয়া ম্যাম কিডন্যাপ হোক ওদের সংসার ভাঙ্গুক? (ইনান)

কোনো উওর দিতে পারছেনা আজমাইন খান।আজমাইন খান চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে।

ইনান হতাশ হয়ে বলে “ঠিকাছে আপনি ওদের আলাদা করে খুশি হতে পারলে হোন।কিন্তু আপনিই সব হারাবেন। অন্যায় যে মানে, অন্যায় যে করে দু’জনই সমান অপরাধী”

আজমাইন খান ধমক দিয়ে ইনানকে বলে “পাগল নাকি তুমি? আমি আমার ছেলের ক্ষতি চাইবো?”

আপনি তাহলে মেনে নিলেন, দোয়া ম্যাম আপনার ছেলের বউ? (ইনান)

আজমাইন খান তোতলাতে তোতলাতে বলে “তানাফ আমার ছেলে, ছেলের পছন্দ আমার কী করার আছে?”

ইনান বুঝতে পেরেছে আজমাইন খান মনে মনে দোয়াকে মেনে নিয়েছে। ইনান আজমাইন খানকে বলে

“আপনি অনু ম্যামের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখবেন। উনার প্লান অনুযায়ী ঠুকঠাক সায় দিবেন। তাহলে অনু বুঝবে আপনি ওঁর ফাঁদে পা দিয়েছেন। অনু কী কী করবে তাহলে সব আপডেট পাবেন।”

ঠিক, ঠিক, আমিও ওটাই ভাবছি। সে কী করতে চায় আমার জানা উচিৎ। তার সাথে নাটক করে সব প্লান জানতে হবে আমার (আজমাইন)

এক্সাটলি,এটাই দরকার। সে দোয়াকে কিডন্যাপ করে পাচার করতে চাইতেছে,এই বাড়িতে তানাফ স্যারের বউ হয়ে সম্পত্তি নিজের করতে চাইতেছে। আপনার চোখ কান খোলা রাখতে হবে এখন (ইনান)

কথাবার্তা সেরে দু’জন প্লান করে যে যার মত চুপ করে আছে। আজমাইন খান মনে মনে ভাবছে “যাকে বিশ্বাস করে যোগ্য বউ বানাতে চেয়েছি,সে-ই আমার পেছনে আমাকে ছু-রি মা-রতে বসে আছে।”

_____________________

অঝোর বর্ষণ শুরু হয়েছে, আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। ভারী বর্ষণের ফলে গাছপালা বাতাসের সাথে দোল খাচ্ছে। দোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনমনে তা দেখছে। তানাফ বুঝতে পেরেছে, দোয়া তার গ্রামীন শৈশব জীবনকে খুব মিস করছে। দোয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাহিরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা উপভোগ করছে।

নিচে বাচ্চারা আম কুড়িয়ে নিচ্ছে,দোয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দোয়ার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে এই দৃশ্য দেখে।

আজমাইন খান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে,আজমাইন খান’এর বারান্দা দিয়ে দোয়াকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আজমাইন খান হঠাৎ খেয়াল করে দোয়াকে। দোয়া নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।

দোয়াকে কাঁদতে দেখে আজমাইন খান নিচে তাকিয়ে দেখে ছোট বাচ্চারা নিচে আমগাছ থেকে আম কুড়িয়ে নিচ্ছে।

আজমাইন খান বুঝতে পেরেছে দোয়ার অবস্তা। দোয়ার খুব ইচ্ছে করে নিচে যেতে,কিন্তু এই উচ্চ বিলাসবহুল ফ্লাট এর মধ্যে এই বন্দি মানুষের এমন পাগলামো মানায় না। তাই মনের ইচ্ছা চাপা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দোয়া।

