#তি_আমো,৩৯,৪০
পর্ব ৩৯
লিখা- Sidratul Muntaz
মাইক্রোবাসে আমি আর ঈশান পাশাপাশি বসেছি। আমার আসন জানালার সাথে। ঈশান ঠিক আমার গা ঘেঁষেই বসা৷ তার পাশে সাফিন ভাই আর সাফিন ভাইয়ের পাশে নিহা৷ আমাদের সারিটা সবচেয়ে পেছনে। সামনের সারিতে বসেছেন মোহনা আন্টি, মা, রুবা আন্টি আর নাশফী আপু। তারপরের সারিতে বাকি মেয়েরা। আর একদম সামনে ড্রাইভারের পাশে ফাহিম ভাই আর বুড়ি একসঙ্গে বসেছে। বাকিরা অন্য গাড়িতে যাচ্ছে। আজ আমরা সবাই একসঙ্গে বেরিয়েছি মোহনা আন্টির গেস্ট হাউজ পরিদর্শন করতে।
ফাহিম ভাইয়ের সাথে বুড়ির এই দুইদিনে বেশ ভালো খাতির জমে গেছে। বুড়ি প্রায়ই আমার কাছে এসে বলছে, ” পোলাডা ভালোরে! আমার একটা নাতনি থাকলে হেরেও নাতজামাই বানায় লাইতাম।”
বুড়ির শখ দেখে আমি সবসময়ের মতোই ভিমড়ি খেলাম। ফাহিম ভাই অবশ্য ইচ্ছে করেই বুড়ির সাথে খাতির জমিয়েছে। হাঁটতে গিয়ে বুড়ির পায়ে ব্যথা হলে ফাহিম ভাই বলেছে, “আমার কাঁধে হাত রেখে হাঁটুন দাদী। ” গাড়িতে উঠলে প্রায়ই বুড়ির বমি হয়। ফাহিম ভাই সেজন্য হাতে পলিথিন নিয়ে বসে আছে। পলিথিনগুলো মূলত আনা হয়েছে মোহনা আন্টির জন্য। মোহনা আন্টির শরীর ভালো নেই। তিনি সকালেও বমি করেছিলেন। গাড়িতে আবার বমি করতে পারেন। মাঝে মাঝেই বুড়িকে ফাহিম ভাই প্রশ্ন করছে, ” আপনার খারাপ লাগছে না তো দাদী? খারাপ লাগলে বলবেন। গাড়ি সাইড করা যাবে।” ফাহিম ভাইয়ের আচরণে মাও মুগ্ধ। কিন্তু ঈশান ক্ষুব্ধ। আমি যখন ফিসফিস করে ঈশানকে বললাম,” দেখেছেন, ফাহিম ভাই সবার কত খেয়াল রাখছে?”
ঈশান বিড়বিড় করে বলল,” সবার খেয়াল কই রাখছে? শুধু তোমার পরিবারের খেয়াল রাখছে। এটেনশন পেতে চায়।”
ঈশানের কথার অর্থ বুঝলাম না আমি। মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম,” মানে?”
ঈশান বড় শ্বাস ছেড়ে পানসে কণ্ঠে বলল,” সে তোমাকে মুগ্ধ করতে চায়, তোমার এটেনশন চায়।”
আমি চোখ সরু করে তাকালাম। আমার বামহাত ঈশানের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললাম,” আমার আঙুলে আপনার পরানো আংটি। গতকাল ফাহিম ভাইয়ের সামনেই আমাদের এংগেজমেন্ট হলো। তবুও সে আমাকে কেন মুগ্ধ করতে চাইবে? এর পেছনে কি কোনো লজিক আছে?”
ঈশান মুচকি হাসল আমার কথায়। চোখেমুখে একটা কাব্যিক ভাব ফুটিয়ে তুলে কিছুটা সুর দিয়ে বলল,” ডার্লিং, ভালোবাসায় থাকে না কোনো যুক্তি। ভালোবাসার আসল নাম হলো মুক্তি।”
আমি হাসলাম। কিছু সময় ভেবে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললাম,” এর মানে ফাহিম ভাই আমাকে ভালোবেসে মুক্তি দিয়েছেন। যেন আমি নিজের ভালোবাসার কাছে যেতে পারি। এটাই কি বলতে চাইছেন?”
ঈশান মাথা নেড়ে বলল,” অনেকটা তাই।”
” একজন আমাকে এতো ভালোবাসছে এতে কি আপনার ঈর্ষা হয় না?”
