#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার,14,15
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১৪
শুভ্র বলল,তোমার ডিভিশনের উপর আমার সবকিছু নির্ভর করে।আগে শোনো তো।আসলে…
আমি বললাম,আসলে কি!বলো আমাকে। কি কোনো সমস্যা হয়েছে?তুমি আমাকে বলো।
আসলে আমাকে ৬ মাসের জন্য সিংগাপুর যেতে হবে বিজনেস পারপাছে।
শুভ্রর কথা শুনে যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।যাকে না দেখে একমুহূর্ত থাকতে পারি না,যাক বুকে মাথা না রেখে ঘুমাতে পারিনা,যেই মানুষটা ব্রেকফাস্ট না খায়িয়ে দিলে খাই না তাকে ছাড়া কীভাবে থাকব আমি?মনে মনে ভাবতে লাগলাম।
শুভ্র নিরবতা ভেঙে বলল, জানি নিরাপাখি তোমার কষ্ট হবে।সেজন্যই তুমি বললে আমি যাবো।তুমি না করলে যাবো না।আমার কাছে সবার আগে তুমি।তোমার ডিসিশনই লাস্ট ডিসিশন। কিন্তু আমার সবকিছু যেন এলোমেলো লাগছে।চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম।আর কিছু মনে নেই।
_______________ _______________
চোখ খোলে নিজেকে বিছানাতে আবিষ্কার করলাম।আর পাশে চেয়ারে শুভ্র বসে আছে।বিছনার আরেক পাশে বাবা,আম্মু আর চাচিমা বসে আছে।সম্ভবত আমার অজ্ঞান হওয়ার কথা শুনে ওনারা এসেছে।এমনকি ওইদিন আমি ছাদে উঠতে গিয়ে পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম। সেজন্য বিকেলের মধ্যে সবাই আমাদের বাসায় হাজির।এগুলো নতুন কিছু না আমার কাছে।
আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে শুভ্র বলল,কি করো তুমি এগুলো বলোতো!ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো না।তাই দুদিন পর পর মাথাগুরে পরে যাও।এরকম করলে আমার সাথে তোমাকে রাখবো না।আম্মু তুমি যাওয়ার সময় তোমাদের বউমা কে নিয়ে যাবে।কাকিমা পিচ্চি যেদিন থেকে ঠিকমতো খাবে ওই দিন আমাকে ফোন দিবে।আমি গিয়ে ওইদিন ওকে নিয়ে আসবো।আমি ওর ব্যাগগুছিয়ে দিচ্ছি।
ওনার ব্যাগ গুছানোর কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম,তুমি বললেই কি আমি যাবো নাকি!আমার ইচ্ছে হলে আমি যাবো।আর আমি এখানে থাকলে তোমার কি হে?আমি আমার বরের বাসায় থাকি হুহ।আর যেখানর নিজেই ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না,নিজের যত্ন নেয় না সেখানে আমার খাওয়ার কথা বলে!হাউ ফানি বলে আমি হাসতে লাগলাম।
শুভ্র আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,বেশ কথা শিখেছিস তো তুই!আজকে আবার সবাইকে দেখে তো দেখছি তোর সাহস ও দেখছি বেড়ে গেছে। আমাদের ঝগড়া দেখে সবাই হাসছে।চাচিমা বললো,ওফ শুভ্র থাম তো এবার।মেয়েটা অসুস্থ। তারপর ও ওকে বকেই যাচ্ছে।
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,ঠিক বলেছো চাচিমা।তোমার ছেলেটা আস্তো একটা হনুমান।না না শিম্পাঞ্জি শুভ্র। হার্ট জিনিসটা ওর মধ্যে নেই।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,হুয়াট?
আমি বললাম,ঠিকই বলেছি।নয়তো আমার মতো বাচ্চা নিরিহ মেয়েকে কেউ বকে বুঝি!
____________ ____________
অনেকক্ষন আগেই সবাই চলেগেছে।আর আমি চিন্তা ভাবনা করে দেখেছি শুভ্রের যাওয়া উচিত। ৬ মাসেরই তো ব্যাপার।আমি ঠিক নিজেকে সামলে নিবো।এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলতে হবে।আমার চিন্তার মাঝে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। স্কিনে নাম দেখাচ্ছে বেষ্টি।আমি তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলাম।
কিরে নয়নার বাচ্চা, কি করিস?
