তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ (১৭)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
গ্রীষ্মটা যে বসন্ত যাওয়ার আগেই এ-শহরে উঁকিঝুঁকি দিয়েছে সেই জ্বালার কথা আর নতুন করে ভাষায় প্রকাশ করার নয়। পিপাসু দুপুরের প্রখর দাবদাহে সানামের পিঙ্গলবর্ণের চেহারাও যেন জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। ঘেমে চলেছে প্রচুর। সে নিজেকে দেখতে না পারলেও পাশাপাশি হেঁটে চলা পিহুকে খুব ভালো করেই দেখতে পারছে সানাম। বান্ধবীটার যেন বেহাল দশা! সানাম মুখটা বিশ্রীভাবে কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“ তুই পোলা মানুষের মতো এতো গামিস ক্যান? দেখে মনে হচ্ছে কামলা খেটে আসছিস। ”
পিহুর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গেল এই কথা শুনে। সে স্বভাবসুলভ বলল,
“ আদ্রাফও তাই বলে! বোধহয় ছোটবেলায় বেশি লবণ খাইছিলাম। নাহলে আম্মু আমারে পেটে নিয়ে বেশি লবণ খাইতো। ”
সানাম বিস্ময়াভিভূত নয়নে পিহুর দিকে তাকাল। ওষ্ঠদ্বয় যেন আপনা-আপনিই নিজেদের চৌম্বকীয় আকর্ষণ ভুলে আলগা হয়ে গেল। সানাম এর আগে এমন মানুষ কখনো দেখেনি ভাই! একটা মানুষ বাস্তবিক অর্থেই এমন জোকার হয় কী-করে? সানাম কোনো প্রত্যুত্তর করল না। নিজের জীবন নিয়ে আজকাল সে একটু বেশিই চিন্তিত। মার্চ মাসের বেতনটা তার চাচা রেদোয়ান সাহেব পরিশোধ করে দিলেও এপ্রিল মাসেরটা তার নিজের-ই পরিশোধ করতে হবে। অথচ আজ এপ্রিলের দুই তারিখ পড়ে গেলেও সানাম কর্মহীন ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্তরে জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়ার যে লুকায়িত ভয়টা আছে তা এবার ধিকধিক করে বেড়েই চলেছে তার মাঝে। নিশানরা বলেছে— তাদের-ই কর্মস্থলে কাজের খোঁজ নিয়ে দেবে তবে তা সম্ভব হবে ইংরেজি মাস মে থেকে। তাহলে এপ্রিলের খরচ চুকিয়ে এতগুলো দিন কি শূন্যহাতে থাকতে হবে সানামকে? কথাটা এতোদিন ধরে না ভাবলেও আজ খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছে মেয়েটি। তবে সে বুঝতে পারেনি তার জীবনে এমনটাও ঘটে যেতে পারে। এইযে বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া ভীষণ একা মেয়েটি এতদিনে কখনো সঙ্গহীন হয়নি, সে আজ হুট করেই সঙ্গহীন হয়ে যায় কী-করে? কেন এমন নিষ্ঠুরতম ঘটনা ঘটবে তার সাথে?