” ঈর্ষা তখনি হবে যখন ব্যাপারটা আমি মানতে পারব না। কিন্তু আমি তো মেনে নিয়েছি! আমি জানি, আমার তারিন এতো বেশি স্পেশাল যে তাকে ভালোবাসতে কারণ লাগে না। সমগ্র পৃথিবীও যদি তোমাকে ভালোবাসে তাও আমি ঈর্ষা করব না। বরং গর্বিত হবো। কারণ আমি তোমাকে পেয়েছি, অন্যরা পায়নি। পার্থক্যটা বুঝতে পারছ?”
আমি মুগ্ধ হওয়ার ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টালাম। বললাম, ” বাহ, ইমপ্রেসিভ! এর মানে আমাকে পেয়ে আপনি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করেন?”
” ধন্য মনে করছি। কোনো সন্দেহ আছে?”
ঈশান আমার চোখের দিকে তাকাল। আমিও একইভাবে চেয়ে থেকে বললাম,” না। কোনো সন্দেহ নেই।”
ঈশান সাথে সাথে একহাত দিয়ে বাউন্ডারির মতো আমার কোমর জড়িয়ে আমার কপালে চুমু দিল। আমি আতঙ্কিত গলায় বললাম,” সবাই দেখবে।”
যদিও দেখার মতো কেউ নেই। কারণ আমরা পেছনের দিকে আছি। সামনের কেউ অপ্রয়োজনে এদিকে তাকাবে না। ঈশানের পাশে সাফিন ভাই আর নিহা ইয়ারফোন শেয়ার করে মোবাইলে ভিডিও দেখছে। দু’জনের মনোযোগ খুবই গাঢ়। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ঈশান। সে শুধু আমার কপালে চুমু দিয়েই থেমে থাকল না। গালে, চোখে, গলায় এমনকি ঠোঁটেও চুমু দিয়ে ফেলল। আমি বাঁধা দিয়ে বললাম,” ঈশান, স্টপ।”
আমার সেই কথাটাই শুনে ফেললেন সাফিন ভাই। ঠট্টার সুরে কাশলেন। ঈশান আমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসল; একদম ভালো মানুষের মতো। আমিও জানালার দিকে চেয়ে রইলাম একধ্যানে। যেন কিছুই হয়নি। সাফিন ভাই সকৌতুকে ঈশানের কাঁধে হাত রেখে বললেন,” তোরা বিয়ে কবে করছিস?”
ঈশান কিছু বলার আগেই নিহা বলল,” যখনই বিয়ে করুক, তোমার কি? এদিকে দেখো।”
সাফিন ভাই ইঙ্গিত দেওয়ার মতো ফিসফিস করে বললেন,” ঈশানের তাড়া দেখে আমার টেনশন হচ্ছে তো। কখন কি ঘটে যায়..”
কথাটা শুনতে পেয়েই ঈশান তাকাল। সাফিন ভাইয়ের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। নিহা লজ্জিত কণ্ঠে বলল,” ঘটলে ঘটবে। তোমার কি তাতে?”
” আরে, একটা দায়িত্ব আছে না?”
” এতো দায়িত্বশীল হওয়ার দরকার নেই।”
আমার মনে হলো, দ্বিতীয়বার আমি সাফিন ভাইয়ের চোখের দিকেও আর তাকাতে পারব না। এতো অস্বস্তি লাগছিল। ইশ! সাফিন ভাই আবারও বললেন,” এখানেই বিয়েটা করে ফেল না!”
ঈশান ভ্রু কুচকে বলল,” মানে? গাড়িতে কিভাবে বিয়ে করব?”
নিহা হেসে উঠল ঈশানের উত্তর শুনে। সাফিন ভাই গম্ভীর মুখে বললেন,” আরেহ, গাঁধা! গাড়িতে বিয়ে করতে বলিনি। বলছি সিলেটেই বিয়ে করে ফেল। আমরা সবাই তো আছিই।”
মোহনা আন্টি পূর্ণ সম্মতিতে বলে উঠলেন,” আইডিয়াটা কিন্তু বেস্ট!”
আমার মুখ মলিন হয়ে গেল। ঈশান আঁড়চোখে একবার আমাকে দেখে নিয়ে বলল,” এটা সম্ভব না।”
” কেন?” সাফিন ভাইয়ের সরল প্রশ্ন। ঈশান উত্তর দিল স্পষ্টভাবে,” তারিন তার ভাইয়ের এবসেন্সে বিয়ে করবে না।”
সাফিন ভাই আমার দিকে দূর্বোধ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” আচ্ছা তারু, তোমার ভাই আছেটা কোথায়?”
