তাহারেই_পড়ে_মনে পর্ব এগারো

0
1125

তাহারেই_পড়ে_মনে
পর্ব এগারো
সাবিহা ছেলের বিয়ের দিন এগিয়ে এনেছেন। আত্মীয় স্বজন আর হবু বেয়াইবাড়ির সবাইকে সত্যিটা জানতে দেওয়া হলো না। সবাই জানলো ছেলের মা হঠাৎ ভিষণ রকম অসুস্থ হওয়াতে, মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন। পুত্রবধুর মুখ দেখার জন্যই জান আটকে আছে। তাই আড়ম্বর হলো না, ছেলেপক্ষ বউ আনতে মেয়ের বাড়ি গেলো না বরং মেয়েপক্ষ বিয়ের কণেকে নিয়ে ছেলের বাড়ি এলো!

সাবিহা সবসময়ই অন্যকে গালি দিয়ে, হেয় করে নিজেকে বড় করার আস্ফালন করে এসেছে – সামনাসামনি সবাই চাটুকারিতাই করেছে। ভেতরে ভেতরে সাবিহা আর ওর পরিবার যে কতটা জঘন্য, কী ভাবে সবাই তাদের নিয়ে , জাফরিন তা নগ্ন করে জানান দিলে সহ্য করাটা সাবিহার জন্য কষ্টকরই বটে। তাই ছেলে নিয়ে ও ছেলেখেলাতেই ব্যস্ত হলো! প্রিন্সের শরীরেও খাঁগোষ্ঠিরই রক্ত – সেযে খুব সহজে পোষ মানবে না, কথা শোনানোর রাস্তা আসান হবে না তা সাবিহার চাইতে কে আর ভালো জানে!

নেই নেই করেও লোক কম না বাড়িতে। অবাক ব্যাপার সাবিহার বাপের বাড়ির কাউকে ডাকা হয়নি। পরে ধুমধামে অনুষ্ঠান করার সময় সবাই জানবে এভাবেই এই তর্ক ধামাচাপা দিয়েছে সাবিহা। সবার ভেতরেই চাপা উত্তেজনা কিন্তু সাবিহা কাউকে কিছু বলছে না। প্রিন্সের চাচা, ফুফুরা এসেছে। ডিঘটি থেকেও জনাপঞ্চাশের মতো লোক এসেছে। তারাও ইতস্তত বোধ করছে। তুলিকে খুব সাধারণ জামা-ওড়নাতে আনা হয়েছে। সাবিহা তিন লাগেজ ভরে উপঢৌকন পাঠিয়েছিলো কিন্তু কাবিন না হওয়া পর্যন্ত ছেলের বাড়ির কোনো উপহার তাকে ছোঁয়ানো হবে না। তুলির সাথে ওর খালা, ফুফু, চাচি, দাদি, বোনেরা এসেছে। সবাই ঘুরে ঘুরে বাড়ি দেখে এসেছে কিন্তু তুলি সেইযে বাড়িতে ঢুকে বিছানায় উঠে বসেছে, ঘন্টাতিনেক ধরে গুটিসুটি মেরে সেখানেই বসে আছে। আদর আপ্যায়নের কম হচ্ছে না এখানে কিন্তু সবারই মন ভার আর মুখে মেকি হাসি। কিছু একটা হচ্ছে ভেতরে কিন্তু সেই কিছুটা যে কী কেউই তা বুঝে উঠতে পারছে না। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলে হয়। তুলির বড়চাচা রানিং চেয়ারম্যান। তুলি বংশের বড়মেয়ে। এমনিতেই যেচে ছেলের বাড়িতে এসেছেন তার উপর যদি বিয়েটা না হয়, কুমারি মেয়েকে এইভাবে আবার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয় তো অপমান, অপদস্ত হওয়ার সীমা থাকবে না। তিনি অযু করে এসে তওবার নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। ‘হে রহিম রহমান, হে পরওয়ারদিগার, ক্ষমা করো। বান্দার মানসম্মান তোমার হাতে।’

