তি_আমো,০৪,০৫

0
534

#তি_আমো,০৪,০৫
পর্ব ৪
লিখা- Sidratul Muntaz

চা খেয়ে বিদায় হলো ঈশান। চলে যাওয়ার সময় ভাইয়ার সাথে তার সে কি ভাব! একবার হ্যান্ডশেক করছে তো একবার কোলাকুলি। আমি বিরবির করে বললাম,” এসব করে কোনো লাভ নেই। আমার ভাইয়াকে পটানো এতো সহজ না।”

ঈশান জবাবে ফিসফিস করে বলল,” তোমার ভাইয়া অলরেডি পটে গেছে। এখন শুধু তোমাকে পটানোর অপেক্ষা।”

খুব মজার কৌতুক শুনলে মানুষ যেভাবে হাসে, আমিও ঠিক সেভাবে হাসলাম। মধুর স্বরে বললাম,” ভাইয়া পটবে আপনার উপর? অসম্ভব! শুনুন, আমার ভাইয়ার চোখ হলো শকুনের মতো ধারালো। মুখ দেখেই বলে দিতে পারে কার মধ্যে কি ঘাপলা আছে। আপনার মতো মুখোশধারীকে ভাইয়া জীবনেও পছন্দ করবে না। কোনো চান্সই নেই৷ দয়া করে দিবাস্বপ্ন দেখবেন না।”

ঈশান আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল,” এটা কোনো দিবাস্বপ্ন না। বাস্তব। আমি চলে যাওয়ার পর অন্তত একবার হলেও তোমার ভাইয়া আমার প্রশংসা করবে৷ মিলিয়ে নিও।”

আমি হাসতে হাসতে বললাম,” সো রিডিকিউলাস!”

ঈশানকে বিদায় করে সদর দরজা আটকে যখন আমি নিজের ঘরে যাচ্ছিলাম তখন শুনতে পেলাম ভাইয়া মায়ের সাথে বলছে, ” ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো মা। কি ভদ্র দেখেছো? আজ-কাল এমন ছেলে দেখাই যায় না! আমি দাঁড়ালে সেও উঠে দাঁড়ায়। আমি বসলে সে বসে। কথা-বার্তা থেকে যেন বিনয় ঝরে পড়ে।”

মা আগ্রহী কণ্ঠে বললেন,” দেখতেও সুন্দর। একেবারে রাজপুত্র।”

” এমন একটা ছেলের সাথেই তারুকে বিয়ে দিব।”

” এমন ছেলে আর কোথায় পাবি? এই ছেলের সাথেই দিয়ে দে না!”

” না মা! এই ছেলে তো তারুর স্যার! স্যারের সাথে ছাত্রীর বিয়ে আমার পছন্দ না। খুবই বাজে ধরণের ব্যাপার। শিক্ষক হচ্ছে পিতার সমতুল্য। শিক্ষকের সাথে আবার বিয়ে কিসের?”

আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাগ্যিস ঈশানকে স্যার বলেছিলাম! নাহলে ভাইয়া হয়তো সত্যি সত্যি বিয়ে ঠিক করে ফেলতো। আর আমি ভাইয়ার মুখের উপর কিছু বলতেও পারতাম না। আমি ঠিক করলাম, ভাইয়া আর মাকে কোনোদিনও বুঝতে দেওয়া যাবে না যে ঈশান আমার স্যার নয়৷ তবে একটা ব্যাপারে খুব অবাক হলাম। ঈশান যা বলেছিল তাই হয়েছে। ভাইয়া আসলেই ঈশানের প্রশংসা করেছে! আর শুধু কি একবার? এরপর থেকে প্রায়ই ভাইয়া সুযোগ পেলে ঈশানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। আমি ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে উঠলাম। মাত্র দশমিনিটের পরিচয়ে কেউ যে কারো প্রতি এতো ইমপ্রেস হতে পারে সেটা ভাইয়াকে না দেখলে আমি বুঝতাম না। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হলো। ওই ঈশান খুবই ধুরন্ধর মাল। যাকে বলে পাক্কা খিলাড়ী। মানুষের চোখে কিভাবে পট্টি পরাতে হয় সেটা তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। নিহাকেও সে পট্টি পরিয়ে রেখেছে। যে কারণে ঈশানের বিরুদ্ধে একটা নেগেটিভ কথা বললেও নিহা ছ্যাঁত করে ওঠে। মেকাপরুমে ঈশানই আমাকে কিস করেছিল এই কথাটা আমি এখনও বিশ্বাস করাতে পারিনি। নিহা প্রমাণ চায়। কিন্তু আমি প্রমাণ কোথায় পাব?

