তুমিময়_প্রেম?♥
PART_13
FABIYAH_MOMO?
সকাল কয়টা বাজে জানি না সোনালী রৌদের তপ্ততার কারনে চোখের ঘুম সরে গেছে। এখন ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছেনা। আজ শুক্রবার, সরকারি ছুটির দিন উহু…ঘুমানোর দিন! এইদিনে সবাই হাত পা ছড়িয়ে দশটা এগারোটা অবধি নাক ডেকে ঘুমাতে পারে। উফ কি যে শান্তি! ঘুমে ঢুলু চোখে ঘড়িতে একবার দেখে নিলাম…সকাল দশটা বেজে পাচঁ মিনিট। আজ নবীন বরণ অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠান শুরু হবে বারোটায়। দেরি করা চলবেনা আমার। হাই তুলে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে গেলাম। আম্মু পরোটাগুলো টেবিলের উপর রাখছেন। আব্বু গপাগপ গরম পরোটা সাথে গাঢ় করে মাখামাখা মাংসের ঝোল লাগিয়ে ফু ফু করে খাচ্ছেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খেতে খুব সুস্বাদু এবং অসাধারণ হয়েছে! অবশ্য মায়ের হাতের রান্না বলে কথা, আলাদা একটা অদৃশ্য জাদু কোত্থেকে যেনো খাবারে মিশে যায় আর টেস্ট শতগুণে বাড়িয়ে দেয়। বাসার সবাই ন’টার মধ্যে খাওয়া পর্ব সেরে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সেজায়গায় আজ দেখি ছুটির দিন উপলক্ষে দশটায় খাওয়া চলছে! সর্বনাশ ! আম্মু এজন্যই টেপ মেরে আছে। গম্ভীর মুখে ধামধুম গ্লাস প্লেট রাখতে গিয়ে শব্দ করছে।।ঝড়ের আগে প্রথম যে সুনশান নিরবতা হয় তা দেখছি….লক্ষন তো ভালো না ভাই।। আম্মু আমাকে দেখে একবার ধারালো দৃষ্টি ছুড়লো। বুকটা ধক করে কেপে উঠলো। আম্মু ফণা তুলা রেডি হয়ে আছে, সুযোগ পেলেই জোশ ভাবে সুযোগের সৎ ব্যবহার করবে।। আমি ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে বড় ঢোক গিলে মৃদ্যু হাসিতে চেয়ার টেনে বসলাম। আম্মু আব্বুকে চা দিতেই আব্বু চায়ের কাপে চুমুক দিলো। ওমনেই মুখ বেজার করে বলে উঠলো আব্বু,
–মমর মা, চায়ে চিনি বেশি দিছো কেন গো? এই বয়সেই মেরে ফেলবা নাকি? নাতি নাতনি দেখার সুযোগ দিবা না? তোমার বয়স হচ্ছে..বোঝ হচ্ছেনা কেন গো?….তোমার সামনেই না ডাক্তার বললো নিয়ম মেনে চলতে, আর তুমিই কিনা!!
আম্মু তীক্ষ্ম চোখে আব্বুর দিকে তাকিয়ে ঠাস করে পানির গ্লাস টেবিলে রাখলো। যেভাবে নাক ফুলিয়ে তাকালো আমার বুঝা শেষ আজ আব্বুর রক্ষে নেই! আব্বুও ইতিমধ্যে সিচুয়েশন বুঝে ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসি দিচ্ছেন।আব্বুর হাসি দেখে আমার পেট গুলিয়ে হাসি আসছে। ঠোট কামড়ে কোনোরকমে চেপেচুপে হাসছি। আব্বু বত্রিশ দাতেঁর কেলানি টাইপ হাসি দিলে আম্মু রাগে কটমট করে বলে উঠলো,
–বেশি খারাপ লাগলে নিজেরটা নিজে বানায়া খাও! সকাল দশটা বাজে একেকজনে উঠবা আর টাইমে টাইমে অর্ডার দিবা এটা দাও ওটা দাও এটা কর ওটা কর, কত্তদিন বলছি সকাল সকাল উঠে হাটতে যাও। কি বলি নাই? ডায়াবেটিসের রোগি হাটাহাটি করো! বলি নাই? কান দিয়ে কথা ঢুকছে? না বাপু! আমার কথা কেন শুনবা ? তুমি তো লুঙ্গি চাড়া দিয়ে উপুত হয়ে নাক ডাকবা! আর ডাক দিয়ে সজাগ করলে আউমাউ করে আরেক কাত হয়ে উপুত হইবা! এইটাও দৈনন্দিন দেখতেছি!
