তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব১৪,১৫

0
1460

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব১৪,১৫
#Hridita_Hridita
#পর্ব১৪

বর্ষণ ভার্সিটির গেটে এসে দেখে বর্ষা চুপচাপ একপাশে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মিটিং সেরে আসতে লেট হয়ে গেছে বর্ষণের।

বর্ষণকে দেখে বর্ষা এসে গাড়িতে উঠে বসে। বর্ষা কোনো কথা বলছে না বাইরে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ বার বার বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বর্ষণ খুব ভালো করে জানে তার পরীটা খুব রেগে আছে।

বর্ষণের গাড়ি বাড়ির গেটে আসতেই দাড়োয়ান গেট খুলে দেয়। বর্ষণ গাড়ি পার্ক করে নামতেই বর্ষাও গাড়ি থেকে নেমে গট গট করে ভেতরে চলে যায়। বর্ষা ওয়াশরুম থেকে সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বেলকনিতে বসে আছে।

সচারাচর এই সময়টাতে বেলকনিতে আসেনা বর্ষা। মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে এমন সময় বেলকনিতে আসে তা ছাড়া আসা হয়না।কিন্তু প্রায় বিকেলটা বর্ষার বেলকনিতেই কাটে।

নিপু এসে ডেকে গেছে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। বর্ষা নিচে এসে দেখে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। সবাই বলতে বর্ষণ, রমা বেগম, নিপু । বর্ষা আসতেই নিপু খাবার সার্ভ করে নিজেও খেতে বসলো।

রমা বেগম খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দু একটা কথা জিজ্ঞেস করছে বর্ষাকে। বর্ষা শুধু হু, হ্যা, না, আচ্ছা, ঠিক আছে এভাবে জবাব দিয়েছে এর বেশি কিছু না।

রমা বেগম বর্ষার জবাব দেওয়ার ধরণ দেখে বর্ষার দিকে তাকায়। কারণ অন্য দিন হলে বর্ষা তো বর্ষণকে আর রমা বেগমকে হাজারটা প্রশ্ন করতো।বর্ষণকে এসময়ে বাসায় দেখে।
রমা বেগম বর্ষণের দিকে আড়চোখে তাকায়। বর্ষণ বাঁকা হেসে খাবারে মনোযোগ দেয়।
রমা বেগমের আর বুঝতে বাকি রইলো না দুইজন আবার ঝামেলা পাকিয়েছে। রমা বেগম আর কিছু জিজ্ঞেস করলোনা। কারণ এখন জিজ্ঞেস করলে বর্ষা কিছু বলবেনা।

বর্ষা খাবার খেয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। অন্যান্য দিনে বর্ষা খাওয়া দাওয়া করে নিপু আর রমা বেগমের মাথা খারাপ করে কথা বলে বলে।কিন্তু আজ তার উল্টো। কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পরেছে।

বর্ষণ বর্ষাকে ডাকতে এসে দেখে বর্ষা ঘুমিয়ে পরেছে। বর্ষার পাশে বসে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত বর্ষাকে দেখে বর্ষণ। সেই টেডিটাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে পাগলিটা।

বর্ষা ঘুমিয়ে আছে দেখে বর্ষণ ও ডাকেনি তাকে। বর্ষণ মনে মনে ভাবছে ঘুমোচ্ছে ঘুমোক। হয়তো খুব ক্লান্ত আজ পিচ্চিটা আর না হয় এই বর্ষণের উপর রেগে ঘুমিয়ে পরেছে, এটা ভেবে বর্ষণ একটু হাসি দিয়ে উঠে যায়।

এক ঘন্টা পরে বর্ষণ বর্ষার রুমে এসে দেখে বর্ষা এখনো ঘুমোচ্ছে। বর্ষণ ফিরে এসে নিজের রুমে না গিয়ে নিচে চলে যায়। নিপুকে বলে কফি করে দিতে।

বর্ষণ কফি খাচ্ছে আর রমা বেগমের সাথে গল্প করছে।
এদিকে বর্ষা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় চা খাওয়ার জন্য। সোফায় বর্ষণকে বসে থাকতে দেখে বর্ষা কিচেনে চলে যায়।বর্ষা চা করছে।

বর্ষণ রমা বেগমকে কিছু একটা বলেই সোফা থেকে উঠে কিচেনে যায়। কিচেনে গিয়ে বর্ষাকে বলে এই যে ম্যাডাম রেডি হন জলদি করে।

