#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#সুচনা পর্ব
#লেখক_ছোহা_চৌধুরী
ভার্সিটি থেকে এসে সোজা সোফায় গা এলিয়ে বসতেই আম্মু সরবত নিয়ে এসেছে ।
নে মা,কলেজ থেকে আসছিস সরবত খা,আম্মু বলল।
বেশি করে সরবত খাওয়াও কাকিমা তোমার গুণধর মেয়েকে।আর কাকাই কে বলে আরেকটা এনড্রয়েড ফোন কিনে দাও যাতে বেশি করে ফোনে কথা বলতে পারে। বলে আমার গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসালো শুভ্র ভাইয়া।
কি হয়েছে রে শুভ্র?আম্মু জিজ্ঞেস করল।
কি হয়নি কাকিমা সেটা বল!আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে শুভ্র ভাইয়া উওর দিল
শুভ্র ভাইয়ের চাহনি দেখে আমি নিশ্চিত আজকে কপালে শনি আছে।
কার মুখ দেখে আজকে ঘুম থেকে উঠেছিলাম আল্লাহ জানে,বিরবির করে বলতে লাগলাম।
স্টুপিডের মতো দেখছিস কি? তোর গুনকির্তিগুলো কাকিমাকে বল। শুভ্র ভাইয়ার কথায় ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসলাম আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম কি বলব আমি!
শুভ্র ভাইয়াকে বললাম কি বলব?
ও জানিস না কি বলবি?আমিই বলছি তোকে কষ্ট করতে হবে না, ইডিয়ট কোথাকার।
তারপর শুভ্র ভাইয়া আম্মু কে সম্পূর্ণ কাহিনী খোলে বলল।আমি নিরব দর্শকের মতো হা হয়ে শোনতে লাগলাম।
চাচিমা বলল,তার জন্য শুভ্র তুই মেয়েটার গায়ে হাত তুলবি?
সাথে সাথে আম্মু বলল,শুভ্র আরো আরো দুইটা থাপ্পড় লাগা,বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।
আহ,ভাবি বাচ্চা মেয়ে তাই বুঝতে পারেনি হয়তো, চাচিমা বলল
তোমরা আদর দিয়ে দিয়েই ওকে মাথায় তোলেছ, তোর সাহস কি করে হয় ছেলেদের সাথে ফ্লাট করার।তোকে কি এজন্য ভার্সিটিতে পাঠানো হয়???ছি! তোর এতোটা অধঃপতন হয়েছে পিচ্চি।
ফ্লাশব্যাক,
আমার বেষ্টি নয়নাকে রিক নামের একটা ছেলে খুব বিরক্ত করত।শুধু ওকে না ভার্সিটির প্রত্যেকটা মেয়ে কে বিরক্ত করত।আমি উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য রিকের ফোন নম্বর জোগাড় করি। তার সাথে ফোনে কিছু দিন কথা বলি ও প্রেমের অভিনয় করি। তারপর দেখা করার নাম করে রেষ্টুরেন্ট এ আনিয়ে আমাকে বিরক্ত করে বলে গনদোলাই খাওয়াই।যা শুভ্র ভাইয়ের কানে যায়।কিন্তু কিভাবে ওনার কানে গেল তা আমার অজানা।তারপরের টুকু তো দেখলেনই।
এখন পরিচয়ে আসি,
আমি নিরা।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ।পরিবারের সবার অনেক আদবের ।আমার একমাত্র চাচার ছেলে শুভ্র নীল আহমেদ ভাইয়া ও বড় মেয়ে অরিন আপু।শুভ্র ভাইয়া৫ফুট ১১ইঞ্চি লম্বা ও দবদবে সাদা গায়ের রংআর জিম করা বডি। ওনার কিলার লুক আর এটিটিউড এর কারনে প্রত্যেকটি মেয়ে ওনার প্রেমে পড়তে বাধ্য। যদিও আমি এর ব্যতীক্রম।আমার চিরশত্রু ওনি।ভাইয়া ও আমি একই ভার্সিটিতে পড়ি। ভার্সিটি ক্রাস শুভ্র ভাইয়া। ভার্সিটিতে টপার।বেশ নামডাক আছে ওনার।অনেক মেয়েরা ওনাকে প্রপোজ করেছে।কিন্তু ওনি সব-কয়টা রিজেক্ট করে দিয়েছে।আমি শুভ্র ভাইয়ের ৩ বছরের ছোট।আমি একমাএ শুভ্র ভাইয়াকেই ভয় পাই।আর উনিই একমাত্র আমাকে শাসন করে।অন্যদিকে অরিন আপু অনেক ভালো।আমার সব আবদার পূরন করে।আমাকে অনেক আদর করে। আমি মাঝে মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যাই যে একই মায়ের দুই সন্তান এমন বিপরীত কি করে হয়?নাকি আবার শুভ্র ভাইয়া হাসপাতালে জন্মের সময় অন্য বেবির সাথে উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে! যদি ও পরিবারের সবাই ওনাকে নিয়ে বেশ গর্ব বোধ করেন।
বর্তমানে,
আমার হুস ফিরে শুভ্র ভাইয়ের রাম ধমকে। উনি আমাকে কিছুক্ষন বকাবকি করে আর আর শাস্তি হিসেবে হিসাববিজ্ঞান অনেক অংক সমাধান করতে দেয়।আমি হিসাববিজ্ঞান অনেক কম পাড়ি। এজন্য হিসাববিজ্ঞান পড়া সবচেয়ে বেশি এড়িয়ে যাই। আর শুভ্র ভাইয়া আমাকে কিনা শেষমেশ হিসাববিজ্ঞানই করতে দিলেন।এজন্য মনে মনে আমি ওনাকে ইচ্ছে মতো গালি দিতে থাকি।
