তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব_৫,৬

0
1959

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব_৫,৬
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৫

বর্ষণ- আমি যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কাউকে যে আমি কথা দিয়েছি সেটা কি তাহলে আমি ফুলফিল করতে পারবোনা? আমি কি হেরে যাবো অবশেষে? না না এসব আমি কি ভাবছি, এটা কখনোই হতে দেওয়া যাবেনা। আমার আইডলকে দেওয়া কথা আমায় রাখতেই হবে। এজন্য আমায় যা যা করতে হবে আমি করতে প্রস্তুত।
বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে শুয়ে পরে বর্ষণ।

সকালে…

তারাহুরো করে নিচে নামছে বর্ষণ। আজ বড্ড লেট করে ফেলেছে ঘুম থেকে উঠতে।তাই একেবারে রেডি হয়েই নিচে নামছে বর্ষণ। ব্রেকফাস্ট করতে করতে বর্ষণ বর্ষাকে বললো তুই কি রেডি?ব্রেকফাস্ট শেষ হলে গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি। তোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিস যাবো।

বর্ষাঃ আমি ভার্সিটি চলে যাবো। তুমি অফিস যাও ভাইয়া, তোমার তো অনেক তাড়া আছে।

বর্ষণঃ তোকে গাড়িতে বসতে বলেছি। পাকামি করে পরামর্শ দিতে বলিনি।

বর্ষা আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে।বর্ষণ ও ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে আসে।

বর্ষাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ বলে আজ আমি আসতে পারবোনা অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। আর প্রচুর কাজের চাপ সময় ও পাবোনা। তাই ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। বাসায় চলে যাস।

বর্ষা- হুম,
আর তুমি সময়মতো লাঞ্চ করে নিও ভাইয়া। সবসময় শুধু কাজ কাজ করে কাজের মধ্যে ডুবে থেকোনাতো!

বর্ষণ – হুম তুই যাহ্ তোর লেট হয়ে যাবে। আমিও যাই বলে বর্ষণ চলে যায়।

বর্ষা গেট দিয়ে ঢুকবে তখনি দেখতে পেলো নদী ও ভেতরে ঢুকছে।

বর্ষকে দেখে নদী তো আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।বর্ষা নদীর লাফানো দেখে বলে আস্তে লাফা পইরা ঠ্যাং ভাঙলে তখন বুঝবি।

নদী – গেট দিয়ে ঢুকতেই যে তোর সাথে দেখা হবে ভাবিনাই রে দোস্ত।

বর্ষা-আমিও ভাবিনি গেট দিয়ে ঢুকতেই শাঁকচুন্নির সাথে দেখা হবে।
নদী আর বর্ষা কথা বলতে ক্যাম্পাসে হাটছে। তখন হঠাৎ কেউ ডেকে ওঠে আরে নদী – বর্ষা কেমন আছো তোমরা?

কথা শুনে দুজনেই ঘুরে তাকায়। দেখে শাফিন ওর বন্ধুদের সাথে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

বর্ষাঃ জ্বি ভাইয়া ভালো আছি।
শাফিনঃ তোমরা দুজন চলো আমাদের সাথে।
নদীঃ কো কো কোথায় যা যাবো ভাইয়া!
শাফিনঃহলরুমে চলো এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার থেকে কাজের কথাগুলো কাজের জায়গাতে বলাই ভালো।কিন্তু নদী কি হয়েছে তোমার? এমন তোতলাচ্ছো কেন?

বর্ষাঃ নদীকে কিছু না বলতে দিয়ে বলে ওঠে ও কিছুনা ভাইয়া। ওর মাঝে মাঝে তোতলানোর অভ্যাস আছে।
বর্ষার কথা শুনে নদী অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে গেছে।হা করে বর্ষার কথা শুনছে নদী। আর ভাবছে আল্লাহ জানে এই মেয়ে আমাকে আর কি কি বানাবে তোতলা পর্যন্ত ঠিক আছে।?বর্ষা নদীর দিকে তাকিয়ে বললো হা বন্ধ করে এবার চল ভাইয়ারা তো হলরুমে চলে গেছে তোর যদি হাওয়া খাওয়া শেষ হয়ে থাকে তো আমরাও এবার যাই।এই বলে নদী আর বর্ষাও হল রুমে চলে যায়।

