তার দেখা পর্ব- ৩

0
311

তার দেখা
পর্ব- ৩
আমিরাহ্ রিমঝিম

( কপি করবেন না)

অনন্যার মন কিঞ্চিৎ বিষন্ন। তরুণদের বাসা থেকে তারা অনন্যার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। অথচ তরুণ নামের তরুণটিকে বেশ ভালো লেগেছিলো ওর। মন খারাপ নিয়ে রাতের বেলা একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেতে থাকে অনন্যা । ইশ, তারা কেন ওকে পছন্দ করলোনা সেটা ওর জানতে ইচ্ছা করছে খুব।

রাতের আকাশে চাঁদটা মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে। সেই আলো গায়ে মেখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে তরুণ। ব্যস্ত দিনের শেষে ক্লান্তি লাগছে কিছুটা। মনোমুগ্ধকর চাঁদের শোভা দৃশ্যমান থাকলেও তরুণের মন রয়েছে অন্য কোথাও।

অনন্যা মেয়েটাকে তরুণ দেখতে গিয়েছিলো তিনমাস আগে। এরপর থেকে আর কোনো মেয়েই দেখতে যায়নি ও। আজকেও বাসা থেকে এক মেয়েকে দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে কথা বললে তরুণ মানা করে দিয়েছে।

অনন্যাকে দেখে আসার পর যখন তরুণ নিজের মতামত জানালো, বাসার সবাই খানিকটা হতাশ হয়েছিলো। অনন্যাকে সবারই মোটামুটি ভালো লেগেছিলো। তবে তরুণের কাছে মনে হয়েছে অনন্যা একটু ধীর-স্থির। তরুণ নিজে ভীষণ ব্যস্ত একজন মানুষ, ধীর-স্থির কেউ ওর সাথে কিভাবে পায়ে পা মিলিয়ে চলবে সেটা ছিলো ওর চিন্তা। আবার দেখা সাক্ষাতের দিন ওর বেকায়দা অবস্থা দেখে অনন্যা হেসে ফেলেছিলো, যেটা তরুণের ভালো লাগেনি।

সেই হাসি, সেই কয়েক মুহুর্তের হাসিটাই পরে ভয়ানকভাবে জেঁকে বসলো তরুণের মনে। প্রথমে তরুণ ভেবেছিলো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন দিন সেই হাসিমুখটা যেন মনের ভেতর আরো প্রকটভাবে গেড়ে বসলো।

এখন তরুণের আর কোথাও মেয়ে দেখতে যেতে ইচ্ছাই করে না। এখন ওর মনে হয় অনন্যার ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখানোর কারণগুলো নিতান্তই তুচ্ছ ছিলো। অনায়সেই ব্যাপারগুলো উপেক্ষা করা যেতো। অথচ সেই তুচ্ছ ব্যাপারগুলো ধরেই সিদ্ধান্ত নিলো তরুণ।

আচ্ছা, অনন্যার ব্যাপারে আবারো কথা বলার সুযোগ কি আছে? কিন্তু অনন্যাদের বাসায় মানা করে দেয়া হলো যে!

একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে তরুণ। মিষ্টি আলো ছড়ানো চাঁদের দিকে তাকিয়ে হুট করেই ওর মনে পড়ে, “তাসফিয়া জাবিন অনন্যা” নামটা সে এর আগেও শুনেছে, প্রায় দুই বছর আগে।

কিছু কেনাকাটা করতে মার্কেটে গিয়েছিলো অনন্যা। ফেরার পথে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে আসার সময় ওর টিউশনির ছাত্রী মিতুকে দেখতে পেলো। মিতুর বাবার এক কলিগের মেয়ের বিয়ে আজকে, জানে অনন্যা। আজকে মিতুর পড়া ছিলো, বিয়ের দাওয়াতের জন্য ছুটি নিয়েছে।

মিতু দাওয়াতে আসা অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলো। অনন্যা কাছে এগিয়ে গিয়ে ডাক দিলো মিতুকে। অনন্যাকে চিনতে পেয়ে মিতু খুশিতে একছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে।

“ইয়েএএএএএ, অনন্যা আপু………. দাড়াও আম্মুকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসি”

অনন্যা কিছু বলার আগেই মিতু দৌড়ে গেলো ওর মাকে ডাকতে। অনন্যা শপিং ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে রইলো একা একা। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো নীল পাঞ্জাবি গায়ে পাগড়ি হাতে কেউ একজন ফোনে কথা বলছে। ওই লোকটা কি বর? অনন্যা মনে মনে ভাবলো পাঞ্জাবির সাথে তো পাগড়ি মানানসই হলো না, পাগড়িটা বেশি জমকালো হয়ে গেছে।

লোকটা যখন কথা শেষ করে পেছন ফিরলো, অনন্যা একবার তাকে দেখেই চোখ নিচু করে ফেললো। ওর সামনে দিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর ঢুকে গেল তরুণ।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here