শয়তান,অসভ্য, ইচ্ছে করছে লাথি দিয়ে উগান্ডা পাঠায়া দিতে।আপনি জীবনে ও বউ পাবেন না।
আমাকে গালি দেয়া শেষ হলে নিজের রুমে যা,শুভ্র ভাইয়ার কথায় আমার হুশ ফিরে।
উনি আমার মনের কথা কিভাবে বুঝতে পারেন ভাবতে ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে যাই।
____________ __________
আমি রাতে পড়তে বসি।কারন কালকের মধ্যে পড়া শেষ না হলে কপালে শনি আছে ।কিন্তু কিছু সময় পড়ে চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই বইয়ের উপর ঘুমিয়ে পড়ি।
শুভ্র নিজের রুমে ঘুমতে যাওয়ার আগে চিন্তা করল নিরা কি করে তা গিয়ে দেখে আসা যাক।রুমে গিয়ে দেখল নিরা বই এর উপর ঘুমাচ্ছে। পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে নিরার উপর পানি ঢেলে দেয়।তাই হঠাৎ করে পানি ঢেলে দেয়ার কারনে নিরা লাফ দিয়ে উঠে।
বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে বলে চেঁচিয়ে উঠি।কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়ানো আর ওনার হাতে পানির গ্লাস। তাই বুঝতে আর বাকী রইল না যে উনিই আমার উপর পানি ঢেলে দিয়েছে।
কেন পানি ঢেলে দিলেন আমার উপর?
তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই।নির্দিদায় উওর দিলেন উনি
আমি ঘুমাচ্ছিলাম তাতে আপনার কি?আপনার ইচ্ছে হলে আপনিও ঘুমান।আর কেন আপনি আমার উপর এতো অধিকার দেখান?
অধিকারের কথা বলছিস তো লিসেন,তোর উপর একমাত্র আমার অধিকার আছে।তোর নিজের উপর ও নিজের এতটুকু অধিকার যতটুকু অধিকার আমার তোর উপর আছে।বাই দা ওয়ে,বেশি কথা বলবি তো বাকি পানিটুকু ও ঢেলে দিব।পড়তে বস
বলে শুভ্র ভাইয়া চলে গেলেন। আমি ওনার কথার আগামাথা কিছুই না বুঝতে পেরে রাগে গিজগিজ করতে করতে পড়তে বসলাম
_____________ _______________
শীতের সকাল।ঘাসের উপর শিশির জমেছে।আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু শীত।সুর্য্যের সোনালী আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল।কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি বিছানায়।কিন্তু আমি তো পড়তে পড়তে টেবিলেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তাহলে কে বিছানায় আনল??আর টেবিলের উপর একটা চিরকুট
“বিকেলের আগে পড়া রেডি করে রাখিস।নয়তো কপালে দুঃখ আছে।”
তাহলে কি শুভ্র ভাইয়া আমার রুমে এসেছিল!!ওনি কি তাহলে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গেছে!ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৭:৩০ বাজো।৯টায় ক্লাস। তাই দেরি না করে ফ্রেস হয়ে একবারে রেডি হয়ে নিচে নামলাম।গিয়ে দেখি মা রান্না করছে আর চাচিমা শুভ্র ভাইয়াকে খাবার বেরে দিচ্ছে। আমাকে দেখে চাচিমা বললেন, গুড মর্নিং নিরা মামনি!
আমি হালকা হেসে গুড মর্নিং বলে টেবিলে খেতে বসলাম।খেয়ে বের হতে যাব এমন সময় শুভ্র ভাইয়া কাঠ গলায় বলল, তুই এখন থেকে আমার সাথে ভার্সিটিতে যাবি।আমি কিছু বলতে গিয়ে ও বলিনি কারন অযথা তর্ক করে লাভ নেই কারন ওনি যেহেতু বলেছেন শেষমেশ ওনার সাথেই যেতে হবে।তাই ওনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।বের হয়ে গাড়ির পিছনের ছিটে গিয়ে বসতে নিলাম এমন সময় ওনি বলল, আমাকে কি তোর ড্রাইবার মনে হয়?সামনে বস।
আমি কথা না বাড়িয়ে ওনাে পাশে গিয়ে বসলাম।সারা রাস্তা আমাদের কোনো কথা হয়নি।ভার্সিটিতে পৌছে আমি নামতে নিব এমন সময় ওনি বলল কোনো ছেলের সাথে যেন কথা বলতে না দেখি।আমি মাথা নেমে পড়লাম এমন সময় রাহাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল দোস মিতু আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে।আমি আজকে তোদের সবাইকে ট্রিট দিবআমি ঢোক গিলে বললাম আগে আমাকে ছাড়।কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।পাশে তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাইয়া অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ভা-ভা-ভইয়া আসলে…..
চলবে