তুমিময়_অসুখ ২ পর্ব-৩

0
2617

তুমিময়_অসুখ ২ পর্ব-৩
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া

৪.
আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে বসলাম বিছানার কোণে। না গেলে যদি সত্যিই আমায় মারে, তাহলে? আমি বসতেই ওনি ওনার মাথাটা আমার কোলের উপর রাখলেন। আমি অস্বস্তি বোধ করছিলাম। অভ্র ভাইয়া আমার হাতদুটো ধরে নিজের মাথায় রাখলেন। চোখদুটো বন্ধ করে অস্পষ্ট গলায় বললেন, ‘ ধীরে ধীরে বিলি কেটে দিবি, ওকে?’

আমি চুপ।

—“কি বলছি শুনছিস না?”

—“জ্বি,…দ. দি.. দিচ্ছি!”

—“এরকম করছিস কেন তাহলে?”

—“কো…কোথায় কি করেছি?”

—“তোতলাচ্ছিস কেন?”

—“না তো!”

—“বাদ দে, মাথায় হাত বুলিয়ে দে।”

—“আচ্ছা।”

বলে ওনার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম অনেকক্ষণ পর অভ্র ভাইয়া বললেন, ‘আমার সাথে বাইরে যাবি?’

—“কো..কোথায় যাবো?”

—“আজকে ফ্রেন্ডদের ট্রিট দিতে হবে। বিয়ে করেছি সেজন্য নাকি ট্রিট দিতে হবে!”

—“ওহহ!”

—“তুই রেডি থাকিস। জীবনেও তো মনে হয় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে বেরুসনি!”

—“আচ্ছা।”

—“হয়েছে, এবার যা। কফি নিয়ে আয়।”

—“এখন?”

—“হুম।”

—“মামানি যে বললো, দশটার দিকে খান?”

—“আজ আর ঘুম আসবেনা। তুই কফি নিয়ে আয়!”

আমি আচ্ছা বলে চলে এলাম নিচে। মামানিকে ওনার কথা বলতেই মামানি অবাক হয়ে গেলো। যে ছেলে দশটার আগে ঘুম থেকে উঠেনা, সে আজ সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে কফি চাচ্ছে, ভাবা যায়? এতো পরিবর্তন হঠাৎ অদ্ভুত লাগে। আমি কফি বানিয়ে নিয়ে গেলাম, একটা আমার অন্যটা ওনার জন্য!

রুমে এসে দেখি ওনি ফ্রেশ হয়ে বসে আছেন। হাতে পেপার। আমি অবাক হলাম! ওনি আবার পেপারও পড়েন? এতো ইম্প্রুভ কবে হলো? যাইহোক, আমি কফিটা ওনার সামনে রাখতেই রেগে বললেন, ‘আমার হাতে দিলে কি সমস্যা হতো? এবার থেকে হাতে দিবি, নইলে দেখিস কি করি। ফাজিল কোথাকার!’

আমি গোমড়া মুখে কফির মগ এগিয়ে দিলাম ওনার দিকে। ওনি ঝট করে কফিটা নিয়ে দু’ চুমুকে খেয়ে নিলেন। ধোঁয়া উঠা গরম কফি কিভাবে খেলো আমি সেটা বুঝতে পারছি না। তারপর আমার হাতে থাকা কফির মগটাও টেনে নিয়ে এক নিমিষেই খেয়ে নিলো। আর আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম। খেয়েদেয়ে মুখটা আমার ওড়নায় মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমার শার্টগুলো আয়রন করে রাখবি আর জুতাগুলো পরিষ্কার করে দিবি। বিকেলের দিকে বেরুবো, রেডি থাকিস। আর সময়মতো সব করবি। লেইজিদের আমি কিন্তু টলারেট করিনা সেটা তুই ভালো করে জানিস।’ বলেই গটগটিয়ে হেঁটে রুম থেকে চলে গেলেন।

৫.
আমিও ওনার কথামতো কাপড়চোপড় ইস্ত্রি করে, জুতা পরিষ্কার করে, ঘরদোর গুছিয়ে মামানিকে রান্নার কাজে হেল্প করলাম। শত হলেও স্বামীর আদেশ বলে কথা! অভ্র ভাইয়ার নানু মানে দিদা ডাইনিংয়ে বসে আছেন। ভীষণ কিউট একটা মহিলা, মাথার চুলগুলো ধবধবে সাদা! আমাকে মিষ্টি হেসে বললেন, ‘বাসায় ভাল্লাগছে তোর?’

