তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ-০১

0
1933

তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ-০১
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী

আরাভ ও নীলাশাদের বন্ধুদলের উচ্চণ্ড আড্ডাটা সানাম এবং মিশমিকে ছাড়া জমে উঠলেও সানামের আগমনে যে তার রূপ পাল্টে গেল, সম্পূর্ণতই এমনটা নয়। ফাগুনের মধ্যভাগ সময়ে ভিন্ন বয়সীদের চিরচেনা আড্ডাটা শুরু হওয়ার সময়ও সানামের অবস্থান ছিল তার চাচার বাসায়। সে আসবে না বলেই জানতো সকলে। কিন্তু মেয়েটি তুমুল ক্ষিপ্রতায় এসে সরাসরি নীলাশার মুখ বরাবর কাঁধের ব্যাগটি ছুঁড়ে মারতেই তাজ্জব বনে যেতে দেখা গেল উপস্থিত তরুণ-তরুণীদের। যে মেয়েটি রাগে ফুঁসতে-ফুঁসতে পাশে বসে পড়ল, তার আকস্মিক আক্রমণে হতভম্ব নীলাশা তেতে উঠে বলতে লাগল,

“ হুয়াট দ্য… ”

অতঃপর সে থেমে গেল আপনা-আপনিই। এই কথা শেষ করলে যে এতগুলো বড় মানুষের সামনে তাকে লজ্জায় পড়তে হবে তা নীলাশার মস্তিষ্ক চট করেই ধরে ফেলেছিল। দ্বিতীয় বারের মতো সে তার ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করার আগেই পিহু তার স্বভাবসুলভ, নাটকীয়তার সহিত বলে উঠল,

“ ইশ্শি রে! নীলুর খাঁড়া নাকটা এইভাবে ব্যাঁকা করে দিলি দোস্ত? কত সুন্দর ক্লিওপেট্রা-ক্লিওপেট্রা ভাব ছিল নাকটায়। তুই দেখি ব্যাঁকাপেট্রা বানিয়ে দিলি! ”

নীলাশা আবারও ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের কাল্পনিক রূপের ন্যায় টানা-টানা নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল। প্রশ্ন করল সানামকে যে, তার এমন আচরণের অর্থ কী। কিন্তু সানাম উত্তর দিল না। নীলাশা আর কতটুকুই-বা রেগে গিয়েছে! তার থেকেও হিংস্র বাঘিনীর মতো লাগছে শ্যামবর্ণাকে। অবশ্য সে উত্তর না দিলেও নিশানকে বলতে শোনা গেল,

“ নিশ্চিত ওর চাচা-চাচি ওর বিয়ে ঠিক করছে আবার! ”

তার কথার পর সকলের বিস্ময়াভিভূত চাহনি শীতল হলো ক্ষিপ্তবৎ সানামের হ্যাঁ-সূচক উত্তরে। সানাম রাগান্বিত স্বভাবে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

“ এই ব্যাটা আর ব্যাটার হিটলার বউ জীবনডা শ্যাষ করে দিচ্ছে! এইবার দেখিস, সাহেল ভাইয়ের ওই দল-বল দিয়েই একটা পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করব।যেইরকম ঈশা… ”

সানাম নিজের কথা শেষ করতে পারল না। নীলাশার চোখের কড়া শাসানিতে যখন মস্তিষ্কে এলো সে কী বলতে যাচ্ছিল তখন নিজেও বেশ অপ্রস্তুত হলো মেয়েটি। বিষয়টা জানা পিহু, আরাভ, সায়ান ও সাহেলের মতো যে নিশান-রিশানও বিস্ময়াবিষ্ট নয়নে তাকিয়ে শুধুমাত্র তাকেই দেখছে তা আর বুঝতে বাকি নেই সানামের। রিশানকে তৎক্ষনাৎ কম্পমান কণ্ঠে প্রশ্ন করতে শোনা গেল,

“ তুই কি ঈশার নাম নিলি, সানাম? ”

