#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব৩১,৩২
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩১
বর্ষণের এমন আদর জরানো কথা শুনে বর্ষার কষ্ট যেন বেড়ে গেলো। কান্না টা আরও জোরে করতে ইচ্ছে করছে।কান্না চেপে বর্ষণকে বলে মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে তা আমার জানা নেই।শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে একজন মানুষ এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারে।
কতোটা কষ্ট দিয়েছে আমার মম ড্যাডকে। আবার এখন এসেছে আমাকে কষ্ট দিতে! আমাকে বউ করে নিয়ে গিয়ে আমার সম্পত্তির দখল নেবে!
বর্ষণঃ হুম তুই তো সেটাই চাস। তুই তো শাফিনকেই বিয়ে করবি তো যা! করে নে বিয়ে। শোন! তোকে একটা কথা বলি শাফিন না, তোকে নয় তোর সম্পত্তিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু বেচারা শাফিন তো জানেনা তোর ড্যাড তোকে সহ তোর সকল প্রোপার্টির মালিক আমায় করে রেখেছে। জানলে তো ওর কলিজা পুড়ে ছারখার হয়ে সেই ধোঁয়ার সাথেই সব রোমান্টিকতা, সব প্রেম উড়ে যাবে।
বর্ষাঃ হুম আমি শাফিনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, আমি কি তখন বুঝতে পেরেছিলাম নাকি যে তুমি আমাকেই ভালোবাসো? আমিই তোমার পরী,আমিই তোমার মেঘুপাখি! একটু আহ্লাদী গলায় বললো,বুঝলে কি আর ঐ বজ্জাতটাকে বিয়ে করতে চাইতাম!
বর্ষণঃ হুম ঐ আর কি! তুই পিচ্চি থাকতে তোর বাবা বুঝতে পারলো যে তোর সবথেকে ভরসার যোগ্য ব্যাক্তিটি আমি আর এই জন্য তোর দায়িত্ব তোর প্রোপার্টির দায়িত্ব দিলো আমার উপর। অথচ কি কপাল আমার দ্যাখ (কপালে হাত দিয়ে) যার ভরসা করার কথা সে নিজেই আমাকে ভরসা করতে পারলোনা।
সে কিনা ভরসা করলো অন্য কাউকে!
বিকেলে সবাই মিলে ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এই প্ল্যানটা বর্ষণের।সকালে সবকিছু শোনার পর থেকে বর্ষার মন খারাপ তাই বর্ষণ কাউকেই বাসায় যেতে দেয়নি। সবাই মিলে আড্ডা দেওয়াতে বর্ষাকে এখন অনেকটাই হালকা লাগছে দেখতে। নদী সাগর বর্ষা আর বর্ষণ মিলে নিপুকে নিয়ে পরেছে, আড্ডার টপিক হলো সবুজ। সবুজ আজ সকালে দেশে ফিরেছে। বিকেলে সবুজের ও আসার কথা আছে এখানে। তাই সবাই মিলে নিপুর সাথে হাসাহাসি করছে সবুজকে নিয়ে।
এদিকে শাফিনের পরিবার তো বর্ষার সাথে শাফিনের বিয়ের তোরজোর শুরু করে দিয়েছে।
বিকেলে শাফিনের মা, বাবা আর শাফিন বর্ষণের বাসায় আসে বিয়ের কথা বলতে। কিন্তু বর্ষারা কেউ এসব ব্যাপারে কিছুই জানে না।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সোফায় বসে বসে কফি খাচ্ছে রমা বেগম।শাফিনদের এইসময় এখানে দেখে একটু নয়, অনেকটাই অবাক হয়েছে সে।আজ রাতে সব ছেলেমেয়েরা এখানে থাকবে বলে এতো সময় ধরে রান্না করছিল রমা বেগম। তাই চা খেতে খেতে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল সে। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ভেবেছিল সবুজ এসেছে হয়তো।
রমা বেগম অবাক হয়ে শাফিনের আম্মাকে বলে আপনারা!
এই সময় এখানে!
