#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৫ম_পর্ব
#written_by_Liza
ইনান হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয় গরুর গোবর মাখানো লাটি শুকাতে দেওয়া হয়েছে ওদিকটায়।
তানাফ, ইনানের এমন অবস্তা দেখে পুরো টিমসহ খিল খিল করে হাসতে শুরু করে,ইনানকে আরেকজন বলে উঠে “ইনান এটা গোবর লাঠি”
ইনান দাঁতমুখ খিচিয়ে বমির ভান ধরে হাঁটতে শুরু করে,অবশেষে পৌঁছে যায় সবাই গন্তব্যে। সবাই জিনিসপত্র গুছিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।
তানাফ সকল মেডিসিন যত্নসহকারে আলাদা করে রেখেছে। ইনান ফ্রেস হয়ে নাস্তা করছে সকলের সাথে। তানাফ মা’কে ফোন করে জানিয়ে দেয় চিন্তা না করার জন্য।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে,আজীম শেখ গ্রামে ডক্টরদের ল্যাবে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। চেয়ারম্যান যেহেতু সবদিকে খেয়াল রাখাটা আজীম শেখের দায়িত্ব। আজীম শেখ শ্বেত সাদা পাঞ্জাবি পরে ও হাতে একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে। ল্যাবে পৌঁছে গেছে আজীম শেখ।
আজীম শেখ সকলের সাথে কুশল বিনিময় আলাপ করে সকল রোগ সম্পর্কে ধারণা দেন। ল্যাবে থাকা সকল ডক্টরদের জন্য খাওয়ার ব্যাবস্থা করেন। যতদিন ডক্টর গ্রামে থাকবে ততদিন আজীম শেখ তাদের খাওয়াদাওয়া করাবেন নিজ দায়িত্বে।
আজীম শেখ বাড়ি চলে আসে আর তার স্ত্রীকে বলে “এহন থেইকা গেরামের ডাক্তাররা আমাগো খাওন খাইবো বুঝলা দোয়ার আম্মা? বাড়াইয়া রাইন্ধো নাদিম রে কইছি বাজার আইনা দিবোনে। কোনো ভুল যেনো না অয়। আমাগো সম্মানোর ব্যাফার (ব্যাপার)”
দোয়ার মা কোনো কথা না বলে উনুন ঘরে চলে গেলো,তড়িঘড়ি সকল রান্না সেরে খাবার টিফিনে টিফিনে রাখছে৷ আজীম শেখ লোক দিয়ে খাবারগুলো ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়।
সবাই খাওয়াদাওয়া করে বিশ্রাম নিচ্ছে রাতে সবাই গ্রামে বের হবে অবস্তা বুঝার জন্য।
এদিকে মায়া ও ইভা, দোয়াকে বলছে “জানিস দোয়া গ্রামে ডক্টর এসেছে। চল একবার দেখে আসি”
নাহ রে আমার ডক্টর মানুষ ভালো লাগেনা। এরা নির্দয় টাইপের হয় (দোয়া)
মায়া ফ্যাকাসে মুখ করে বসে আছে দোয়ার কথায়,দোয়া মায়ার হাত ধরে বলে, “জানিস এরা মানুষকে যেমন বাচাঁয়, তেমন মারে। এদের বিশ্বাস করতে নেই”
মায়া কথা না বাড়িয়ে চুপ করে আছে,বাহিরে টুপ টুপ বৃষ্টি পরছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে সবাই ল্যাব থেকে বেরিয়ে গ্রামে হাঁটতে বেরিয়েছে।
দোয়া পুকুরপাড়ে বসে আছে আনমনে, ইনান হাটতে হাটতে পুকুরপাড়ে খেয়াল করে দেখে,কে যেনো মূর্তির মতো বসে আছে নড়চড় নেই। ইনান তানাফের হাত ঝাকুনি দিয়ে বলে
