#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#পর্ব_02,03
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব_02
ভা-ভা-ভাইয়া আসলে তুমি ভুল বুঝতেছ।ও হচ্ছে রাহাত। আমার বন্ধু। আর ও মিতুকে প্রপোজ করেছে।মিতু ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে।তাই খুশির ঠেলায় বেচারা আমাকে জড়িয়ে ধরছে।এর বেশি কিছু না।কথাগুলি একনাগাড়ে বলে কেটে পড়লাম শুভ্র ভাইয়ার সামনে থেকে ক্লাস করার উদ্দেশ্যে।
নয়নার বাচ্চা আসকে ভার্সিটিতে আসে নাই।তাই ব্রেক টাইমে একা একা ভার্সিটির চত্বরে বসে আছি।এমন সময় একটা পিচ্চি ছেলে এসে আমার হাতে কতগুলো ফুল আর একটি চিঠি দেয়।ভাবি, এগুলো ভাইয়া দিছে বলে একদৌড়ে পালাল।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আর ভাবতে লাগলাম ওই ছেলেটা আমাকে কেন ভাবী বলল”।ফুল আমার অনেক পছন্দ। তাই ফুলের একবার ঘ্রান নিয়ে এগুলো ব্যাগে ভরে রেখে দিলাম।নয়তো শুভ্র ভাইয়া দেখলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
এইদৃশ্য দূর থেকে দেখে উপভোগ করছে এক তরুন।আর বলছে ,
প্রেয়সী তুমি কবে বুঝতে পারবে আমার অনুভূতি। তোমার উপর আমি প্রতিদিন নতুনভাবে প্রেমে পড়ছি।আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে রাজি।
ভার্সিটি শেষে শুভ্র ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ওনি গাড়ি নিয়ে আসতেই সামনে বসে পড়লাম।ওনার মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভিং করছে আর মাঝে মাঝে আড়চোখে আমাকে দেখছে।কিন্তু ওনি হঠাৎ ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করলেন পিচ্চি আইসক্রিম খাবি?
আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না।যে কিনা আমি আইসক্রিম খাব বায়না করলে ধমক দেয় সেই ব্যক্তি নিজ থেকে আইসক্রিম অফার করছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম,আপনি আমাকে আইসক্রিম খেতে বলছেন ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না।কোনো কিন্তু তো অবশ্যই আছে। আইসক্রিমের মধ্যে বিষ মিশিয়ে আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছেন নাকি আবার!
শুভ্র ভাইয়া নির্দিদায় বললেন, খেলে খাবি না খেলে নাই।
আইসক্রিমের লোভ সামলাতে না পেরে বললাম খাব।
শুভ্র ভাইয়া বললেন চল।
আমিও নাচতে নাচতে আইসক্রিম খেতে চললাম
______________ _______________
ভার্সিটি থেকে এসে রুমে ফ্রেশ হয়ে দরজা আটকিয়ে বসেছি চিঠিটা পড়ার জন্য।
প্রিয় নিরাপরী,
তুমি কি আমার অনুভূতি কখনোই বুঝবে না প্রেয়সী! আর কত অপেক্ষা করতে হবে আমাকে!আমি তোমাকে শেষ কাল অবধি ভালবাসব! তুমি আমাকে ভালোবাসো কী না জানি না।জানার প্রয়োজন ও নেই। কারণ তুমি চিরকাল আমার! তুমি যা কিছু করো না কেন তাতে আমার ভালবাসা এতটুকু ও কমবে না।
ইতি
তোমার প্রেমে আসক্ত অগোছালো প্রেমিক
চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষন থ মেরে বসে রইলাম আর কে লিখতে পারে ভাবতে লাগলাম।ভাবতে ভাবতে যে কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি।
এদিকে শুভ্র ওর কাকিমা মানে নিরার মায়ের সাথে কথা বলছে,
কাকিমা এভাবে আর কত দিন?সত্যিটা ওকে জানানো উচিত।
নিরার মা বলল,বাবা আগে অরিনের ঝমেলাটা মিটোক তারপর।
শুভ্রের মা তখন বলল,ভাবী এত তাড়াহুড়োর কিছু নাই।
___________________ _____________
আমার ঘুম ভাঙে শুভ্র ভাইয়ার চিৎকারে,পিচ্চি রাত ৮ টা বাজে তোর কোনো খবর আছে?দরজা খোলে পড়তে বস।
আমি তাড়াতাড়ি চিঠিটা ডায়রির বাজে রেখে দরজা খোললাম।
শুভ্র ভাইয়া বলল,কি সমস্যা? তোর কি শরীর খারাপ!