ভার্সিটির ক্যান্টিনে বিরস মুখে বসে আছি। আমার প্রিয় খিচুরী শেষ হয়ে গেছে। নিহার সাথে গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেছিল। এখন ক্যান্টিনে খাওয়ার মতো আছে ঠান্ডা সিঙ্গারা, সমুচা। আমার তাকাতেও ইচ্ছে করছে না, খাওয়া তো দূর! আজ মনে হয় ক্ষিদে পেটে নিয়েই বাকি ক্লাস করতে হবে। দশটাকা দিয়ে এনার্জি প্লাস বিস্কিট কিনে চিবাতে লাগলাম৷ হঠাৎ ক্যান্টিনের হামিদ ভাই আমায় ডাক দিলেন। আমি দৌড়ে গেলাম,” কি হয়েছে ভাইয়া? খিচুরী পাওয়া গেছে?”

” বসেন আপামণি। খিচুরী শেষ তো কি হইছে? আপনার জন্য গরম গরম কাচ্চি রেডি করছি।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,” কাচ্চি? না বাবা, অনেক দাম! এতো টাকা আমার কাছে নেই।”

” টাকা কে চাইল?”

আমি বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌঁছে বললাম,” টাকা লাগবে না?”

” না। আপনার জন্য ফ্রী। তয় একটা শর্ত আছে।”

” কি শর্ত?”

” এই জিনিসটা নিতে হবে।”

হামিদ ভাই আমার দিকে একটা খাম বাড়িয়ে দিলেন। আমি কপাল কুচকে বললাম,” এটা কি?”

” একটা ভাই আপনাকে দিয়েছে। চিঠিপত্র। আমাকে বলেছে ৫,০০০ টাকা বকশিশ দিবে। যদি এই চিঠি আপনি গ্রহণ করেন। প্লিজ, আপামণি। না কইরেন না। আমার ৫,০০০ টাকা মাইর যাইবো।”

আমি রাগে কটমট করে তাকালাম,” আপনার থেকে
এটা আমি আশা করিনি, হামিদ ভাই।”

হামিদ ভাই অপরাধী দৃষ্টিতে বললেন,” আমার বউ মানে আপনার ভাবী অনেক দিন ধইরা অসুস্থ। টাকাটা পাইলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাইতাম।”

” ঠিকাছে। আপনার ভাইকে বলবেন চিঠি আমি নিয়েছি। কিন্তু সে যেন কোনো উত্তর আশা না করে।”

হামিদ ভাইয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি চলে আসার সময় তিনি ডাকলেন,” আপামণি, বিরিয়ানি?”

” আপনি খান বিরিয়ানি।”

বাগানে এসে বড় একটি গাছের ছাউনির নিচে বসে আমি চিঠি খুললাম। যা ভেবেছি তাই, চিঠি এসেছে ঈশানের পক্ষ থেকে। এমন চিঠি ঈশান ছাড়া অন্যকেউ লিখতেই পারে না! তবে লোকটা খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। ঠিক করলাম আজ নিহাকে প্রমাণ সহ সব জানাব। তারপর দেখব অভদ্রম্যানের অভদ্রগিরি কোথায় যায়! চিঠিতে লেখা-

এই মিষ্টি হাসির মেয়ে,

তুমি কি জানো? তোমার হাসিটা কতটা মিষ্টি? আমার তো ইচ্ছে করে ওই মিষ্টি দিয়ে সন্দেশ বানিয়ে খেয়ে ফেলি। সাতক্ষীরার সন্দেশ। কিংবা সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, অথবা ধানসিঁড়ির দই। সবকিছুই ওই মিষ্টির কাছে হার মানবে। কি? অবাক হচ্ছো? ভাবছো ছেলেটা বোধহয় পাগল, এসব কি লিখেছে আবোল-তাবোল! হ্যাঁ, ঠিকই ভাবছো। আমি পাগল, ম্যাড, সাইকো। আর এই সবকিছুর জন্য দায়ী তুমি। তোমার ওই হাসি। সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।

খুব কি দরকার ছিল জোৎস্না রাতে ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে বারান্দায় আসার? তোমার চুলের সেই অবাধ্য ঝাপটাগুলো একটি নিরীহ ছেলের সর্বনাশ করে ফেলেছে,তার দায়ভার এখন কে নিবে শুনি? ছেলেটা যে পাগল হয়ে যাচ্ছে! কফি মগ হাতে বারান্দার হাঁটতে হাঁটতে তোমার আনমনে হেসে উঠার সেই অপরুপ দৃশ্য ছেলেটা যে ভুলতেই পারছে না! জানো সেদিন কাঠগোলাপের সুভাষের চেয়েও প্রকট ছিল তোমার ওই চুলের সুভাষ। যা অসহায় ছেলেটির জন্য তীব্র এক অত্যাচার, হাহাকার! প্রেমে না পড়ে কি উপায় আছে? তোমার চুলের প্রতিটি ভাজ যে এখন ছেলেটার কাছে একেকটি আফসোসের নাম। সেইরাতে জোৎস্না ঝড়ানো চাঁদের আলোও ফিকে পড়েছিল, তোমার ঝলমলানো হাসির কাছে। উদাসীন ভাবে যতবার তুমি কফিতে চুমুক দিচ্ছিলে, ছেলেটা ঈর্ষায় মরে যাচ্ছিল, ঈর্ষা করছিল কফি মগটিকেও। তুমি অন্য কিছুতে ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিচ্ছো এই দৃশ্য ছেলেটার কাছে যন্ত্রণার। সে যেমন তোমার প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, তেমনিই জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে! ইশ, ভালোবাসায় এতো জ্বলতে হয় বুঝি? আগে তো জানতাম না আমি।