বর্ষা শুনেও না শোনার ভাব ধরে চা করা নিয়ে ব্যাস্ত। নিপু খাবার পানি টেবিলে রাখতে গেছে। বর্ষণ বর্ষাকে হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে আসে।

বর্ষাঃ কি ব্যাপার এভাবে নিয়ে আসলে কেনো?
বর্ষণঃ কোনো কথা না বলে চুপচাপ রেডি হয়ে নে বের হবো। বেডের উপর যে শাড়ি আছে সেটা পরে নে।
বর্ষাঃ আমি কোথাও যাবোনা তুমি যাও ভাইয়া। আমাকে জোর করোনা প্লিজ।

বর্ষণঃ ওকে ঠিক আছে, জোর করবো না। তুই যদি আধা ঘন্টার মধ্যে রেডি না হোস তাহলে আমি নিজে তোকে রেডি করাবো আই মিন আমি নিজে হাতে তোকে শাড়ি পরাতে বাধ্য হবো।তুই কি চাস আমি তোকে শাড়িটা পরাই? যদি আমার হাতে শাড়ি পরতে না চাস তাহলে রেডি হয়ে নে জলদি করে। আমি মমকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

বর্ষণ রুম থেকে বের হয়ে রমা বেগমকে পাঠিয়ে দিলো।রমা বেগম শাড়ি পরিয়ে চুল খোপা করে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলো বর্ষাকে।

ব্ল্যাক স্টোনের শাড়িতে অপরুপ সুন্দর লাগছে বর্ষাকে।ব্ল্যাক শাড়ির সাথে ম্যাচিং ব্ল্যাক স্টোনের বড় দুল, ফর্সা হাত ভর্তি ব্ল্যাক স্টোনের চুড়ি ফুটে উঠেছে। এই চুড়িগুলো যেন বর্ষার হাতের জন্যই গড়ানো হয়েছে। কপালে ব্ল্যাক স্টোনের সিম্পল টিকলি।

বর্ষা রুম থেকে বের হতেই থমকে যায় বর্ষণ ব্ল্যাক পান্জাবি হাতা অল্প ফোল্ড করে রাখা। হাতে ব্র্যান্ডের ব্ল্যাক ওয়াচ।গোলাপি ঠোঁট ফর্সা গাল আর ব্রাউন কালারের চোখের এই ছেলেটা যে কোনো মেয়েকেই ঘায়েল করতে পারবে এক মুহুর্তে।

বর্ষণ তো তার পরীকে দেখে এক মুহুর্তের জন্য পুরো দুনিয়াটাই ভুলে গিয়েছে। আশে পাশে যে আর কেউ আছে সেটা ভুলেই গিয়েছে।

নিপু হালকা কাশি দিতেই বর্ষণ চুলে হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বাইরে বের হয়ে যায়।
বর্ষাও বের হয় পিছে পিছে। ওরা বেরিয়ে যেতেই নিপু আর রমা বেগম উচ্চ স্বরে হাসতে থাকে।

নিপুঃ আম্মা জানো? এই পগল আর পাগলী দুইটা নিজেরাও জানেনা যে ওরা একে অন্যকে ছাড়া একটা মুহুর্ত ও থাকতে পারবেনা।

রমাঃ হুম, আমিও সেটাই চাই ওরা নিজেরা সেটা বুঝুক যে ওরা একে অপরের জন্য কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট।

বর্ষণঃ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছু দুর গিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখে বর্ষা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ মিষ্টি করে হেসে আবার গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দেয়।

আবার কিছুক্ষণ পরে বর্ষণ বর্ষাকে ডেকে বলে- কিরে তুই কি এখনো রেগে আছিস আমার উপর?

বর্ষাঃ নাহ্! আমি কারও উপর রেগে নেই।
বর্ষণঃ সত্যি বলছিস তো?
বর্ষাঃ হুম এতে মিথ্যে বলার কি আছে।
বর্ষণঃ ফুচকা খাবি?

ফুচকার কথা শুনে বর্ষা চার হাতপা তুলে লাফিয়ে ওঠে। আবার একটু পরে আমতা আমতা করে বলে না মানে খাবোনা।

বর্ষা ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে কেনো খাবেন না ম্যাডাম, সেটা কি জানতে পারি?

