তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব_১০,১১

0
1515

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব_১০,১১
#Hridita_Hridi
#পর্ব_১০

বর্ষাঃ ভাইয়া তুমিতো বলেছিলে শুক্রবারে আসবে! হঠাৎ কোনো খবর না দিয়ে আগেই চলে এলে?

বর্ষণঃ কেনো? আমি আসাতে তোর প্রবলেম হয়ে গেলো নাকি? বলেই গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্ষাঃ না না ভাইয়া তা কেনো হবে! একচুয়েলি তুমি হুট করে চলে এসেছো তাই বললাম।
বর্ষা বুঝতে পারছে না আজ তার কপালে কি পরিমাণ দুঃখ আছে।
বর্ষা ভয়ে শাড়ির আঁচল এক হাতের মুঠোয় নিয়ে অন্য হাতের আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে মাথা নিচু করে বললো ভাইয়া মামনী আমাকে শাড়ি পরতে…

বর্ষণ গম্ভীর হয়েই ডান হাত উঠিয়ে ✋ বর্ষাকে থামিয়ে দিলো আর কিছু বলতে দিলোনা।

বর্ষা এবার আরও ভয় পেয়ে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাথা উঁচু করে বর্ষণের মুখোমুখি দাড়াবার সাহস তার নেই। কারণ বর্ষা খুব ভালো করে জানে বর্ষণ এমন খোলামেলা সাজুগুজু পছন্দ করে না। আর শাড়ি পরে তো নয়ই।

বর্ষণ পলকহীন চোখে বর্ষাকে দেখছে। তার পরীটা যে আজ সত্যি সত্যি পরী হয়ে হয়ে উঠেছে।বর্ষণ বর্ষাকে খাটে বসিয়ে দেয়।

বর্ষা ভয় পেয়ে বর্ষণের দিকে তাকায়। বর্ষণ কিছু না বলে এক হাটু মুড়ে বর্ষার সামনে বসে পরে। তারপর বর্ষার এক পা তুলে বর্ষণের হাটুর উপর রেখে পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে পরিয়ে দেয়।তারপর বর্ষাকে ওখানেই বসিয়ে রেখে বর্ষণ ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে একটা টিপ নিয়ে বর্ষাকে পরিয়ে দেয়। আর অস্পষ্ট স্বরে বলে,এইতো আমার পার্ফেক্ট পরী। কিন্তু এ কথাটা বর্ষার কান অব্দি পৌঁছালোনা।

বর্ষা তো অবাক চোখে শুধু বর্ষণের কান্ড কারখানা দেখছে আর ভাবছে এ কাকে দেখছে সে।এই কি সেই বর্ষণ ভাইয়া? যার কথার একটু অবাধ্য হলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিতো! বর্ষণ ভাইয়ার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?নাকি আমায় শাস্তি দেবে বলে আমাকে এভাবে সাজাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ! রক্ষা করো আমায়।

বর্ষণঃ তুই নিচে গিয়ে বোস বর্ষা আমি এক্ষুনি আসছি বলেই বর্ষণ বেরিয়ে গেলো।

বর্ষা বেচারী যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বর্ষা নিচে নেমে আসে। বর্ষাকে দেখে রমা বেগম জিজ্ঞেস করলো বর্ষণ কিছু বলেছে নাকি।

বর্ষা এপাশ ওপাশ মাথা ঝাকিয়ে না জবাব দিলো।

রমাঃ তাহলে!!

বর্ষা এক আঙুল দিয়ে কপালে ইশারা করে টিপ দেখালো। আর শাড়ি একটু উঁচিয়ে পায়ের ঐ পায়েলটা দেখালো।

রমাঃ ? এই না হলে আমার ছেলে?

বর্ষাঃ হুমমমম ভয়টা তো ওখানেই, ওটা তোমার ছেলে। যাকে আমি খুব ভালো করে চিনি।

রমাঃ থামতো তুই। এবার মন খারাপ করে না থেকে হাসিখুশি মন নিয়ে বের হ তো।

নিপু বর্ষার সামনে এসে বললো আপু তোমাকে যা আজ লাগছে না! পুরোই হিরোইন। তোমার উপর আজ পুরো ভার্সিটি ক্রাশ খা… বলেই হা করেই সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।

বর্ষা নিপুর চোখ অনুসরণ করে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই বর্ষার চোখ আটকে যায়। এ কি দেখছে বর্ষা!
এটা কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন? সিঁড়ি দিয়ে বর্ষণ নামছে। বাসন্তী পান্জাবী আর সাদা চুরিদার হাতে ব্র্যান্ডের কালো ঘড়ি।গোলাপি ঠোঁট, ব্রাউন চোখ, ঘনো কালো ভ্রু যুগল ব্রাউন কালারের চুল একদম চলকেট বয় যে দেখবে সে ই প্রেমে পরে যাবে।

