তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৪র্থ_পর্ব

0
1005

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৪র্থ_পর্ব
#written_by_Liza

স্যার আমার না গ্রামে থাকার অভ্যাস নেই,আপনার জন্য যাচ্ছি। আমি জ্বীন প্রেত ভয় পাই খুব। শুনেছি ঐ গ্রামে নাকি প্রতি মাসে মাসে একটা করে লা//শ পাওয়া যায়। (এসিস্ট্যান্ট ইনান)

বেশি কথা বলে মাথা খেও না আমার। জলদি ব্যাগ প্যাকিং করো রাতে বের হতে হবে আমাদের (ডক্টর)

ইনান কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ প্যাকিং করতে লাগলো,সব কাজ প্রায় শেষ লোকেশন অনুযায়ী যাওয়ার কাজ চলছে।

স্টেশনের বেঞ্চিতে ট্রেনের অপেক্ষা সবার। ডক্টরের মোবাইলে রিং পরছে, কল রিসিভ কর‍তেই ওপাশ থেকে কান্নারত কন্ঠ ভেসে আসে “বাবা তুই যাস না। আমার খুব ভয় করছে”

ডক্টর গম্ভীর স্বরে বলছে ফোনে “মা না গেলেই নয়,আমাদের পেশা এটা। আমি কী করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবো বলো মা? দো’আ করো যাতে সাক্সেস হয়ে ফিরে আসি। মা রাখছি ট্রেন চলে এসেছে”

ওপাশ থেকে ডক্টরের মা বলছে “তানাফ শোন আমার কথা,তানাফ,তানাফ”

তানাফ কল কেটে ট্রেনে উঠে পরে, ইনান ও তানাফ জানালার পাশের সিটে বসলো। একটু পর ট্রেন ছেড়ে দেয়। রাত বাজে বারোটা। ইনান একটু পর পর তানাফের দিকে তাকাচ্ছে। তানাফ ভ্রু রাঙ্গিয়ে ইনানকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে “কী হয়েছে?”

ইনান কোনো কথা না বলে চুপ চাপ মুখে হাত দিয়ে বসে আছে, একটু পর দু’টো হিজ//ড়া এসে হাত তালি দিয়ে দিয়ে সবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিচ্ছে৷ টাকা না দিলে ঝগড়া করছে।

ইনান উঁকি দিয়ে দেখছে কান্ড গুলো,ইনান মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে ” ঘুর্নিঝড় টর্নেডো এদিকে আসছে। যাই বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে থাকি”

ইনান দু পা বাড়াতেই হি//জড়া ইনানকে ঘিরে ধরে আর বলে “টাকা দে,টাকা দে,নাহলে দেখিয়ে দেবো”

ইনানের মাথায় খেলে গেলো দুষ্টু বুদ্ধী, ইনান তাদের সাথে হাত তালি দিয়ে বলছে “দেখিয়ে দে দেখিয়ে,নয়তো টাকা পাবি নে”

হি//জড়া গুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে কনফিউজড, তাদের সাথে কী হচ্ছে তারাও বুঝতে পারছে না। ট্রেনের ভেতর সকল যাত্রী উদ্ধিগ্ন হয়ে আছে ইনানের কান্ড দেখার জন্য।

তানাফ মোবাইল রেখে পাশ ফিরতেই দেখে ইনান
হি//জড়াদের ভেতর মাটিতে বসে তালি দিচ্ছে তাদের সাথে। তানাফের চোক্ষু চড়কগাছ। তানাফ রাগী স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে ইনানকে ডাকছে।

ইনান ইনোসেন্ট ফেস করে তানাফকে দেখে দু হাত উঁচু করে বসে আছে। হি//জড়া গুলো তানাফের কাছে এসে বলে “হাই হ্যান্ডসাম টাকা দে,তোর মঙ্গল হবে”

ইনান হি//জড়াদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে ক্যাবলার মত তানাফের পাশে এসে বসে আছে।
হি//জড়াগুলো ইনানের গেঞ্জি টেনে ইনানকে দাড় করিয়ে বলে “এই তুই আমাদের সাথে চল। তোকে এখানে মানায় না। তুই আমাদের লোক”

ইনান কাঁদো কাঁদো স্বরে তানাফকে বলছে “স্যার বাঁচান,এরা তো আমায় নিয়ে যাচ্ছে”

তানাফ পাঁচশো টাকার নোট বের করে দিয়ে তাদের বিদায় করে দেয়, হি//জড়া গুলো আবার ফেরত এসে তাদের কপালে দেওয়া টিপ ইনানের কপালে লাগিয়ে দিয়ে বলে “তোকে আর কোথাও যদি দেখেছি ধরে নিয়ে যাবো,আমাদের সাথে মশকরা? খবিশ ব্যাটা”