“দেখলেন স্যার,? বলেছিলাম না ভুত আছে? ঐ দেখুন ওটা কী যেনো”
তানাফ ইনানকে ধমক দিয়ে হাটতে হাটতে দোয়াদের উঠোনে চলে গিয়েছে, ইনান তানাফের পিছু পিছু হাটছে। দোয়া ইনানের কথা শুনতে পেয়ে দোয়ার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। দোয়া ইনানের পিছু পিছু হাটছে। একটু পর পর ইনানের মাথায় বারি দিয়ে দোয়া সরে যায়। ইনান মাথায় বারি খেয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ভয়ে কেউকে কিছু বলছে না।
দোয়া বেশ মজা পাচ্ছে ইনানের কান্ডে, দোয়া মনে মনে বলছে
“ব্যাটা আমাকে ভুত বলা? নে এবার ভুতের থাবড় খা”
সকল ডক্টরদের আজীম শেখের বাড়িতে বসানো হলো। দোয়া গুটিগুটি পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করে পেছনের দরজা দিয়ে।
দোয়ার মা দোয়াকে চুল আঁচড়ে দিয়ে বিনুনি করে দিচ্ছে আর বলছে “ঘরো মেহমান আইছে আজকা কিছু করিস না। তোর আব্বা জানলে তোরে মারবো”
দোয়া বিরক্তির স্বরে চেঁচিয়ে বলে ” আম্মা সবসময় আমারে এসব কইবানা কইয়া দিলাম। আমি ডক্টর ব্যাডারে ভালা ফাইনা। এরা মানুষ না এরা দানব”
দোয়ার মা দোয়ার মুখ চেপে ধরে, দোয়া আওয়াজ গিলে চুপ হয়ে যায়।
রাতে সকলে খাওয়াদাওয়া করে হাঁটতে বেরিয়েছে। রাফি নদীর পাড়ে বসে আছে নৌকা নিয়ে,তানাফ রাফিকে দেখে বলে “এত রাতে নৌকা চালান সমস্যা হয়না? আপনি নদীর স্রোত গতিবেগ বোঝেন?”
রাফি একগাল হেসে বলে “না আমার সমস্যা হয় না অভ্যস্ত আমি এসবে। চলেন আপনাদের এই রাতের নিশি গ্রাম টা দেখিয়ে নিয়ে আসি”
তানাফ রাফির কথায় মুগ্ধ হয়ে নৌকাতে বসে পরে, বিপত্তি বাঁধে ইনানের। ইনান জীবনের প্রথম গ্রামে এসেছে,সবকিছুর খাপ খাওয়াতে ইনানের কষ্ট হচ্ছে।।ইনান ভয়ে তানাফকে বলে “আমি যাবো না স্যার আমি ল্যাবে চলে যাচ্ছি। আপনি ঘুরে আসুন”
তানাফ গম্ভীর ধমক দিয়ে বলে “চুপচাপ উঠে পরো ইনান”
ইনান তানাফের সাথে কথায় না পেরে চুপচাপ নৌকায় উঠে বসে, রাফি নৌকা মাঝ নদীতে এনে আস্তে আস্তে বৈঠা বেয়ে চলতে লাগলো। জোরালো বাতাস লালচে,বেগুনি আকাশ ভয়ংকর সুন্দর লাগছে গ্রামটা। আশেপাশে ঝি ঝি পোকা ব্যাঙের আওয়াজ ভেসে আসছে।
রাফি এবার তানাফকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব গ্রাম দেখাতে লাগতো। আর গ্রামের সেই কু কীর্তি তানাফকে জানাতে লাগলো। তানাফ অধীর আগ্রহে সবটা শুনছে,তানাফের মনে বেশ কৌতুহল ঝেঁকে বসেছে,
রাফি সরল মনে সেদিন রাতের নাদিম শেখের সকল কাহীনি বলতে লাগলো। ইনান সকলের মাঝখানে বলে উঠে “ঐ বাড়ির লোকগুলো ভীষণ অদ্ভুত,আজীম আংকেলকে ভালো লেগেছে। বাকিগুলোকে ভুতুড়ে রহস্য মনে হয় আমার।”