বর্ষা কিছু বললো না।

বর্ষণ একটা ফুচকাওয়ালাকে দেখে গাড়ি সাইড করে রেখে গাড়ি থেকে নেমে যায় আর বর্ষাকে বলে চুপ করে গাড়িতে বসে থাকতে।
বর্ষণ ফুচকাওয়ালা মামার সাথে কথা বলে গাড়ির কাছে আসতেই ফুচকাওয়ালা ও গাড়ির কাছে চলে আসে।

বর্ষণঃ মামা ঝাল কম দিয়ে এক প্লেট ফুচকা দাও।
বর্ষাঃ না মামা ঝাল বেশি করে দিয়েন। বর্ষণের কথা না শুনে অতিরিক্ত ঝাল দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে বর্ষা। চোখে পানি চলে এসেছে তবুও ঝাল খেয়েই চলেছে।

একটু পরেই শুরু হয়ে গেলো বর্ষার চিল্লাপাল্লা। ঝাল লেগে হু হা শুরু হয়ে গেলো। ফুচকাওয়ালা মামা তো ছুটলো পানি আনতে।

বর্ষণ গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করে পানি খাইয়ে দিলো তাতেও ঝাল কমেনি বর্ষার। ঝালে মুখ হা করে আছে বর্ষা।
বর্ষণ বর্ষার এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে বর্ষার দুই গালে হাত রেখে মুখে ফু দিতে থাকে।
বর্ষা তো বর্ষণের এমন কান্ড দেখে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে বর্ষার ঝাল কমে যায়। বর্ষণও ফু দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

দুজনই তাকিয়ে দেখে ফুচকাওয়ালা মামা পানির বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
এতে বর্ষণের কিছু মনে না হলেও বর্ষা লজ্জা পেয়ে যায়।
বর্ষা গাড়িতে উঠে বসে। ফুচকাওয়ালা মামার বিল মিটিয়ে বর্ষণ ও গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আবার চলতে থাকে।

এমনিতে এতোটা ঝাল খায়না বর্ষা কিন্তু ঐ যে বর্ষণ বলেছে ঝাল কম খেতে। এখন তো বর্ষণের বিপরীত কিছু করতে হলে ঝাল খেতেই হবে। তাই বর্ষার এই ঝাল খাওয়ার বায়না।

বর্ষা গাড়িতে বসে ভাবছে বর্ষণের কিছুক্ষণ আগের কান্ডের কথা আর মুখ টিপে হাসছে।

চলবে….

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৫

বর্ষণ বর্ষাকে বললো তোর পছন্দের জায়গা কোথায় বল নিয়ে যাবো সেখানে।

বর্ষাঃআমার পছন্দের জায়গায় যেতে চাইলে তো নিয়ে যাবেনা, উল্টে আমায় বলবে আমি নাকি বাচ্চাদের পছন্দের জায়গায় যাই। আমার পছন্দ আর বাচ্চাদের পছন্দের মধ্যে নাকি কোনো তফাৎ নেই হুহ্ ?।

বর্ষণঃ ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি এবার থাম। পার্কিং জোনে গাড়ি পার্ক করে বর্ষণ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বর্ষাকেও নামতে বলে।

বর্ষাঃ গাড়ি থেকে নেমে তো পুরোই অবাক! বললো ভাইয়া আমি তো তোমায় জায়গার নাম বলিনি তাহলে তুমি কি করে বুঝলে আমি পার্কের কথা বলছি !

বর্ষণঃ তোকে আমি কি আজ নতুন চিনি? এইটুকু থেকে তোকে দেখে আসছি। তোর পছন্দ অপছন্দ ভালোলাগা মন্দ লাগা বুঝবোনা তাই কি হয়?! তা এখন এসব ভাববি নাকি সামনে এগুবি।

বর্ষা আর কিছু না বলে এক হাতে শাড়ির কোঁচা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সাথে বর্ষণও এগুলো।

বর্ষা পার্কে এসে খুব খুশি এখানে ওখানে ঘুরছে হাসছে কথা বলছে আর বর্ষণ সেই মুহুর্ত গুলো ক্যামেরা বন্দী করছে তবে সেটা বর্ষাকে লুকিয়ে।
বর্ষা জানেওনা যে তার এই পাগলামি, তার এই ভালোলাগার মুহুর্তটা কেউ একজন লুকিয়ে ক্যামেরাবন্দী করছে।

হাঁটতে হাঁটতে বর্ষা আর বর্ষণ নাগরদোলার পাশে চলে আসে।নাগরদোলার পাশে এসে বর্ষা দাঁড়িয়ে যায়।বর্ষণ ও ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে কি হলো এনি প্রবলেম?

