তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৫তম_পর্ব

0
939

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৫তম_পর্ব
#written_by_Liza

এদিকে অনু বিড়বিড় করে বলছে “আগে যা তুই,তারপর দেখবি দোয়া তুই জীবিত ফিরতে পারিস কি-না। আমি তোকে দেখে নেবো। শেষবারের মতো মন ভরে তানাফকে দেখে নে। এরপর তুই কোথায় থাকবি তোর তানাফ কোথায় থাকবে ভাবতেও পারবি না।হাহাহাহা”

বাসের মধ্যে সকল যাত্রী খুশিতে হৈ হুল্লোড় করছে,এদিকে দোয়া জানালার পাশে মাথা রেখে বাহিরের মনোরম দৃশ্য দেখছে। সবাই গানের কলি খেলছে। আঁকাবাঁকা পথে বাস চলছে, সারি সারি গাছপালা উঁকি দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে।

দেখতে চক্ষুশীতল পরিবেশ। দূর থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। দোয়া আপনমনে সবটা দেখছে আর গুনগুন করে গান গাইছে,

” কাবি কাবি মেরে দিল মে খায়্যাল আতাহে
কি যেইছে তুজকো বানায়া গায়াহে মেরে লিয়ে”

তানাফ দোয়ার ঘাড়ে ফু দিয়ে বলে “বাহ খুব সুন্দর গান করেন তো আপনি”

দোয়া তথমত খেয়ে চুপ করে আছে,তানাফ দোয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। তানাফের চোখদুটো ইদানীং দোয়াকেই খুঁজে বেড়ায়।

দোয়া তানাফের দিকে তাকিয়ে বলে “কী দেখেন এভাবে? আমি কিন্তু সুন্দর নই, গ্রামের একটা গাইয়া মেয়ে। যেটা আপনার আব্বুও বলতো”

তানাফ মুচকি হেসে দোয়াকে বলে “হতে হবে না অপ্সরা, লাগবেনা সুন্দরী। আপনি আমার একমাত্র চক্ষুশীতলকারী’নি। যাকে দেখার জন্য চোখদুটো বারবার খুঁজে বেড়ায় এদিক ওদিক”

দোয়া, তানাফের কথা শুনে চুপ করে আছে। দোয়া ভেবেছে এসব অনুকে শোনানোর জন্যই তানাফ বলছে। তাই দোয়া কথা না বাড়িয়ে চুপ করে আছে।

এদিকে তানাফ নিজের অজান্তেই এই চঞ্চল মেয়ের প্রেমে পরেছে, পাগলামোর প্রেমে পরেছে।

গাড়ি এসে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে সবাই যে যার মত প্যাকিং নিয়ে নেমে পরেছে। ঝুলন্ত ব্রীজ পার করে জঙ্গলের ভেতরে যেতে হবে।

সবাই উদ্বিগ্ন যাওয়ার জন্য,দোয়া ভয় পাচ্ছে ব্রীজ পানিতে দোল খাচ্ছে।

দোয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে তানাফ ব্রীজ পার হয়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে এমন কান্ডে। তানাফের মা তানাফকে বলছে “আমাদের ফেলে তোরা আগে আগে চলে গেলি?”

তানাফ খানিকটা লজ্জা পেয়ে চুপসে যায়। দোয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একপাশে।
সবাই এক এক করে ব্রীজ পার হয়৷ অনু ব্রীজের ঐপারে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ডাকলেও অনু পাত্তা দেয় না।

দোয়া সবটা বুঝতে পারছে অনুর কান্ড,তানাফ অনুকে বলছে “আয় ভয় পাস না”

অনু ব্রীজের ওপার থেকে চিৎকার করে বলছে
“না আমার ভয় লাগছে , নিয়ে যা আমায় প্লিজ।”

দোয়া রাগে কিড়মিড় করছে,ইনান; অনুকে বলছে “আসতে না পারলে থেকে যান আফা। আমরা বরং ঘুরি।চলো চলো সবাই”

