তুমিময়_অসুখ
পর্ব-৮
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
১৭.
মেহমানরা চলে গেলো মামানির সাথে গল্পগুজব করে। খাওয়া দাওয়ার পর্বও শেষ হলো। কিন্তু অভ্র ভাইয়া আজ অফিসে গেলো না, বিকেলের দিকে বেরিয়ে গেলেন কোথায় যেন। অফিসে না গিয়ে কোথায় গেলো সেটা জানার ইচ্ছে হচ্ছে।
রাফার সাথে কথা বলে অনেকক্ষণ সময় পার করলাম। অভ্র ভাইয়া বাসায় ফিরলো। ওনি বিকেলের দিকে কোথায় যেন গিয়েছিলেন, হাতে ব্যাকপ্যাক। সোজা রুমে ঢুকে গেলেন। মামানি আমার হাত দিয়ে ওনার জন্য খাবার পাঠালো। আমি ইতস্তত করে গেলাম রুমে।
অভ্র ভাইয়া মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছেন ওয়াশরুম থেকে। খালি গায়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আমি লজ্জ্বায় মাথা নিচু করে আছি। বললাম, ‘আপনার খাবার!’
ওনি বললেন, ‘এসব খাবো না।’
—“তাহলে কি খাবেন?”
—“তোর হাতের রান্না খাবো!”
—“আমাকে দেখে কাজের বুয়া মনে হচ্ছে?”
—“কাজের বুয়া মনে হবে কেন? তোকে তো আমার ব..বউ.. ”
–“আচ্ছা কি খাবেন বলুন।”
ওনি বললেন, ‘কফি নিয়ে আয়!’
আমি কফি আনার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ করে অভ্র ভাইয়ার চোখ পড়লো ওনার প্রিয় শো-পিসের দিকে। চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, ‘হাউ ডেয়ার হি? কে করেছে এই কাজ?’
আমি চমকে উঠলাম ওনার চিৎকারে। গুটিশুটি মেরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। ওনার এই শো-পিসটা আমি একটু আগেই ভেঙে ফেলেছি। কৌতূহলবশত হাতে নিয়েছিলাম, হঠাৎ করে হাত ফসকে ফ্লোরে পড়ে ওনার সাধের শো-পিস গুড়ো গুড়ো করে দিয়েছি। এখন যদি ওনি জানতে পারেন তাহলে আমি নিশ্চিত ওনি আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবেন। এখান থেকে কেটে পড়াই ভালো। আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে যেই দৌড় দিতে যাবো অমনি অভ্র ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে দরজার ওখানেই পড়ে গেলাম। খোপা করা চুল এলিয়ে পড়লো সারা মুখে। মেজাজ হয়ে গেলো চরম খারাপ। অভ্র ভাইয়া রেগে বললেন, ‘এভাবে লাফালাফি না করলে খাবার হজম হয় না?’
আমি ওনার কথা শুনে মিইয়ে গেলাম। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করলাম। বললাম, ‘অমনি উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গিয়েছি, আপনার রুমের এই দরজাটা ফালতু।
অভ্র ভাইয়া রেগে বললেন, ‘তোর মতো আমার দরজা না। যাইহোক, সত্যি করে বল তো এই শো-পিস তুই ভেঙ্গেছিস! তাই না?’
আমি ভয়ে সত্যিটা বলে দিলাম। ওনি রেগে বললেন, ‘তুই ইচ্ছে করেই আমার জিনিসগুলো আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখিস, তাই না ইরাম? যাতে আমি কষ্ট পাই!’
আমি ততক্ষণে ওঠে দাঁড়িয়েছি। ওনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। ওনার জিনিস দূরে সরিয়ে ওনাকে কষ্ট দেবার কোনো ইচ্ছে নেই। ওনি বেরিয়ে গেলেন। বলে গেলেন ওনার কফি ওনি নিজেই বানাবেন, আমার সেবা তিনি চান না। আমিও মন খারাপ করে ব্যলকুনিতে বসে রইলাম। আমি কি আর ইচ্ছে করে ওনার জিনিস ভেঙ্গেছি যে ওনি এতো রাগলেন?
১৮.
ভয়ে ভয়ে রুমে বসে আছি। অভ্র ভাইয়া যে সেসময় বেরিয়েছেন এখনো ফিরেনি। আমাকে না আবার রেগেমেগে গণধোলাই দেয়। টেনশনে মাথা খারাপ হওয়ার দশা আমার। ওফফ,,, কি যে করি।
আমাকে আর কিছু করতে হলো না। বেশ দেরিতে ওনি ফিরলেন। খাবার বাইরে থেকে খেয়ে এসেছেন। এদিকে আমি ওনার রাগ থেকে বাঁচার জন্য ওনার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করলাম। কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নরম গলায় বললাম, ‘আচ্ছা আপনি অফিসে গিয়েছিলেন, তাই না?’
ওনি ধমকের সুরে বললেন, ‘না! আজ যাইনি।’
আমি থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে সকালে রেডি হয়েছিলেন কেন?’
