#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৬তম_পর্ব
#written_by_Liza
ইনান হাতে রুমের চাবি নিয়ে মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলে “নেন আফা একলা একলা জ্বী-নের সাথে বাসর সারেন,এদিকে আমি একটু প্রেম করি ”
ইনান দোলনায় পা দুলিয়ে কথা বলছে মায়ার সাথে। সবাই যে যার রুমে,ইনান ফোনে ব্যস্ত।
দোয়া রুমে গুটিসুটি মেরে বসে কাঁপছে,তানাফ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দোয়ার পাশে বসে। দোয়া কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না৷
তানাফ, দোয়ার হাত নিজের হাতের ভেতর মুষ্টিবদ্ধ করে অস্ফুট স্বরে দোয়াকে বলে, ” ভয় পাচ্ছেন?”
দোয়া চুপ চাপ বসে আছে,দোয়ার শরীর যেনো কাঁপছে। তানাফ বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দেয় আর বলে “ভয় পাবেন না,আমি জানি আপনি কম্ফোর্ট ফিল করছেন না। করার কথাও না। আমরা একে অপরকে ভালো করে বুঝতে দেই নি। প্রয়োজন ছাড়া অপ্রোয়জনীয় বাড়তি কথা বলিনি। আপনি রেস্ট করুন।আমি ঘুমিয়ে পরি”
তানাফ বালিশ পেতে পাশে শুয়ে পরে,দোয়া কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। দোয়ার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে অনুর কথা। দোয়া অনুর কথা ভাবতেই হু হু করে কেঁদে দেয়। তানাফ দোয়ার কান্নার আওয়াজ পেয়ে বসে পরে।
কী হয়েছে দোয়া? আমি আপনাকে কোনোভাবে হার্ট করেছি? প্লিজ বলুন (তানাফ)
দোয়া লম্বা শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে “অনু চাইছে টা কী? কেন বারবার মাঝখানে এসে সব উলোটপালোট করে দিচ্ছে? কেন? আপনি কেন কিছু বলছেন না?”
তানাফ বুঝে উঠতে পারছে না কিছু,ঠিক তখন’ই বিকেলের ঘটে যাওয়া ঘটনা দোয়া বলে দেয় তানাফকে। তানাফ শুনে রাগে কাঁপছে।
দোয়া কাঁদছে, তানাফ বুঝতে পেরেছে দোয়া কষ্ট পেয়েছে।
তানাফ দোয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ” আমাকে এখন বলছেন কথাগুলো? আগে বললে কী হতো?”
দোয়া বিড়বিড় করে বলে ” অনু আপনাকে ভালোবাসে আপনি চলে যান। আমি পথের কাটা হতে চাইনা।”
হুম বেশ চলে যাবো আপনি যদি চান। (তানাফ)
দোয়া কান্নারত চোখ দুটো তানাফের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তানাফ ইশারা দিয়ে বলে “কী হলো?আমি চলে যাই? আপনি মেনে নিবেন তো? আপনার কষ্ট না হলে আমি যেতেই পারি।যেহেতু আপনিই নিজ মুখে স্বীকার করলেন”
দোয়া হতবাকের মত চুপচাপ তানাফের পানে চেয়ে আছে, দোয়ার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে। তানাফ দোয়ার চোখ মুছে দিয়ে বলে “আমি চলে যাবো আপনি খুশি না হয়ে কাঁদছেন কেন? এতে তো আপনি ভালো থাকবেন। আপনাকে আমার মুখ দেখতে হবে না”
দোয়া চোখ মুছে স্তব্ধ হয়ে আছে,তানাফ দোয়ার উওরের অপেক্ষা করছে।
ওপাশ থেকে কোনো উওর আসছে না।তানাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “ঠিকাছে চললাম,ঘুমিয়ে পরুন। কাল সকালে দেখা হবে”
এই বলে তানাফ উঠে দরজার কাছে চলে গেলো অমনি দোয়া পেছন থেকে তানাফকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। তানাফ মুচকি হেসে দোয়ার হাত দু’টো শক্ত করে ধরে আছে। তানাফ নিজের উওর পেয়ে গেছে।
বাহিরে জোরালো বাতাস বইছে, তানাফ দোয়ার সামনে ফিরে দোয়ার চোখ মুছে দিয়ে দোয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আমি থাকতে পারবো না প্লিজ, কোথাও যাবেন না। ম-রে যাবো আমি। প্লিজ। কথাগুলো বলে দোয়া কাঁদছে। তানাফ দোয়াকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। দোয়ার নাক চেপে ধরে বলে,
“আমিও যে আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছিনা।আপনাকে ডক্টর তানাফ আজমীর খুব দরকার। সে এই ছোট্ট দোয়াকে ভালোবেসে ফেলেছে। দোয়াকে ফেলে কোথায় যাবে সে শুনি?”