শাফিনঃ নামের লিস্ট গতকাল করেছিলে তোমরা? তোমরা কি কোন কোন প্ল্যান করেছো নবীনবরণ অনুষ্ঠান ব্যাপারে? কিভাবে প্রস্তুতি নিলে পার্টিসিপ্যান্টরা আরও ভালো করে পারফর্ম করতে পারবে?কারণ সময় তো বেশি নেই। সামনের বৃহস্পতিবার আমাদের নবীনবরণ।

বর্ষাঃ কোন লিস্ট করা হয়নি ভাইয়া, গতকাল ওদের সময় দেওয়া হয়েছে যেন ওরা ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কে কি পারফর্ম করবে। আজ লিস্ট করা হবে। আজ তো মঙ্গলবার, যারা পারফর্ম করতে চাইবেনা তারা ই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় পাবে লিস্ট থেকে নাম কাটার। শনিবার থেকে আর কোন পার্টিসিপ্যান্টকে লিস্ট থেকে বাদ করা হবেনা। কিন্তু কেউ চাইলে পার্টিসিপ্যান্ট করতে পারবে। আর আমি ভেবেছি শনিবার থেকেই রিহার্সাল শুরু করা হবে।

শাফিনঃ গুড গুড!
না বলাতেই এতো কিছু প্ল্যান করার জন্য থ্যাঙ্কস।সবই ঠিক আছে। শুধু ঐ রিহার্সাল এর ব্যাপারটা ওটা আগামীকাল থেকে শুরু করতে হবে। সবাই সমান ট্যালেন্টেড না তাই একটু আগে থেকেই শুরু করতে হবে। আর লিস্টের কাজটা আজই কমপ্লিট করে এক কপি তোমার কাছে রেখে অন্য কপি আমায় দেবে। এখন তোমরা ক্লাসে যাও।

বর্ষা আর নদী হলরুম থেকে বের হতেই শাফিনের ফ্রেন্ডরা বললো, দোস্ত মেয়েটা কিন্তু হেব্বি চালাক আর বুদ্ধিমতি।এক কথায় রুপে গুণে সর্বগুণ সম্পুর্না।

শাফিন ওদের কথা থামিয়ে দিয়ে বললো তোদের হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণটা কি জানতে পারি? শাফিনের একটা ফ্রেন্ড ঠোঁটের কোনায় হাসি ঝুলিয়ে বললো জানবি জানবি একটু ধৈর্য্য ধর বৎস্য এতো তারা কিসের।ওর কথা শুনে বাকি সবাই হো হো করে হেসে ওঠে যেটা পুরো হলরুমে প্রতিধ্বনি হতে থাকে। শাফিন তখন ভ্রু কুচকে বলে তোদের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই তাইনা? যার যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা কর। হাতে একদম সময় কম।

বর্ষা আর নদী ক্লাসে এসে নাম লিস্ট করা শুরু করেছে। নামের পাশে কে কি পারফরম্যান্স করবে সেটা উল্লেখ করে রেখেছে বর্ষা। কেউ নাচবে কেউ গাইবে কেউ আবৃতি করবে আবার কেউ অভিনয় করবে।

লিস্ট শেষে বর্ষা সবাইকে জানিয়ে দেয় যে আগামীকাল থেকে রিহার্সাল শুরু। সবাই যেন টাইমলি চলে আসে। সবাই যার যার সিটে বসে আছে নদী আর বর্ষা পাশাপাশি বসেছে।

নদীঃ কিরে সবার নাম লিস্টে উঠালি তোর নাম কই।

বর্ষাঃ নারে আমার প্রবলেম আছে আমি পারফর্ম করতে পারবো না। বাসায় জানতে পারলে ঝামেলা আছে।

নদীঃ বাসায় জানতে পারলে নাকি তোর বর্ষণ জানতে পারলে ঝামেলা আছে কোনটা!

বর্ষা নদীর কথা এড়াতে বললো কিরে খুবতো আমায় নিয়ে ভাবছিস তা তুই কি পারফর্ম করবি তাতো বললি না।

নদীঃ পাগল না কি ? আমি নিজের তো কোন ক্ষতি চাই ই না, আবার এটাও চাইনা যে, কারও সর্বনাশ হোক আমার দ্বারা।

বর্ষা বুঝতে না পেরে বললো কি যা তা বলছিস?