অবশ্য সানামের কথা ঘুরাতে দেরি হলো না, “ ঈশা? আরে ধুর! নিজে আছি নিজের জ্বালায়…! আমি ঈশানের কথা বলতেছিলাম। সাহেল ভাইদের কোন জানি ছোট ভাই-টাই হয়। এইবার ওই পোলাদের দিয়ে দেখিস, আমার চাচ্চুরে আমি পঙ্গু বানায় ছাড়ব। ”

কথাটা তাদের দুই বন্ধুকে কতটা বিশ্বাস করাতে পেরেছে তা নিয়ে মনে সন্দেহ থেকে যেতেই তনয়কে প্রশ্ন করতে শোনা গেল,

“ সাহেলের কোন ছোটভাই আছে না-কি নাই, তার নাম ঈশান না-কি ফিশান তা তুমি কী-করে জানো বলো তো? আমি তো জানতাম তুমি ভার্সিটির খবর রাখো শুধু। এখন দেখতাছি মানুষের প্রাইভেসিও নষ্ট করে দিচ্ছ! ”

ব্যস! এমনিই নিশানরা সন্দিহান নজরে তাকাচ্ছিল তার দিকে আর তনয়টা যেন তা আরও সন্দিহান করে তুলল। সানাম তার খেপাটে দৃষ্টি মেলে তনয়কে দেখতেই তনয় কেমন সরল হাসি হাসল। সাহেল অবশ্য সানামের কথাটা সত্যি বলেই দাবি করল। কিন্তু শান্ত হলো না নিশানদের মন।

দুঃসহ ধাক্কা মানুষের জীবনে বিরাট বড় ভূমিকা পালন করে। হয় তাকে নেশাদ্রব্যের ছলে ডুবিয়ে মারে নয়তো তাকে গড়ে তুলে একজন সমৃদ্ধশালী মানুষ। নিশানদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি ঠিক কেমন তা বোঝা মুশকিল। তারা আগের মতোই হাসছে অথচ সেই হাসিটা আগের মতো উজ্জ্বল নয়। যেন তাদের ওষ্ঠদ্বয়-ই বলে দেয় যে, পাথরের হাসি এর থেকে বেশি উজ্জ্বল হতেই পারে না! নিশান অবশ্য এটাও ভাবে যে, পাথর আবার হাসে না-কি…? যাইহোক, ভার্সিটির হলে থেকে নিজেদের জীবন লড়াইয়ে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করছে তারা দুই ভাই। আরাভ তার বাবাকে বলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটে ব্যাচ ঠিক করে দিয়েছে তাদের দুজনকে। একজন পড়াচ্ছে গণিত ও বিজ্ঞান এবং আরেকজন পড়াচ্ছে বাংলাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো। এতেই তাদের দুজনের মোট আয় হচ্ছে ছেষট্টি হাজার টাকা। তবে এই নিয়ে শুরুতে দারুণ আর্থিক সমস্যা দেখা দিলেও এখন মাপজোপ করে বেশ দিন কাটিয়ে নিচ্ছে নিশান ও রিশান। মোটকথা তারা দুজনেই এখন স্বয়ম্ভর, স্বচর এবং নিয়তাত্মা।

ঠিক আজকের মতোই একটি অপরাহ্ন ছিল সেদিন যেদিন টিউশনি শেষ করে ফিরছিল তারা দুই ভাই। সেদিন বাইক ছিল না সাথে। তাই হলে যাওয়ার পথে এতদিনের চেষ্টায় তাদের পথ আঁটকাতে সক্ষম হয়েছিলেন মিলা রহমান। অশ্রুসিক্ত আঁখি মেলে তাকিয়ে তিনি প্রথমেই বলেছিলেন,

“ বাবা, তোরা ভালো আছিস? তোরা তো হলে… কিন্তু ঈশাকে কই রাখছিস? ও কি একা থাকতে পারে? ওকে তো একটা মাস ধরে চোখেও দেখি না আমি। ”

সেদিনও দুই ভাই থমকে গিয়েছিল। নিশান জিজ্ঞাসা করেছিল,

“ ঈশাকে কই রাখছি মানে? মেয়েরে নিয়েও এখন নাটক করতে আসছেন আপনি? ”

