তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৯ম_পর্ব [ বোনাস পর্ব ]

0
1209

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৯ম_পর্ব [ বোনাস পর্ব ]
#written_by_Liza

“হয়েছে মুরুব্বি, তোমরাও ভালো থেকো। জলদি বিয়ের দাওয়াত দিও।গ্রামে আবারো আসবো স্পেশালি তোমার আর ইভার বিয়েতে। চলি”

গ্রামের সবাইকে বিদায় দিয়ে সবাই স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হলো,স্টেশনে সবাই অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য। একটু পর হুইসেল বাজতে শুরু করে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ট্রেন আসছে।

দোয়ার চোখ মুখ ফুলে আছে,তানাফ দোয়ার থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। দোয়া সবটা খেয়াল করেও চুপচাপ। দোয়ার মনে কারো জন্য ভালোবাসা জন্মায় নি। কৈশোর কেটেছে হেলেদুলে,সেই সময় ভালোবাসার ফুল ফোটার কথাও না। ইনান সবটা খেয়াল করে দোয়াকে বলে “ম্যাম কিছু মনে করবেন না,হয়তো ইমার্জেন্সি কিছু তাই কথা বলছে”

দোয়া মৃদু হেসে বলে “আমার লাইফে কত কিছুই তো ঘটে গেলো,নিজের র*ক্ত যখন বেইমানি করেছিলো তখনো কিছু ভাবিনি। তাই এসব ব্যাপারে কিছু ভাবার প্রশ্ন আসে না। সবকিছুই ঠুনকো।”

দোয়ার কথাগুলো কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে পাল্টে গেলো সব। ইনান নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না কিছুতেই, ইনান বার-বার দোয়ার দিকে তাকাচ্ছে। ইনান মনে মনে বলছে
“এই কী সেই মেয়ে? যে রাতের আঁধারে ভয় পেরিয়ে বাকিদের ভয় দেখাতো? এই কী সেই মেয়ে যার শিরায় শিরায় চঞ্চলতা ভরপুর ছিলো? আমি তো আগের দোয়া ম্যামকে খুঁজছি। এই নীরব ঠান্ডা মেয়েটি কখনোই দোয়া হতে পারে না।কী করে এত বদলে গেলো? প্রিয়জনের দেওয়া আঘাত কী তাহলে সত্যি’ই সব পাল্টে দেয়? হায় আল্লাহ মেয়েটাকে তুমি দেখে রেখো। চঞ্চলতাটা হারিয়ে গিয়েছে। নির্জীব দেহ যেনো বয়ে বেরাচ্ছে সে।”

অমনি তানাফের ডাকে ইনানের ধ্যান ভাঙ্গে,তানাফ,ইনানকে বলছে “মায়ার প্রেমে ডুব দিয়েছিলে নাকি? ফিরতে হবে ট্রেন এসেছে”

ইনান মৃদু হেসে ট্রেনে উঠে পরে,তানাফ দোয়াকে নিয়ে এক কামরায় বসেছে।

ট্রেন চলতে শুরু করে,প্রাণের গ্রাম ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে দোয়া। মুহুর্তেই চোখের সামনে যেনো গাছপালা ক্ষেত খামার মিলিয়ে যেতে লাগলো। শক্ত হয়ে বসে থাকা মেয়েটি গ্রামের টানে হুহু করে কেঁদে উঠে।

ইনানের বড্ড ভেতরটা কাঁদছে, হয়তো সেও গ্রামকে আষ্টেপৃষ্টে আপন করে নিয়েছিলো। নয়তো তার ফেলে যাওয়া দিনগুলোকে মনে পরছে। তানাফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দেয় দোয়ার দিকে,দোয়া কাঁপা কাঁপা হাতে টিস্যু নিয়ে চোখের পানি মুছছে।

কালো কাজলের প্রলেপ টিস্যুতে ছড়িয়ে গিয়েছে। দোয়া হাতের মুঠোয় টিস্যুটুকু নিয়ে বার-বার নাক টানছে। কোনোভাবেই যেনো মান অভিমানের কান্না থামছে না। ট্রেনে থাকা প্রায় সকলেই নতুন বউয়ের কান্নায় থমকে আছে।