বাইরবাড়িতে মওলানা সাহেব আর রেজিস্ট্রারকে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাস্তার পাশাপাশি বারচারেক চাও পরিবেশন করা হয়ে গেছে। মওলানা সাহেবই আজকের বিয়ের কাজি। তারাও বিব্রত হচ্ছেন – যে কাজে আসা হয়েছে তার কোনো খবরই নেই। কারও কাছে কিছু জানার উপায় নেই কারণ কেউই কিছু জানে না।

সবার ভেতরের গোপন শংকা ক্রমশ ফিসফাস এবং এখন ফিসফাস শোরগোলে পরিণত হয়েছে। বাড়ির ভেতর পাশে বড় বড় পুকুর – মাছের ঘের কাটা আছে। তার পাড়ে বসার জন্য ইট-সিমেন্টে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচতে প্রিন্সের বাবা সেখানে এসে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। প্রিন্সের চাচাদের অবস্থা শোচনীয়, একে তারা বিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারছে না তার উপর মেহমানদের প্রশ্নাতুর চোখরাঙানি তাদেরকেই সহ্য করতে হচ্ছে!

বড় বড় হাড়ি চুলায় চড়ছে আর নামছে, ঘ্রাণে সারাবাড়ি ভরে আছে। অকারণ বারবার পরিবেশন ও করা হচ্ছে। কারো খাবারে রুচি না থাকায় সেগুলোর জায়গা হচ্ছে ডাস্টবিনে। কিন্তু বাড়ির কর্ত্রির খবর নেই। তিনি ছেলে নিয়ে সেইযে নিজের শোবার ঘুরে ঢুকে দোর দিয়েছেন বেরুবার নাম নেই। সেখানে কী হচ্ছে জানার উপায় নেই কারণ আশেপাশে ঘেঁষার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

কয়েকবার প্রিন্সের জোর কন্ঠস্বরে শোনা গেছে কিন্তু এর বেশি জানার উপায় নেই।

প্রিন্স মায়ের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। মায়ের জন্য এটা বড় কষ্টের কিন্তু জাফরিনের বলা কথাগুলো সাবিহার দম্ভচুর্ণ করে সেখানে এক দাউদাউ করা আগুন জ্বেলে দিয়েছে, নাড়িছেঁড়া কলিজার টুকরো ছেলের চোখের পানি সেই আগুনকে শান্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। বড় কষ্টে, অনেক ব্যথা হজম করে সাবিহা নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন, তা ধুলোয় মিলিয়ে যাবে তা কোনোদিন মানা যায় না। সাবিহার মা মারা গেছে ওকে পাঁচ বছরের রেখে, বাবা আবার বিয়ে করলে তার জায়গা হয় নানার বাড়িতে। সেখানে নানারকম অবহেলায়, অনাদরে বড় হয়েছে ও। খালাদের বিয়ে আশেপাশেই হয়েছে, নানার বাড়ি কাজ শেষ হলে নানা খালাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো তাদের সংসারের কাজ করে দেওয়ার জন্য। নানা বঞ্চনা সয়ে সয়ে মন কৃচ্ছ, ছোট হয়ে গেছে। রূপের জোরে খাঁবাড়ির বউ হয়ে আসলেও চরিত্রহীন স্বামির মনে জায়গা হয়নি। বরং নানারকম কূটবুদ্ধি আশ্রয় করে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে হয়েছে। গয়না-বাড়ি আর মিথ্যে অহংকারই ওর বেঁচে থাকার শক্তি – সেটাকে নতুন করে জানান দিয়েছে জাফরিন আজকে। চাপা ব্যথাকে খোঁচা দিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। প্রতিশোধের স্পৃহায় আত্মজের কষ্ট তাই ধরা পড়ছে না ওর চোখে।

‘মাগো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। শুধু এইসব তুমি বন্ধ করো। আমার মিষ্টিকে চাই মা।’

‘কিন্তু ওই মেয়ে তো আসবে না তোর সাথে। তোর তো রাস্তায় জন্ম হইছে, তুই কুত্তার জন্ম – তুই বাপ মা ছাড়তে পারবি, ওই মেয়ে কি নিজের বাপ মার অমতে তোর সাথে আসবে? তুই পারবি এখন ওকে আনতে?’

