ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_৪
তাসনিম_তামান্না
???
কুয়াশা আর মেঘা কলেজে আজ তাড়াতাড়ি এসেছে কলেজেটা ঘুরে দেখবে তাই কাল ঝামেলার জন্য দেখতে পারিনি তাই আজ দেখবে।কিন্তু কুয়াশা আজ কলেজে আসতেই চাই নি কালের ঘটনাটা মনে করে অনেক ভয় পাচ্ছিলো।মেঘ আর মেঘা কুয়াশাকে বুঝিয়ে কলেজে নিয়ে এসেছে।তাও কুয়াশার মনে মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।কুয়াশা মাথা নিচু করে মেঘা হাত ধরে ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনি সামনে কয়েটা পা দেখে দাড়িয়ে গিয়ে চট করে মাথা উপরে উঠিয়ে দেখে কালকের ছেলে-মেয়ে গুলো ওদের সামনে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। কুয়াশা তাদের দেখে ভয়ে মেঘার হাত চেপে ধরে। সেটা কেউ খেয়াল না করলেও তুষার ঠিকি খেয়াল করে ভ্রু আপনা-আপনি কুচকে গেলো।
রুকাইয়া আজ সবাইকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে ওদের সব ফেন্ডদের। কুয়াশার সাথে কথা বলবে বলে প্রথম দেখাতেই সবার কুয়াশাকে ভালো লেগেছে তার সাথে উপাদি দিয়েছে ‘অদ্ভুত মেয়ে’। সবাই একটু একসাইডেট তুষারও একসাইডেট কিন্তু মুখে ফুটিয়ে তুলেছে বিরক্তিকর আর ডোন্ট কেয়ার ভাব। ওরা ভেবেছিলো কুয়াশা আজ আসবে না কালকের ঘটনাটার জন্য কিন্তু রুকাইয়া সিক্সনেস বলছে আজ কুয়াশা আসবে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো গেটের দিকে কুয়াশা আসতেই সবার মুখেই হাসি ফুটলো।হাসি মুখেই কুয়াশাদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।তুষারের মুখেও হাসি ফুটেসে সেটা কেউ গভীর ভাবে না দেখলে বুঝতে পারবে না।
কুয়াশা অপরিচিত মানুষদের খুব ভয় পাই সহজে কারোর সাথে মিশতে পারে না অজানা কারণেই ও ভয় পায়।মেঘা ও অপরিচিত মানুষের সাথে তেমন মিশতে পারে কিন্তু ও ভয় পাই না।
-কি চাই(মেঘা)
-তোমাদের সাথে একটু কথা বলি(রুকাইয়া)
-আমাদের সাথে আবার কি কথা বলবে আমরা তো আপনাদেরকে চিনি না তাহলে আমাদের সাথে আপনাদের কি কথা থাকতে পারে(মেঘা)
-তুমি না চিনলেও তোমার পাশের জন্য ঠিকই চিনে তাই না কুয়াশা(রিদ)
কুয়াশা দু’দিকে মাথা নাড়ালো নার অর্থ ‘না’।
-এ্যাঁহ কালকেই তো কথা হলো আমাদের তাই না(তন্নি)
কুয়াশা এবারও ওপর নিচ মাথা নাড়ালো যার অর্থ ‘হ্যাঁ’।
তুষার এতোক্ষণ কুয়াশার দিকে গভীর ভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কুয়াশার মতিগতি খেয়াল করছিলো কিন্তু মাথা নাড়িয়ে বার বার এন্সার দেওয়ায় তুষার কিছুটা রেগে যায়।তুষার এবার ধমকে উঠলো
-এই মেয়ে কথা বলতে পারো না মাথা নাড়িয়ে বার বার এন্সার দিচ্ছো কেনো (তুষার)
