তারকারাজি-১১,১২

0
461

তারকারাজি-১১,১২
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
পর্ব:১১

আকাশ থেকে খণ্ড খণ্ড মেঘ সরে গিয়ে উদোম হয়েছে রাত্রির বিশাল কৃষ্ণাভ নীল আকাশ। বদ্ধ বারান্দার গ্রিলে জমেছে বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা। মিশমি তার আদুরে হাতে শিশির স্পর্শ করতেই যেন তা লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে, গড়িয়ে পড়ে শূন্যে। গৃহময় প্রকট নীরবতা। বাহিরে শৈত্য হাওয়া বইছে, শনশন শনশন। মিশমি এক টানে চুলের বাঁধন খুলে ফেলে। হাওয়ার দোলায় দুলতে দেয় স্বাধীন চুলের গুচ্ছকে। আজ চারটে দিন কেটে গেলেও তিহামের বার্তা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হয় না মিশমির। মিশমি শুনেছিল, কিছু ‘অজানা’ অজানা থাকা-ই ভালো। জেনে গেলে না-কি তার প্রতি আকর্ষণটা কমে যায়। তিহামের প্রতি তার আকর্ষণটাও কমে গেল না-কি? হয়তো সত্যিই কমে গেছে। যেখানে আকর্ষণ-ই থাকে না সেখানে প্রেম হয় কী-করে? ভালোবাসার কথা তো দূরেই থাকল। মিশমি তার মোবাইল ফোনের পর্দায় তাকায়৷ মেসেজ ও কলের প্রজ্ঞাপন উপচিয়ে পড়ছে যেন! তার ধারণা করা শক্তপোক্ত ব্যক্তিত্বের মানুষটা এমন বেপরোয়া হলো কেন? অধীরতায় যেন মারা যাচ্ছে তিহাম! মিশমি ফোনের একটি নির্দিষ্ট বোতাম শক্ত করে চেপে ধরে। ফোনটা বন্ধ হয়ে যেতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার। মিশমির কী করা উচিত? ভেবে পায় না সে।

একটার পর একটা ক্লাস করে মাথাটা ভীষণ ভার-ভার লাগছে নীলাশার। ক্লান্ত দেহটাকে আরেকটু পুড়িয়ে সে এগিয়ে যায় রোকেয়া হলের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে-উঠতেই নীলাশা উপলব্ধি করল, সে ভীষণ ক্লান্ত আজ। শরীরের ভারটা বোধহয় আর বয়ে চলা সম্ভব হবে না নিজের পক্ষে৷ তবে হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়েই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পায় নীলাশা। সানাম এই ভ্যাপসা গরমেও নিজেকে আগা-গোড়া কাঁথায় মুড়িয়ে রেখেছে। নীলাশা ভাবল একবার কথা বলবে তার সাথে। নয়তো বন্ধু দু’জনা তো মুখ ভার করে বসেছে যে, সানামের শিক্ষা না-হওয়া পর্যন্ত তারা কথা বলবে না। মানুষকে তেল মালিশ করার সময় না-কি তাদের নেই। আচ্ছা, কারো কষ্টে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া কি তেল মালিশ করা? এদেশে ফিরে এসে নীলাশা একটা জিনিস খুব ভালো বুঝেছে যে, দেশ ভেদে বন্ধুত্ব ও বন্ধুর আচার-আচরণ পর্যন্তও ভিন্ন হতে পারে। নীলাশা নিজেই নিজের ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটায়। দরজায় দাঁড়িয়েই উঁকি দেয় সানামের দিকে। মেয়েটার শরীর কি মৃদুভাবে কেঁপে উঠল না? নীলাশা অপেক্ষা করে কিছুক্ষণ। এক মিনিট যায়, দুই মিনিট যায়… অতঃপর আবারও সানামের শয়নরত দেহকে কেঁপে উঠতে দেখে সে। নীলাশার মনে হলো সানাম কাঁদছে। এখন কি তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে? না, নীলাশা আর ডাকে না সানামকে। তার মনে হয়, কেউ কাঁদতে চাইলে তাকে কাঁদতে দেওয়া উচিত। কারণ মানবজাতি মিথ্যে হেসে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারলেও মিথ্যে কেঁদে মন হালকা করতে পারে না। নীলাশা হল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগে।

