#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৮তম_পর্ব (বড় পর্ব ধামাকা)
#written_by_Liza
শাট আপ মায়া,আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই আমি, এটাই ফাইনাল। আমি এক্ষুনি গিয়ে তোমার কথা বলবো আম্মু আব্বুকে। (ইনান)
ইনান ফোন রেখে সোজা মা-বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে “আম্মু আমার পছন্দ আছে,বিয়ে যদি করতেই হয় তাকেই করবো”
তানাফের আব্বু মুচকি হেসে বলে “ঠিক আছে আগে তোমার পছন্দ দেখাও, এরপর নাহয় আমাদের পছন্দ দেখবে”
ইনান বাধ্যছেলের মত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়,তানাফ বসে বসে ইনানের কান্ড দেখছে। ইনানের চোখদুটো বেশ লাল হয়ে আছে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দিবে।
ইনান তানাফের রুমে বসে আছে চুপচাপ,তানাফ ইনানের কাধে হাত রেখে বলে “চিন্তা করো না সব ঠিক ঠাক হবে।ভরসা রাখো নিজের উপর”
কিন্তু স্যার,আংকেল তো গ্রামে অন্যজনকে ফিক্স করেছে,একটিবার আমাকে জানাতে পারতো না? নিজেকে কতটা অসহায় লাগছে যদি বুঝাতে পারতাম (ইনান)
প্রেমের ম-রা জলে ডুবে না , ভেঙ্গচি কেটে ইনানকে বলতে লাগলো। এদিকে দোয়া সকলের জন্য চা নিয়ে হাজির। তানাফের আব্বু হাত বাড়িয়ে দোয়াকে ডাকে। দোয়া চা নিয়ে সবাইকে সার্ভ করছে।
ইনানের আম্মু আব্বু দোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,তানাফের আব্বু ইনানের আব্বুকে বলে “এটা হলো আমার মেয়ে।”
ভাইসাহেব মেয়ে আছে আগে তো জানতাম না (ইনানের আব্বু)
হাহাহা,আমার মেয়ে ঠিক কিন্তু আমার ছেলের বউ। দোয়া নাম তার। যেমন নাম তেমন’ই কাজ। (তানাফের আব্বু)
সবাই মুচকি হেসে বলে “মাশআল্লাহ্”
দোয়া খাবার দিয়ে চলে যায়। সবাই আড্ডা দিচ্ছে। দোয়া রুমে ঢুকতেই ইনান দাঁড়িয়ে পরে আর বলে “দোয়া ম্যাম প্লিজ কিছু করুন।আমি মায়াকে চাই। ওঁকে বোঝান।ও আবোল তাবোল কথা বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে”
দোয়া ইনানের সামনে বসে ইনানকে বলে “আগে গ্রামে যেতে হবে ভাইয়া,দূর থেকে পরিস্থিতি বোঝা যায় না৷ সেখানে গিয়ে কথা বলি, এখন কিছু বললে রাগের মাথায় সে নিষেধ করে দিবে শুধু শুধু সম্পর্ক ন-স্ট হবে”
দোয়ার কথায় তানাফ সম্মতি দিয়ে বলে “এক্স্যাটলি আমার ও এটাই মনে হচ্ছে”
ইনান দোয়ার কথায় ভরসা পেয়ে গ্রামে যেতে রাজি হয়। রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে বিদায় নিয়েছে,সকাল বেলা গ্রামের জন্য তৈরি হতে হবে তাই সকলে কাপড় গোজগাজ করছে।
অনেকদিন পর দোয়া নিজের বাপের বাড়িতে যাবে,মনের ভেতর বড্ড উতলা হাওয়া বইছে। দোয়া খুশিতে কাপড় চোপড় গোজগাজ করে ফেলে।
তানাফ বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপ ইউজ করছে,দোয়া তানাফকে বলে “ফোনটা দেন তো। মায়াকে একটা কল দেই”
তানাফ ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে “মায়া হয়তো ঘুম,গ্রামে সবাই তাড়াতাড়িই ঘুমায়। ফোন দিয়েন না। সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক,মনে হচ্ছে ইনানের উপর খুব অভিমান জন্মেছে তার। আমাদের যাওয়াটা সারপ্রাইজ হিসেবেই থাকুক দোয়া”
দোয়া ভেঙ্গচি কেটে ফোন রেখে দেয়, তানাফ হাত বাড়িয়ে দোয়াকে ডাকে,দোয়া তানাফের একপাশে বুকে মাথা রেখে ল্যাপটপে মুভি দেখছে।
খুব ভোরে দোয়া নামাজ সেরে রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করতে চলে গেলো।
সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে টেবিলে চলে আসে খেতে।
দোয়া খাবার সার্ভ করে দিয়ে খেতে বসে। সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে তৈরি হচ্ছে ভোর সাতটার ট্রেন।
সবাই তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে।
ইনানের ফ্যামিলি স্টেশনে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
সবাই জড়সড় হয়ে আছে স্টেশনে,ট্রেনের অপেক্ষা..