আমি তড়িৎ গতিতে বললাম,না না।চোখটা একটু লেগে গেছিল আরকি
শুভ্র ভাইয়া আচ্ছা, পড়তে বস বলে চলে গেল
আমি পড়তে বসলাম।যদিও বিন্দুমাত্র মনযোগ ও নেই।ভাবছি ওই চিঠির কথা।
কিছুক্ষন পর মেসেজের টুংটুং আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসি।ফোন হাতে নিয়ে দেখি শুভ্র ভাইয়া মেসেজ:
হিসাববিজ্ঞান যে অংকগুলো করতে দিছিলাম ওই খাতাটা আমার রুমে রেখে আয়।আমি বাহির থেকে এসে রাতে তোর খাতা চেক করব।আমি মনের ভিতর একরাশ ভয় নিয়ে খাতাটা রেখে আসলাম আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম। আল্লাহ,এবারের মতো বাঁচাইয়া দাও। এখন থেকে ঠিক মতো পড়ব।আর পড়া ফাঁকি দিব না।
শুভ্র ভাইয়া কিছুক্ষন আগে বাসায় এসেছে।আমার ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি ভাইয়া আসার আগে ভাইয়াকে ইমপ্রেস করার জন্য ভাইয়ার রুম গোছিয়ে রাখছিলাম। যদি ও জানি কোনো লাভ নেই। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!ভাইয়া আসার পর নিজের হাতে ভাইয়ার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেছি।কারন একটাই শাস্তি একটু কম পাওয়ার চেষ্টা।
আমাকে দেখে শুভ্র ভাইয়া বলল সূর্য আজকে কোন দিকে উঠছে!আমি বলার আগে তুই নিজের ইচ্ছাই আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছিস।তোর মতলব টা কি!
আমি হালকা হেসে বললাম, এমনি। যদিও ভাইয়া যে আমার কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেনি আমি নিশ্চিত। কফিটা ভাইয়ার হাতে দিয়ে রুম থেকে কেটে পড়লাম।
রাতে সবাই একসাথে ডিনার করছি।বাবা বলল,আমার কিছু কথা বলার আছে।আমরা সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
অতঃপর বাবা বলল…….
চলবে
#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব৩
রাতে সবাই একসাথে ডিনার করছি।বাবা বলল,আমার কিছু কথা বলার আছে।আমরা সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
অতঃপর বাবা বলল, অরিন এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে। ওর বিয়ের ও বয়স হয়েছে। কালকে আবিরের মা-বাবা এসে বিয়ের পাকা কথা বলে ডেইট ফাইনাল করে রেখে যাবে।অরিন মা কি বলো তুমি?তোমার কোনো আপত্তি আছে?
আরিন আপু বলল,কাকা তোমরা যা ভালো মনে করো তাই হবে।
আমার একদিক দিয়ে খুশি ও লাগছে কারন অরিন আপুর বিয়েতে অনেক মজা করতে পারবো আবার কষ্ট ও লাগছে কারন বিয়ের পর তো অরিন আপু আবির ভাইয়াদের বাড়িতে থাকবে এবাড়ি ছেড়ে।এসব কথা ভাবতে ভাবতে খাওয়া শেষ করলাম।পরে চিন্তা করলাম ঘুমানোর আগে অরিন আপুকে একটু বিরক্ত করে আসা যাক।যেই কথা সেই কাজ।
অরিন আপুর দরজায় নক করে বললাম, অরিন আপু আসব!
অরিন আপু বললেন,আরে ভিতরে আয়।
আচ্ছা অরিন আপু তোমার খুশি লাগছে না যে, অারিব ভাইয়ার সাথে ৩ বছরের রিলেশন পূর্নতা পেতে যাচ্ছে। আমি বললাম
অরিন আপু বলল,খুশিতো লাগছেই,কিন্তু তোদের জন্য অনেক খারাপ লাগছে।
আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, আচ্ছা আপু আবির ভাইয়ার কোনো ছোট ভাই নাই!থাকলে আমাকে ও একটু লাইন করিয়ে দেও
আপু রাগীভাবে বলল, শুভ্রকে গিয়ে বল।ও তোকে লাইন করিয়ে দিবে।
আমি মুখ বেকিয়ে আপুর রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। হঠাৎ মোবাইল এ দেখি শুভ্র ভাইয়ার মেসেজ।
তাড়াতাড়ি মেসেজ ওপেন করে দেখি ওনি লিখেছেন,তোর হিসাববিজ্ঞান খাতা আমার দেখা শেষ। আমার রুমে এসে খাতা নিয়ে যা, ডাফার।ওনার মেসেজ দেখে আমি ভয়ে শেষ। আমি আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ওনার রুমে গেলাম।
দরজায় নক করে বললাম মে আই কাম ইন!
শুভ্র ভাইয়া গম্ভীর কণ্ঠে বললো, ইয়েস।তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।এই যে তোর খাতা,নে চেক কর।
খাতাটা হাতে নিয়ে আমার চোখ কপালে উঠল।খাতার উপরে বড় বড় করে ডাবল জিরো লেখা।আমি ঢোক গিলে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ওনি বলে উঠল,কাকাই কে বলে অরিন আপুকে বিয়ে দেওয়ার সঙ্গে তোকে ও বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আমি মুখ ফসকে বলে ফেলি,আমাকে সময় মতো বিয়ে দিলে এতো দিনে আমি দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতাম। আপনি মামা ডাক শুনতে পারতেন।
শুভ্র ভাইয়া বলল,মামা না বাবা ডাক শুনতে পারলেই হবে।
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,কি!