আবারও রেগে বললেন, ‘তোকে বলতে হবে? সব ব্যাপারে কথা বলবি না।’
আমার ভাব নেওয়ার প্ল্যানে ওনি জল ঢেলে দিলেন। আমার প্রচন্ড রাগ হলো। সেজন্য রেগে বললাম, ‘আমার কথা বলার ইচ্ছেও নেই আপনার সাথে, যত্তসব।’
একথা বলে আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম। আর উনি মোবাইল টিপাটিপি করছেন। আমি পাত্তা দিলাম না, সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুমাতে গেলেই শুধু পড়ার কথা মনে হয়, কত পড়া বাকি আমার? এডমিশন টেষ্ট এ নইলে ফেইল করবো!
অভ্র ভাইয়া আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালেন। আমিও তাকালাম। বললাম, ‘কি?’
—“তুই বিছানায় কেন?”
—“শুনুন! আমি নিচে শুতে পারিনা, আপনি গিয়ে নিচে শুয়ে পড়ুন। আর হ্যাঁ বিছানায় কিন্তু শুবেন না। আমি একা শুবো এখানে।”
—“মানে?”
—“মানে আপনি আমার সাথে এক বিছানায় শুবেন না।”
অভ্র ভাইয়া রাগী চোখে তাকালো। বললো, ‘তুই দেখছি আমার ঘরে এসে আমারই উপর ছুরি চালাচ্ছিস! বেশি বাড়াবাড়ি করলে সোজা বাসা থেকে বের করে দিবো, বিছানায় শুয়েছিস তো থাকতে পারিস, তবে আমি কোথাও যাচ্ছিনা। তোর ইচ্ছা হলে তুই যা!
আমি ভয়ে আর কিছু বললাম না। মাঝখানে কোলবালিশ রেখে অভ্র ভাইয়া শুয়ে পড়লেন। মোবাইল ঘাটাঘাটি করছেন আর মিটিমিটি হাসছেন। আমি কৌতূহলবশত একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখলাম, উনি রিফা নামের কারো সাথে চ্যাট করছেন।
কিসব চ্যাটের ভাষা, দেখে আমি অবাক। অবশ্য অভ্র ভাইয়া এসব লিখছেন না, রিফা নামের ওইপাশের ব্যক্তিটা লিখছেন আর অভ্র ভাইয়া রিপ্লাই করছেন। আমি যে উঁকি দিয়ে দেখছি অভ্র ভাইয়া সেটা খেয়াল করলেন না। ম্যাসেজ এলো ওপাশ থেকে। আমি চোখ কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করে শুধু জড়িয়ে ধরা কথাটা বুঝতে পারলাম।
ওমনি অভ্র ভাইয়া আমাকে দেখে ফেললো। রাগী গলায় ধমকে বললো, ‘এই তুই লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ম্যাসেজ দেখছিস বেয়াদ্দব মেয়ে!’
আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘ক কই ন না তো!’
—“সে তো দেখতেই পাচ্ছি। লুকিয়ে লুকিয়ে কারো পার্সোনাল ম্যাসেজ দেখা অপরাধ জানিস না!”
আমিও ভাব নিয়ে বললাম, ‘আর আপনি এসব কি ম্যাসেজ করছেন, ছি কি অশ্লীল কথাবার্তা!”
ওনি মনে হচ্ছে দৃষ্টি দিয়েই আমাকে ভস্ম করে দেবে। আমি মুখ নিচু করে শুয়ে পড়লাম। ছিহ, নিজেই ভাব নিতে গিয়ে ধরা খেলাম।
অভ্র ভাইয়া মুচকি হেসে মোবাইলটা রেখে দিলেন। বললেন, ‘আমি যদি তোর সাথে এখন অশ্লীল কিছু করি, তাহলে কেমন হবে ইরাম? বলতো?’
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। অশ্লীল কিছু বলতে ওনি কি বোঝাচ্ছেন আমি বুঝলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি এসব উল্টোপাল্টা কি বলছেন, হুম? অশ্লীল কিছু করবেন মানে?’
অভ্র ভাইয়া চোখ টিপে বললেন, ‘এই যে ধর কাউকে জড়িয়ে ধরা, আদর করা!’
—“নাউজুবিল্লাহ!’
—“মানে?”
—“আপনি এসব কি বলছেন? ছোট বোনের সাথে এসব কি অসভ্য ব্যবহার আপনার?”
—“এই তুই এতো প্যানপ্যান করছিস কেন ক্যাঙারুর মতো? এসব তো সিম্পল ব্যাপার। তুই এতো রিয়্যাক্ট করছিস কেন?”
—“আপনি এসব কাজ আগেও করেছেন তাই না?”
—” হয়তো!”