ট্রেন এসে পরে, ইনান মনমরা হয়ে আছে।তানাফ ইনানকে বলে “গতবার গ্রামে গিয়েছিলাম চিকিৎসার তাগিদে, ফিরে এসেছি কাপল। এইবার তুমি যাচ্ছো মেয়ে দেখতে ফিরে আসবা কাপল।”
ইনান লজ্জা পেয়ে চুপ করে আছে,সবাই ট্রেনে উঠে পরে। দোয়া বেশ খুশি, শশুড় শাশুড়ীকে নিয়ে বাপের বাড়ি যাচ্ছে তাই।
তানাফ, দোয়ার আব্বুকে ফোন করে রাতেই জানিয়ে দিয়েছে তারা গ্রামে আসছে পুরো পরিবার।
সকাল থেকেই দোয়ার বাবা ঘরে বিভিন্ন পদের মাছ এনে ঘর ভরতি করেছে, লোকজন দিয়ে বেশ বড়সড় করে খাবার আয়োজন করেছে।
একমাত্র মেয়ের জামাই ও মেয়ের শশুড়বাড়ির লোকজন বলে কথা৷ দোয়া এসব বিষয়ে কিছুই জানেনা। দোয়া ভেবেছে তার বাবার বাড়ির সাথে তানাফের সেদিনের পর আর যোগাযোগ হয়নি। অথচ তানাফ রোজ নিয়ম করে খোঁজ খবর নিতো গ্রামে।
ইনান ফোন টিপছে কে যেনো ইনানের কাধে হাত দিয়ে বলে “তুই আবারো এসেছিস? চল আজ তোকে নিয়েই যাবো”
ইনান মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে সেই হিজ-রাগুলো। প্রথম গ্রামে যাওয়ার সময় হিজ-রাগুলো ইনানকে পেয়েছিলো। আজ আবারো তাদের পাল্লায় পরেছে।
ইনানের মন ভালো না, ইনান পকেট থেকে শত খানেক টাকা তাদের দিয়ে দেয়। তারা টাকাগুলো নিয়ে ইনানের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
ইনান তাদেরকে বলে “টাকায় তো চায় তোমাদের তাই না? দিয়ে দিয়েছি, চলে যাও আজ আর মাথা খেয়ো না। ভালো লাগছেনা একা থাকতে দাও”
হিজ-রাগুলো টাকা মুষ্টিবদ্ধ করে বলে “বারেহ কি হয়েছে রে তোর? মুখটা দেখা যায়না কেন? চল মন ভালো করে দেয়”
লাগবেনা, আমি ঠিক আছি। এভাবে লোকদের বিরক্ত করে কী পাও তোমরা? সবসময় কি সবার মন ভালো থাকে? (ইনান)
বুঝেছি, প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছিস। কাঁদিস না মেয়ে পেয়ে যাবি। ঐ যে দেখ বলেছিলাম না তোর সাথের জনকে! বাউন্ডুলে মেয়ে জুটবে? দেখেছিস? মিলে গেছে। আমাদের কথা বিফলে যায় না হুম। তুই ও তাকে পেয়ে যাবি। মন খারাপ করিস না ছেলে। তোকে মানায় না গোমড়ামুখে (হিজ-রাগুলো)
ইনান হিজ-রাগুলোর কথায় ভাবনায় পরে গেলো,ইনান’ তানাফ ও দোয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে “ঠিকই তো,সেদিন তারাই বলেছিলো চঞ্চল মেয়ে তানাফ স্যারের কপালে মিলবে।মিলে গেলো।তার মানে আমিও মায়াকে পেয়ে যাবো হুররেহ”
কী ভাবছিস ছেলে,মন খারাপ করিস নে। ভালো ছেলে (হিজ-রাগুলো)
ইনান কী মনে করে হেসে দেয় আর তাদের মতো তালি দিয়ে ভেঙ্গচি কাটে। তারা ইনানের কান্ডে তালি দিয়ে হাসে।
ইনানের আব্বু আম্মু লজ্জায় চুপ করে আছে,হিজ-রাগুলো ইনানের আব্বু আম্মুকে বলে “ভালো ছেলে জন্ম দিয়েছিস,কদর করিস ছেলের।চললাম”
কথাগুলো বলে হিজ-রা চলে গেলো।ইনানের আব্বু আম্মু, ইনানকে বলে “শেষ মেষ এগুলার সাথে বন্ধু পাতলি?”