বর্ষার পাশে এসে বর্ষণ বললো চল আমি গাড়িতে বসছি তুই আয়।বলে হন হন করে বেরিয়ে গেলো।
বর্ষা ও পিছে পিছে গেলো।

এদিকে প্রায় নয়টা বাজতে চললো দেখে নদী বর্ষাকে ফোন করে ।
বর্ষাঃ হ্যা নদী বল.
নদীঃ বর্ষা কোথায় তুই? সবাই তোকে খুঁজছে আর তুই এখনো আসিসনি?

বর্ষাঃ এই তো গাড়িতে আছি আসছি।

নদীঃ জলদি আয় রাখছি এখন।
বলে ফোন রেখে পেছনে ঘুরতেই শাফিন বললো কি ব্যাপার নদী, বর্ষা আসেনি এখনো?

নদী বললো এক্ষুনি চলে আসবে ভাইয়া। বর্ষা গাড়িতে আসবে।

শাফিনঃ ওকে তুমি স্টেজে গিয়ে দেখো সব ঠিকঠাক আছে নাকি। আমি একটু আসছি বাহিরে যাবো একটা কাজ পরে গেছে।
নদী ওকে বলে চলে যায়।

………

বর্ষা গাড়িতে বসে ভাবছে বর্ষণ কিছু বললোনা কেনো। কি এমন হলো যে বর্ষণ এখনো এতো নিশ্চুপ।

কি আপনারাও এটাই ভাবছেন তো? তাহলে শুনুন..

বর্ষণ যখন এয়ারপোর্টে নামে তখন রাত ১১ঃ২০ মিনিট। বর্ষণ দেশে ফিরে আসছে সেটা কাউকে জানায়নি। শুধু সাগরকে বলেছে। সাগর বর্ষণকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছে।
বাসার কলিং বেল বাজতেই সার্ভেন্ট দরজা খুলে বর্ষণকে দেখে তো অবাক হয়ে যায়। বর্ষণ উপরে উঠে যেতেই সার্ভেন্ট দৌড়ে গিয়ে রমা বেগম আর রায়হান সাহেব কে খবর দেয়।
রমা বেগম তো বিশ্বাস ই হচ্ছেনা তার ছেলে না বলে এভাবে হুট করে চলে আসতে পারে। রমা বেগম উঠে বর্ষণের রুমে যায়।

বর্ষণ ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই দেখে রমা বেগম এসে বসে আছে। বর্ষণ একটুও অবাক হলোনা কারণ বর্ষণ জানতো তার মম আসবে।

রমাঃ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে বর্ষণ। ইম্পর্ট্যান্ট কথা যেটা এক্ষুনি বলাটা দরকার। আর আমার কথা শেষ না হওয়া অবদি তুই কিছু বলতে পারবি না।

বর্ষণঃ হুম মম বলো আমি শুনছি।

রমাঃ আগামীকাল বর্ষার ভার্সিটিতে নবীনবরণ। স্যার ওকে ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব দিয়েছে সাথে নদী ও আছে। শাড়ি পরে যেতে হবে, আমি ওকে শাড়ি পরার অনুমতি দিয়েছি। বর্ষা পরতে চায়নি।তাই আমি চাই, তুই এ বিষয় নিয়ে বর্ষাকে কিছু না বলিস।বর্ষাকে কিছু বলা মানে আমাকে বলা কথাটা মাথায় রাখিস।

বর্ষণঃ আমি যদি বর্ষাকে কিছু না বলি তবে তুমি খুশি তো মম?

রমা বেগম মিষ্টি করে হেসে বর্ষণের মাথায় হাত দিয়ে চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে হুমমমম খু….ববববব খুশি।

বর্ষণঃ রমা বেগমকে জরিয়ে ধরে বলে আমার কিছু বলার আছে,এটাকে আবদার ও বলতে পারো।

রমাঃ ঠিক আছে বল।

বর্ষণঃ একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে এগুলো ওকে পরিয়ে দিও কাল সকালে। আমি এটা দিয়েছি সেটা বলতে পারবে না।

রমাঃ ওকে ঠিক আছে।

…….

