#তি_আমো,৪৮,৪৯
পর্ব ৪৮
লিখা- Sidratul Muntaz
আমার ক্ষণে ক্ষণে কেবল একটি কথাই মনে হচ্ছিল। ঈশান খুব দূরে চলে যাচ্ছে। এরপর তার সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমন নয় যে আমি ঈশানকে বিশ্বাস করি না। আসলে নিজের থেকেও আমি ঈশানকে বেশি বিশ্বাস করতে লেগেছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস ছিল না নিজের ভাগ্যের প্রতি। সত্যিই কি ঈশান আমার ভাগ্যে আছে? এই শংকায় বুকের দুরুদুরু ভাবটা যেন কাটছিলই না।
ঈশান যখন আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছিল, তখন আমার মাঝে একফোঁটা দ্বিধা কাজ করছিল না। আমি যেন নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম। ভালোবাসার কাছে আমার এই নির্লিপ্ত আত্মসমর্পণে বিস্মিত হয়ে গেলাম নিজেই। এক পর্যায় ঈশান আমাকে ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। সব পর্দা মেলে দিল। আবছা অন্ধকারাচ্ছন্ন শোবার ঘর আলোকিত হয়ে উঠল। আমি গায়ে ওরনা জড়িয়ে গুঁটিশুটি মেরে বসলাম। ঈশান আমার সামনে এসে বলল,” ভুল করছিলাম আমরা।”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,” হুম।”
” স্যরি।”
” আপনি একা তো ভুল করেননি। স্যরি কেন বলছেন?”
ঈশান জবাব দিল না। আমি ক্ষীণ কণ্ঠে জানতে চাইলাম,” যদি ভুলটা হয়ে যায়, তাহলে কি হবে?”
ঈশান উঠে দরজার কাছে গেল। গম্ভীর গলায় জবাব দিল,” আফসোস হবে।”
এরপরেই সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থাকলাম। হঠাৎ করেই যেন আমার সম্বিৎ ফিরে এলো। আসলেই তো, কি করতে যাচ্ছিলাম আমরা? যদি আজকের এই ভুলের কারণে কোনো দূর্ঘটনা হতো? পরিবারের সামনে কোন মুখে দাঁড়াতাম আমি? আবেগের বশবর্তী হয়ে যা করতে যাচ্ছিলাম তা চরম ভুল। কিন্তু ঈশান কেন এভাবে চলে গেল? সেও কি আমার মতো অপরাধবোধে ভুগছে? দোষ তো তার একার নয়। সমানদোষী আমিও। একবারের জন্যেও তাকে বাঁধা দিইনি। উল্টো সে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাহলে কি এইবার আমারই ভুলের পাল্লা বেশি?
সেই যে ঈশান ঘর থেকে বের হয়ে গেল, এরপর সে আর একবারও সামনে আসেনি। মোহনা আন্টি নাকি লন্ডন যাওয়ার আগে সবসময় এভাবেই গেট টুগেদারের আয়োজন করেন। এবার বিশেষভাবে আমাকে আর ঈশানকে মেলানোর জন্য আয়োজন করেছিলেন। চলে আসার সময় মোহনা আন্টি আমাকে প্রশ্ন করলেন,” ঈশানের থেকে বিদায় নেওয়া হয়েছে তারিন?”
আমি হেসে জবাব দিলাম,” জ্বী।”
কিন্তু সত্যি বলতে আমাদের বিদায়বেলা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এতোটা অদ্ভুতভাবে বিদায় তো আমি কখনও চাইনি। খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। ঈশান হয়তো বাড়ি থেকেই চলে গেছিল। আমি তাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। ফোন কাটলও না আবার ধরলও না। সে ফোনের কাছে ছিল কি-না সেটাও বুঝতে পারলাম না। তবুও বের হওয়ার সময় আমি ঈশানকে মেসেজ করলাম,” চলে যাচ্ছি আমরা। আপনি কোথায়?”