শাফিনের আম্মা ভাব নিয়ে বলে হ্যা আমরা বর্ষার সাথে শাফিনের বিয়ের ব্যাপারটা ফাইনাল করতে এসেছি। বর্ষা মা কোথায়? তাকে একটু ডেকে দিন আমরা তার সাথেই কথা বলতে চাই। নিজেদের মধ্যে আর বাইরের লোক ঢোকাতে চাইনা। নিজেরা নিজেরাই কথা বলে ঠিক করে নিতে চাই।
শাফিনের মায়ের এমন কথায় রমা বেগম অপমানবোধ করলো। কারণ শাফিনের আম্মা যে বাইরের লোক বলতে রমা বেগমকে মিন করেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই ।তাই আর কিছু না বলে একটা সার্ভেন্টকে বললো ছাদে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসতে। সার্ভেন্ট চলে গেলে রমা বেগম বলে, আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন বসুন। ভাগ্যিস এতোদিন পরে বুঝতে পেরেছেন যে,আপনাদের মেয়ে অন্য লোকের বাসায় আছে। তারপর অন্য একজন সার্ভেন্টকে বলে বাসায় মেহমান এসেছে চা নাস্তা নিয়ে এসো।
সার্ভেন্ট ছাদে গিয়ে খবর দিতেই সবাই নিচে আসে। সবাইকে একসাথে দেখে শাফিনের যেন একটু হিংসে হলো।
নিচে আসতেই শাফিনকে দেখে বর্ষা তো রেগে যায় কিন্তু বর্ষণের দিকে তাকাতেই বর্ষণ চোখের ইশারায় কিছু বলতে নিষেধ করে।বর্ষা প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও যতো রাগ আছে শাফিনের উপর মনে মনে সব ঝাড়তে থাকে।
সবার সামনে গিয়ে সালাম দেয় বর্ষা। শাফিনের আম্মা বর্ষাকে দেখে অনেক গুণগান করতে শুরু করে দেয়। বর্ষা তখন মনে মনে ভাবে এটা নিশ্চয় আমার গুণধর চাচী হবে । মনে মনে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে মুখে ইনোসেন্ট ভাব এনে বলে, এক্সকিউজ মি আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ,নদী, সাগর, নিপু সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে।
রমা বেগমও মুচকি হেসে বলে কি বলছিস মেঘু, এরা তোর কাছের লোক। এরা তোর পরিবার, আমাদের মতো বাইরের লোক নয়।
রমা বেগমের কথা শুনে শাফিনের আম্মা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে রমা বেগম তাকে তার কথার পাল্টা জবাব দিয়ে দিলেন। সাথে বর্ষাও বুঝতে পেরেছে এরা হয়তো মামনীকে উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে।
শাফিন এগিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বর্ষাকে।পরিচয় করানো হলে শাফিনের আম্মা বর্ষাকে বলে আসলে মা আমরা এসেছিলাম তোমার সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।
বর্ষা তখন বর্ষণের কানে ফিসফিস করে বলে দাঁড়াও বলাচ্ছি বিয়ের কথা দেখো আমি কি করি।এ কথা বলে বর্ষা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব করে বললো কি বলছেন চাচি আপনি হলেন আমার তরফের গার্ডিয়ান, তো আমার তরফ থেকে পাত্রপক্ষের সাথে তো আপনারাই কথা বলবেন। আমি এসব নিয়ে কি বলবো বলেন!