মায়ের মুখটা দেখলাম অন্ধকার হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগেও মা হাসছিল। আমি বিব্রত কণ্ঠে বললাম,” জানি না। তবে ভাইয়া দ্রুত ফিরে আসবে।”
সাফিন ভাই আর কিছু বললেন না। সবাই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল।
গাড়ি থেকে নেমে আমরা অবাক। ভীষণ সুন্দর রাস্তা। অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। কারণ এই জায়গা দিয়ে বড় গাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। গেস্ট হাউজের সামনে বিশাল বড় ঝিল। ঝিলের উপর দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ। সেই ব্রীজ দিয়েই হাঁটছি আমরা। পাশে তাকালেই স্বচ্ছ, টলটলে পানির স্রোত। মৃদু বাতাসে দুলছে সমীরণ। আমার আশ্চর্য লাগে। এতো সুন্দর কেন প্রকৃতি? ঈশান আমার হাত ধরে ব্রীজ পার হচ্ছিল। সে আমাকে দুইবার প্রশ্ন করল,”তোমার ভয় লাগছে না তো?”
আমি অতি সহজ গলায় বললাম,” ভয় কেন লাগবে?”
” ধরো, যদি ব্রীজ ভেঙে যায়!”
” কপাল খারাপ হলে ব্রীজ ভাঙতেও পারে। ভয় পেয়ে তো আর লাভ নেই।”
ঈশান নিরস কণ্ঠে বলল,” তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন তারিন? তোমার উচিৎ ভয় পেয়ে আমাকে একটু পর পর জড়িয়ে ধরা।”
আমি জোরে হেসে উঠে বললাম,” ইশ, একগাদা মানুষের সামনে এতো ন্যাকামি করতে পারি না আমি। তবে আপনি চাইলে আমি আপনাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরব৷ ভয় পেয়ে কেন?”
ঈশান আমার কানে ফিসফিস করে বলল,” তাহলে সবসময় ভালোবাসতে হবে।”
আমি আবার হাসতে লাগলাম৷ গেস্ট হাউজের অনেকটা কাছে চলে আসার পর নিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,” আচ্ছা দোস্ত, এখানে যারা থাকে তাদের কি আমরা চিনি? তুই তো বলেছিলি এই বাড়িটা কেনা হয়েছে!”
নিহা উত্তরে বলল,” হ্যাঁ কেনা হয়েছে। কিন্তু যিনি কিনেছেন তিনি এইখানে থাকেন না। তাঁর কেয়ার টেকারই এই বাড়ির দেখা-শুনা করে।”
” ও আচ্ছা।”
আমরা দরজায় কড়া নাড়লাম। একজন মধ্যবয়স্ক লোক দরজা খুললেন। বসার ঘরে আমরা একটা পিচ্চিকে দেখলাম। আর একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বিছানায় বসে সোয়েটার বুনছেন। আমাদের দেখে তারা সবাই সালাম দিল। মোহনা আন্টি নিজের পরিচয় দিতেই মধ্যবয়স্ক লোকটি হাসিমুখে সবাইকে ভেতরে আসতে বললেন। আমরা সবাই ঘরটি দেখে বিস্ময়ে শব্দ করতে লাগলাম। এতো সুন্দর ঘর! খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। একদম বিদেশের মতো। উপরে দুইটা ঘর আছে। নিচে বড় ড্রয়িং, ডাইনিং আর রান্নাঘর। সবকিছুই কাঠের। হাঁটলে ঠকাঠক শব্দ হয়৷ একদম যেন ড্রিম হাউজ। আমার খুব ভালো লাগছিল। ঈশান আমার হাত ধরে বলল,” উপরে চলো।”
” উপরে কি?”
নিহা উত্তর দিল,” অনেক সুন্দর জায়গা। গেলে দেখবি।”
কাঠের বাক্সের মতো সিঁড়িগুলো বেয়ে আমরা খটখট শব্দে উপরে উঠে গেলাম৷ ঈশান আমাকে একটা বড় ঘরের বারান্দায় নিয়ে এলো। ঠান্ডা বাতাসে শরীর কাটা দেয়। নিচের দিকে চাইতেই আমি ভয়ে খামচে ধরলাম ঈশানের জ্যাকেট। ঈশান হেসে বলল,” এবার তোমার ভয় লাগছে, তাই না?”