ইনান হাতজোড় করে বলে “মেরি নানি মেরা গলদ হয়েছে,আপনি উদার সে ইদার। ইদার সে উদার চলে যান।”

হি//জড়া গুলো আক্কেলগুড়ুম অবস্তা ইনানের কথায়। তানাফের এক চিৎকারে হি//জড়া গুলো চলে যায়,যাওয়ার আগে তানাফকে বলে “এত রাগ দেখাস নে, তোর কপালে বাউন্ডুলে মেয়ে জুটবে দো’আ করে দিলুম”

তানাফ রেগেমেগে যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই হি//জড়া গুলো পালিয়েছে।

ইনান ভয়ে ঘেমে চুপসে আছে, ট্রেনের যাত্রীরা ইনানের অবস্তায় হাসছে।

তানাফের বেশ রাগ হচ্ছে ইনানকে দেখে, তানাফ ইনানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে। ইনান অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে গা ঢাকা দিতে ব্যাস্ত।

রাত পেরিয়ে ফজরের আজান দিচ্ছে,ট্রেন স্টেশনে বিরতি নিয়েছে। তানাফ আশেপাশে উঁকি দিয়ে দেখছে নামাজ পড়ার কোনো জায়গা আছে কী না।তানাফ ইনানকে বসিয়ে নামাজ পড়তে চলে যায়৷ নামাজ সেরে দোকান থেকে খাবার নিয়ে ট্রেনে উঠে পরে আবার।

ইনানের হাতে খাবার দিয়ে বলে “ইনান খেয়ে নাও যেতে যেতে আমাদের সকাল হবে৷ খেয়ে বিশ্রাম নাও।”

ইনান বাধ্য ছেলের মতো হাতে কলা ও পাউরুটি নিয়ে চুপচাপ বসে আছে৷ তানাফ ইনানকে ইশারা করে বলে খেতে। ইনান কলার খোসা ছাড়িয়ে কলা’টাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। একটু পর আমতা আমতা করে ইনান বলে
“স্যার কলাটা কী স্ত্রী বাচক, নাকি পুরুষ বাচক? না মানে কিছু কলাতে গুটি গুটি ”

ইনান বলতে গেলেই তানাফের কাঁশি উঠে যায়। তানাফের এই অবস্তা দেখে ইনান হেসে দেয়। ইনান আর কিছু না বলে কলা খেতে লাগলো। তানাফ কোনোভাবে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে।

ইনানের এমন উদ্ভট প্রশ্ন তানাফের প্রচন্ড রাগ উঠিয়ে দেয়। তানাফ ইনানকে বলে “ইনান বড্ড বেশি কথা বলো,এত উদ্ভট চিন্তা আসে কোথা থেকে তোমার?”

ইনান ক্যাবলার মতো দাঁত বের করে বলে “ইয়ে মানে স্যার আমার না সাইন্টিস্ট হওয়ার খুব শখ৷”

তানাফ হেসে দেয় ইনানের কথায়,তানাফ হাসতে হাসতে বলে “হয়ে গেলা টেরো**রিস্ট তাই না?”

ইনান খাবার মুখে নিয়ে তানাফের দিকে তাকিয়ে আছে, তানাফ ইনানের অবস্তা দেখে জানালার বাহিরে তাকিয়ে হাসছে। একটু পর ট্রেন ছেড়ে দেয়। ট্রেন চলছে আপন গতিতে।

কয়েক ঘন্টা পর গ্রামে এসে পৌঁছে যায় তানাফ,বৃষ্টির কারণে কাদা হয়ে আছে মাটি। ইনান তানাফের দিকে তাকিয়ে বলে “স্যার এমন রাস্তা দিয়ে মানুষ হাটে কীভাবে? আমার তো মনে হচ্ছে আমি এখানেই ঢুকে যাবো”

তানাফের হাটতে কষ্ট হলেও তানাফ চুপচাপ কোনো উওর না দিয়ে হেটে চলেছে। ইনান ব্যাগ কাধে নিয়ে ব্যাঙ্গের মতো লাফাতে লাফাতে রাস্তা পার হচ্ছে।

গ্রামের মেয়েরা ইনানের এই অবস্তা দেখে হাসছে, ইনান লজ্জায় হিরোর মতো হাটা শুরু করে, তানাফের আগে হেটে চলে যায় ইনান। যেতে যেতে গরুর গোয়াল ঘরে ঢুকে পরে। তানাফ পেছন থেকে ডাকছে ইনানকে কোনো খেয়াল নেই।।