হলের সামনে যখন পরিচিত এক মুখ রৌদ্রের তেজে ঝলমলিয়ে উঠল ঠিক তখনই সানামের পা দুটো থেমে গেল মৃদু আকস্মিকতায়। সেই আকস্মিকতা স্থায়ী হয়নি ঠিকি তবে স্থায়ী হবার অভিনয়টা সানামের মাঝে ঠিকি লক্ষণীয় ছিল। সে তার বান্ধবী পিহুকে নিয়েই ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল,
“ রাহাত ভাইয়া, তুমি? কখন আসছো? ফোন করতা আমাকে! ”
নিজের ভাইয়ের মুখভঙ্গিমা দেখে সানামের বুঝতে বাকি রইল না যে, সে ভীষণ ক্ষিপ্ত। এই ক্ষিপ্ততা বোধহয় সূর্যের ক্ষিপ্ততার কাছেও হার মেনে নিবে। রাহাতকে কেমন গমগমে স্বরে প্রশ্ন করতে শোনা গেল,
“ আমি তোকে বলছিলাম— আমি কালকে দেশে আসব আর সেইটা জেনেও তুই বাসায় যাস নাই কেন, সুমনা? ভাব দেখাইলি আমাকে? একবার যেতে পারতিস না? ”
সানাম অপ্রস্তুত হাসল। মিথ্যেও বলল বেশ কিন্তু লাভ হলো না খুব একটা। এমনিই চিন্তায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রয়েছে মস্তিষ্ক আর তার মাঝে ঠিকঠাক বাহানা বেরোয় না-কি? আর কথায় তো আছেই— যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। সানাম যেখানে কথা কাটিয়ে নেওয়ার পায়তারা করল ঠিক সেখানেই পিহু একটা অচেনা ছেলেকে গড়গড় করে বলে দিল সানামের তার চাচার বাসায় না যাওয়ার কারণ। এইতো… ভাই ও বোনের কথার মাঝেই পিহুকে বলতে শোনা গেল,
“ আরে ভাইয়া, আপনি আসছেন দেখেই তো ও আপনাদের বাসায় যেতে পারল না। আপনি দেশে আসার পর আঙ্কেল-আন্টি না-কি আপনার বিয়ের ব্যবস্থা করবে! আর তাই-ই বাড়ি-ঘর ঠিক করার জন্য সানামকে ভার্সিটির খরচটাও দেওয়া বন্ধ করে দিছে আপনার বাবা-মা। এতো বড় অসম্মানের পরেও কি সেই বাসায় যাওয়া যায়? সানাম তো এর জন্যই যায় না। ও যে এখন কীভাবে টাকা উপার্জন করে লেখাপড়া করবে তা-ই এখন চিন্তার বিষয়। ”
প্রায় সাথে সাথেই পিহু সানামের ও পরে রাহাতের উদ্দেশ্যে বলল,
“ কী রে, নিশান-রিশানকে যে টিউশনির কথা বলছিলি সেই টিউশনি পাইছিস? এই মাসের বেতন তো তোকেই রোজগার করে দিতে হবে। আমার ভয় লাগতাছে খুব। তুই যদি টাকার জন্য আর লেখাপড়াটাই করতে না পারিস? আপনার বাবা-মা এটা সত্যিই খুব খারাপ করছে, রাহাত ভাইয়া। আপনি কি বিদেশ থেকে এতোই কম টাকা পাঠান যে, একটা মেয়ের লেখাপড়ার জন্য খরচা করা বন্ধ করে, তাদেরকে আপনার বিয়ে সাজাতে হচ্ছে? আর… ”
পিহু আরও কিছু বলার আগেই সানাম তাকে চোখ রাঙালো যা চোখের অগোচরে রইল না রাহাতের। পিহু বোধহয় আগুনটা ঠিক জায়গায়-ই লাগাতে পেরেছে!তবে তার এই কাণ্ডটা যে মোটেও বোকামি নয় তা সানামের তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক ধরে ফেলেছে আগেই। এই চিরঢঙ্গী মেয়েটা ইচ্ছে করেই বাড়িয়ে বাড়িয়ে শোক প্রকাশ করছে আর তার বান্ধবীর কথাবার্তায় রাহাত যে বিস্ময়াভিভূত চাহনিতে তাকেই দেখছে, তা বুঝতেও সময় লাগল না সানামের। ভাইটা তার সাথে কথা বলল না। পিহুর সাথে নিজেই পরিচিত হয়ে নিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনতে লাগল। সানাম বাগড়া দিলেও তাতে লাভ কি হওয়ার কথা? পিহু যে ইচ্ছে-ইচ্ছে করে আরও বেশি তেল-মশলা মাখিয়ে কথাগুলো পরিবেশন করছে! পিহুকে বার-বার চুপ করতে বলতেই রাহাতকে ধমকাতে শোনা গেল,