বর্ষা একবার নাগরদোলার দিকে তাকিয়ে আবার বর্ষণের দিকে তাকাতেই বর্ষণের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে পাগলিটা কি বলতে চাইছে।

বর্ষণ বর্ষাকে বলে অন্য কোন আবদার থাকলে বল এটা পূরণ করা সম্ভব নয়।

বর্ষা জিদ ধরে নাগর দোলায় ওঠার জন্য।টিকিট কাউন্টারে কথা বলে বর্ষণ। বাধ্য হয়ে নাগর দোলায় টিকিট কেটে দুজনে উঠে বসে। শুধু দুজনের জন্য টিকিট কাটেনি বর্ষণ। পুরো নাগরদোলার বুকিং দিয়েছে সে।

নাগর দোলা ধিরে ধিরে চলতে আরম্ভ করে। নিচেরদিক থেকে উপরে উঠছে। বর্ষা বললো ভাইয়া তুমি উঠাতে চাইলেনা কেনো। আমার তো খুব ভালো লাগ….

কথাটা পুরো না করতেই বর্ষা ভয়ে হাত পা শক্ত করে বসে বর্ষণের দিকে চেপে যায়।কারণ দোলনাটা তখন উপর থেকে নিচের দিকে নামছে।

বর্ষণঃ বর্ষাকে বললো কি হলো বর্ষা! ভয় লাগছে? নেমে যাবি? নাগর দোলা থামাতে বলবো?

বর্ষাঃ ভয় পেলেও মুখে তা প্রকাশ করলোনা। বললো না না ; থামাতে হবেনা আমি ঠিক আছি।

দ্বিতীয় বার উপরে উঠে গেছে দোলনা এখন আগের তুলনায় একটু জোরে ঘুরছে। উপর থেকে নিচে নামতেই বর্ষা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে বর্ষণকে জরিয়ে ধরে।

বর্ষণ একহাতে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে অন্য হাতে ইশারা করে নাগর দোলা বন্ধ করতে বলে। সাথে সাথে নাগর দোলা বন্ধ করে দেয়। বর্ষণ বর্ষার গালে হাত দিয়ে বর্ষাকে ডাকছে –

বর্ষা, এই বর্ষা ঠিক আছিস!খুব বেশি ভয় লাগছে! কি হলো চুপ করে আছিস কেনো? কথা বল বর্ষা!

এদিকে বর্ষা বর্ষণকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে স্বভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বর্ষার হাত পা কাঁপছে এখনো।
নাগর দোলা থেকে বর্ষাকে ধরে নেমে আসে বর্ষণ।

বর্ষাকে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসায়। বর্ষণ তার পরীর এমন অবস্থা দেখে খুব ভয় পেয়ে যায়। কারণ বর্ষা যখন পাঁচ বছরের তখন এক শুক্রবার দুই ফ্যামেলি মিলে (বর্ষা আর বর্ষণের পরিবার) পার্কে ঘুরতে আসে।তখন বর্ষা বায়না করেছিলো নাগরদোলায় ওঠার জন্য।

নাগর দোলায় উঠে যখন নিচের দিকে নামবে তখন বর্ষা ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন ডক্টর বলেছিলো খুব বেশি ভয় থেকে এমন হয়েছে। তাই বর্ষার বাবা মা সবসময় বর্ষাকে এসব থেকে দুরে রাখতো।

বর্ষণ ও চায়নি বর্ষা নাগরদোলায় উঠুক আর সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। এই জন্যে বর্ষার আবাদার মেটাতে পুরো নাগরদোলা বুকিং দিয়েছিলো যেনো যখন তখন নেমে আসতে পারে। আর কাউন্টারে তখন বর্ষণ এই কথাটাই বলছিল।

বর্ষা এখন একদম ফিট।চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। বর্ষাঃ ভাইয়া এখন বাসায় চলো আমি ঠিক আছি। বলেই গাড়ির দিকে হাঁটা ধরে।

বর্ষণ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর বর্ষা বসে কিছু একটা ভাবছে।

বর্ষণ কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে গাড়ি থামায়। বর্ষা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে এটা তো বাসা নয়।

বর্ষাঃ কোথায় আনলে ভাইয়া এটা তো বাসা নয়!
বর্ষণঃ এটা যে বাসা নয় সেটা আমিও জানি। এখন কথা না বলে নাম গাড়ি থেকে।বর্ষা গাড়ি থেকে নেমে তো মহা খুশি সামনে চটপটি?
বর্ষার খুশি দেখে বর্ষণ বললো এই যে ম্যাম – যাই করেন ঝালটা কিন্তু কম ওকে!?