অনেক তর্ক-বিতর্ক, বাগবিতণ্ডা হয়েছিল সেখানে। মূলকথা তারা দুই ভাই জানতে পেরেছিল যে, এলাকার কোনো এক ত্রিশোর্ধ্ব, ক্ষমতাসীন তরুণ মিলা রহমানদের শাসিয়ে এসেছিলেন যে, ঈশার খোঁজ যাতে ইহকালেও না করেন তারা। তবুও চুপিচুপি মেয়েটার খোঁজ নিতে তার স্কুলে গিয়েছিলেন মিলা রহমান। মেয়ের খোঁজ তো পাননি বরং সেই তরুণের ভয়ঙ্কর হুমকি পেয়ে সেদিকে আর পা বাড়ানো হয়নি ওনাদের। তখন মায়ের কথা বিশ্বাস না করলেও তা একেবারে ফেলে দেয়নি নিশানরা। খোঁজ তারাও করেছিল কিন্তু খোঁজ মিলেনি ওই বোনটার। আজ সন্দেহের বাণটা সাহেলের দিকে ঘুরে গিয়েছিল ঠিকি তবে তা শক্তপোক্ত রূপ ধারণ করে উঠতে পারেনি। সাহেলের ক্ষমতার সীমানা তাদের জানা। এমন কাজ তার দ্বারা হবে না! তবুও মনটা কেমন করে ওঠে সেইদিন মায়ের বলে যাওয়া একটি কথা মনে পড়লে…! মিলা রহমান যখন বলেছিলেন যে, ঈশা তার ভাইদের কাছে যাওয়ার জন্য মাঝ রাতেই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তখন কোনো এক ভয়ানক ইঙ্গিতে নিশানদের আত্মা হুহু করে কেঁপে উঠেছিল। তারা আরাভদের বিষয়টা জানিয়ে খোঁজও করেছে অনেক। কিন্তু যাকে ইচ্ছাকৃত হারিয়ে ফেলা হয় তাকে পুনরায় ফিরে পায়ই-বা ক’জন?

আড্ডার থমথমে ভাবটা কেটে গেল যখন দূর থেকে হুড়োহুড়ি করে আসতে থাকা রক্তবর্ণের সালোয়ার-কামিজ পরিহিত মিশমিকে দেখা গেল। হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকা মেয়েটির বাঁকা হাসির মাধুরীতে যে স্নিগ্ধ প্রভাব পরিলক্ষিত হলো তা নীলাশাদের খুব একটা ভাবায়নি অবশ্য। বরং বান্ধবীর সেই মিষ্টি হাসিটাকে উদ্দেশ্য করেই রিশান বলে উঠল,

“ দেইখে নিও সবাই। এসেই বলবে, ‘এই জ্যামের জন্য ঢাকা শহরে আর থাকতেই মন চায় না। এত্তো জ্যাম!’”

মিশমিকে ব্যঙ্গ করে বলা রিশানের কথাটা শুনে সকলে কিছুটা হেসেছিল বটেই। তবে সেই অঙ্গনা যখন রিশানের দেখানো ভঙ্গিতেই ঠিক একই কথাটা বলে উঠল তখন কারোরই অট্টহাসি থামানো গেল না। পিহু হাসতে হাসতে হেলে পড়ল নীলাশার উপর। নীলাশা পড়ল সানামের উপর আর সানাম অমসৃণ ঘাসেই দু’হাত রেখে নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখল। সেই কি হাস্যকর অবস্থা তাদের! মিশমি তাদের এরূপ আচরণের কারণ জানতে চাওয়ার আগেই নিশান বলে উঠল,

“ বোইন, তোর এই এক এক্সকিউজ শুনতে-শুনতে কান পঁচে গেছে আমার। একটু নতুন কিছুও তো ভাবতে পারিস এইবার? ”

মিশমি হাসলেও কোনো উত্তর দিল না তাকে। সায়ানের পাশে, যেখানে বসার মতো জায়গা নেই বললেই চলে ঠিক সেখান থেকে নিশানকে জোর-জবরদস্তি সরিয়ে দিয়েই নিজের অবস্থান করে নিল মেয়েটি। সায়ানের পাশে বসার মতো মিশমির এহেন জেদ দেখে সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়! মিশমির থেকে এমন কিছু আশা করেনি তারা। সানাম খানিকটা ঘুরিয়ে-বাঁকিয়েই প্রশ্ন করে বলল,

