তি_আমো পর্ব ৪৫

0
301

#তি_আমো
পর্ব ৪৫
লিখা- Sidratul Muntaz

” ভালো বুদ্ধি পেয়েছি। তুই আর ঈশান ভাই ঝগড়া শুরু কর!”

বসার ঘরের এই মাথা থেকে ওই মাথায় পায়চারী করছিলাম। নিহার কথা শুনে থেমে দাঁড়ালাম,” মানে?”

” মানে তুই আর ঈশান ভাই ঝগড়া করবি। তারপর আমি মোহনা আন্টি আর তারিফ ভাইকে সেখানে ডেকে আনব। তোদের ঝগড়া থামাতে গিয়ে তাদের মধ্যেও ঝগড়া বেঁধে যাবে৷ তারপর ধীরে ধীরে তারা তাদের মনের সব কথা বলতে শুরু করবে। আর ঝগড়ার পরেই কিন্তু ভাব হয়।”

নিহা বুদ্ধিমতীর মতো হাসি দিয়ে চোখ টিপল। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করলাম। অতঃপর ঠোঁট উল্টে বললাম,” না, এটা সম্ভব নয়।”

নিহা মুখ গোজ করে বলল,” কেন?”

” ঈশানের সাথে আমি কি নিয়ে ঝগড়া করব? একটা কারণ তো লাগবে! অকারণে ঈশান নিশ্চয়ই আমার সাথে ঝগড়া করবে না! তাহলে ঘুরে-ফিরে একই ব্যাপার হলো। ঝগড়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।আমাদের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর বদলে সরাসরি মোহনা আন্টি আর ভাইয়ার মধ্যে ঝগড়া লাগানোর আইডিয়াটাই বের কর!”

নিহা আমার কাছে এসে আমার কাঁধ চেপে ধরে বলল,” এই তারু, এই গাঁধী, আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর। ভাইয়া আর মোহনা আন্টি নিজে থেকে ঝগড়া না করলে তো আমরা জোর করে ঝগড়া লাগাতে পারছি না। কিন্তু তুই চাইলেই নিজে থেকে ঈশান ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করতে পারিস। নাহলে তুই এমন একটা কাজ কর যেটা ঈশান ভাইয়ের খুব অপছন্দ। তারপর দেখবি সে নিজেই এসে তোর সঙ্গে ঝগড়া করছে।”

” বুঝলাম। মানে ঈশানকে রাগাতে হবে? এইটা তো দুনিয়ার সবচেয়ে সহজ কাজ!”

” এক্সাক্টলি।”

তারপর আমি আবার চিন্তা করতে করতে বললাম,” কিন্তু ঈশানকে কিভাবে রাগানো যায়? কাজের সময় কিছু মাথায় আসে না। ”

নিহা বলল,” আমি একটা আইডিয়া দেই?”

আমি বেজার মুখে বললাম,” দে। সব আইডিয়া তো তুই-ই দিচ্ছিস। আইডিয়ার গোডাউন!”

নিহা আমার হাত ধরে কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগল। আমিও বাধ্যের মতো তার সঙ্গে হাঁটছি। হঠাৎ মা রণচণ্ডী রূপ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো,” এই তারু, থাম।”

নিহা তাড়াহুড়ো করে বলল, “পরে থামবে আন্টি। আমরা এখন একটা জরুরী কাজ করছি।”

মা আমার আর নিহার হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে দিল৷ ঝারি মেরে বলল,” তারু, তুই কি শুরু করেছিস? খবরদার কোনো উল্টা-পাল্টা করবি না। ওই বিষয় নিয়ে যদি একটুও বাড়াবাড়ি হয় তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

আমি সরল হাসি দিয়ে বললাম,” কিছু হবে না, মা। সত্যি বলছি! আমার উপর ভরসা রাখো।”

এই কথা বলেই আমি দ্রুত নিহাকে নিয়ে কেটে পড়লাম৷ পেছন থেকে মা চিৎকার করে বলল,” তোর কিছু করারই দরকার নেই। আমি যেন না শুনি।”

নিহা জিজ্ঞেস করল,” আন্টি কি বিষয়ে বলছিল?”