সেই মেসেজের উত্তর এলো না। আমরা বাড়ি চলে এলাম৷ সারাদিন মন বিষণ্ণ হয়ে রইল। ঈশানের সেই মেসেজের উত্তর এসেছিল সন্ধ্যায়। বিরাট বড় মেসেজ। ঈশানের মেসেজ মানেই প্রেমের শব্দগুচ্ছ। তাই আমি সাথে সাথে মেসেজ পড়লাম না। খুব রিল্যাক্স হয়ে পড়তে চাইছিলাম। কিন্তু তখনও আমি ভাবিনি যে ওই একটি মেসেজ আমার পুরো জীবন এলোমেলো করার জন্য যথেষ্ট।
ভাইয়া তার ওয়ার্কশপের কিছু ছেলে নিয়ে এসেছিল রাতে খাওয়ানোর জন্য। প্রায়ই এমন করে। আমি আর মা মিলে তখন কোমরে আঁচল বেঁধে রাঁধতে বসি। আজকেও রান্না-বান্নার ঝামেলা সামলাতে গিয়ে আমি আর মেসেজ পড়ার সুযোগ পেলাম না। রাত যখন এগারোটা বাজে, তখন ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় বসেছি। মেসেজটা আমি তখনি পড়লাম-
” তারিন, আমার সম্পর্কে তুমি কতটুকুই বা জানো? কতটুকু চেনো আমাকে? আমার পুরো নামটাও হয়তো তোমার জানা নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এতো বিশ্বাস? শুধু ভালোবাসলেই কি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে হবে? পর্যন্ত কেন এতো বিশ্বাস করলে আমাকে? আজকে আমি যা করতে যাচ্ছিলাম তাতে একবারও আমাকে বাঁধা না দিয়ে তুমি নিজের অন্ধত্বের প্রমাণ দিয়েছো। ভালোবাসা সুন্দর হলেও অন্ধ ভালোবাসা খুব ভয়ংকর জিনিস। জীবনে কখনও কাউকে এতোটা বিশ্বাস কোরো না যে সে তোমাকে অন্ধ বানিয়ে রাখতে পারে। কথাগুলো এভাবে কেন বলছি জানো? কারণ আমি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর কখনোই ফিরব না তোমার জীবনে। আমি একেবারে চলে যাচ্ছি। আমার এই যাওয়াই শেষ যাওয়া।
এক মিনিট, আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলে গালি দেওয়ার আগে তুমি নিজের ভাইয়াকে প্রশ্ন করো। কি দোষ ছিল আমার মমের? তিনি মমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা রক্ষা করলেন না কেন? পনেরো বছর আগে ঠিক তোমারই মতো ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমার মম করে ফেলেছিল একটি বিরাট ভুল। আলিশান ভবন থেকে পালিয়ে তোমার ভাইয়ার ছোট্ট কুটিরের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল এতটুকু আশ্রয়ের আশায়। কিন্তু তোমার ভাই মমকে গ্রহণ করা তো দূর, দেখাটুকুও করেনি একবার। এতোবড় বিশ্বাসঘাতকতার পরেও মম তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু আমি ক্ষমা করতে পারিনি। আমি মমের মতো এতো মহান না। এতো বড় হৃদয় আমার নেই। আমি বড্ড অসৎ মানুষ। তাই অসৎ ভাবেই প্রতিশোধ নিয়েছি আমার মমের পনেরোটি বছরের চোখের পানির।
যে মানুষটির জন্য আমার মম জীবনের অর্ধেক সময় নষ্ট করেছে, আমার বাবার মতো নরপিশাচের সঙ্গে সংসার করে নিজের জীবনটা নরক বানিয়ে তুলেছে তাকে এতো সহজে ক্ষমা করি কি করে বলো? সেদিন মম পালিয়ে গেছিল বলেই তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার বিয়ে হলো আমার বাবার মতো চরিত্রহীনের সাথে। প্রতি মুহূর্তে আমার মম মরতে মরতে বেঁচে আছে। সবকিছুর জন্য দায়ী তোমার ভাই। কতবড় অপরাধী সে চিন্তা করতে পারছ?
