#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৪তম_পর্ব
#written_by_Liza
বাচ্চাদের সাথে মজা করছে দোয়া। দোয়া মুহুর্তেই শৈশবে ফিরে গিয়েছে। দোয়া যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
দোয়াকে প্রানবন্ত গ্রামের মেয়ে হিসেবে ফিরে পেয়ে তানাফের আম্মু খুশি হয়ে গিয়েছে। এদিকে আজমাইন খান মনে মনে বলছে
“এটাই চাই আমি”
___________________
রাত বাজে আটটা তানাফের আব্বু রুমে জ্বর নিয়ে শুয়ে আছে,বৃষ্টিতে ভেজার ফলে জ্বর এসেছে। দোয়া হাতে এক কাপ গরম আদা চা নিয়ে হাজির। তানাফের আব্বু ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে।
দোয়া চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে “আব্বু চা টা খান, ভালো লাগবে। সর্দি জ্বর টা একটু কমবে”
এসব আমি খাইনা,নিয়ে যাও। ডক্টর ফ্যামিলিতে এসে তোমার ডক্টর গিরি করতে হবে না যাও এখান থেকে (তানাফের আব্বু)
দোয়া ধমক দিয়ে বলে, “খান বলছি,জ্বর বাঁধিয়ে বড় বড় কথা। এক্ষুনি ফিনিশ করুন।আমি এসে যেনো দেখি সব খালি”
দোয়া টেবিলে চায়ের কাপ দিয়ে কিচেনে চলে গেলো,তানাফের আম্মু দোয়ার কান্ডে মিটমিট করে হাসে।
টেবিলে থাকা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো, আদা ও পুদিনার সুগন্ধে মন মেজাজ মুহুর্তেই বদলে গেলো। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। তানাফের আব্বু বিড়বিড় করে বলে “দারুণ বুদ্ধি মেয়ের,জ্বরের মধ্যে চা টা ভালোই কাজ করছে”
চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে ভাবতে ভাবতে পুরো চা খেয়ে নিলো। এদিকে তানাফ রুমে হাঁচি-কাশি দিচ্ছে।
দোয়া তানাফকেও চা দিয়ে গেলো।
তানাফ বাধ্য ছেলের মতো চায়ে চুমুক দিয়ে বাকি কাজ করছে। দু’দিন এর মেয়ে এসে পুরো ঘরকে আগলে নিলো।
এভাবে দিন পার হচ্ছে।
দোয়ার ভীষণ আইস্ক্রীম খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বলতে পারছে না। তানাফ সারাদিন বাহিরে কাজে ব্যাস্ত থাকে তাই বলা হয়ে ওঠে না। দোয়া নিচে আইস্ক্রীম ওয়ালার দিকে তাকিয়ে আছে। তানাফের আব্বু খেয়াল করে সবটা।
দোয়া হতাশ হয়ে রুমে এসে শুয়ে পরে,তানাফের আব্বু আইস্ক্রীম কিনে এনে দোয়ার রুমে চুপি চুপি রেখে যায়। দোয়া পাশ ফিরে আইস্ক্রীম পাশে দেখে অবাক।
আইস্ক্রীম হাতে নিয়ে দোয়া তার শাশুড়ীকে জিজ্ঞেস করে “আম্মু এটা কার?কোত্থেকে আমার রুমে এলো?”
তানাফের আম্মু কিছু বুঝতে না পেরে বলে “আমি তো জানি না, তুই খেয়ে ফেল।”
দোয়া খুশি মনে রুমে গিয়ে পা দোলাতে দোলাতে আইস্ক্রীম খেতে লাগলো। তানাফের আব্বু চুপি চুপি উঁকি দিয়ে দেখে দোয়ার কান্ড।
দোয়ার পাগলামো দেখে তানাফের আব্বু মাথা নাড়িয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।
পরেরদিন সকালে অনু ঘরে আসে, তানাফের আব্বু রুমে কাজ করছে।
অনু দরজায় নক করে বলে “আংকেল আসবো?”
