তুমিময় প্রেম?♥
সূচনা_পর্ব
Fabiyah Momo?
LIVE CAMERA START!
আমার সামনে একদল গ্রুপ ক্যামেরা অন করে তাক করে রেখেছে। দুজন মেয়ে আমার দুহাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। মুখ আমার ওড়না দিয়ে বেধে পাচজন ছেলে আমার দৃশ্য উপভোগ করছে। আমি ছোটাছুটি করছি, গোঙাচ্ছি কিন্তু কেউ কাছে এসে সাহায্য করছেনা….কেউ না…সবাই ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে আমার দৃশ্য দেখছে। সাদা গোলাপির কামিজটা মিনিটেই টমেটোর সস, কাদার ময়লামাটিতে ধূসর লালে পরিনত হয়েছে। মেয়ে দুটো হোহো করে অট্টহাসি….ছেলেদলের মধ্যে একজন সিগারেট ফুকছে, একজন করতালি দিচ্ছে, দুইজন ক্যামেরাতে সব ধারন করছে, আরেকজন “স্টপ গাইজ ” বলে বাধা দিচ্ছে… কেউ সেটা কানেও নিচ্ছেনা। শেষেরজন হাত ভাজ করে স্ট্রেট হয়ে দাড়িয়ে আছে। সবাই সভ্য, বড়লোক ফ্যামিলির…. শুধু আমি মিডেলক্লাস অর্থাৎ মধ্যবিত্ত পরিবারের। ওদের এই নিচুকাজের শিকার দ্বারা আপনারা বুঝতেই পারছেন আমি ইতিমধ্যে Ragging এর শিকার। আর উনারা আমার সিনিয়র দল। যার যার বাবার দুপয়সা টাকার গরমে ক্যাম্পাসে ওদের পা পড়েনা। খুবই অহংকারী। ভার্সিটিতে সব মেয়েদের মধ্যে আমি নাকি চুপচাপ মেয়ে তাই বলে ওরা আমার সাথে বিভীষিকা আচরন করছে…. কান্নায় আমার চোখমুখ লাল হয়ে আছে কেউ সেটা আগলে নিচ্ছেনা…মুখ দিয়ে আওয়াজ করে টিচারদের ডাকব তাও আমার মুখ বাধা…কখনো এমন বাজে অবস্থায় পড়িনি…কখনো না। মেয়ে দুটো শর্ট টপস, স্লিভলেস হাতা, ওড়না নামক বস্তু ছাড়া। হঠাৎ ডানপাশের জেনি নামের মেয়েটা বলে উঠল,
-রামিম, ইয়ার হারি আপ! সিজার নিয়ে আয়… মেয়েটার চুল দেখছিস কতো বড়!! একটু কেটে দেই… নিয়ে আয়!!
আমার চুল কাটার কথা শুনে আমি হাত মুচড়িয়ে ছাড়ার চেষ্টা করি কিন্তু আমি বারবার ব্যর্থ। মেয়ে দুটো খুবই শক্তিশালী। করতালি দেয়া রামিম ছেলেটা দৌড়ে সামনের ল্যাব থেকে সিজার এনে জেনির হাতে দিলো। জেনি একহাতে আমাকে শক্ত করে চেপে আরেকহাতে সিজার নিয়ে আমার বিনুনির মাঝ বরাবর নিশানা করলো… মাথা ঝুকিয়ে যাচ্ছি…আমার চুল কেটে দিচ্ছে কেউ এগিয়ে আসছেনা…আমাকে টর্চার করছে কেউ ওদের থামাচ্ছেনা…আমার চুল আমার সব… আমার সৌন্দর্য…ওরা শেষ করে দিচ্ছে…কেউ সাহায্য করছেনা…..