” কোনো বিষয় না। তুই তোর আইডিয়ার কথা বল।”

নিহা থেমে দাঁড়াল। তারপর সামনে ইশারা করে বলল,” এইতো আইডিয়া!”

আমি নিহার ইশারা বরাবর তাকিয়েই চমকে উঠলাম,” এটা তো জামশেদ সাহেব।”

” হ্যাঁ ঠিক৷ তুই-ই না বলেছিলি? ঈশান ভাই তোকে জামশেদ সাহেবের আশেপাশে যেতে নিষেধ করেছে? তুই এখন উনার ঘরে গিয়ে বসে থাক। আমি চুপিচুপি ঈশান ভাইকে ডেকে এনে দেখাব। তারপর আমরা যা চাইছি তাই হবে।”

আমি হেসে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বললাম,” ইম্পিসিবল, এটা সবচেয়ে ফালতু আইডিয়া৷ আমি ওই লোকের ঘরে যাবো না।”

” এর চেয়ে বেটার আইডিয়া আমার কাছে আর নেই। ঈশান ভাই তোর উপর সহজে রাগ করবে না। তুই তার গলায় ছুঁরি ধরলেও উনি হেসে বলবেন, আই লভ ইউ।”

আমি দুইপাশে মাথা নেড়ে বললাম,” তবুও এটা পারব না। অন্য যেকোনো কিছু পারব। কিন্তু আই হেইট জামশেদ ভাই!”

” কেন হেইট করিস? কত ভালো একজন মানুষ! ”

” তুই কচু জানিস। উনি আস্তো একটা খচ্চর। মায়ের কাছে শুনেছি, আমি যখন ক্লাস এইটে পড়তাম তখন উনি আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।”

নিহা আমার কথাটা শুনে তুমুল আনন্দিত স্বরে বলল,” ওয়াও। সত্যি?”

” তুই ওয়াও বলছিস কেন? তোর ইয়াক বলা উচিৎ। থু মারা উচিৎ। ”

” এইটা আরও ইন্টারেস্টিং হয়ে গেল না? আগুনে ঘি ঢালার মতো ব্যাপার। ঈশান ভাই শুনলে তো…”

আমি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বললাম,” এই কথা আবার ঈশানকে বলবি না প্লিজ।”

” না বললে তো খেলা জমবে না!”

” অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে। উনি ভাইয়ার বন্ধু হয়।”

” কিন্তু এখন হবে ঈশান ভাইয়ের শত্রু।”

আমি ভীত কণ্ঠে বললাম,” এসব কিছু করার দরকার নেই। শুধু শুধু সকালবেলা একটা কেলেংকারী হবে।”

আমাদের বাক-বিতন্ডা চলছিল। এরই মাঝে জামশেদ সাহেব ডাকলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে থামতে হলো। কারণ ভদ্রলোক আমার নাম ধরেই ডেকেছেন। আমি জোরপূর্বক মুখে হাসি এনে বললাম,” কিছু বলবেন আঙ্কেল?”

লোকটি দরজার কাছে এসে ভ্রু কুচকে বললেন,” তুমি আমার ছোটবোনের মতো। আঙ্কেল কেন ডাকছ?”

” স্যরি, ভাইয়া।”

” আচ্ছা সমস্যা নেই। যেটাই তুমি ডাকো সেটাই শুনতে ভালো লাগে।”

নিহা বিদ্রূপের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। আমার গায়ে আগুন জ্বলছে। কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললাম,” ধন্যবাদ।”

” তোমরা দু’জন অনেকক্ষণ ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছো৷ একটু ভেতরে আসো না, কথা বলি!”

