তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব১৬,১৭

0
1367

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব১৬,১৭
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৬

বর্ষণঃ কি বলছো মম।পাকা দেখা দেখি সব কমপ্লিট? আর আমি কিছু জানতেই পারলামনা?

রমাঃ আরে বাবা সব এতো তারাতারি হয়ে গেছে যে সেভাবে আয়োজন করতে পারেনি তবে তোর খালামনি ফোনে সব বলেছিল আমায়। তোর পাপাকে তো ডেকেছিল কিন্তু কাজের চাপে যেতে পারেনি।বলেছে বউমাকে এক্কেবারে বিয়ের দিনেই দেখবে। আগে থেকে দেখলে পুরাতন হয়ে যাবে। কিন্তু এখন এমন ভাবে জোরাজোরি করছে যে না গেলেই নয়।

বর্ষণঃ বউমাকে আগেই দেখলে বুঝি পুরাতন হয়ে যায়! বলেই বাঁকা হাসে।

রমা বেগম বুঝতে পেরে বলে ওরে ফাজিল খুব পাকা হয়েছিস তাইনা?

বর্ষা আর নিপু কিছু বুঝতে পারছেনা তাই একজন আর একজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

রমাঃ একচুয়েলি রাফসান এ মাসের শেষে কানাডা যাবে অফিসের কাজের জন্য, সেখানে তিন মাস থাকতে হবে। তাই বিয়েটাও তারাতারি ই করানো হচ্ছে। নতুন বউকে নিয়ে যাবে অফিসের কাজ শেষ করে হানিমুন করে দেশে ফিরবে।

বর্ষণঃ হুম বুঝলাম এক ঢিলে দুই পাখি ?

রমাঃ হুম শুধু এটাই না আরও একটা আছে।

বর্ষণঃ কি?
রমাঃ পাখি।
বর্ষণঃ মানে?
রমাঃ মানে আগামীকাল ডেট ফিক্সড করে আগামীকাল ই এঙ্গেজড করে রাখবে।তাই তো আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে।

এতোক্ষণে নিপু আর বর্ষা বুঝতে পারলো এতোক্ষণ ধরে বর্ষণের খালাতো ভাই রাফসানের বিয়ের কথা চলছিলো।

বর্ষণঃ আগামীকাল আমার একটু কাজ আছে তাই আমি যেতে পারবোনা। তুমি নিপুকে নিয়ে পাপার সাথে চলে যেও।

রমাঃ ওয়েট ওয়েট! তোর কাজ আছে তাই যাবিনা বুঝলাম কিন্তু বর্ষা? ওর যেতে কি প্রবলেম। রাফসান বার বার করে বলে দিয়েছে সবাইকে নিয়ে যেতে।

বর্ষাঃ প্রথমে খুব খুশি হলেও সেটা বেশি সময় স্থায়ী হলোনা। তাকে নেওয়া হবে না শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।মন খারাপ করে একপাশে বসে আছে বর্ষা।

বর্ষণঃ মম! ওর আগামীকাল যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আর শনিবার ওর ক্লাস আছে। এমনিতেই বিয়েতে গেলে ক্লাস মিস হবে। তুমি রাফসানকে বলে দিও আমরা ওর বিয়েতে একসপ্তাহ থাকবো ওদের বাসায়। আর এখন গেলে বিয়েতে দুদিনের বেশি থাকতে পারবো না তাই যাইনি। দেখবে রাফসান মন খারাপ করবেনা।

রমাঃ হুম বুঝতে পেরেছি আর বলতে হবে না। আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিবো।

থ্যাঙ্কস মম বলেই বর্ষণ ওর মমকে জরিয়ে ধরে।

সকাল…..