রোকেয়া হল থেকে বের হওয়ার পথেই রিশানের কল এসেছিল। মিশমির মা ঝুমুর বেগম কয়েক দিনের জন্য বাসায় থাকবেন না। মঈনুল হোসেনকে কোনোভাবে রাজি করিয়ে নিলেই তাদের বন্ধুদের দুই বছরের পরিকল্পিত যাত্রাটা অসাধ্য সাধনে রূপ নিবে। এখন তো পিহু-ও যোগ হয়েছে দলে। মিশমির মাকে ফাঁকি দেওয়ার পরিকল্পনাটা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে বাকিরা। এখন নীলাশার পরিবারকে রাজি করানোর বুদ্ধি আঁটতে হলেও তো নীলাশাকে প্রয়োজন হবে? তাই নীলাশার যত তাড়া! এটা সত্যি কথা যে, নীলাশা বৈদেশিক সমুদ্র দেখেছে। কিন্তু নিজ দেশের সমুদ্র স্ব-চোখে দেখা হয়নি তার। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে কার না-ইচ্ছা করে? সমুদ্রের পাড়ে কেমন আনন্দ করবে তা ভাবতে ভাবতেই টিএসসির দিকে ছুটে যায় সে। কিন্তু সেখানে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আর দেখা করা হয়নি তার। নীলাশা দূর থেকেই দেখতে পেয়েছে যে, আরাভ ও তার কয়েক জন বন্ধু মিশমি ও পিহুসহ নিশান-রিশানের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। নীলাশার পা দুটো তখনই থমকে দাঁড়ালো। সেদিনের পর আরাভকে আজ-ই প্রথম দেখছে সে। তাকে দেখা মাত্রই যেন নীলাশার দু’কাঁধ শীতল, মোলায়েম এক হাওয়া ছুঁয়ে গেল। আরে, এটা কি সত্যিই হৈমন্তিক হাওয়া ছিল? না-কি ছিল প্রণয়িনীর লুকায়িত মনের ধরা দেওয়ার ডাক? হঠাৎই ভীষণ লজ্জায় একদম লজ্জাবতী তরুর মতো নুইয়ে গেল মেয়েটি। যে প্রণয়িনী বহুত আগেই সেই মানবের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে, সে নতুন করে আবার কীভাবেই-বা ধরা পড়বে? নীলাশা আরাভের সামনে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। সে জানে, তার অত্যন্ত কোমল প্রণয়ী মন আজ আবারও নিজের অনুভূতির নগ্নতা প্রকাশ করে ফেলবে৷ না, এই মুহূর্তে আরাভের সামনে যাওয়া যাবে না। নীলাশা উল্টো পথে পা বাড়ানোর জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই মিশমির ডাক আসে,

“ নীল, এদিক আয়। ”

নীলাশা আবারও থমকে দাঁড়ায়। জিভ কামড়ে ধরে দ্বিতীয় ভুল করার মতোই পিছনে ঘুরে তাকায় সে। চোখ পড়ে তারকারাজিদের সাথে আরাভদের গোটা সমাবেশ। তারাও নীলাশাকে দেখছে। আরাভের চোখে চোখ পড়ে তার। নীলাশা কেঁপে ওঠে। আরেহ্, না দেখতে পাওয়ার ভান করে চলে গেলেই তো হতো! বোকার মতো পিছনে ঘুরতে গেল কেন সে? নীলাশার বুকটা প্রবল বেগে কাঁপছে। শিরা-উপশিরায় শীতলতা প্রবাহ হচ্ছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতেই ফের নিশানের ডাক এলো। নীলাশা আর দেরি করে না। ছুটে চলে সেই পথের দিকে, ঠিক যে পথটা একদম মিশমিদের বিপরীতে। নীলাশার হুড়মুড়িয়ে উল্টো দৌড় দেখে কয়েক জোড়া দৃষ্টিতে যেন রাজ্যের বিস্ময়! পিহু ভূত দেখার মতো বলে উঠে,

“ ও পাগল হয়ে গেছে না-কি? দৌড় মারল কেন? ”

পিহুর অভিনয়তে আরেকটু অভিনয় যোগ করে রিশান চোখ কচলে তাকাল। ওই দূরে দৌড়ে যাওয়া নীলাশার দিকে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে বলল,

“ মামা, ঘটনা জটিল! সুন্দ্রী চলেছে একা পথে। তার মানে ভেজাল নিশ্চিত আছে। ”