—“হুম।”

—“তোকে এসব কাজ করতে কে বলেছে?”

আমি সরল মনে বললাম, ‘অভ্র ভাই।’

দিদা বললেন, ‘এসব রাখ! আমার কাছে এসে বস তো একটু!’

আমি দিদার পাশে বসতেই দিদা বললেন, ‘তোকে একটা কথা বলি?’

—“হুম, সংকোচ করার কি দরকার?”

—“আমার নাতিটাকে একটু বুঝেশুনে নিস। একটু রাগী, জেদি। কিন্তু খুব ভালো মনের একটা ছেলে। তুই একটু ওকে ঠিকঠাক করে নিস বোনটা!”

আমি বললাম, ‘কিন্তু ওনি যে আমার কথা শুনেন না?”

দিদা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। বললেন, ‘তো তুই ওর কথা শুনিস কেন?’

—“মানে?”

—“মানে তোর স্বামী! সে তার বউয়ের কথা না শুনে কি অন্যের কথা শুনবে?”

আমি বোকার মতো বললাম, ‘অভ্র ভাইয়া তো ওনার গার্লফ্রেন্ডদের কথাই শোনে আর নিজের ইচ্ছাতে সব করে!’

দিদা আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন আমার কাছ থেকে এই কথাটা তিনি আশা করেননি। তারপর বললেন, ‘নিজের জিনিসে অন্য কারো হাতে তুলে দিচ্ছিস? পাগল তুই?’

আমি দিদার গা ঘেঁষে বসলাম। বিষয়টি আমাকে ভাবাচ্ছে। এতদিন জানতাম স্বামী যা বলে স্ত্রী’রা তাই তাই শুনে শুনে চলে। ভালো বললে ভালো, খারাপ বললে খারাপ। কিন্তু এখন দেখছি কোথাও গড়বড় আছে! আমি দিদাকে এইকথাটা বলতেই দিদা হেসে উঠলেন। বললেন, ‘এতো ভালো একটা মেয়ে তুই অথচ এখনো বোকাই রয়ে গেলি? চালাক হ বোন, চালাক হ। ও বিয়ে করেছে তোকে, এখন তোর উপর সবসময় নজর থাকবে। আর ও অন্য মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে, চলছে তুই এটা মেনে নিচ্ছিস?’

—“তাহলে?”

—“তুই কি চাস তোর আব্বু তোর মাকে ছেড়ে অন্য মহিলার দিকে নজর দিক, ঘুরাফেরা করুক?”

—“না!”

—“তাহলে তোর স্বামীর বেলায় ব্যতিক্রম কেন? অভ্র যদি ভুলপথে যায় সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও তোর!”

—“অভ্র ভাই তো বলেছে আমি নাকি নিরামিষ, আমাকে নাকি ওনার ফ্রেন্ডের সাথে ভালো মানাবে। ওনি আমাকে প্রেম করা শিখাবে!”

দিদা অবাক হয়ে বললেন, ‘কি বলিস! এতো সাংঘাতিক ছেলে! নিজের বউকে কেউ এসব বলে? আর তুইও বোকার মতো ওর সাথে তাল মিলাচ্ছিস। শোন ইরু, এখনই শক্ত হ। নিজের স্বামীকে আঁচলে বেঁধে রাখতে শিখ।’

তারপর দিদা আমাকে আরও নানা উপদেশ দিলেন, অনেককথা বললেন, বুঝিয়ে দিলেন বিয়ে মানে কি! স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বললেন। সবকিছু শুনে আমি যা বুঝলাম, অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার কারণে আমি এসব কিছুই জানতাম না। সব ভুল ভাবতাম। বোকার মতো ওনার ‘হ্যাঁ’ তে ‘হ্যাঁ’ মিলিয়েছি। দিদার কথামতো আমাকে এবার শক্ত হতে হবে, অভ্র ভাইকে ভালো পথে আনতে হবে।

৬.
বিকেলের দিকে অভ্র ভাইয়া বাসায় ফিরলেন। রাগে গজগজ করতে করতে রুমে ঢুকলেন। সোফায় বসতে বসতে বললেন, ‘মেয়ে জাতি মানেই ঝামেলা! এদেরকে দুনিয়া থেকে আউট করে দেওয়া উচিৎ। জীবন তছনছ করার জন্য একটা মেয়েই যথেষ্ট!’

আমাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? চোখ নিচে নামা!’

আমি নিচের দিকে তাকালাম। অভ্র ভাইয়া বিরক্ত কন্ঠে বললেন, ‘তোর ফ্রেন্ড সারা! সে একটা আস্ত ঝামেলা। ইচ্ছে করছে একে পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিই!’

আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’

ওনি রাগী গলায় বললেন, ‘রিলেশনে যাবার আগেই সব মেয়েদের আমি বলে দিই যে আমি শুধু ওদের সাথে টাইমপাস করছি। ওরা যদি রাজি থাকে তাহলেই যেন আসে রিলেশনশিপে, নয়তো না। তোর সারাও মেনে নিয়েছিলো আর এখন ব্রেকাপ করার পর সে ইমোশনাল হয়ে পড়েছে, ও নাকি সিরিয়াসলি নিয়েছিলো রিলেশনটাকে৷ তার উপর সকালে একগাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুসাইড এ্যাটেম্প করতে গিয়েছিলো, ভাগ্যিস সময়মতো হসপিটালাইজড করা হয়েছে। তুই-ই বল কার রাগ না ওঠবে!’

আমি এসব শুনে অবাক! আমার ক্লাসমেট, সেকেন্ড ইয়ারে পড়া একটা মেয়ে আমার বরের জন্য মরতে গিয়েছে, আই কান্ট বিলিভ! আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আ আ..আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?’

—“ওখানেই, হসপিটালে। আচ্ছামতো ঝেড়ে দিয়ে এলাম মেয়েটাকে। মাথাটাই গরম করে দিয়েছিলো। ঝামেলা বন্ধ করে এলাম।”

—“আমি একটা কথা বলি?”

অভ্র ভাইয়া অবাক হয়ে তাকালো। আমি ওনার দৃষ্টি এড়িয়ে অন্যদিকে তাকালাম। বললাম, ‘এখন এসব না করলে হয়না? আপনার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে, বউও আছে!’

ওনি রেগে বললেন, ‘তোকে বউগিরি ফলাতে বলিনি। আমি কি করবো না করবো সেটা তোকে বলতে হবেনা, তোর এডভাইসের দরকার নেই। ছোট ছোট’র মতো থাক। মাইন্ড ইট!’

আমি ধমক খেয়ে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওনার সাথে কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘বাইরে যাবো বলেছিলাম না? রেডি হসনি কেন?’

—“ভালো লাগছে না। আমি কোথাও যাবোনা! মামানিরা রাতে বাসায় থাকবেনা!”

অভ্র ভাই বিরক্ত হয়ে তাকালো। তারপর বললেন, ‘ঠিক আছে। তাহলে আজকে সবাইকে বাসাতেই ডেকে পার্টি করবো।’

—” রাতে কেউ বাসায় থাকবেনা। কিভাবে কি করবেন!”

—“সবাই কোথায় যাবে?”

—“দাওয়াত খেতে, কার বাসায় জানিনা।”

অভ্র ভাইয়া হাসিহাসি পুলকিত মুখে বললেন, ‘ভালোই হবে। তুইও যাবি নাকি?’

—“নাহ!”

—“তোকে যেতে দিলে তো! তোকেই তো সবাই দেখতে আসবে!”

—“মানে?”

—“এতো ‘মানে মানে’ না করে ভাগ এখান থেকে। আমার জন্য ব্ল্যাককফি নিয়ে আয়!”

—“জ্বি, আচ্ছা!”

?”কার জন্য কাঁদছেন কিসের জন্য কাঁদছেন??

পৃথিবীতে আপনার চোখ থেকে ঝরে পড়া প্রতিটা ফোটা পানির মূল্য শুধু একজনই দিতে পারেন তিনি হলেন আপনার রব, আপনার মালিক আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দার অনুতপ্ত হয়ে চোখের পানি নাক বেয়ে জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহু আকবার
আপনার চোখের প্রতিটি ফোঁটা পানি ঝড়ুক আপনার রবের জন্য।”

চলবে…ইনশাআল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here