“ বুঝলাম না, সায়ান ভাইয়ের পাশে কি গুপ্তধন আছে? এইদিক দিয়ে এতো জায়গা রেখে ওইখানেই ক্যান বসা লাগল তোর? ”

মিশমি হাসল। সেই হাসির মাধুরী বর্ণনা করতে হলেও বন্ধুরা অভাব অনুভব করল নিজেদের সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার। তবে সকলের এই টানা-টানা উত্তেজনা আর বেশিক্ষণ টিকিয়ে রাখতে দিল না মিশমি। একটি খাবারের বক্স আর গুচ্ছ ফুলগুলো সায়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে বলল,

“ শুভ জন্মদিন আপনাকে। এটা খেয়ে বলেন তো আপনার পছন্দমতো ছানার পায়েস রাঁধতে পারলাম কি-না। ”

ঠিক সেই মুহূর্তে দুই বন্ধুদলে যে বিস্ময়ের নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল তা সত্য অর্থেই বর্ণনাতীত। সায়ানের মনে হলো নিজের অনুভূতি হয়তো সাধারণ, সহজ-সরল বাংলা ভাষার ওই ছোট্ট একখানা ‘ধন্যবাদ’ শব্দে সুচারু উপায়ে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। নিজের জন্মদিন সে কখনোই ভুলেনি। এইতো আজ সকালেই বন্ধুদের নানান অহেতুক আয়োজনে পকেটটা প্রায় খালি হয়-হয় ভাব! তবে এই অপরাহ্নকে সাক্ষী রেখে পাশে বসে থাকা নিষ্কণ্টক লাল গোলাপটি যে তাকে এভাবে বিস্ময়ের সংস্পর্শে এনে দিবে তা সায়ান কেন! হয়তো ভাবতে পারেনি উপস্থিত বাকি সদস্যরাও। নীলাশাদের দেখা গেল বিস্ময়াভিভূত নয়নে একে-অপরের সাথে ইশারায় কথা বলতে। পিহু তো ফিসফিসিয়ে নীলাশার কানে বিষও ঢেলে বলল,

“ দোস্ত, আমাদের মিশমি কি সত্যিই বোকা? না-কি ও দুইডারে একসঙ্গে চালাইতাছে? আমার না সব মাথার উপ্রে দিয়ে যাইতাছে। তুই কি কিছু বুঝতাছোস? ”

নীলাশা নঞর্থক মাথা নেড়ে, শুকনো ঢোক গিলে নিল ঠিক যেমনটা সায়ানের অবস্থা পরিলক্ষিত! সায়ানের কম্পমান হাতটা স্পর্শ করল সেই খাবারের বক্স; নরম, তুলতুলে পুষ্পপত্র। কিয়ৎক্ষণ সেই মোহময় মুখটির দিকে তাকিয়ে সায়ান প্রশ্ন করল,

“ তুমি আমার জন্য নিজে রান্না করেছো আমার পছন্দের ছানার পায়েস, সত্যিই কি? মানে তুমি জানলা কীভাবে এটা আমার পছন্দের? ”

মিশমি হাসল, “ এতো অবাক হতে হবে না মিস্টার! সকালেই তো বললেন আপনি আন্টির হাতের ছানার পায়েস মিস করছিলেন, পরীক্ষা না-থাকলে বাসায় গিয়ে ঘুরে আসতেন। তাই ভাবলাম, বন্ধুদের জন্মদিনের পায়েস বানানোটা যেহেতু আমার দায়িত্ব তখন আপনার জন্য এইটুকু করা যেতেই পারে! ”

অতঃপর সে আরেকটু ইতস্ততভাবে বলল,

“ যদিও আন্টি কেমন করে রান্না করে তা আমার জানা নাই। শুধু চেষ্টা করলাম যাতে একটু হলেও আপনার এই না-পাওয়ার আফসোসটা কমে! একদম-ই বাজে আইডিয়া, তাই না? ”

