তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৩য়_পর্ব

0
830

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৩য়_পর্ব
#written_by_Liza

“কী আকাম করছিলো কেডা জানে,শরীরের উপ্রে একটা কাপড় নাই মাইয়ার।এই মাইয়া ম//ইরা ভালাই করছে। আমাগো গেরামের মান ইজ্জত খাইয়া দিলো”

রাফি নাদিম শেখের কথা শুনে ঢোক গিলতে লাগলো, নাদিম শেখ লুঙ্গির গিট্টু বাঁধতে বাঁধতে ঘরে চলে গেলো। লা//শ টিকে দাফন করা হলো।

রাফি দোয়ার হাত ধরে দোয়াকে গাছতলায় নিয়ে যায়, দোয়া হতভম্বের মত তাকিয়ে আছে রাফির দিকে। রাফি ঘেমে একাকার, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে নাকি।
দোয়া রাফিকে ঝাকুনি দিয়ে বলে “কেন এনেছিস? কী হয়েছে এত ঘামছিস কেন?”

রাফি দোয়ার হাতটুকু নিজের মাথায় রেখে বলে “বল কেউকে বলবি না এখন? আমি কিন্তু মিথ্যা বলি না জানিস।”

দোয়া রাফিকে শান্ত করিয়ে বলে “আচ্ছা ঠিকাছে বল এবার”

রাফি এবার এক এক করে সেদিন রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলতে শুরু করে,দোয়া রাফির কথা শুনে বাকরুদ্ধ। দোয়া কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না নিজেকে,এদিকে রাফিকে অবিশ্বাস করার ও উপায় নেয়,কারণ রাফি কখনো দোয়াকে মিথ্যা বলে না।

দোয়া সবটা বিশ্বাস করে, রাফি দোয়াকে বলে “শুন আজ রাতে একটু বের হবি। আজ দেখবো ঐ কুড়ে ঘরে কোন মেয়ে থাকে”

দোয়া রাফি কথা সেরে যে যার মতো করে চলে গেলো।

সন্ধ্যায় উঠোনে টেবিলের উপর টিভি রেখে সবাই একসাথে বসে টিভি দেখছে গ্রামবাসী। খবর দেখছে সবাই। নাদিম শেখ সবার দৃষ্টির অগোচরে বসা থেকে উঠে চলে যায়। দোয়া আড়চোখে নাদিম শেখের দিকে নজর রেখেছে। নাদিম শেখ কাকে যেনো ফোনে বলছে
” এডা বেশিদিন ঠিকছে না, মাইয়াডা সুবিধার না মাইরা দিছি। নতুন থেইকা একটা রাতকা ধইরা আনবি। টাহার চিন্তা করোন লাগবো না, ফাইয়া (পেয়ে) যাবি”

দোয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু,দোয়া ওঁৎ পেতে আছে রাতের জন্য।

সবাই যে যার মত বাড়ি চলে গেলো টিভি দেখে৷ রাতে সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমিয়েছে। পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ নীরব। চারদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক ক্রমশ বাড়ছে।

নাদিম শেখ আস্তে আস্তে টর্চ হাতে নিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। দোয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে কান্ড। রাফি দোয়াদের পেছনের জানালা দিয়ে এসে ডাকছে। দোয়া বাকিদের ও বলে রেখেছে আসার জন্য।

সব বন্ধু বান্ধব মিলে বেরিয়ে পরেছে সত্য জানার জন্য। কুড়ে ঘরে আবারো সেদিন রাতের মত কুপি জ্বলছে। দোয়া কাঁপা কাঁপা পায়ে কুড়ে ঘরের দিকে এগোতে লাগলো। কুড়ে ঘরে দরজার ফুটোতে চোখ রাখতেই দেখতে পেলো তার চাচা লুঙ্গির প্যাচ থেকে মোটা টাকার বান্ডিল মুখে রুমাল বাঁধা এক লোককে দিচ্ছে। পাশে একটি মেয়ের মুখে রুমাল বাঁধা হাত পা দড়ি দিয়ে বাঁধাই করা।