আপনারা আমার সোনা মামনীর সাথে কথা বললেই হবে। তার কথা আর আমার কথা এক কথা ( বর্ষণের মা কে জরিয়ে ধরে বর্ষা কথাটা বলে।
বর্ষার এই কথায় রমা বেগমের মনে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। রমা বেগম বর্ষার মাথায় হাত দিয়ে বলে, এমন বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পৃথিবীর সকল অপমানকে হার মানিয়ে দেয় রে মেঘু।
শাফিনের আম্মা বুঝতে পেরেছে বর্ষা হয়তো জানেনা শাফিনের সাথে ওর বিয়ের কথা বলা হচ্ছে। তাই বর্ষার চাচী বর্ষাকে বলে, একচুয়েলি বর্ষা মা আমি তোমার আর শাফিনের বিয়ের কথা বলছিলাম। তোমাকে আমি আমার ঘরের লক্ষী করে নিতে চাই মা।
বর্ষাঃ একটু ভ্রু কুচকে শাফিনের আম্মার দিকে তাকিয়ে বলে আমি কি করে আপনার ঘরের লক্ষী হতে পারি বলুনতো! যেখানে আমার মম আপনার সমান অধিকার নিয়েও ঐ বাড়ির লক্ষী হতে পারেনি সেখানে আমি নিঃস্ব হয়ে আপনার আপনার বাড়ির লক্ষী কি করে হতে পারি।
শাফিনের আম্মাঃ তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও মা তখন বুঝতে না পেরে এমন করেছিলাম। তুমি আমার উপর রাগ করে থেকোনা প্লিজ!
বর্ষাঃ আরে আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন কেন অপরাধ তো করেছেন আমার মম আর ড্যাডের সাথে। আর আমি ক্ষমা করে দিলেই বা কি, আমি তো আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবোনা আমি অলরেডি এঙ্গেজড( হাতের রিংটা দেখিয়ে)
আমি যে নিঃস্ব সেটা জেনেই সে রিংটা আমায় পরিয়েছে।
শাফিনের আম্মাঃ কার সাথে তোমার এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে! আর তুমি নিঃস্ব মানে!তোমার প্রপার্টি কি করেছো?
বর্ষাঃ ড্যাড মারা যাওয়ার আগে আমার সকল প্রপার্টি বর্ষণ ভাইয়ার নামে করে দিয়েছিলো। সেটা অবশ্য আমি আজ ই জানতে পেরেছি আগে জানতাম না। আর বর্ষণ ভাইয়াই আমাকে রিংটা পরিয়েছে।
শাফিনঃ কিন্তু তুই তো বলেছিলি ভাইয়া কাউকে পছন্দ করে! ভালোবাসে তাকে।
বর্ষাঃ হুম ঠিক ই বলেছিলাম। কাউকে ভালোবাসে, পাগলের মতো ভালোবাসে, সেটা আর অন্য কেউ নয় আমি।
শাফিনের আম্মাঃএ ছেলে তোমার সম্পত্তির জন্য তোমায় বিয়ে করছে। কিছুদিন পরে দেখবে তোমায় ছেড়ে অন্য কোন পয়সাওয়ালা মেয়েকে বিয়ে করেছে।
শাফিনের আম্মার কথা শুনে বর্ষণ চোয়াল শক্ত করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বর্ষা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে, সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। এমনটা করার হলে অনেক আগেই সেটা করতো। কারণ আমার প্রপার্টি এখন ওর, তাই ইচ্ছে করলে ও আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারতো কিন্তু তা করেনি।
অন্য কেউ হলে তো আমার প্রপার্টি আমার থেকে কেড়ে নিয়ে আমাকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে আমায় রাস্তায় ফেলে দিতো।কিন্তু এরা তা করেনি বরং ভালোবাসা স্নেহ মমতা দিয়ে আগলে রেখেছে।
বর্ষার কথা শুনে নদী বলে ব্যাপার না শাফিন ভাইয়া, আপনি চাইলে নিপুকে বিয়ে করতে পারেন।
নদীর কথা শুনে নিপু বলে ইম্পসিবল আমি উনাকে বিয়ে করতে পারবোনা আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে অন্য কারও সাথে।
নিপুর কথা শুনে সবাই তো অবাক হয়ে গিয়েছে। নদী বলে ঠিক আছে কোন ব্যাপার না আমি তো আ..