আরে না আম্মু,এরা এভাবেই টাকায় নেয়,গতবার এসে এদের সাথে দেখা। তখন থেকেই চেনে আমায়। এরা যতটা খারাপ ভাবছো ততটাও নয়। (ইনান).
তানাফের আম্মু আব্বু বলে “হিজ-রা বলে কি তারা মানুষ নয় ভাইসাব?”
ওটা মনে করে বলিনি ভাইসাহেব, আসলে ইনান যে এত দুষ্টু কে জানতো। ভালো মানুষকে পাগল বানায়, বানায়। এদেরকেও বানাচ্ছে। সুযোগ পেলে এরা ইনানকে তুলে নিয়ে যাবে (ইনানের আব্বু)
সবাই ইনানের আব্বুর কথায় হেসে দেয়।
_________________________
দোয়ার বাবা পুরো গ্রামবাসীকে দাওয়াত দেয়।রাফি হাতে হাতে সকল কাজ এগিয়ে দিচ্ছে দোয়ার বাবাকে।
দোয়ার বাবা রাফিকে বলছে ” শুনছি ঐ উওর পাড়ার মাইয়া ইভার সাথে তোমার সম্পর্ক চলে। এডা কি সত্যি?”
রাফি আমতা আমতা করে বলে “জ্বী চাচা,”
ঠিকাছে,মাইয়া হিসাবে ভালাই দেখলাম। তোমার আব্বা আম্মারে আইতে কইয়ো আমি কথা কইয়া বিয়াডা করাই দিমুনে (দোয়ার আব্বু)
রাফি খুশিতে দোয়ার আব্বুকে জড়িয়ে ধরে,দোয়ার আব্বু রাফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “তুমি আমার পোলা’ই। আমার আপদ বিপদে তুমি’ই আছিলা। পোলার লাইজ্ঞা পোলার বাপ এডা করোন কর্তব্য ”
রাফির চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে খুশিতে। দোয়ার বাবা রাফির চোখ মুছে দেয়। দু’জনই কাজ শেষ করে বাড়িতে আসে।
দোয়ার বিয়ের পর সমস্ত কাজ দায়িত্ব রাফি নিজের হাতে করতো। একমাত্র সততা নিষ্ঠার সাথে রাফিই চলতো। রাফিকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে দোয়ার বাবা।
রাফির সাথে দোয়ার বাবার সম্পর্ক বেশ মজবুত।
দুপুরে মায়ার পরিবার, রাফির পরিবার দোয়ার বাড়িতে আসে।
দোয়ার বাবা চেয়ারে বসে দুই পরিবারের কর্তাদের বলছে “আমি চাই, মায়ার বিয়া দিতে। মায়া আমাগো দোয়ার সমবয়সী। বিয়ার বয়স অইছে। তোমরা কি কও এই ব্যাফারে (ব্যাপারে)”
মায়ার পরিবার দোয়ার বাবার কথা হ্যাঁ তে, হ্যাঁ বলে৷ মায়া না পারছে কাঁদতে না পারছে কিছু বলতে। মায়া ইনানকে স্মরণ করছে আর বলছে “আপনাকে বিয়ে করতে বলাতে আজ বিয়ের বোজা আমার ঘাড়ে চাপলো। আপনাকে আমার পাওয়া হবে না ইনান।”
রাফির পরিবারকে দোয়ার বাবা বলছে “উওর পাড়ার মাইয়া ইভারে তো তোমরা চিনোই। ঐ মাইয়ার লগে আমাগো রাফির বিয়া দিতাম চাই। মাইয়া শান্ত ভালা। তোমাগো আপত্তি আছে নি?”