তুষারের ধমকে কেঁপে উঠল কুয়াশা আর মেঘা।ওদের সাথে কেউ এভাবে ধমকে কথা বলেনি।কুয়াশা এবার তুষারের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকালো।তুষার হলুদ ফর্সা, গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, চুলগুলো বার বার হাত দিয়ে উল্টে দিচ্ছে, গোলাপি ঠোঁট জোড়া কামড়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে। কুয়াশা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না বেশিক্ষণ। কুয়াশা চোখ নামিয়ে নিয়ে মনে মনে বলল
-এই ভাইয়াটার সাথেই তো কাল ধাক্কা লাগলো।ভাইয়াটা কত কিউট ওনার গফের তো রাগ করারই কথা কালকে তো ঔ আপুটা আমাকে মারছিলো তাহলে কি আজ এই ভাইয়াটাও আমাকে মারবে এখনতো বকছে নির্ঘাত আমাকে মারবে(মনে মনে ভেবেই বার কয়েক ঢোক গিললো কুয়াশা মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো মুহুর্তেই)
কুয়াশা কথা বলছে না দেখে তুষার আগের চেয়ে ধমকে উঠলো
-এই মেয়ে কথা বলছো না তুমি জানো আমরা তোমাদের সিনিয়র(তুষার)
তুষারের ধমক শুনে লাফিয়ে দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে কুয়াশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
-সরি ভাইয়া!আমি আর কোনো দিনও কারোর সাথে ধাক্কা খাবো না দেখে চলবো প্লিজ মারবে না।
কথাটা বলতে বলতে চোখ দিয়ে টুপ করে একফোঁটা পানি পড়লো।উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো কি বলছে এই মেয়ে? ওরা তো জাস্ট কথা বলতে এসেছিলো আর কুয়াশা তার উল্টো টা বুঝলো।
-কুয়াশা আপু তুমি ভুল বুঝছো তোমাকে কেউ মারতে আসি নাই তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি তুমি কাঁদছ কেনো (সাদাফ)
সাদাফ কনুই দিয়ে গুঁতা দিলো রুকাইয়াকে। রুকাইয়া অবাকের রেস কাটিয়ে বলল
-হ্যাঁ হ্যাঁ ও ঠিকই বলছে তুমি অযথা ভয় পাচ্ছো(রুকাইয়া)
-আচ্ছা তাহলে আমরা যায় আপু(মেঘা)
-তোমরা কি ফেন্ড না মানে ফেসে কিছুটা মিল আছে তাই শুনলাম আর কি(মুন)
তন্নির কথাটা শুনে কুয়াশা আর মেঘা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকালো।
– বোন(কুয়াশা)
-ও ওয়াও ইন্টারেস্টিং এই তোমার নাম কি?(রিদ)
-মেঘা জাহান(মেঘা)
-নাইস নেম কুয়াশা আর মেঘা আর কালকের ছেলেটার নাম কি?(তন্নি)
সবফেন্ড গুলো কোনা চোখে তাকালো তন্নির দিকে সেটা বুঝতে পেরে একটু কাশি দিলো তন্নি।
-কোন ছেলেটারা নাম?(মেঘা)
-আব..আ.. আসলে কেউ না তোমরা যাও ক্লাসে যাও(তন্নি)
কুয়াশা আর মেঘা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।তুষার কুয়াশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।সাদাফ আর রুকাইয়া চোখে কিছু বলল।
-আচ্ছা মেয়ে দুইটার এফবি বা ফোন নম্বার কিছু কি তোদের কাছে আছে থাকলে আমার কাছে দে তো। আমার একটু দরকার যে কোনো একটারে পটাইতে পারলেই হবে(রিদ)
-শালা নজর ঠিক কর ছোট বোনের নজরে তাকা(হাসান)
-সবাইর দিকে যদি বোনের নজরে তাকাই তাহলে বউ বানামু কারে(রিদ)
তুষার রাগী চোখে তাকালো রিদের দিকে। রিদ সেটা দেখে আবুল মার্কা হাসি দিয়ে বলল
-দোস্ত ওমনে তাকাস কেন ডর লাগে তো(রিদ)
-গুড(তুষার)
.
