তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব২৬,২৭

0
1455

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব২৬,২৭
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৬

ডায়েরির প্রথম পাতায় লেখা ছিলো তুই কবে বুঝবি আমায়! আর কতোটা সময় চাই তোর বলতে পারিস!

এটা দেখার পরে কিছুটা সময় বর্ষা চুপ করে থাকে তার পর পাতা উল্টাতে যাবে তখনই মনে পরে এটা তো বর্ষণের রুম।এখানে ডায়েরি টা পরা ঠিক হবেনা কখন কে চলে আসবে তার ঠিক নেই।

বর্ষা ডায়েরি টা লুকিয়ে নিয়ে নিজের রুমে যায়। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বেডের উপর বসে পরে।ডায়েরি টা খুলবে তখন নিপু এসে দরজা নক করে।
নিপু বলে বর্ষা আপু কি করছো এতোক্ষণ। নিচে এসো আম্মা তোমায় ডাকছে, খাবে চলো।

বর্ষা নিপুকে বলে হুম আসছি তুই যা।
নিপু যেতে যেতে বললো জলদি এসো আপু আমি গেলাম।

বর্ষাঃ তারাহুরো করে উঠে ডায়েরিটা নিয়ে পড়ার টেবিলে বইপত্রের নিচে রেখে দেয়। তারপর আবার ভাবে যদি অন্য কেউ এসে দেখে ফেলে! এখানে রাখা যাবে না। বইয়ের নিচে থেকে ডায়েরি টা বের করে আলমারির ড্রয়ারে রেখে দেয়। এবার বর্ষা নিশ্চিন্ত কারণ এটা লক করা থাকে সবসময়। কেউ চাইলেও খুঁজে পাবেনা।

বর্ষা,আর রমা বেগম খাবার টেবিলে বসে আছে নিপু ও এসে বসবে তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। নিপু খাবার টেবিলে না বসে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। একটা সুন্দর স্মার্ট ছেলে দাঁড়িয়ে আছে নিপুর সামনে কিন্তু নিপু তাকে চিনে না। এর আগে কখনো দেখেওনি। নিপু বললো কাকে চাই?

ছেলেটিঃ রায়হান আঙ্কেল আছেন? কিংবা উনার স্ত্রী? আমি একটু তাদের সাথে কথা বলতে চাই।

নিপু বললো বাবাই নেই তবে আম্মা আছে। আপনি ভেতরে আসুন।

ছেলেটা ভেতরে গিয়ে রমা বেগমকে সালাম দিয়ে দাঁড়াতেই বর্ষা চমকে উঠে বলে আপনি!

ছেলেটাও ভিষণ অবাক হয়ে বলে বর্ষা তুমি এখানে ! এটা কি তোমার বাসা?

বর্ষা বলে ন..

তার আগেই রমা বেগম বললো হুম এটা ওর ই বাসা। কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো চিনতে পারলাম না! আর তুমি বর্ষাকেই বা চিনো কিভাবে! আর সরি তোমায় দেখে তো আমার ছেলের বয়সী মনে হলো তাই তুমি করে বললাম।

ছেলেটিঃ নো প্রবলেম আন্টি। আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন। আর আমি শাফিন, শাফিন রহমান। আমি আর বর্ষা একি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি।সেখান থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়।

রমাঃ ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন বসো একসাথে লাঞ্চ করে তারপর বসে বসে গল্প করা যাবে।

শাফিন লাঞ্চ করতে না চাইলেও রমা বেগমের জোরাজোরিতে বসে পরে।লাঞ্চ শেষে সবাই বসে আছে সোফায়। শাফিন রমা বেগমের সাথে কথা বলছে হাসাহাসি করছে অনেটা ফ্রী হয়ে গেছে দুজন।