অনু ইনানের কথায় রাগে লাফাচ্ছে। তানাফ না পারতে অনুকে নিয়ে ব্রীজ পার হলো।

অনু তানাফের হাত আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে হাটছে। দোয়ার চোখে পানি টলমল করছে।

দোয়া না পারছে বলতে না পারছে কিছু করতে,কারণ তানাফের উপর যে অধিকার জন্মেনি এখনো। তানাফ নিজেই অনুকে প্রশ্রয় দিচ্ছে তাই দোয়ার কিছু করার নেই।

সবাই সব বুঝেও চুপচাপ হাটছে। এদিকে অনু,’ দোয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে তানাফের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে।

তানাফের আম্মু কিছু বলতে গেলেই অনু বলে উঠে “আংকেল দেখুন না,আমি এই কাদা মাটিতে কী করে হাটবো? তাই আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাহায্য নিয়েছি। এখানেও দোষ? দোয়া তো গ্রামের মেয়ে সে তো এসবে অভ্যস্ত। তাহলে তানাফ আমাকে সাহায্য করলে ক্ষতি কী”

তানাফের আম্মু অনুর কথা শুনে চুপ হয়ে যায় রেগে,অমনি ইনান বলে “তো বলি কী? হাটতে না পারলে আসলেন কেন? এমন জায়গা সিলেক্ট করলেন কেন? প্লান তো আপনিই করেছিলেন এখন কেন অন্যের সাহায্য খুঁজেন? যত্তসব ন্যাকা”

অনু রেগে তানাফের হাত ছেড়ে দেয়, ইনান তানাফের কাছে গিয়ে তানাফের সাথে হাটতে লাগলো।

ইনান দোয়ার দিকে তাকিয়ে চুপ থাকতে বলে, দোয়া চোখ মুছে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাটছে আপনমনে।

কেবিন বুক করা হয়েছে সবাই যে যার চাবি নিয়ে রুমে ঢুকে। এদিকে অনুর রুমের পাশে তানাফের রুম।

অনু রহস্যময় হাসি দিয়ে মনে মনে বলে “আব আয়েগা মাজা”

ইনান বুঝতে পেরেছে সবটা অনুর কাজ।ইনান মাথা নাড়িয়ে সরে যায়।

দোয়া রুমে ফ্রেস হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। বারান্দা দিয়ে পাহাড় দেখা যায়। দোয়া ক্লান্ত শরীরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখছে।
দুপুরে যার যার রুমে খাবার পৌঁছে যায়। সবাই খাওয়াদাওয়া করে হাটতে বেরিয়েছে।

তানাফ রুমে শুয়ে আছে বেরোয়নি। দোয়া এবং বাকিরা বেরিয়েছে। অনু নজর রেখেছে তানাফের উপর।

সবাই ঘুরছে যে যার মত। দোয়ার মনে খচখচ করছে তানাফের জন্য। দোয়া আফসোস করছে বারবার “কেন যে তানাফকে একা ফেলে এসেছে”

দোয়া আশেপাশে অনুকে খুঁজতে লাগলো কোথাও অনু নেই। ইনানকে ইশারায় ডেকে দোয়া বলতে লাগলো “অনু কোথায়? ইনান ভাইয়া,রুমে তানাফ আছে। অনু কী তাহলে রুমে?”

ইনান দোয়ার কথা শুনে অনুকে খুঁজতে লাগলো৷ ইনান ফরেন রুমে যায় কেউকে কিছু না বলে। তানাফের রুমে জানালা খোলা। ইনান উঁকি দিয়ে দেখে অনু শরীরে টাওয়াল জড়িয়ে তানাফের পাশে শুয়ে আছে।
এসব দেখে ইনানের মাথায় যেনো বাজ পরেছে,খেয়াল করে দেখে তানাফ বেঘোরে ঘুম।

ইনান অনুর আসল প্লান আন্দাজ করেছে। সাথে সাথে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো,তানাফের ঘুম ভাঙ্গছে না। অনু কাপড় পরে দরজা খুলে কাঁদছে।