প্রিন্স ভালো করেই জানে এখন মিষ্টি আসবে না কোনোভাবেই। ‘ও পড়াশুনা শেষ করবে মা।’

‘তারপরে ওর যদি আর তোকে পছন্দ না লাগে। তখন যদি বড় চাকুরে, বড় পাশ দেওয়া ছেলে চায়?’

‘মিষ্টি এমন করবে না, মা।’

‘তোর বিয়ে আজকেই হবে, সে এই মেয়ের সাথে হোক বা মিষ্টির সাথে হোক। আজকেই হতে হবে।’

‘অসম্ভব মা, আমাকে মেরে ফেললেও না। এতক্ষণ তোমার পায়ে ধরে সেধেছি, আর না। তোমরা যা পার কর। এভাবে আমাকে আটকে রাখা যায়, তুমি ভাবলে কী করে? একমিনিটও লাগবে না আমার তোমার বাড়ির সীমানা পার হতে। তুমিও তা খুব ভালো করে জানো। এইসব বন্ধ কর এখন নইলে আমাকে যে হারাবা তাও শুনে রাখো।’

সাবিহা প্রমাদ গুণলো। কিন্তু তার প্রস্তুতি নেওয়াই ছিলো, সে খুব ভালো করেই জানে বুনোবেড়াল আঁচড় কাটবেই। ওকে গায়ের জোরে না কৌশলে আটকাতে হবে। বাড়িতে মাছের চাষ হয়, ক্ষেতের কাজ হয় – কীটনাশকের মজুত থাকেই। এরকম একটা বোতল বের করে সামনে রেখে প্রিন্সকে একটা গল্প বলা শুরু করলো সে ‘জানো বাপধন, আমি যখন বিয়ে করে এইবাড়িতে আসি তখন পনেরো – ষোল বয়স। নানারবাড়ি আধাপেট খেয়ে বড় হইছি, হঠাৎ করে সোনা-জহরৎ পেয়ে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আমি উড়তে লাগলাম। তোমার বাপে রাইতে আসতো, কাছে থাকতো, দামি শাড়ি-গয়না দিত। রাগ হইলে ভাতের থালা ছুঁড়ে মারতো, পাড়ায়া বেহুঁশ করে রাখতো – আমার কাছে ওইটাই ভালো থাকা মনে হতো। আমি তখনও ভালো থাকতাম এখনও ভালো থাকি। সংসারে থাকতে বহু কিছু সহ্য করা লাগে। কিন্তু আমার ভালো ভাগ্য অনেকের জন্য খুব খারাপও হয়। লোকে কিন্তু সব জানে, ঘেন্নাও করে আড়ালে কিন্তু টাকার গরমরে মান্যও করে। এই মিথ্যা দেমাগের লোভ সবাই ছাড়তে পারে না, আমিও পারিনা – তোমার বাপ-চাচারাও পারে না। তোমার বাপে আমারে মারত কিন্তু জানত যে আমি তার ঘরের বউ, তার বাড়ির মান। সে বাজারের মেয়েগো কাছে যাইতো, এখনো হয়তো যায়। এইরকম এক মাইয়ার একবার পেটে বাচ্চা আসলে সে দাবি করলো ওইটা তোমার বাপের বাচ্চা। তুলকালাম লেগে গেল। মাইয়ারে অনেক বোঝানো হইলো, টাকার লোভ দেখান হইলো কিন্তু মাইয়া অনড়। সে বাচ্চাও ফেলবে না, দাবিও ছাড়বে না! তারে নাকি তোমার বাপের বিয়া করতেই হবে। মেয়ে হয়ে আমি আরেক মেয়ের কষ্ট দেখলাম না, আমার ভয় হতে লাগলো সত্যিই তোমার বাপে আরেকটা বিয়ে করে বসবেনাতো? আমার ভয়ের চাইতেও তোমাগো গুষ্ঠির ভুয়া মানের ভয় ছিল বেশি। একদিন ওই মাইয়া যখন সাতমাসের সন্তানসম্ভবা তখন তার পেটে লাথি মেরে বাচ্চাটারে মেরে ফেলে তোমার বাপে। মেয়ে বড় জেদি ছিলো, ওই অবস্থায় তোমাগো এই বিরাট বাড়ির গেইটের সামনে এসে বসে থাকে। ভাগাড়ে দিয়া তারে তুইলা কই ফেলে আসছে তোমার বাপ-চাচারা তা আর খবর পাইনাই। থানা পুলিশ – বিচার যে এই বাড়ির সীমানায় ঢোকার ক্ষমতা রাখে না তা তুমিও খুব ভালো করেই জানো!’