দোস্ত আমার সব শেষ রে!আমি এবার কি করবো?
আমি বেশ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞের করলাম,কি হয়েছে রে দোস্ত? কে মারা গেছে?আংকেল! সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না
তুই থামবি নিরা।কি আজেবাজে কথা বলছিস!বাবা মরতে যাবে কেন!
আমি বললাম,তাহলে!আন্টি!
নয়না দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললাম,তুই থামবি।আমাকে আগে বলতে দে।আমার বিয়ে ঠিক করেছে এক ছেলের সঙ্গে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,তুই যেহেতু মেয়ে তোর বিয়েতো ছেলেদের সাথেই হবে সিম্পল।
নয়না বলল,ট্রাস্ট মি নিরা,আজকে তোর কপাল ভালো তুই আমার সামনে নেই নাহলে পায়ের জুতা খোলে তোকে বারি দিতাম।আমি বলেছি যে,আমি চিনি না জানি না এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।আমি বিয়ে করবো না এখন।আর দেখা করবে বলেছে কালকে।
আমি বললাম,চিল মামা।আমি আছি তো।দেখা করার দিন আমাকে সাথে নিয়ে যাস।তোকে কিছু করতে হবে না।
____________ ___________
আমি শুভ্র মুখোমুখি বসে আছি।আমি শুভ্রকে বললাম,আমি চাই তুমি সিংগাপুর যাও।৬ মাসেরই তো ব্যাপার।সমস্যা নেই।কথাগুলো বলার সময় কথাগুলো যেন গলায় আটকে যাচ্ছিল।কিন্তু খুব কষ্ট করে হলেও কথাগুলো বললাম।
নিরাপাখি তুমি ইদানীং বেশ চালাক হয়ে যাচ্ছো।সবার সাথে চালাকি করো ভালো কথা।কিন্তু ভুলে যেও না আমি শুভ্র। আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারি।১০০% না বুঝতে পারলেও ৮০% বুঝতে পারি। আমি জানি তুমি খুব কষ্ট করে কথাগুলো বলেছো।নেক্সট টাইম এসব ভালো থাকার অভিনয় আমার সাথে করবে না।আর আমি ঠিক করেছি আমি যাবো না।বুঝতে পেরেছো!
আমি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললাম,শুভ্র বাচ্চামো বন্ধ করো।তোমাকে যেতে হবে।হবে মানে হবেই আমার দিব্যি।সবসময় সবকিছু ভেবে পারা যায় না।কিছু সময় ধৈর্য্য ধরতে হয় ভালো কিছুর জন্য।আর ৬ মাসেরই তো ব্যাপার।
কিন্তু নিরাপাখি!
কোনো কিন্তু নয়।তুমি যাবে মানে যাবেই।বলে আমি চলে আসলাম।
(আমি মনে মনে ঠিক করে নিলাম ওর সামনে আমাকে স্ট্রং থাকতে হবে।কারন ওর জন্য যাওয়াটা খুবই দরকার)
ইদানীং যে আমার কি হচ্ছে আমি জানি না।মাঝে মাঝেই চোখে ঝাপসা দেখি।আবার মাথাও ঘুরায়।শরীর দুর্বল লাগে।কিন্তু শুভ্রকে এখন একথা বলা যাবে না।কারন বললে ও সিংগাপুর যাবে না।
________ ___________
রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমি আর নয়না।অপেক্ষা করছি ওই ছেলেটার জন্য যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে ওই ছেলেটার জন্য। দোস্ত আমি এই মুহূর্তে বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার না।যদিও ছেলেটা অনেক স্মার্ট ও লয়াল আর বলেছে আমাকে বিয়ের পর পড়াশোনা করাবে কিন্তু তুইই বল বিয়ের পর কি পড়াশোনা হয়?নয়না বলল।
আমি বললাম,কেন আমি কি পড়াশোনা করছি না!শুভ্র তো বলে যে আগে আমার ক্যারিয়ার তারপর অন্যসব কিছু।
আরে তোর হিসাব তো আলাদা।আর সবাই তো আর শুভ্র ভাইয়া না।ওনার মতো বর পেতে কপাল লাগে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,হয়েছে হয়েছে।তোকে আর শুভ্রের সাফাই গাইতে হবে না।
কিছুক্ষন পর সেই কাংক্ষিত ব্যক্তিটির দেখা পেলাম।আমার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা…….