বলতে গিয়ে সাগরের দিকে তাকাতেই থেমে যায় নদী। কারন সাগর চোয়াল শক্ত করে চোখ বড় বড় করে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। নদী তো আর কিছু না বলে বর্ষণের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পরে।
রমা বেগমঃ আমি এ সপ্তাহের মধ্যেই বর্ষণ আর বর্ষাকে বিয়ে দিতে চাই আর হ্যা শুধু বর্ষণ নয় আমি একই দিনে নিপুকেও ওর যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে চাই।
আপনারাও আসবেন,অবশ্য ইনভাইট করে আসবে বর্ষণ নিজে গিয়ে। নাস্তা করে খাওয়া দাওয়া করে যাবেন।
চলবে……..
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩২
রমা বেগমের কথা শুনে শাফিনের পরিবারের সকলের তো মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা। শাফিন তো রেগেমেগে বর্ষণদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, পিছে পিছে শাফিনের মা বাবাও উঠে চলে যায় কিছু মুখে তুলেনি। ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্ল্যান কাজে লাগেনি বলে খুব চটে আছে।
নিপুঃ আম্মা (রমা বেগমকে) আমার মনে হয় না শাফিন ভাইয়া এতো সহজে বর্ষা আপুকে ছেড়ে দেবে।যেভাবে চটে আছে। বর্ষা আপুর যদি কিছু..
বর্ষা নিপুকে বাকিটা বলতে না দিয়ে বললো, কিছু হবে না আমার, শাফিন কিছুই করতে পারবেনা।
রমা বেগম ওদের থামিয়ে দিয়ে বলে তোরা উপরে যা আমি একটু কাজ সেরে উপরে আসছি। তোদের সাথে আমার কথা আছে। আর হ্যা তোরা আজ কেউ ই বাসায় যেতে পারবিনা। সবাই এ বাসাতেই থাকবি।
রমা বেগমের কথায় সবাই উপরে চলে যায়। সবাই মিলে বর্ষণের রুমে গিয়ে বসে।এদিকে নদী রুমে ঢোকার আগেই সাগর নদীর হাত ধরে এক টান দিয়ে পাশের রুমে নিয়ে যায়। এ রুমে সচরাচর কেউ আসেনা। বর্ষণ আর সাগর যখন বিজনেস নিয়ে কোন আলাপ করে তখন এ রুমটাতে বসে।
সাগর একহাত দিয়ে নদীর একহাত ধরে আছে অন্য হাতে নদীর কোমর পেচিয়ে রেখেছে। এতে নদী সাগরের একদম কাছে চলে এসেছে।
সাগর চোয়াল শক্ত করে নদীকে বলে তোর খুব শখ শাফিনকে বিয়ে বিয়ে করার তাইনা? খুব ভালো লাগে শাফিনকে! তোর সাহস হলো কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা বলার।
নদীতো বুঝতে পেরেছে আজ বাবু ভিষণ রেগে আছে তাই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে আরে এভাবে রেগে যাচ্ছো কেন! আমি কি সত্যি সত্যি বিয়ে করবো নাকি, আমি তো এমনি মজা করছিলাম।এই গুড বয়টাকে ছেড়ে ঐ বদমাইশটাকে বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে তুমি বলোতো।
বর্ষণরা সবাই কথা বলছে সবুজ ও চলে এসেছে। ওদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। নদী আর সাগর ও এসে যোগদিলো আড্ডায়।
রমা বেগম সবার জন্য চা নাস্তা নিয়ে আসে।সবাইকে চা দিয়ে নিজে ও এক কাপ চা নিয়ে বসে পরলো। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো আমি তোমাদের সবার বাসায় ফোন করেছি। তোমাদের মা বাবারা আসবে এখানে। তাদের সাথে বসে কথা বলবো বর্ষণ আর নিপুর বিয়ের ব্যাপারে।তবে সবুজ তুমি কি তোমার মা কে রাজি করাতে পারবে?