একটু থামে সাবিহা। ছেলের বিস্ফোরিত চোখের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি হাসে। তারপর বলে ‘এইরকম অনেক ঘটনার স্বাক্ষী আমি। একটা গল্প শুনাইলাম, হাজার হাজার বলতে পারব। তোমাগো বড়ির জমিনে, ইটে যে কতমানুষের পঁচা রক্ত লেগে আছে তার হিসাব আমার কাছে আছে। এখন এই গল্প আমি কেন শুনাইলাম তোমারে? কারণ দেখো, কতকিছুর পরেও এই বাড়িটা কেমন মাথা উঁচা কইরে আছে, দেখছ? তোমার বাপে এখনও ওইরকম দুইএকটা পাপকাজ করতে দুইবার ভাববে না, তার মান বাঁচাইতে। আজকে ডিঘটিরা যদি ফেরত যায়, মিষ্টির কী হবে তা তুমি বুঝতে পারতেছ নিশ্চয়!’

প্রচ্ছন্ন কিন্তু সহজ হুমকি দিলো সাবিহা। প্রিন্সের আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো!

‘এখন তুমি কি করবা দেখো। এই অপমান আমিও নিতে পারব না। এইযে বিষের শিশি- এখনই গিলে ফেলব তোমার সামনে। হয় তুমি কবুল বলবা নইলে আমারে তো হারাইবাই, জাফরিনের মাইয়ার কী হবে তাও তুমি বুঝতে পারতেছ।’

আগেররাতে তুমুল তুফান গেছে। বৃষ্টিতে ভিজে আছে সব। মেঘ কেটে ভোর থেকেই রোদের ঝলক। গাছের পাতার ময়লা ধুয়ে চকচক করছে। তাতে রোদ পড়ে ঝলমলে অবস্থা। জাফরিন মিঠিকে নিয়ে বারবার এঘর-ওঘর করছে। মিষ্টির সাথে সীমাতীত দুর্ব্যবহার করা হয়েছে সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। তার মেয়ে যে অবুঝ না তা খুব ভাল করেই জানে জাফরিন। হয়তো একটা ভুল হয়ে গেছে, একটু পা এলোমেলো চলে ফেলেছে – তার জন্য শাস্তিটা অনেক বেশি হয়ে গেছে। দুদিন ধরে মিষ্টির সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে গেছে কিন্তু মিষ্টির নিজেরও জেদের ভার অনেক, ও কিছুতেই সহজ হয়নি। ওর মনের আলোড়নও তিনি মা হয়ে টের পান, এঘরে থেকেও ওইঘরে মিষ্টি যে নির্ঘুম রাত ছটফট করছে বেশ বুঝতে পারে জাফরিন। আজকে জাফরিন নিজেই ছটফট করছে। অন্যরকম ভয় আর শংকায় মন দুলছে। সারারাত মিষ্টি ঘুমায়নি। সকালে অনেকক্ষণ ছাদে চুপ করে বসেছিলো। একটু আগে সামান্য খাবার মুখে দিয়ে বই নিয়ে বসেছে বারান্দায়। তারপর সেখানেই ঘুমিয়ে গেছে। মেয়ের কাছে এসে বসলো জাফরিন। খোলা বই বুকের উপর রেখে হাতের উপর মাথা দিয়ে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে মিষ্টি। রোদ এসে মুখে পড়ছে। চশমা খোলা হয়নি। চশমার ভেতর দিয়ে কুঞ্চিত চোখ দেখা যাচ্ছে। চাপা কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। হাহাকার করে উঠলো মায়ের মন। কীভাবে মিষ্টির সাথে কথা বলবে বুঝে উঠতে পারল না জাফরিন। ঘরে এসে বাটিতে নারকেলের তেল নিয়ে গিয়ে মেয়ের পাশে বসে মিষ্টির মাথাটা কোলে টেনে নিয়ে রুক্ষ চুলে বিলি কেটে কেটে তেল লাগাতে থাকলে মিষ্টি জেগে গেল। আরাম পেয়ে ও চুপ করে থাকল। আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করলো জাফরিন ‘এরকম হয় মিষ্টি। এই বয়সে ভুল হয়ে যায়। আমরা সবাই ভুল করি। আমার মাথা ঠিক ছিল না মা। তুমি আমার বড় গর্বের ধন। মিঠি আসছে সেইদিন, তুমিইতো আমার দুনিয়া মা। তুমি কত ভালো মেয়ে তা আমার চাইতে ভালো তো কেউ জানে না। তোমার নামে খারাপ বললে আমার সহ্য হয় না। আমি অনেক খারাপ কথা বলেছি তোমাকে, তুমি আর মন খারাপ করে থেকো না।’