রাফি হেসে বলে “ঠিক বলেছেন ইনান ভাই,তবে ঐ বাড়িতে সবাই কমবেশি ভালো আছে,খারাপ বলতে নাদিম লোকটাই খারাপ। যোগ্য প্রমাণের অভাবে কিছু করা যায় না। আমার ছোট বেলার বান্ধবী দোয়া ঐ বাড়ির চেয়ারম্যান আজীম চাচার মেয়ে।সে অতন্ত্য মিশুক। সরল মনের মেয়ে।”
তানাফ রাফিকে থামিয়ে দিয়ে বলে “আচ্ছা রাফি আপনি আমাকে সাহায্য করবেন? এভাবে চলতে থাকলে তো ক্রাইম। আমাদের উচিৎ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া এর বিপক্ষে”
ইনান তানাফের কথায় সহমত বলে চেঁচাচ্ছে, রাফি বলছে “আমি যে এই কথাগুলো আপনাদের বললাম দয়া করে কেউকে বলবেন না। তাহলে আমাকে আমার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া হতে হবে”
তানাফ হেসে অভয় দিয়ে বলে “চিন্তা করবেন না,আজ থেকে আপনি একা নন।আমরাও আছি এই ব্যাপারে জড়িত। দেখবো ঐ লোক কতদূর যায়”
ঘোরাফেরা শেষে রাফি তাদের পৌঁছে দেয় ল্যাবে, রাফির সাথে সকল ডক্টরদের সাথে ভালো সু-সসম্পর্ক গড়ে উঠে। সময় পেলেই রাফি সবাইকে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখায়,গ্রামের আনাচেকানাচে রাফির চেনা। ডক্টররা রাফির মতো মিশুক ছেলে পেয়ে খুশি।
এভাবে দিন যাচ্ছে, গ্রামের মানুষদের সেবা প্রদান করা শুরু হয়ে গেছে ডক্টরদের। আবহাওয়া জনিত রোগ ধরা পরেছে গ্রামে। বাতাসের বেগে চারদিকে ছড়িয়েছে রোগ যার ফলে মানুষ দ্রুত অসুস্থ হয়েছে। ডক্টররা সবাইকে ইঞ্জেকশন ওষুধ দিয়ে ভালো করার চেষ্টায় আছে।
একদিন রাতে রাফি দোয়া,মায়া,ইভা সবাইকে নিয়ে বেরিয়েছে,কারণ রাফি শুনতে পেয়েছে নাদিম শেখ আবারো মেয়ে এনে ধর্ষ**ণ করার মতলব এটেঁছে।
তাই রাফি সবাইকে নিয়ে হাজির। দোয়া কপালে হাত দিয়ে বসে আছে গাছ তলায়, আর বলছে “রাফি আমি পারছিনা আর সহ্য করতে,হাতের বাহিরে সবটা চলে যাচ্ছে।তুই কিছু কর”
রাফি বুদ্ধি করে তানাফকে ফোন দিয়ে সবটা বলে,তানাফ আর ইনান রাফির কথামতো রাতে বেরিয়ে পরে।
দোয়া তানাফকে আসতে দেখেই রাফিকে বলতে শুরু করে “এই লোকটারে আমি দেখতেই পারি না,এটা এখানে কী করে?”
রাফি দোয়াকে ধমক দিয়ে বলে “সবকিছুতে নিজের জেদ খাটানো ঠিক না দোয়া। চুপচাপ দেখে যা”
দোয়া নিশ্চুপ হয়ে আছে,একটু পর পর রাগে ফুঁসছে, তানাফ ব্যাপারটা খেয়াল করেও চুপ করে আছে। ইনান দোয়াকে বলে “আপনি সবসময় এত ফায়ার হয়ে থাকেন কেন ম্যাম? না মানে একটু ঠান্ডা স্বরে কথা বললে কী এমন হয়”
দোয়া হাতে ইট নিয়ে বলে “বেশি কথা বলবেন মুখে মেরে দেবো”
ইনান নিজেকে বাঁচাতে তানাফের পেছনে গিয়ে আশ্রয় নেয়,তানাফ দোয়ার হাত থেকে ইট নিয়ে ফেলে দেয় আর বলে “বেশি জেদ ভালো না মিস দোয়া, এই জেদ কমানোর মেডিসিন তানাফের কাছে আছে মাইন্ড ইট।রাস্তা ছাড়ুন”
রাফি দোয়াকে শান্ত করিয়ে বলে “সবাই এক না দোয়া,তুই কেন একজনের জন্য সকলকে দোষারোপ করবি?”