নদীঃযা তা না রে বইন। আমি চাইনা নাচতে যাইয়া এই বয়সে কোমরডারে ভাঙি। কারণ আমার এখনো নিজের হবু জামাইডারে দেখার বাকি আছে।আর আমার কন্ঠে গান শুনাইয়া আমি কাউরে বধির বানাইতে চাই না। আমার কন্ঠে গান শুনলে সে ঐ কান দিয়ে আর কিছু শুনতে চাইবে না।

বর্ষাঃ আমি কি তোরে শুধু শুধু পেতনী বলি? তোর গুন আর পেতনী রানির গুণের অনেক মিল হা হা?

নদীঃ তুই তো সব পারিস নাচ, গান, আবৃতি, অভিনয় তাতে লাভ টা কি হলো বল। সেগুলো যদি কাজেই না লাগলো।

বর্ষাঃ সবসময় সবকিছুতে লাভ খুঁজতে নেই। কিছু কিছু জিনিস নিজের জন্য করতে হয় বুঝলি! যেগুলো একান্তই নিজের। ও তুই বুঝবিনা। চল এবার এটা শাফিন ভাইয়া কে দিয়ে বাসায় যাই। আমার আবার গাড়ি চলে আসবে। বলেই শাফিনের কাছে চলে গেলো দুজন।

নদীঃগাড়ি আসবে মানে? বর্ষণ ভাইয়া আসবেনা?
বর্ষাঃ না রে ভাইয়ার কাজের চাপ তাই আসতে পারবে না।

শাফিনঃ আরে নদী বর্ষা, তোমরা! কোথায় যাচ্ছো?
বর্ষাঃ লিস্ট দিতে আসলাম ভাইয়া।

লিস্ট দিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে হাটা ধরে নদী আর বর্ষা। হাঁটতে হাঁটতে মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন।
তখনি বর্ষণের গাড়ি এসে থামে ওদের সামনে।

নদী বলে এই নে তোর বর্ষণ ভাইয়া চলে এসেছে।এই তো বললি ভাইয়া নাকি আসবেনা।

বর্ষণকে দেখে বর্ষা তো হা হয়ে আছে ।বর্ষণ গাড়ি থেকে নেমে এক হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, ফিল্মের হিরোদের মতো আরেক হাতে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বললো। দেখা শেষ হলে গাড়িতে বস।

চলবে…..

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৬

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা নদীর থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে।বর্ষণ ও মুচকি হেসে সানগ্লাস পারতে পারতে গাড়িতে গিয়ে বসে।

নদী এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের কান্ড কারখানা দেখছিলো। ওরা চলে যেতেই নদী বলে যাহ্ বাবা! এদের দেখে তো কিছুই বুঝতে পারলাম না কে কার প্রেমে পরেছে? নাকি কেউ কারও প্রেমেই পরেনি ? হাতের পাঁচ আঙুল কপালে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বাসার দিকে রওনা হলো নদী।

গাড়ির মধ্যে বর্ষা চুপচাপ বসে আছে দেখে বর্ষণ জিজ্ঞেস করলো ক্লাস কেমন লাগছে। বর্ষা ঘাড় নেড়ে জবাব দিলো ভালো।

বর্ষাঃ তুমি তো বলেছিলে আসতে পারবেনা। গাড়ি পাঠিয়ে দিবে, আবার আসলে যে? তোমার তো কাজের খুব চাপ!

বর্ষণঃ হুম কাজের চাপের জন্য তো আর দায়িত্ব এড়াতে পারি না। নিজের দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপাতে মন সায় দিলোনা।
একটা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্য দায়িত্বটা কি অবহেলা করা উচিত?

এতোক্ষণ বর্ষা অবাক নয়নে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে তার কথাগুলো শুনছিলো।বর্ষণের বলা কথাটা বর্ষার কানে বার বার বাজছে, “একটা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্য দায়িত্বটা কি অবহেলা করা উচিত?”

বর্ষাঃ আমি তোমার দায়িত্ব?

বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ ড্রাইভ করতে করতে বাইরে তাকালো।একচুয়েলি বর্ষণ বর্ষার প্রশ্ন এড়াতে বাইরে তাকালো নাকি নিজেকে আড়াল করতে বাইরে তাকালো সেটা বর্ষণ হয়তো নিজেও জানে না।
বর্ষণ শুধু জানে বর্ষার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার এবং সবটা জানানোর এখনো উপযুক্ত সময় হয়নি।

গাড়ি থামলো বাসার গেটে। বর্ষাকে নামিয়ে দিতেই বর্ষা জিজ্ঞেস করলো, কখন ফিরবে ভাইয়া?

বর্ষণঃ জানিনা তবে দেরি হবে অনেক।কেনো তোর কিছু লাগবে? কি চাই তোর বল?

বর্ষাঃ নাহ্ কিছু না। আমার কিছু লাগবেনা। বলেই বর্ষা ভেতরে চলে গেলো।

বর্ষণ ও অফিসে চলে যায়।

রুমে এসে হিজাব, ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় বর্ষা। সাওয়ার নিয়ে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকচ্ছে বর্ষা।আর ভাবছে বর্ষণ ভাইয়া এখন আর বকা দেয়না। একদম আগের বর্ষণ ভাইয়া হয়ে যাচ্ছে যে আমার সকল আবদার পুরনের জন্য সবসময় তৈরি হয়েই থাকতো।

রাতের খাবার খাচ্ছে নিপু, রমা বেগম আর বর্ষা। বর্ষণ আর রায়হান খানের ফিরতে অনেক রাত হবে। তাই বাসায় ফোন দিয়ে সবাইকে ডিনার করে নিতে বলেছে। বর্ষণ, রায়হান খান আর সাগরসহ অফিসের কয়েকজন অফিসের ক্যান্টিনে ডিনার করে নেবে।কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যাবে বলে ডিনারে স্পেশাল আইটেম করা হয়েছে।

সাগর ( বর্ষণের বন্ধু) বর্ষণের অফিসে চাকরি করে।চাকরি বললে ভুল হবে। বর্ষণের অনুপস্থিতি তে পুরো অফিসের দায়িত্ব সাগরের উপরেই ন্যাস্ত থাকে। বর্ষণের পাপার সাথে সাগর ই তখন বিজনেস দেখাশোনা করে।

সাগরের আরও একটা বড় পরিচয় হলো ও বর্ষণের জানের জান, কলিজার দোস্ত। বর্ষণের এমন কোনো কথা নেই যে সেটা সাগরের অজানা। ওরা দুজন একাত্মা একপ্রাণ।

এদিকে…

বর্ষা ডিনার শেষে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরে। কারণ আগামীকাল থেকে তার আবার নতুন যুদ্ধ শুরু হবে। সবাই রিহার্সালে আসবে সেখানে তাকেও থাকতে হবে। আবার নবীনবরণ এর কি প্ল্যানিং আছে সেটা নিয়েও তো কাজ আছে।

রাত ১ঃ৪৫ মিনিট কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেয় একটা সার্ভেন্ট। ইয়া বড় একটা বক্স দুই হাত দিয়ে ধরে নিয়ে ভেতরে ঢুকে বর্ষণ। সার্ভেন্ট বর্ষণের হাত থেকে ওটা নিতে চাইলে বর্ষণ না করে দেয়।বর্ষণ সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যেতেই সার্ভেন্ট গুলে একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকালো।

বর্ষণ রুমে গিয়ে অফিসার ড্রেস চেইন্জ করে ফ্রেশ হয়ে বক্সটা নিয়ে বর্ষার রুমের দিকে হাঁটা ধরে। বক্স দিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বর্ষণ। বক্সটা বেডের এক সাইডে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায় বর্ষণ। বর্ষার দিকে তাকি মিটিমিটি হাসছে বর্ষণ। কারণ বর্ষা ছোট বাচ্চার মতো এলোমেলো হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর এসে মুখ ঢেকে গেছে। বর্ষণ বর্ষার মাথার পাশে বসে পরে।মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঠিক করে দেয়। মাথায় হাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিয়ে বর্ষার ডান গালে হাত রাখে বর্ষণ। ঘুমন্ত বর্ষাকে বড্ড নিষ্পাপ দেখাচ্ছে।