নিহা আমাকে ঠেলে দিয়ে বলল,” যা।”

আমি নিহার হাত ধরে বললাম,” তুইও আয়।”

দু’জন একসাথে ভেতরে ঢুকলাম। নিহা হাসি-খুশি কণ্ঠে বলল,” গেস্ট হাউজ খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন ভাইয়া। আপনার রুচির প্রশংসা করতে হয়।”

জামশেদ সাহেব ঠোঁট উল্টে বললেন,” আমি কিছুই করিনি। সব তারিফের কামাল।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,” ভাইয়ার কথা বলছেন?”

” হ্যাঁ। এই জায়গা আগে এতো সুন্দর ছিল না। তোমার ভাই-ই এখানে মাসের পর মাস এসে থাকতো, সবকিছু দেখে-শুনে রাখতো। তার তদারকিতেই এই জায়গা এখনও এতো সুন্দর।”

আমি বিস্ময় নিয়ে বললাম,” ভাইয়া এখানে মাসের পর মাস এসে থাকতো? কেন?”

জামশেদ সাহেব বেশ অবাক হয়ে বললেন,” তোমরা জানতে না?”

আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে উচ্চারণ করলাম,” কই না তো! কিভাবে জানব? ভাইয়া তো কখনও বলেনি। সে এইখানে কেন আসতো?”

জামশেদ সাহেব জীভ কেটে বললেন,” শিট, তাহলে তো আমার বলে দেওয়া উচিৎ হয়নি। সিকরেট ফাঁস করে দিলাম। তোমার মা মানে আন্টি কিন্তু সব জানে। আমি ভাবলাম তুমিও হয়তো জানো। যাইহোক, তোমার দাদীকে বোলো না। তিনি জানলে রাগ করতে পারেন।”

” দাদীকে আমি কিছু বলব না। প্রমিস করছি। আপনি আমাকে বলুন না, ভাইয়া এখানে কেন আসতো? কারো অপেক্ষায়?”

জামশেদ সাহেব দ্বিধান্বিত দৃষ্টিতে নিহার দিকে তাকালেন। নিহা বলল,” আমার সামনে বলতে অসুবিধা হলে আমি চলে যাই।”

আমি সঙ্গে সঙ্গে নিহার হাত ধরে আটকালাম,” না। ও আমার বেস্টফ্রেন্ড৷ আমি যা জানি তার সবকিছু সেও জানে। তাই ওর সামনেই বলুন। কোনো অসুবিধা নেই।”

নিহা হাত ছাড়িয়ে বলল,” তবুও আমি যাই। ভাইয়া হয়তো আনকমফোর্টেবল ফীল করছে।”

এই প্রথম নিহা আমাকে বিপদের মাঝে একা রেখে পালিয়ে গেল। আর জামশেদ নামক লোকটি বাঁধাও দিলেন না৷ তিনি অন্তত ভদ্রতার খাতিরে হলেও নিহাকে থাকতে বলতে পারতেন। আস্তো অভদ্র লোক! নিহা চলে যাওয়ার পর জামশেদ সাহেব বললেন,” তোমাকে আমি খুব সিকরেট একটা কথা বলতে যাচ্ছি তারু। তোমার আসলে এগুলো জানা দরকার।”

জামশেদ সাহেব আমার কাছে এলেন। আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। তিনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,” খুব গোপন কথা।”

আমি একটু সরে গিয়ে বললাম,” এইখানে কেউ নেই। আপনার এভাবে ফিসফিস করে বলতে হবে না৷”

লোকটি আমার হাতের বাহু টেনে ধরে বললেন,” দেয়ালেরও কান আছে।”

আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম,” কথা বলার সময় গায়ে হাত দেওয়া আমার পছন্দ না।”

লোকটি আমার অপমান গায়ে মাখলেন না। বেহায়ার মতো হেসে বললেন,” আমি তোমার ভাইয়েরই মতো। আনইজি ফীল করার কিছু নেই। ”