বর্ষা তো শাফিনকে দেখে কথা বলতে ভুলে গেছে।তার মনে এখন শুধু বর্ষণের ভয়। বর্ষণ জানলে তো নির্ঘাত পুরো দোষ চাপিয়ে দেবে বর্ষার উপর। আর রেগে গিয়ে কি করবে তা একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানে।

শাফিনঃ কি ব্যাপার বর্ষা! তুমি আমায় দেখে কি কোন কারণে অখুশি? কোন কথা বলছোনা যে!তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।

বর্ষাঃ আরে না না ভাইয়া তেমন কিছু না আসলে আপনি হঠাৎ করে চলে এলেন তাও আবার কাউকে না চিনেই!
হ্যা আমাকে চিনেন বাট আপনি তো জানেন না এটা আমার বাসা। ইনফ্যাক্ট আপনি তো আমায় দেখে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

শাফিনঃ হুম তা একটু অবাক হয়েছিলাম বটে কারণ আমি জানতাম না এটা তোমার বাসা।

রমাঃ চা খেতে খেতে রমা বেগম বললো, হ্যা বাবা তুমি কেনো এসেছো সেটা তো এখনো বললেনা?

শাফিনঃ হুম আন্টি বলছি, আসলে আমি সিরাজ রহমানের ছেলে শাফিন রহমান।

শাফিনের কথাটা শোনা মাত্রই রমা বেগমের হাত থেকে চায়ের কাপটা পরে যায়। কেঁপে ওঠে রমা বেগমের বুক। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে।

রমা বেগমের এমন অবস্থা দেখে বর্ষা রমা বেগমকে জরিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে মামনী তুমি এমন করছো কেনো? কি হয়েছে তোমার?

শাফিনঃ হুম আন্টি কি হলো আপনার? শরীর খারাপ করছে নাকি? ডক্টর ডাকবো?

রমাঃ না না আমি একদম ঠিক আছি। ডক্টরের প্রয়োজন নেই। তা হঠাৎ তুমি এখানে কেনো এসেছো? কে পাঠিয়েছে তোমাকে?

শাফিনঃ আন্টি আসলে আমি এতোদিন কিছু জানতাম না। ইনফ্যান্ট আমার ফ্যামেলি থেকে কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু আজ দুদিন হলো আমি সবটা জানতে পেরেছি। তাই এখানে ছুটে এসেছি।আমার মা আমায় বলেছে।

রমা বেগম শাফিনকে জিজ্ঞেস করলো কি বলেছে তোমার মা?

শাফিনঃ আমার বাবা একা নয় তার আরও একটা ভাই ছিল।সে নাকি নিজের পছন্দে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলো। আমার চাচা চাচি নাকি মারা গিয়েছে কিন্তু তাদের একটা মেয়ে রেখে গিয়েছে। যে কিনা আপনাদের সাথে থাকে।

রমাঃ এতোদিন পরে তোমার মা এটা কেনো বলতে গেলো! এটা বলা কি খুব প্রয়োজন ছিল?তা এতো কিছু বলেছে আর এটা বলেনি, কেন তোমার চাচা চাচি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল? মেয়েটার কি নাম সেটা জানো?

শাফিনঃ না আন্টি সেটা তো বলেনি কেন বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল।আর চাচার যে মেয়ে তার নামটাও বলেনি। আমি তো শুনেই ছুটে এসেছি তাকে দেখার জন্য তার সাথে কথা বলার জন্য।

রমাঃতাহলে নামটা আমিই বলি তুমি শুনো।সে মেয়ের নাম হলো বলেই চুপ হয়ে যায়।

শাফিনঃ হ্যা বলুন আন্টি কি নাম তার? কে সে? বলুন?

রমাঃ সে মেয়ের নাম মেঘলা ইসলাম বর্ষা।

রমা বেগমের কথা শুনে বর্ষা চমকে উঠে বলে কি বলছো মামনী!