মেয়েটির কোনো সারাশব্দ নেই। অজ্ঞান হয়ে পরে আছে খড়ের উপর।

নাদিম শেখ ফিসফিসিয়ে বলছে “তুমারে যেনো এই গেরামে আর না দেহি কইয়া দিলাম। যাও এন্তে”

লোকটি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো,দোয়া আম গাছের পেছনে দলবল নিয়ে লুকিয়ে পরে। লোকটি যাওয়ার পর দোয়া আবারো দরজার ফুটোতে চোখ রাখে। নাদিম শেখ মেয়েটির উম্মুক্ত গলায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো “এক্কেরে তরতাজা, বেশ হইবো এডা”

মেয়েটিকে রেখে নাদিম শেখ বেরিয়ে গেলো কুপি বন্ধ করে। দোয়া নিজেকে আড়াল করে সরে দাঁড়ায়। নাদিম শেখ বাড়ি চলে গেলো। দোয়া তার দলবল নিয়ে কুড়ে ঘরে ঢুকে পরে।
দোয়া মেয়েটিকে হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে দিয়ে রাফিকে বলতে লাগলো ” রাফি তুই বৈঠা নিয়ে ঐপারে গিয়ে মেয়েটাকে রেখে আয়। রাত টা পার হোক। মেয়েটা অজ্ঞান মনে হচ্ছে বেশিই ডোজ দিয়েছে খুব সহজে জ্ঞান আসবে না। তাই চিন্তা নেই। তুই ওঁকে কোনো নিরাপদ জায়গায় রেখে আয় যাতে কারো চোখে না পরে। কাল সকালে গিয়ে ওঁকে আমরা বাহিরে পাঠিয়ে দেবো”

রাফি দোয়ার কথামতো মেয়েটাকে কোলে নিয়ে নৌকাতে বসিয়ে নদীর ওপারে চলে গেলো। মেয়েটাকে জঙ্গলে পাহাড়ের ডিবির নিচে রেখে দিয়ে আসে,আশেপাশে গাছ থেকে ফল কুড়িয়ে পাশে রেখে আসে।

দোয়া তার দলবল নিয়ে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছে,রাফি মেয়েটিকে রেখে এসে দোয়াকে বলতে লাগলো “প্রমাণ পেলি তো তোর চাচা কেমন?মেয়েটাকে নিরাপদ জায়গায় খাবার দিয়ে রেখে আসছি”

দোয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাফিকে বিদায় দেয়, সবাই যে যার মত বাড়ি গিয়ে ঘুম। সকালে নাদিম এর চেঁচামেচিতে দোয়ার ঘুম ভাঙ্গে। দোয়া সবটা জেনে শুনে না বুঝার ভান করে নাদিম শেখকে বলে “কি অয়লো কাকা? তুমি চিল্লাইতেছো কেরে?”

নাদিম শেখ চিৎকার করতে করতে বলে “আমার ১১লাখ টাহা চুরি অইয়া গেছে”

দোয়া গাল টিপে হেসে বলে “কেমনে অয়লো? এত টাহা কইত্তে আইলো? তুমি তো কাউরে কিছু কওনাই।”

দোয়ার এমন কথায় বাড়ির সকলে সুর মিলিয়ে নাদিম শেখকে ঝেঁকে বসে। নাদিম শেখ আমতা আমতা করতে করতে বললো “এডা ব্যাবসার টাহা তোরা মাইয়া মানুষ বুঝবিনা”

দোয়া কথা না বাড়িয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে পরে, রাফি, দোয়া, মায়া ইভা সবাই নদীর ওপারে চলে যায়। মেয়েটি এখনো অজ্ঞান পরে আছে। দোয়া গিয়ে পানি ছিটা দিয়ে মেয়েটিকে ডাকতে শুরু করে। মেয়েটি ভারসাম্য হারিয়ে বারবার ঢলে পরছে দোয়ার গায়ে৷ দোয়া মেয়েটিকে বুকে নিয়ে রাফিকে বলছে “কী ওষুধ দিলো কে জানে,এর তো ঘুম’ই ছাড়ে না”