আজ একটু বেশি সকালেই ব্রেকফাস্ট করছে সবাই।রাফসানদের বাসায় একটু তারাতারিই পৌঁছোতে হবে। সেখান থেকে আবার রাফসানের হবু শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে। সেখানেই ডেট ফিক্সড করে এঙ্গেজড এর ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

ব্রেকফাস্ট সেরে নিপু রেডি হতে চলে গেলো রমা বেগমও চলে গেলেন তবে নিজে রেডি হতে না, তার সাহেবকে সব কিছু গুছিয়ে দিতে। তা না হলে তিনি তো আবার নিজে নিজে কিছু খুঁজে পাননা। রমা বেগম রাতেই ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে রেখেছে যেনো সকালে দেরি না হয়ে যায়।

বর্ষণ ব্রেকফাস্ট করে উপরে চলে যায়। আর বর্ষা নিপুর কাছে যায়। নিপুকে হেল্প করতে।

বর্ষা নিপুর রুমে গিয়ে তো হা হয়ে নিপুকে কি অসাধারণ দেখতে লাগছে।

চুড়ি হাতার আকাশি কালারের লং কামিজ, সাদা চুড়িদারি, সাদা আর আকাশি মিশ্রনের ওড়নাটা একপাশে দিয়েছে অন্য পাশে তার লম্বা চুল কিছু পেছনে আর কিছু সামনে দিয়ে রাখা।

দুধে আলতা গায়ের রং না হলেও। ফর্সা নিপুকে অনেক সুন্দর দেখতে লাগছে।

রায়হান খানঃরমা বেগম আর নিপুকে নিয়ে বেরিয়ে পরে।

রমা বেগম যাওয়ার আগে সার্ভেন্টদের সব কিছু বুঝিয়ে বলে গেছে যেনো বর্ষণ, বর্ষার কোনো প্রকার সমস্যা না হয়। যখন যেটা লাগবে যেনো পৌঁছে দেয়। ইনফ্যাক্ট কি কি রান্না হবে সব কিছু বলে দিয়েছে।

এদিকে রায়হান খান পৌঁছে গেছে রাফসানদের বাসায়। গেট দিয়ে ঢুকতেই রাফসানদের বাসার সবাই এসে গেটে হাজির।
তারা খুব খুশি হয়েছে অনেকদিন পরে আবার সবাই একসাথে হবে বলে।

গাড়ি পার্ক করে রায়হান খান নামলো গাড়ি থেকে। এক এক করে রমা বেগম আর নিপুও নেমে আসে।
ঋতু এখনো উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে গাড়ির দিকে। হয়তো কাউকে খুঁজছে।

রমাঃ কিরে ঋতু কি হলো কাউকে খুঁজছিস?
ঋতুঃ খালামনি তুমি আর নিপু নামলে, বর্ষণ বর্ষাকে তো দেখছিনা! ওরা কি আলাদা গাড়ি করে আসছে? বলেই পেছনে উঁকি দেয় ঋতু।

রমাঃ যে এসেছে তার কোনো কদর নেই, যারা আসেনি তাদের জন্য যতো মাথা ব্যাথা তাইনা?

আসেনি মানে!! ঋতু, রোহিত, রাফসান একসাথে বলে কথাটা।

রমাঃ বলছি বলছি আগে ভেতরে তো যেতে দিবি নাকি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সব বলবো।

ঋতুঃ আরে না না খালামনি ” এসো ভেতরে এসো।তা নিপু তুমি কেমন আছো? ভালো তো? তোমাকে তো দারুণ লাগছে!

নিপুঃ জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

কথা বলতে বলতে সবাই ভেতরে চলে আসে।

রাফসানের মাঃ ছুটু( রমা বেগমকে) তোরা উপরে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নে তার পর গাড়িতে বসে যতো খুশি গল্প করিস। কিচেন থেকেই কথাটি বললো রাহেলা বেগম।

ওরা ফ্রেশ হতে হতে চলুন এবার পরিচয়টা করিয়ে দেই।

ঋতু হলো রাফসানের বড় বোন। রাফসানরা এক ভাই এক বোন। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। রোহিত হলো রাফসানের বেচারা দুলাভাই যে বরাবরই বউয়ের ভক্ত। ঋতু যেটা হ্যা বলবে সেটা না করার সাধ্য রোহিতের নেই।সুন্দরী বউয়ের উপর দিয়ে কথা বলতে মন সায় দেয় না তার।