আমি মাথা নাড়লাম। আসলেই ভয় লাগছে। নিচে শুধু পানি আর পানি। মনে হচ্ছে ঘরটা পানির মধ্যে ভেসে আছে। যতদূরে চোখ যায় শুধু সবুজ আর ছোট ছোট ঘর। উপরে নীল আকাশ। নিচে স্বচ্ছ পানি। এতোটা বিশুদ্ধ সুন্দর পরিবেশ আর হতেই পারে না। আমি চোখ বন্ধ করে বললাম,” এই জায়গাটা আমার পছন্দ হয়ে গেছে। টাকা থাকলে আমি এক্ষণি বাড়িটা কিনে ফেলতাম।”
ঈশানের মনখারাপ হয়ে গেল আমার কথা শুনে। আমি সেটা লক্ষ্যও করলাম। নিহা আফসোস করে বলল,” এটা সম্ভব না তারু।”
” কেন সম্ভব না?”
” যেই লোক এই বাড়ি কিনেছে, সে জীবনেও বাড়ি বিক্রি করবে না৷”
” কিভাবে জানলি? তোরা এই বাড়ি কিনতে চেয়েছিলি নাকি?”
” অবশ্যই৷ এতো সুন্দর একটা গেস্ট হাউজ, আমাদের শৈশবের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমরা কেন কিনতে চাইব না?”
” সেই লোকটা বিক্রি করবে না কেন?”
” কে জানে! আসলে হামিদ নানা মানে মোহনা আন্টির বাবা যখন এই বাড়ি বিক্রি করেছিলেন তখন বাড়ির দাম ছিল একদম পানির দামে। সে আরও দশ-বারো বছর আগের কথা। তখন তো এই এলাকা খুব একটা উন্নত ছিল না। এখান থেকে স্কুল-কলেজ, দোকানপাট খুব দূরে- দূরে। এজন্য বিক্রিই হচ্ছিল না। তারপর এক বিদেশী ভদ্রলোক খুব অল্প দামে বাড়িটা কিনে ফেললেন।”
আমি হতাশ কণ্ঠে বললাম,” আহারে, এতো সুন্দর একটা জায়গা বিক্রি না করলে কি হতো?”
” হামিদ নানা মোহনা আন্টির উপর রেগে বাড়ি বিক্রি করেছেন। যেন মোহনা আন্টি আর কখনও এই বাড়িতে ফিরে আসতে না পারে।”
” তোর হামিদ নানার মোহনা আন্টির উপর এতো কিসের রাগ? নিজের মেয়ের সাথে কেউ এমন করে?”
“আমি জানি না কিসের রাগ।” ঈশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,” আমি জানি।”
আমি চমকে তাকালাম। প্রশ্ন করলাম,” বলুন?”
ঈশান দুই পাশে মাথা নাড়ল। অর্থাৎ সে বলবে না। নিহা আমাকে ইশারায় বলল চুপ করতে৷ আমি যখন বুঝলাম ব্যাপারটা সিরিয়াস, তখনি চুপ হয়ে গেলাম।
এইখানে যতবার আসা হয় ততবারই নাকি সবাই বনভোজন করে। আজও বনভোজন হতে চলেছে। ফাহিম ভাই সাথে করে গিটার এনেছিল। বাড়ির পেছনে একটা জঙ্গলের মতো আছে। সন্ধ্যায় সেখানে ক্যাম্প-ফায়ার হবে। আমরা বার-বি-কিউ বানাবো৷ সেই সরঞ্জাম, উপকরণও আনা হয়েছে। যতক্ষণ আমরা এইখানে থাকব ততক্ষণের ভাড়া দিতে হবে। মাঝে মাঝে নাকি বিদেশী পর্যটকেরাও এই বাড়িতে এসে থাকে। ঈশানরা মাছ ধরতে গেল। নিহা আমাকে নিয়ে জঙ্গলী পরিবেশ দেখতে বের হলো। খুব সুন্দর জায়গা। ফলের গাছ আছে। নিহা আমাকে নিয়ে একটা করম চা গাছের সামনে দাঁড়ালো। আমরা গল্প করছিলাম৷ হঠাৎ দূর থেকে সাফিন ভাই দৌড়ে এসে বলল,” তারু, ইটস মিরাকল।”
আমি আর নিহা চমকে তাকালাম। সাফিন ভাই হাঁটুতে ভর দিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,” জানো কাকে দেখেছি?”