এ-কথা শুনে সায়ান ফিক করে হেসে দিল। মিশমি শেষোক্ত কথাটি বলার সময় যে সত্যিই ভীত হয়ে পড়েছিল তা সায়ান বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে। সে মাথা নেড়ে না করতেই রিশানকে নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলতে শোনা গেল,

“ দোস্ত, আমরা তো জানতাম আমাদের হিটলার আন্টি আমাদের জন্মদিনটাও মনে রাখে যাতে, তুই মিথ্যা না কইতে পারিস। তাইলে এত বড় কামটা যে করে আনলি সেইটা তোর মায়ে দেখল না? তোর মায়ের গোয়েন্দাগিরির পাওয়ারটা কমে গেল না-কি? ”

বন্ধুর কথা শুনে মিশমি ভ্রু কুঁচকে তাকাল। চারপাশে হাসিতে ঝনঝনিয়ে ওঠা বিরক্তিকর শব্দটি যেন এক লহমায় শুষে নিল মেয়েটির সুচারু ঠোঁটের হাসি। মাকে নিয়ে বলা প্রতিটি কথা সত্য হলেও তার শুনতে মোটেও ভালো লাগে না। সে শান্ত কিন্তু মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,

“ আম্মু বাসায় ছিল না। বাসায় আসার আগেই সব গোছগাছ করে ফেলছি। ”

নিশানরা সেই সময় হাসলেও সায়ানকে হাসতে দেখা গেল না। সেই সময় সে ছানার পায়েসটা এক চামচ মুখে দিতেই বুঝল, মিশমির রান্নার হাতটাও বেশ ভালো। হয়তো তার মায়ের রান্নার মতো হয়নি তবে যে স্বাদটা ছিল তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সে খাবারটার প্রশংসা করে, সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাইতেই মিশমি বাঁধা দিল। ব্যাগ থেকে অনুরূপ আরেকটি বক্স বের করে, নীলাশাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“ ওইটা শুধুই আপনার। সবার জন্যও এনেছি আমি। ”

সায়ান হাসল। তার গাঢ় অনুভূতিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠল পলকেই। সেই সাথে দেখা গেল বন্ধুদের মাঝে খাবারের বক্সটি নিয়ে বিতণ্ডার সৃষ্টি হতে। তনয় আর শিহাব তো রীতিমতো কাড়াকাড়ি করছে! আর তাদের ঝগড়া দেখে একেকজন হাসতে হাসতেই গড়াগড়ি খেতে লাগল সেখানে। না, একেক জন না বরং পিহু একাই এই কাণ্ডটি করতে লাগল। তাদের সকলের এই ব্যস্ততার আড়ালে কেউ অত্যন্ত আদুরে স্বরে পাশে বসা অঙ্গনার উদ্দেশ্যে বলল,

“ মিশমি, তোমার এই উপহারের জন্য ছোট্ট ‘থ্যাঙ্কিউ’টা এনাফ হবে না। কী দিলে তোমাকে খুশি করতে পারব, বলো তো? ”

মিশমি একটু ভরকে গেল। ভীষণ লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল সে। আদৌও কি কিছু নেওয়ার মতো আছে তার? না, মিশমি খুঁজে পেল না কিছুই। তাই সে হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে ভীষণ জড়তা ঠেলে বলল,

“ কিছু দিলেই কি কিছু নিতে হবে, সায়ান ভাই? এটা না-হয় এক তরফাই থাক। ”

সায়ান কথা বাড়ালো না। হাসল অল্প। অতঃপর মিশমিকে এক শব্দেই উত্তর দিয়ে কথা সমাপ্ত করল সে। কিন্তু মনের সক্রিয় ওষ্ঠাধর কি মনের কথা না বলে থাকতে পারে? সে তো হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে বলে ওঠে বারবার,

“ যখন দূরে সরে যেতে আমার এতো আকুলতা তখন তুমি কেন আমার জন্যই এতটা ব্যাকুল হও মিশমি? শোনো মিশমি, এক তরফা ভালোবাসায় কোনো চাওয়া-পাওয়ার হিসেব থাকে না। থাকে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা-ই। ”

#চলবে ইন শা আল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here