চলবে……..
#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১৫+এক্সটা(ধামাকা)
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,হয়েছে হয়েছে।তোকে আর শুভ্রের সাফাই গাইতে হবে না।
কিছুক্ষন পর সেই কাংক্ষিত ব্যক্তিটির দেখা পেলাম।আমার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা।শুভ্র! ওএমজি,শুভ্র এখানে কি করছে?সাথে তো অয়ন ও আছে।কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।আমার এখন সেই অবস্থা। শুভ্র কড়া নির্দেশ দিয়েছে যেন বাসা থেকে না বের হয়।আর এখন যদি আমাকে এখানে দেখে আমি শেষ। ওরা তো এদিকেই আসছে।এবার আমার কি হবে?
শুভ্র আর অয়ন আমাদের টেবিলে এসে বসলো।তারমানে নয়নার সাথে অয়নের বিয়ে ঠিক হয়েছে!
শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে বললো,মিসেস শুভ্র নীল আহমেদ আপনি এখানে যে?
শুভ্রের চোখে মুখে আমি রাগের আভাস পাচ্ছি। কথায় আছে না ঝড় আসার আগে পরিবেশ শান্ত থাকে।আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,আসলে নয়না বলেছিল যে..
আমি কথা শেষ করার আগে বললো,নিরা তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস কারন করেনি । অয়ন তুই ওর সাথে কথা বল।আমরা অন্য টেবিলে বসছি।বলে আমরা অন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম।
আপনার নাম যেনো কি?অয়ন নয়নাকে জিজ্ঞেস করলো।
নয়না হেসে বললো,নয়না খান।
অয়ন হেসে বললো,আপনার কি আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছে?
নয়না মেকি হেসে বললো,আমার বাবা মায়ের পছন্দই আমার পছন্দ।
আয়ন বললো,বাহ গুড গার্ল।সম্ভবত আমাদের বিয়ে ফাইনাল করে রেখেছে।তাই বিয়ের আগে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
নয়না হেসে বললো,হুম বলুন
আমার আপনাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে কিছুদিন সময় লাগবে।বাট আপনার সব চাহিদা মানে সবকিছুই পুরণ করে দেয়া হবে।কিন্তু স্ত্রীর অধিকার দিতে সময় লাগবে কারণ আমি মেন্টালি প্রিপেয়ার না বিয়ের জন্য। ২ মাস সময় চাই আমার।
নয়না তো পুরো অবাক।এই ছেলে এগুলো কি বলছে?স্ত্রীর অধিকার দিতেও আবার সময় লাগে।আর অবশ্য আমিও সময় চাচ্ছিলাম।
অয়ন বললো,তো কি খাবেন বলুন?
নয়না খাবার অর্ডার দিলো।
_______________ ______________
নিরা আমি তোমাকে কি বলেছিলাম?যেনো বাসা থেকে বের না হও। কিন্তু তুমি কি করলে?
