তবু_ফিরে_আসা,পর্ব : (১)

0
1032

#তবু_ফিরে_আসা,পর্ব : (১)
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
(#ক্যানভাস গল্পের দ্বিতীয় সিজন।)

(১)
ব্যবসার কাজ আর ঘুরাঘুরির প্ল্যান নিয়েই পনেরো দিনের জন্য সিলেট আসতে হয়েছে শ্রাবণকে। টানা দশ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে জাফলং গ্রীন রিসোর্টে এসে পৌঁছেছে আধাঘণ্টা আগে। রুম বুকিংয়ের কাজটা আগেই অনলাইনে সেরে নিয়েছিল। এখন রিসেপশন থেকে শুধু চাবিটা নিয়ে দরজার লক খুলে নিজের রুমে প্রবেশ করে ধপাস করে বিছানায় পড়লো। ক্লান্তিতে সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। ফ্রেশ হয়ে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম না নিলে শরীর খারাপ করবে নিশ্চিত। তারপর নাহয় কাছাকাছি কোথাও একটু বেরিয়ে আসা যাবে। অবশ্য এখানকার সব তার মুখস্ত। প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর এখানে পনেরো দিনের ট্যুরে আসতে হয় তাকে। না আসলে যেন প্রকৃতির রূপের স্বাদ নেয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে তাকে, এমনটাই ভাবনা তার। গত দু’বছর ধরে এরকমই দিন কাটছে তার।

শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে টেলিভিশন অন করে নিউজের দিকে মনোযোগ দিল সে। খাবারের জন্য এখন আর নিচে যাবে না। ইন্টারকমেই লাঞ্চের খাবারটা কনফার্ম করে নিবে। আজকাল এই একটা কাজই তার ভালো লাগে। সময়ে অসময়ে টেলিভিশনের সাথেই সখ্যতা গড়ে নিতে ব্যস্ত সে। মোবাইলফোন, ইন্টারনেট ওসব আর খুব একটা ভালো লাগে না। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হলে তখনই কেবল ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের দরকার পড়ে। নয়তো এই সাদামাটা জীবনটাই তার কাছে ভালো মনে হয়।

জীবনের সব রঙ মুছে যাওয়ার পর এখন আর এসব তাকে খুব একটা টানে না। মেঘ জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর টানা কয়েকটা মাস শুধু মেঘের ফেইসবুক, তার রেখে যাওয়া স্কেচ, মেঘের বাড়িতে কারণে অকারণে ঘুরঘুর করে মেঘকে দেখতে যাওয়া ছাড়াও আরও অনেক কিছুই করেছে তবুও শেষ অবধি মেঘ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। আদনানের থেকে মেঘের দেশ ছাড়ার কথা জেনেছে অনেক পরে। আগে জানলে হয়তো কিছু একটা সমাধানে আসতে পারতো, কিন্তু যে এই দেশে নেই, যে তার হৃদয়ের কোথাও প্রচণ্ড আঘাতে সাজানো-গোছানো ঘরটা ভেঙে দিয়েছে তবুও তাকে ফিরে পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে নিজেকে কষ্ট দিতেও দু’বার ভাবেনি শ্রাবণ। মেঘের স্মৃতি তাকে ভীষণ পোড়ায়। হয়তো নিজেরই অজান্তে কোনোভাবে মেঘকে মনে ঠাঁই দিয়ে ফেলেছিল, যা আগে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। যখন বুঝতে পারলো, মেঘ তার জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন মেঘ তাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল।

এখনও শ্রাবণ অপেক্ষা করে মেঘকে ফিরে পাওয়ার। যদি কখনও সুযোগ হয় ক্ষমা চাওয়ার, যদি কখনও আবারও চলতি পথে দু’জনের কোথাও দেখা হয়ে যায়, তবে শ্রাবণ আবারও চেষ্টা করবে মেঘকে ফিরে পেতে। এখনও যে অনেক কথা জানা বাকি তার। অনেক ভালোবাসা বাকি। সুন্দর একটা জীবন গড়া বাকি। যে জীবনে শুধু মেঘেরই আনাগোনা থাকবে, কোনো মিথ্যে কোনো প্রতারণার সেখানে জায়গা হবে না কোনোদিন। এমনই একটা দিনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে আজও!