রাফির পরিবার দোয়ার বাবার কথার উপরে যায় না,দোয়ার বাবার কথায় সম্মতি দিয়ে বলে “মাইয়া ভালা অইলে পোলার পছন্দ অইলে আমাগো আপত্তি নাই”
দোয়ার বাবা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। রাফি মনে মনে বেজায় খুশি। রাফি মনে মনে বলছে “দোয়া তুই যদি আসতি আমার দিনটা ভালো যেতো। সবাই আছে তুই নেই। কত মিস করতেছি বোন বলে বোঝাতে পারবো না। তুই ফিরে আয় প্লিজ”
মায়া সবার মাঝখান থেকে উঠে গাছতলায় গিয়ে বসে আছে, রাফি মায়ার পেছন পেছন গিয়ে মায়াকে বলে “এখানে কেন তুই? মন খারাপ?”
মায়া কোনো কথা না বলে চোখ মুছছে।রাফি বুঝতে পেরেছে মায়া কাঁদছে।রাফি মায়াকে জিজ্ঞেস করে “কাঁদিস কেন? কি হয়েছে বল আমাকে”
জানিস, আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। আমি ইনানকে ভালোবাসি। আমি ওঁকে ছাড়া কাউকেই চাইনা (মায়া)
কী বলিস,ইনান ভাই জানে? তার সাথে কথা হয়েছে? (রাফি)
কথা হয়েছিলো কাল,সে বললো তার জন্য তার বাবা-মা পাত্রী দেখছে। আমি রেগে বলেছিলাম বিয়ে করে নিতে। সে বলেছিলো তার মা-বাবাকে জানাবে এরপর আর আমাদের কথা হয়নি। ফোন দিয়েছিলাম,ফোন বন্ধ।আমি কি করবো রে রাফি। এদিকে তো আমার সর্বনাশ হতে চলেছে। হয়তো ইনানকে হারিয়ে ফেলবো (মায়া)
রাফি কী বলে স্বান্তনা দিবে ভেবে পাচ্ছে না,রাফি মায়াকে বলছে “এত অস্থির হোস না। হয়তো চার্জ নেই ফোনে। যেহেতু ইনান ভাই তার মা-বাবাকে বলবে বলেছে সেহেতু ভরসা রাখ”
তার সাথে কথা বলতে বলতে এদিকে আমার বিয়ে হয়ে যাবে রে,আমি ওঁকে হারিয়ে ফেললাম বোধহয়। আমার উচিৎ হয়নি কাল রাগ দেখানো। আমি কী করবো জানিনা। সু-ই-সাইড ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না (মায়া)
কী যা তা বলিস,ধৈর্য ধর। আমি তোর বিয়ে আটকাবো চিন্তা করিস না। যতক্ষণ না ইনান ভাইকে কলে পাচ্ছিস ততক্ষণ তোর বিয়ের আলাপ হবে না। চিন্তা করিস না রাফি আছে। (রাফি)
রাফির কথায় মায়া চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে,রাফি মায়াকে বুঝিয়ে দোয়ার বাড়ি চলে আসে।
দোয়ার বাবা রাফিকে বলে “মায়ার কি অইলো?”
কিছু না চাচা, মায়ারে একটু সময় দেওয়া উচিৎ। আস্তেধীরে ঠিক হইয়া যাইবো (রাফি)
আইচ্ছা (দোয়ার বাবা)
________________________________
ট্রেন এসে স্টেশনে থেমেছে, দুপুর গড়িয়ে বেলা হতে চললো। দোয়ার বাড়ি ভর্তি মানুষ।দোয়ার বাবা সবাইকে বলেছে মায়ার জন্য পাত্রপক্ষ আসছে।
দোয়ার পরিবারে দোয়ার বাবা ছাড়া কেউ জানেনা দোয়া আসতে চলেছে।
ইনান গ্রামে ঢুকতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তানাফের দিকে, তানাফ মুচকি হেসে বলে “আগে আমার শশুড়বাড়ি দেখিয়ে আনি। এরপর তুমি তোমার প্রেয়সীকে দেখাবে। এক ঢিলে দুই পাখি।”
ইনান তানাফের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ” আমি জানি না কী হবে,আমার মায়াকে চাই তানাফ স্যার। ও কেমন আছে তাও জানিনা। ফোন নিয়ে ফেলেছে আমার আম্মু। আপনি একটু হেল্প করুন না”
এত উতলা হচ্ছো কেন? ফোন নিয়েছে তোমায় তো নেয় নি। আর হ্যাঁ আমরা একই গ্রামে যাচ্ছি মায়াকে তুমি দেখবেই এমনিতে। আমি আছি সমস্যা নেই। আগে আমার শশুড়বাড়িতে চলো (তানাফ)
ইনান মন খারাপ করে মৃদু হাসি দেয় একটা। তানাফ বুঝতে পেরেও না দেখার ভান করে।
দোয়ার হাত ধরে তানাফ শশুড়বাড়িতে পা রাখতেই গ্রামের লোকজন ঘিরে ধরে।তানাফ সবাইকে সালাম দিয়ে ঘরে আসে। দোয়া ঘরের ভেতর পা রাখতেই শুরুতে তার বাবার দিকে চোখ যায়। দোয়ার বাবা হাতদুটো বাড়িয়ে দেয় তার দিকে। দোয়া সকল অভিমান মুহুর্তেই ভুলে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
পুরো বাড়িতে কান্নার রোল,এই কান্না খুশির কান্না৷ দোয়ার মা দোয়াকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমু দেয়। দোয়ার বাবা তানাফকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
ইনান একপাশে দাঁড়িয়ে আছে,ইনানকে ইশারায় ডাক দেয় দোয়ার বাবা। ইনান আস্তে আস্তে দোয়ার বাবার দিকে এগিয়ে যায়।দোয়ার বাবা ইনানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলে “তোমার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না বাবা।তুমি আমার মেয়েকে বাঁচিয়েছো আগলে রেখেছো ভাইয়ের মতো। আল্লাহ তোমাকে উওম উপহার দিবে”
ইনানের হঠাৎ কেন যেনো চোখ বেয়ে অনর্গল পানি ঝড়ছে,ইনানের মা-বাবা খেয়াল করে, সবাই একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে ইনানের কান্না দেখে।
তানাফের আব্বু ইনানের আব্বুকে বলছে “যে ছেলেকে জীবনে কাঁদতে দেখিনি। সেই ছেলে কাঁদছে ব্যাপার কী?”
সবাই থ বনে গেলো ইনানের কান্নায়। তানাফ ইনানকে শান্ত করায়।দোয়ার বাবা একে একে ইনানের আব্বুর সাথে তানাফের আব্বুর সাথে কোলাকুলি করে আলাপ করে।
সবাই বেশ হাসিখুশি। ইনানের আব্বু তানাফের আব্বুর কানে কানে বলে “আমার ছেলের জন্য এই গ্রাম থেকে মেয়ে নিয়ে যাবো। এখানের মানুষ ভীষণ মায়াবী, নরম মনের মানুষ। দেখলেন ভাইসাহেব আমার ছেলেও এই গ্রামের মানুষের প্রতি আসক্ত। নাহলে আমার ছেলে কাঁদতো না”
তানাফের আব্বু রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “সে আর বলতে? এই গ্রামের মেয়েই ইনানের বউ হবার যোগ্য।আগে দেখি আমাদের ইনান কী চায়”
দোয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে তানাফ,দোয়ার কাকিমনি খেয়াল করে সেটা। দোয়ার কাকিমনি হেসে বলে “বাবা রে তোমার দোয়ারে কেউ নিয়া যাইতো না”
তানাফ লজ্জায় দোয়ার হাত ছেড়ে দেয়। কাকিমনি হেসে চলে যায়৷ দোয়া নিজ থেকে তানাফের হাত শক্ত করে ধরে বলে “আমিই ছাড়বো না। ছেড়ে যাওয়ার নাম নিলে মে-রে তক্তা বানাবো হু”
তানাফ চারদিকে উঁকি দিয়ে দেখছে কেউ আছে কি না আশেপাশে, তানাফ দোয়ার ঠোঁটে চুমু বসিয়ে দিয়ে বলে “যাচ্ছি না কোথাও মহারানী। রেখে দিন নিজের কাছে, আমি থাকতেই চাই”
রাফি,দোয়াদের ঘরে প্রবেশ করতে মেহমান দেখে হা হয়ে আছে। ইনান রাফিকে দেখে দরজার বাহিরে চলে আসে জড়িয়ে ধরে।রাফি ইনানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর বলে “ভাই কত মিস করছি জানেন? আল্লাহ আমার বিশ্বাস হয়না।আমি কী দেখতেছি। আমাকে একটাবার চাচা বললো না যে আপনারা গ্রামে আসবেন।”
দোয়ার বাবা ঘরের ভেতর থেকে হেসে হেসে বলে তাদের “সারপ্রাইজ। সামনে আরো পাইবা সবুর করো বাপজানরা”
ইনান কোনো কথা বলতে পারছেনা রাফিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। রাফি ইনানকে কানে কানে বলে “একটা খবর পাইছি ইনান ভাই। মায়ার বিয়ে হইয়া যাইতেছে। শিগগির বিয়ে আটকানো লাগবে আমাদের”
ইনান কান্নারত ভেজা চোখ মুছে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে “এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম।আমার বুক ফেটে যাচ্ছে আমি পারছিনা ভাই। আমার চোখে সব অন্ধকার দেখতেছি”
কান্না করে লাভ নেই ভাই,আপনি এত বুদ্ধিমান সাহসী ছেলে। কেঁদে বোকা প্রমাণ কইরেন না।আমি মায়াকে বইলা আসি আপনি গ্রামে আসছেন। মায়া বেচারি কাঁদতে কাঁদতে এক অবস্তা। (রাফি)
অমনি তানাফ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলে “না রাফি বলিও না।”
রাফি তানাফকে দেখে হ্যান্ডশেক করে বলে “বাহ তানাফ ভাই আপনিও? আপনার দেখা সাক্ষাৎ নেই সেই যে গেলেন। দোয়া কই? আসছে? আজ সবাই গ্রামে, আমার তো রহস্য রহস্য লাগে”
তানাফ একগাল হেসে দিয়ে রাফিকে ইনানের কাছ থেকে পাশ কাটিয়ে নিয়ে আসে আর বলে “ইনানকে কিছুই জানানো হয়নি। আমি আর আমার বাবা, মায়ার সাথে ইনানের বিয়ে দেওয়ার জন্য এখানে ইনানকে এনেছি। ইনানের পুরো ফ্যামিলিকে সাথে নিয়ে এসেছি। এসব মায়াকে বলো না। আমি চাই মায়া নিজের মুখে ইনানকে ভালোবাসে সকলের সামনে বলুক। আমি জানি ইনান কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু এই কষ্টের পর সুখ আছে। ইনানকে প্লিজ কিছু বলো না।রাতে মায়ার পরিবার বৈঠক এ বসবে দোয়ার বাড়িতে। তখন মায়াকে আংটি পরিয়ে দেওয়া হবে। ওদের মিল করিয়ে দিতে পারলেই আমি শান্তি। আমার আর দোয়ার জন্য ইনান অনেক করেছে। আমাদের তরফ থেকে ইনানের জন্য ছোট্ট উপহার মায়া”
রাফি তানাফের পেটে হাল্কা করে ঘুষি দিয়ে বলে “হাহাহা পেটে পেটে এত বুদ্ধি”
তানাফ, রাফি হাসাহাসি করে ইনানের সামনে দাড়ালো।
ইনান কিছু বলতে গিয়েও বলে না।রাফি ইনানকে বলে “মায়ার পরিবার আসুক, দোয়ার বাড়িতেই মায়ার বিয়ের পাকা কথা হবে।সে নাকি কাল বলছিলো আপনাকে বিয়ে করে নিতে, সে যদি ভালোবাসতো এটা বলতে দশবার ভাবতো। যাক গে আপনাকে ভালোবাসে কাঁদতেছে সবই দেখলাম মানলাম। আজ দেখবো আপনার সামনে কি করে অন্যের হয়! আপনাকে ভালোবাসলে আজ’ই সে সকলের সামনে আপনাকে ভালোবাসি বলবে। আর যদি নাহয় তাহলে কিছু করার নেই”
ইনান রাফির কথাগুলো ভাবতে লাগলো।রাফির কথায় যুক্তি পেয়ে ইনান অস্ফুট স্বরে বলে “ঠিকাছে আজই প্রমাণ হবে আমার ভালোবাসা সত্য নাকি মিথ্যা”
তানাফকে চোখ টিপ দেয় রাফি। তানাফ রাফির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইশারায় বলে “অল দি বেস্ট”
চলবে…..
[শুধু দোয়া তানাফের মিল দিলে কী চলে? তাই সকলের ভালোবাসাকে পুর্ণতা দেওয়া হবে।]
বাকি পার্ট গুলো কই ???????? তাড়াতাড়ি দেন নাহলে কিন্তু আমি কেঁদে দিবো ???????? এই গল্পটা পড়তে অনেক ইন্টারেস্টিং লেগেছে ????????অনেক মজা পাইছি গল্পটা পড়ে ????????তাই কইতাছি কি জলদি কইরা গল্পডা দিয়া দেন ????????আমারে আর কান্দাইয়েন না ????????ফিলিজ (প্লিজ)????????????????????????