যদি না পারো তাহলে আমি নিপুকে তেমার হাতে তুলে দিতে পারবোনা।কারণ আমি চাইনা আমার মেয়েটা বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িতে কষ্ট পেয়ে, অবহেলিত হয়ে চোখের জল ফেলুক।আর তোমার মায়ের সাথে এ ব্যাপারে জোরাজোরি ও করতে পারবোনা আমি।
রমা বেগমের কথা শুনে সবুজ বললো আন্টি আপনাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না, আমি মা কে ম্যানেজ করে নিবো। আপনি আমার মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন।আশা করি কোন সমস্যা হবেনা।
রমাঃ আর হ্যা বর্ষণ আমার তোমাকে কিছু বলার আছে যেটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।
বর্ষণঃ ওকে মম বলো কি বলতে চাও।
রমাঃ আমি চাই বিয়ের আগে মানে গায়ে হলুদের আগেরদিন থেকে বিয়ে পর্যন্ত বর্ষা ওদের বাসায় থাকুক। আর হ্যা সাথে নিপু ও থাকবে। নিপুর বিয়েটাও বর্ষার বাসা থেকেই হবে।
বর্ষণঃ কিন্তু মম ওর যদি কোন প্রবলেম হয় তখন? আমি তো থাকবোনা সবসময়ের জন্য ও একা একা কি করবে তখন!
রমাঃ এতো চিন্তা করতে হবে না আমি ওদের সাথে থাকবো।আর তোর খালামনি এখানে থাকবে। মানে হলো আমি কনে পক্ষ আর তোর খালামনি বরপক্ষ।
বর্ষণের অনিচ্ছা সত্বেও তার মমের কথায় রাজি হয়ে যায়। কারণ বর্ষাও চায় তার নিজের বাসা থেকে তার বিয়েটা হোক।
সবার বাড়ি থেকেই মা-বাবা এসে পরেছে নিচে সবাই সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে আলাপ করছে সবাই একজন আরেকজনের সঙ্গে। সবুজ এসে ওর মা কে নিয়ে উপরে যায়। বর্ষণের রুমের পাশের রুমটাতে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
দরজা বন্ধ করতে দেখে সবুজের মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কিরে বাবু, দরজাটা বন্ধ করলি কেনো?
সবুজঃ তোমার সাথে আমার পার্সোনালি কিছু কথা বলার আছে, আর কথাগুলো খুবই ইম্পর্ট্যান্ট এইজন্য দরজা বন্ধ করেছি যেন অন্য কেউ না ঢুকে পরে রুমে। মা তোমাকে আমার কিছু জিজ্ঞেস করার আছে ভেবে চিন্তে জবাব দেবে।কারন তোমার কথার উপর ডিপেন্ড করবে আমার ফিউচার।
সবুজের মা কিছু একটা ভেবে বললো ঠিক আছে বল কি বলবি?
সবুজ তখন ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো নিপুকে তোমার কেমন লাগে মা? ওকে তোমার বাড়ির বউ করলে কি খুব সমস্যা হবে তোমার?
সবুজের মা ভ্রু কুচকে বললো এটাই তোর ইম্পর্ট্যান্ট কথা? এটার সাথে তোর ফিউচারের কি সম্পর্ক আমি বুঝলাম না।
সবুজ তখন ওর মাকে বলে যেটা জানতে চাই সেটা বলো বাকি কথা এমনি জানতে পারবে মা।
সবুজের মাঃ নিপু তো দেখতে শুনতে খারাপ না। তবে ও এতিম, ওর মা বাবা নেই। ও একটা আশ্রিতা। বিয়ের সময় শুধু ওকেই দেবে সাথে আর কিছু পাওয়া যাবেনা। আর আমার ছেলেটা এতোবড় একটা চাকরি করে তার সাথে কি এমন আশ্রিতা মানায়? আর তুই দেখনা! বিয়ের পর কি কোনদিন ও শ্বশুর বাড়ির আদর পাবি? নাকি কোনদিন শ্বশুর বাড়ির চৌকাঠ পেরোতে পারবি?
সবুজঃ মা তুমি আমায় নিয়ে অনেক ভাবো সেটা আমি জানি। কিন্তু তুমি কি জানো? তোমার ছেলের এমন যোগ্য করে গড়ে তুলতে কার হাত আছে? তুমি কি জানো তোমার একটা সিদ্ধান্তে তোমার ছেলেটা এই এতোবড় চাকরিটা হারিয়ে ফেলবে?
সবুজের মাঃ এসব কি বলছিস তুই?