কিভাবে কী বলবে আসলেই বুঝতে পারছে না জাফরিন। এলোমেলো নানা কথা বলে গেলেন। ‘এইরকম হয় মা। সবার হয়৷ তারপর যখন তুমি বড় হয়ে যাবে, অনেক বছর পরে এইসব ছেলেমানুষি কথা মনে পড়ে তুমি নিজেই হাসবা, মা। প্রিন্স তোমার সাথে যায় মা? তুমি এতো বুদ্ধিমান মেয়ে, তুমি এইটুকু বুঝনাই? যাকগে ওইসব ভুলে যাও মা। পড়াশুনা করো, হাসি আনন্দ করো। ওইসব আর মাথাতেও আইনো না। মনে রাখবা সবসময়, জীবন তোমার। কারও জন্য সেই জীবনের চলা থামে থাকে না। জীবন অমূল্য, কারো জন্য সেই জীবনের ক্ষতি করা ঠিক না। কোনো উল্টাপাল্টা চিন্তা কখনো মাথায় জায়গা দিবা না। মনে রাখবা তোমার মা আছে, তোমার বাবা আছে তোমার জন্য। আর মিঠির জন্য তুমি আছ।’

আবোলতাবোল বলতে বলতে জাফরিন চোখ বন্ধ করে বলে ফেললো
‘আর এখন তার বিয়ে হয়ে গেছে, সে অন্য মেয়ের স্বামী। তার কথা এখন ভাবাটাও অন্যায় তাতো তুমি বোঝো, না?’

মিষ্টি একটু নড়ে উঠলো ‘কী হয়েছে আম্মু, কার বিয়ে হয়েছে?’

জাফরিন ভয়ে ভয়ে বললেন ‘কালকে রাতে সাবিহা বুর ছেলে প্রিন্সের কাবিন হয়ে গেছে, মিষ্টি। আর কাবিন মানেই তো বিয়ে। শুধু লোকদেখানো অনুষ্ঠানটাই হয়তো বাকি আছে।’

মিষ্টি চুপ করে থাকলো। কিছুই বললো না। জাফরিন আতঙ্কিত হয়ে ধাক্কা দিলো ওকে, মরিয়া হয়ে বললো ‘ঘুরতে যাবা মিষ্টি, তোমার আব্বু অনেকদিন ধরে বলছে – কক্সবাজার বেড়াতে যাবে। যাবা মা?’

‘যাব মা।’ আস্তে আস্তে জবাব দিলো মিষ্টি।

চলবে…

Afsana Asha
আগের পর্ব

https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2898915480337185/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here