ক্যাম্পাসে এসে বর্ষণের গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে বর্ষণ নেমে বর্ষার জন্য দরজা খুলে দেয় বর্ষা শাড়ি ধরে সাবধানে ধিরে ধিরে গাড়ি থেকে নামে।বর্ষা আর বর্ষণ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে তখন গেট দিয়ে শাফিন ঢোকে। বর্ষাকে দেখে যেনো শাফিন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।

শাফিন ভাবছে এটা মানবি নাকি পরী?অপরুপ সুন্দরী। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ শাফিনের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় বর্ষার পাশে অন্য কাউকে দেখে। শাফিন অনুভব করে তার বুকের বাম পাশটায় ব্যাথা অনুভব করছে। মনে হচ্ছে কলিজায় হাত দিয়েছে কেউ। শাফিন আর কিছু না বলে সেজা স্টেজে চলে যায়।

বর্ষা আর বর্ষণ ও হেঁটে যাচ্ছে স্টেজের দিকে।আর পুরো ক্যাম্পাসের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে যেন ওদের গিলে খাচ্ছে সবাই।

স্টেজের কাছে যেতেই নদী এসে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে। নদী আর বর্ষা সমানের ভি আই পি একটা সিটে বর্ষণের বসার ব্যাবস্থা করে দেয়। বর্ষণ বসে আছে। নদী বর্ষা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যাস্ত।যথারীতি অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলো। একে একে কোরআন তিলাওয়াত, শিক্ষকদের প্রাথমিক বক্তৃতা এবং শিক্ষকদের শিক্ষকদের শিক্ষামুলক কিছু কথার মাধ্যমে ই শুরু হলো অনুষ্ঠান।

একে একে সবার পারফরম্যান্স ও শুরু হয়ে গেলো।অনুষ্ঠান বেশ জমজমাট।

বর্ষা আর নদী দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ শাফিন এসে বর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে বলে। বর্ষা তোমায় আজ দারুণ লাগছে। তুমি খুব সুন্দর।

বর্ষাঃ একটু মুচকি হেসে জবাবে বললো ধন্যবাদ ভাইয়া।

শাফিনঃ বাই দ্যা ওয়ে, তোমার সাথে যে ছেলেটা এসেছে সেটা কে? আগে তো কখনো দেখিনি?

বর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নদী বলে ভাইয়া উনি বর্ষার গেস্ট। বর্ষার ভাইয়া।

শাফিনঃ ওহ্ আচ্ছা ।

নদীঃ হুমম ভাইয়া। একটু খেয়াল রাখবেন, তার যেন প্রবলেম না হয়। যাই হোক, প্রথম বর্ষার ভার্সিটিতে এসেছে। বর্ষার তো একটা প্রেস্টিজ আছে না কি বলেন।

শাফিনঃ তা তো অবশ্যই । ঠিক আছে আমি খেয়াল রাখবো।বলেই শাফিন চলে যায়।

গান, কবিতা,আবৃত্তি, অভিনয় শেষে এখন ড্যান্সের এনাউন্সমেন্ট করা হয়েছে।বর্ষা, নদী আর শাফিন স্টেজের একপাশে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ বর্ষা গাইড করছিলো তাই ওর কোনো হেল্পের প্রয়োজন হতে পারে।

বর্ষা, শাফিনকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বর্ষণ ও উঠে গিয়ে স্টেজের পাশে দাঁড়ায়।

চলবে…..

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_১১

বর্ষণকে উঠে আসতে দেখে শাফিন জিজ্ঞেস করলো, কি হলো ভাইয়া! আপনার কি কিছু লাগবে?

বর্ষণঃ না তেমন কিছুনা। একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলনা তাই এখানে আসলাম।

শাফিন বর্ষণের কথা শুনে মনে মনে ভাবছে,, তো কাবাবের হাড্ডি হতে কে বলেছিল! ভালোই যখন লাগবেনা তখন এখানে আসতে কে বলেছিল। পুরো আনন্দটাই মাটি করে দিলো!

নৃত্যের জন্য তৃতীয় নাম ঘোষণা করতে গিয়ে রিঙ্কু স্যার তো অবাক ।প্রতিযোগির নাম দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে স্যার। এটা কি করে সম্ভব! একবার লিস্টের দিকে তাকাচ্ছে একবার বর্ষার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর রিঙ্কু স্যার ঘোষণা করলেন, এবার নৃত্য পরিবেশন করবেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেঘলা ইসলাম বর্ষা।

ঘোষণা শুনে বর্ষার তো প্রাণটা প্রায় যায় যায় অবস্থা। বর্ষা তো অংশগ্রহণ করেনি তাহলে ওর নাম লিস্টে এলো কি করে! বর্ষা শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে শাফিন ভাইয়া আমার নাম টা কে দিয়েছে? আমি আগেও বলেছি নৃত্য করতে পারবো না আর এখনো বলছি এটা আমার পক্ষে একদমই সম্ভব নয়।

বর্ষার নাম ঘোষণার সাথে সাথে সবাই হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। সবাই খুব খুশি আর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে বর্ষার নৃত্য দেখবে বলে। সবার এতো আগ্রহ দেখে স্যারেরাতো খুবই খুশি।

বর্ষা স্টেজে উঠছেনা দেখে স্যার বর্ষার কাছে গিয়ে বললো এনি প্রবলেম বর্ষা?