তানাফ বারবার বলছে “ইনান ওদিকে আমাদের যাওয়ার রাস্তা না। কোথায় যাচ্ছো”

ইনান কোনো কথা শুনতে না পেয়ে সোজা গোয়াল ঘরে ঢুকে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। ইনানের মাথা ঘুরছে। ইনান পথ হারিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ইনান মনে মনে বলছে “ওহ বুঝেছি ঘরটা মনে হয় জ্যাকপট রাউন্ডের ঘর। সামনে ঢুকে পেছনে বের হতে হয়। আচ্ছা তানাফ স্যার কোথায়।”

ইনান আবার ঘরের পেছন দিকে ঢুকে সামনের দিকে বেরিয়ে পরে, তানাফ ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রেগে। ইনান তানাফকে দেখে ক্যাবলার মতো হাসি দেয় আর বলে “স্যার আমি এই গ্রামে এসে গ্রামের সব বুঝে গিয়েছি। এখন কেউ আমাকে ক্ষেপাতে পারবে না। স্যার এটা হলো জ্যাকপট ঘর। সামনে ঢুকবেন পেছনে বের হবেন”

তানাফ দাঁতে কিড়মিড় করতে কর‍তে বলে “এটা গোয়াল ঘর হা*দা*রাম। এটা গ্রাম এখানে বড় বড় গোয়ালঘর গুলো ঠিক ঘরের মতো দেখতে”

ইনান জ্বীভে কামড় দিয়ে গুটি গুটি পায়ে তানাফের পাশে দাঁড়ায় আর বিড়বিড় করে বলে “স্যার একটা কথা বলি? এখানে গরু কোথায়?গোয়াল ঘরে গরু ঘাস নেই কেন?”

তানাফ ইনানের কথায় ফিক করে হেসে দিয়ে বলে “ঐ যে দেখো পুকুরে গোসল করাচ্ছে ওদের। গোয়াল ঘর হয়তো কেউ পরিষ্কার করে গিয়েছে”

ইনান লজ্জায় চুপ করে আছে,ইনান মনে মনে বলছে
” ছি আমি গরুর ঘরে এন্ট্রি নিলাম। ইসস ইনান তুই আস্ত খবিশ,ঐ হিজ//ড়াগুলো ঠিকই বলেছে”

ইনান তানাফের পেছন পেছন হাটতে লাগলো। পুরো টিমের মানুষ তানাফের সঙ্গে। ইনান একটু পর পর বলছে “স্যার কোনো গন্ধ পাচ্ছেন? কেউ পঠি করেছে এমন গন্ধ আসছে। এইজন্য গ্রামে আসতে চাইনি। গ্রামের মানুষ এদিক ওদিকে সবজায়গায় পঠি করে রাখে। উফফ কী গন্ধ”

তানাফ ইনানের কথায় কাঁশতে শুরু করে নাক চেপে,ইনান তানাফকে দেখে বলে “দেখলেন স্যার গন্ধ এখন তীব্র আসছে।”

তানাফ ইনানের পেছনে সরে গিয়ে দেখে গরুর গোবর ইনানের জুতোয় লেগে আছে, তানাফ ইনানের মাথায় ঠোকা দিয়ে বলে “গরুর গোবর নিজের পায়ে লাগিয়ে এসে গ্রামের মানুষদের দোষ দিচ্ছো কেন ইনান? গরুর গোবর নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে নেমে গেলে”

ইনান তানাফের কথা শোনা মাত্র’ই এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে নাক চেপে ধরে। পুকুরের পাশে গিয়ে পায়ের জুতো ধুয়ে নেয়। ইনানের বেহাল অবস্তা দেখে তানাফ হেসে একাকার। ইনান পেটে হাত দিয়ে বলছে “স্যার খুব খিদে পেয়েছে। আর কত দূর?”

তানাফ ইনানকে অভয় দিয়ে বলে “আর একটু, বেশি নেই”

স্যার স্যার চিকেন গ্রীল খাবেন? ঐ দেখুন ইয়া লম্বা। দেখেই জ্বীভে পানি আসছে। খিদায় পেট চোঁ চোঁ করছে (ইনান)

ইনানের এমন কথায় তানাফ হা করে আছে,তানাফ ইনানকে বলছে “এটা গ্রাম,এটা শহর না।এখানে কোনো রেস্তোরাঁ নেই।তুমি চিকেন গ্রীল কোথায় দেখছো?”

ইনান হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয় গরুর গোবর মাখানো লাটি শুকাতে দেওয়া হয়েছে ওদিকটায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here