তুই শুধু আমার ভালোবাসা,পর্বঃ১

0
4931

#তুই শুধু আমার ভালোবাসা,পর্বঃ১
#Hridita_Hridi

কিরে ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আচমকা কারো কথা শুনে, হকচকিয়ে উঠে
পিছন ফিরে তাকাতেই বুঝতে আর বাকি রইলো না,
যাকে নিয়ে আমার মনে ভয় এই কন্ঠের মালিক সেই ব্যাক্তিটিই। আর যাই হোক এই চিরোচেনা কন্ঠ ভুলি
কি করে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে যে কতো লক্ষাধিক বার শুনেছি এই কন্ঠস্বর তার কোন ইয়ত্তা নেই।

কাকে দেখতে এসেছিস ছাদে জবাব দিচ্ছিস না কেন? ধমকের সুরে আবারও প্রশ্ন করায় আমি ভাবনার
জগৎ থেকে বেরিয়ে এসেছি ঠিকই, কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারছি না।
উত্তর দিবো কি করে আমার তো হাত পা রীতিমত কাপাকাপি শুরু করেছে। জানি না আজ আবার কি কি শুনতে হবে আমাকে।

মাথা নিচু করে দাড়িয়ে এসব ভাবছি তখনি বর্ষণ
ভাইয়া আমার সামনে এসে মুখ গম্ভীর করে বললো
কথা বলছিস না কেন?

আমি আমতা আমতা করে বললাম আ আ আসলে ভ্ ভা ভাইয়া….

বর্ষণ ভাইয়া আমার কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, থাক আর বলতে হবে না, এ সময়টাতে যে বাসার এপাশে ওপাশে রাস্তায় শত শত ছেলেদের আড্ডা জমে সেটা আমি জানি।
সে কারনেই যে তোর এই সময় ছাদে আসা সেটাও আমি জানি। তোদের মতো মেয়েদের আমি খুব ভালো করে চিনি।

ভাইয়ার বলা কথাগুলো শুনে বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, কথা বলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছি আমি।

ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, চোখ দুইটা রক্তবর্ণ হয়ে গেছে, যেন চোখ দিয়ে আগুন ঝরে পরছে। রাগে ফর্সা গাল দুটো পাকা টমেটোর মতো হয়ে গেছে। নাকের ডগা লাল টুকটুকে হয়ে আছে মনে হচ্ছে টোকা দিলেই রক্ত ঝরে পরবে এক্ষুনি।

টলমল চোখেই একনজর ভাইয়াকে দেখে চোখ নামিয়ে নিলাম, চোখের জল যে আজ বাঁধ মানবে না সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি ?

তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আ আমার একা একা ভালো লাগছিল না,খুব মন খারাপ করছিল, তাই একটু ছাদে আসছিলাম। আমি আ……

বাকি কথা শেষ করতে না দিয়েই ভাইয়া বললো শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে আসিস না। ছেলেগুলো তোকে কিভাবে দেখছিল সেটা আমি দেখেছি ? এক্ষুনি ছাদ থেকে রুমে যা।

ভাইয়ার পিঞ্চমারা কথা গুলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনলেও, ঠিক হজম করতে পারলাম না। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করতে করতে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।

বিছানায় পরে বালিশে মুখ গুজে কতক্ষণ চোখের জল ফেলেছি তার ঠিক নাই। আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে, আমি কি এতোটাই খারাপ? ভাইয়া আমাকে কিভাবে বলতে পারলো, আমাদের মতো মেয়েদের ভালো করে চেনে? ছোটবেলা থেকে রুপ ভাইয়া এই চিনলো আমাকে?

মাগরিবের আজানের ধ্বনি কানে আসতেই, বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। ওযু করে নামাজ পড়ে জায়নামাযে বসে আছি । চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে, চেষ্টা করেও আটকাতে পারছি না। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটায় কেমন যেন অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ কলিজাটা টেনে ধরে আছে। এমন সময় মামনীর (বর্ষণ ভাইয়ার আম্মা) ডাক পড়লো,,, মেঘু পাখি ও মেঘু পাখি কই তুই?

আমি তারাহুরো করে চোখের পানি মুছে, মুখে হাসি টেনে বললাম এইতো মামনী নামাজ পড়লাম।

মামনী তখন বলে উঠলো, কিরে সারা বিকেল কোথায় ছিলি একবারও বের হলি না।

আমি বললাম, আসলে মামনী ভালো লাগছিল না, তাই রুমেই ছিলাম বলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
একটু মিথ্যে বলতেই হলো। তা না হলে মামনী আবার বর্ষণ ভাইয়া কে বকা দেবে। যেটা আমার একদমি ভালো লাগবে না।

মামনী তখন আমার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে বললো
মা- বাবা কে মিস করছিস? আমরা কি কোন ভাবে তোকে কষ্টে রেখেছি? নাকি আজও আমাদের আপন ভাবতে পারিসনি?