মম কোনোদিন তাকে দেখেনি, শুধু কণ্ঠ শুনেছে।সেই অদৃশ্য, অস্পৃশ্য মানুষটির প্রতিই দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে যে ঘৃণাময় ভালোবাসা পুষে রেখেছে, সে যন্ত্রণাময় অনুভূতির শোধ কোনোকিছু দিয়েই মেটানো সম্ভব নয়। আমার মমের জীবনে আরও হাজার পুরুষ এসেছিল। কিন্তু কাউকেই মম ভালোবাসতে পারেনি। কারণ মমের শরীরে ভালোবাসার আত্মাটা ধুঁকে ধুঁকে মরে গেছে বহু আগেই। তোমার ভাইয়া একটি মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতাই নষ্ট করে দিয়েছে। সে আত্মার খু/*নী। তোমাকে ভালোবাসার আগে আমি জানতাম না তোমার ভাইয়ের পরিচয়। যদি জানতাম তাহলে তোমাকে এসবে কখনোই জড়াতাম না। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
হয়তো চাইলেই আমাদের একটা সুন্দর সংসার হতে পারতো, একটা স্বপ্নময় জগৎ হতে পারতো। কিন্তু তুমি তো সেই ভাইয়েরই বোন যার কারণে আমার মমের জীবনটা রঙহীন হয়ে গেছে। আমি কিভাবে তোমার সাথে আমার জীবন রাঙাবো বলো? এই কাজ আমার পক্ষে সম্ভব না।
আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা কোরো না। এখন থেকে মম জানবে, আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে। তোমার ভাইয়াকে তুমি কি বলবে সেটা তোমার উপর। ঘৃণা হচ্ছে নিশ্চয়ই? ভালোবাসার মানুষকে যতটা ভালোবাসা যায় তার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণ ঘৃণা করা যায়। এতোটা নিকৃষ্ট উপায়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য স্যরি। কিন্তু কি করব? এই কাহিনীতে তোমার কোনো দোষ ছিল না। মাঝে মাঝে দোষ না করেও আমাদের শাস্তি পেতে হয়। যেমন আমি পেয়েছি, পাচ্ছি। পনেরো বছর ধরে চোখের সামনে নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে কষ্ট পেতে দেখেছি।
সবশেষে তোমার কাছে একটা অনুরোধ, আমাকে ভুলে যেও। আমি আজ তোমার সম্ভ্রম নষ্ট করে তোমার ভাইকে চূড়ান্ত শিক্ষা দেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিলাম সেজন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। যদিও আমার মনে হয়, তুমি আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবে না। কারণ বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করা যায় না। ঠিক একই কারণে তোমার ভাইয়াও কোনো ক্ষমা ডিজার্ভ করে না। ভালো থেকো।আমাদের পথ এখানেই শেষ। ”
সেদিন রাতের গভীরতা উপেক্ষা করে, ভাইয়ার গর্জন, মায়ের চিৎকার পেছনে ফেলে আমি ছুটে গিয়েছিলাম ঈশানদের বাড়িতে। কিন্তু দারোয়ান জানাল, ঈশান আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটে লন্ডন চলে গেছে। আমার মাথায় বাজ পড়ল। উন্মাদের মতো তড়পাতে লাগলাম আমি। ভেবেছিলাম আমাদের এই গল্পে ঈশান কখনোই আমার সাথে মিথ্যা বলেনি। কিন্তু সে যেটা করেছে তা মিথ্যার চেয়েও ভয়াবহ। এতোবড় প্রতারণার আঘাত সহ্য করতে না পেরে আমি রাস্তার মাঝেই জ্ঞান হারালাম। আমার নিথর দেহটি অনাদরে, অবহেলায় রিক্ত সড়কের মাঝখানে পড়ে রইল।
চলবে
#তি_আমো
পর্ব ৪৯
লিখা- Sidratul Muntaz
চোখ মেলার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার ঘরে। শায়িত অবস্থায় পড়ে আছি বিছানায়। মাথার কাছে হালকা ব্যথা। উঠে বসতে কষ্ট হলো। কিন্তু যখনই মনে পড়ল সেই নিষ্ঠুর মেসেজ, নির্মম প্রতারণা, আমি ঝট করে উঠে বসতে চাইলাম। ক্ষীপ্র একটি দগদগে ক্ষত আমার সারা শরীরে বিচরণ করছে। মাথার ব্যথাটাও যেন ফুঁসে উঠল। আমি মৃদু আওয়াজে আর্তনাদ করলাম। তখনি ঝাপসা দৃষ্টিতে খেয়াল হলো, কেউ একজন এগিয়ে এসেছে আমাকে ধরতে। আমি অস্পষ্ট চোখে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঈশান আমার সামনে দাঁড়িয়ে!
ঈশানকথন-
আমি তারায জোহান ঈশান। জীবনে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু কখনও এতোটা অসহায় লাগেনি নিজেকে।
ছোটবেলা থেকেই একাকিত্বকে সঙ্গী করে বড় হয়েছি। বাবা নামের যে মানুষটিকে আমি চিনতাম তার মাঝে ছিল না কোনো ভালোবাসা, স্নেহ কিংবা মায়া। ইস্পাতের মতো কঠিন তার দৃষ্টি, নিষ্ঠুর তার ব্যবহার। আমাকে সবসময় বোঝাই মনে করতো সে। আমি কখনও তার ছেলে হতে পারিনি, হয়েছি তার ঝামেলা। তাই নিজেও নিজেকে উদ্বাস্তুই ভেবে এসেছি ছোট থেকে। দশ বছর বয়সে হঠাৎ করেই আমার খসখসে রুক্ষ জীবনটায় নরম রোদের মতো আবির্ভাব ঘটেছিল মমের। তিনি সম্পর্কে আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। রাতে যখন ভয় পেয়ে আমি চিৎকার করে উঠি, সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তাকে পেয়েই আমি দুনিয়া পেয়ে গেলাম। কিন্তু সেও ছিল আমার মতোই দুঃখী। আমার দুঃখের উৎস যেমন আমার বাবা,আমার মায়ের দুঃখের উৎসটা ছিল অন্যকেউ। মম কখনও তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেনি। তাই ধরে নিয়েছিলাম আমার মমের সব দুঃখের আসল কারণ বুঝি বাবাই। ছোটবেলা থেকে আমার কোমল মনে বাবা নামক মানুষটির প্রতি যে ঘৃণা তৈরী হয়েছে তা সীমাহীন। আমার মায়ের প্রত্যেকটি চোখের জলের হিসাব একদিন বাবার থেকে কড়ায়-গণ্ডায় ফেরত নিবো এই আশায় আমি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আমার বাবা কখনও আমার মমকে ভালোবাসেনি। তার আশেপাশে ছিল অজস্র লাস্যময়ী তরুণীর বিচরণ।
আমার এই দুঃখ ভারাক্রান্ত জীবনে সুখ হয়ে নেমেছিল ভালোবাসার অবাধ বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে নিস্পৃহ, নির্লিপ্ত আমি ভেসে যাচ্ছিলাম অচিরেই। যদি কখনও আমার জীবনে কেউ আসে, তাকে আমি সর্বোত্তম উপায়ে ভালোবাসব। কখনও তাকে ছেড়ে যাওয়া তো দূর, পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে হলেও তাকে নিজের জীবনে টিকিয়ে রাখব।কিন্তু মানুষ যা ভেবে রাখে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উল্টো হয়। আমার ক্ষেত্রেও উল্টোটাই হলো। নিয়তি যেন আমার সাথে উপহাস করল।
নিহাদের বাড়িতেই মেয়েটিকে প্রথমবার দেখেছিলাম। হৃদয়মহল জুড়ে কি ভয়ংকর আলোড়ন! প্রথম দেখায় প্রেম; তার হাসি, তার চোখ, তার বাচ্চামি, সবকিছুতেই অভিভূত আমি। তাকে না পেলে আমার চলবেই না। সে আমার জীবন, সে আমার মৃত্যু। তার মধ্যেই আমার বেঁচে থাকা। তার ভালোবাসা হাসিল করতে যেন আমি বিষপান করতেও দ্বিধান্বিত হবো না।
মেয়েটির পুরো নাম আশফীয়া তারিন। তার বায়োডাটা পেয়েছিলাম ফাহিমের থেকে। তারিন সম্পর্কে সমস্ত খোঁজ-খবর সে রাখতো। নিহার এংগেজমেন্ট পার্টিতেও তারিন এসেছিল। সেদিন কি আশ্চর্য রকম সুন্দর দেখাচ্ছিল তাকে! যেন স্বপ্নের রাজ্যের কোনো স্বপ্নপরী। আমি সুযোগের সদ্ব্যবহারে করে ফেলেছিলাম একটি ছোট্ট ভুল। কিন্তু কে জানতো? আমার একটা ভুল এতো বিশাল প্রভাব ফেলবে জীবনে!