আমি প্রশ্ন করলাম,” কাকে? ”
” তোমার ভাইয়া।”
আমি প্রথমে বিমূঢ় দৃষ্টিতে নিহার দিকে চাইলাম৷ তারপর আবার সাফিন ভাইয়ের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,” আমার ভাই?”
” আরে হ্যাঁ ভাই, তোমার ভাই।”
” কিন্তু ভাইয়া এখানে কিভাবে?”
” জানি না। তবে আমি ভুল দেখিনি৷ সত্যি তোমার ভাইয়া এসেছে।”
আমি কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে একটা দৌড় দিলাম৷ সাফিন ভাই চেঁচিয়ে বললেন,” আরে ওদিকে না। আমার সাথে এসো।”
আমি আর নিহা সাফিন ভাইয়ের সাথে দৌড়াতে লাগলাম। ঈশানরা যেখানে বসে মাছ ধরছিল সেখানেই দেখা হলো তারিফ ভাইয়ের সাথে। আমি ভাইয়াকে দেখে বিস্ময়ে মুখে হাত ঠেকালাম। ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাছে এসে বলল,” কেমন আছিস তারু?”
আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম৷ ভাইয়া আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল। আমি ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম,” তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে ভাইয়া? একবারও কি আমাদের কথা মনে পড়েনি তোমার? একটা ফোন পর্যন্ত করোনি। তুমি কোথায় হারিয়ে গেছিলে? আর এখানেই বা এলে কি করে?”
ভাইয়া আমার গালে হাত রেখে কোমল গলায় বলল,” সবই তো বলবো। আগে তুই একটু শান্ত হো। এইটা যে নিহাদের গেস্ট হাউজ সেটা তো আমি ভাবতেই পারিনি। আমার বন্ধু জামশেদকে নিয়ে আজ সকালে এইখানে এলাম। আবার তোরাও এলি আজ সকালে। কি কাকতালীয় ব্যাপার বলতো!”
” জামশেদ কে ভাইয়া?”
” আমার বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু।”
” ও। উনি কি এইখানে থাকেন?”
” আরে, এই গেস্ট হাউজ তো তারই।”
ভাইয়ার কথা শুনে সবাই চোখ বড় করে তাকাল। ঈশানও বেশ অবাক৷ নিহা ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জানি সবাই কি চিন্তা করছে! মনে মনে আসলে আমিও সেটাই চিন্তা করছিলাম। ভাইয়ার হাত ধরে আকুলভাবে বললাম,” তোমার বন্ধুকে বলো না, গেস্ট হাউজটা যেন আমাদের কাছে বিক্রি করে দেয়!”
চলবে
#তি_আমো
পর্ব ৪০
লিখা- Sidratul Muntaz
ফাহিম ভাইয়ের হাতে গিটার। তিনি টুংটাং শব্দ তুলছেন। কিছুক্ষণের মাঝেই গান শুরু করবেন। আমরা সবাই দূর্বাঘাসের উপর মাদুর বিছিয়ে গোল হয়ে বসে আছি। ভাইয়া গেছে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বুড়িও সেদিকেই আছে। এক কথায় বড়রা সকলেই বাড়ির ভেতর। আর আমরা ছেলে-মেয়েরা বাইরে। আমাদের সামনে জামশেদ নামের যে লোকটি বসে আছেন তার হাতে বড় একটি শ্যাম্পেনের বোতল। তিনি শীতকালে এই জায়গায় আসেন আরামে ড্রিংক করতে। এখানে নাকি পাখিও শিকার করেছেন কয়েকবার। নাম শুনে তাকে মুসলিম মনে হচ্ছে। জামশেদ ইকবাল, নিঃসন্দেহে মুসলিমই হবেন। আমি ভদ্রলোককে প্রশ্ন করলাম, শিকার করা পাখি খাওয়া হারাম নাকি হালাল? কারণ শিকারের সময় তো পাখিকে জবাই করা হয় না। তাহলে এই অবস্থায় পাখি খাওয়া হালাল হবে কেন?
ভদ্রলোক আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,” শোনো মিষ্টি বালিকা, শিকার করা পাখি সবসময় হারাম না। শিকার মানে যেই জিনিস আমরা হ/*ত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করি। পাখি যদি তীর দিয়ে শিকার করা হয় আর তৎক্ষণাৎ সে প্রাণ হারায় তাহলে সেই পাখি অবশ্যই হারাম। কিন্তু যদি জাল বিছিয়ে রেখে শিকার করি, জীবিত অবস্থায় জবাই করা হয় তাহলে হারাম হবে কেন?”