এভাবে দেখলে যে কেউ ওর মায়ায় পরে যাবে। বর্ষণ আর একটুও দেরি না করে নিজের রুমে চলে যায়। ডায়েরি টা নিয়ে কিছু একটা লিখে ঘুমিয়ে পরে বর্ষণ।

হয়তো আজকের অনুভূতিগুলো আবার ডায়েরির সাদা পেজে ফুটিয়ে তুলেছে বর্ষণ। বর্ষণের ডায়েরিতে লেখা অনুভূতিগুলো হয়তো কেউ কখনো জানতেই পারবেনা।বর্ষণের সুপ্ত অনুভূতিগুলো হয়তো ডায়েরির সাদা পেইজই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।চাপা পরে যাবে সবকিছু। আবার হয়তোবা না।
এমনও হতে পারে বর্ষণের ডায়েরিতে জমানো কথাগুলো হয়তো যোগ্য কেউ পড়তে পারবে। আবার হয়তোবা না। (সেটা লেখিকা জানে না। এর জন্য লেখিকাকে দোষারোপ করবেন না) ?

সকালে….

বর্ষণ ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে নিচে এসে নিপুকে বললো কফি করে দিতে। নিপু দৌড়ালো কফি করতে।

বর্ষণকে এতো সকাল সকাল নিচে দেখে বাকি সবার মতো রমা বেগম ও অবাক হলেন। বর্ষণ সেদিকে কেয়ার না করে সোফায় গিয়ে বসলো।নিপু কফি হাতে নিয়ে বর্ষণকে দেবে তখনি বর্ষার রুম থেকে চিল্লানোর শব্দ পেয়ে সবাই বর্ষার রুমের দিকে তাকায়।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো বর্ষণের এতে কোনো ভাবান্তর হলো না।যেন বর্ষণ আগে থেকেই জানতো এমনটা হবে।

বর্ষার চিল্লানীতে রায়হান খান ও ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে চলে আসে। এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে বর্ষা মায়ের। এতো জোরে ডাকাডাকি করছে কেনো?

রায়হান খানের কথা শুনে রমা বেগম বলে উঠলো – কি করে বলবো! তুমিও যেখানে আমিও সেখানে।

রায়হানঃওহ্ হ্যা তাও তো ঠিক।

বিশাল বড় একটা বক্স নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে এলোমেলো পা ফেলে হেলে দুলে খুব কষ্টে নামছে বর্ষা।তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে খুব খুশি। আনন্দ যেন চোখ মুখে উপচে পরছে বর্ষার। নিচে নেমে বক্সটা রেখে ধপাস করে সোফায় বসে পরে বর্ষা।

রমাঃ কিরে বর্ষা এটাতে কি আছে আর কোথায় বা পেলি এতো বড় একটা বক্স?

বর্ষাঃ জানিনা মামনী। ঘুম থেকে উঠে হাত পা ছরাতেই এটা হাতের পাশে দেখতে পাই। তারপর তো তোমাদের ডাকাডাকি করলাম। পরে বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখি নাম লেখা আছে বর্ষা।
তোমাদের সবার সামনে দেখবো বলে নিয়ে এলাম।

রমাঃ তাহলে বক্সটা খুলে দেখ ভেতরে কি আছে। না খুললে তো আর দেখতে পাবিনা।

বর্ষাঃ এখনি খুলে দেখছি মামনী?

সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে বক্সের ভেতরে কি আছে তা দেখার জন্য। রমা বেগম, রায়হান খান, নিপু আর সার্ভেন্টরা সবাই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শুধু বর্ষণ ছাড়া। সে তো আপন মনে শুধু কফি খেয়েই চলেছে।

হঠাৎ নিপু বলে ওঠে বর্ষা আপু সাবধানে,কেউ হয়তো বক্সে অনেকগুলো তেলাপোকা ভরে এতো সুন্দর করে Rapping করে দিয়েছে।

নিপুর কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে।
শুধু বর্ষণ টা মুখ টিপে হাসছে।

বর্ষাঃ ?তোর মাথা। হাতি কোথাকার, তেলাপোকা কি এতো ভারি হয়?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here