রাফসানের বাবা এনামুল সাহেব, মা রাহেলা বেগম। এনামুল সাহেব নিজের বিজনেস দেখাশোনা করেন।রাহেলা বেগম গৃহিণী। রাফসান ও বাবার সাথে তাদের বিজনেস দেখাশোনা করে। বিশেষ করে রাফসান তাদের কোম্পানির বিদেশী ব্রাঞ্চ দেখাশোনা করে।

রমা বেগম, নিপু, রায়হান খান ফ্রেশ হয়ে এলো।
সবাই একসাথে বসে নাস্তা করে বেরিয়ে পরে রাফসানের হবু শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।বেশি দুরের পথ নয় মাত্র আধাঘন্টা সময় লাগে।

বড়রা (বর্ষার মা বাবা,রাফসানের মা বাবা, আর রাফসানের চাচা) যাচ্ছে রায়হান খানের গাড়িতে।রায়হান খান নিজে ড্রাইভ করছে পাশে বসেছে এনামুল সাহেব। দুই বোন পেছনে বসে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে।

আর ছোটরা( নিপু,ঋতু,রোহিত,আর রাফসান) যাচ্ছে অন্য গাড়ি নিয়ে যেটা ড্রাইভ করছে রোহিত আর পাশে বসেছে রাফসান। পেছনে বসেছে নিপু আর ঋতু। ওরা ওদের মতো গল্পে মেতে আছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঈশিতাদের বাসায়পৌঁছে যায় সবাই। ঈশিতা হলো সেই মেয়ে যার সাথে রাফসানের বআজ এঙ্গেজড।

রাফসানদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে বড়রা এগিয়ে এসে সবাইকে ভেতরে নিয়ে যায়।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কনে দেখে তো সবাই খুশি দেখতে মাশাআল্লাহ। তার থেকে বড় কথা হলো ব্যাবহার টা খুবই ভালো অল্প সময়ে সবাইকে আপন করে নিতে পারে।

ওজু করে ছেলেমানুষ জুমআর নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়া করে কথা বলবে সবাই।

…………..
বর্ষণ নামাজ পড়ে এসে বর্ষাকে সাথে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়।
দুপুরে খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে বর্ষা বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই বর্ষণ নক করে।
বর্ষা উঠে বসে বলে ভেতরে এসো ভাইয়া।

বর্ষণঃ মমের সাথে যেতে পারিসনি বলে মন খারাপ?
বর্ষাঃ একটু হাসি দিয়ে বলে না ভাইয়া। তবে হ্যা ঐ সময় মনটা একটু খারাপ হয়েছিল বাট এখন ঠিক আছি।

বর্ষণঃ রাতে বাইরে যাবি ডিনার করতে? তোর পছন্দের কোন রেস্টুরেন্টে।

বর্ষাঃ না ভাইয়া আজ আর বের হবোনা । তার থেকে ভালো আজ আমি তোমায় রান্না করে খাওয়াবো।

বর্ষণঃ কিহ্! তুই আর রান্না? একদম না। একদম পাকামি নয় ঠিক আছে?

বর্ষা মনে মনে ভাবছে শুধু শুধু কেনো যে বর্ষণ কে কথাটা বলতে গেলো। না বললে তো আর নিষেধ করতো না।ভেবে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।

বর্ষণঃ কি হলো মুখ এমন করে রাখলি কেনো। আমার কথাটা বুঝি ভালো লাগেনি? ওকে রান্না করবি।

বর্ষাঃ তো মহা খুশি। সে নিজে হাতে রান্না করবে আর তার পারমিশন দিয়েছে বর্ষণ নিজে।

বর্ষণঃ ওয়েট ওয়েট! আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
তুই রান্না করবি ঠিকই তবে আমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবি। মেইন শেপ এই শ্রাবণ আহমেদ বর্ষণ। বলেই বর্ষণ হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা ধপাস করে বসে পরে। তার সব আশায় বালি চাপা দিয়ে দিয়েছে বর্ষণ।

………

দুুপুরের খাবার খেয়ে সবাই ঈশিতাদের ড্রইং রুমে কথা বলছে।একচুয়েলি সবাই বসে ডেট ফিক্সড করেছে এঙ্গেজড ও হয়ে গেছে।
সবাই কথা বলছে তখন ঋতু উঠে বলে তোমরা বড়রা কথা বলো আমরা বরং ঈশিতার রুমে গিয়ে আড্ডা দেই বলে ঋতু,রোহিত,নিপু রাফসান আর ঈশিতা উঠে যায়।

চলবে…….