নিহা হাত তালি বাজাল। উত্তেজনা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,” তাহলে জামশেদ ভাই, আমাদের আজ পাখি শিকার করে খাওয়ান না!”
জামশেদ নামক লোকটি হো হো করে হাসলেন। আমার দিকে একটু ঝুঁকে এসে বললেন,” নিশ্চয়ই খাওয়াবো।”
নিহা ইতোমধ্যে ভদ্রলোকের সাথে ভালো খাতির জমিয়ে ফেলেছে। আমি অবশ্য এর কারণটা বুঝতে পারছি। সে চায় জামশেদ সাহেব গেস্ট হাউজ বিক্রি করুক। ভাইয়া বলেছিল, জামশেদ সাহেব রাজি হবেন না। আর নিহা প্রতিজ্ঞা করেছে, সে জামশেদ সাহেবকে রাজি করিয়েই ছাড়বে। সেজন্যই ভদ্রলোকের সাথে খোশমেজাজে এতো আড্ডা দিচ্ছে সে। সময় সুযোগ বুঝে আসল কথাটা বলবে। জামশেদ নামের লোকটি অতিরিক্ত কথা বলেন। আর তিনি ভীষণ হাসি-খুশি মানুষ। ঠিক ভাইয়ার বিপরীত। শুনেছি বিপরীত দুই সত্তা মিলেই নাকি বন্ধুত্ব হয়। যেমন আমি আর নিহা একে-অপরের বিপরীত। আমি অন্তরে যা মুখেও তা। আমি কাউকে তেল দিতে পারি না। কিন্তু নিহা চরম শত্রুর সামনেও মুখে মধু মিশিয়ে কথা বলে শত্রুকে চমকে দিতে পারবে।
ঈশান দূরে বড়ই গাছের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারা গম্ভীর। সে ফাহিম ভাইদের সাথে আড্ডাতেও বসছে না। সাফিন ভাই তাকে কয়েকবার ডাকলেন। কিন্তু সে যাচ্ছে না। কি হয়েছে মশাইয়ের? মনখারাপ নাকি? আমি জামশেদ সাহেব আর মেয়েদের আড্ডার মাঝখান থেকে উঠে ঈশানের কাছে গেলাম। ঈশান আমার উপস্থিতি টের পেয়েও আমার দিকে তাকাল না। আমি তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে মৃদু কাশলাম। ঈশান আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,” কোনো দরকার?”
আমি মুখ হা করে অভিমানী স্বরে বললাম,” আজব! আমি কি আপনার কাছে শুধু দরকারেই আসি?”
ঈশান শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। আমি তার মুখের কাছে চুটকি বাজিয়ে বললাম,” কি হয়েছে বলেন তো আপনার? এমন গুম হয়ে আছেন কেন? ভাইয়া আসার পর থেকেই আপনার এই অবস্থা।”
ঈশান আশেপাশে একবার দেখে নিয়ে আমার হাত ধরল। অকপটে বলল,” এদিকে এসো।”
আমি সানন্দে ঈশানের সাথে হাঁটতে লাগলাম। ঈশান মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে বলল,” ওই লোকের সামনে তুমি আর যাবে না।”
আমি সরল হেসে জানতে চাইলাম,” কোন লোক? জামশেদ আঙ্কেলের কথা বলছেন?”
ঈশান একটু অবাক হয়ে বলল,” তোমার ভাইয়ার ফ্রেন্ড। তুমি আঙ্কেল ডাকছ কেন?”
আমি দুষ্ট হেসে বললাম,” একটু বুড়ো তো! আঙ্কেলের মতো লাগে। ”
” কিন্তু সে তোমার ভাইয়ার বয়সীই হবে।”
আমি অহংকার করে বললাম,” আমার ভাইয়া তো হিরো! ভাইয়ার মতো কয়জন হয়?”
ঈশান থেমে দাঁড়াল। দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ” ওই লোকের তাকানোর ধরণ ভালো লাগেনি আমার। তুমি আর তার সামনে যাবে না। কথায় কথায় তোমার গায়ে হাত দিচ্ছিল।”
ঈশানের কথা শুনে আমার পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইল। নেহায়েত ঈশানের চোখমুখ রাশভারী, তাই আমি হাসার সাহস করলাম না। মুখ ফুলিয়ে বললাম,” এতো পজিসিভনেস ভালো না আবার!”