মোবাইলের রিংটোন শোনে টেলিভিশনের সাউন্ড কমিয়ে দিল শ্রাবণ। ফোনটা কানে ঠেকিয়ে বলল,
“কী রে, কী খবর তোর?”
“তোর অফিস গিয়ে জানতে পারলাম, তুই সিলেট। এটা কোনো কথা শ্রাবণ? আগামী সপ্তাহে বিয়ে করছি আমি আর এভাবে আমাকে একা ফেলে তোর সিলেটে যাওয়াটা কি খুব বেশিই প্রয়োজন ছিল?”
“অফিসের কাজের জন্য তো আসতেই হতো। তাছাড়া ভাবলাম, এক জায়গায় থেকে থেকে বোরিং লাইফ কাটাচ্ছি, একটু জায়গা বদলের দরকার। তাই সিলেট আসা।”
“তুই যদি বিয়েতে না আসিস ভালো হবে না কিন্তু!”
“আদনান, এটা কেমন ছেলেমানুষী! আমার কাজ শেষ করে যদি ব্যাক করতে পারি তাহলে কথা দিচ্ছি, আমি তোর বিয়েতে অবশ্যই থাকবো।”
”ঠিক আছে দোস্ত। এখন তাহলে রাখলাম। নওরীনকে নিয়ে একটু কেনাকাটা করতে বের হবো।”
“ওকে, বাই।”

ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ। ওদের দু’জনার মাঝে বন্ডিংটা এত সুন্দর যে, এই দু’বছরে শত ঝগড়া, শত অভিমানের পরেও এরা একে-অপরকে ছাড়তে পারেনি। অথচ সে মেঘকে আটকে রাখতে পারলো না! একরাশ অভিমান আর অভিযোগ জমা হয়ে আছে মেঘের উপর, আর ভালোবাসা সে তো একবুক উজাড় করা! সেটা তো জানতেও পারলো না মেঘ, বুঝতেও চাইলো না কখনও!

(২)
মেঘের শিফট শুরুর আগ মুহূর্তে তার কর্মস্থলে এসে পৌঁছায় সে। মরার মতো ঘুমিয়েছিল বলে টের পায়নি বেলা কোনদিকে গড়িয়েছে। খালামনি ডেকে না তুললে আজকের দিনটা মাটি হয়ে যেত। বকুনিও হজম করতে হতো। অবশ্য তার জায়গায় জয় সেটা দিব্যি সামলে নিতে পারতো। তবুও তো পরের চাকরী। এভাবে অবহেলা করে ফেলে রাখা যায়? আরাম-আয়েশকে ত্যাগ করে যথাসময়ে এসে হাজিরা দিতে হয়! এটা একটা প্যারা। কিন্তু কিছু করার নেই। অবশ্য মেঘের কাছে এখন এটাই বেঁচে থাকা। এটাও যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, দিন কাটানো মুশকিল হয়ে যাবে। অসময়ে তখন শুধু অতীত এসে ভিড় জমাবে মাথায়। রাগ, অভিমান বাড়িয়ে তুলে বুকের ভেতর তোলপাড় করে দু’চোখে যন্ত্রণার অশ্রু ঢেলে সে পালিয়ে যাবে! অদ্ভুত এই জীবন। অদ্ভুত এই ভালোবাসা নামক অনুভূতিটা!

রিসেপশনে চেক ইন লিস্টটা হাতে নিয়ে দেখতে শুরু করলো মেঘ তখনই ইন্টারকমটা বেজে উঠলো। মেঘ কানে ঠেকিয়ে দ্রুত সালাম দিল,

“আসসালামু আলাইকুম।”

ওপাশে একটা হার্টবিট মিস করলো শ্রাবণ। কেঁপে উঠলো পুরোটা। চোখমুখের ভাবভঙ্গি পুরোটাই পালটে গেছে তার। এটা কার কণ্ঠস্বর শুনলো! কিছু সময় থম মেরে বুঝার চেষ্টা করলো সে এখনও অতীতের মায়ায় আবদ্ধ আছে কিনা। হয়তো তাই! নয়তো এই অচেনা জায়গায় মেঘ কীভাবে আসবে? মেঘ তো সিডনীতে! কিছু সময় চুপ থেকে সালামের জবাব দিল,