কিভাবে বোঝাবো তোমায়? এ যন্ত্রণা যে বয়ে বেড়ানো দায়। বড্ড দায়! তাইতো লিখতে বসেছি। মনের অশান্ত অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আর সেই চেষ্টায় আমি কতটুকু সফল বুঝতে পারছি না। শুধু এইটুকু জানি, এই প্রথমবার আমি কারো প্রেমে পড়েছি। কারো মায়াবী চেহারার কল্পনায় মতো মগ্ন থেকে দীর্ঘরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। কারো মিষ্টি হাসির প্রেমে মনের জমানো আবেগ গুলো নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছি। এবার যে যখন তখন ইচ্ছে হয় চাঁদের আলোয় সেই স্নিগ্ধ মুখটা দেখার। মাদকময় সেই চুলের গন্ধে মাতাল হওয়ার। আরো অনেক কিছু ইচ্ছে হয় মিষ্টি মেয়ে।

কিন্তু এসব নিষিদ্ধ ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দেওয়ার সাহস আমার নেই। তবুও দুঃসাহসটা করে ফেলেছিলাম। নিহার এংগেজমেন্ট পার্টিতে মেকাপরুমে তোমাকে একা পেয়ে নিষিদ্ধ ইচ্ছেটা প্রকাশ করে ফেললাম।কোনোভাবে নিজেকে সামলাতেই পারলাম না! ওই মুহূর্তে যদি তোমাকে স্পর্শ না করতাম, তাহলে আমার মৃত্যু হতো নিশ্চিত! কিন্তু তুমি যে এতো ভয় পাবে এটা আমি বুঝতে পারিনি। এক্সট্রিমলি স্যরি!

তোমার প্রেমে পড়েছি মিষ্টি হাসির মেয়ে! মায়াবী মুখের ওই হাসিটা আমার এই বুকে ব্যথা হওয়ার কারণ। এই ব্যথা সারিয়ে তোলার দায়িত্বটা নিবে? তুমি ছাড়া যে আর কেউ পারবেই না! যদি তুমি দায়িত্বে অবহেলা করো, তাহলে সারাজীবন এই বুকের ব্যথা বয়ে বেড়াতে হবে। বড্ড কষ্ট হয়ে যাবে মিষ্টি মেয়ে! অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। বিশ্বাস না হলে আমার মনের শহরে একটিবার এসে ঘুরে যাও। কেমন আয়োজন করে ভালোবাসার বাগান সাজিয়ে রেখেছি, শুধু তোমার জন্য। আমার মিষ্টি হাসির জন্য!

তোমাতে মাতাল প্রেমিক।

চিঠিটা সম্পুর্ণ শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এতো লম্বা চিঠি! তাও চিঠি তো নয় যেন সস্তা আবেগের বস্তা। এতো আবেগ পায় কই মানুষ? নিহার কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হলো না। সে নিজেই আমার কাছে এলো। আমার হাতে বড় কাগজ দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,” কিরে, তুই কি করিস এই গাছতলায়?”

” আবেগের বস্তা উন্মোচন করছি।”

” এর মানে?”

আমি চিঠি এগিয়ে দিলাম নিহার কাছে। সেই চিঠি পড়ে নিহা হেসেই খু*ন! অনেকক্ষণ লাগিয়ে সে শুধু হাসল। আমি চুপ করে বসে রইলাম। একটু পর তার হাসি থামলে আমি বললাম,” এই চিঠি কে লিখেছে জানিস?”

” না। কে এই কাটপিস?”

” তোদের ভদ্রম্যান।”

” হোয়াট?”

নিহা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। চোখমুখ কুচকে বলল,” তুই কি মজা করছিস?”

” একদম না। বিশ্বাস না হলে হামিদ আঙ্কেলের কাছে চল। তার কাছেই ঈশান চিঠি দিয়ে গেছে। আমি এই চিঠি নিলে নাকি হামিদ ভাইকে সে ৫,০০০ হাজার টাকা দিবে। হয়তো দিয়েছেও।”

নিহা নাক-মুখ ফুলিয়ে বলল,” যদি তোর কথা সত্যি হয় তাহলে আমি আমার কান কেটে ফেলব।”

আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে বললাম,” তোর কান কি দোষ করল? আর এখানে কাট কাটার প্রসঙ্গ এলো কেন?”