ঈশান রেগে বলল,” এটা পজিসিভনেস না তারিন। ওইখানে এতো মেয়ে ছিল। কিন্তু লোকটা তোমাকেই টেনে তার পাশে বসাবে কেন? কেন বার-বার তোমার গায়েই হাত দিবে? হোয়াট রাবিশ! ক্যান ইউ এক্সপ্লেইন!”
ঈশানের রাগ দেখে আমি হতভম্ব! হাসি-খুশি মানুষটা যে এভাবে রেগে যেতে পারে তা আমি জানতাম না। প্রশমিত কণ্ঠে বললাম,” আচ্ছা বাবা, যাবো না। সারাক্ষণ আপনার কাছে থাকব। আপনার হাত ধরে বসে থাকব। যে যা খুশি বলুক।”
ঈশান ঘাড়ত্যাড়ার মতো বলল,” সেটাও ভালো। ”
এবার আমার সত্যিই হাসি পেয়ে গেল। আমি জোরে হাসতে লাগলাম। ঈশান গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ নীরার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। সে ঘোষণা দেওয়ার মতো সবাইকে কি যেন বলছে। আমি আর ঈশান দ্রুত হেঁটে গেলাম। নীরা ঈশানকে দেখা মাত্রই বলল,” ভাইয়া তুমি কি যাবে?”
ঈশান প্রশ্ন করল,” কোথায়?”
” মোহনা আন্টি বাড়ি ফিরে যেতে চাইছে। তার শরীর খুবই অসুস্থ। সকাল থেকেই তো বমি করছিল। রুবা আন্টি আর সিয়াম ভাইয়া উবার ডেকে এনেছে।”
ঈশান এই কথা শুনে দৌড়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগল। আমিও তার পেছনে ছুটলাম। আমাদের সাথে নিহা, সাফিন ভাইসহ আরও অনেকে এলো। কিন্তু আমরা পৌঁছানোর আগেই মোহনা আন্টিদের গাড়ি চলে গেছে। ঈশান ভারী কণ্ঠে বলল,” শিট! কয়জন গেছে?”
রেহেনা উত্তর দিল,” রুবা আন্টি, মোহনা আন্টি আর সাজিদ আঙ্কেল।”
ঈশান বিচলিত গলায় বলল,” অদ্ভুত! আমার সাথে দেখা না করে মম চলে গেল কেন এভাবে?”
রিফাত ভাই পরামর্শ দিল,” তুই আন্টিকে ফোন করে কথা বলে নে। তাহলেই হলো।”
ঈশান চলে গেল মোহনা আন্টিকে ফোন করতে। নিহা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কণ্ঠে বলল,” হঠাৎ এতো অসুস্থ কেন হলো আন্টি? যে একেবারে আমার বাবা-মাকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে হবে?”
সিয়াম ভাই বলল,” তেমন সিরিয়াস ইস্যু না। হয়তো ভালো লাগছিল না এজন্য চলে গেছে। আমাদের থাকতে বলে গেছে।”
ঈশান ফিরে এসে বলল,” অসুস্থতা কিছু না গায়েজ। মম একদম ঠিকাছে। কিন্তু বাড়িতে নাকি কি কাজ আছে। এজন্য…”
কথার মাঝেই প্রশ্ন করল নিহা,” কি এমন কাজ?”
রিফাত ভাই বলল,” আচ্ছা বাদ দে না৷ যার যার চয়েজ। হয়তো ওয়েদারটা শ্যুট করছে না। মোহনা আন্টি তো সহজে সব জায়গায় থাকতে পারে না। তার অভ্যাস নেই।”
ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামালাম না। জামশেদ সাহেব আমাদের তার গেস্ট হাউজে ডিনারের দাওয়াত দিয়েছিলেন৷ যে কারণে আমাদের রাত পর্যন্ত থাকতেই হবে। আমি মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম৷ ভাইয়া তখন সেখান থেকে চলে গেছে। আমি মাকে প্রশ্ন করলাম,” মোহনা আন্টির কি হয়েছে মা? ওভাবে চলে গেল কেন?”
মা ভ্রু কুচকে বলল,” কিছুই হয়নি। ”
” কিছু না হলে হুট করে চলে যাবে কেন? আমি আরও ভাবলাম ভাইয়া আর মোহনা আন্টি এবার একসাথে আছে। বিয়ের বিষয়ে একটু কথা-বার্তা হবে..”