বিশিষ্ট নামিদামি SUMMER FIELD ক্যাম্পাসের তুখোর ডেন্জারাস গ্যাং! নাম “হান্টার’স”। সবাই একনামে চিনে এদের গ্যাংকে। একেকটা মেম্বার খুব ভয়ানক। এরা অনেকের দুদর্শা ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে থাকা ছুটিয়ে দিয়েছে। দুইজন মেয়ে আর পাচজন ছেলের সম্মেলনে তৈরি “HUNTERS” গ্যাং. সিজার ধরা মেয়েটার নাম জিনিয়া জেনি, যেমন রূপ তেমনি অহংকার। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে বলে ক্যাম্পাসে কেউ চোখ তুলেও তাকায় না। আরেকজন মেয়ে নাম রিদিতা রিমি, চেহারার গড়ন তত সুন্দর না হলেও ছেলেরা লাইন লাগাতে টাইম নেয়না। সিগারেট ফুকা ছেলের নাম নাসিফ সরকার, ক্যাসিনো দুনিয়ায় শহর কাপানো উজ্জল সরকারের আদরের ছেলে। দেখতে স্মার্ট হলেও নেশায় এক নাম্বার। এমন কোনো নেশাদ্রব্য নেই যা নাসিফ টেস্ট করেনি। । রামিম ইকবাল, প্রবাসী বাবামায়ের ছোট ছেলে। গ্যাংয়ের সবচেয়ে বড় চামচা যদি ইঙ্গিত করা হয় সবাই আঙ্গুল তুলে রামিমকে দেখাবে। ক্যামেরা তাক করা একজনের নাম আহাদ মল্লিক এবং অপরজনের নাম তন্ময় শিকদার। তারাও খুব উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট! দ্যা গ্যাং লিডার! এন্ড দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম টায়কুন রাদিফ মুগ্ধ। দেশের টপ লেভেলের বিজনেস ম্যান বাবার দুইমাত্র ছেলে। বড় ভাই রাজিব রুগ্ধ, যেকিনা এই ভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের লেকচারার।
তাদের এই র্যাগের দাপটে কোনো স্টুডেন্ট মুখ ফুটে কথা বলার সাহস পায়না কেননা কিছু বললেই এ্যাকশন! সদ্য ক্যাম্পাসে আসা প্রথম বর্ষ স্টুডেন্ট স্নিগ্ধা মম অলরেডি তাদের র্যাগিং অত্যাচারের শিকার। ছোট ভাই এবং মা বাবা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বেড়ে উঠা সে।
চুলের বিনুনি যেই ক্যাচ করে কাটবে তার আগেই লিডার তথা রাদিফ মুগ্ধ জেনিকে “স্টপ!” বলে থামতে বলল। জেনি কিছুটা কপালকুচকে সিজারের হাত থামিয়ে দিল। মুগ্ধ পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ধীরেসুস্থে এগিয়ে এলো। মমর দিকে তাকিয়ে জেনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-জেনি স্টপ। লেট হার গো…
জেনিসহ সবাই মুগ্ধের কথায় অবাক! এই প্রথম কোনো র্যাগিং টাস্কে মুগ্ধ বাধা দিচ্ছে। রিমি কিছু বলতে নেবে মুগ্ধ ঠোটে আঙ্গুল বসিয়ে চুপ করতে বলল। রিমি হাত ছেড়ে দিলে জেনিও মমর হাত ছেড়ে দেয়। মম ওদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে মুখ থেকে ওড়নার বাধন খুলে গলায় দিয়ে নিল। চারপাশ পিনপতন নিরবতা। শতশত স্টুডেন্ট সিনেমার ক্লাইম্যাক্স দেখতে চুপ। মম চোখ মুছে হাটা ধরলে মুগ্ধ পেছন থেকে চুলের বিনুনি টেনে ধরে। ওমনেই মম চুলে টান পেয়ে চোখ খিচে থেমে যায়। মম পেছন ফিরে অবস্থা বুঝবে তার আগেই মুগ্ধ বলে উঠে-
-ওয়েট! স্টপ রাইট দেয়ার! কথা না শুনলে চুলের গোছা সাথে থাকবেনা বলে দিলাম!