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৭

ঈশিতার রুমে সবাই বসে আছে আর ঈশিতা, রাফসান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।এটা অবশ্য ঋতুর প্ল্যান ছিলো।রোহিত মাঝেমধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে। কিন্তু ঋতু গিয়ে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে আসছে।

ঈশিতাদের বাসা থেকে সন্ধ্যার পরে রওনা হয় সবাই।

রাতে রাফসানদের বাসায় সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিতে ব্যাস্ত। টপিক রাফসানের বিয়ে। ২২ তারিখ শুক্রবার বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়েছে।

বড়দের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বিয়ের ডেকোরেশন নিয়ে। আর ছোটদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে সাজুগুজু, হলুদ সন্ধ্যা মেহেদী পার্টি, ড্রেসআপ এগুলো নিয়ে।

………

বর্ষণ কিচেনে রান্নার আয়োজন করছে আর বর্ষা তাকে সাহায্য করছে।সাহায্য বলতে বর্ষণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা।বর্ষণ কোনো কিছুতে হাত দিতে দিচ্ছেনা বর্ষাকে।

বর্ষণঃ বিরিয়ানি রান্না করবে। চিকেন কেটে ধুয়ে রেখে দিয়েছে নিজেই।বর্ষাকে ছুঁতেও দেয়নি।

বর্ষা অনেকবার এটা ওটা করতে চেয়েছে কিন্তু বর্ষণ ধমক দিয়ে চুপচাপ দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

বর্ষণঃ ভাইয়া! তুমি আগে কখনো বিরিয়ানি রান্না করেছো? নাকি আজই প্রথম?

বর্ষণঃ তোর কি মনে হয় হু..
আমি বিরিয়ানি রান্না করতে পারিনা? আমি এর আগেও অনেকবার বিরিয়ানি রান্না করেছি বুঝতে পেরেছিস?

বর্ষাঃ না মানে এর আগে কখনো রান্না করতে দেখিনি তো তাই বললাম আর কি।

বর্ষণঃ তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে রান্না করতে হবে নাকি? এবার কথা বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু দেখে যা।

বর্ষণ পিঁয়াজ কাটতে যাবে তখন সেলফোন টা বেজে ওঠে।রাফসান ফোন করেছে। বর্ষণ ফোনে কথা বলতে বলতে কিচেনের বাইরে চলে আসে।

বর্ষাও কাজ করার সুযোগ পেয়ে যায়। পিঁয়াজ কাটতে শুরু করে দেয়।

রাফসানঃ আমার সাথে যা করলি সেটা কিন্তু একদমি ঠিক করলিনা। নিজে তো আসলি না সাথে তোর পাখিটাকেও খাঁচায় বন্দী করে রাখলি?
আমি ভেবেছিলাম তুই আর বর্ষা অবশ্যই আসবি।কিন্তু….

বর্ষণঃ আরে ইয়ার, মন খারাপ করছিস কেনো। বেশি কিছু পেতে হলে অল্প কিছু ত্যাগ করতে হয়।

রাফসানঃ What do u mean by, বেশি কিছু পেতে হলে অল্প কিছু ত্যাগ করতে হয় হুমমম!