ধীরে ধীরে তার প্রতি ভালোবাসা বাড়ছিল আমার। তার রাগান্বিত দৃষ্টিতে ছিল অমায়িক জাদু, আমি ঘাঁয়েল হচ্ছিলাম ক্রমশ। তার হাসিতে সুতীব্র নেশা। তার অতি সাধারণ জীবনে কি চমৎকার মাদকতা! সে আমার ঘুম কেঁড়ে নিল। আমার স্বস্তি, শান্তি সব কেঁড়ে নিল। তাকে নিয়ে কল্পনায় সাজিয়েছিলাম বিশাল স্বপ্নময় জগৎ। তারপর কত চড়াই-উতরাই, কত মিথ্যার বেড়াজাল, হাসি, কান্না, বিপদ উপেক্ষা করে তাকে পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু ওইযে, নিয়তির উপহাস! এক নিমেষে ধ্বংস করে দিল সবকিছু!
যখন প্রথমবার আমি জানতে পারলাম আমার মমের প্রেমিকের পরিচয়; আমার স্বপ্নের পৃথিবীটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ভালোবাসা হেরে গেল বছরের পর বছর ধরে লালিত ক্রোধের কাছে।
আমি যতটা আমার বাবাকে ঘৃণা করি, তার চেয়েও অনেক বেশি ঘৃণা করি ‘ আশু’ নামের সেই মানুষটিকে। কিন্তু কখনও চিন্তাও করিনি যে আশু মানেই আশফাক তারিফ। হায়, আগে যদি বুঝতাম তাহলে তারিন নামক নেশায় নিজেকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতাম না কখনোই। আমি খুব নিকৃষ্ট। তাই ভালোবাসার উপরেই জন্ম নিল প্রতিশোধস্পৃহা।
এদিকে আমার পাঠানো ছোট্ট একটি মেসেজ পড়েই মেয়েটি চেতনাশক্তি হারিয়ে নিথর হয়ে গেল। এতো ভালোবাসার যোগ্য কি ছিলাম আমি? বিশ্বাসঘাতকতার বিনিময়ে এই নিখাদ ভালোবাসার হিসাব কি দিয়ে মেটাবো আমি?
রাত সাড়ে দশটায় আমি মমকে নিয়ে টার্মিনালে পৌঁছেই গিয়েছিলাম। চেকইন, বোর্ডিং পাস, সিট নাম্বার গ্রহণ সবকিছু শেষ করার পর দেখি প্লেন ছাড়তে আরও একঘণ্টা বাকি। আমরা বসেছিলাম অপেক্ষায়। মম বার-বার বলছিল,” তারিনকে একটা খবর দিলেও পারতি বাবা। সে আমাদের সিঅফ করতে আসতো। মেয়েটার এতো মনখারাপ ছিল!”
আমি মৃদু হেসে বললাম,” তোমার কি মনে হয়? ওর ভাই ওকে এতোরাতে আসতে দিবে?”
” তাও ঠিক।”
মমকে এই কথা বললেও আমার অবচেতন মন খুব করে চাইছিল তারিনকে শেষবারের মতো আরও একটু দেখি। তার পাশে আরও কিছুক্ষণ থাকি। আমার এই যাওয়াই হয়তো শেষ যাওয়া। তারিন ইতোমধ্যে আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। আর হয়তো দেখাই হবে না কোনোদিন! মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘূর্পাক খাচ্ছিল। তারিন কি আমার মেসেজটি পড়েছে? তাহলে সে কোনো রিয়েক্ট করছে না কেন? এতো সহজেই বুঝি সব মেনে নিল? আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। তারিন সব ভুলে যাক। তবুও তার ওই ভুলে যাওয়াটাই মানতে পারছিলাম না কেন!
ফ্লাইটে ওঠার পাঁচমিনিট পর যখন ফোন বন্ধ করতে হবে ঠিক তখনি দারোয়ান চাচার নাম্বার থেকে কল এলো। আমার বুকের ভেতর ছলাৎ করে একটা শব্দ হলো। কল রিসিভ না করেও আমি বুঝতে পারলাম, তারিন আমার বাড়িতে এসেছে। হয়তো সে মেইন গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। দারোয়ান চাচা নিরুপায় হয়ে আমাকে ফোন করছে। কিন্তু ফোন রিসিভ করার পর যা শুনলাম তা আরও নিদারুণ। তারিন আমার বাড়ির সামনে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। প্লেন তখন উড্ডায়মান। আমি ওই অবস্থাতেই উঠে দাঁড়ালাম। অসংখ্য কণ্ঠস্বর চেঁচিয়ে উঠল। মম দুইহাতে আমাকে টেনে ধরে বসাতে চাইল। এই সময় সবাই সিটবেল্ট বেঁধে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আর আমি উঠে দাঁড়িয়ে গেছি। যেকোনো সময় একটা দূর্ঘটনা ঘটবে। এয়ারহোস্টেইজ আমাকে সিটবেল্ট বাঁধার নির্দেশনা দিল। আমি তার কাছে অনুরোধ করলাম যেন প্লেন থামানো হয়। কিন্তু আমার অনুরোধে কার কি যায়-আসে?
