তুমিময়_প্রেম?♥ PART_14,15

0
1588

তুমিময়_প্রেম?♥
PART_14,15
FABIYAH_MOMO?

?
মুখের উপর শপিংব্যাগ ছুড়ে মারলো মুগ্ধ। ব্যাগটা আমার মুখে আলতো ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে যেয়ে পড়লো। মুগ্ধ উঠে দাড়িয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় পা তুলে বসলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই আমাকে ঝাঝালো সুরে আরেকদফা বলে উঠলো,

–আমি যে সোফায় বসেছি না?? ঠিক দশমিনিট বসবো! যদি তোমার দশমিনিটের চেয়ে এক্সট্রা টাইম লাগে! খবর আছে !!

আমি মুগ্ধের শাসানো বানী শুনে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে যাই। দরজা আটকিয়ে শপিংব্যাগ বিছানায় ছুড়ে কোমরে একহাত রেখে পায়চারী করছি। আরেকহাত মুখে ঢুকিয়ে অলরেডি নখ কামড়ানো শুরু। আমি পায়চারী করতে থাকলে উচ্চস্বরে মুগ্ধ বলে উঠে,

–দশমিনিটের একমিনিটও যদি বেশি লাগে ! এই দরজা আস্তো রাখবো না ! খবরদার !

মনটা চাচ্ছে নিজেকেই নিজে কষিয়ে দুটো চড় লাগাই! কি দরকার ছিলো দরজা খুলার? ওকে বাইরেই দাড় করিয়ে রাখতাম!! ধ্যাৎ ধ্যাৎ ধ্যাৎ ! নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম! এখন ওর কথা না শুনলে কোন দাবাংখেলা দেখায় আল্লাহ্ জানে !! অবশেষে না পারতে বিছানা থেকে ব্যাগ নিয়ে খুলে দেখি একটা হালকা কমলা রঙের শাড়ি। শাড়ির পাড় লাল, আচলটাও লাল। লাল-কমলার এতো সুন্দর শাড়ি আদৌ আমার চোখে পড়েনি। সত্যি!! শাড়িটা এককথায় চমৎকার!! আমি রীতিমতো বলতে বাধ্য, শাড়িটা যে পছন্দ করেছে তার পছন্দসই খুবই শৌখিন এবং মোহপূর্ন। শাড়িটা দেখে মুখে অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটে আসলো। কেনো আসলো জানা নেই!! আমি শাড়িটা নিয়ে পড়া শুরু করলাম। ঠিক আটমিনিটের মাথায় আমার শাড়ি পড়া শেষ। ওদিকে আমার হাতে আছে মাত্র দুই মিনিট!! ইতিমধ্যে মুগ্ধ হুশিয়ারী দিয়ে বলেছে, ‘মম সময় কিন্তু দুইমিনিট বাকি! যা করার জলদি করো দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যদি দেখি তুমি হাফ রেডি তাহলে তোমার মান সম্মানের কি হবে বুঝে নিও !!’ আমি শাড়ি ঠিকঠাক করে পড়ে আয়নায় নিজেকে হালকা সাজে সজ্জিত করার প্রয়োগে আছি। চোখে চিকন করে আই লাইনার, চোখের ওয়াটার লাইনে কালো কাজল, ঠোটে মেরুন রঙের লিপ আর্ট করে হালকা লালের লিপস্টিক দিয়ে লিপের সাজ কমপ্লিট করি।।মুখে হালকা পাউডার দিয়ে ঠিকঠাক মতো ব্লেন্ড করি। চুলে চটপট হাতে চিড়ুনি করতেই ওদিকে দরজা ধাক্কানো শুরু! আমি খুব তাড়াতাড়ি করে চুলের জট ছাড়িয়ে মাঝে সিথি গাথলাম। কাধের দুপাশ থেকে দু খন্ড চুল সামনে আনতেই দরজার দিকে পা চালালাম। আমি দরজা খুলে দাড়াতেই মুগ্ধ ধাক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তত হাতটা শূন্যে থামিয়ে দিলো। দরজায় আর ধাক্কা দেওয়া হলো না। হাতটা আর আগের জায়গায় রাখা হলো না। সে স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে হা করে। মুগ্ধের চাহনি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। আমি ভেতরে প্রচুর কাচুমাচু করছি। ও এখনো ফ্রিজ্ড অবস্থায় থমকে আছে। চোখের গোলক আমার দিকে স্থির হয়ে আছে।। পলক ঝাপটাচ্ছে একদমই।। আমি ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজাতে বাজাতে বলে উঠি,

–ইয়েস আই নো আমাকে আজ সুন্দর লাগছে! সো তোমার গান্দি নজর নিচে নামাও ! আমার রাস্তা থেকে সরে দাড়াও ! আমি জুতা পড়ব !

মুগ্ধ থতমত খেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে দরজার সামনে থেকে সরে গেল। ও সরতেই আমি রুমের বাইরে বেরিয়ে যেয়ে দরজার কাছে গিয়ে জুতা পড়তে থাকি। মুগ্ধ আমার পিছু দাড়িয়ে বললো,

–বাংলা ভাষায় গালিগালাজ + তুইতোকারি করো সেগুলো অন্য ফ্যাক্ট! বাট প্লিজ ! হিন্দি ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করবা না ! আমার হিন্দি ভাষা আর হিন্দি কালচার পছন্দ না! সো স্ট্রেট রিকুয়েস্ট। প্লিজ খেয়াল রাখবা। চলো…

‘চলো’ বলে আমার সাইড ঘেষিয়ে বাইরে পা বারালো মুগ্ধ। জুতা পড়া থামিয়ে এক পলক বাইরে তাকাই…পান্জাবীর হাতাটা আলতো করে কনুইয়ে ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে মুগ্ধ। গায়ের খয়েরী রঙের পান্জাবীটা চোখসই করে দিচ্ছে বারবার। হাতের ব্রাউন ঘড়িটাও হাতের সৌন্দর্য্য বর্ধন করছে প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে। সে কি আজ মনকাড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে?? হয়তোবা! হয়তোবা মুগ্ধ কারোর জন্য নিজেকে অন্য বেশে সাজিয়েছে।। হয়তোবা একটুখানি ভালোলাগা জাগানোর জন্য সুন্দরভাবে এসেছে!! যেখানে ক্যাম্পাসে শতশত ক্রাশ খাওয়া মেয়ে আছে, সেখানে আমার মতো একজনের কাছে ও মূল্য পেতে আসে।। কি আফসোস।।। কিন্তু আমার যে সে বোধশক্তি নেই! আমি কারো জন্য প্রেমময় নই! আমার জীবনে প্রেম গাথার সময় নেই। সময়টা আছে শুধু উচ্চলক্ষে পৌছাবার এবং পরিবার নামক বিশেষ মানুষগুলোকে একটু বিলাসিতা দেওয়ার।। হয়তো একটুকুই আমার চাওয়া…

আজ মুগ্ধের আচরনটা অন্যরকম ঠেকিয়ে দিচ্ছে। সে সবসময় চুপ করে আমার সাথে ঘটা তামাশাগুলো দেখতো। আজ সে নিজেই আমার বাসায় এসে অধিকার খাটিয়ে পটাপট হুকুম দিচ্ছে।। মানুষটা খুব ইউনিক!

শাড়ি ধরে ধরে আমি সিড়ি দিয়ে নিচে নামি। মেইন গেইট থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি থামিয়েছে মুগ্ধ। গাড়িতে ঠেস দিয়ে পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে ফোন দেখছে সে। আমি গাড়ির কাছাকাছি পৌছাতেই মুগ্ধ ফোন আমাকে একবার দেখে নিয়ে ফোনটা পকেটে পুড়লো। এরপর ও কি করলো বুঝলাম না।। গাড়ির দরজা খুলতে যেয়েও কি মনে করে খুললো না.. বন্ধ করে দিলো। আমি ওর সামনে এসে দাড়ালে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–জাস্ট পাচঁটা মিনিট ওয়েট করা যাবে???জাস্ট পাচঁ মিনিট? আমি এই যাচ্ছি এই আসছি!!

আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই ও রাস্তা ধরে সামনে হাটতে লাগলো। আমি অবুকের মতো রাস্তায় দাড়িয়ে রইলাম। রাস্তার আশেপাশের মানুষগুলো কেমন করে তাকাচ্ছে!! মন চাচ্ছে শাড়ি ধরে বাসায় চলে যাই! আমার বড্ড বেশি অস্বস্তিকর লাগছে এই দুপুরবেলায় একা একা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে! বাংলাদেশের কালচারে একটা বিরাট সমস্যা হলো কেউ একটু সাজগোজ করে সুন্দর করে আসলে চর্তুদিক থেকে ঘুরঘুর করে নজর দিতে থাকে।। কমবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে চাওয়াচাওয়ির প্রবনতাটা একটু বেশি। অতিরিক্ত মাত্রায় তাকিয়ে থাকে, বিশেষ করে পুরুষ লোকরা। রাস্তায় কমবেশি টুকটাক রিকশা চললেও কোনো গাড়িটারি ছিলো না। হঠাৎ একটা সিএনজি এসে আমার পায়ের কাছে থামলো। আরেকটু হলে আমার পায়ের উপর উঠিয়ে দিতো! আমি মনেমনে ঠিক করছি ড্রাইভারকে কড়াকড়ি গলায় কথা শুনাবো ওমনেই দেখি সিএনজির জালিওয়ালা দরজা খুলে উকি দিলো মুগ্ধ। আমাকে নম্রভাবে বলে উঠলো,
–জলদি ওঠো! হারি আপ!
আমি মুখ কুচকে শক্ত হয়ে আছি! আমি সিএনজিতে উঠলে মুগ্ধের সাথে যাবো না! আমি মুগ্ধের পাশে বসবো না! আমি হাতভাজ করে মুগ্ধের দিকে হাসি ছুড়ে বলে উঠি,

–তুমি না খুব ভালো?? আমার সব কথা শোনো!! এখন ভালো বাচ্চার মতো নামো তো মুগ্ধ!! তুমি না খুব কিউট করে কথা শুনতে পারো?? প্লিজ সিএনজি থেকে নেমে পড়ো!! আমি সিএনজিতে একা যাবো বুঝছো।। তুমি তোমার গাড়িটা চালিয়ে পিছুপিছু আসো ওকে??

মুগ্ধ ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। সিএনজি ড্রাইভারটাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধের কোনো হুহা হুশ হলো না। সে ঘাপটি মেরে আমার মতো হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
–গাড়িটা সিঙ্গেল থাকতে পারে। আমি না থুক্কু মানুষ না।। মানে মানুষ একা একা দুনিয়ায় থাকতে পারেনা। একটা সঙ্গী সরি! সাঙ্গু লাগে। এখন উঠো!

কথাগুলো বিরাট প্যাঁচ লাগিয়ে দিলো মাথায়। সঙ্গী সাঙ্গু হেনতেন কি বললো কিছুই বুঝলাম না। আমি অবুঝের মতো মুখভঙ্গি করলে মুগ্ধ সিটে বসা অবস্থায় হঠাৎ আমার হাত টান দিয়ে সিএনজিতে বসিয়ে ছাড়লো! হাতের কনুই ও পায়ের গোড়ালিতে একটুআধটু ব্যথা পেয়ে সিএনজিতে বসতেই সামনের সিট থেকে ড্রাইভার মামা হাত বারিয়ে জালি দরজা লাগিয়ে দিলো। মুগ্ধের কাছ থেকে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে আমি সিটের কোণায় চেপে বসি। মুগ্ধ আমার হাত ছেড়ে ওর চুলগুলো সামনে পেছনে করছে। সিএনজি হুরহুর করে চলছে। বাতাসের বেগ দুইসাইড থেকে আসছে প্রচুর। বাতাসের বেগের কারনে চোখ মেলে ঠিক করে তাকানো যাচ্ছেনা। চুলগুলো বারবার মুখ থেবড়ে পড়ছে। মুগ্ধের দিকে তাকালাম ওরও একই অবস্থা। সামনের চুলগুলো এলোপাথাড়ি কপাল ছুয়ে চলছে। হঠাৎ মুগ্ধ আড়চোখে আমাকে পরোখ করলো কিনা জানিনা ও তাচ্ছিল্যের সুরে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

–আচ্ছা তুমি আমার দিকে তাকাতে হিমশিম খাচ্ছো কেন? কি ব্যাপার? আমায় কি পান্জাবীতে বর বর লাগছে??

আমি মুখটা বিরক্তিতে চুবিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে উঠি,

–বুড়া বুড়া লাগছে বর না! চুপ ! একটা কথাও না! গাড়িতে বসেছি এটাই শোকর করো! বেশি করলে কান টেনে ছিড়ে নিয়ে আসবো! একদম চুপ !

মুগ্ধ হালকা হেসে ঠোটের মুখের ‘Zip up’ ভঙ্গি দেখালো মানে তালা লাগিয়ে বোঝালো। সিএনজি মামা সুযোগটা খুজছেন কিভাবে পেছন থেকে আমার কান্ডকারখানা দেখতে পারেন। কেননা এই গাড়িতে কোনো মিরর নেই। আচ্ছা মুগ্ধ আমায় সিএনজি করে কেন নিয়ে যাচ্ছে? কোনো বিশেষ কারন আছে? কোনো স্পেশাল মোটিভ? থ্রিলার মুভির মতো?? জিজ্ঞেস করা উচিত!

–এই শুনো!
মুগ্ধ হালকা কেশে গলা ঝেড়ে বলল,
–আমার বাবা-মা আকিকা দিয়ে ভালো নাম রেখেছে। আই হোপ তুমি ডিসেন্ট নামটা জানো!
–জানাজানির দিন শেষ!! আমার উপর কিসের জোর খাটাচ্ছো তুমি! কিসের !
–আচ্ছা মিস ফোর ইয়ার জুনিয়র, একটা জিনিস লজিক্যালি ভাবো তো। আমি যে তোমার বাসায় ঢুকে মেজর স্টেপে তামাশা করলাম তুমি কি পারতে না চিল্লাচিল্লি করে আশপাশের মানুষ ডাকতে? তুমি কি ডেকেছো? তাছাড়া তুমি নিজেও কোনো দিক দিয়ে কম না। পারলে আমার মতো চারটা কে মাটিতে শুইয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে পারো। কিন্তু জাস্ট থিংক, এসব খেয়াল তোমার মাথায় কি একফোঁটাও এসেছে? নো ! তুমি আমাকে মারা তো দূর আমার প্রতিটা কথা সভ্য মেয়ের মতো শুনেছো। যা বলেছি যেভাবে বলেছি সব করেছো। তাও বলছো আমি জোর খাটিয়েছি? হাসালে পাকনি।তুমি চাইলে আমাকে বাজেভাবে ইনসাল্ট করে তাড়িয়ে দিতে পারতে! জোর খাটালে তুমি চিল্লাহুল্লা করতে মাস্ট ! বাট দেখো তুমি কিছুই করোনি দশমিনিট বলেছি দশমিনিটেই রেডি হয়েছো। আরো বলবে জোর খাটিয়েছি? তাহলে বলো যাও। আমার তাতে যায় আসে না…যার যা চিন্তা ওটা নিয়েই পড়ে থাকুক, আই ডোন্ট কেয়ার।

মুগ্ধ ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গিতে হালকা নিশ্বাস ছাড়লো। আসলেই তো! আমি নিয়ম করে সব কথাই দেখি শুনেছি! কেন শুনেছি? মাথা কি আউট হয়ে গেছে? মুগ্ধকে ধরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছি আমি! সেই মেয়ে আজ ওর কাছে নুয়ে মুড়ে সব কথা শুনলো? কি বেক্কল আমি ! মাথা তো দেখি টোটালি গেছে ! আমি চিন্তাভাবনার দেয়াল বানিয়ে ওকে আবার শক্ত গলায় বলে উঠি,

–শোনো এখন! কান পরিস্কার করে শোনো, আচ্ছা আমার বাসায় কোন রাইটে এসেছো ? কি তোমার অধিকার ! কোন দাসত্বের দাপট দেখিয়ে নিজের মনমর্জিমতো আমায় রেডি করালে? তাও হুট করে সিএনজি! মতলব কি তোমার ? কি মতলব !

মুগ্ধ ম্যাজিশিয়ানদের মতো রহস্যজনক হাসি দিলো। খুবই রহস্যজনক হাসি। এই হাসিটা তখন ইউজ হয় যখন কেউ সামনের মানুষকে বোকা বানিয়ে দেয় এবং মারাত্মক কঠিন কিছু লুকিয়ে বেড়ায়! এমন কিছু লুকোয় যেটা শুনলে হয়তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাবে! আমি ওই রহস্যজনক হাসিটার মানে বুঝতে পারছিলাম না। একদম না। কি আছে সামনে? মুগ্ধ কি খারাপ কিছু পরিকল্পনা করেছে? প্রতিশোধের আগুন তবে আজ নিভিয়ে ছাড়বে ?? আমি যা খারাপ বিহেব করতাম তার প্রতিশোধ নয়তো….

-চলবে❤

-Fabiyah_Momo

#তুমিময়_প্রেম ♥
#PART_15
#FABIYAH_MOMO?

?♥
শান বাজিয়ে ছুটছে গাড়ি। মাথার উপর সূর্যের দারুন দাপট। সিএনজির ভেতরে খাচায় বন্দি পাখির মতো লাগছে আমার। ওদিকে মুগ্ধ মুচকি হেসে হেসে ফোন টিপে চ‍্যাটিং করছে। কার সাথে প্রেমালাপ করছে ও-ই জানে! বেটা খাটাশ কোথাকার! ধরে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে! যাত্রাবাড়ি এবং সায়েদাবাদের জ‍্যাম কাটিয়ে আমরা বিশ মিনিটের মাথায় ক‍্যাম্পাসে এসে পