#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,২য়_পর্ব
#written_by_Liza
দুধওয়ালার কথায় সবাই বিশ্বাস করে শালিস বন্ধ করে,যে যার মত চলে যায়। এদিকে দোয়া খিলখিল করে আপনমনে হেসে বলে
“হিহিহিহি আমিই সেই রাক্ষসী ঘাড় মটকে র*ক্ত খাবো
মু হাহাহাহা”
দোয়া বাড়ির পেছন গাছটার নিচে গিয়ে বসে আছে,দোয়া দোয়া বলে চেঁচাচ্ছে এক যুবক। দোয়া ভ্রু কিঞ্চিৎ রাঙ্গিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে, যুবকটি এসে দোয়াকে বলতে লাগলো “কাল যে তোরা এত এত আম পেরেছিস সেগুলো কই? চল বিলি করতে যাই এখন”
না না এখন করবো না,সবে মাত্র শালিশ শেষ হয়েছে,কারো চোখে পরলে রক্ষা নেই আজ। (দোয়া)
ঠিকাছে,কখন বিলি করতে যাবি? আমাকে ডাক দিস এই বলে যুবক টি চলে যেতেই দোয়া পেছন থেকে ডাকতে শুরু করে “এই রাফি শোন, এদিকে আয়।”
রাফি দোয়ার ডাক শুনে গলায় গামছা দোলাতে দোলাতে এসে বলে “বল, কী বলবি”
শোন আমাদের প্লান যেনো কেউ জানতে না পারে,দেখলি তো গ্রামের মানুষগুলো কেমন? মাথায় রাখিস (দোয়া)
রাফি কপালের ঘাম মুছে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো, দোয়া নিশ্চিন্তে মাটিতে হেলান দিয়ে বসে আছে। অমনি ইভা,মায়া হাজির। মায়া দোয়াকে বলছে “ভাগ্যিস আজ বেঁচে গেছিরে,নয়তো আমাদের গ্রাম ছাড়া হতে হতো।”
দোয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে “কিছুদিন সাবধানে থাকা লাগবে আমাদের বুঝলি?এরপর না হয় মিশন শুরু করবো”
মায়া দোয়া ইভা বসে নুন মরিচ দিয়ে লেবু খাচ্ছে, দোয়ার আম্মু হাতে বাঁশের আল কেটে এনে দোয়ার সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলছে “তোরে কইছিলাম না, আজকা বাইর না অয়তে? খালি পেটে এসব কিতা খাস? ঘরো আয়”
দোয়া বিরক্তিকর স্বরে বলে
“ফারতাম না (পারবো না) যাও তো।”
দোয়ার ধমক শুনে প্রস্থান করে দোয়ার মা, বিকেল বেলা সবাই ঘুমিয়েছে। রাফি বাগানের দিকটাতে অপেক্ষা করছে দোয়াদের জন্য। দোয়া তার দলবল নিয়ে হাজির।
রাফি দোয়ার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে “এসে ভালো করেছিস,সবাই ঘুমিয়েছে? চল যাই বিলি করে আসি”
দোয়া রাফিকে বলছে “বৈঠা লাগা জলদি,আমরা আসছি”
রাফি নদীর পাড়ে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য, দোয়া,মায়া ও ইভা বড় দুটো ব্যাগ টানতে টানতে নৌকার ধারে পৌছে গেলো। রাফি ব্যাগ দুটো নিয়ে নৌকাতে রেখে, দোয়াদেরকে নিয়ে রওনা দিলো ঐ পাহাড়ে ডিবি অঞ্চলে।
যথারীতি তারা সবাই পৌঁছে যায়, নদীর পানির স্রোত বেশি হওয়াতে ঘর বাড়ি সব ঢুবে গেছে সেদিকে, নদীর পাড় ভেঙ্গে ঢুবে গেছে। অনেক অনেক বসত বাড়ি ঢুবে গিয়েছে। অসহায় লোকগুলা মাটি খুঁড়ে সেখানে থাকছে।
দোয়া ব্যাগ থেকে এক বড় বাটি করে চাল,ডাল,ফল, পেয়াজ সবাইকে দিতে লাগলো। সবাই দোয়াদেরকে ঘিরে আছে, কেউ কেউ বলছে “জানতাম তুমি আইবা মা,”
দোয়া মুচকি হেসে বলে “আমি তো আইছি’ই তোমাগো লাইজ্ঞা,দোয়া কইরো যাতে তোমাগোরে সবসময় আমি আগলাইয়া রাখতে ফারি”
পরণে ছেড়া ব্লাউজ পরিহিতা বৃদ্ধা মহিলা এগিয়ে দোয়া, ইভা ও মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করে। দোয়া সবাইকে খাবার বিলিয়ে দিয়ে রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
নৌকায় বসে আড্ডা দিচ্ছে তিন বান্ধবী আর বলাবলি করছে “চুরি করে এভাবে কতদিন খাবার যোগাবো তাদের আমার জানা নেই। আমাদের গ্রামের কেউ তো এদের কথা শুনতেই পারে না। আচ্ছা তোরা বল? এরা কী মানুষ না? প্রতিবেশীর দুঃসময়ে কাজে না আসলে কীসের প্রতিবেশী আমরা?”