“ওয়ালাইকুম আসসলাম। রুম নাম্বার ২০৫।”

এখানে মেঘ পুরোপুরি স্তব্ধ। ইন্টারকমটা এখনও তার কানে ঠেকানো। চোখদুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেছে তার। ভ্রু কুঁচকে জিহ্বায় কামড় দিল মেঘ। মনে মনে বলল,
“সর্বনাশ! শ্রাবণ কবে আসলো?”

দ্রুত পাশে থাকা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু চেপে ধরলো ইন্টারকমে। এবার একটু কণ্ঠস্বরের আওয়াজটা তীক্ষ্ণ শোনাবে। শ্রাবণ হয়তো টের পাবে না, কার সাথে কথা বলছে।

“ইয়েস স্যার! হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”
“আই নিড লাইক টু চিকেন স্যান্ডউইচ এন্ড অ্যা কাপ অফ কফি!”
“ওকে স্যার।”

কল কেটে ধপাস করে চেয়ারে বসলো মেঘ। টেনে একটা শ্বাস ফেললো সে। আজকের চেক ইনগুলো ভালো করে দেখতে দেখতে আধাঘণ্টা আগের একটা নামে এসে থমকে যায় মেঘ। শ্রাবণ নিজের সিগনেচার দিয়ে আধাঘণ্টা আগেই রুমে ঢুকেছে। মেঘ তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নীলাশাকে বলল,

“এই আধাঘণ্টা আগে কেউ চেক ইন করেছে আমাকে বলিসনি কেন?”
“আরে তখন আমি ছিলাম না তো। জয়কে জিজ্ঞেস কর।”
“বেরিয়ে গেছে নাকি? এখানে তো নেই।”
“আছে হয়তো সামনে। দেখ গিয়ে কোন মেয়ের পিছনে ঘুরছে।”

মেঘ হালকা হেসে রিসোর্টের সামনের দিকে আসলো। জয় তখন প্রকৃতির রূপের কাছে নিজেকে মেলে ধরেছে। অবশ্য তার সঙ্গে একটা মেয়েও দিব্যি আড্ডা দিচ্ছে। মেঘ ওখান থেকেই জয়কে ডাকলো,

“জয়, এই জয়, এদিকে একটু আয় না ভাই। একটা দরকারি কথা আছে তোর সাথে।”

মেঘের ডাক পেয়ে জয় ছুটে এলো সামনে। মেঘ তখন বলল,
“শ্রাবণ যে রিসোর্টে এসেছে আমাকে বলিসনি কেন? এক্ষুনি ধরা খেয়ে যাচ্ছিলাম।”
“ওপস, সরি! আমি ভুলে গেছি। তুইও না পারিস বটে। এভাবে আর ক’দিন পালাবি? সেই একদিন এখানেই ধরা খাবি দেখিস। যেভাবে শ্রাবণ ভাইয়া এখানে যাতায়াত শুরু করেছে তাতে তোর লুকোচুরি একদিন তার চোখে পড়বেই।”
“পড়লে পড়ুক। আমার তাতে কী? আমি তো তাকে চিনি না। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। এত ভয় পাওয়ার কী আছে?”
“সত্যিই মেঘ। তুই বড্ড অদ্ভুত! এই বলিস সম্পর্ক নেই, তাকে চিনিস না। আবার এই কেঁদে মরিস। না সিডনীতে পারমানেন্ট হলি আর না এখানে হতে পারছিস। দেখবি, তোর সারাজীবন এভাবে পালিয়ে পালিয়ে কাটবে।”
“ছাড় তো। এত ফালতু কথা বলিস না। এখন আজকের শিফটের কী করবো সেটাই ভাব! এভাবে রিসোর্টে আমাকে দেখে ফেললে ঝামেলা হবে।”
“তো যা, আরামসে বাসায় গিয়ে ঘুমা। শিফটটা আমি দেখে নিব।”
“সত্যিই যাব।”
“হ্যাঁ যাবি। এখানে থেকে কী করবি? দেখা করবি তার সাথে?”
“ এ্যাঁ আদিখ্যেতা! যত ঢং। সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেক আগে, আর তাকে পাওয়ার স্বপ্নও আমি দেখি না। যেভাবে আছে ভালো থাকুক। শুধু এটা টের পাক যে, আমি তার জীবনের দামী কিছু ছিলাম! আমার তাতেই শান্তি।”
“বেচারা দেবদাস হয়ে পড়ে আছে আর তুই মজা নিচ্ছিস?”
“মজা না জয়। সিরিয়াসলি। তাকে এত ভালোবাসার বিনিময়ে কী দাম দিল তার! উলটে সবার সামনে আমাকে মিথ্যেবাদী অপবাদ দিয়ে বিদায় নিল। অথচ কোনোদিন জানতেও চাইলো না, কেন আমি আমার পরিচয় গোপন রেখে রাত্রি সাজলাম। ওর জন্যই আমার জীবনটা আজ এলোমেলো আর ওর জন্যই আমি ঘরছাড়া!”

আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি মেঘ, পার্টস হাতে নিয়েই বেরিয়ে পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে।

(৩)
আশরাফ মাহমুদ আর ওনার স্ত্রী শ্রাবণকে বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত। সন্তানকে এভাবে হতাশায় ডুবে থাকতে দেখলে কোনো বাবা-মায়ের মনে শান্তি থাকে না।ওনাদেরও তাই। যত বুঝাতে চান শ্রাবণ উলটো তাঁদের বুঝাতে শুরু করে। তার সিদ্ধান্ত একটাই, মেঘ ছাড়া কাউকে আর এ জীবনে জড়াবে না। যদি মেঘ ফিরে না আসে তবু সে একাই দিব্যি বেঁচে থাকবে তবুও অন্যকারও মায়ায় আর কোনোভাবে জড়ানো সম্ভব না।

আদনান আর নওরিন রাত্রের মধ্যেই একগাদা কেনাকাটা করে ফিরছে। বিয়ে নিয়ে দু’জনেই খুব খুশি। অনেক আগেই বিয়েটা হয়ে যেত শুধু নওরিনের পরীক্ষার জন্য সব পিছাতে হলো। নওরিন এখন নামকরা চিত্রশিল্পী। গতবছরেই এই সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয় সে। নিজেকে সে এগিয়ে নিতে পেরেছে। আর তার জন্য সব ক্রেডিট আদনানের। একজন বন্ধুর মতো পাশে থেকে ভরসা জুগিয়েছে সবসময়, কখনও দুর্বল হতে দেয়নি। সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে তার লড়াইয়ে সেই ছিল সবচেয়ে বড়ো শক্তি আর অনুপ্রেরণা দাতা। শত বিপদ আর ঝড়ঝাপটাও যে নওরিনকে একা ফেলে পালাতে পারেনি। হয়তো তার ভালোবাসার শক্তিটা অনেক বেশি, যার ফলে এখন সে ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।

রাত তখন আটটা। দু’জনেই বাড়ির দিকে ফিরছে। নওরিন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রাতের ব্যস্ত শহরটাকে অবলোকন করছে। ক্রেতা-বিক্রেতা আর সাধারণ মানুষের ভিড়ে রাস্তা ব্লক হওয়ার দশা। তবুও যদি মানুষের ছুটে চলা থামুক! আদনান এক পলক নওরিনকে লক্ষ্য করে বলল,