শুভ্র হালকা হেসে বললেন, না কিছু না।আমি বললাম যে,তোর মতো পিচ্চিকে ভুলে ও কেউ বিয়ে করবে না।তোকে সারাজীবন কুমারী থাকতে হবে।
আমি দেখা যাবে বলে রুম থেকে বের হতে নিতেই ওনি বলল,খাতাটা নিয়ে যা।আর শাস্তি হিসেবে কি নিবি ভাবতে থাক।
শীতের সকাল কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় ঢাকা।সামনের কোনোকিছু ঠিকমতো দেখা যায় না, সবকিছুই অস্পষ্ট মনে হয়। কখনো কখনো কুয়াশার স্তর এত ঘন থাকে যে, দেখলে মনে হয়, সামনে কুয়াশার পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।গভীর রাত থেকে গাছের পাতায় শিশির বিন্দু জমতে থাকে। আর ভোররাতে শিশিরকণা বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে।সুর্য্যের সোনালী আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল।আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম।আমার বড়াবড় শুভ্র ভাইয়া বসে আছে।ওনাকে আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। ব্লাক জিন্স, সাদা শার্ট হাতা ভাজ করে রাখা,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি,সিল্কি চুলগুলো কপালের উপর পড়ছে।আমি ভাবতে লাগলাম ছেলেরা ও এতো সুন্দর হয়!আমি ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসলাম ওনার ধমকে।
শুভ্র ভাইয়া বললো,কি ভাবছিস!লেট হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি খা।নয়তো আমি তোকে রেখেই চলে যাব।আমি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম
ব্রেক টাইমে নয়নার সাথে কথা বলছিলাম এমন সময় শুভ্র ভাইয়া ফোন দিয়ে বলল,বাসায় যেতে হবে।অাবির ভাইয়ারা বাসায় আসবে।তাই নয়নার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।গাড়ি আপন গতিতে চলছে।আমি নিরবতা কাটিয়ে উঠে শুভ্র ভাইয়া কে বললাম,আপনি কি আজকে কোথাও যাচ্ছেন?
শুভ্র ভাইয়া বলল,না।কেন?
না এমনি।আচ্ছা আপনাকে একটা পার্সোনাল প্রশ্ন করি,আমি বললাম
উনি মনোযোগ ড্রাইভিং এ রেখেই ছোট করে বললেন, বল।
আমি তড়িৎ গতিতে প্রশ্ন করলাম,আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
শুভ্র ভাইয়া আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,ইয়েস।একজনকে ভালোবাসি নিজের চেয়েও বেশি।
উনি কাউকে ভালোবাসে কথাটা শুনে কেন জানি না আমার খুব খারাপ লাগল।কিন্তু কেন তার উত্তর আমার অজানা।সারা রাস্তা আমাদের আর কোনো কথা হয়নি
____________ _______________
এদিকে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে একজন যুবক।আর বলছে,শুভ্র আমি তোকে এর চেয়ে ও বেশি যন্ত্রনা দিব তুই যতটা আমাকে দিয়েছিস।ইভেন এখনো দিচ্ছিস।প্রতিটা মুহুর্তে আমাকে যন্ত্রনা পেতে হচ্ছে। আমি আমার সাথে ঘটা সবকিছুর প্রতিশোধ নিব যেকোনো মুল্যে।আমি যতটা ছটফট করেছি এর চেয়ে অনেক বেশি ছটফট তোকে করতে হবে আই প্রমিজ।আমি আমার জিনিস কেড়ে নিতে খুব ভালো করে জানি।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
________________ _______________
এদিকে শুভ্র ওর কাকিমাকে বলছে, কাকিমা আমার মনে হচ্ছে ওর অতীত আবার ফিরে এসেছে। আমাদের ওকে ওর অতীত এর বিষয়ে জানানো উচিত আর ওকে সাবধান ও করা উচিত।অতীত ফিরে এসেছে মানে!তাহলে কি আবারো কথাটা বলে ওনি থমকে গেলেন।শুভ্রের মা ও এবিষয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত।
অরিন আপুর বিয়ের কথা ফাইনাল করা হয়েছে।সামনের মাসে বিয়ে।কিন্তু কেন জানিনা আমি আনন্দ করতে পারছি না। আমার মনে একটা কথাই ঘুরছে শুভ্র ভাইয়া অন্য কাউকে ভালোবাসে! কিন্তু আমার কেন এমন লাগছে?ওনি ও তো মানুষ। ওনি ও কাউকে ভালোবাসতেই পারে তাতে আমার কি!কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে ওই চিঠি ওনি আমাকে দিয়েছেন।এমনকি চিঠির লেখাগুলো ও ওনার লেখার মতো।
এদিকে নিরার বাবা শুভ্র আর শুভ্রের বাবা মাকে ডাকিয়েছে।তারপর উনি বলল,শুভ্র আমাকে সবকিছু খুলে বলেছে।এখন আমি চাইছিলাম যে….
চলবে……