মিশমি কটাক্ষ করল, “ এই, সব-সময় তোরা ওর পিছে লাগিস ক্যান? হয়তো দরকারি কোনো কাজের কথা মনে পড়ছে আর তাই তা করতে গেল। এতে এত সন্দেহ করার কী আছে? ”

নিশান তেতে উঠে, “এই ছেড়ি ঝাণ্ডুবাম! তোর কি মাথা ধরানি আলাপ না-করলে টয়লেট ক্লিয়ার হয় না? শোন, এমন অনেক কিসসা আছে যে, বিদেশী মাইয়ারা এই দেশে এসে প্রেমে প… ”

পিহু নিশানকে কথা শেষ করতে না দিয়েই কেমন বিজ্ঞদের মতো বলে উঠল, “ আমি তো সবটাই জানি! ও প্রেমে পড়ছে এইটাও জানি আর কার প্রেমে পড়ছে সেইটাও জানি। সে তো বর্তমানে… ”

মিশমি আর কথা বাড়াতে দেয় না৷ এখানে তাদের থেকেও বয়োজ্যেষ্ঠ ছেলেরা উপস্থিত। অথচ তারা কি-না নির্লজ্জের মতো সরাসরি নীলাশার প্রেম বিষয়ক আলোচনা করছে? মিশমির চোখের ইশারায় থেমে যায় পিহু। আসল ব্যাপারটা তারা দুই বান্ধবী সেদিন-ই বুঝতে পেরেছিল যেদিন নীলাশা আরাভের সাথে শেষবারের মতো কথা বলেছিল। ঘটনা যে সত্য তা আজ যেন হাড়েহাড়ে প্রমাণিত! কিন্তু বাকি দু’জনকে কে বোঝাবে যে, মেয়েটি উল্টো পথে দৌড়ালেও মেয়েটির প্রণয়ী মনটা ফের ছুটে এসেছে শ্যামবর্ণের কাছে?

বেশ অস্বস্তিতেই গোটা দিনটা কেটে গেল নীলাশার। দিনের সৌন্দর্য বা বিমর্ষতা সম্পর্কে জানা নেই তার। তবে অন্য কোথাও নীলাশার মতোই দারুণ অস্বস্তি বুকে চেপে, কারো কল পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় জবুথবু হয়ে বসে আছে পিহু। ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে বিমিশ্র মিঠে হাসিতে প্রিয় মানুষটির কণ্ঠ পাওয়ার ভীষণ ব্যাকুলতা! সে জানে, ফোনটি বাজবে… বেজে উঠবেই এইবার। সময় যে হয়ে এসেছে! অতঃপর ফোনের পর্দায় ভেসে উঠল কাঙ্ক্ষিত মানুষটির নাম, আদ্রাফ। পিহু ফোন তুলে নেয় ঝটপট। ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,

“ দেড়ি করে ফেললাম, তাই না? ”

পিহু মুচকি হাসে। ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়,

“ একদম না৷ কেমন আছো তুমি? ”

“ আমি আর ভালো না থেকে পারি না-কি? আমি ভালোই আছি। শুধু তোমার শূন্যতায় পুড়ছি ভীষণ। ”

পিহু খুব সাবধানে হাসে। এই হাসিতে প্রণয়-প্রীতি যেন তৃপ্তির চূড়ায় পৌঁছে যায়। পিহু হারিয়ে যায় পুরনো দিনের রঙে। গহীন বর্ষণে কলেজ পড়ুয়া পিহুর মাথায় ছাতা ধরা রোগা-সোগা আদ্রাফ ছেলেটি ছিল পিহুদের এক সিনিয়র আপুর বড় ভাই। প্রেমের প্রস্তাবটা আদ্রাফের তরফ থেকেই এসেছিল। মাস খানিক কেটে যাওয়ার পর যখন প্রেমের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিল পিহু, তখন সবে নতুন চাকরি পাওয়ায় ময়মনসিংহ থেকে খুলনা শহরে বসবাস শুরু করে আদ্রাফ। পিহুর তখন ফোন ছিল না। বাধ্য হয়ে আদ্রাফের ছোট বোনকেই লুকিয়ে-চুরিয়ে একটা ফোন জোগাড় করে দিতে হয়েছিল তাকে। সারা রাত জেগে কথা হতো তাদের। কিন্তু প্রণয়ের মাস দুয়েক পেরোতে না-পেরোতেই ফোনসহ ধরা পড়ে যায় পিহু। তখন পিহুকে পারিবারিক শাসন সহ্য করতে হয়েছিল অনেক। ফোনটার কী অবস্থা করেছিল তার পরিবার তা এখনো জানে না সে। তাদের সম্পর্কে আসে দীর্ঘ বিরতি। তবে পিহু ঢাকা শহরে আসার আগেই আদ্রাফ ও তার দীর্ঘ দূরত্বের সম্পর্ককে মেনে নেওয়া হয় তাদের দু’জনার পরিবারে। ছেলে ভালো কোম্পানিতে চাকরি করছে। দেখতে-শুনতেও যেমন ভালো, পারিবারিক অবস্থাও তেমন ভালো। বছর কয়েক পরে তাদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটাও চূড়ান্ত হয়েছে। এই সকল কথা যেন আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখার মতো ফুটে ওঠে পিহুর অন্তরাক্ষীতে। প্রণয়ের সেই সময় যেমন সুন্দর ছিল, তেমনই সুন্দর লাগে প্রণয়ের এই সমটাকেও। শুধু অপেক্ষা চিরতরে পূর্ণতা পাওয়ার!