ওনার এই কথাটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। আর কোনো কথা না বলে চুপ করে গেলাম, শুয়ে পড়লাম উল্টোদিক ঘুরে।।ভাবতেও পারছি না অভ্র ভাইয়া কারো সাথে এমন কিছু করতে পারে। তবে আমার কেন খারাপ লাগছে? উনি ভিন্ন কালচারের মানুষ এমনটা তো হতেই পারে।
অভ্র ভাইয়া হঠাৎ আমার পেটে হাত রাখলেন। আমি তো ঠান্ডায় জমে গেলাম। খোদা! শাড়ি মনে হয় আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এই ইডিয়ট মার্কা কাপড় যে কোন আপদ তৈরি করেছিলো তাকে পেলে এক লাত্থিতে ইন্ডিয়া পাঠাতাম। স্যরি টু সে ইন্ডিয়া তো শাড়ির কারখানা, তো ওই ইডিয়ট হয়তো ওখানেরই। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি কাঁপাকাঁপি শুরু করেছি, অভ্র ভাইয়া আমার পেটে কেন হাত রাখলো, আমার তো ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। আমি ওনার হাত সরাতে গেলাম, কিন্তু ওনি আরও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। আমিতো হতভম্ব, বিমূঢ়। এসব কি করছেন ওনি? আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ‘ আরে ছাড়ুন আমায়, কি হচ্ছেটা কি এসব?’
—“আদর হচ্ছে!”
—“আপনার এসব খারাপ কাজ আপনি রাখুন।যত্তসব!”
ঠিক তখনই আমার দৈববাণীর কথা মনে পড়লো। হায়.. এমন উদ্ভট কথাটা কে বলেছিলো আমায়? নাকি এটা আমার অবচেতন মনের কল্পনা? অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে কেন তাহলে? কল্পনাই হবে হয়তো! নিজের উপর রাগ হচ্ছে। একটা ধাক্কা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে আমি দ্রুত শাড়ি ঠিক করতে লাগলাম। ফ্লোরই আমার জন্য ভালো, এ লোকের সাথে এক বিছানায় শোয়া আমার ভুল হয়েছে। আমি বেড থেকে নামতেই টের পেলাম আমার শাড়ির আঁচল অভ্র ভাইয়া ধরে রেখেছে । আমি ঘুরে তাকাতেই অসহায় চোখে তাকালেন আমার দিকে। উনি বললেন, ‘আ’ম স্যরি ইরাম। তুই প্লিজ নিচে যাস না। আমি আসলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। তুই বিছানায় শুয়ে পড়। ট্রাস্ট মি, তুই না চাইলে আমি কখনো জোর করে তোর সাথে কিছু করবো না। প্লিজ বেডে শুয়ে পড়!’
আমিও নিজেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, ‘আপনি অলওয়েজ মানুষকে জোর করে সবকিছু পেতে চান, তাই না? আপনি আসলে একটা বিরক্তিকর লোক। সবসময় এসব করা ভালো না। আপনি আমার সাথে এরকম করার চেষ্টা করবেন আমি বিশ্বাস করতে পারছি না!’
আর কিছু না বলে বিছানার একেবারে কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। মাঝখানে দুইটা কোলবালিশ রাখলাম, যাতে আর এদিকে আসতে না পারে। অবশ্য ওনি আর এরকম করবেন না, এটা শিওর। আমার মুখ ঝামটা এ্যাকশন দেখে ওনার এই মুহূর্তে ঠিক কি রিয়্যাকশন হচ্ছে সেটা দেখার তীব্র ইচ্ছে হলেও সেটা দেখা বা অনুভব করা আমার ধর্তব্যের বাইরে।
?”হে বনি আদম “আকাশ চুম্বি পাপ করার পরও! “তুমি যদি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর!” অবশ্যই আমি ক্ষমা করে দিব।”
~ তিরমিযি-হা/৩৫৪০
চলবে…ইনশাআল্লাহ!
India te idiot ache ata mane ta ki boss??
I’m from India ok..so first e onner Country k respect korte sikhun then story likhben…Disgusting
R apnar lekhar oi tukuni jaiga dekhei bojha jacche j apnar qualification…
Shari hoche Nareer bhushon seta jekhner hoke na keno please karou country(Desh) niye baje montbo karben na please from INDIA
কখনও কোনো দেশ বা জাতির অসম্মান করা উচিত নয়। ???????
এখানে কিন্তু ইন্ডিয়া কে অসন্মান করা হয়নি । যেহেতু ইন্ডিয়া শাড়ী এর কারখানা , আর ইরাম যে শাড়ী বানিয়েছে তাকে ইডিয়ট বলেছে একবার ও কিন্তু ইন্ডিয়া কে গালাগাল করেনি । আমিও একজন ভারত বাসী কিন্তু কোনো কিছু ভালোভাবে না বুঝে তার প্রতি মন্তব্য করা উচিত নয় । যেহেতু ইরাম রেগে ছিল তাই যা মনে হয়েছে বলেছে। অর্থাৎ লেখিকা গল্পটি ফুটিয়ে তুলতে বলেছেন । এই ভাবে রাগারাগি করবেন না । কিছু ভুল বলে থাকলে ক্ষমা করবেন ।❤️❤️