” এমনিই। চল তুই।”

নিহা আর আমি ক্যান্টিনে পৌঁছালাম। নিহা তার ফোন থেকে ঈশানের ছবি বের করে হামিদ ভাইকে দেখিয়ে প্রশ্ন করল,” ভাই, দেখুন তো! এটাই কি সেই ছেলে যে চিঠি দিয়েছিল?”

হামিদ ভাই কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললেন,” না, না, উনি না।”

আমি চমকে উঠলাম। নিহা গরম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। তারপর আবার হামিদ ভাইকে জিজ্ঞেস করল, ” তাহলে কে ছিল? আপনি বলতে পারবেন?”

” চিনি না। তবে উনি যে ছিল না এটা শিউর।”

” আপনি নিশ্চিত? ”

” অবশ্যই!”

আমার মাথা দুলতে লাগল। এটা কিভাবে হয়? চিঠি অবশ্যই ঈশান পাঠিয়েছে। ব্যাগে যে আমি পায়েল লাগানো চিরকুট পেয়েছিলাম, সেই চিরকুটের লেখার সাথে এই লেখার খুব মিল। নিহা আমার কাছে এসে বলল,” না জেনে-শুনে কাউকে ব্লেইম করা উচিৎ না, তারু। তুই ঈশান ভাইয়াকে এতো সন্দেহ করিস কেন বলতো?”

আমি কিছু বলতে পারলাম না। এই মুহূর্তে অসম্ভব রাগ হচ্ছে মানুষটির উপর। ভেবেছিলাম চিঠির কোনো উত্তর লিখব না। কিন্তু রাগের মাথায় এবার লিখে ফেললাম,

“মাননীয় আবেগচন্দ্র,

এতো আবেগ নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিতে এই প্রথম আপনাকেই দেখলাম। সত্যি, ধোঁকা দেওয়ার বিষয়ে আপনার জুড়ি মেলা ভার! আর আপনার বস্তাপচা আবেগমার্কা চিঠিটায় চোখ বুলিয়ে আমার কি মনে হয়েছে জানেন? আপনার আসলে মজনু না হয়ে ময়রা হওয়া উচিৎ ছিল। কারণ মিষ্টি সম্পর্কে আপনার বেশ ভালো জ্ঞান আছে। সাতক্ষীরার সন্দেশ, সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, ধানসিঁড়ির দই, বাহ, কত জ্ঞান! আচ্ছা আপনি একটা কাজ করছেন না কেন? বিরাট একটা মিষ্টির দোকান খুলে বসুন। সেই দোকানের নাম হবে ” হাসি দিয়ে তৈরি মিষ্টি।” সকল জেলার বিখ্যাত বিখ্যাত মিষ্টির সমাবেশ থাকবে সেখানে। মেয়েরা হাসবে। আর আপনি সেই হাসি থেকে মিষ্টি নিয়ে সন্দেশ বানাবেন। আর তা যদি না হয়, আপনার কাছে আরেকটা অপশন আছে। মালীর পদেও আপনাকে বেশ ভালো মানাবে। মনের শহরে ভালোবাসার বাগান না সাজিয়ে, নিজের শহরে একটা ফুলের বাগান সাজান। পরিবেশবান্ধব হবে। এতেও ঢের লাভ আছে। অন্তত আপনি কোনো একটা কাজ নিয়ে তো ব্যস্ত থাকতে পারবেন! তখন আর আপনার মাথায় এসব সস্তা আবেগ আর আসবে না। আপনি প্রেমে সাইকো হোননি। প্রেমে কেউ সাইকো হয়না। আজাইরা বসে থাকার কারণে আপনার সাইকো প্রবলেম দেখা দিচ্ছে। আর জানেনই তো! কথায় আছে ” অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। তাই বসে না থেকে কাজ করুন। এসব আবেগের ভূত ঝেরে ফেলুন। ফ্রীতে অনেক এডভাইস দিয়ে দিলাম মিঃ আবেগচন্দ্র! কাজে লাগিয়ে দেখবেন, ফলাফল আসতে বাধ্য। আর ধোঁকাবাজির স্বভাবটা ছাড়ুন। ভদ্রতার মুখোশ পরে মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

চিঠি তো লিখে ফেললাম। এখন কথা হচ্ছে, পাঠাবো কিভাবে? হামিদ ভাইয়ের কাছে দিয়ে দিবো নাকি?

চলবে

#তি_আমো
পর্ব ৫
লিখা- Sidratul Muntaz

হামিদ ভাইয়ের কাছে চিঠি দিয়ে আমি বাড়ির পথে রওনা হলাম। নিহা আমার পেছনে ছুটে এসে বলল,” চল তোকে ড্রপ করে দেই। গাড়িতে ওঠ।”

আমি ম্লান হেসে বললাম,” লাগবে না। আমার জন্য বাসই পারফেক্ট।”

” তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস, তারু?”