বর্ষণঃ শোন তাহলে আজ গেলে বিয়েতে থাকতে পারতাম না। তাই আজ না গিয়ে তোর বিয়েতে যাওয়ার প্ল্যান করেছি। আর পুরো এক সপ্তাহ ধরে তোর বিয়েতে মজা করবো সবাই।

রাফসানঃ ঠিক বলছিস তো? তাহলে আমার বিয়ের কেনাকাটা কিন্তু বর্ষা আর তোকে সাথে নিয়েই করবো। তোরা ১৯ তারিখ মঙ্গলবার ভোরে চলে আসবি। লাঞ্চ করে সবাই বেরিয়ে পরবো শপিংয়ে।

বর্ষণঃ ওকে।তাই হবে।

হঠাৎ কিচেন থেকে আহ্!! করে আর্তনাদ করে ওঠে বর্ষা।

বর্ষণের কানে পৌঁছোতেই ফোন ফেলেই দৌড়ে কিচেনে চলে যায়।গিয়ে দেখে বর্ষার আঙ্গুল কেটে রক্ত ঝরছে ।বর্ষণ দ্রুত গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসে।

বর্ষার আঙুলে বাম লাগিয়ে দিতেই উহ্!করে ওঠে। বর্ষণ ফু দিতে দিতে বলে হাতে কি খুব বেশি জ্বালা করছে?

বর্ষাঃ নাহ্ ঐ আর কি একটু একটু জ্বালা করছে।

বর্ষণঃ হয়েছে! এবার শান্তি হয়েছে তো! তুই কি এটাই ঠিক করেছিস, আমার একটা কথাও শুনবিনা? বার বার বারণ করা সত্বেও কেনো পিঁয়াজ কাঁটতে গেলি? আমি কি তোকে বলেছিলাম পাকামি করতে? বলিনি তো! তাহলে কেনো করতে গেলি।

বর্ষণ এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে আঙুল টা বর্ষার নয় বর্ষণের কেটেছে।

বর্ষাঃ বকছো কেনো ভাইয়া ??
বর্ষণঃ নাহ্ বকবোনা! তুই আমার কথার অবাধ্য হবি আর আমি বকবোনা? তুই যদি আমার কথা শুনতি তাহলে কি এই কষ্ট টা তোকে পেতে হতো বল? নিজে তো শান্তিতে থাকবিনা সাথে আমাকেও জ্বালিয়ে মারবি।

বর্ষাঃ বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে বসে বর্ষণের বকা হজম করছে।

বর্ষণঃ বর্ষার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলে এখন যা উপরে যা। অনেক হেল্প করেছিস আর করতে হবে না। এখন রেস্ট কর গিয়ে। খাবার রেডি হলে তোকে ডেকে নিবো।

বর্ষাঃ আমি এখানে থাকি ভাইয়া? কিছু করবোনা কোনো হেল্প নয় শুধু দাঁড়িয়ে থাকবো।

বর্ষণঃ নাহ্ তোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।দাঁড়িয়ে থেকে কাজ নেই উপরে যা।

বর্ষাঃ ভাইয়া…..!

বর্ষণঃ আর একটা কথা বলবি তো কোলে করে নিয়ে উপরে রেখে আসবো।

বর্ষা আর কিছু না বলে উপরে চলে যায়।

বর্ষণ এবার রান্না করতে শুরু করে দেয়। রান্না শেষ করে কিচেনে রেখে রুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

বর্ষার রুমে গিয়ে দেখে বর্ষা শুয়ে আছে।

বর্ষণঃ কিরে পাগলি ঘুমিয়ে পরেছিস?

বর্ষা বর্ষণের কথা শুনে উঠে বসে বলে না ভাইয়া ঘুমাইনি এসো ভেতরে এসো।

বর্ষণঃ চল খাবি চল।খাবার খেয়ে একটা পেইন কিলার খেতে হবে তা না হলে তো কাল ক্লাসে আবার লিখতে পারবিনা।

দুজনেই নিচে নেমে আসে।
সার্ভেন্ট খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে আগে থেকেই।

বর্ষা প্লেট নিতে যাবে তখন বর্ষণ বর্ষার হাত ধরে ফেলে।

বর্ষণঃ R u mad! কি করছিস টা কি। তোর কি বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে?