“ হ্যালো? লাইনে আছো তো? ”

পিহু চমকে উঠে আদ্রাফের কণ্ঠে। সেই কণ্ঠে কী গভীর আবেগ! পিহু ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়,

“ হুম, আছি। বলো। ”

“ এমন ফিসফিস করে কথা বলছো কেন? ব্যস্ত না-কি? ”

পিহু একবার নিজের আশেপাশে তাকায়। অতঃপর বলে,

“ বড় আপুরা আছে রুমে। কথা বলতে পারছি না একটুও। আর না বাইরে যেতে পারছি। ”

“ বুঝতে পারছি। ”

কথাটা বলেই স্বল্প সময়ের বিরতিতে আদ্রাফ আবারও বলল,

“ আচ্ছা, আমার পোস্টিংটা ঢাকায় হয় না কেন বলো তো? খুলনা গেলাম, বরিশাল গেলাম… তোমার কাছাকাছি কেন যাওয়া হয় না? ”

পিহু না-চাইতেও খিলখিল করে হেসে উঠে। সে বলে,

“ সবুর করেন মহারাজ! সবকিছু একবারে পেতে হয় না। আমরা দূরে থেকেও একে-অপরকে ভালোবাসতে পারছি, এটাই অনেক। নাহলে সবাই কি ভালোবাসায় এই দূরত্ব মেনে নিতে পারে? ”

“ আচ্ছা! তুমি স্বীকার করছো যে তুমি আমার থেকে হাজার দূরে থাকলেও আমাকে ভালোবাসবে? এমনকি আমি মরে গেলেও আমাকেই ভালোবাসবে? ”

আদ্রাফের কথাটা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পিহু সংযোগে বিচ্ছেদ ঘটায়। ফোনটা বন্ধ করে রেখে দেয় বিছানার এক কোণায়। আদ্রাফের বলা কথাটা যে এই প্রথম শুনছে পিহু, তা নয়। এর আগেও আদ্রাফ এমন প্রশ্ন করেছে তাকে। পিহুর মনটা তখনই খুব খারাপ হয়ে যেত। এইবারও তা-ই হলো। উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে ভাবতে লাগে পিহু, জন্ম যখন হয়েছে তখন মৃত্যুও হবে। কেউ আগে যাবে আর কেউ পরে৷ শুধু একটাই প্রার্থনা, সেই মৃত্যু যেন তাদের কাছে বেদনাদায়ক না হয়। সেই বেদনা আদ্রাফ সহ্য করতে পারবে কি পারবে না তা জানা নেই পিহুর। তবে পিহুর কাছে আদ্রাফকে হারানোর ব্যথাটা তাজা-ই রয়ে যাবে আজীবন। পিহুর জীবনে এমনটা না হোক। প্রিয় মানুষকে হাসিমুখে বিদায় দেওয়ার একটা লিখিত নিয়ম হোক। সেই নিয়ম ভঙ্গের-ও কঠিন সাজা জারি করা হোক। শুধু নিজের প্রিয় মানুষগুলোকে বিদায় দিতে পিহুর বিন্দুমাত্র কষ্টও না হোক!

চলবে ইন শা আল্লাহ!