আমি বরফের মতো শীতল কণ্ঠে বললাম,” আপনি মোটেও আমার ভাইয়ার মতো হতে পারবেন না।”

লোকটি আমার মুখের কাছে ঝুঁকে এসে বললেন,” ঠিক বলেছ। আমি তোমার ভাইয়ার মতো হতেও চাই না। তোমার ভাইয়া একটা চালবাজ লোক।”

” মুখ সামলে কথা বলবেন ভাইয়া সম্পর্কে। ”

লোকটি হো হো করে হেসে উঠলেন। আমার গা শিরশিরে অনুভূতিটা আবার হচ্ছে। আমি যেকোনো সময় এই লোকের মুখের উপর বমি করে দিতে পারি। জামশেদ সাহেব বললেন,” এই গেস্ট হাউজের আসল মালিক তোমার ভাইয়া।এই কথা কি জানো?”

আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তিনি আরেকটু কাছে এসে বললেন,” আগে এই গেস্ট হাউজের মালিক আমি ছিলাম৷ তোমার ভাইয়ার অনুরোধে দশ বছর আগে আমি বাড়িটা কিনেছিলাম। কিন্তু এমন বাড়ির কোনো প্রয়োজনই ছিল না আমার। তবুও কেন কিনেছিলাম বলো তো? ”

” ভাইয়ার অনুরোধে কিনেছিলেন?”

” হুম। কারণ তোমার ভাইয়া কথা দিয়েছিল পাঁচ বছরের মধ্যে সে এই বাড়িটার টাকা শোধ করে দিবে। আর যদি না পারে, তাহলে আমি যা চাইব তাই দিতে হবে। কিন্তু তোমার ভাইয়ার টাকা শোধ করতে দশ বছর লেগে গেল।”

আমি কোনো জবাব দিলাম না। শুধু শুনছি। জামশেদ সাহেব বললেন,”তোমার ভাইয়া টাকা এখন সম্পূর্ণ শোধ করে দিয়েছে। কিন্তু নিজের কথা রাখেনি। পাঁচ বছরের জায়গায় দশ বছর লেগেছে। শর্ত অনুযায়ী আমি যা চাই তাই পাওয়ার কথা ছিল।”

আমি ঘামতে লাগলাম৷ লোকটি হাসলেন। কিন্তু হাসিটা আমার কাছে প্রচন্ড বিদঘুটে লাগল। জামশেদ বললেন,” তোমার ভাইয়া যেহেতু কথা রাখেনি সেহেতু আমি যা চেয়েছিলাম তা পাইনি।”

আমি ক্রুর দৃষ্টিতে তাকালাম। লোকটির বীভৎস নজর আর বিশ্রী হাসির সামনে ক্রোধ আর অস্বস্তি দু’টোই কাজ করছে। জামশেদ বললেন,” তারু তুমি কি জানো আমি কি চেয়েছিলাম?”

” জানি। মা বলেছে।”

” আন্টি বলে দিয়েছে?”

” হুম। আপনার যেটা পাওনা সেটা আপনার অবশ্যই পাওয়া উচিৎ। ”

আমি এই কথা বলেই সটান করে জামশেদ সাহেবের গালে চড় মারলাম। তখনি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল ঈশান। তার পেছনে নিহা। ঈশান রাগী কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কি হয়েছে তারিন?”

আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম,” কিছু হয়নি।”

” আই সুয়্যার! আই উইল কিল হীম।”

ঈশান আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে জামশেদ সাহেবের দিকে এগিয়ে গেল।

নিহা আমার কাছে এসে গদগদ হয়ে বলল,” ওয়েট ফর দ্যা একশন সিন!”

ঈশান ততক্ষণে অভদ্রলোকের কলার চেপে ধরেছে। জামশেদ কঠিন গলায় বললেন,” ছাড়ো।”

ঈশান চোয়াল বরাবর ভীষণ জোরে একটা ঘুষি মারল। আমি ছুটে এসে বললাম,” উনি কিছু করেননি। প্লিজ ছেড়ে দিন।”

ঈশান চোয়াল শক্ত করে বলল,” কিছু না করলে তুমি চড় মারলে কেন?”