ইনান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনুকে বলে “কেঁদে লাভ নেই।এসব ন্যাকা কান্না করে সবাইকে বুঝাতে চেয়েছিলেন তানাফ স্যার আপনাকে নির্যা–তন করেছে তাই না? আফসোস আপনার এই ন্যাকা কান্না কেউ দেখেনি”

ইনান কথাগুলো বলে অনুকে হাত টেনে বের করে দেয়। ইনান রুমে ঢুকে তানাফকে ডাকতে লাগলো। তানাফ বেঘোরে ঘুম। তানাফকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।

ইনান ফরেন তানাফকে মেডিসিন দেয় যাতে ঘুমের ঘোর কাটে।

অনু রুমে পায়চারি করছে আর ভাবছে “ইনানের বাচ্চা যদি সব বলে দেয় তাহলে তো সব শেষ”

সন্ধ্যায় সবাই এসেছে,তানাফ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে কফি খাচ্ছে। ইনান, তানাফকে কিছু বলে নি।

দোয়াকে ইনান সব খুলে বলে,দোয়ার মাথায় যেনো বাজ পরেছে। ইনান দোয়াকে বলছে
” সব দোষ আপনার দোয়া ম্যাম, নিজের হাসবেন্ডকে নিজের করে নিতে হয়।আপনাদের বিয়ে হয়েছে ঠিক আপনাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর কোনো চিহ্ন নেই। না দিয়েছেন তাকে স্বামীর অধিকার, না নিজে পেয়েছেন স্ত্রীর অধিকার? আপনি যদি তাকে স্বামী হিসেবে মন থেকে মেনে নিতেন তাহলে এই দিন দেখা লাগতো না। তানাফ স্যার কোনদিকে খারাপ? সে আপনাকে রেস্পেক্ট করে,আপনাকে কারো কাছে ছোট হতে দেয় না। তাহলে কেন তাকে ভালোবাসতে পারেন না? যদি ভালোই বাসতে না পারেন তাহলে অনু সুযোগ নিতে চাইবেই। এভাবে কতদিন আপনারা মিথ্যা খেলায় মেতে থাকবেন? তার চেয়ে বরং ভালোবেসে তাকে আপন করে নিন।”

ইনান কথাগুলো বলে চলে গেলো,দোয়া বিছানায় ধপ করে বসে পরে।দোয়াকে ভাবাচ্ছে ইনানের কথাগুলো। দোয়া মনে মনে বলছে
“আসলেই তো কীসের চড়ুইপাতি খেলছি আমরা? এই সম্পর্কের নাম কী? এভাবে কত মিথ্যা নাটক করবো আমরা? সে আমাকে ভালোবাসেনা শ্রদ্ধা করে। অনুর সাথে তানাফের মেলামেশা আমাকে কেন কাঁদায়? কেন এত কষ্ট হয় আমার? তার মানে আমি ও কী তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি? আমার ভালো লাগছেনা আমি থাকবো না। আর সহ্য হচ্ছে না অনুকে”

দোয়ার কাঁধে কারো হাত স্পর্শ হতেই দোয়া ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে উপরে তাকায়৷ তাকিয়ে দেখে দোয়ার শাশুড়ী দোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

দোয়ার শাশুড়ী দোয়ার পাশে বসে বলে “কী ভাবছিস মেয়ে? অন্যমনস্ক কেন এত?”

কিছু না আম্মু,কিছু বলবেন? (দোয়া)

আমি যা বলতে এসেছি তা শুনে তুই হয়তো রেগে যাবি খুব।তবুও আমার ইচ্ছার কথা তোকে জানাতে চাই।তুই প্লিজ আমাকে না করিস না মা, কথাগুলো বলে দোয়ার হাত ধরে ফেলে দোয়ার শাশুড়ী।

আরে আম্মু কী করছেন? এমনটা বলবেন না। বলুন আমি চেষ্টা করবো (দোয়া)

চেষ্টা না তোকে পারতেই হবে আমার বিশ্বাস (তানাফের আম্মু)

আচ্ছা বলুন (দোয়া)