“মন খারাপ কেন?”
“খেয়াল করছো তবে!”
“কী হয়েছে?”
“ভাবো তো একবার, আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পাচ্ছে। অথচ মেঘ আর শ্রাবণ দু’জনে দু’জনের থেকে কত দূরে! ওরা কি এভাবেই আড়ালে থাকবে সারাজীবন? মেঘ তো পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই পালানোটা কবে শেষ হবে বলতে পারো?”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদনান। ড্রাইভ কন্ট্রোল করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মেঘ যা করছে ঠিক করছে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও এমনটাই করতাম। স্টুপিডটার বুঝা উচিত, মেঘকে সে কতখানি কষ্টের জীবন উপহার দিয়েছে!”
“ওদের এক করা যায় না?”
“আমরা চাইলেই হবে? ওদের চাওয়াটাও তো দেখতে হবে। মেঘ শ্রাবণ ওরা কি চাইবে আবারও এক হতে?”
“দু’জনের মনে দু’জনকে নিয়ে ভালোবাসা আছে কিনা সেটা ক্লিয়ার হলেই ওদের এক করা সম্ভব।”
“সেটা কীরকম সম্ভব?”
“বিয়েতে শ্রাবণ ভাইয়া আসবে না?”
“বললো তো ফ্রি থাকলে আসবে।”
“তাহলে কি মেঘকেও আনা যায়?”
“মেঘ আসবে?”
“চেষ্টা করে দেখি। আর শ্রাবণ ভাইয়া তো মেঘের রিসোর্টেই উঠেন। আসলেই স্টুপিড ওনি, নইলে এত কাছে থেকেও মেঘকে খুঁজে পাননি আজও! ওনি তো ওখানকার নিয়মিত গেস্ট!”
“ও হয়তো মন থেকে খুঁজছে না। আর মেঘ যা চালাক, কোনোভাবেই নিজেকে ধরা দিবে না। উপায় একটাই, আমাদেরকেই কিছু করতে হবে ওদের জন্য।”

(৪)
সেই কখন রিসোর্ট থেকে এসে দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতরে বসে আছে মেঘ। খালামনি এর মধ্যেই তিন থেকে চারবার এসে ডেকে গেছেন। এভাবে হুট করে রিসোর্ট থেকে চলে আসার কারণটাও জানতে চাইলেন তিনি। মেঘ কিছুই উত্তর দিল না সে কথার। শুধু বলল,

“আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও খালামনি। মাথা ঠাণ্ডা হোক, তখন এমনিতেই বাইরে আসবো।”

অর্ডার দিয়েও কোনো রেসপন্স না পেয়ে তখন বাধ্য হয়ে নিচে আসতে হয়েছিল শ্রাবণকে। চোখের সামনেই কেউ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল তার অথচ কিছুই টের পেল না সে। বাতাসের ঝাপটার সাথে উড়িয়ে নেওয়া ধুলোর মতো বুকের ঠিক কাছাকাছি কোথাও ঝড়ের পূর্বাভাস টের পেয়েছিল ক্ষণিকের জন্য। চারদিকে চোখ ঘুরানোর আগেই সে ঝড়টা উবে গেছে তৎক্ষনাৎ। জয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুধু জিজ্ঞেস করলো,
“কী ব্যাপার জয়, তোমরা গেস্টদের উপোস রাখা শুরু করলে কবে?”

জয় চমকে উঠে পিছনে তাকায়। শ্রাবণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছুটে আসে কাছে। স্মিত হেসে বলল,
“উপোস কেন রাখবো? যার কাছে অর্ডার করেছিলেন সে এইমাত্র বেরিয়ে গেল। সে যাহোক, আসুন ভেতরে। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি। ওহ, খাবার কি রুমে পাঠাতে হবে?”
“আরেহ্ না, থাক। এসেই যখন পড়েছি এখানেই সেরে নিই। কাজ কেমন চলছে?”
“জি স্যার ভালো।”

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয় জয়। শ্রাবণ চারপাশে চোখ বুলায়। গত চার মাস আগেই এখানে এসেছিল, এখন আবার আসলো। খুব একটা পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। তবে কিছু কিছু সিস্টেম চেঞ্জ হয়েছে মাত্র।

রাত তখন নয়টা। মিটিং সেরে রুমে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো শ্রাবণ। তখনই অচেনা একটা নাম্বার থেকে ছোটো একটা ম্যাসেজ এলো। শ্রাবণ অবাক হয়ে তাকালো, ম্যাসেজের দিকে। একই জায়গা, একই দিন, একই সময়, একই নাম্বার থেকে আরও একটা ম্যাসেজ, ঠিক এক বছর পর!

চলবে…

(ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here