মম মরিয়া হয়ে বলল,” কি হয়েছে ঈশান? খারাপ কোনো খবর?”
আমি একবাক্যে উত্তর দিলাম,” আমাকে বাড়িতে যেতে হবে।”
মম সবিস্ময়ে বলল,” কেন? আর এটা কি এখন সম্ভব? তুই নামবি কিভাবে?”
আমি মমের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,” আই এম স্যরি মম, আই হ্যাভ টু গো।”
আমি বিমান থামানোর জন্য তখন যে কোনো কিছু করতে পারি। হয়তো বিমান থেকে ঝাঁপ দিতেও দ্বিধান্বিত হতাম না। অপরাধবোধে পুড়ে যাচ্ছিল আমার মন-প্রাণ, দেহ। মহান আল্লাহর দরবারে হয়তো আমার এই ফরিয়াদ কবুল হয়েছিল।একটু পরেই জানা গেল, এয়ারলাইন্সে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তাই নিরাপদ স্থানে বিমান পুনরায় অবতরণ করা হলো। আমি সবকিছু উপেক্ষা করে মমের থেকে বিদায় নিলাম। আর কোনো উপায় যে খুঁজে পাচ্ছিলাম না! মমের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ধৈর্য্যও আমার ছিল না। তারিনের কাছে পৌঁছাতেই হবে যত দ্রুত সম্ভব!
জানি না কেন এতোটা পাগলামি করে আমি আজ এখানে এসেছি। শুধুই কি অপরাধবোধের তাড়নায় নাকি ভালোবাসার দায় আমাকে এখানে টেনে এনেছে? যে ভালোবাসা আমি নিজেই কবর দিতে চেয়েছিলাম!
তারিনের জ্ঞান ফেরার পর সে যখন ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল, তখন আমার মনে হলো ওই দৃশ্য সহ্য করার চেয়ে মরে যাওয়াও অনেক সহজ। তারিন নিশ্চল কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” ঈশান? এটা কি আপনি?”
আমি নত মাথায় বললাম,” আই এম স্যরি, তারিন..”
আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সপাটে চড় ধেঁয়ে এলো ডানগালে। আয়েশা আন্টি, দাদীমা চূড়ান্ত বিস্মিত হয়ে গেল। তারিন হিংস্র কণ্ঠে বলল,” আপনার লজ্জা করল না? এতোবড় প্রতারণার পর স্যরি বলতে এসেছেন কোন মুখে? দোষ না করেও আমাকে এতোবড় শাস্তি দিলেন তাও কি আঁশ মেটেনি আপনার? এখন কি এসেছেন এখানে মজা দেখতে?”