“ কী হইছে তোর? তোর বান্ধবী আমার সাথে কথা বললে কি অন্নধ্বংস হয়ে যাচ্ছে? চুপ করে দাঁড়াতে পারতেছিস না? ”
সানাম চুপ রইল। এই একটা মানুষের কাছে সে হার মেনেছে বরাবরই। কিন্তু কেন? তা জানা নেই সানামের। পিহুর সাথে কথা শেষ করে রাহাত সানামের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ভীষণ আদেশী স্বরে বলল,
“ সুমনা? তোর ব্যাগপত্র নিয়ে আয়। কাল থেকে আবার হলে থাকিস। ”
সানাম জানে কোথায় যাওয়ার কথা বলছে রাহাত। তবুও সে বলল,
“ কোথায় যাব ভাইয়া? ”
“ ন্যাকামি করবি তো কানের নিচে মারব একটা চড়! তুই আমার সাথে আয়। আমিও দেখি কে কী বলে। আমি গাড়ি পার্কিং করে আসছি। তুইও সেখানে চলে আয়। আর পিহু? কথা বলে ভালো লাগল। তোমাদের আরেকটা ফ্রেন্ড না-কি হসপিটালে? একদিন ওকেও দেখে আসব ভাবছি। আজ না-হয় আসি। ”
রাহাত চলে গেল। তার বলে যাওয়া কথাগুলোর মাঝেও কী চাপা রাগ! সানাম পিহুর পিঠে অসহনীয় এক থাপ্পড় মেরে কৈফিয়ত চাইলো তার এহেন আচরণের৷ অথচ মেয়েটাকে দেখো! খিলখিলিয়ে হাসছে তো হাসছেই। এতো জোরে থাপ্পড় খেয়েও কেউ হাসে না-কি? সানাম আরও কয়েকটা মারল পিহুকে। অতঃপর পিহু যখন তার হাসির বেগ কমাতে সক্ষম হলো ঠিক তখন সানাম আবারও বলল,
“ বাসায় অশান্তি হবে, জানিস? ভাইয়া অনেক বছর পর দেশে ফিরছে আর তুই কী করলি? এখন সব দোষ আমাকেই দিবে সবাই। কোনো দরকার ছিল ঝামেলা বাড়ানোর? তোর মনে হয় ওরা বিয়ের জন্য টাকা দেওয়া বন্ধ করতে চাইছে? ওরা চায় যাতে আমি ঘাড় থেকে নামি৷ ভাইয়া চলে গেলে তো আবারও একই কাম করবে, তখন? ”
পিহু স্মিতহাস্যেই উত্তর দিল, “ শোন, ওই ব্যাটা-ব্যাটির শিক্ষা পাওয়ার দরকার আছে। তোর মনে হয় তোর এই ভাই তোকে খেটেখুটে পড়াশোনা করতে দিবে জীবনে? যে বাঁশ দিছি না! দেখিস, তোর চাচা-চাচির বাথরুম টাইট হয়ে যাবে আজকে। বন্ধুর জন্য এইটুকু নাটক করাই যায়, বুঝলি? ”
সানাম হাসল, “ শালি ড্রামাকুইন, তুই আসলেই মানুষ হবি না কোনোদিন। ”
“ ভাগ্যিস তোদের মতো বোরিং না আমি! তা হলে তো আমি দম আটকেই মরতাম। ক্যামনে পারোস এতো নাটক করতে? আমার মতো সিরিয়াস হতে পারোস না? ”
“ আমরা নাটক করি, আর তুই সিরিয়াস? ”
সানাম হেসে ফেলল। পিহুর কথাটা তাকে হাসাতে বাধ্যই করল যেন! সানাম তো জানে এই ভাই সম্বোধিত ছায়াটা থাকতে তাকে কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হবে না। খুব ভালো হতো যদি নিশানদের পরিবারেও এমন একজন থাকতো! তাহলে হয়তো এই দুইদিন ধরে তিন বন্ধু-বান্ধবীর বিতণ্ডাটা লেগে থাকতো না। নিশানরাও একটা ছায়া পেতো… ভরসার ছায়া!
দুই ধরে মঈনুল হোসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ঝুমুর বেগমও রাত করে মেয়ের কাছে উপস্থিত থাকতে পাচ্ছেন না। তাই মিশমির সাথে একজন নার্স থাকবে জেনেও নীলাশা প্রতি রাত অতিক্রম করছে বান্ধবীর পাশে ঘুমিয়েই। আজ ঘন আঁধারের জ্যোৎস্না বিলীন রাতেও নীলাশা ঘুমিয়ে আছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বান্ধবীটার পাশে। নিশ্বাসের গাঢ় শব্দটা বোধহয় মিশমিও টের পাচ্ছে! তবে রমণীর গাঢ় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটল ঠিক রাত সাড়ে বারোটার নাগাদ। এই ব্যাঘাত অবশ্য যে-সে ব্যাঘাত নয়, ভয়ঙ্কর রকমের ব্যাঘাত!