পাশ থেকে ছোট বদমাইশ সুরের সংযোগ গানের দিকে কনভার্ট করে দুলেদুলে বলল,
— আহা..দখিনা বাতাসে লুঙ্গি ওড়ে আকাশে… প্লাজু উড়ে ছাদে ছাদে…ওয়ে! প্লাজু উড়ে ছাদে ছাদে…
আম্মু ছোট বদমাইশের কানটা টেনে ঠাটিয়ে থাপ্পর লাগাতেই বেচারা গাল বুলাতে বুলাতে চুপ হয়ে গেল ছোট ভাই।। আব্বু হোহো করে হাসতে থাকলে আম্মু ভয়াবহ চাহনিতে চোখের দৃষ্টি ছুড়ে মারে! আব্বু তৎক্ষণাৎ হাসি থামিয়ে পানির গ্লাসে হাত দিলেন! পানি খেতে খুব বিষম খাচ্ছে আব্বু। খুকখুক করে কাশছে লাগাতার। কাশির বেগ তীব্র হয়ে যক্ষ্মা রোগীর মতো শুরু হতে লাগলো।। আম্মু আরো ক্ষেপেক্ষুপে আগুন চোখে তাকিয়ে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠেন,
–বুঝি তো বাপু! সব বুঝি! আমার কথা তো কারোর সহ্য হয় না। উচিত কথা তো কারোর গায়ে লাগে না। আমি বললেই দোষ! আর সবাই দুধে ধোয়া তুলছি পাতা! মাঝে আমি নিমের বিষ তিতা পাতা !
.
.
খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে বসে খাচ্ছি। আম্মু আব্বুর খামোখা তর্কবিদ্যায় আমার কোনো কর্ম নেই। পরোটা ঝোলে চুবিয়ে ফোন নিয়ে ইসুকে কল দিচ্ছি। ও কাল কল করেছিলো বেচারিকে শুধুশুধু অকথ্য ভাষায় কথা শুনিয়েছি। আমার যে মাঝেমাঝে কি হয়! আল্লাহ মাবুদ জানেন! মন মেজাজ সবটাই উল্টেপাল্টে জটলা হয়ে থাকে, আপন মানুষগুলোর সাথে প্রচণ্ড রাগ দেখিয়ে দুচারটা পচা কথা বলে ফেলি। ঝোল ভরানো পরোটায় কামড় দিতেই ইসু ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠলো,
–হ্যালো মম বল,
–ইসু আজকে কয়টায় বের হবি? অনুষ্ঠান তো বারোটায় আগেআগে যাবি?
–না রে, আমি আজকে যাবো না। তুই গেলে যা।
–কি আশ্চর্য! কি বলছিস এগুলো?
–আরে হ্যাঁ আ’ম সিরিয়াস। আমি যাবো না। ইরিনা আপু শপিংয়ে যাবে আমাকে রেডি হতে বলছে। বড় আপুর সাথে না গেলে বাসায় কেলেঙ্কারি বাধিয়ে দিবে! জানিসই তো!
–তোর মাথা ঠিক আছে ইসু? তুই আমাদের ভার্সিটি লাইফের নবীন বরন নিয়ে কত এক্সাইটেড ছিলি! ইভেন কাল রাতে সাড়ে এগারোটায় তুই কল দিয়ে আমায় শাড়ির ব্যাপারে আস্ক করছিলি!