রমা বেগমঃ হ্যা আমি ঠিকি বলেছি তুই হলি সেই মেয়ে। আর তোর বাবা আর শাফিনের বাবা দুই ভাই। শাফিনের বাবা বড় আর তোর বাবা ছিল ছোট।

বর্ষাঃ এসব কথা আমায় আগে কেন বলোনি মামনী?

রমা বেগমঃ বলার মতো তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আর আমি কি বা বলতাম বল, যেখানে তোর মা বাবার সাথে তোর দাদুবাড়ির তেমন কোন সম্পর্কই ছিল না। সেখানে তুই তাদের পরিচয় জেনেই বা কি করতি।

শাফিনঃ তারমানে, আপনি বলছেন বর্ষাই আমার কাজিন?

রমা বেগমঃ হ্যা বর্ষাই তোমার সেই চাচার মেয়ে।

বর্ষা তো শাফিনের দিকে তাকিয়ে কান্না শুরু করে দেয় শাফিন ও বর্ষার কান্না দেখে কান্না করে দেয়।

শাফিনঃ বর্ষার চোখের জল মুছিয়ে বলে এই পাগলি কাঁদছিস কেন।আমি তো এসে গেছি এখন আর তুই একা নয়। আমরাও তো আছি তোর সাথে। আর কখনো যেনো তোর মন খারাপ না দেখি, আর কান্না তো নয়ই।এখন আমি তোর হাঁসি মুখটা দেখে তবেই যেতে চাই।

শাফিনের কথা শুনে বর্ষার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। শাফিন বর্ষার গাল টেনে দিদিয়ে বলে এই তো গুড গার্ল।এ মুখে হাসিটাই মানায়। সবসময় হাসিখুশি থাকবি।

শাফিনঃ আচ্ছা আন্টি আমি এখন আসি।বাসায় যেতে হবে। বর্ষা থাক আসি, কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।

এদিকে বর্ষণ অফিসের কাজের চাপে তো এতোটাই বিজি যে খাবার সময়টা পর্যন্ত পাচ্ছেনা।অনেকটা রাত করে বাসায় ফেরে বর্ষণ। তাই রাতে আর বর্ষণকে কিছু বলেনি রমা বেগম।

সকালে বর্ষণকে কফি দিতে গিয়ে রমা বেগম গতকালের ঘটনাটা বলে। কিন্তু এটা বলতে ভুলে যায় যে,ছেলেটা শাফিন ছিল।

বর্ষণ সবটা শুনে চুপ করে আছে। হয়তো বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সে। কিছু একটা ভাবছে বসে।তারপর নিজের মমকে বলে, মম এসব নিয়ে টেনশন করোনা। আমি সবটা সামলে নিবো। কয়েকটা দিন কাজের খুব প্রেশার এটা আগে সামলাতে দাও তারপর বর্ষার পরিবারের বিষয়টিও আমি সামলে নিবো।

বর্ষণের কথায় রমা বেগম একটুৃ শান্তি পেলো।কারণ রমা বেগম জানে বর্ষণ সবটা সামলে নিতে পারবে। রমা বেগম একটু হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো তুই ফেশ হয়ে নিচে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।

চলবে…..

হ্যাপি রিডিং ?

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_২৭

রমা বেগম নিচে এসে টেবিলে খাবার দেয়।
বর্ষা আর বর্ষণ দুজনেই খাবার টেবিলে বসেছে।
নাস্তা করে বর্ষণ বর্ষাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। বর্ষাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ চলে
যায়। কিন্তু বর্ষাকে গতকালের ঘটনা সম্পর্কে কিছু
জিজ্ঞেস করেনি সে।আসলে বর্ষণ চায়নি এই
মুহূর্তে বর্ষাকে এসব বলতে।

বর্ষা ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে
তখন পেছন থেকে কেউ ডেকে ওঠে এই বর্ষু
দাঁড়া। বর্ষা ঘুরে দাঁড়ায়। দেখে শাফিন ডাকছে এভাবে পেছন থেকে। শাফিন এসে বর্ষার পাশে দাঁড়াতেই
বর্ষা বলে ভাইয়া আপনি এভাবে ডাকলেন আমায়?