সুষুপ্তা নীলাশার হঠাৎই মনে হলো— কেউ যেন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নীলাশা ভাবল এই কাজটা আরাভের। সে আলতো করে সেই হাতটি মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। কিন্তু যখন কাঁচা হয়ে আসা ঘুমের রমণীটির মনে হলো সে হসপিটালে, ঠিক তখন তার আনন্দটা আরও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেল যেন! আরাভ এখানে এসেছে মনে হয়? হ্যাঁ, সেদিনও তো এসেছিল নীলাশা একা থাকবে বলে। নীলাশা চোখ কচলে তাকানোর চেষ্টা করল। ঘরে ক্ষীণ আলোর বাতি জ্বলছে। তবুও সে আরাভকে দেখতে পেল না? নিদ্রামগ্নতায় নীলাশা স্বপ্ন দেখেছে বুঝে মনঃক্ষুণ্ন হলো। আর ঠিক সেই সময়-ই সে শুনতে পেল এক ভগ্নদশাগ্রস্ত নারী কণ্ঠ,
“ বাহ্, তোর ঘুম এতো পাতলা হলো ক্যামনে? বিয়ে করে রাত জাগাও শিখে গেছিস দেখি। ”
নীলাশা চমকে উঠল। বিস্ময়ের আকস্মিক বিক্ষুদ্ধে চট করেই কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারল না। তার ঠোঁট দুটো কেঁপে কথা বলতে চাইলো, মস্তিষ্কের কর্মসঞ্চালন প্রক্রিয়া সক্রিয় হতে চাইলো… কিন্তু পারল না। বিস্ময়ে হতবিহ্বল নীলাশা চোখের পানি ফেলা ছাড়া কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাতে পারলো না তখন। মুহূর্ত কয়েক বাদে মেয়েটি হঠাৎই নিঝুম কেবিনটাকে ক্রন্দনের দাপটে চঞ্চল করে তুলে, পাশের বান্ধবীটাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। মিশমি-মিশমি বলে চিৎকার করা ছাড়া যেন কোনো ভাষা-ই জানে না মেয়েটি! মিশমি বোধহয় খানিকটা হাসার চেষ্টা করল। চোখে পানিও এলো তার। অথচ মেয়ের অবস্থা দেখো… হাসতেও যেন চোয়াল ভেঙে যাচ্ছে তার। নীলাশা সোজা হয়ে বসল। ক্রন্দনে পরিপূর্ণ কণ্ঠে পাগলের মতো বলতে লাগল,
“ হুয়াই ডিড ইউ ওয়ান্ট টু কমিট সুইসাইড, ব্লাডি ফুল? তোর কি একবারও মনে হলো না আমাদের কথা? জানিস আজকে কতদিন পর তুই কথা বললি? অলমোস্ট সেভেন মান্থস্। অবশ্য তুই জানবি কীভাবে। তুই তো ভাবছিলি তুই প্যারালাইজড হয়েই বেঁচে গেছিস, তাই না? হারামি, বদ একটা। ”
মিশমির চোখটা জলে ছলছল করলেও মেয়েটি হাসার চেষ্টা করল। ইশ… হাসতেও কী ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে তার! তবুও সে কথা বলল,
“ কয়টা বাংলা গালি শিখলি? এখনো হাঙ্গামার হাঙ্গা করিয়ে দিস না-কি? ”
নীলাশা ফুঁপিয়ে উঠল, “ অনেকগুলা শিখছি। তোকে শুনাই? ”
মিশমি হাসল একদমই ক্ষীণ। তবে কিছু বলার আগেই ডাক্তার এলো কেবিনে। মিশমির চিকিৎসা যিনি করছিলেন তিনি এই মুহূর্তে হসপিটালে নেই। তাই প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অন্য ডাক্তারকেই করতে হলো। তিনি চলে যেতেই নার্স বললেন,