তারকারাজি- (১২)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী

রাত্রি একটা কি দেড়টা বাজে। মিশমির শয়নঘরের এক কোণায় টিমটিমে সফেদ বাতি জ্বলছে। বাতির আলো পুরো ঘরটাকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে যেন, ফিকে জ্যোৎস্না এসে পড়েছে তার ঘরে। বৈদ্যুতিক পাখাটা আজও নিয়ম মাফিক বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘুমন্ত রমণীর গায়ে টানা মোটা কাপড়ের কাঁথা৷ একটু নড়েচড়ে উঠলেই কাঁথাটা সরে যাচ্ছে গা থেকে। ফোনটা বেজে উঠল। একবার, দু’বার, পর-পর চারবার বেজে ওঠার পর মিশমি কম্পিত শরীরে জেগে উঠল। ঘনপক্ষ্ণ চোখের পল্লবে বিস্ময় ও ভীতির মিশ্রণ। এতরাতে তিহাম কেন কল করেছে? মনে প্রশ্নটা জাগতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল মিশমি। ফোনটা কানে তুলে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ফিসফিসিয়ে বলল,

“ হ্যালো? ”

ওপাশ থেকে মৃদু হাসির সাথে তিহামের আওয়াজ এলো,

“ কী ব্যাপার, ঘুমাও নাই? ”

মিশমি বিরক্ত হয় তিহামের কথা শুনে। এত রাতে তিহাম কল করেছে সে জেগে আছে কি-না তা শোনার জন্য? মিশমি রেগে সংযোগ কেটে দেয়। অতঃপর অনবরত কল করতে থাকে তিহাম। মিশমির কেন যেন ফোনটা বন্ধ করতে ইচ্ছা করে না। বরং সে আবারও ফোন তুলে নেয়। তিহাম বলে,

“ ছাঁদে আসো এক্ষুণি। আমি ওয়েট করছি। ”

মিশমি আরও এক দফা বিস্মিত হয়, “ মানে? আমাদের বাসার ছাঁদের কথা বলছেন আপনি? ”

“ হ্যাঁ, পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও আসো। কথা আছে। ”

“ আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন তিহাম? দারোয়ান আপনাকে ঢুকতে দিবে আর এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন? ”

তিহামের হাসির আওয়াজ শোনা যায়, “ আমার মিশমির জন্য আমি জীবনও দিতে পারি আর এটা তো হাতের ময়লা! আই প্রমিস, তোমাকে একবার দেখেই চলে যাব। প্লিজ আসো তুমি? ”

মিশমি ভ্রুযুগল কুঁচকে বসে। এত রাতে একা-একা ছাঁদে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? ঠিক হবে একজন অচেনা মানুষের সাথে দেখা করা? মিশমির মনটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে ছাঁদে গিয়ে একবার তিহামকে দেখে আসতে। কিন্তু মস্তিষ্ক সায় দেয় না। এদিকে মিশমির প্রণয়ী মন তো নাজেহাল! তিহামের অনেক অনুরোধ করার পর সে বলে যে, সে তাদের বাসার প্রধান দরজায় দাঁড়াবে। তিহাম যেন তাকে দেখেই চলে যায়।

সেই পরিকল্পনা মাফিক যত দ্রুত সম্ভব উঠে দাঁড়ায় মিশমি। গলা হাতড়ে বুঝতে পারে যে, বৈদ্যুতিক পাখা না চালানোতেই ঘেমে গিয়েছে সে। মিশমি তার রেশম তুলতুলে ওড়না গিয়ে গা মুছে নেয়। অবিলম্বে তার এলোমেলো বেণি খুলে চুল আঁচড়ে নেয়। গায়ে ওড়না জড়িয়ে ছুটে চলে দরজার কাছে। বুকটা প্রবল বেগে কাঁপছে তার। বাবা বা মার ঘুমটা না ভাঙলেই হলো এখন! মিশমি দরজাটা হালকা খুলেই বাহিরের দিকে উঁকি দেয়। তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে আছে তিহাম। মিশমির দেখা পেয়েই সে মুচকি হাসে৷ সিঁড়ি ভেঙে সে নামতে থাকে দোতলায়। তিহামের নজর স্থির হয় শুভ্রতায় ঘেরা মিশমির চোখেমুখে। কিন্তু তিহামের এগিয়ে আসাটা যেন মিশমিকে একটুকুও তৃপ্তি দেয় না। ভয় হয় খুব। ছেলেটা আবার হুড়মুড়িয়ে বাসায় ঢুকে পড়বে না তো? মিশমি দরজাটা লাগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই কারো কণ্ঠ শুনতে পায়,

“ দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাতে যাও। আমি ফিরে যাচ্ছি বাসায়। আর হ্যাঁ, ঘুম ভাঙিয়েছি দেখে রাগ করো নাই তো? আমার কিন্তু কাছের মানুষদের জ্বালাতে ভালো লাগে খুব! ”

বলেই তিহাম হাসে। তিহামের কথায় বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে মিশমি। সে তো ভাবছিল ছেলেটির মতলব খারাপ হলেও হতে পারে। নয়তো এত রাতে কেউ দেখা করতে চায়? কিন্তু না, তা একদম-ই ভুল। সে কিছুটা সময় নিয়ে ভাবে, তিহাম কি সত্যিই তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কেউ? পরক্ষণেই মন বলে ওঠে, না। ভালোবাসা এত মেপে-মেপে হয় না-কি? ঠিক এই সময়েই মিশমিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিহাম মৃদুস্বরে ধমকে উঠল,

“ আজব মেয়ে তো তুমি! বললাম না ঘুমাতে যাও? যেখানে আমি সাধারণ মানুষ হয়ে ভিতরে আসতে পারলাম সেখানে তুমি দরজা হা করিয়ে রাখছো চোর-ডাকাত আসার জন্য? তুমি দরজা লাগালেই আমি যেতে পারব, মিশমি। যাও তো এখন। ”

মিশমি চমকে উঠে তাকাল তিহামের দিকে। মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করল না একটুকুও। সে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। কান পেতে শুনে কারো সিঁড়ি ভাঙার আওয়াজ। মিশমি উপলব্ধি করে যে, তার ভালোলাগার মতো ছেলে তিহাম নয়। বরং তিহাম এমন একজন প্রেমিক, যে কি-না নিজের মতো করে নিজের প্রতি অন্যের ভালোলাগা সৃষ্টি করতে পারে। মিশমি আনমনেই হেসে উঠে। নিজেদের কর্মকাণ্ড দেখে তার নিজের-ই মনে হচ্ছে না যে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক যুবক-যুবতী!

মিশমি কথাবার্তায় খুব সচেতন হলেও উত্তেজনাবশত কোনো কথা-ই না বলে থাকতে পারে না। মূলত এই কারণকে কেন্দ্র করে বন্ধুমহলে একটি দারুণ পরিচিতি অর্জন করেছে সে। আর তা হলো, ‘পেট পঁচা পুঁটিমাছ ’
পেটে কথা আঁটকে রাখতে পারে না বলেই মিশমির এই নামকরণ করা। ঠিক আজও তাই হলো। ভার্সিটিতে এসেই ফিসফিস করে গতরাতের ঘটনা উন্মুক্ত করল নীলাশা ও পিহুর কাছে। সেই কী লজ্জা মিশমির! অথচ একবার বলতে শুরু করলে মাথায় জট না পাকিয়ে সে যে থামে না তা বান্ধবী দু’জনারও খুব ভালো করে জানা। বান্ধবীর কথাগুলো শুনে পিহু কেমন আশ্চর্যান্বিত ভঙ্গিমায় বলল,

“ মিশু রে! তুই শালা আসলেই নিরামিষ। তুই এই বয়সে এসে টিনএজারদের মতো প্রেম করতাছিস? লজ্জা কী লজ্জা! ”

পিহুর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে নীলাশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। সে বলল,

“ সিরিয়াসলি ইয়ার! তুই ভাবছিস যে, তিহাম ভাইয়া দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকবে আর তোকে…। তুই কি তোর ফাস্ট রিলেশনশিপটা এমন নিব্বা-নিব্বিদের মতোই কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিস না-কি? ”

মিশমি মুখ কালো করে উত্তর দেয়,“ ফাস্ট রিলেশনশিপ মানে? রিলেশনশিপ শুরু হলো কবে? কাউকে ভালো লাগলেই রিলেশনশিপে জড়াতে হবে না-কি? কই, তুই তো আরাভ ভাইরে দেখলেই পলান-টুক্কুরু খেলা শুরু করিস। এমন দৌড় মারিস যেন দৌড়ায়েই বিশ্ব রেকর্ড বানায় ফেলবি! ”

মিশমি মুখ বাঁকিয়ে কথাটা বলতেই পিহু হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল নীলাশার উপর। নীলাশা অপ্রস্তুত হলো। এরা সবাই বুঝে গেল না-কি ব্যাপারটা? সেই সাথে বিরক্তও কম হলো না পিহুর কাজে। সে পিহুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মিশমির উদ্দেশ্যে বলল,