শাফিনঃ হুম কেনো বর্ষু বলে ডাকলে তোর খারাপ
লাগবে বুঝি?

বর্ষাঃ আরে না না ভাইয়া তা কেনো? আসলে আমাকে এই নামে কেউ কখনও ডাকেনি তো তাই। আপনি বর্ষু বলেই ডাকতে পারেন আমায়, আমি কিছু মনে করবোনা।

শাফিনঃ কিন্তু আমি মনে করবো।

বর্ষাঃ মানে! কি বলতে চাইছেন ভাইয়া?

শাফিনঃ হুম তুই এখনও আমাকে তোর পরিবারের কেউ বলে মেনে নিতে পারিসনি তাইনা? আমি জানি, তুই যদি মানতে পারতিস তাহলে আমায় এখনো আপনি আপনি করে বলতিস না। হয় তুই বলে সম্বোধন করতিস না হলে তুমি। এই
দেখ না আমি কিন্তু ঠিকই তোকে তুই বলেই সম্বোধন করছি।

বর্ষাঃ তেমনটা নয় ভাইয়া।এর আগে কখনো এভাবে কথা হয়নি তাই আপনি করে বলেছি, তবে ভাইয়া আমি তুই করে বলতে পারবোনা তুমি করে বলবো তোমায়।

শাফিনঃ ঠিক আছে তাই বলিস।তবুও আপনি থেকে রক্ষা কর আমায়।
এবার চল যেতে যেতে কথা বলি।

বর্ষাঃ কোথায় যাবো?

শাফিনঃ কেথায় আবার! ক্লাসে যাবি তো নাকি!

বর্ষাঃ ওহ্, হ্যা হ্যা যাবো তো। বলেই সামনের দিকে হাঁটা ধরে।

বর্ষা আর শাফিন হাঁটতে হাঁটতে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে আর দুজন কথা বলছে।বর্ষার ক্লাসরুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। শাফিন বর্ষাকে বলে যাহ্ ক্লাসে যা। পরে কথা বলবো।
বর্ষা মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সায় দিয়ে ক্লাসে চলে যায়।

দুটো ক্লাস করে বসে আছে নদী আর বর্ষা। বসে আছে বললে ভুল হবে দুজন তো গল্পে মেতে আছে। বাকিরা কেউ ক্লাস রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আবার কেউ কেউ বাসায় চলে যাচ্ছে কারণ আজ আর কোন ক্লাস হবেনা। স্যার আসেনি ছুটিতে আছে। দ্বিতীয় ক্লাসে সেই নোটিশ দিয়ে গেছে।

শাফিন গিয়ে বর্ষার সামনে বসে। বর্ষা আর নদী শাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষা বলে ভাইয়া তুমি এখানে!বর্ষার কথা শুনে শাফিন বলে হুম চল ক্যান্টিনে যাবো।

নদী শাফিনকে দেখে যতোটা না শকড, বর্ষা আর শাফিনের কথা শুনে তার চেয়ে বেশি শকড। নদী ভাবছে যে মেয়ে দুদিন আগেও যে ছেলেটিকে সহ্য করতে পারতোনা আজ সেই মেয়েটিই ওই ছেলেকে নাকি তুমি সম্বোধন করছে!
আর শাফিন ভাইয়া বর্ষণ ভাইয়ার হাতে থাপ্পড় খাওয়ার পরেও কি করে বর্ষার সাথে এভাবে মিশছে! আর তুমি থেকে এক্কেবারে তুই!
এসব কিছু যেনো নদীর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

বর্ষাঃ শাফিনকে বললো ক্যান্টিনে যাবে তোমার ক্লাস নেই ভাইয়া?