আমার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে মা বলল,” নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস তারু। নিজের বিয়ে নিয়ে এতো মাতামাতি ভালো না। বিয়ে যখন হওয়ার হবে।”
” হ্যাঁ বুঝেছি তো, হবে। তারপরেও কেমন যেন একটা লাগছে।”
মা একটু চিন্তিত হয়ে বলল,” তবে আমার মনে হচ্ছে জামশেদ নামের লোকটাকে পছন্দ করেনি তোর মোহনা আন্টি।”
” কেন, কেন?”
” জানি না। লোকটার কথা-বার্তা শুনিসনি? একটু আত্ম-অহংকারী ভাব। আবার বাড়ি বিক্রি নিয়েও নাকি কি ঝামেলা.. তোর মোহনা আন্টি তো এই বাড়ি আবার কিনতে চায়। কিন্তু লোকটা বিক্রি করতে চায় না। এই নিয়ে দু’জনের মাঝে আবার ঝগড়া বাঁধতো। চলে গেছে, ভালোই হয়েছে।”
আমি হেসে উঠলাম। মজা করে বললাম,” জানো মা, নিহা কিন্তু লোকটাকে হাত করার চেষ্টায় আছে। রাজি হয়ে গেলেই বাড়িটা কেনা যাবে।”
” ধূর, এসবের কোনো দরকার নেই তারু। ঘুরতে এসেছিস, ঘুরে-ফিরে চলে যা। বাড়ি কিনতে হবে কেন? আর এতোই যদি বাড়ির প্রতি মায়া তাহলে বিক্রি করল কেন?”
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,” সেটা তো আমিও জানি না মা। থাক বাদ দাও৷ বড়লোকদের ব্যাপার-স্যাপার! আচ্ছা মা, তুমি জামশেদ সাহেবকে আগে থেকে চেনো?”
” হ্যাঁ চিনি৷ কেন?”
” মানে লোকটা কেমন? ভালো না খারাপ?”
মা ঠোঁট উল্টে কি যেন ভেবে বলল,” তা বলতে পারব না। কিন্তু আমার পছন্দ না।”
” কেন?”
” ওসব তোর জানার দরকার নেই।”
আমি ন্যাকামি শুরু করলাম৷ মায়ের হাত-পা ধরে বাচ্চারা যেভাবে বায়না করে সেভাবে বায়না করতে লাগলাম,” বলো না, মা। প্লিজ বলো না! ও মা, বলো না… তুমি আমার মা না..”
মা বিরক্ত হয়ে বলল,” সর তো.. যখন তুই ক্লাস এইটে পড়িস তখন এই লোক তোকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিল।”
কথাটা শুনে আমার চেহারার সব রঙ উধাও হয়ে গেল। আমি নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললাম,” সত্যি?”
” হ্যাঁ। ”
আমার পুরো শরীর এবার শিরশির করছে। যে জায়গায় লোকটা স্পর্শ করেছিল, সেই জায়গা নোংরা মনে হচ্ছে। আমি একদলা বিতৃষ্ণা নিয়ে বললাম,” এরপরেও ভাইয়া এই নোংরা লোকের সাথে বন্ধুত্ব রেখেছে?”
মা একটু থেমে বলল,” না। পরে অবশ্য সে ক্ষমা চেয়েছিল। তারপর তো সে বিদেশেই চলে গেল।এসব নিয়ে অনেক ঘটনা আছে। এখন ভুলে গেছি। যা তো.. বিরক্ত করিস না।”
আমি ছুটে ঈশানের কাছে গেলাম। বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে কারো সাথে কথা বলছিল ঈশান। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললাম,” আই এম স্যরি ঈশান। তখন আপনার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। এক্সট্রিমলি স্যরি। এখন থেকে আপনি যা বলবেন তাই শুনবো।”
ঈশান মোবাইলটা একটু হোল্ডে রেখে আমার দিকে ঘুরে প্রশ্ন করল,” কি বললে?”
আমি হাতজোড় করে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে উচ্চারণ করলাম,” বলেছি আপনি গুরু। আমি শিষ্য, বুদ্ধি আমার কম।”
ঈশান আমার কথার অর্থ না বুঝে ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল। কিন্তু আমি আর ঈশানকে মায়ের থেকে শুনে আসা গা গুলানো ঘটনাটি বললাম না। কারণ এতো সুন্দর নির্মল পরিবেশে আমি তামিল মুভির ফাইটিং সিন দেখতে চাই না।
চলবে