শুভ্রর মুখ নাক লাল হয়ে গেছে রাগের কারনে।আর শুভ্র আজ পর্যন্ত কখনো নিরা নামে ডাকেনি।হয় নিরাপাখি নয়তো পিচ্চির অথবা মিসেস শুভ্র বলে ডেকেছে।আমি তোতলিয়ে বললাম,শুভ্র আর আর কখনো মিথ্যে বলবো না প্রমিজ।।
শুভ্র আমাকে নিয়ে একটু বারাবরই একটু বেশিই সেনসেটিভ। তাই হয়তো রাগ করেছে প্রথমত,কালকে মাথাঘুরে পড়ে যাওয়ায় কারনে শুভ্র চিন্তিত।আর শুভ্র মিথ্যে কোনোভাবে সহ্য করতে পারে না।
শুভ্র গম্ভীর ভাবে বললো,বাসায় গিয়ে আমি তোমার সাথে এ ব্যাপারে আমি বাসায় গিয়ে কথা বলবো।
আমার যা বোঝার বোঝা হয়র গেছে যে বাসায় গিয়ে কি হতে পারে। তাই নিজেকে মেন্টালি তুমুল ঝড়ের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
_____________ _____________
শুভ্র আমাকে বাসায় ড্রপ করে চলে গেছে।বললো যে কি কাজ আছে নাকি। আমি বাসায় একা বসে বসে ভাবছি শুভ্রর রাগ কি করে কমাবো।।আসলে আমাকে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে শুভ্র আমাকে কিছুতেই যেতে দিতো না।সবসময়ই আমি একটু অসুস্থ হলেই শুভ্র অনেক টেনশন করে। আর সাথে বাসায় রেস্ট নিতে বলে।আর আজকেও সেম কথাই বলেছিল।আবার বাহিরে গিয়ে দু’বার ফোন ও দিয়েছিল।আমি ফোনে বলেছি যে আমি শুয়ে আছি।আর আজকে একে তো কথা শুনিনি আবার সাথে মিথ্যে কথাও বলেছি।বিয়ের আগে থেকেই শুভ্র আমাকে শুভ্রের সাথে মিথ্যে বলতে বারন করতো।মিথ্যা নাকি শুভ্র সহ্য করতে পারে না।আর আজকে মানে শুভ্র পুরোই ফায়ার।দুপুর থেকে আমি একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছি। বাট শুভ্র ফোন ধরছেনা।টেনশন হচ্ছে ওর জন্য।আমি বারান্দায় বসে ওর জন্য ওয়েট করছি।রাত ১:৩০ টায় শুভ্র বাসায় আসলো।আমি তাড়াতাড়ি দরজা খোলে দিলাম।
কি ব্যপার শুভ্র আজকে এতো লেট যে!আর আমার ফোন ধরছিলে না কেনো?
শুভ্র বেপরোয়া ভাব নিয়ে বললো,আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।সবারই নিজস্ব ইচ্ছে থাকতে পারে।আর আমি তোমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য না।
শুভ্রের চোখ পুরো লাল হয়ে আছে।তাই আমি আর কথা বাড়ালাম না।বললাম যে,তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো একসাথে ডিনার করবো।
শুভ্র বললো,আমি খাবোনা।আমার খিদে নেই।
শুভ্রের সাথে মুখ ফুলিয়ে আমিও বললাম,তাহলে আমিও খাবোনা।কারন ও যে মিথ্যে বলছে যে ওর খিদে নেই আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি।
শুভ্র কেয়ারলেস ভাবে বললো,ইউর উইস।ইচ্ছে হলে খাবে না হলে খাবে না।সম্পুর্ণ তোমার ব্যাপার সেটা।
আমিতো পুরো অবাক। যে শুভ্র আমাকে টইম মতো জোর করে খাওয়ার সে আজ আমাকে একথা বললো।আজকে আমার ওপর কোনো অধিকার ও দেখালো না।কেন জানিনা ওর সবগুলো কথা শুধু আমার কানে বাজছে।আমার কাছে পুরো পৃথিবী উল্টো পালটা লাগছে।নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। আসলে নিজের কাছের মানুষের অবহেলা সহ্য করা যায় না।
শুভ্র কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো আগামী মাসে আমার ফ্লাইট। আমি চলে যাচ্ছি।আর কখনো তোমাকে কেউ বাঁধা দিবে না কোনো কাজে।তুমি মুক্ত। আসলে তোমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম।আর চেয়েছিলাম তোমার একজন ভালো বন্ধু হতে বর না।যার কাছে সবকিছু শেয়ার করবে।বাট তুমি একথা গুলো আমাকে বললেই পারতে যে আমার কেয়ার গুলো তোমার কাছে প্যারা মনে হয় অন্য কাউকে না বলে।আমি আসলে ব্যার্থ।আর আমাকে ভালোবাসো এই নাটক না করলেও হতো।
এগুলো কি বলছে শুভ্র!আমি কাকে কি বলেছি?জিজ্ঞেস করলাম
শুভ্র হেসে বলল, থাক না নিরাপাখি।আমি চলেই তো যাচ্ছি। এবার তো তুমি হ্যাপি!তুমি মুক্ত।
আমি তো অবাক।আমি আবার কাকে কি বললাম!তাই শুভ্রকে জিজ্ঞেস করলাম,তুমি এগুলো কি বলছো শুভ্র? তোমার মাথা ঠিক আছে?