বর্ষাঃ আমি নৃত্য করবোনা বলে লিস্টে নাম দেইনি বাট নাম আসলো কি করে?

স্যার বুঝতে পেরে বললো ওকে বর্ষা তুমি একটু সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করো আমি ততক্ষণে সামলে নিচ্ছি ওদিকটায়। যেহেতু ঘোষণা করে দিয়েছি এবার তুমি পারফর্ম না করলে আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর বদনাম হয়ে যাবে। তুমি একা একা পারফর্ম করতে না চাইলে কারও সাথে করতে পারো।নদী আছে শাফিন আছে এছাড়াও অনেকে আছে যার সাথে ভালো লাগে পারফর্ম করতে পারো।

শাফিনের সাথে পারফর্মের কথা শুনে বর্ষণের তো রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। বর্ষা দেখে ভয় পেয়ে যায়।কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

বর্ষাঃ স্যার আমি সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি আর আমার ড্রেসআপও নৃত্যের জন্য পারফেক্ট নয়। আ’ম সরি?

বর্ষার কথা শুনে শাফিন বললো তুমি এভাবে কেনো বলছো তুমি যে ড্রেসআপই করোনা কেনো সেটাতেই পারফেক্ট।এভাবেই পারফর্ম করতে পারবে অনেক সুন্দর লাগবে।

বর্ষণ রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। এটা হলো বর্ষণের রাগ কন্ট্রোলের প্রচেষ্টা মাত্র।

কারণ বর্ষণ ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে শাফিন কে ফলো করে যাচ্ছে। বর্ষণ আর বর্ষাকে একসাথে দেখে শাফিন যে খুশি হয়নি সেটা বর্ষণ খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। শাফিন বর্ষার প্রশংসা করেছে বর্ষা হেসে হেসে তা সায় দিয়েছে সেটা ও বর্ষণের নজর এড়ায়নি।

নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করার সময়, শাফিন অন্য কাউকে নিজ হাতে ফুল দিয়ে বরণ না করলেও বর্ষাকে ঠিকি এক গুচ্ছ গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করেছে।যেখানে বাকিরা একটা ফুলের ভাগিদার সেখানে বর্ষা পেলো এতোগুলা ফুল! এটাও বর্ষণকে নিজে চোখে দেখে মেনে নিতে হবে? এটা কি স্বাভাবিক কিছু? এখন আবার বর্ষার নৃত্যের পার্টনার হবে কিনা শাফিন?! সেটা কি আদৌ সম্ভব! বর্ষণের চোখের সামনে সেটা কি বর্ষণ হতে দিতে পারে?

নদীকে ডেকে একটু দুরে নিয়ে বর্ষণ কিছু একটা বললো। তরপর স্টেজের পাশে এসে আবার দাঁড়ালো।

হঠাৎ মিউজিক বেজে উঠলো..

বর্ষণ স্টেজে মিউজিকের তালে তালে নৃত্য করছে। বর্ষা সেটা দেখে তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।বর্ষা নদীকে বলছে এই পেতনী আমায় চিমটি কাট তো! এটা কি আমি ঠিক দেখছি?
নদী বর্ষাকে জোরেসোরে একটা চিমটি কাটে।বর্ষা আউচ!! বলে চিল্লিয়ে বলে এই শাঁকচুন্নি এতো জোরে চিমটি কাটতে বলেছি নাকি।নদী তখন দাঁতের পাটি বের করে বলে চিমটি যখন কাটতেই বললি তখন আস্তে কেটে লাভ কি বল।আর তুই ঘোরের মধ্যে আছিস জোরে চিমটি না কাটলে তো বাস্তবে ফিরতিনা। ওদের দুজনের কথার মাঝেই –

বর্ষণ নৃত্য করতে করতে স্টেজের একপাশে চলে আসে যেখানে বর্ষা দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দেয় বর্ষণ। বর্ষাও বর্ষণের হাত ধরে স্টেজে চলে আসে।