দোয়া খেয়াল করে দেখে আজমাইন খান নিচে গিয়ে লুঙ্গি গিট্টু দিয়ে বাচ্চাদের সাথে আম কুড়োচ্ছে মজা করছে, আশেপাশের ফ্লাটের জানালা দিয়ে মানুষগুলো বলছে “আজমাইন ভাই এ কী দেখছি আমরা, এই জীবনের প্রথম আপনাকে এমন অবস্তায় দেখছি তাও বাচ্চাদের সাথে। আপনি যেই মানুষটা কখনো নিচে দাড়ান না। বাচ্চাদের ধমক দিয়ে দমিয়ে রাখেন, আর আজ আপনিই সেই বাচ্চাদের সাথে আম কুড়োচ্ছেন? বাহ এত পরিবর্তন?”

আজমাই খান হেসে বলে “মানুষটা বুড়ো হয়েছি মন বুড়ো হয়নি। হাহাহাহা আমিও আম কুড়োবো।”

ফ্লাটের একেকজন বলছে “যার ধমকে নিচে বাচ্চারা বের হতোনা,যাকে দেখলে দৌড়ে পালাতো, আজ তারাই আজমাইন ভাইয়ের সাথে খেলছে।কী অদ্ভুত”

দোয়া সবার কথা শুনে থ বনে গেলো।দোয়ার পেছনে তানাফ ও তানাফের আম্মু দাঁড়িয়ে আছে তা দোয়াও জানে না। তারা সবাই আজমাইন খানের কান্ডে থ বনে আছে।
প্রচুর বর্ষণ হচ্ছে একে একে ফ্লাটের সবাই সামিল হচ্ছে নিচে।

তানাফ ও চলে গিয়েছে নিচে। সবাই মিলে নিচে মজা করছে, দোয়া তাকিয়ে দেখছে সবটা।দোয়ার কাধে তার শাশুড়ী হাত দিয়ে বলে “তুই ও যা মেয়ে।তোর ও তো মন চায় এসব করতে। যা মনটাকে আর বাঁধা দিস না। যা, নিচে তানাফ আছে। ছেলেটা কখনো এসব করে নি তার শৈশব গিয়েছে এই বন্দি জায়গায়। আজ সে মুক্ত সাথে তোর শশুড় ও শৈশব ফিরে পেয়েছে। তুই আর আটকে রাখিস না নিজেকে। যা তুই”

দোয়া বাঁধা দিয়ে বলে “না আম্মু আমাকে দেখলে আব্বু মজা করবে না, থাক মানুষটা একটু প্রাণ খুলে বাঁচুক।এই শক্ত মুখোশ এর ভেতর থেকে বেরিয়ে একটু শ্বাস নিক প্রকৃতির।”

ইশারা দিয়ে আজমাইন খান দোয়াকে ডাকছে নিচে যেতে, দোয়া চোখ মুছে ভালো করে দেখছে আদো কী তাকে ডাকছে কী না। আজমাইন খান হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকছে দোয়াকে, দোয়া বুঝতে পেরে দৌড়ে নিচে চলে গেলো। দোয়া সবার সাথে সামিল হয়ে আম কুড়িয়ে নিচ্ছে।

তানাফ আর আজমাইন খান এক পাশে দাঁড়িয়ে দোয়ার কান্ড দেখছে। বাচ্চারা দোয়াকে ঘিরে ধরে মজা করছে। বাচ্চারা তাদের মতো একজনকে পেয়ে গিয়েছে দুষ্টুমি করার জন্য।

আজমাইন খান দোয়ার কান্ড দেখছে, বাচ্চাদের সাথে মজা করছে দোয়া। দোয়া মুহুর্তেই শৈশবে ফিরে গিয়েছে। দোয়া যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
দোয়াকে প্রানবন্ত গ্রামের মেয়ে হিসেবে ফিরে পেয়ে তানাফের আম্মু খুশি হয়ে গিয়েছে। এদিকে আজমাইন খান মনে মনে বলছে “এটাই চাই আমি”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here