মাথায় হাত দিয়ে মম ঠাই মেরে দাড়িয়ে যায়। মুগ্ধ জেনির হাত থেকে সিজার নিয়ে বিনুনি একটু উচু তুলে শেষপ্রান্তের তুলি আবদ্ধ চুল পযর্ন্ত ক্যাচচ করে কেটে দেয়। নিমিষেই হাতের এক তালু সমান চুল মাটিতে পড়ে যায়। চুল কাটার বেগতিক বুঝেই মম হুরমুড়িয়ে চুলের বিনুনি সামনে এনে দেখে চুলের আগা ১০ ইন্ঞ্চির মতো কেটে দিয়েছে। চুলের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে থাকে মম! হাতমুষ্ঠিবদ্ধ করে চোখ লাল করতে থাকে। সবাই বিশ্বজয়ী হাসিতে ফেটে পড়েছে। সবার হাসি উপেক্ষা করে সে দৌড়ে ছুটে পালালো। মমর দৌড়ে যাওয়াতে হাসির জোয়ার আরো ফেটে পড়লো। এই বুঝি মেয়েটার কষ্ট লাগল!!! কিন্তু নাহ্! সে ফিরে আসলো আর হাতে যা ছিলো সবাই হাসি থামিয়ে চোখ বড় করে শঙ্কামুখ করল। ওড়না আর গলায় নেই। বাকা করে কাধ টু কোমরে বেধে নিয়েছে মম। হাতে হকিস্টিক (Hockey Stick)। রামিম, আহাদ, নাসিফ, তন্ময়, রিমি,জেনি সবাই একে অন্যের দিকে মুখ ফিরে তাকাচ্ছে। মুগ্ধ পকেট থেকে হাত বের করে আবদ্ধ ভাবে হাত ভাজ করে নিল। ফুল ডোজ এটিটিউড। কি হতে চলছে!! এক মেয়ে তাদের সামনে হকিস্টিক নিয়ে এসেছে করবেটা কি! মূহুর্ত্তের মধ্যে দৌড়ে অবসান ঘটানো রোমান্ঞ্চকর ঘটনার!!
“DHOOM!!!” ক্যাম্পাসের ভেতরে পার্ক করা গাড়ির সামনের গ্লাস চুরমার!!
“DHOOM!” গাড়ির জানালার গ্লাস চুরমার!!
ধুমধাপ গাড়ির কাচ গুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মম! মনে জিদ…এত্ত সোহাগের চুলের আগা কাটার পরিনাম! জেনিসহ সবাই ওকে থামাতে দৌড় দিলে মুগ্ধ হাত প্রসার করে সবাইকে থামিয়ে দিল। সে দেখতে ইচ্ছুক এই দুদিনের মেয়ে কতটা খেলা রটাতে পারে! গাড়িটা যদিও মুগ্ধের। গাড়ির পিছনের গ্লাসে “RADEEF MUGDHO” বড় বড় হরফে লিখা এতে কারোর বুঝার বাকি থাকবেনা গাড়িটা আসলে কার।। তাই মমর বুঝতে সময় লাগেনি গাড়িটা তার চুলকাটা লিডারের। বাকি স্টুডেন্টের মধ্যে হৈহৈ সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। তবুও টিচারদের আসার নামসূত্র নেই। গাড়ির চর্তুপাশে কাচ ভেঙে এবার হকিস্টিক হাতে সামনে এসে দাড়ায় মম। সামনে উচা লম্বা ছয়ফিট হাইটের মোস্ট চার্মিং পার্সন রাদিফ মুগ্ধ। গেটআপে সাদা টিশার্ট ওপরে কালো রঙের জ্যাকেট। জ্যাকেটের হাতা কিছুটা উঠানো। চুল সেট। লালচে গোলাপীর ঠোটজোড়া ।। পাপড়ি ভরা চোখের ভেতরে কৌতুহলের ভাব।। দুজনের মধ্যে দূরত্ব একহাত। মম ঠোট কুচকে হঠাৎ হকিস্টিক আকড়ে “ধুমম” করে এক ঘা বসিয়ে দিল মুগ্ধের মাথা বরাবর। ঘটনাস্থলে সবাই আশ্চর্যের সপ্ত আকাশে!! কি সাংঘাতিক কান্ড করে দেখালো!!
“মুগ্ধ!!!!” চিৎকার দিয়ে দলবলে দৌড়ে এলো। তরল বেগে রক্ত পড়ছে। আঘাত পেয়েই মুগ্ধ সেন্সলেস!!!
-চলবে??