দোয়া কোনো কথা না বাড়িয়ে কুড়ে ঘরের দিকে এগোচ্ছে,কুড়ে ঘরের ভেতর কুপির আলো জ্বলছে।
তানাফ ইনানকে বলছে “ইনান আমি না ডাকলে তুমি এসো না,”
রাফি ইনানের পাশে দাঁড়ান, ইনান এসব দেখে অভ্যস্ত না। রাফি তানাফের কথায় ইনানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
দোয়া কুড়ে ঘরের দরজার ফুটোতে চোখ রাখতেই কাঁপছে, নাদিম শেখের মিলিত হওয়া প্রায় শেষ অল্প বয়সী মেয়ের সাথে। মেয়েটি অচেতন। দোয়ার চোখ বেয়ে অনর্গল পানি ঝড়ছে,হঠাৎ পাশে কে যেনো বলে উঠে দোয়াকে ” বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেন? এসব জিনিস আপনার দেখার কোনো দরকার নেই সরে যান”
দোয়া পাশ ফিরতেই দেখে ডক্টর তানাফ আজমী পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে উঁকি দিয়ে দেখে দোয়ার কোনো ফ্রেন্ড দোয়ার পাশে নেই। রাফি, মায়া ইভা সবাই কোথায় যেনো ভ্যানিশ।
তানাফ ফিসফিসিয়ে দোয়ার কাছে এসে বলে “সবাইকে নিয়ে এখানে হট্টগোল করলে ভেতরে থাকা মেয়েটির লাশ পরবে,তার চেয়ে বরং নীরবে সবটা সামলাতে হবে”
দোয়া রাগে কাঁপছে, তানাফ মোবাইলে সকল ভিডিও ক্যামেরাবন্দী করে। এদিকে নাদিম শেখ কাঁপড় পরে বেরোনোর জন্য তৈরি হচ্ছে, দোয়া জেদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে নাদিম শেখ কে ধরার জন্য।যেই না নাদিম শেখ দরজা খুলে বের হবে অমনি তানাফ দোয়াকে টান দেয়।
তানাফের বুকে দোয়া ছিটকে পরে,নাদিম শেখের খটকা লাগলেও শেয়ালের কাজ মনে করে চলে যায় কুপি বন্ধ করে।
দোয়া তানাফের বুকে,দোয়া নিজেকে ছাড়িয়ে উঠতে গিয়ে কাঁদার পিচ্ছিল জায়গাতে স্লিপ করে আবারো তানাফের বুকে এসে ছিটকে পরে।তানাফ অপ্রস্তুত হয়ে পরে, তানাফ দোয়াকে সরিয়ে দিয়ে চলে যায় কুড়ে ঘরের ভেতর।মেয়েটিকে কোলে করে নিয়ে ল্যাবে চলে যায়, যাওয়ার আগে দোয়াকে বলে তানাফ “কেউকে কিছু বলবেন না,যা করার আমি করবো। মেয়েটার ভালো চান তো চুপ থাকুন।রাত বেরাতে বের হবেন না। আপনার কাকা আপনাকেও ছাড়বেনা যা বুঝলাম। নিজেকে সেফ রাখুন আল্লাহ হাফেজ”
দোয়ার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে,দোয়া মনে মনে ভাবছে “নাদিম কাকা তোমার লাইজ্ঞা আমার সব বিশ্বাস ভাইঙ্গা গেলো”
_____________________
সকাল বেলা নাদিম শেখ বেশ অস্থিরতা ভাব নিয়ে বাড়ির এপাশ ওপাশ পায়চারি করছে,দোয়া ঘর থেকে বের হতেই দোয়াকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বলছে “কাল রাতকা কই আছলি তুই?”
চলবে….
[সিজন ১ এর সাথে কোনো মিল নেই।ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]