আজ রাতে তোর আর তানাফের বাসর হবে। আর তুই দ্বিমত করবি না। আমার শেষ কথা এটা (তানাফের আম্মু)

দোয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানাফের আম্মু চলে গেলো, জানালার কাছেই অনু দাঁড়িয়ে সবটা শুনে ফেললো। অনু রাগে গজগজ করছে রুমে।

এদিকে দোয়া হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।

ইনান সবটা তানাফের বাবাকে বলে,তানাফের বাবা”ই দোয়া ও তানাফের বাসর করানোর কথা তানাফের আম্মুকে বলে।

তানাফ কিছুই জানে না এই বিষয়ে। রাতে সবাই খাওয়াদাওয়া করে হাটছে। বাহিরে মশার জন্য আগু*ন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সবাই দোলনায় বসে আড্ডা দিচ্ছে এদিকে তানাফের রুম সাজানো হচ্ছে। সবাই সব জানলেও তানাফ কিছুই জানেনা

সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। অনু সকলের মাঝখান থেকে উঠে কোথায় যেনো চলে গেলো। তানাফের রুমের লাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে যাতে তানাফ না বুঝে।

অনু তানাফের রুমে সাজগোজ করে বিছানায় বসে আছে যে যার রুমে সবাই চলে গেছে।অনু তানাফের অপেক্ষা করছে,অনুর হাতের পাশে একটা স্প্রে রেখেছে। যাতে দোয়া রুমে ঢুকলেই দোয়াকে স্প্রে করে সেন্সলেস করতে পারে।

পুরো আটঘাট বেঁধে রুমে বসে অপেক্ষা করছে অনু। রাত বাজে ১টা এখনো তানাফ ও দোয়া রুমে ঢুকে নি।

এদিকে অনু বের হচ্ছে না কেউ দেখবে বলে। অনু অপেক্ষা করছে তানাফ ও দোয়ার জন্য।

একটু তানাফের রুমের দরজা আওয়াজ করে উঠে,অনু নড়েচড়ে বসে। অনু মনে মনে বলছে “এই তো আমার তানাফ এসেছে। আজ তানাফ একান্তই আমার হবে”

ইনানের রুমে ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা,দোয়াকে তানাফের আম্মু বউয়ের মত করে সাজিয়ে দিয়েছে। দোয়া নিজের সংসার ও শাশুড়ীর কথা রাখতে শেষমেশ রাজি হয়েছে।

তানাফের আব্বু তানাফকে কথার ছলে আটকে রেখেছে, যাতে তানাফ বুঝতে না পারে আজ তার বাসর।

যে যার প্লান অনুযায়ী কাজ করছে। তানাফ রুমের দিকে যেতে লাগলো অমনি ইনান তানাফের হাত ধরে বলে “স্যার ঐ রুম তালা দেওয়া হয়েছে আপনার আব্বার কথায়। আপনি আমার রুমে ঘুমাবেন চলুন”

তানাফ সরল মনে ইনানের রুমে চলে গেলো,তানাফের মাথা ভার হয়ে আছে অনুর দেওয়া সেই ইনজেকশন এর ফলে।

তানাফকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে ইনান বলে “বেস্ট অফ লাক স্যার। বিড়াল টা তাড়াতাড়ি মারবেন”

এই বলে ইনান বাহিরে আটকে দেয় দরজা। তানাফ ভেতরে অন্ধকার কিছু দেখছেনা। হঠাৎ রুমের উপর এ ঝাড়বাতি জ্বলে উঠে।
খাটে বসে আছে কে যেনো, লম্বা চুল বিছানায় ছড়িয়ে গেছে।

তানাফ আশেপাশের ডেকোরেশন ভালো করে দেখতে লাগলো।

এদিকে অনু দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে “কে আমাকে আটকে রেখেছে,? খুলো বলছি।”

ইনান হাতে রুমের চাবি নিয়ে মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলে “নেন আফা একলা একলা জ্বী-নের সাথে বাসর সারেন,এদিকে আমি একটু প্রেম করি ”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here