বর্ষাঃ কিছু না বুঝে হা করে চেয়ে আছে।

বর্ষণঃ একে তো হাত কেটে বসে আছিস, আবার ঐ হাত দিয়ে এখন খাবার খাওয়ার প্ল্যান করছিস? কি বুদ্ধির বহর!
প্লেট রেখে দে।বলেই নিজের প্লেট থেকে খাবার নিয়ে বর্ষার মুখে তুলে দেয় বর্ষণ। খাবার টা রেস্টুরেন্টের মতো না হলেও খারাপ খেতে হয়নি।

খাওয়া শেষ করে বর্ষাকে পেইনকিলার খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা টেনে দেয়।

বর্ষা ঘুমিয়ে গেলে বর্ষণ রুমে চলে যায়। কিন্তু বর্ষণের চোখে ঘুম নেই। বর্ষণ বসে পরে তার ডায়েরি টা নিয়ে। যতোটুকু না লেখে তার থেকে দ্বিগুণ সময়টা সে ভাবনায় ডুবে থেকে কাটায়।

রাত ১ টা বর্ষণ হাঁটতে হাঁটতে বর্ষার রুমের সামনে গিয়ে দেখে বর্ষা এলোমেলো হয়ে টেডিবিয়ার টা জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষাকে এমন করে ঘুমোতে দেখে মুচকি মুচকি হাসে বর্ষণ। সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বর্ষণ ও ঘুমিয়ে পরে।

সকালে….
বর্ষা রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে বর্ষণ খাবার টেবিলে ওয়েট করছে।বর্ষা এসে বর্ণের পাশে বসে। বর্ষাকে দেখে বর্ষণ জিজ্ঞেস করে হাতে ব্যাথা আছে নাকি।

বর্ষাঃ ব্যাথা আছে কিন্তু খুব একটা না। সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারবো ভাইয়া।

বর্ষণঃখাবার তুলে দিয়ে বলে, তুই খেতে পারবি সেটা আমি ও জানি কিন্তু তোর হাতে যেহেতু এখনো ব্যাথা আছে সেহেতু আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।

খাওয়া শেষ করে বর্ষার হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে বাম লাগিয়ে আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয় বর্ষণ। খুব বেশি কাটেনি তবে আঙুলের মাথা কেটেছে বলে একটু বেশি রক্ত ঝরেছে। আর ব্যাথাটাও একটু আছে।

বর্ষাঃ ভাইয়া? এতো অল্পতে তুমি এতো সিরিয়াস আর এতোটা অস্থির হয়ে যাও কেনো বলোতো?

বর্ষণ কিছুক্ষণ বর্ষার দিকে চেয়ে থেকে বলে সেটা তুই বুঝবি না। তুই আয় আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি বলে বর্ষণ বাইরে চলে যায়।

বর্ষাও বর্ষণের পিছে পিছে গিয়ে গাড়িতে বসে।বর্ষার ভার্সিটির সামনে বর্ষাকে নামিয়ে দিয়ে যায় বর্ষণ।

ক্লাসে বসে আছে নদী আর বর্ষা। হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে নদী কিন্তু বর্ষা কোনো কথাই বলছে না চুপটি করে বসে আছে।
নদীঃ রেগে গিয়ে বললো কিরে আমি তো তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি চুপ করে আছিস কেনো?

বর্ষাঃ হুম চুপ করে আছি কারণ তুই যতোগুলো প্রশ্ন করেছিস তার উত্তর দিতে গেলে স্যার চলে আসবে। তুই ঠিকঠাক উত্তর পাবিনা। তার থেকে ভালো দুদিন ক্লাস ছুটি নিলে কেমন হয় বল?

নদীঃ ক্লাস ছুটি নিবি? কিন্তু কেনো!

বর্ষাঃ কেনো আবার! এই দুদিন ধরে তোর প্রশ্নের আনসার দিবো।

নদীঃ ?

বর্ষা কিছু না বলে শুধু একটু মিষ্টি করে হাসলো।

চলবে…..

হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here