কুয়াশা আর মেঘা ক্লাসে গিয়ে দেখলো ঈশান, অনু,রাহুল বসে গল্প করছে।ওরাও ওদের পাশে গিয়ে বসলো।
-কি রে এতো দেরি করলি কেনো তাড়াতাড়ি আসতে বললাম না তোদের(অনু)
-আর বলিস না আমরা যখন আসছিলাম তখন ওখানে (তখনকার সব কথা বলল মেঘা)
-আচ্ছা সব বুঝলাম বাট আই হেভ এ গভীর গভীর গভীর গভীর….. (ঈশান)
-গভীর সেটা আমরাও বুঝতে পারছি ভাইরাস গভীরের পরের ওয়াড বল(অনু)
-ও হ্যাঁ দাড়া বলতেছি আই হেভ এ গভীর প্রশ্ন মেঘা তুই কাল কই ছিলি যখন ঔ ছেমরিডা কুয়াশারে মারছিলো(ঈশান)
-তোদের সাথে আসছিলাম মনে নাই(মেঘা)
-হ্যাঁ মনে আছে আমি বলতে চাইছি তোরা দুইটা তো একসাথে আসিস তাহলে কাল একসাথে আসিসনি কেনো?(ঈশান)
-হ্যাঁ তাই তো কাল গেটের সামনে থেকে আমরা চারজন একসাথে হইছি। তোরা দু’জন একসাথে আসিস নি কেনো(রাহুল)
-আরে আমি তো বাসায় ছিলাম না….(মেঘা)
-তাহলে কোথায় ছিলি(অনু)
-সেটাই তো বলতেছিলাম তার মাঝে কথা বললি কেন যা বলবোই না?(মেঘা)
-আচ্ছা আর কথা বলবো না এবার তো বল(অনু)
কুয়াশা ওদের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসতেছে।
-এই তুই একদম হাসবি না বিয়াদ্দপ ছেমড়ি (মেঘা)
-তুই বিয়াদ্দপ আমি কখন হাসলাম তুই চোখে আজ কাল বেশিই দেখছিস সময় থাকতে ডাক্তার দেখা(কুয়াশা)
-ওফ তোরা ঝগড়া থামিয়ে বল কাল কইছিলি(রাহুল)
-আরে কাল খালামনির বাসায় গিয়ে ছিলাম খালামনি অসুস্থ ছিল তাই দেখতে গিয়ে ছিলাম কুয়াশাও যেতে চাইছিলো কিন্তু ভাইয়া বারন করছিলো তাই আর ওকে নিয়ে যায় নি রাতেই ফিরে আসতাম কিন্তু খালামনি আসতে দেই নি তাই সকালে তাড়াতাড়ি বের হয়েছিলাম একেবারে কলেজে আসছি(মেঘা)
-ও আচ্ছা এই ব্যাপার স্যাপার আগে বলবি তো কুয়াশার কাছে শুনছিলাম ও শুধু বলছিলো খালামনি বাসায় গেছিস কেনো গেছিস সেটা শুনতে মনে ছিলো না এখন মনে পড়ছে(ঈশান)
ওরা গল্প করতে করতে কলেজের আশপাশটা দেখলো।তুষারদের দেখে ওরা আর ওদিকে যায় নি।মেঘাও কিছুটা ভয় পেয়েছে তুষারের ধমকে।ওরা ঘুরেঘুরে দেখার কিছুক্ষের মধ্যে বেল বেজে উঠলো দৌড় দিলো ক্লাসে। কাল ক্লাস করেনি আজ স্যারেরা যদি বকে সেই ভয় ও ছিলো কিছুটা ওদের মাঝে। কিন্তু কোনো স্যাররাই কিছু বলে নি।
চলবে