“ আজাইরা উদাহরণ কই পাস তুই? আমি কেন ওকে দেখে দৌড়াবো, লুকোচুরি খেলব? ওকে আমি ভয় পাই না-কি? ফাও আলাপ! ”

পিহু বলে, “ আর নীল দৌড়ালে তোর-ও দৌড়ানো লাগবে? আজব কথা বলিস ক্যান? ”

মিশমি উত্তর দেয়, “ আমার দ্বারা মনে হয় না এমন কিছু হবে রে। তোরা বুঝতে পারতাছিস না ব্যাপারটা। আম্মু যদি এইসব শুনে তো আমাকে… ”

মিশমি তার কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই নীলাশা ধমকে উঠে বলে,

“ প্লিজ ইয়ার, এতো ম্যা ম্যা করিস না। মানলাম আন্টি তোর ভালো চায়। বাট দিন শেষে কিন্তু আন্টি তোর পাশে থাকতে পারবে না সে যতই তোর মা হোক। কারণ আমাদের লাইফে এমন কিছু টাইম আসে যখন আমাদের নিজের বুদ্ধিতে, নিজের মতো করে সবকিছু সামলাতে হয়। এমন অনেক ঘটনা-ই হয়তো ঘটতে পারে আমাদের লাইফে যা মানুষের কাছে প্রকাশ করা যায় না বা প্রকাশ করলেও মানুষকে বোঝানো যায় না। তখন নিজেকেই সবটা সামলানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। সো প্লিজ, সব ব্যাপারেই এত ম্যা ম্যা করিস না। তোকে বলা হচ্ছে না যে, তুই রিলেশনশিপে যা তিহাম ভাইয়ার সাথে। এইটা তোর পারসোনাল ব্যাপার। বাট হ্যাঁ, ফ্রি ইউরসেল্ফ! তুই নিজের ভালো-মন্দ তখনই বুঝতে পারবি যখন তুই পার্থিব জীবনের ভালো-মন্দ স্বচক্ষে দেখবি। নয়তো আন্টি তোকে বলে দিবে ‘এটা ভালো ওটা খারাপ’ আর তুইও যদি তা-ই মেনে চলিস…! তাহলে তুই নিজে কীভাবে বুঝবি যে, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ? আন্টি কি সত্যিই সারাজীবন তোর পাশে তোকে ভালো-মন্দ দেখানোর জন্য থাকতে পারবে? ”

কার্তিকের বিষন্ন দুপুরেও রোদের তেজ না থাকাটা বেশ চমকপ্রদ ঘটনা বলে মনে হলো পিহু আর মিশমির। আকাশে তো গাঢ় মেঘ নেই! অথচ বাহ্যজগতের ভাবটা এমন যেন, আজ সন্ধ্যার মাঝেই প্রবল বর্ষণে ভিজে উঠবে এ-শহর। দুই বান্ধবী হেঁটে চলে ভার্সিটির প্রধান ফটকে। কিন্তু বিষন্ন দুপুরের প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে করতে থাকা আলাপচারিতা শেষ হয় না তাদের। এর-ই মাঝে কারো কণ্ঠ ভেসে আসে মৃদুমন্দ হাওয়ায়,

“ পিহু, অ্যাই পিহু? ”

দুই বান্ধবী মুহূর্তেই উপলব্ধি করল যে, আওয়াজটা এসেছে পিছন থেকে। এমন রুক্ষ কণ্ঠটা আসলে কার তা জানতেই পিছন ফিরে তাকানো হলো তাদের। বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ, সায়ান, তনয় ও সাইফ। এই রুক্ষ, ক্যাটকেটে স্বরটা যে তনয়ের তা বুঝতে দেরি হয়নি তার। পিহুরা আরাভদের বন্ধুমহলের প্রত্যেকের নাম জানে। এই চার যুবক ছাড়াও সেই মহলে রয়েছে রোহান, শিহাব ও সাহেল। কাজেই আরাভদের চারজনকে দেখে পিহুর একটা নাম-ই মাথায় এলো, সানাম! নিশ্চয়ই সানাম সম্পর্কিত কিছু বলার জন্য ডাকা হয়েছে তাকে। তারা তো জানেই সে আর সানাম একই ঘরে থাকে! পিহু দূর থেকেই কণ্ঠস্বর উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“ কিছু বলবেন তনয় ভাইয়া? ”

