#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার,06,07
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব৬
শুভ্র এক মুহূর্ত দেরি না করে ওর কাকাইকে ফোন দিল।আর বলল,আমি এখন এইমুহূর্তে অরিন আপুর বিয়ের আগেই আমি নিরাপাখিকে বিয়ে করতে চাই।
নিরার বাবা বলল,কিন্তু কেন?কি হয়েছে শুভ্র?
অয়ন চৌধুরী দেশে ফিরছে।আর আমি আমার নিরাপাখিকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চাই না,শুভ্র বলল।
নিরার বাবা সম্পুর্ন ব্যাপারটি বুঝে সম্মতি দিলেন।
রাত ৮ টা বাজে।শুভ্র ভাইয়া আমাকে নিচে যাওয়ার জন্য ডাকলেন।কিন্তু ওনি তো সচারাচর এতো ভালো করে আমাকে ডাক দেন না।নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই নিচে বসে আছে। আর বাবার পাশে একজন দাঁড়ি ওয়ালা লোক বসে আছে।আমি নামতেই মা বললেন শুভ্র ভাইয়ার পাশে বসতে।আমি লক্ষী মেয়ের মতো বসলাম।
আমি বসতেই শুভ্র ভাইয়া বলল,কাজি সাহেব বিয়ে পড়ান।আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।আর কার বিয়ে!এখানে তো শুভ্র ভাইয়া আর আমি ছাড়া সবাই বিবাহিত। আর অরিন আপুর ও বিয়ে ঠিক করা আছে।আর আপু তো বাড়িতে ও না।আপুর মামার বাসায় গেছে বেড়াতে। তাই আমি শুভ্র ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করলাম কার বিয়ে?
ওনি বললেন, তোর আর আমার।
আমি ওনার কথা শুনে আরেক দফা অবাক হলাম।আর বললাম এইসবের মানে কি?
ওনি ফিসফিস করে আমাকে বলল,তুই তো আমাকে চিনিস খুব ভালো করে।আর আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ও জানিস।এখন বল, জোর করে বিয়ে করবি নাকি নিজের ইচ্ছায় করবি।
আমি কিছুই বললাম না কারণ বলেও লাভ নেই। কেউ আমার কথা শুনবে না।আর সবার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সবাই বেশ খুশি।তাই আমার ওনাকে বিয়ে করা ছাড়া আর কিছু উপায় নেই।
কাজি সাহেব কবুল বলতে বললেন।ওনি সোজা কবুল বলে সাইন করে দিলেন।
এখন আমাকে কবুল বলতে বললেন। কিন্তু আমার মুখ থেকে যেন কিছুতেই শব্দটি বের হচ্ছে না।
হঠাৎ শুভ্র ভাইয়া জোর গলায় বললেন, পিচ্চি তুই যদি মনে করিস নাটক সিনেমার মতো তোকে বলবে ” মা,কবুল বল।বল মা কবুল”তোর ধারণা ভুল।চুপচাপ কবুল বল।আমি ফটাফট কবুল বলে সাইন করে দিলাম।
সাইন করতে না করতেই শুভ্র ভাইয়া বলল,যা গিয়ে পড়তে বস।ওনার এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছে যেন এখানে এখন কিছুই হয়নি।
চাচিমা বলল,থাক না শুভ্র। আজকে পড়তে হবে না।
শুভ্র ভাইয়া রাগী গলায় বললেন, থাকবে কেন!নিরা পড়াগুলো রেডি কর।আমি আসতেছি।
আমি দেরি না করে নিজের রুমে চলে গেলাম।
এখন তুই কেন মেয়েটাকে পড়তে বসালি বল তো।মেয়েটার হুট করে বিয়ে হয়েছে।ওর মনের অবস্থাটা একবার বুঝ, শুভ্রের মা বলল।
শুভ্র বলল,আম্মু আমি চাইনা আমাদের বিয়ের কোনো প্রভাব ওর উপর পড়ুক।পরিস্থিতির জন্য ওকে এখনই বিয়ে করতে হয়েছে। নিরাপাখি বাচ্চা মানুষ।নিজের ভালো মন্দ এখনো ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনা।তাই ওর সেফটির জন্য এখনই ওকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।কিন্তু তাই বলে যে এখন আর ঠিকমতো পড়াশোনা করতে হবে না তা কিন্তু নয়।