তানাফের আব্বু অনুকে দেখে মৃদু হেসে বলে “ইয়াহ শিউর”
অনু এসে বলছে “আংকেল আসলে আমি একটা পারমিশন নিতে এসেছি,আপনি যদি পারমিশন দিতেন তাহলে একটা সুরাহা হতো”
কিসের পারমিশন? (তানাফের আব্বু)
আংকেল আমাদের ফ্রেন্ড গ্রুপ সার্কেলরা পিকনিকে যাচ্ছি তাই ভাবলাম তানাফ ও তানাফের ওয়াইফ আপনারাও সাথে গেলে ভালো হতো। আংকেল প্লিজ না করবেন না। আমি অনেক হোপ(আশা)নিয়ে এসেছি।প্লিজ আংকেল (অনু)
তানাফের আব্বু ইনানের বলা কথাগুলো মনে করতে লাগলো,পরক্ষণেই কী ভেবে যেনো হেসে বলে “হোয়াই নট? ওকে”
অনু খুশিতে গদগদ করে উঠে, অনুর মুখে রহস্যময় হাসি বিদ্যমান। তানাফের আব্বু সব বুঝেও চুপচাপ অনুর কান্ড দেখছে।
অনু বিদায় দিয়ে চলে গেলো,এদিকে তানাফের আব্বু ইনানকে ফোন দিয়ে বলে “অনু দোয়াকে হয়তো কিডন্যাপের ছক কষছে। আমি পারমিশন দিয়েছি, রেডি হও একসাথে পিকনিকে যাবো আমরা”
ঠিক আছে আংকেল, আমি গোজগাজ করছি সব। কেউকে শেয়ার করবেন না। আমি, আপনি হাতেনাতে ধরবো (ইনান)
তানাফের আব্বু সেদিন রাতে খাওয়ার টেবিলে সবাইকে বলে পিকনিকের কথা। দোয়ার চোখমুখে খুশির আভা। তানাফ দোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, দোয়ার খুশি দেখে তানাফ শেষমেশ রাজি হয়।
খুব ভোর বেলা সবাই তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরেছে গাড়ি করে, এদিকে অনু তিন-চারজন বন্ধু নিয়ে পিকনিকের জন্য তৈরি।
দোয়া শাড়ি পরেছে, তানাফ দোয়াকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে। তানাফ হঠাৎ কী মনে করে চোখ সরিয়ে ফেলে। তানাফ মনে মনে বলছে “ছিহ আমি কী ভাবছি এসব? এভাবে মেয়েদের দিকে তানাফ কখনো তাকায়নি, তাকাবেও না। ছিহ তানাফ নিজেকে সংযত কর”
পরক্ষণে তানাফ বিড়বিড় করে বলতে লাগলো “দোয়া আমার স্ত্রী,ওঁর উপর সব অধিকার একমাত্র আমার। আমার তাকানো টা শুধু ওঁর’ই জন্য। আমি তো পরনারীকে দেখছি না। দেখলে নিজের স্ত্রীকে দেখছি। আমিও না বেশ পাগল।ধুর”
তানাফ নিজেই নিজের সাথে বিড় বিড় করে কথা বলছে,দোয়া গলাঝারি দিয়ে তানাফের মনোযোগ কেড়ে বললো “কী ভাবছেন? অনু ম্যাডামকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছেন না বুঝি?”