“ ওনার বাড়ির লোককে কি আমি খবর দিব না-কি আপনিই দিবেন, আপু? ”
নীলাশা অসম্মতি জানালো। মিশমির বাবা-মা রাত দশটাতেই ঘুমিয়ে যান। মিশমির বাবার প্রেশার হাই দেখে আগামীকাল সকালেই সবটা জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। কিন্তু বন্ধুকে আগের মতো ফিরে পাওয়ার এই সুখ কি তারকারাজিরা একসাথে ভাগ করে নিবে না? অথচ নীলাশা কাণ্ডটা ঘটালো অন্যভাবেই। এই রাত একটাতেও সকলকে কল করে জাগিয়ে তুলল। আরাভ, সায়ান, শিহাব ও সাইফও থাকল সেই তালিকায়। নীলাশা তো ত্যাড়াভাবেই সায়ানকে বলল— গত পরশু যে দুজন তার সাথে ঝগড়া করেছিল তারাও যেন ভিডিও কলে থাকে। অতঃপর সব ব্যবস্থা করে তাদের সকলের মুখ যখন একসাথে দেখতে পেল নীলাশা, তখন আরও এক দফা চিৎকার করে কেঁদে উঠল সে। আরাভসহ উদ্বিগ্ন দেখালো সকলকেই অথচ মেয়েটির ক্রন্দনের কারণ জানা যাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর নীলাশা প্রস্তুত হলো। সকলকে বিরস স্বরেই বলল,
“ গাইজ, জাস্ট লুক অ্যাট হার। ”
মিশমির দিকে নেওয়া হলো ফোনের পর্দা। তাকিয়ে থাকা স্থির মেয়েটাকে দেখে কারো মনেই প্রশ্ন ছাড়া ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সঞ্চালন হলো না। মেয়েটা তো এমন করেই তাকিয়ে থাকে শুধু! কিন্তু বিস্ফোরণটা ঘটল তখন, যখন মিশমি তার আঘাত না-পাওয়া হাতটি চোখের সামনে রেখে বলে উঠল,
“ ইশ! বন্ধ কর ক্যামেরাটা। ”
তারা কি সকলেই একসাথে ভুল শুনলো? ভুল কিছু দেখলো? না, একসাথে সবাই-ই ভুল দেখবে না-কি? বিষয়টা বুঝতে পেরে তারকামহলের বাকি চারটি তারকাকে চেঁচিয়ে উঠতে দেখা গেল কিয়ৎক্ষণ বাদে। আরাভদের সকলেরও কী খুশি! কিন্তু পাগল প্রেমিকটা হতবিহ্বল হয়ে মিশমিকেই দেখে গেল শুধু। কিছুক্ষণ, অনেকক্ষণ, বহুক্ষণ। অথচ পাগলা প্রেমিকটার চোখ জুড়ায় না কেন? আবার কথাও বলে না। শিহাব তো সায়ানকে ঝাঁকিয়ে, চেঁচিয়ে উঠল,
“ মিশমি ভালা হইছে আর তুই প্যারালাইজড হয়ে গেলি না-কি? ওই ছ্যাড়া? কথা বল। ”
সায়ান কথা বলল না। হন্তদন্ত হয়ে ক্যামেরার সামনে থেকে সরে, চোখের পানি ছেড়ে দিল ছেলেটি। নিশানরা গণ্ডগোল লাগিয়ে দিল। সায়ানের চোখের পানি দেখে তারাও যেন ভাষা হারিয়ে ফেলল এইবার। ছেলেটা এমন কেন? ছেলেদের এতো কাঁদতে আছে না-কি? অথচ সায়ান কেঁদে ভাসালো। অনেকক্ষণ বাদেও উপায়ন্তর না পেয়ে নীলাশা মিশমিকে বলল যেন সায়ানকে কান্না থামাতে বলে। অথচ এই মেয়েটিকে দেখো… হাতের পাতায় চোখ লুকিয়ে সেও ডুকরে উঠল। ফোনে-ফোনে দুজনকে সামলাতে গিয়ে কেঁদে ফেলল পিহুও… তারপর সানামও। অথচ কী সুখ প্রত্যেকের অন্তরে! আজ বোধহয় আকাশের তারকারাজিও মিটমিটিয়ে হাসছে!
#চলবে ইন শা আল্লাহ!