শুভ্র হাই তুলে বললো আমি ঘুমাবো।গুড নাইট।
শুভ্র আমার কাছে ব্যাপারটা ক্লিয়ার না।আমি কাকে কি বলেছি?
বললাম তো গুড নাইট শুভ্র একটু জোরে বললো।
____________ _______________
মাঝরাতে হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙে গেল।শুভ্র কে পাশে না পেয়ে শোয়া থেকে উঠে ওকে খুজতে লাগলাম।উঠতে গিয়ে দেখি বিছানায় পাশেই ওর ফোন।বেশ আগ্রহ নিয়ে ফোন হাতে নিলাম কল লিস্ট চেক করার জন্য। কারন এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাবে যে আমি কাকে কি বলেছি!কিন্তু কল লিস্ট দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল।জুথি আপুর ফোন!ওনার সাথে তো শুভ্রের সম্পর্ক কোনো কালেই ভালো ছিল না।তাহলে ওনি কেন ফোন দিয়েছে?আমার সংসার ভাঙতে!কারন ওনি তঁ বরাবরই শুভ্রের প্রতি দুর্বল। আর শুভ্র সবসময় ওনাকে এড়িয়ে চলে। তাহলে ওনার সাথে ৫৫ মিনিট কি কথা বলেছে!আবার দেখা ও করেছে!এড্রেস টেক্সট করা।ভাবতে ভাবতে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম।
শুভ্র তুমি স্মোক করো কবে থেকে?
আজকে থেকে, শুভ্র নির্দ্বিধায় উত্তর দিলো
মানে কি!তুমি স্মোক করছো কেন?তুমি জানো না আমি এর ধোয়া একদমই সহ্য করতে পারিনা আর স্মোক করা হেলথ এর জন্য ও ক্ষতিকর।আর তুমি তো বরাবরই স্মোক করাকে ঘৃণা করো।ফেলে দাও বলছি সিগারেটটা।
আমার ইচ্ছে আমি খাবো।তোমার কি তাতে?আর আমি মরি বা বাঁচি তাতে তো তোমার কিছু না।আর আমি আগে ঘৃনা করলেও এখন করি না।
আমি বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,এসব কি বলছো তুমি?তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
শুভ্র বললো,ভালোই একটিং করতে পারো।তা আমার প্রতি তোমার এতো ভালোবাসা কবে থেকে?আমি তো তোমাকে সেই ছোট থেকে ভালোবাসছি।সব সময় তোমার সাথে ছায়ার মতো থাকার চেষ্টা করেছি।তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি।সবাই যখন আরো ৫ বছর আগে অয়নকে নিয়ে ভুল বুঝেছে তখন আমি তোমার পাশে থেকেছি।তোমাকে নিয়ে একসাথে বাঁচার সপ্ন দেখেছি।এভাবে আমার সপ্নগুলো না ভাঙলে ও পারতে।
আমি শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। কিন্তু শুভ্র আমাকে আজকে আর আগলে নিলো না।বরং হাত ছোটিয়ে সরে এলো।চলে যেতে নিল শুভ্র। আমি শুভ্রের হাত ধরে টান দিয়ে বললাম,
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে শুভ্র।
শুভ্র মাথা নেড়ে বললো,হুম বলো আমি শুনছি।
এসবের মানে কি!
শুভ্র বললো,কোন সবের মানে?
শাট আপ শুভ্র। জুথি আপু কেন তোমাকে ফোন করেছিল?
শুভ্র হেসে বলল, সেটা তো আমার চেয়ে তোমার ভালো জানার কথা তাই না নিরাপাখি।
হুয়াট! আমি কি করে জানবো?আর তুমি আমার সাথে এমন কেনো করছো?আমি নিতে পারছিনা তোমার অবহেলা।তুমি প্রয়োজনে আমাকে দুটো থাপ্পড় দাও।তাও এভাবে কথা বলো না প্লিজ।
সেটার আর প্রয়োজন নেই।আমি সেপারেশন চাই।দুএকদিনের মধ্যে আমি কোটে ডিভোর্স এর জন্য আবেদন করব।তোমাকে মুক্ত করে দিবো।শুভ্র বললো।
সেপারেশন কথাটা শুনে আমি যেনো সবকিছু ঝাপসা দেখছি।আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরেছে পরে দেখি…….
চলবে……..