রাফি খিলখিল করে হেসে বলে “আমরা ও একই রে,প্রতিবেশীর গাছ থেকে চুরি করে অন্যদের সাহায্য করি।”
রাফির কথা দোয়া,মায়া,ইভা হেসে দেয় আর বলে “কিছু করার নেই,আমাদের গ্রামের কেউ যদি সাহায্য করতো তাহলে আমরা চুরি করতাম না।”
সবাই বাড়ি পৌছে গেছে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। নাদিম শেখ উঠোনে বসে সিগারেট ফুকছে আর কথা বলছে সকলের সাথে।
নাদিম শেখের স্ত্রী এক কাপ গরম চা এনে দিয়ে নাদিম শেখের হাতে দিলো। নাদিম শেখ চা হাতে নিয়ে পুরো বাড়িটাকে চোখ বুলিয়ে দেখছে আর মনে মনে বলছে
“এই বাড়িডার জমিদার আমিই হমু,আমিই রাজত্ব চালামু”
রাত হতে লাগলো, দোয়ারা যৌথ বড় পরিবার। সবাই একসাথে খেতে বসেছে টেবিলে। নাদিম শেখ মাছের ঝোল আলুর বাটি থেকে কয়েক পিস আলু নিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললো “ভাইজান আফনেরে একটা কথা কইতাম চাই। কমুনি?”
আজিম শেখ আঙ্গুল চাটতে চাটতে ঢেকুর তুলে বলে “কইয়া ফালাও,”
ভাইজান সামনের পুকুরডাত মাছের পোনা ছাড়ছিলাম, এহন কইতাছি’ই কী মাছডি নিয়া বাজারে বেচলে কেমন অয়? আমার কতডি মানুষ আইবো পুকুরডা দেখতো। তারা মাছ তুইলা নিয়া বেচবো আফনের কষ্ট করা লাগতোনা (নাদিম শেখ)
আজিম শেখ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে হাত ধুয়ে উঠে পরে, নাদিম শেখ মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়াচ্ছে। নাদিম শেখের স্ত্রী মনে মনে বলে
” মনে কিছু ঘুরতাছে বুঝছি।”
সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে, নাদিম শেখ মধ্যরাতে সবাইকে ঘুমে রেখে দূরের কুড়ে ঘরে ঢুকে পরে,হাতে টর্চ দিয়ে সবাইকে দেখছে কেউ নজর রেখেছে কী না।
কুড়ে ঘরে কুপি জ্বলছে নিভু নিভু অবস্তা। সবাই জানে কুড়ে ঘরে মৃত আত্মারা রাতে আসে। গ্রামের কুসংস্কারে সবাই বিশ্বাস করতো মনেপ্রাণে। তাই কেউ কুড়ে ঘরের দিকে যেতো না। কুড়ে ঘরের দিকে বাশের ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে কেউ পা না দেয়।
রাফি খাওয়াদাওয়া করে বাহিরে হাটছে, হঠাৎ রাফির নজর যায় কুড়ে ঘরের দিকে। কুড়ে ঘরে হঠাৎ কুপির আলো জ্বলতে দেখতে রাফির মনে ভয় ঢুকে। রাফি দৌড়ে পালাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেই মুহুর্তেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে। রাফি মনে মনে বলছে
“একবার গিয়া দেখমু আজ কিতা আছে ঐ ঘরডাত। রাত অয়লেই কুপি জ্বলে কেমনে? ভুত প্রেত আগুন ডরাইবো। তাইলে কুপি কেডা জ্বালাইছে? আমার দেহা লাগবো।গিয়া দেহি আল্লাহর নাম নিয়া”
যেই বলা সেই কাজ কুড়ে ঘরের দিকে রাফি এগোতে লাগলো। এদিকে নাদিম শেখ কুড়ে ঘরের ভেতর ঢুকে কার সাথে যেনো কথা বলছে। রাফি ঘরের দরজার ফুটো দিয়ে যা দেখতে পায় তা দেখে কপালের ঘাম বেয়ে ঝড়ছে রাফির। রাফি চোখ বড় বড় করে সবটা দেখছে,নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। রাফি কাঁপছে।
কুড়ে ঘরের ভেতর এক অল্প বয়সী মেয়ে নাদিম শেখের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্তায়। একটু পর কুপির আলো নিভে যায়।
রাফি পেছনের আমগাছটার উপর উঠে বসে আছে কখন নাদিম শেখ বের হবে তার জন্য।এদিকে ফজরের আজান পরতেই নাদিম শেখ গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে বেরিয়ে পরে কুড়ে ঘর থেকে।
রাফির মাথা ঘুরছে সবটা দেখে। নাদিম শেখের কয়েক মিনিট পর গায়ে সাদা চাদর জড়ানো অবস্তায় মেয়েটি পুকুরের দিকে চলে যায়।
রাফির আর বুঝতে বাকি রইলো না,রাফি মনে মনে বলে “নাদিম চাচা পর//কীয়া করে, দোয়ারে জানানোর লাগবো। কেউ বিশ্বাস করবো না আমার কথা দোয়া ছাড়া। সবডি দোয়ারেই কমু”
রাফি বাড়ি গিয়ে কেউকে কিছু না বলে ঘুমিয়ে পরে,ভোর বেলা খবর আসে পুকুর ঘাটে লা//শ পাওয়া গেছে এক যুবতীর,বিধস্ত অবস্তায়। মেয়েটির দেহ থেকে মাথা আলাদা তাই কেউ মেয়েটিকে চিনতে পারছে না। রাফি শোনা মাত্র দৌড়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলো, রাফি মনে মনে বলছে “কাল রাতের মাইয়াডার মত লাগে। কেডা মা//রলো?”
রাফি সোজা কাঁপছে ভয়ে,দোয়া রাফির কাঁধে হাত দিয়ে বলে “আমাদের গ্রামে কী যে হচ্ছে বুঝি নারে, খুব অদ্ভুত কাজকারবার হচ্ছে।”
রাফির কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে, রাফি নাদিম শেখের দিকে তাকাতেই নাদিম শেখ ভ্রু রাঙ্গিয়ে রাফিকে ইশারা করে। রাফি ভয়ে কপালের ঘাম মুছে মলিন হাসি দেয় একটা। নাদিম শেখ লুঙ্গি ঠিক করতে করতে বলে
“কী আকাম করছিলো কেডা জানে,শরীরের উপ্রে একটা কাপড় নাই মাইয়ার।এই মাইয়া ম//ইরা ভালাই করছে। আমাগো গেরামের মান ইজ্জত খাইয়া দিলো”
চলবে!
[সিজন – ১ এর সাথে কোনো মিল পাবেন না,তাই আশা করে লাভ নেই। এই গল্পটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধৈর্য নিয়ে পরলে বুঝবেন। আর যারা রোমান্টিকতা ফানি খুঁজছেন তাদের কাছে এই গল্প নিরামিষ।]