বর্ষাঃ ঘার বাকিয়ে সায় দিলো। একমনে চটপটি খাচ্ছে বর্ষা।

গাড়িতে হেলান দিয়ে এক পা উঠিয়ে দুই হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষণ। তাকিয়ে বর্ষার চটপটি খাওয়া দেখছে।

বর্ষা চটপটি খেতে খেতে এসে বর্ষণকে বললো ভাইয়া তুমি খাবেনা?
বর্ষণ খাবে না বলার সময়টাও পেলোনা বর্ষা চটপটি তুলে বর্ষণের মুখে দেয়। দুজনেই চটপটি খাচ্ছে আর ঝগড়া করছে।

বর্ষণঃ আমি তো এখানে এসেছি তুই চটপটি খাবি বলে। আমি খেতে আসিনি। তোকে খাওয়াতে এনেছি।

বর্ষাঃ বর্ষণের মুখে চটপটি তুলে দিতে দিতে বলে,ইশশ! বললেই হলো? তুমি না খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছো এতে আমার পেট খারাপ করবেনা!

বর্ষণঃ চোখ বড় বড় করে বললো কি বললি আমি তাকালে তোর পেট খারাপ করবে? আর আমি যে তোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেটা তোকে কে বললো শুনি?

বর্ষাঃ কে আবার বলবে আমি কি অন্ধ দেখতে পাইনা নাকি!

বর্ষণঃ তারমানে তুইও আমায় লুকিয়েছে লুকিয়ে দেখছিলি?

বর্ষাঃ হু দেখছিলাম ই…… কই না তো আমি তো তাকাইনি তোমার দিকে। ম মা মানে মনে হলো তাই আর কি।

বর্ষণঃ হয়েছে আর বলতে হবেনা। আপনার খাওয়া শেষ হলে এবার গাড়িতে উঠুন।

বর্ষা দুই প্লেট চটপটি প্যাক করে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। চটপটির দাম মিটিয়ে বর্ষণও গাড়িতে উঠে বসে।

বর্ষা আর বর্ষণ কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসে। গাড়ি পার্ক করে রেখে দুজনে একসাথে ভেতরে যায়।

রমা বেগম দুজনকেই একসাথে ভেতরে ঢুকতে দেখে হেসে বলে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে এসো কথা আছে তোমাদের সাথে।

বর্ষা চটপটি নিপুর হাতে দিয়ে উপরে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে বসে বর্ষা।

রমা বেগম আর নিপু চটপটি খেতে খেতে বর্ষাকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় কোথায় ঘুরলো কেমন মজা হলো।

বর্ষা তো খুশি মনে সবাইকে বলেই যাচ্ছে কোথায় কোথায় ঘুরেছে কি খেয়েছে কেমন মজা হয়েছে।রমা বেগম আর নিপু মন দিয়ে তা শুনছে। এর মধ্যেই বর্ষণ এসে বর্ষার পাশে বসেছে বর্ষা তা টেরই পায়নি।টের পাবে কি করে সে তো গল্প বলতে ব্যাস্ত।বর্ষণকে দেখে নিপু আর রমা বেগম মিটিমিটি হাসছে। কিন্তু বর্ষা তা বুঝতে পারলো না।

একটু পরে বর্ষণ বললো ওহ্ আচ্ছা এতো মজা হলো বুঝি?

বর্ষাঃ হুম খু….. বলেই বর্ষণকে দেখে থেমে যায়।

বর্ষণ মুখটা বর্ষার কানের কাছে নিয়ে বললো কি করছিস আর একটু হলেই তো ফুচকায় ঝাল খাওয়ার কথাটাও বলে দিচ্ছিলি।পাগল হয়ে গেছিস?

বর্ষা বর্ষণের কথা শুনে বাস্তবে ফেরে। সত্যি তো! সে এসব কি বলতে যাচ্ছিল?

বর্ষণ বর্ষার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে, তা আর কি কি মজা হলো?

বর্ষা কিছু না বলে লজ্জা পেয়ে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। নিপু আর রমা বেগম ওদের দুজনের এমন কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।

বর্ষণঃ মম তুমি কি বলবে বলছিলে তখন।
রমা বেগম বললো হুম তোর খালামনি ফোন করেছিলো।
বর্ষণঃ কি বললো খালামনি।

রমাঃ বিয়ের কথাটা ফাইনাল করবে আগামীকাল সেটাই জানালো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here