কথাগুলো বলে শুভ্র নিরার মায়ের কাছে গেল।গিয়ে বলল,কাকিমা আপনি আমার উপর ভরসা রাখুন।আমি সবসময় ওর পাশে আছি।পিচ্চি এখন শুধু আমার দায়িত্বে থাকবে,আগের মতোই পড়াশোনা করবে,আমার রুমে থাকবে,খাবে আর ঘুমাবে। বিয়েটা এখন শুধু ওর সেফটির জন্য। কারণ আমি থাকতে কাউকে ওর ক্ষতি করতে দিব না।পিচ্চি বড় না হওয়া পর্যন্ত আমি ওর উপর কোনো হাসবেন্ডের অধিকার ও খাটাবো না।
নিরার মা বলল,আমি জানি সেটা।আর নিরা তোর কাছেই সবচেয়ে নিরাপদ।এজন্যই তো তোর হাতে তোলে দিলাম।
________________ ____________
সবাই জোর করে আমাকে শুভ্র ভাইয়ার রুমে বসিয়ে রেখে গেছে।আর বলল এখন থেকে নাকি আমাকে এই রুমেই থাকতে হবে।মনে এক হ্রাস ভয় নিয়ে ওনার রুমে বসে আছি।আর ভাবছি ওনি আমার সাথে খারাপ কিছু করবে নাতো!
আমার ভাবনার মাঝে ওনি রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করলেন।দরজা বন্ধ করার শব্দে আমার হুশ ফিরল।
ওনি বললেন, কিরে পিচ্চি, এভাবে সং সেজে বসে আছিস কেন? শাড়ি পরে কি ঘুমাতে পারবি নাকি!!শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে টি শার্ট পরে এসে ঘুমিয়ে পড়।
আমি বললাম,কোথায় ঘুমাবো?আর আপনি দরজা কেন বন্ধ করলেন?
শুভ্র ভাইয়া বলল,এখানে কোনো বাংলা সিনেমা বা নাটক চলতেছে না যে আমি তোকে বলবো আমরা এক বেডে শুব না।আর তোকে বলবো তুই বেডে ঘুমা আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি! চুপচাপ ফ্রেস হয়ে বেডের একপাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়।আর তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসবি।তুই বের হলে আমি শাওয়ার নিতে যাব।রাতে আমি শাওয়ার না নিয়ে ঘুমাতে পারিনা।আর আমি রুমের দরজা না বন্ধ করে ও ঘুমাতে পারিনা।তুই যা ভাবছিস এমন কিছুই আমি করব না নিশ্চিত থাকতে পারিস।
_________ ____________
এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছে এক জননী।পরনে অফ হোয়াইট কালার একটি শাড়ি।হাতে একগুচ্ছ ফুল। কারন ফুল ওনার ছেলের অনেক পছন্দ। তিনি মনে মনে ভাবছেন ওনার ছেলে দেশে ফিরে এসে আবার কি নাকি ঝামেলা বাধিয়ে ফেলে।কিন্তু পরক্ষনেই ওনার মন খুশি হয়ে গেছে। কারন যেকোনো মা ই চায় নিজের ছেলে নিজের কাছে থাকুক।আর ছেলে যদি দীর্ঘ চার বছর পর দেশে ফিরে তাহলে তো কথাই নেই।
সূর্য্যের হালকা সোনালি আভা চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।আমার পাশেই ঘুমাচ্ছে শুভ্র ভাইয়া। কিন্তু ওনাকে দেখে আমি নিজেই অবাক।ঘুমন্ত অবস্থায় একজন মানুষকে এতটা নিষ্পাপ দেখতে লাগতে পারে! আমার ভাবনার মাঝে ওনি কেঁশে উঠলেন।আর আমাকে বললেন,কি ব্যাপার নিরাপাখি ঘুমাচ্ছো না কেন?আমাকে পরেও দেখতে পারবে।আমি তো আর কোথাও চলে যাচ্ছি না।আর আমি ঘুম থেকে উঠার পর আমি বসে থাকব। আর তুমি আমাকে দেখবে।ওকে।
ওনার এমন নির্লজ্জ কথাবার্তার কারনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।আর এই প্রথম ওনি আমাকে তুমি করে ডাকলেন আর এতো মিষ্টি করে কথা বললেন।