দোয়া, তানাফের কথা শুনে কান্না বন্ধ করে বলে “তাহলে কেন চলে যাচ্ছিলেন আমাকে ফেলে? জানেন না আমার সহ্য হয়না অনুকে”
তানাফ দোয়ার কোলে মাথা রেখে বলে “যেতে তো চাইনি আপনিই বাধ্য করলেন যেতে।কেন বললেন আপনি পথের কাটা? মনে হচ্ছিলো আমি জোর করে আমার করে রেখেছি আপনাকে”
জোর করে রাখতে হয় কিছু জিনিস,আপনার মতো ভাইরাস এসব বুঝবেনা। (দোয়া ভেঙ্গচি কেটে)
আ আমি ভাইরাস? এটা ঠিক হচ্ছে না দোয়া আজ কিন্তু এর শোধ নেবো, শুনুন কেউ অনুমতি না দিলে জোর করে রাখা যায় না। (তানাফ)
আসছে আমার অনুমতি রে, বিয়ে করার সময় অনুমতি কই ছিলো।এখন আসছে অনুমতির ডিকশনারি নিয়ে। (দোয়া)
তানাফ কোনো কথা না বলে দোয়ার চুলগুলো ছড়িয়ে দেয়,দোয়া তানাফের স্পর্শে চুপসে যায়। তানাফ বিড়বিড় করে দোয়ার কানের কাছে গিয়ে বলে “অনুমতি পেয়েই গেছি এবার নিজের করে নেওয়ার পালা।”
এই বলে তানাফ দোয়ার কপালে চুমু এঁকে দেয়। দোয়া চোখ বন্ধ করে কাঁপছে। তানাফ, দোয়াকে বুকে নিয়ে গুনগুন করে বলে,
“আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ–
ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিব বিষয় -বাসনা বিসর্জন।”
দোয়াকে বুকে নিয়ে তানাফ গান শুনিয়ে যাচ্ছে,বাহিরে ঝুম বৃষ্টি। চাঁদ লুকিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে একটু পর পর। দোয়া ভয়ে তানাফের বুকে আশ্রয় নেয়। এই প্রথম এত কাছ থেকে একে অপরকে আগলে নিয়েছে।
দোয়া তানাফকে বলে, “আচ্ছা একটা কথা বলি?”