এ কান্না যেনো আশেপাশে স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে,সবাই তানাফের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ বলছে “বউকে ভরসা দিন।আপনি এখন তার আপনজন।তাকে বোঝান এভাবে সবাইকেই ছেড়ে আসতে হয় বাপের বাড়ি”

তানাফ সৌজন্যের খাতিরে দোয়ার হাতটুকু নিজের হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করে,ইনান সবটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে “এ বন্ধণ জন্ম জন্মান্তর হোক”

এই প্রথম দোয়াকে কাছ থেকে স্পর্শ করেছে,দোয়ার শরীরের লোম কাটা দিচ্ছে কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়ে। দোয়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে কান্না বন্ধ করতে ব্যাস্ত। তানাফ আবারো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে, কার সাথে যেনো চ্যাটিংয়ে ঝগড়া করছে। তানাফের মুখের অভয়ভঙ্গি অন্যকিছু জানান দিচ্ছে।

সবাই সবটা বুঝতে পেরেও চুপ করে আছে, দোয়া কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। রাত গভীর হচ্ছে ট্রেনের প্রায় সবাই ঝিমিয়ে পরছে।

ইনান আর তানাফের চোখে ঘুম নেই। দোয়া ঘুমে ঢলে পরে তানাফের কাঁধে। তানাফ নড়েচড়ে বসতেই দোয়া উঠে পরে।

ইনান তানাফকে ইশারায় এমনটা করতে নিষেধ করে৷ তানাফ চুপচাপ চ্যাটিং করছে। দোয়া আবারো ঘুমে তানাফের গায়ে ঢলে পরে,এবার আর তানাফ দোয়াকে সরিয়ে দেয় নি। তানাফের কাঁধে দোয়ার মাথা।

তানাফ ফোন রেখে বসে আছে,দোয়ার মুখের উপর চুল উড়ছে। দোয়ার অস্বস্তি লাগছে চুলগুলোর জন্য। তানাফ আলতো করে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। ইনান হেসে দেয়। তানাফ তথমত খেয়ে হাত সরিয়ে নেয়।

ভোর হয়ে যায় চারদিকে ট্রেন এসে থেমেছে স্টেশনে। সবাই নেমে পরেছে যে যার যার বিদায় দিয়ে বাসায় চলে যায়।

তানাফ,’ ইনানকে বলছে ” কাল দুপুরে দেখা হবে,গিয়ে রেস্ট নাও”

ইনান,’ দোয়া ও তানাফকে বিদায় দিয়ে চলে যায়। এদিকে তানাফ, ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলে,

ড্রাইভার তানাফের পাশে দোয়াকে দেখে বলে “সাব বিয়ে করে নিলেন?”

তানাফ দ্রুত পায়ে গাড়িতে বসে দোয়াকে বসতে বলে, দোয়া গাড়িতে বসামাত্রই তানাফ বলে ড্রাইভারকে “এত কথা না বাড়ি চলুন”

ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিতেই দোয়া সামনে ঝুকে পরে, তানাফ দোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে “সিট বেল্ট না পরে বসলেন কেন? সিট বেল্ট পরে নিন”

দোয়া গম্ভীর স্বরে বলে “পারি না,”

তানাফ নিজেই সিট বেল্ট লাগিয়ে দেয়। এরপর গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ি এসে সোজা গেইটের ভেতর ঢোকে।

তানাফ সিটবেল্ট খুলে দোয়াকে নিয়ে ভেতরে যায়। ঘরের কলিংবেল চাপ দিতেই কাজের বুয়া দরজা খুলে দেয়। তানাফের পাশে দোয়াকে দেখে কাজের বুয়া চিৎকার দিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে তুলে দেয়।

তানাফ রেগেমেগে হুংকার দিয়ে বলে “স্টপ ইট”

তানাফের এই প্রথম এমন রুপ দেখে দোয়া ভয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
তানাফের বাবা-মা দৌড়ে আসেন। তারা তানাফের সাথে দোয়াকে দেখে হতভম্ব।

তানাফের বাবা তানাফকে রেগে বলতে শুরু করে “তোমাকে আমি মানুষের সেবা করতে পাঠিয়েছিলাম,মানুষ আশ্রয় দিতে পাঠায় নি”