বর্ষাকে স্টেজে দেখে সবাই তো বর্ষা বর্ষা বলেই চলেছে আর করতালি দিয়ে উৎসাহিত করছে।
বর্ষণ আর বর্ষা স্টেজে নৃত্য করছে বাকিরা মুগ্ধ হয়ে সেই নৃত্য দেখছে। বর্ষার নাচে পারদর্শী সেটা সবাই না জানলেও অনেকেরই তা জানা কিন্তু বর্ষণের নৃত্য দেখে তো সবাই হা হয়ে আছে।
একে তো চকলেট বয় তার উপর এতো সুন্দর নৃত্য সবাই যেনো রুপকথার রাজ্যে ডুবে আছে।

অন্যদিকে বর্ষার সাথে অন্য কাউকে নাচতে দেখে শাফিন তো জ্বলছে আর লুচির মতো ফুলছে।কারণ শাফিন ভেবেছিলো এই নৃত্যে বর্ষার সাথে জুটিটা তারই হবে কিন্তু সেটা আর হলোনা। শাফিনের সব আশায় এক গ্লাস পানি ঢেলে দিয়েছে বর্ষণ।

শাফিন বর্ষার নাচের পার্টনার হবে বলে সবার অজান্তেই বর্ষার অনুমতি ছাড়াই লিস্টে নাম লিখে দিয়েছে।
কিন্তু শাফিন তো আর জানেনা বর্ষণ কি জিনিস। শাফিনের এই নিছক প্ল্যান যে বর্ষণের মাস্টার মাইন্ডের কাছে নিতান্তই তুচ্ছ সেটা হয়তো শাফিন জানতো না।

গান বেজে যাচ্ছে…

? ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা
ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা
ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা ভোরের দরজা হাট
নাতিনা ধাধিনা শুনছি নতুন শতাব্দীতার ডাক (২)

আজকে ভালো যেটা হয়তো কালকে ভালো নয়
আজকে যেটা দোটানাতে কালকে সে নিশ্চিয়

জীবন মানে ওঠা পরা জীবন ভাঙা গড়া
ভাঙতে গড়তে উঠতে পড়তে সময় চলে যায়

মন্দ ভালো সাদা কালোয় জীবন বয়ে যায়
ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা ভোরের দরজা হাট
নাতিনা ধাধিনা শুনছি নতুন শতাব্দীতার ডাক।

পুরোটা লিখলাম না গান ?

তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করছে বর্ষা আর বর্ষণ। অন্যদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। বর্ষা তো এক মনে বর্ষণে মুগ্ধ। অন্য দিকে খেয়াল থাকবে কি করে।

নৃত্য শেষে স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষণ আর বর্ষা। সবার অনেক বাহবা পেয়েছে তা। অবশ্য পারফর্ম টাও করেছে দারুণ। এক কথায় বাহবা পাওয়ার মতোই পারফর্ম করেছে তারা।

রিঙ্কু স্যার গিয়ে বর্ষণের সাথে করমর্দন করে তাকে বুকে জরিয়ে ধরে। আর অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দেয়। কারণ আজ বর্ষণ এভাবে বর্ষাকে নিয়ে পারফর্ম না করলে হয়তো বর্ষা পারফর্ম ই করতোনা। যেটা ডিপার্টমেন্ট এর জন্য খুব অসম্মানের।

তারপর এক এক করে বাকি সবাই পারফর্ম করলো।

বর্ষা শাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।এমনিতে শাড়ি পড়তে পারে না তার উপর আবার নৃত্য। অবশ্য নৃত্যের সময় কয়েকবার পরতে পরতে বেঁচে গেছে বর্ষণের জন্য।বর্ষণ সামলে নিয়েছে সব।

বর্ষাঃ নদীকে ফিসফিসিয়ে বলছে তুই এদিকটা সামলা আমি শাড়ির পিনগুলো ঠিক করে লাগিয়ে আনি।

নদীঃ এখন দোতলায় যাবি একা? ওদিকটা তো একদম ফাঁকা। কেউ নেই এখন আমি আসবো?

বর্ষাঃ আরে না, তোকে আসতে হবেনা আমি এক্ষুনি চলে আসবো।
নদী বললো যাহ্ তবে জলদি ফিরে আসিস।

বর্ষা দোতলায় চলে যায় এদিকটা একদম ফাঁকা।বর্ষা নদীকে আসতে নিষেধ করলেও এখন মনে মনে ভাবছে শুধু শুধু নদীকে সাথে করে আনলামনা। এদিকটায় এমন ফাঁকা জানলে নদীকে সাথে করেই নিয়ে আসতাম।

শাড়ির পিন ঠিক করে পিছনে ঘুরতেই কেউ বর্ষার হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে যায়। বর্ষা চিৎকার করবে তার আগেই মুখ চেপে ধরে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here