আয়েশা আন্টি তারিনের কাঁধে হাত রেখে বললেন,” শান্ত হো, মা।”
তারিন ঝটিতে আন্টির দিকে ঘুরে বলল,” ওকে চলে যেতে বলো। ও সামনে থাকলে আমি মরে যাবো মা।”
আয়েশা আন্টি অনুরোধের দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। আমার চোখের টলমল অশ্রু আমি মুছে নিলাম চট করে। আন্টি বললেন,” তুমি চলে যাও ঈশান।”
আমি এই আচরণের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমি তো এটারই যোগ্য। তারিন নিজের জায়গায় একদম ঠিকাছে। আমি ভারী কণ্ঠে বললাম,” আজকে আমি এমনিই চলে যাবো তারিন। তোমার জীবনে আমি থাকার জন্য আসিনি। কিন্তু…”
তারিন রুষ্ট কণ্ঠে বলল,” আমার জীবনে আপনার থাকার দরকারও নেই। চাইলেই আমি আপনাকে জবাব দিতে পারতাম। আপনি আমাকে মেসেজে যা যা বলেছেন, তার সবকিছুর উপযুক্ত জবাব ছিল আমার কাছে। কিন্তু আপনার মতো বেঈমান কোনো এক্সাপ্লেনেশন ডিজার্ভ করে না। আই হেইট ইউ। আপনি যেটা আমার সঙ্গে করলেন তার শাস্তি পাবেন। আপনাকেও যখন কেউ একইভাবে ভেঙে-চুরে নিঃশেষ করে দিবে তখন আপনি বুঝবেন
প্রতারিত হওয়ার কষ্ট কি জিনিস।”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না। তারিন হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বলল,”গেট লস্ট ঈশান।”
আমি ক্ষণমুহূর্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম স্তব্ধের মতো ।হ্যাঁ, এই কাহিনীতে তারিন সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিল। কিন্তু যার ভাইয়ের জন্য আমার মমের জীবন নরক হয়ে গেছে তাকে নিয়ে সুখের সংসার করার শক্তি আমার নেই। তারিনকে নিজের জীবন থেকে সরাতে আমি লন্ডনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই কথা যদি সরাসরি তারিনকে জানাতাম তাহলে কি সে আমাকে ছাড়তে রাজি হতো? হয়তো আমাকে যেতেই দিতো না। তারিনের থেকে চিরবিদায় নেওয়ার জন্য প্রতারণার এই আশ্রয়টা খুব দরকার ছিল৷ তারিন আমাকে খুব সহজেই ভুলে যাবে এবার। কারণ প্রতারকদের ভুলে যেতে হয়। কিন্তু আমি? কিভাবে ভুলে থাকবো তারিনকে? তার কাছে ফিরে আসাও সম্ভব নয় আবার দূরে গিয়ে তাকে ভুলে থাকাও সম্ভব নয়। আজ থেকে আমার বেঁচে থাকাটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেল।
ঘরের বাইরে বের হতেই তারিফ ভাইয়ের সামনে পড়লাম। তিনি কঠিন দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার টলমল চোখে মুহূর্তেই আগুন জ্বলে উঠল। এই মানুষটির জন্যই তো জীবনের প্রথম ভালোবাসা, তারিনকেও হারিয়ে ফেলেছি আমি। সে আমার যত কাছে এলো আমার তত ঘৃণা হলো। তারিফ ভাই হিমশীতল কণ্ঠে বললেন,” তুমি অনেক বড় ভুল করেছ ঈশান।”
” ভুল করার আগে আমরা বুঝতে পারি না যে ভুল করছি। কিন্তু যখন বুঝতে পারি, তখন খুব দেরি হয়ে যায়।”
তারিফ ভাই চোয়াল শক্ত করে বললেন,” তুমি যদি মোহনার ছেলে না হতে, আই সুয়্যার আমি তোমাকে খু/*ন করে ফেলতাম।”
আমি রূঢ়ভাবে হাসলাম আর বললাম,” আই উইশ, আপনিও যদি তারিনের ভাই না হতেন তাহলে আপনাকেও আমি…”
তারিফ ভাই বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমি নিজেকে সংবরণ করে বের হয়ে এলাম। অসহ্য বিষব্যথা বুকের বামপাশ জুড়ে। আমি পুড়ে যাচ্ছিলাম। ভেজা চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম, আমার নিষ্কলুষ ভালোবাসার সবচেয়ে নিষ্ঠুর পরিণতি। আমি নীরব ছিলাম, কিন্তু আমার মনের আকাশটা নিগূঢ় আর্তনাদ তুলে কাঁদছিল। হায়, কি নিদারুণ চিৎকার তার!
গল্পকথন-
দুইবছর পার হয়েছে। সুখের সময় হলে দুইবছর কোনো ব্যাপার না। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে যারা হারানোর যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছে, তাদের কাছে প্রত্যেকটি সেকেন্ডও অতি বিষাক্ত। তাদের মৃত্যু হতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। দুই বছরে ঠিক কতগুলো মুহূর্ত হয়? বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে হিসাব কষছিল তারিন। আজ দুইবছর আঠারো দিন ধরে ঈশানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দিব্যি তো আছে তারিন। ভার্সিটি যাচ্ছে, জমিয়ে পড়াশুনা করছে, দিনে চারটা টিউশন করছে, মাসে একবার হলেও পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছে। সারাক্ষণ হাসি-খুশি থাকার অভিনয় করে মাঝে মাঝে হাঁপিয়েও উঠছে।
বাইকের তীক্ষ্ণ হর্ণ কানে বাজতেই তারিন পাশ ফিরে তাকাল। ফাহিম ভাই। তারিনের ঠোঁটে আন্তরিক হাসি ফুটল,” আরে ফাহিম ভাই, কি অবস্থা?”