আমি ঢোক গিলে বললাম,” আমার যেটা করার আমি করেছি। আপনি কিছু করবেন না।”

ঈশান জামশেদ সাহেবকে ছাড়ল তবে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা মেরে। জামশেদ সাহেব একটুর জন্য দেয়ালে আঘাত খাওয়ার থেকে বাঁচলেন। আমি ঈশানের হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। এতোবড় ঘটনার পর জামশেদ সাহেব চুপ করে থাকলেন না। এসব নিয়ে সকাল সকাল অনেক ঝামেলা হলো। তাঁর অভিযোগ, আমি আর ঈশান বিনা অপরাধে তাকে আঘাত করেছি। তাকে অপমান করা হয়েছে। যদি ক্ষমা না চাওয়া হয় তাহলে তিনি চলে যাবেন। ব্যাগ-পত্র গুছিয়েও নিলেন। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন ভাইয়া বাঁধা দিবে। কিন্তু মজার বিষয়, ভাইয়াও তেমন কিছু বলল না। জামশেদ সাহেব সত্যি বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন।

সন্ধ্যায় মেহেন্দীর অনুষ্ঠান। আমি মেজেন্টা রঙের শাড়ি পরেছি। নীরা আর রেহেনা প্রায় দুইঘণ্টা ধরে আমার মুখে মেকাপের স্তর বসালো। বেলীফুলের গাজরা, দুল আর মালায় আমাকে সাজানো হলো। আয়নাতে দেখে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিলাম না। মেহেন্দীর আর্টিস্ট আমার পুরো একহাতে বিভিন্ন নকশায় ‘ঈশান’ লিখে ভরিয়ে ফেলল। জঙ্গলের মতো জায়গায় প্যান্ডেল টানানো হয়েছে। সেখানে সবাই নাচ-গান করছে। অনলাইনে খাবার অর্ডার করা হয়েছে। সবার মনেই ফুরফুরে আমেজ। শুধু দু’জন মানুষের মনে চলছে অবাধ ঝড়। ভাইয়া অযথাই সবার সঙ্গে চেঁচামেচি করছে। ছোট্ট একটা বিষয় নিয়েও খুব রেগে যাচ্ছে। মোহনা আন্টি যেখানে সবসময় হাসি-খুশি থাকেন সেখানে আজ তিনি সবচেয়ে শান্ত। নিহা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে এসব বলছিল। আমি মনখারাপ করলাম। নিহা বলল, “তারু জানিস, ঈশান ভাই কিন্তু একটা লেমন কালার পাঞ্জাবী পরেছে।”

” তো এই কথা এমন ফিসফিস করে বলার কি আছে? তুই দিন দিন আঁতেল হয়ে যাচ্ছিস।”

” আরে, কেন বলছি সেটা আগে শোন!এই পাঞ্জাবী চয়েজ করেছে সামিয়া। আমি বললাম তারুর লেমন কালার পছন্দ না। সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরুন। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না।”

” কি আশ্চর্য! সামিয়ার পছন্দের এতো মূল্য আর আমার পছন্দের মূল্য নেই?”

” সেটাই তো।”

” আচ্ছা থাক, বাদ দে।”

” তুই এতো সহজে বাদ দিবি?”

” তো এখন কি এই ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে আমি ঝগড়া করব?”

” অবশ্যই করবি। আমরা তো ঝগড়া করার কারণই খুঁজছিলাম।”

আমি চট করে নিহার দিকে তাকালাম। নিহা বলল, ” ঈশান ভাই ব্রীজের কাছে আছেন। সেখানে আর কেউ নেই। তুই গিয়ে ঝগড়া শুরু কর। আমি তারিফ ভাই আর মোহনা আন্টিকে ডেকে আনছি।”

” তুই কি শিউর যে আমাদের ঝগড়া থামাতে এসে তারাও ঝগড়ায় লেগে যাবে?”