তানাফ তথমত খেয়ে আমতা আমতা করছে,অনু তানাফ ও দোয়ার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তানাফ অনুকে দেখে দোয়াকে কাছে টেনে নিয়ে দোয়ার কানে ফিসফিস করে বলে “কাকে দেখার, কাকে চাওয়ার সেটা আমাকে বুঝতে দিন দোয়া।যদি বেশি কিউরিওসিটি জাগে তবে প্রুভ করে দেবো।”
দোয়া তানাফকে বলছে চারদিকে উঁকি দিয়ে “ছাড়ুন বলছি। মানুষ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। প্লিজ ছাড়ুন”
এদিকে তানাফের পরিবার এসব দেখে নিজেরাই সরে গেছে লজ্জায়। ইনান অনুর অবস্তা দেখে হাসছে। অনু জ্বলেপুড়ে ছাই। হঠাৎ দোয়ার নজর পরে অনুর উপর, দোয়া খেয়াল করে দেখে অনুর তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
দোয়া অনুকে দেখিয়ে তানাফের বুকে হাতে দেয়, পাঞ্জাবির বোতাম নড়াচড়া করতে করতে বলে ফিসফিসিয়ে “ড্রামা বাজ, আপনাকে ডক্টর বেশে যতটুকু মানায় না। অভিনেতা হিসেবে দ্বিগুণ মানাতো”
দাঁতে কিড়মিড় করে তানাফ বলে “আপনার জন্য নাহয় এই ড্রামাবাজ হিরো হয়ে যাবে।”
অমনি ইনান মাঝখানে এসে বলে “চলি?বাকি রোমান্স বাসায় স্যার,মানুষ দেখে আছে। বাস এসে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই বাসে করে যাবো মজা করতে করতে”
হঠাৎ ইনানের এমন এন্ট্রি দু’জনই লজ্জা পেয়ে সরে যায়। অনু রেগেমেগে বাসে উঠে পরে, তানাফ ড্রাইভার কে বলে “বাসায় চলে যান।আমরা সবাই বাসে করে যাবো।”
ড্রাইভার তানাফের কথায় চলে যায়। বাসে সবাই যে যার জায়গায় আগে থেকে সিট বুক করে বসে পরে। বাকি রইলো তিনটা সিট খালি।
ইনান, তানাফ ও দোয়ার সিট। অনু চালাকি করে নিজের পাশে সিট খালি রেখে দেয়। যাতে তানাফ এসে বসে। কারণ ইনানের সাথে অনুর ভালো কানেকশন নেই তাই ইনান বসবে না অনুর পাশে,অনুও জানে। এদিকে দোয়া অনুর পাশে বসতে চাইবে না, অনু জেনেশুনেই তানাফের জন্য সিট রাখে পাশে।
দোয়ারা গাড়িতে উঠে সিট খুঁজছে। অনু তানাফকে ডেকে বলে “তানাফ এদিকে আমার পাশে বস৷ জায়গা রেখেছি।”
তানাফ অনুকে এড়িয়ে পেছনে সিটে দোয়াকে নিয়ে বসে। অনু রেগে ফুঁসছে।এদিকে ইনান,তানাফকে বলছে “স্যার বাজিয়ে দিলেন আমাকে। এই সাতচুন্নির সাথে আমি বসতে পারবো না”
তানাফ চালাকি করে তার মাকে অনুর পাশে বসিয়ে দেয়,আর তানাফের বাবার সাথে ইনান বসে।
অনু এবার ভীষণ রেগে যায় আর বলে ” এত গরমের মধ্যে আমি কীভাবে বসবো?”
ইনান ফোড়ন কেটে বলে “জানালার পাশে বসেন ম্যাম। তাহলেই হয়। আর এসি ফিট করা বাস এটা,হয়তো ভুলে গেলেন আপনার গেইমিং চক্করে”
অনু, ইনানের কথায় রেগে বসে পরে জানালার পাশে। এদিকে ইনানের পাশে তানাফের আব্বু বসে আছে। ইনানের এমন কান্ডে মিটমিট করে হাসে।
তানাফের আব্বু ও ইনান ফিসফিস করে প্লান করছে। বাসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে জোরে জোরে গান চালিয়ে দিয়েছে।
এদিকে অনু বিড়বিড় করে বলছে “আগে যা তুই,তারপর দেখবি দোয়া তুই জীবিত ফিরতে পারিস কি-না। আমি তোকে দেখে নেবো। শেষবারের মতো মন ভরে তানাফকে দেখে নে। এরপর তুই কোথায় থাকবি তোর তানাফ কোথায় থাকবে ভাবতেও পারবি না।হাহাহাহা”
চলবে…