পনেরো মিনিট খানেক পর খুব কষ্টে মেয়েটিকে সজাগ করানো হয়। মেয়েটি ঢুলুঢুলু চোখে দোয়ার দিকে তাকিয়ে বলছে “আমারে ছাইড়া দেও, আমি পড়ালেহা করতাম চাই।”

দোয়া মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে “তোমার কিছু হবে না,তোমাকে মুক্ত করে দিয়েছি আমরা। তুমি জলদি পালাও এই গ্রাম ছেড়ে যদি পারো শহরে চলে যাও”

মেয়েটির চোখমুখে খুশির আভা ফোটে উঠে,মেয়েটি দোয়ার হাত ধরে খুশিতে গদগদ করছে। রাফি মেয়েটির দিকে তাক করে বলে “এত হেসে লাভ নাই শিগগির বিদায় হও। নাইলে ম//রবা।”

ওড়নার গিট্টু খুলে কিছু টাকা বের করে দেয় দোয়া,আর বলে “এগুলা নাও তোমার কাজে লাগবে। শহরে চলে যাও।”

রাফি মেয়েটিকে স্টেশনে টিকিট কেটে শহরের গাড়িতে তুলে দেয়, দোয়া স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে তার দলবল নিয়ে গ্রামে হাজির। সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।

নাদিম শেখ কপালে হাত দিয়ে উঠোনে বসে আছে চিন্তায়। দোয়া নাদিম শেখের অবস্তা দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আর মনে মনে বলছে “কাকা তোমারে আমি পাইছি”

এভাবে দিন পার হচ্ছে, গ্রামবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন অতিবাহিত করছে।

এই সুখের মুহুর্ত বেশিদিন আর ঠেকে নি,গ্রামে নেমে আসে অশুভ ছায়া। দলে দলে ছোট বড় বুড়ো বাচ্চা মরছে সঠিক চিকিৎসার অভাবে,গ্রামের লোকজনরা ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঢলে পরছে। বড় কলেরার (রোগ) আবির্ভাব ঘটেছে গ্রামে।

গ্রামের চিকিৎসকরা এই রোগের সঠিক চিকিৎসা করতে পারছে না,বুঝতে পারছে না এই রোগের আসল লক্ষণ। আজীম শেখ বেশ চিন্তিত এই অবস্তা দেখে।

আজীম শেখ শহরে গিয়ে ডাক্তারের খোঁজ করে,গ্রামবাসীকে বাঁচানো সুস্থভাবে জীবন যাপন করানোই হলো আজীম শেখের একমাত্র লক্ষ্য। গ্রামে এমন রোগ ছড়িয়ে পরার কারণে কেউ গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা দিতে নারাজ,অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক না।তাই সরাসরি গ্রামে এসে চিকিৎসা করাতে পারবেনা বলে দিয়েছে।

আজীম শেখ হতাশ এই পরিস্থিতি দেখে, আজীম শেখ হাল ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসে।

এদিকে ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে, এক গ্রাম থেকে বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পরছে।

শহরে নতুন ডক্টর এসেছে,সে উদ্যোগ নিয়েছে পুরো গ্রামে তারা নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্য করবে। প্রতিটি সেক্টর থেকে ডক্টর বাছাই করে নিয়েছে, সবাইকে একেক গ্রামে পাঠিয়েছে।

দোয়াদের গ্রামে ডক্টরদের ল্যাব করা হয়েছে,যতদিন না ভাইরাস মুক্ত হচ্ছে গ্রাম ততদিন ডক্টররা ল্যাভে কাটাবে। তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হলেও গ্রামের মানুষের কথা ভেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে তারা।

________________________
স্যার আমার না গ্রামে থাকার অভ্যাস নেই,আপনার জন্য যাচ্ছি। আমি জ্বীন প্রেত ভয় পাই খুব। শুনেছি ঐ গ্রামে নাকি প্রতি মাসে মাসে একটা করে লা//শ পাওয়া যায়। (এসিস্ট্যান্ট ইনান)

চলবে….

[সবাই তৈরি তো? ইনান কিন্তু চলে এসেছে?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here