অন্যদিকে মাত্র প্লেন থেকে নামলেন মি.অয়ন চৌধুরী। পরনে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট। চোখে কালো সানগ্লাস হাতে কালো ঘড়ি আর চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।গায়ের রং অনেক ফর্সা না হলেও মোটামুটি ফর্সা।বেরিয়ে আসতেই অয়নের মা ওকে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানালো।মায়ের সাথে কোশল বিনিময় করে গাড়িতে উঠতেই একটা ফোন এলো অয়নের।ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি বলল……..
চলবে……
#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব৭(রহস্য সমাধান১)
অন্যদিকে মাত্র প্লেন থেকে নামলেন মি.অয়ন চৌধুরী। পরনে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট। চোখে কালো সানগ্লাস হাতে কালো ঘড়ি আর চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।গায়ের রং অনেক ফর্সা না হলেও মোটামুটি ফর্সা।বেরিয়ে আসতেই অয়নের মা ওকে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানালো।মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে গাড়িতে উঠতেই একটা ফোন এলো অয়নের।
ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি বলল,মি.অয়ন চৌধুরী বিডিতে তোকে ওয়েলকাম।কিন্তু আপসোস তুই বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছিস।ও আমি তো ভুলেই গিয়েছি তোকে বলতে।শোন আমার আর নিরার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।অরিন আপুর বিয়ের কয়েকদিন পর অনুষ্ঠান করব।তোকে কিন্তু অবশ্যই আসতে হবে।যতই হোক আমার আর নিরার বিয়ে বলে কথা।তুই না আসলে ঠিক জমবে না।তাই এডভান্স ইনভাইট তোকে করে রাখলাম।
অয়ন শুভ্রের কথা শুনে পুরো অবাক।হুয়াট তোর আর নিরার বিয়ে হয়ে গেছে।পরক্ষনেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলল, বাই দা ওয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। তোকে ডিভোর্স দিতে বলব নিরাকে।তারপর আমি বৈধ ভাবে আবার নিরাকে বিয়ে করব।আমার বিশ্বাস নিরা আমার কাছে আবার ফিরে আসবে,অয়ন ফোনে বলল।
শুভ্র তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,তাই নাকি!
যাষ্ট ওয়েট এন্ড সি শুভ্র বলে ফোন কেটে দিল অয়ন আর ড্রাইভারকে বলল গাড়ি সটার্ট দিন।
_________ _________
আমি চোখ খোলে নিজেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় করি।কিন্তু আমি চরম অবাক হই নিজের প্রাক্তনকে সামনে দেখে।যে কিনা আমাকে ৫ বছর আগে ধোঁকা দিয়েছিল,ভালোবাসার মিথ্যা অভিনয় করেছিল আমার সাথে,সতিত্ব হরন করার চেষ্টা ও করেছিল। কিন্তু কেন করেছিল তা আমি আজও জানি না।শুভ্র ভাইয়া হয়তো জানে।কিন্তু জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয় না।কথা ঘুরিয়ে ফেলে নয়তো ধমক দেয়।কিন্তু কেন অয়ন আবার আমার জীবনে ফিরল?আমি তো আমার বর্তমান শুভ্র ভাইয়াকে নিজের হাসবেন্ড হিসেবে মেনে নিয়েছি আর সুখী ও ছিলাম।তাহলে অয়ন কেন আবার আমার সাজানো গুছানো জীবন এলোমেলো করতে চলে এলো!