” না। রাগ করব কেন? কিন্তু তুই আমাকে অবিশ্বাস করছিস, এই ব্যাপারটা আমি মানতে পারছি না।”

নিহা অসহায় সুরে বলল,” কিভাবে বিশ্বাস করি বল? তুই যেটা বলছিস সেটা প্রায় অসম্ভব কথা। চিঠিতে লেখা ছিল, ছেলেটা তোকে মেকাপরুমে স্পর্শ করেছে। অর্থাৎ এটাই সেই অসভ্যটা। ঈশান ভাইয়ার সাথে এমন আচরণ মোটেও যায় না৷ তার দ্বারা এই গর্হিত কাজ অসম্ভব।”

” নিহা, সে নিজে আমার কাছে স্বীকার করেছে!”

নিহা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নেওয়ার মতো বলল,” আচ্ছা বিশ্বাস করলাম। এটা ঈশান ভাইয়াই ছিল৷ এবার খুশি? গাড়িতে ওঠ প্লিজ।”

আমি জবাবে সামান্য হাসলাম। নিহা মন থেকে আমাকে বিশ্বাস করেনি সেটা তার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি নিহার হাত ছেড়ে চলে এলাম বাসস্ট্যান্ড। আমাদের এলাকার বাজারের গলিতে বাস থামল। আমি ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম। আচমকা খেয়াল করলাম আমার পেছনে একটা লম্বা ছায়া। অনেকক্ষণ ধরে পেছনেই হাঁটছে। আমি ঘুরে তাকালাম। ঈশানকে দেখেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। সাথে মেজাজটাও হয়ে গেল গরম। রেগে-মেগে বললাম,” আপনার প্রবলেম কি? এখন আবার আমাকে ফলোও করছেন?”

ঈশান চোখমুখ কুচকে গম্ভীরভাবে বলল,” তোমাকে ফলো করব কেন? আমার বাসাও তো এখানেই। এই গলির পরের গলিতেই!”

” ফাজলামি করেন? তখন বিপদে পড়ে আপনার সাহায্য নিয়েছিলাম। এজন্য আপনি বার-বার সুযোগ নিতে পারেন না। চলে যান এখান থেকে। ”

” তুমি যেন আমাকে কি বলো? অসভ্য! আচ্ছা, অসভ্য মানুষ কি কারো কথা শোনে?”

আমি ধৈর্য্য হারালাম। নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,” প্লিজ আপনি এমন করবেন না৷ এটা আমার এলাকা। আমার একটা রেপুটেশন আছে। মানুষ যদি আপনাকে আমার সাথে এভাবে হাঁটতে দেখে তাহলে ব্যপারটা ভাইয়ার কানে যাবে। তারপর ভাইয়া আমার ভার্সিটিও যাওয়া বন্ধ করে দিবে। আপনি কি তাই চান?”

” না। কিন্তু আমি যেটা চাই, সেটাও তো পাচ্ছি না!”

আমি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,” কি চান আপনি?”

” এভাবে তাকালে তো বলা যাবে না। একটু কোমলভাবে তাকাও!”

আমি দাঁতে দাঁত পিষে বললাম,” আপনার মতো নির্লজ্জ আমি আর একটাও দেখিনি।”

” আমিও তোমার মতো সুন্দরী আর দেখিনি!”

আমি ক্রোধে আগের চেয়েও দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। ঈশানও আমার পিছু পিছু একই তালে আসতে লাগল। অসহ্যকর! মাঝপথে দেখা হলো সাদ্দাম আঙ্কেলের সাথে। ভাইয়ার সঙ্গে ভদ্রলোকের ভালো সম্পর্ক। আমাকে দেখতে পেয়েই হেসে বললেন,” কেমন আছো, তারিন?”

আমিও হেসে উত্তর দিলাম,” জ্বী আঙ্কেল, এইতো ভালো। ”

সাদ্দাম আঙ্কেল আঁড়চোখে ঈশানের দিকেও তাকালেন। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করলেন না। তিনি চলে যেতেই ঈশান বলল,” কে ছিল?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,” এটা আপনাকে কেন বলব?”

” থাক বলার দরকার নেই। আমি শুনতেও চাই না। কিন্তু যেটা শুনতে চাই সেটা অন্তত বলো!”

আমি অবজ্ঞার হাসি হাসলাম,” কোনোদিনও বলবো না।”

ঈশান আত্মবিশ্বাসীর হাসি হাসল,” সময় হলে ঠিকই বলবে।”

গলির মুখে দেখতে পেলাম ইমরান চাচাকে। উফ, আজকেই কেন সব পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে? আমি মুখ লুকিয়ে চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু ইমরান চাচা আমাকে দেখে ফেললেন। উচ্চস্বরে ডাকলেন,” তারিন না?”

আমাকে ভদ্রতাবশত থামতে হলো। বিনয়ী হেসে বললাম,” জ্বী, চাচা। ভালো আছেন?”