ফাহিম মাথা থেকে হেলমেট সরিয়ে জিজ্ঞেস করল,” বাসের জন্য ওয়েট করছ?”
” জ্বী। বাস চলে আসবে এক্ষুনি।”
” তুমি তবুও আমার সাথে এসো। যদি কোনো প্রবলেম না থাকে।”
তারিন যদিও মিথ্যা বলেছে। বাস কখন আসবে তা সে নিজেও জানে না। দুইটা বাস ইতোমধ্যে মিস করে গেছে। রোদে দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আবার ফাহিমকেও নিষেধ করা যায় না। তাই তারিন রাজি হলো। সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলল,” ঠিকাছে চলুন।”
ফাহিম হেলমেট এগিয়ে দিল। তারিন চুলের জন্য হেলমেট পরতেই পারছিল না। ফাহিম বলল,” মে আই?”
তারিন না বুঝেই মাথা নাড়ল। সে ভাবল ফাহিম তাকে হেলমেট পরিয়ে দিবে। কিন্তু ফাহিম করল অদ্ভুত কাজ। তারিনের চুলগুলো সযত্নে গুছিয়ে একপাশে সরিয়ে দিল। তারিন একটু বিব্রতবোধ করলেও সৌজন্যতার খাতিরে বলল,” থ্যাংকস।”
তারিনদের বাড়ির মূল ফটকের সামনে বাইক থামল। তারিন নামার সময় বলল,” ভেতরে চলুন না, ফাহিম ভাই।”
” না থাক, তোমার ভাই থাকতে পারে।”
তারিন বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল,” আপনি ভাইয়াকে ভয় পান নাকি?”
ফাহিম লজ্জিত হয়ে বলল,” না। কিন্তু কিছু যদি মনে করে আবার!”
” কিছুই মনে করবে না। ভাইয়ার এই সময় থাকার কথা নয়। আবার থাকতেও পারে। আর দাদী তো আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আপনি গেলে খুশিই হবে।”
” আরেকদিন আসব। আজ যাই।”
” আচ্ছা।”
ফাহিম চলে যেতেই দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন আয়েশা। মেয়ের কাঁধে হাত রেখে রসিকতার উদ্দেশ্যে বললেন,” আজও এই ছেলেটা তোকে পৌঁছে দিল?”
তারিন অপ্রস্তুত হয়ে বলল,” ফাহিম ভাই যেখানে চাকরি করে সেই জায়গাটা আমার ভার্সিটির কাছাকাছি।”
তারিন মাকে এড়াতেই বাড়িতে ঢুকে পড়ল। আয়েশা মেয়ের পিছু নিয়ে বললেন,” ছেলেটা মনে হয় তোকে অনেক পছন্দ করে। তোর দাদী সেদিন বলছিল এই ছেলেটার সাথে তোর বিয়ের কথা।”
তারিনের চেহারাটা দপ করে নিভে গেল। কঠিন গলায় বলল,” এই বিয়ে টপিক ছাড়া কি আর কোনো কথা নেই তোমাদের? ভাইয়া যে এতোগুলো বছর ধরে কিভাবে সহ্য করল সেটাই ভাবছি। আমি তো দুইবছরেই হাঁপিয়ে উঠলাম।”
” এমন করিস কেন? বিয়ে-শাদি তো করতে হবেই একদিন। তুই মেয়ে মানুষ। তারিফের মতো পাগলামি করার কথা কিন্তু মোটেও চিন্তা করবি না। আর ফাহিম ছেলেটা সত্যি খুব ভালো। ”
তারিন মায়ের দিকে চেয়ে ফ্যাকাশে কণ্ঠে বলল,” ঈশানও তো খুব ভালো ছিল মা। কিন্তু কি হলো শেষমেষ?”
আয়েশার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। প্রসঙ্গ ঘুরাতে বললেন,” আচ্ছা থাক, বাদ দে। যা গোসল করে আয়। টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”
চলবে