” নাইন্টি পার্সেন্ট শিউর। এটলিস্ট ট্রাই তো করি!”

ঈশানকে লেমন কালার পাঞ্জাবীতে এতো সুন্দর লাগছে যে আমার একটুও ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলো না। ঈশান তো আমাকে দেখে হাঁ করেই তাকিয়ে রইল। আমি খিটমিট করে বললাম,” কি? চিনতে পারছেন না? আমি তারিন।”

ঈশান হেসে বলল,” চিনতে পারব না কেন? কিন্তু তোমাকে অন্যরকম লাগছে।”

” জানি। মেকাপ করার পর আমার চেহারাই বদলে গেছে।”

” না, সুন্দর লাগছে।”

আমি ঝারি মেরে বললাম,” কিন্তু আপনাকে একদম সুন্দর লাগছে না।”

ঈশান আহত কণ্ঠে বলল,” কেন?”

” এটা কি পরেছেন আপনি? এতো বিশ্রী রঙ আমি আগে কখনও দেখিনি।”

” আচ্ছা৷ তাহলে কি চেঞ্জ করে ফেলব?”

” থামুন। চেঞ্জ করবেন কেন? আপনি এটা কার পরামর্শে পরেছেন সেটা বলুন।”

” সবাই বলছিল তাই।”

” সবাই বলছিল নাকি সামিয়া বলছিল?”

” হ্যাঁ সামিয়াও বলেছে। কিন্তু প্রবলেমটা কি?”

” অবশ্যই প্রবলেম আছে। আপনি সামিয়ার কথা কেন শুনবেন?”

ঈশান অবাক হয়ে তাকাল। আমি অগ্নি কণ্ঠে বললাম,” আমি আপনাকে সাদা পাঞ্জাবী পরতে বলেছিলাম। আমার কথার চেয়েও কি সামিয়ার কথার মূল্য বেশি?”

” তারিন, তুমি আমাকে এই বিষয়ে কিছুই বলোনি।”

” অবশ্যই বলেছি। আপনি ভুলে গেলে সেটা কি আমার দোষ? এখনি আমার কথা ভুলে যান। মানে কোনো গুরুত্বই নেই। বিয়ের পর তো মনে হয় আমার নামও ভুলে যাবেন। ”

ঈশান হাসতে হাসতে বলল,” তোমার কি শরীর ঠিকাছে? সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এমন করছ কেন?”

” এটা আপনার কাছে সামান্য বিষয় মনে হয়? ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আপনি লন্ডনে বড় হয়েছেন। আপনার কাছে তো বিয়ের মতো একটা বিষয় সামান্যই মনে হবে।”

” হোয়াট রাবিশ! কিসের সাথে কি মেলাচ্ছো তারিন?”

ঈশান রেগে যাচ্ছে। পেছনে দেখলাম মোহনা আন্টি আর ভাইয়া এদিকেই আসছে। তাদের চেহারায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ। নিহা আমাকে ইশারায় থাম্বস আপ দেখালো। আমি আরও চেঁচিয়ে ঝগড়া শুরু করলাম,” এখন আমার সাথে আপনি গলা উঁচু করেও কথা বলছেন? বিয়ের আগেই এই অবস্থা? বিয়ের পর তাহলে কি করবেন? আমার গায়ে হাত তুলবেন? আমিও তুলতে পারি। ছোটবেলা থেকে একশন মুভি দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। অনলাইনে ক্যারাটের কোর্সও করেছি। আপনি একটা দিলে আমি দশটা দিবো।”

আমাদের এতো সুন্দর পরিকল্পনায় জল ঢেলে ঈশান এই তুমুল ঝগড়ার মাঝেই আমার কোমর চেপে ধরে আমার ঠোঁটে চুম্বন করল। তার এমন আচরণে আমি বরফের মতো জমে গেলাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here