শাফিনঃ হ্যা আমার ক্লাস আছে কিন্তু তোর তো ক্লাস নেই। বসে বসে বোর হবি তার থেকে চল ক্যান্টিনে গিয়ে বসি আড্ডা দেওয়াও হবে খাওয়া দাওয়া ও হবে সাথে সময়টাও কেটে যাবে।

বর্ষাঃ হুম তা যাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তা বলে তুমি ক্লাস ফাঁকি দেবে?

শাফিনঃ আরে এ পর্যন্ত ক্লাস ফাঁকি না দিয়ে ভালোর খাতায় নাম উঠে গিয়েছে, তাই দু চারদিন ক্লাস না করলে কিছু হবেনা, তুই আয় আমার সাথে বলে শাফিন আগে আগে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ।

শাফিন বেরিয়ে যাওয়ার পরে নদী বর্ষাকে বললো তোরা কি শুরু করেছিস বলতো?

বর্ষা একটু মিষ্টি করে হেসে বলে, কি আবার করলাম! এখনোও তো কিছু শুরু করিনি।

নদীঃ তারমানে! কিছু শুরু করতে চাচ্ছিস নাকি?
আর তোরা কি করছিস না করছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না। একটু বলবি প্লিজ! আমার না বিষয়টা ঠিক হজম হচ্ছে না।

বর্ষাঃ তো হজমের মেডিসিন খা। না হলে টেস্টি হজমি খা।তাহলেই হজম হয়ে যাবে।

নদী বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে, বর্ষা হেয়ালি করিসনা প্লিজ! আমায় বল।

বর্ষাঃ আগে ক্যান্টিনে চল, শাফিন ভাইয়া ওয়েট করছে। পরে তোকে সবটা বলবো।

বর্ষা আর নদী ক্যান্টিনে চলে যায়।

শাফিন বসে আছে বর্ষা আর নদী গিয়ে শাফিনের পাশে বসে। অনেক গল্প আড্ডা খাওয়া দাওয়া শেষে বর্ষা শাফিনকে বলে ভাইয়া এবার আমায় উঠতে হবে।

বর্ষার কথা শুনে শাফিন বললো চল তোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।তোকে পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় চলে যাবো।

এই সময়টুকু কথা বলে নদী অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছে শাফিন বর্ষার কোন রিলেটিভ। শাফিনের কথা শুনে নদী মনে মনে বলে সেদিন একটা থাপ্পড় খেয়ে বুঝি মন ভরেনি। আজ আবার যেচে মার খেতে চাইছে।

বর্ষাঃ শাফিনের কথায় চমকে উঠে বলে, না ভাইয়া তার কোন প্রয়োজন নেই। আমার গাড়ি চলে আসবে এক্ষুনি, শুধু শুধু তোমায় কষ্ট করতে হবে না।

শাফিনঃ ঠিক আছে তাহলে সাবধানে যাবি। আর এই নে এটা আমার কন্টাক্ট নম্বর। কখনো প্রয়োজন হলে কল করিস।

বর্ষা ঠিক আছে বলে কন্টাক্ট নম্বর টা নিয়ে নদীর সাথে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে হাঁটছে।

তখন নদী বর্ষাকে বললো শাফিন ভাইয়া কি তোর রিলেটিভ হয়?

বর্ষাঃ হুম আমার কাজিন। আমার বড় চাচ্চুর একমাত্র ছেলে।

নদীঃ তাহলে এতোদিন তো বলিসনি! ইনফ্যাক্ট দুদিন আগেও তাকে চিনতিসনা বলে আমার মনে হয়।

বর্ষাঃ হুম ঠিক ই বলেছিস। তারপর গতকালের সব কথা নদী কে বলে বর্ষা।

নদী সব কিছু শুনে বললো হুম, এবার বুঝলাম। তা এসব কিছু কি বর্ষণ ভাইয়া জানে!