সাইফ মাথা চুলকে, হাতের ইশারায় তাদের কাছে ডাকে। মিশমি আর পিহু এগিয়ে যায়। তারা পৌঁছাতেই সাইফ পিহুকে আদেশ করে বলল,

“ কই যাচ্ছ তুমি? মানে, তুমি তো হলে থাকো। এখন কোথায় যাচ্ছ? ”

পিহুর নির্বিকার উত্তর,

“ সামনের পার্কটাতে। নীলাশা, নিশান, রিশান ওয়েট করছে। সেখানেই যাব। ”

“ তার আগে একটা কাজ করে দাও। তোমাদের হলে যাও তো একটু। হলে গিয়ে সানামকে নিয়ে আসো। আমরা একটু কথা বলব ওর সাথে। ”

কথাটা বলার পর দুই বান্ধবীর ভ্রু কুঁচকানো দেখে সাইফ কেমন অপ্রস্তুত হলো। তখনই পিহুকে বলতে শোনা গেল,

“ আপনাদের যা বলার আমাকে বলেন। আমি সানামকে বলে দিব। ”

সায়ান হাসল, “ তোমাকে বলা গেলে তো বলতাম-ই। তুমি বোধহয় বুঝতে পারছো না যে, আমাদের দরকারটা সানামের সাথে। ইনফ্যাক্ট আমাদের না ঠিক, বিশেষ করে সাইফের দরকার। ওকে ডেকে আনো এক্ষুনি। আর ওকে আমাদের কথা বলার প্রয়োজন নাই। যা করছে ও! এরপর লুকায়ে থাকবে না তো আর কী করবে? এমন কমপ্লেইন করার সাহস পাইছে কই থেকে? ”

এই মুহূর্তে এসে রাগে দপদপ করতে লাগে পিহু। সায়ানের কথা বলার ভঙ্গিমা শুনে মনে হচ্ছে যেন সানাম খুব-ই লজ্জাজনক কিছু করে বসেছে। পিহু আরও দুই দিন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, এই চার যুবক যেদিন একত্রে তার সামনে থাকবে, সেদিন-ই সে কিছু কড়া বাণীর বান নিক্ষেপ করবে একদম সাইফদের বক্ষ বরাবর। কিন্তু তা হলো না। কোমল, মিঠে, রসালো মনে সানামের তেজস্বী রূপটা সে আয়ত্ত করতে পারেনি। তবে আজ যখন সুযোগ মিলতেই দু’দিন আগের মৃদু ক্ষোভটা স্মরণে এলো, তখন আর পিহু নিজেকে শান্ত রাখতে চাইল না। ত্যাড়া কথাটা বলবে-বলবে ভাব! এমন সময় সাইফ নিজেই সানামের করণীয় কাজের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বলে উঠল,

“ শেষে অভিযোগ তো তুলতেই হইছে ওকে, হাঁহ্! ও যে অপবাদ আমাদের দিছে… ওর সঙ্গে যদি সিরিয়াসলি এমন কিছু হতো না! অপবাদ দেওয়ার শখ মিটে যেত। ”

ওষ্ঠদ্বয় ভেদ করে তীক্ষ্ণ এক তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি প্রকাশ করল সাইফ। মস্তিষ্কের অগ্নিকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না এইবার। তবে পরক্ষণেই সাইফের মন ছিঃ ছিঃ করে উঠল। এটা কেমন ধারা কথা বলে বসল সে? এমন নীচু মন-মানসিকতা তো তার কখনো ছিল না! সাইফ মনে মনে অনুতপ্ত হলো। কিন্তু বাহ্যিকরূপে পিহু আর মিশমি সেই অনুতাপের ছিটেফোঁটাও দেখতে পেল না। সাইফের কথা শ্রবণেন্দ্রিয় হতেই বান্ধবী দু’জনার কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। প্রথমেই উত্তর না দিয়ে, পিহু ক্ষিপ্রগামী প্রাণির মতো নিজের ফোন আনলক করল। অতঃপর সাইফের ঠিক মুখ বরাবর খুব-ই গোপনে তোলা একটি ছবি জাহির করে, দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

“ আশা করি সানামের অভিযোগ তুলে নেওয়া নিয়ে আপনাদের মশকরাটা এইবার বন্ধ হবে! ”

চলবে ইন শা আল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here