মামনীর কথাগুলো শুনে, কেন যেন আম্মুকে খুব মনে পরছিল। মনে হচ্ছিল আম্মু যদি এই মুহুর্তে আমার পাশে থাকতো তাহলে তার কোলে মাথা রাখলে হয়তো কষ্টটা কমে যেত। তার ভালবাসার হাতের স্পর্শে ভুলিয়ে দিত সকল দুঃখ।

মামনী তখন কাঁধে হাত রেখে বললো কিরে কি ভাবছিস?
আমি বললাম কিছুনা মামনী। বলেই জরিয়ে ধরলাম মামনীকে। মামনী ও ভালবেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।

মামনী বললো মেঘু নিচে চল, আমি বললাম মামনী তুমি যাও আমার ভালো লাগছেনা আমি একটু একা থাকতে চাই।
বলেই মনে মনে বললাম, আমি কিছুতেই তোমার ছেলের সামনে যেতে চাইনা মামনী, আমি জানি এখন নিচে গেলে তোমার বদমাইশ, ইতর, ঢেঁড়শ ছেলের সামনে পারতে হবে। মামনী বললো খাবি না?

মামনীর কথায় আমি বললাম না মামনী আজ খেতে ইচ্ছে করছে না তোমরা খেয়ে নিও রাতে, আমাকে ডেকোনা।

মামনী মাথায় হাত বুলিয়ে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। আমিও হাঁটতে হাঁটতে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।

এই সুনসান নিস্তব্ধতা যেন আকাশকে আরও বিশাল করেছে,, আর আমার হৃদয়ের শূন্যতা ও যেন আরও দ্বিগুণ হয়েছে ।

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আনমনে, আর ভাবছি মামনী কতো ভালো একটা মানুষ, বাবাইটাও (বর্ষণের বাবা) কতো ভালো কিন্তু তাদের ছেলেটা এমন বদমেজাজী রাক্ষস কেন? সবসময় রেগে কথা বলে। রাগী হনুমান, মুখ সবসময় গম্ভীর করে রাখে, ঠিক বাংলার পাঁচ এর মতো। আচ্ছা মুখ কি কখনো বাংলার পাঁচ হয় নাকি ? এটা ভেবেই ঠোঁটের কোনে এক ঝিলিক হাসি ফুটে উঠলো আমার। মনে মনে ভাবছি সে ওর যা খুশি করুক, যেমন খুশি মুখ করে থাকুক তাতে আমার দাদা নানার কি? ঐ কাকতাড়ুয়াকে নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। কথাটা বলতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আপনা-আপনি। আবার মনে মনে বলছি সত্যি কি বর্ষণ ভাইয়াকে নিয়ে আমি ভাবি না??

এশার আজান কানে আসতেই বেলকনি থেকে সোজা ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিলাম। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।

তারপর রুমের লাইট অফ করে, জিরো পাওয়ারের লাইট টা অন করে বেডে গা এলিয়ে দিতেই কারও গলার আওয়াজ ভেসে আসলো। বর্ষা আপু নিচে যাবেনা?

বুঝতে আর সময় লাগলো না এটা নিপু। নিপুকে বললাম না রে নিপু ভালো লাগছে না। মামনী কে বল আমি ঘুমাবো। আমায় যেন না ডাকে।

মামনী আমাকে জোর করেনি রাতের খাবার খাওয়ার
জন্য । কারণ সে জানে যেদিন মন খারাপ থাকে আমার সেদিন আমি কিছু খাইনা। আমি খাবো কি করে বলুনতো!! একচুয়েলি আমার তো কিছু খেতেই ইচ্ছে করে না।

আমি জানি আমি আজ কিছু খাবোনা বলে, মামনী ও কিছু মুখে তুলবে না। কিন্তু আমি চাইছি না রুপ ভাইয়ার সামনে যেতে।

চলুন এবার আমাদের পরিচয়টা দিয়ে দিই –

আমি মেঘলা ইসলাম বর্ষা। মাসুদ ইসলাম এবং মিসেস মাহবুব ইসলামের একমাত্র রাজকন্যা।

যে আমায় বকাবকি করল মানে বর্ষণ ভাইয়া তিনি হলেন –
রায়হান খান এবং মিসেস রোমা খানের একমাত্র সন্তান।
শ্রাবন আহমেদ বর্ষণ।

আমার বাবা আর বর্ষণ ভাইয়ার বাবা দুজন বাল্যকালের বন্ধু।

আর যে মেয়েটা আমায় ডাকতে এসেছিলো, সে হল নিপু। এ বাসার সব দিকটা ও দেখাশোনা করে। তবে ওকে মেইড সার্ভেন্ট বলা চলে না। কারণ তার আরও একটা পরিচয় আছে যেটা আপনারা গল্প পড়তে পড়তে জানতে পারবেন।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here