–হ্যা তখন সব ঠিক ছিলো। এখন সকালে সবাই খেতে বসেছি তখন আপু কড়া গলায় আব্বুর কাছ থেকে শপিংয়ে যাওয়ার পারমিশন নিয়েছে। এখন আমি কি করি?? আবার…বসুন্ধরায় যাবো বুঝছিস তো? কত টাকার লেনদেন, তার মধ্যে দামী দামী প্রোডাক্ট না কিনলে আপুর পছন্দ হয়না। এই সুযোগে আমিও কিছু কেনাকাটা করে নিবো এই আরকি….তুই যা। মজা কর। অর্পনা তো আছেই ওর সাথে থাকবি!!
–ধ্যাৎ! মুখ খারাপ করাবি না! অর্পনা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকবে। ও বয়ফ্রেন্ড রেখে আমার সাথে ঘুরবে ইম্পসিব্যাল! প্লিজ ইসু তুই আয় না…তুই না গেলে তাহলে আমিও যাবো না!!
–এই ছি! যাবি না কেন? কি যে বলিস! আমার সাথে তোর জোড়া? তুই যা না…মজা কর সিরিয়াসলি মম। আমি তো যেতে পারবো না ইয়ার!!
মনটা খুব বসে যাচ্ছিলো ইসুর কথা শুনে। আর একটা কথাও মুখ খুলে বের করতে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও স্বর নামিয়ে বললাম,
–আচ্ছা দোস্ত তাহলে…রাখি… সাবধানে যাস, ড্রাইভারকে গাড়ি সাবধানে চালাতে বলিস, খুব হুড়োহুড়ি করে গাড়ি চালায় তো…
–আরে টেনশান করিস কেন? বাবার গাড়িতে যাচ্ছি, ড্রাইভারও খুব দক্ষ। পরশু দেখা হবে ক্যাম্পাসে? ঠিক আছে? তাহলে, রাখি।।
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ থমকে বসেছিলাম। হাতের পরোটা আর খেতে ইচ্ছে করছিলো না। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আধখাওয়া পরোটা প্লেটে রেখে ডাইনিং টেবিলে রেখে এসেছি। মনে পোষা দীর্ঘদিনের সতেজ ইচ্ছাটায় শুকনো মাটি ঢেলে দিতে হলো। নবীন বরনে আম্মুর হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা পড়বো, চোখে কাজল টানবো, সাদাচুড়ি দ্বারা হাতভর্তি করবো, চুলে খোপা গুজে কানের পাশে ছোট চুল রাখবো…সব ইচ্ছাই কি পূর্ন হয়? উহু হয়না, অপূর্ণ থেকে যায়। অপূর্ণ থেকে আজীবন আফসোসের দেয়াল গেড়ে যায়। কষ্ট হয়! প্রচণ্ডরূপে কষ্ট! যখন দেখবেন চোখের সামনে দীর্ঘদিনের ইচ্ছাটা ভেঙ্গে ছাই হয়ে যায়! এগুলোর কখনো নাম নেই…নাম না ছাড়া কষ্ট…অদ্ভুত কষ্ট!! টের শুধু আপনি পাবেন! আর কেউ না।।
বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছি। চোখ দুটো টলমল হয়ে আসছে বারবার। কি বেহায়া এই চোখ! বারবার পানি এসে জড়ো হচ্ছে। চোখের দুকোণা থেকে বেয়ে পড়ছে, আমি কেন কাদছি? ডোন্ট নো… জানি না…সত্যি জানি না। আমার ছোট ভাই দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে রুমে চুপি দিয়ে বললো,
–আপু তোমার ফোন বাজতেছে…
আমি হাত দিয়ে চোখ লুকিয়ে ওড়না দিয়ে মুখ মুছতেই ওকে বলে উঠলাম,
–ফোন কোথায়? দিয়ে যা এখানে। কে কল দিছে দেখছিস?
–‘না আপু….’ বলেই ছোট ভাই আমার দৌড় লাগালো ফোন এনে দিতে। ফোন আমার হাতে দিয়ে আগের মতো চলে গেল রুমের বাইরে। ওড়না দিয়ে চোখের কোণা মুছতেই দেখি ফাইজার চাচ্চুর কল। মানে মুগ্ধ। কল ধরিনি, বাজতে বাজতে কলটা কেটে গেল। ঠিক পাচঁটা মিস্ড কলের নোটিফিকেশনটা বারবার ফোনের স্ক্রিনে দেখাচ্ছে। দেখতেই দেখতে আবারো ফোনটা বাজতে লাগলো। অনিচ্ছায় ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ ধমকের সুরে বলে উঠলো,
–কই তুমি! কোথায় ! হোয়ার আর ইউ শিট !
কঠোর ধমকানিতে আমার হাত কেপে কান থেকে ফোন পড়ে গেল। কানের পর্দা বুঝি ফেটে গেল আমার! ইশশ…আল্লাহ এই বান্দা কি চিৎকারটাই দিলো! মাবুদ…কানের ভেতরে এখনো হু হু করছে। আমি কানে আঙ্গুল দিয়ে ফোনটা অপর কানের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ধরে বললাম,
— বজ্জাত ! তুই কোন সাহসে আমার উপর চিল্লানোর সাহস পাস ! কে তুই ! মন্ত্রী মিনিস্টার? জুতা তুই ! তোকে যদি জুতাপেটা না করছি দেখিস! ইশশশ…কানটা খেয়ে দিছিস! থার্ড ক্লাস কোথাকার!!!
ওপাশ থেকে আরেক ধাপ চেচিয়ে বললো,
–Shut up ! I said just shut up ! থাপ্পর দিয়ে জবান বন্ধ করে দিবো বেয়াদ্দব মেয়ে ! আমি এক ঘন্টা ধরে ভার্সিটির গেইটে দাড়িয়ে আছি ! আর তুমি বলছো চিল্লাচ্ছি কেন ! তুমি আমাকে মারবে? তাই না…জাস্ট ওয়েট ! তুমি সেদিন আমায় হকিস্টিক দিয়ে মেরেছো না?? আমি তোমায় লোহার রড দিয়ে খুন করবো ! একদম খুন করে মেরে টেরে নিজের গলাতেও দড়ি দিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলবো ! আমি কিচ্ছু বলি না! কিচ্ছু করি না দেখে একেবারে আকাশে উঠে গেছো না? আমি এক চান্সে মাটিতেও নামাতে পারি! বেশি বেড়ে গেছো না!! তোমার বাড়াবাড়ি যদি না কমাই !! জাস্ট ওয়েট ! আসতেছি…
টুট টুট টুট… শব্দ হতে লাগল ওপাশ থেকে। কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখি মুগ্ধ কল কেটে দিয়েছে। লাস্ট কি বললো? ”আসতেছি”? কোথায় আসতেছে? আল্লাহ !! ওকি এখানে আসতেছে? মাবুদ বাচাঁও! বাসায় আম্মু আব্বু! ও এদিকে এসে রাগ দেখালে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! কি না কি ভাববে! না না… আল্লাহ ও আসলে আমি শেষ!!! আমি বিছানা থেকে ধুমধাম নেমে কলের পর কল দিচ্ছি মুগ্ধকে।। ও আমার একটাও কল রিসিভ করছেনা। নার্ভাসনেসে আমার নখ কামড়ানো শুরু হয়ে গেছে!! কি করি কি করি…আব্বু আম্মু রুমে!! উনারা ওকে দেখলে শেষষ !! শেষ আমি শেষষষষ….আমি দাতঁ দিয়ে নখ খুটতে খুটতে রুমের মধ্যে পায়চারী করছি। পুরো রুমময় ঘুরঘুর করছি। মম..মাথা ঠান্ডা! ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল…আইস কুলিং পাউডারের মতো মাথাটাকে ঠান্ডা কর…..হু…বুদ্ধি আসবে। পাক্কা বুদ্ধি আসবে। মম ভাব্… ক্যাম্পাস থেকে তোর বাসার পথে রওনা দিলে পৌছতে লাগে পয়ত্রিশ মিনিট! তোর হাতে আছে মোটমাট পয়ত্রিশ কি ত্রিশ মিনিটের মতো। আচ্ছা? ও যদি গাড়ির স্পিড বারিয়ে চালায়?? বাপ রে!! রাগের মাথায় এই বান্দা অবশ্যই স্পিড বারিয়ে দিয়েছে ড্যাম টু ড্যাম সিউর! তাহলে তোর হাতে আছে ম্যাক্সিমাম বিশ মিনিট! বা আরো কম! না না…ভাবতে থাক। আরো ভাবতে থাক। আব্বুকে বাসা থেকে বিদায় করা সম্ভব! জাস্ট এক প্যাকেট বিরিয়ানীর লোভ দেখালেই কাজ শেষ! বাট আম্মু? এই আম্মুকে কি বলে ম্যানেজ করি? যাসব গন্ডগোল করার তা তো সবসময় আম্মুই করে, আব্বু না। ওহ্ গট ইট ! আম্মুকে পাশের বাসার নিলুফা আন্টির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া যায়! সাংসারিক সুখ-দুঃখ নিয়ে পেচাল পারতে পারতে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যাবে নিশ্চিত! যাক শান্তি।।। আর ছোটকে কা করবো? ওকে নাহয় তালহার বাসায় খেলতে পাঠিয়ে দিলেই চলবে। ব্যস!
সব পরিকল্পনা মতো কাজ হলো। আব্বুকে ইউটিউব থেকে চালাকি করে বিরিয়ানি রান্নার টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখিয়েছি। ব্যস..দেখার সাথে সাথেই আব্বুর ছুট।। আসার সময় দুএক প্যাকেট আনতেই পারে, ওউফ! আম্মুকে নিলুফা আন্টির বাসায় পাঠাতে একটু বেগ পেতে হলো! কিন্তু আম্মু শেষমেশ উনার বাসায় গেলোই গেল। ছোট ভাই খেলার পারমিশন পেয়ে চটপট ভোদৌড়ে পালিয়েছে। সবকিছু আমার মনমতো হলেও আমি এদিকে ঠিক থাকতে পারছিনা। মুগ্ধ এসে কি তান্ডব করে আল্লাহ মালুম! আচ্ছা মুগ্ধ কি আমার বাসার ঠিকানা জানে?? ধ্যত! এগুলা বের করা কি ওর জন্য ব্যাপার!! বাম হাতের খেলা মাত্র! চিন্তার সমুদ্রে গভীরভাবে ডুব দিতেই দরজায় বিকট শব্দে কলিং বেল বাজলো! চিন্তার সমুদ্র থেকে চমকে উঠে আমি দ্রুত দরজা খুলতে গেলাম। সিটকিনি খুলতেই কলিজা বেরিয়ে আসছে। আমি আদৌ এমন লোমহর্ষক ভয়ে কাপাকাপি করিনি। আজ ওর সুরের মধ্যে অন্যকিছু ছিলো যা আমি এতোদিন বুঝতে পারিনি। কি ভয়ংকর গলায় ধমকগুলো দিয়েছে!! আমি যেনো ওর বউ! কথা না শুনলেই ধরে আছাড় মারবে! দরজায় টানা তিনটা বেল একনাগাড়ে পড়লো! ভয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চমকে উঠলাম। কাপা কাপা হাতে দরজার সিটকিনি খুলে দরজা সরু ফাক করে একচোখ দিয়ে বাইরে তাকাবো… তার আগেই দরজায় কেউ সজোরে ধাক্কা দিলো! আমি দরজা ছেড়ে কয়েক পা পিছিয়ে ফ্লোরে যেয়ে পড়ি। আকষ্মিক ঘটনায় আমি চোখ কুচকে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলে কানে শব্দ আসে কেউ দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে। সাহস হচ্ছেনা মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে তাকে দেখার! হঠাৎ কোত্থেকে আমার ভয়ের আমদানি হলো মাথায় ঢুকছেনা!!তার জুতা পায়ে কাছে আসার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। আমি যে উঠে এ্যাকশ্যান শুরু করবো সেই তাল আমার নেই। সে আসছে। আসতে আসতে মনে হলো একসময় পদধ্বনিটা থেমে গেছে। কোনো শব্দই এখন কানে আসছেনা। আমি মনে একটু সাহস সন্ঞ্চার করে মুখের উপর রাখা হাতের আঙ্গুল চোখের দিক থেকে আলতো করে ফাক করছি। একটু ফাক করতেই চোখের দৃষ্টি বাইরে দিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করছি। সামনে এক হাটুগেড়ে ফ্লোরে বসে আছে মুগ্ধ! চোখেমুখে অসম্ভব রাগ! জলন্ত অগ্নিপিণ্ডের দু’টুকরো আগুন যেন তার চোখে দাউদাউ করছে! ভয়ঙ্কর রাগে নিশ্বাসের শব্দও তার জোরে জোরে পড়ছে! রাগে ফুসফুস করছে মুগ্ধ! হাতঘড়ির হাতটাও অদ্ভুত নিয়মে কাপছে। রাগলে মানুষের হাত কাপে? চোখের মনি ভয়ঙ্কর লাগে? সবই কি বীভৎস ভয় লাগিয়ে দেয়?? আমার প্রচুর ভয় করছে! প্রচুরপরিমাণে ভয় করছে ! তাও বাইরে থেকে কঠোর বেশভূষায় কিছুটা শক্তপোক্ত দেখাচ্ছি। কিন্তু ভেতরের অবস্থা পুরোই কাহিল! বড় দুটো ঢোক গিলে মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু নাহ্ কোনো কাজ হলো না। মুগ্ধ আগের মতোই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিচের ঠোটঁটা নড়েচড়ে উঠছে তার। আমি মুখের উপর জোরপূর্বক হাসি রেখে বলে উঠলাম,
–তুমি এখখানে ককেন…?ননবীন ববরন অনু….
মুগ্ধ ফ্লোরে ধাম করে চাপড় মেরে দাঁতে কটমট করে বলে উঠলো,
–তুমি কি জানো না বেব আমি এইখানে কোন সুখে আসছি!
আমি ফ্লোরে হাতের তালুতে ভর দিয়ে ধীরেধীরে পিছনের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছি। হালকা করে পিছিয়ে যেতেই বলে উঠলাম,
–ননা আআমি জজানবো ককিভাবে আআজজব….আআমি ককি অঅর্ন্তযামী নানাকি..
মুগ্ধের নিশ্বাসের গতি আরো বেড়ে গেছে। সে নাক ফুলিয়ে ক্রমাগত নিশ্বাস ছাড়ছে। আমার দিকে চোখ ছোট করে কপাল কুচকে ভ্রু উচু তুলে বলল,
–থাপ্পর দিতে চাই না মম পাকনি! (ডানেবানে ধীরে মাথা নাড়িয়ে) আমাকে বাধ্য করো না ! আমাকে বাধ্য করলে চরম পরিক্রমায় খারাপ বিহেব করবো ! এরপর তুমি আমাকে খারাপ ভাবলেও আই ডোন্ট কেয়ার ! শাড়িটা পড়ো ! আর জলদি দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হও ! নো মেলোড্রামা প্লিজ ! আদারওয়াইজ রাদিফ মুগ্ধ উইল বি হার্মফুল ফর ইউ! স্ট্রংলি মাইন্ড ইট ! গেট রেডি !
-চলবে
_FABIYAH_MOMO?