বর্ষাঃ তোর মাথায় কি একটুও বুদ্ধি নেই? বর্ষণ ভাইয়ার বাসায় গিয়ে বর্ষণ ভাইয়ার মমের সাথে কথা বলেছে। তোর কি মনে হয় এতো ইম্পর্ট্যান্ট কথা তার মম তাকে বলেনি?
আর না বললেই বা আমার কি? আমি গিয়ে এখন সবাইকে বলে বেরাবো নাকি!

নদীঃ আচ্ছা ঠিক আছে রেগে যাচ্ছিস কেনো বলতো! ঐ দেখ তোর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।

নদীর কথা শুনে বর্ষা আরও ক্ষেপে গেল।নদীকে ধমক দিয়ে বললো কি যা তা কথা বলছিস! আমার সাথে ঝামেলা না করলে বুঝি তোর শান্তি লাগেনা তাইনা পেত্নী কোথাকার?

বর্ষণ এসে গাড়ি ব্রেক করতেই বর্ষা গাড়িতে উঠে বসে। বর্ষণ যেতে যেতে বললো ক্লাস কেমন হলো।

বর্ষাঃ ভালো।

বর্ষার এমন জবাবে বর্ষণ আবার জিজ্ঞেস করলো শরীর মন ঠিক আছে?

বর্ষা এবারো বললো হুম ঠিক আছে।

বর্ষণ আবারও জিজ্ঞেস করলো মুড অফ কেনো?

বর্ষা বললো আর বলোনা ভাইয়া। নদীর মতো পেতনী যার লাইফে আছে তার মুড অফ হওয়ার জন্য এক্সট্রা কারণ প্রয়োজন পরেনা।

বর্ষণঃ মনে মনে, ওহ আচ্ছা এবার বুঝলাম আমার পরীটার মন খারাপের কারণ। আমি আরও ভাবলাম হয়তো পরী তার পরিবার নিয়ে চিন্তিত।

বর্ষাঃ ভাইয়া! তোমার পরী কেমন আছে?

বর্ষণ একটু মুচকি হেসে বললো আজ কয়দিন কাজের চাপে সময় দিতে পারিনি বলে হয়তো একটু মন খারাপ। তাছাড়া এমনিতে ভালো আছে।
তারপর বর্ষণ বললো শোন বর্ষা কাল তো শুক্রবার আমি একটু বিজি থাকবো, আর পুরোটা সপ্তাহ অফিসের কাজের ঝানেলায় থাকবো তাই ফ্রী হতে পারবো না। আগামী শুক্রবার তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

বর্ষাঃ আগামী কাল কি পরীর সাথে দেখা করতে যাবে ভাইয়া?

বর্ষণঃ তোর কি মনে হয়, আমি পরীর সাথে এক্সট্রা সময় নিয়ে মিট করি? যদি তোর এমনটা মনে হয় তাহলে বলবো এটা তোর ভুল ধারণা। কারণ পরী সবসময় আমার এইখানে থাকে ( বুকের বাম পাশে হাত রেখে) তাকে আমি সবসময় দেখি।

বর্ষণের মুখে এসব শুনে বর্ষা তো শুধু জ্বলছে। মনে মনে অবশ্য কষ্ট ও পাচ্ছে খুব।
বাসার সামনে গাড়ি গাড়ি থামাতেই বর্ষা নেমে দৌঁড়ে রুমে চলে যায় নিজের চোখের জল আড়াল করতে। কারণ বর্ষণের সামনে সে নিজের দুর্বলতা টা প্রকাশ করতে চায়না। বর্ষা চায়না তার চোখের জল দেখে কেউ তাকে করুণা করুক।

রুমে গিয়ে হিজাব খুলে বই খাতা রেখে বিছানায় বসে চোখের জল ফেলছে বর্ষা। তখনই ফোন বেজে ওঠে। বর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নম্বর।

ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে…

চলবে…..

হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here