দোয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে,তানাফের মা তানাফের বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলে “আহহ এভাবে বলছো কেন? মাত্র এসেছে আগে ফ্রেশ হতে দাও তাদের”

তানাফের বাবা রাগে কাঁপছে আর বলছে “আমি এ বাড়িতে থাকবো নয় তোমার ছেলে থাকবে,কি শুরু করেছে কী? যাকে তাকে ধরে আনবে আমি মেনে নেবো? আমি থাকতে এটা কখনো সম্ভব নয়৷ আমার বংশের নাম যশ এভাবে আমি ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারি না।”

তানাফ রাগে ফুঁসছে, তানাফ মায়ের ইশারায় নিজেকে কন্ট্রোল করছে। তানাফের মা ইশারা দিয়ে ছেলেকে হাতজোড় করছে চুপ থাকার জন্য। দোয়া কাঁদছে খুব।

তানাফের বাবা কথাগুলো বলে দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। তানাফের মা দোয়ার কাছে গিয়ে দোয়ার মুখটা উঁচু করে দেখছে। দোয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে,তানাফের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

তানাফ রুমে চলে গেলো। তানাফের মা দোয়ার চোখ মুছে দিয়ে বলে “এই মেয়ে এভাবে কাঁদতে হয়? চল আমার সাথে কাঁদবি না একদম। পাছে লোকে কিছু বলে সব কথা গায়ে মাখতে নেই রে। শোন আমি তোর মা বুঝেছিস? আমার সাথে কথা বলবি সব শেয়ার করবি কেমন?”

দোয়াকে চোখ মুছে দিয়ে নিজের সাথে করে নিয়ে গেলো তানাফের মা। দোয়াকে রুমে নিয়ে গিয়ে নতুন শাড়ি কিছু গয়না দিলো।

তানাফের মা দোয়ার কান্না দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “জানিস মেয়ে? তোর এই অবস্তা দীর্ঘ চব্বিশ বছর আগে আমার সাথেও ঘটেছিলো।আমিও তোর মতোই গ্রামের’ই মেয়ে। আমার শাশুড়ীটা বড্ড ভালো ছিলো জানিস? তার জন্যই আমি আজ ঘর করতে পারছি তোর শশুড়ের সাথে নয়তো আমাদের প্রথম প্রথম কেউ মেনে নেয় নি। আজ আমার প্রতিচ্ছবি দেখে খুব অবাক হলাম, আমার চিৎকার করে তানাফের বাবাকে বলতে ইচ্ছে করছে ‘ওগো তুমিও একদিন এই জায়গায় ছিলে তখন তোমার বাবা ঠিক এভাবেই আমাকে অপমান করেছিলো।আজ তুমি তোমার বাবার জায়গায় দাঁড়িয়ে ছেলের বউকে অপমান করলে। তোমার কী কিছুই মনে পরে না? নাকি অতি সূখে অতিত ভুলে গেলে’ আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে তানাফের বাবাকে এই কথাগুলো বলতে কিন্তু পারছিনা।চিন্তা করিস না আমি আছি যতদিন,
তোর গায়ে একটা ফুলের টোকাও পরতে দেবো না। নে তৈরি হো মেয়ে”

দোয়া তানাফের মায়ের কথায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে,দোয়া মনে মনে ভরসার হাত পেলো ভাবছে। তানাফের মা দোয়াকে রেডি করিয়ে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছে। এদিকে তানাফ রুমে এসে বেঘোরে ঘুম।

দোয়াকে নিজ হাতে নাস্তা খাইয়ে দিয়ে রুমে নিয়ে গেলো, তানাফকে ঘুমন্ত অবস্তায় দেখে তানাফের মা চিৎকার দিয়ে বলে “তানাফ ঠিক করে ঘুমা,এভাবে হাত পা ছড়িয়ে অনেকদিন ঘুমিয়েছিস এখন আর পারবি না।”

দোয়াকে তানাফের মা বলছে “এখন একটু বিশ্রাম নে,দুপুরে আমি ডাকলে তারপর নিচে আসবি কেমন?”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here