” কেমনে আর ভালো থাকি কও? বারোশো টাকা বাকি ছিল। সেটা তো এখনও দিলা না।”

ঈশানের সামনে টাকার কথা বলায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল আমার। ইমরান চাচার এই একটা বাজে স্বভাব। দেখা হলেই টাকার কথা মনে করিয়ে দিবেন। আরে যখন সময় হবে তখন তো টাকা এমনিতেই দিব। এতোবার বলার কি আছে? ঈশান প্রশ্ন করল,” কিসের টাকা?”

” আপনাকে জানতে হবে না। সব বিষয়ে নাক গলাতে আসবেন না। ওয়েল ইউর ওউন মেশিন।”

ঈশান ইমরান চাচার দিকে এগিয়ে গেল। ওয়ালেট থেকে বারোশো টাকা বের করে চাচার হাতে দিতে দিতে বলল,” এই নিন টাকা। সামান্য কয়টা টাকার জন্য রাস্তাঘাটে এভাবে অপমান করবেন নাকি?”

ইমরান চাচা লজ্জিত গলায় বললেন,” স্যরি। টাকাটা অনেক দিন ধইরা বাকি ছিল।”

” এরপর থেকে বাকি থাকলে আমাকে বলবেন। নাম্বার রেখে দিন।”

” জ্বে।”

ইমরান চাচা নাম্বার নেওয়ার জন্য ফোন বের করলেন। আমি সাথে সাথে বললাম,” খবরদার, এই টাকা আপনি নেবেন না। কি হচ্ছে এসব? আপনি আমার টাকা কেন দিবেন?”

ঈশান নির্বিকার ভাবে বলল,” দিতেই পারি!”

” না দিতে পারেন না। চাচা, আপনি উনার টাকা উনাকে ফেরত দেন।”

ইমরান চাচা টাকা পকেটে ভরতে ভরতে বললেন,” আবার ফেরত দিমু ক্যান? তুমি উনার টাকা উনারে দিয়া দিও। এইডা আমার টাকা আমি নিয়া গেলাম।”

ইমরান চাচা সত্যি সত্যি টাকা নিয়ে চলে গেলেন। আমি ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে ঈশানকে বললাম,” আপনি এসব কেন করছেন?”

” তোমার জন্য।”

” যদি ভাবেন এসব করলেই আমাকে পাবেন তাহলে খুব ভুল ভাবছেন। আমি এতো সস্তা না।”

” জানি। তুমি খুব দামী।”

আমি মুচকি হেসে বললাম,” আর আপনি খুব ছ্যাঁচড়া! সেটা কি জানেন?”

” দামী জিনিস পেতে গেলে একটু ছ্যাঁচড়া হতে হয়!”

আমি বিরবির করে বললাম,” ছ্যাঁচড়া, ছ্যাঁচড়া, ছ্যাঁচড়া!” তারপর একবারের জন্যেও পেছনে না তাকিয়ে গটগট করে হেঁটে বাড়িতে ঢুকলাম৷

পরদিন নিহা খুব সাজগোজ করে আমাদের বাড়ি এলো। সে আমাকে কোথায় একটা নিয়ে যেতে চায়। ছুটির দিন ছিল৷ ভাইয়াও বাড়িতে। এই দিনে আমার জন্য বের হওয়া নিষিদ্ধ! কিন্তু নিহা নাছোড়বান্দা। সরাসরি ভাইয়ার কাছে অনুমতি চাইতে গেল। আমি তো ভয়েই অস্থির। না জানি কখন ভাইয়া নিহাকেই ধমক দেয়। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। ভাইয়া যেতে দিতে রাজি হলো। আমার দিকে চেয়ে শান্ত সুরে বলল,” দ্রুত ফিরিস।”

নিহা আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,” কিরে? তোর ভাই নাকি রাঘব বোয়াল? দেখলি আমার সামনে কেমন চুনোপুঁটি হয়ে গেল?”

” হুম দেখলাম। কিন্তু ফিরে আসার পর আমাকে ঠিকই জেরা করবে।”

” তোকে দেখলে পলিনের কথা খুব মনে পড়ে।”

” পলিন কে?”

” আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের একটা পিচ্চি। ক্লাস টু এ পড়ে।”

” আমাকে দেখলে ওর কথা মনে পড়ে কেন?”

” কারণ ওর অবস্থাটা ঠিক তোর মতোই। বাসা থেকে বের হতে নিলে জনে জনে অনুমতি লাগে।”

” মজা নিচ্ছিস?”