জ্বী আমার চক্ষুশীতলকারী’নি বলুন (তানাফ)
হারাম সম্পর্কের চেয়ে হালাল সম্পর্ক অধিক সুন্দর তাই না? (দোয়া)
নিশ্চয়,হালাল বলেই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর হয়। যেমনটা আমাদের। আপনাকে পাওয়া, আপনার বাচ্চামোর প্রেমে পরা।চঞ্চলতা মুগ্ধ করা৷ সবকিছুই উপভোগ করতে পেরেছি বিয়ের পর। আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা আপনি। (তানাফ)
দোয়া পরমযত্নে তানাফের বুকে মাথা রেখে দেয়। তানাফ দোয়ার মাথায় বিলি করে দেয়।
একটু পর ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায় চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দোয়া ভয়ে তানাফকে আঁকড়ে ধরেছে। বাহিরে বিভিন্ন পাখির আওয়াজ ভেসে আসছে অদ্ভুতুড়ে।
তানাফ মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয় রুমে। নিভু নিভু মোমবাতি। বাতাসের বেগে মোমবাতি বন্ধ হবার উপক্রম।
তানাফ দোয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, জানালা এটে দেয়। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি। বাতাসের আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে। সবমিলিয়ে স্নিগ্ধ পরিবেশ।
তানাফ, দোয়াকে নিজের কাছে টেনে নেয়। একটু পর মোমবাতি নিভে যায়। সেদিন রাতেই দোয়া আর তানাফ এক হয়ে যায়।
নতুন বন্ধনে আবদ্ধ তারা। চারদিকে ভোর ফুঠে উঠেছে,দোয়ার বুকে তানাফ লেপ্টে আছে। দোয়া তানাফকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়।
আয়নাতে দোয়া নিজেকে দেখছে আজ,আজ দোয়াকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। দোয়া আয়নাতে চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসি দেয়। আপনমনে কী যেনো ভেবে চুলগুলো আঁচড়ে নেয় দোয়া৷
এদিকে তানাফ বেঘোরে ঘুম কাথা জড়িয়ে। দোয়া তানাফকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলে “শেষমেশ আপনি আমার হলেন,এবার অনুর কোনো অধিকার নেয় আপনাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার। আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো অনুর”
দোয়া, তানাফের কাছে গিয়ে তানাফের কপালে চুমু এঁকে দেয়, তানাফের চোখ খুলে যায়। দোয়া চুমু দিতে গিয়ে ধরা পরেছে।
তানাফ হেসে দেয় আর বলে “বাহ বাহ এটা কোন দোয়া? এত প্রেম, এতদিন কোথায় ছিলো? যাক অনু মোটামুটি ভালোই মেডিসিন দিয়েছে আপনাকে। নয়তো আপনাকে এভাবে পেতাম না আমি”
দোয়া রেগে তানাফের বুকে ধাক্কা দেয়,তানাফ দোয়াকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়।
____________________
ইনান ঘুম থেকে উঠে অনুর রুমের দরজার তালা খুলে দেয়, অনুর চোখ ফুলে বড় বড় হয়ে আছে। ইনান অনুকে দেখে বলে “এমা অনু আফা আপনাকে জ্বীন এত মারলো কেন? ইস রে চোখ ফুলে কলাগাছ হয়ে আছে।”
অনু রেগেমেগে বেরিয়ে পরে রুম থেকে, সবাই বাহিরে টেবিলে চা খাচ্ছে। তানাফের আব্বু ও আম্মু হাটতে গেছে। দোয়া, তানাফ একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর চা খাচ্ছে৷ অনু রেগেমেগে দোয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে “কাল রাতে তুমি তানাফের সাথে কী করেছিলে?”
দোয়া অনুর কথায় অনুকে বলে “আপনি জ্বীনের সাথে যা করেছিলেন আমরাও তাই করেছি৷ কেন আপনি জানেন না?”
অনু হাউ ডেয়ার ইউ বলে যেই না দোয়াকে চড় মারতে যাবে তার আগেই, অনুর হাত ধরে তানাফ অনুর গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে
“তোর সাহস হয় কী করে আমার ওয়াইফের গায়ে তোলার? দুশ্চরিত্রা কোথাকার। তোকে আমার ফ্রেন্ড বলতেই ঘৃণা হয়। তুই শেষমেশ আমার জন্য নোংরা খেলায় মেতে উঠলি? মেয়ে হয়ে কী করে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙ্গতে আসিস। ভুলে যাস না আমি তানাফ। অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া আমার দ্বারা হয়না। আমি তোর অন্যান্য বন্ধু না যে বউ ফেলে বাহিরের মেয়ের সাথে সময় কাটাবো। ভুলে যা এসব। তোর ক্লাস নোংরা বলে কী আমিও তেমন ভাবলি?”
অনু চড় খেয়ে কাঁদছে। দোয়া তানাফকে শান্ত করিয়ে রুমে নিয়ে যায়। ইনান বরফ এর বাক্স এনে ভেঙ্গচি কেটে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে “গালে লাগিয়ে নেন আফা, আজকে আর মেকাপ করা লাগবো না এতটুকুতেই সুন্দর লাগে”
চলবে…