তার দেখা
পর্ব- ২
আমিরাহ্ রিমঝিম
( কপি করবেন না )
অনন্যা আর তরুণের সেটাই প্রথম ও শেষ সাক্ষাৎ হতে পারতো, কিন্তু তেমনটা হলো না।
দেড় বছর পেরিয়েছে। সাঁঝ ছুই ছুই বিকেলের কোলাহল ডিঙ্গিয়ে বাড়ি ফিরলো অনন্যা। নিজের ক্লাস ওয়ানের ছাত্রীকে টিউশন পড়িয়ে এসেছে সে। বাসায় ফিরে বুঝতে পারলো কিছু একটা নিয়ে গুজুর-ফুজুর চলছে সবার মাঝে।
অনন্যার কোনো ভাবান্তর হলো না। এমন গুজুর-ফুসুর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে বাসায়। আর তার কারণও অনন্যা জানে। কেউ ওকে না জানালেও ওর সেভেন পড়ুয়া ফুপাতো বোন সব তথ্য পাচার করে দেয় অনন্যার কাছে। এবারেও নিজের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসার কথা আগেই জানতো ও, তাই কৌতুহলবোধের আসলে কোনো কারণ ছিলো না।
তবে পরেরদিন অনন্যা সত্যিই আশ্চর্য হলো, যখন ওর মা নিজেই এসে এ ব্যাপারে কথা বললেন ওর সাথে।
ছুটির দিন ছিলো বিধায় কোথাও যাওয়ার তাড়া ছিলো না। এক চিমটি উত্তাপ মেশানো সকাল বেলার রোদে বসে চা খাচ্ছিলো অনন্যা, তখন ওর মায়ের স্নেহার্দ্র কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।
“কি করিস মা?”
পেছন ফিরে তাকিয়ে ঘরের দরজায় ওর মা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।
“আম্মু, এদিকে আসো”
অনন্যার মা গিয়ে নিজের মেয়ের কাছে দাড়ালেন। আলতোভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে সুস্থে মূল বিষয় খোলাসা করলেন মেয়ের কাছে।
“ মা, তোর জন্য তো একটা ছেলের প্রস্তাব এসেছিলো রে, তোর বাবা তো তাদের আসতে বলতে চাচ্ছে তোকে দেখতে।”
অনন্যা অবাক হলো ভীষণ। এর আগে এমনটা কখনো হয়নি। এর আগে যত জায়গা থেকে প্রস্তাব এসেছে সব ওর বাসা থেকেই বাতিল হয়ে গেছে, ওর পর্যন্ত কথা এসে পৌঁছায়নি। তথ্য পাচারকারী ফুপাতো বোনের থেকেই এই খবরগুলো পেতো অনন্যা, আর আজ ওর মা নিজেই এসে বললেন।
মানা করার কোনো কারণ অনন্যার ছিলো না, তাই সম্মতি দিয়ে দিলো।
দেখা সাক্ষাতের দিন ঘনিয়ে এলো অবশেষে। ছেলের বাড়ির মহিলাদের মেয়ে দেখার পর ছেলে মেয়ে দুইজনকে কিছুক্ষণের জন্য আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো।
দুরুদুরু বুকে চেয়ারে বসে আছে অনন্যা। বিপরীতে তরুণ ভাবলেশহীন। তীক্ষ্ণধার দৃষ্টি, মুখের ভাব জানান দিচ্ছে অযথা হাসি তামাশা করে বেড়ানোর মতো মানুষ সে নয়। বাচনভঙ্গি, হাটা চলায় গোছানো ভাব। চেহারায় বিন্দুমাত্র নার্ভাসনেস নেই।
অথচ অনন্যার অবস্থা শোচনীয়। ওর মামা উপস্থিত আছে কিছুটা দূরেই, তবু ভীষণ বিচলিতবোধ করছে। মনে হচ্ছে ভার্সিটির কোনো কঠিন এক ভাইবা দিতে এসেছে সে। তরুণ ভাইবা নেয়া শিক্ষক, আর অনন্যা পাশ-ফেলের টানাপোড়েনে থাকা অসহায় এক শিক্ষার্থী।
কুশলাদি জিজ্ঞাসা ও নিজের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেয়ার পর তরুণ স্পষ্ট কন্ঠে প্রশ্ন করলো, “আপনার কাছে জীবনের অর্থ কি?”
অনন্যা আরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর খোঁজে এসে এমন প্রশ্নও কি করা যায়? ও ভেবেছিলো হয়তো ওর পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে জিজ্ঞাসা করবে, বা ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে। এমন কিছু যে প্রশ্ন করতে পারে তা ওর ধারণাতেও আসে নি।
কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে বসে থাকার পর কোনোমতে নিজের উত্তর জানালে তরুণ আরো বেশ কিছু প্রশ্ন করলো। প্রতিটা প্রশ্নই অনন্যাকে চমৎকৃত করলো, যদিও একটা প্রশ্নের উত্তরও গুছিয়ে দিতে পারলোনা।
জীবনে ইসলামের গুরুত্ব কতটুকু, বিয়ে নিয়ে ধারণা, নিজের কাছে নিজেকে কেমন মনে হয় – এমনসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তরুণকে নিয়ে অনন্যা ইতিবাচক ভাবনা ভাবতে শুরু করেছে।
অনন্যা তরুণকে নিজে থেকে কোনো প্রশ্ন করতে না পারায় তরুণ অনন্যাকে করা প্রশ্নগুলোই নিজের দিক থেকে উত্তর দিলো। অনন্যা আরো একবার চমৎকৃত হলো।
ভাইবা-পর্ব শেষে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসার সময় তরুণ চেয়ারের পায়ার সাথে পা বেধে আবার বসে পরলো। তরুণের অবস্থা দেখে অনন্যার হাসি চলে এলো, না চাইতেও হেসে ফেললো খানিকটা। তরুণ তাকিয়ে দেখলো সেই হাসি।
( চলবে ইনশাআল্লাহ )