সবুজঃ হুম মা আমি যে কোম্পানির দায়িত্বে আছি সেটার মালিক হলো বর্ষণ। বর্ষার কোম্পানি ওটা।
বর্ষণ আমাকে ঐ ব্রাঞ্চের সব দায়িত্ব দিয়েছে। তুমি ওর বোন নিপুকে যদি মানতে না পারো এই চাকরির অহংকারে তাহলে আমার এই চাকরিটা ও দেবে কেন বলতে পারো?
আর তোমার ছেলেকে এতোবড় একটা প্লট দিয়েছে এর থেকে বেশিকিছু আর কি আশা করো তুমি?
তারপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচে নেমে আসে।
রমা বেগম সবুজের মায়ের সাথে কথা বলে নিপুর বিয়ের বিষয়টা পাকা করলেন। রমা বেগম চায় অতি দ্রুত বিয়ের কাজটা কমপ্লিট করতে। গার্ডিয়ান রা সবাই চলে গিয়েছে শুধু সবুজের মা রয়ে গেছে অবশ্য রমা বেগম ই যেতে দেয়নি তাকে।
রমা বেগম কাজের লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিচে চলে আসে।
রাতে সবাই আলোচনা শেষ করে আড্ডা শেষে ঘুমিয়ে পরে।
সকাল থেকে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম শুরু। কার্ড ছাপানো, বিলি করা, বাজার করা শপিং করা সবকিছুর ধুম পরে গিয়েছে। সবাই যার যার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে কারণ এতো অল্প সময়ে বিয়ের এতো আয়োজন করা কষ্টের ব্যাপার তবুও সবাই মিলে সামলে নিয়েছে। সারাদিন এতো ব্যাস্ততার মাঝে সময় দিতে না পারলেও রাতে সবাই দেওয়াল টপকে ঠিক ই তার প্রিয়তমার খোঁজ নিতে যায়। মানে গেট দিয়ে নয় দেওয়াল টপকে সবার অগোচরে যায় দেখা করতে।
বর্ষার বিয়ে বলে নদী ও বর্ষার সাথে বর্ষার বাসায় থাকে।
কাল গায়ে হলুদ তাই আজ শপিং করবে সবাই । এ কয়দিন অনেক ব্যাস্ত থাকায় শপিং এর জন্য কারও সময় হয়ে ওঠেনি। তাই আজ সবাই শপিংয়ে যাবে।
শপিংয়ে গিয়ে বর্ষা নিজের জন্য যা নিয়েছে নিপুর জন্য তাই নিয়েছে। হলুদের জন্য, মেহেদী অনুষ্ঠানের জন্য আর বিয়ের জন্য দুজনের সেম ড্রেস। গহনা কিনতেও কোন ত্রুটি করেনি বর্ষা। নিজের থেকে দু একটা বেশিই কিনেছে বর্ষা। ঘর সাজানোর সব জিনিসের অর্ডার দিয়ে রেখেছে বর্ষা। এই শহরে একটা ফ্ল্যাট নিপুর নামে করে দিয়ে তারপর সেখানে সাজিয়ে দেবে সব।
শপিং থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে সবাই সোফায় বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। তখন শাফিন বর্ষার বাসয় চলে আসে। শাফিনকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।
বর্ষাঃ তুমি এখানে? কি চাই তোমার?
শাফিনঃ কি চাই মানে? এটা আমার চাচার বাসা আমি আসতেই পারি এখানে, আর ইচ্ছে করলে এটার উপর ভাগও বসাতে পারি কারণ আমার চাচার সম্পদের মালিক আমিও যেহেতু তার কোন ছেলে সন্তান নেই।
শাফিনকে দেখেই বর্ষার রাগ উঠে যায় তার উপর আবার এমন কথা শুনে রাগ বেড়ে গিয়ে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে কোষে একটা থাপ্পড় মারে।
থাপ্পড় খেয়ে শাফিন কিছু বলতে যাবে তখন বর্ষা ওকে আরও একটা থাপ্পড় মারে। আর বলে….
চলবে….