ফ্লাশব্যাক,
এখন শুভ্র ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক আরো ফ্রেন্ডলি হয়েছে।যদিও হাসবেন্ড ওয়াইফ এর মতো সম্পর্ক এখনো হয়নি।শুভ্র ভাইয়া কখনো হাসবেন্ড এর অধিকার ও খাটাতে আসেনি।সবসময়ই ওনি আমাকে বলে,নিরাপাখি তুই এখনো অনেক ছোট।ভালোমন্দ, ঠিকভুল বোঝার বয়স হয়নি।কিন্তু আমার এই ছোট্ট পিচ্চিটাকেই ভালো লাগে। তুই সবসময় এরকমই থাকবি।আর এখন আমি ওনার সাথেই ভার্সিটিতে যাই আবার ওনার সাথেই বাসায় আসি।ওনি টুকটাক অফিসে ও যান।
প্রতিদিনের মতো আজকেও ওনি ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে বললেন ,নিরাপাখি আজকে আমি ক্লাস করব না।অফিসে জরুরী মিটিং আছে।আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিব তুই বাসায় চলে যাস।
আজকে নয়নাও আসেনি।তাই ভার্সিটি শেষ করে চিন্তা করলাম কখনো ভার্সিটির পিছনের দিকটা দেখিনি।তাই আজকে একটু ঘুরে দেখা যাক।আমি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম হঠাৎ একদল লোক এসে আমার মুখে কাপড় চেপে ধরলো। বাকিটা আর মনে নেই।আর পরেরটুকু তো দেখলেনই
________ __________
হঠাৎ ফোন বেজে ওঠল শুভ্রের।ফোনে অয়ন নামটা দেখে শুভ্র হাসলো।হয়তো এই ফোনটার অপেক্ষাই সে করছিল।
শুভ্র নীল আহমেদ তোকে আমার একটা নিউজ দেয়ার আছে, ফোনের ওপাশ থেকে অয়ন বলল।
শুভ্র হেসে বলল,একটু পরে নিউজটা বল।আগে নিরাপাখিকে যে চেয়ারে বেধে রেখেছিস তার ডান পাশে দেখ একটা ব্লাক কালার ব্যাগ আছে।ওটা থেকে নিরাপাখির ঔষধটা বের করে আগে ওকে খাইয়িয়ে নে।
শুভ্রের কথা শুনে অয়ন যেন আশ্চর্যের চরম সীমানাতে পৌছে গেছে।হুয়াট!
শুভ্র তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,দেখ অয়ন আমি যদি তোকে সুযোগ না দিতাম তুই কখনো নিরাপাখিকে তোলে আনতে পারতি না।কারন তোর সাথে আমার কিছু বোঝাপড়া আছে।এজন্য ফেস টু ফেস বসতে হবে।এজন্য এটা ছোটখাটো একটা আমার চাল মাত্র।
তুই ওখানেই থাক আমি আসছি।ভাবিস না যে আমি তোর সাথে মারামারি বা ঝগড়া করব।জাস্ট কিছু কথা বলব।তুই নিরাপাখি কে ছেড়ে বাসায় পাঠিয়ে দে।আর আমি যে কথাগুলো বলব শুনে যদি তোর মনে হয় তোর নিরাপাখি কে দরকার আর নিরাপাখি যদি শুধু বলে যে তোকে এখনো ভালোবাসে আমি জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে ওকে ডিভোর্স দিয়ে তোর হাতে তুলে দিব।কারন আমি আমার নিরাপাখির কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারবো না।
_____________ ____________
মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে অয়ন আর শুভ্র। দুজনেই মুখেই কোনো কথা নেই কারন……….
চলবে