নিহা হাসতে হাসতে বলল,” তোকে দেখলে মনেই হয় না ইউনিভার্সিটিতে পড়িস। ক্লাস টু এর বাচ্চারও তোর চেয়ে বেশি ফ্রীডম আছে।”

আমি মৃদু হেসে জানালায় তাকালাম। সবার জীবন তো আর এক হয় না। নিহা চাইলেই গাড়ি নিয়ে যখন তখন সাজেক, সিলেট ঘুরতে চলে যেতে পারে। ইচ্ছেমতো পছন্দের কাউকে চাইলেই বিয়ে করতে পারবে। আর আমি? পাড়ার দোকানে গেলেও অনুমতি লাগবে। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে তো দূর, কারো সাথে কথা বলতে গেলেও ভাবতে হবে। তবুও আমার ধারণা, এভাবেই আমি ভালো আছি। এই জীবনটা আমার জন্যই।

” আচ্ছা, আমরা যাচ্ছি কোথায়?”

নিহা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,” গেস কর!”

” তোদের বাসায়?”

” উহুম। মোহনা আন্টির বাসায়।”

আমি থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম, ” মানে কি? ঈশানদের বাড়ি?”

” অফকোর্স! ”

” গাড়ি থামা। আমি যাব না।”

” আরে, কেন?”

” এমনি। আমি যাব না মানে কোনোভাবেই যাব না।”

” যদি বলি মোহনা আন্টি তোকে দাওয়াত করেছে তাহলেও কি যাবি না?”

” শুধু মোহনা আন্টি কেন? প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত করলেও আমি যাব না।”

” আজব তো! এমন করছিস কেন?”

” কেন এমন করছি সেটা তুই জানিস।”

নিহা চোখ বড় করে বলল,” বেশি হচ্ছে তারু। শুধু সন্দেহের বশে তুই ঈশান ভাইয়াকে যথেষ্ট ভুল বুঝছিস।”

” সন্দেহের বশে না। তিনি আমার সাথে কাল কি কি করেছেন বললে তুই অবাক হয়ে যাবি।”

” কি করেছেন?”

আমি সবকিছু বললাম। কিন্তু নিহা বিশ্বাস করল না। তার বক্তব্য হলো ঈশানের হাতে এতো সময় নেই যে আমার পিছে ঘুরবে। কিন্তু আমি নিহাকে কিভাবে বোঝাই? ঈশানকে সে যেমন ভাবছে, ঈশান ঠিক তার বিপরীত!

ঈশানরা যে এতো বড়লোক হবে তা আমি কল্পনাও করিনি। বাড়িটা পুরো রাজপ্রাসাদের মতো। আগে ভাবতাম নিহাদের বাড়িই বুঝি ঢাকা শহরের সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি। কিন্তু এখন আমার ধারণা বদলে গেল। ঈশানদের বাড়ি আরও অনেক সুন্দর, আলিশান! কিন্তু ভাবনার বিষয়, এতো অবস্থাপন্ন ছেলে হয়েও ঈশানের আচরণ কেন ছ্যাঁচড়ার মতো? সে আমার পেছনে কেন চুইংগামের আঠার মতো লেগে আছে? হয়তো আমি পাত্তা দিচ্ছি না বলেই! বড়লোকের একমাত্র ছেলেদের মাঝে ইগো নামক জিনিসটা খুব বেশি থাকে। আমার মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ের থেকে পাত্তা না পেয়ে ঈশানের আঁতে ঘা লেগেছে। এজন্যই সে আমার পেছনে পড়ে আছে। আবেগমাখা চিঠি লিখে হৃদয় গলাতে চাইছে। কিন্তু আমিও আশফীয়া তারিন। আমাকে পাওয়া এতো সহজ নয়। আট-দশটা আবেগজড়িত শব্দ লিখেই আমাকে জয় করা যায় না।

আমি নিহার সাথে ড্রয়িংরুমে বসলাম। পুরো রুম কাঁচের দেয়ালে আবৃত। বাইরে দৃশ্যমান সবুজ বাগান। তবে স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালে জলীয় বাষ্প জমে থাকায় ঝাপসা হয়ে আছে। বাইরের দৃশ্য ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। ঘরে এসি চলছে। ড্রয়িংরুমেও তিনটা এসি। বড়লোক মানুষের সব বড় বড় ব্যাপার। অবশ্য এতো বিশাল রুমে তিনটা এসিও কম মনে হচ্ছে। তবে ঘরটা বরফশীতল। কটকটে রোদ পড়া এই গরমের দিনেও আমি শীতে কাঁপছি। মোহনা আন্টি গোসলে গেছেন। আমাদের অপেক্ষা করতে বলে গেছেন। হঠাৎ নিহার ফোন এলো৷ সাফিন ভাইয়ার সাথে কথা বলতে নিহা বাগানে চলে গেল। আমি একা বসে রইলাম।

কাজের মেয়ে এসে বাহারি নাস্তা দিয়ে গেল।মেয়েটিকে দেখে অবাক হলাম। এতো মিষ্টি চেহারা! গায়ের রঙ ফরসা, লম্বা চুল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,” নাম কি তোমার?”

” বিসমি।”

” সুন্দর নাম। তুমিও খুব সুন্দর। ”

” থ্যাংকস।”

আমি অবাক হলাম। মেয়েটি এতো সুন্দর ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ কিভাবে করল? লেখাপড়া করে নাকি? আমি জিজ্ঞেস করলাম,” পড়াশুনা করো?”

মেয়েটি বলল,” জ্বী। আমি ক্লাস নাইনে পড়ে।”

বড়লোকের বাড়িতে কাজের মেয়েও কত স্মার্ট! ওই মেয়ের পরে থাকা জামাটা আমার গায়ের জামার চেয়েও দামী। একটু মনখারাপ হচ্ছিল। ইশ, আমরাও যদি ঈশানদের মতো বড়লোক হতাম! এই প্রথমবার নিজের জীবন নিয়ে খুব আফসোস হলো আমার।

কিছুক্ষণ পর বিসমি এসে বলল,” আপু, আপনাকে উপরে যেতে বলেছে।”

” ওকে। কিন্তু কোনদিকে যাব?”

” আমার সাথে চলেন।”

বিসমি আমাকে একটা সুন্দর ঘরে নিয়ে এলো। ঘরটিতে একটি পরিচিত সুগন্ধ ছড়িয়ে আছে। আমি চট করে ধরে ফেললাম গন্ধটা। কারণ এই সুগন্ধ আমি সহজে ভুলব না। অবাক হয়ে বললাম,” এটা কার ঘর?”

” ভাইজানের।”

আমি যারপরনাই বিস্মিত হলাম,” তুমি আমাকে এখানে কেন এনেছো?”

” কারণ ভাইজান আপনাকে আনতে বলেছেন। আপনি বসেন আপু।”

” বসব না। তুমি যদি আমাকে আগে বলতে তাহলে আমি তোমার সাথে আসতামই না।”

” আপনি তো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। কিভাবে আগে বলব?”

” জিজ্ঞেস করিনি কারণ আমি ভেবেছিলাম আমাকে মোহনা আন্টি ডাকছেন।”

” ম্যাডাম তো বাড়িতে নেই। তিনি কিভাবে ডাকবেন?”

আমার গলা শুকিয়ে গেল,” বাড়িতে নেই মানে?”

” নিহা আপা আর ম্যাডাম শপিং করতে গেছে। একটু পরেই চলে আসবে।”

” আমাকে না বলে নিহা শপিংয়ে চলে গেল? আশ্চর্য তো!”

” বাড়ির কাছেই শপিংমল। আর আপনাকেও নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাইজান নিষেধ করলেন।”

আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম,” ভাইজান নিষেধ করল কেন?”

” আমি কি জানি? ভাইজানকেই জিজ্ঞেস করেন।”

” বিসমি, তুমি আমার পাশে বসে থাকো। যেও না।”

বিসমি আমার পেছনে তাকিয়ে বলল,” স্যরি আপা। আমাকে যেতে হবে। রান্নাঘরে কাজ আছে।”

বিসমি এক দৌড়ে বের হয়ে গেল। আমি পেছনে ঘুরে দেখলাম ঈশান দাঁড়িয়ে আছে। আত্মা ছ্যাঁত করে উঠল। শুকনো করে একটা ঢোক গিলে বললাম,” কি ব্যাপার?”

ঈশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,” কোনো ব্যাপার না।”

” তাহলে আমাকে ডেকেছেন কেন?”

” দেখার জন্য।”

” মানে?” আমার কণ্ঠ কাঁপছে। কি অদ্ভুত! আমার সবসময়ের মতো আর রাগ লাগছে না; ভয় লাগছে। ঈশান কাছে আসতে আসতে বলল,

” চিঠিতে কি লিখেছিলে? আমাকে মালীর পদে ভালো মানাবে? সত্যি?”

চিঠির ব্যাপারে তো ভুলেই গেছিলাম। ঈশান কি এজন্যই এসব করছে? আমি পিছিয়ে যেতে যেতে বললাম,” না।”

” না কেন? ঠিকই তো বলেছো, আমার মালী হতে আপত্তি নেই। কিন্তু যেন তেন বাগানের মালি হবো না। আমি হবো এই চমৎকার বাগানের মালী।”

” কি বললেন? আমি বাগান?”

” হ্যাঁ। সাজানো ফুলের বাগান। এমন রেডিমেট বাগান থাকতে অন্য জায়গায় বাগান করতে কেন যাব?”

আমি পেছাতে পেছাতে অনেকটা দরজার কাছে চলে এসেছি। ঈশানও অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। আমার মতলব হলো দরজার কাছে গিয়েই একটা খিচে দৌড় দিব। কিন্তু আমার সেই আশাকে ধোঁয়াশায় পরিণত করে ঈশান পা দিয়ে জোরে দরজায় ধাক্কা মারল। সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। একই সাথে বন্ধ হলো আমার নিশ্বাসও।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here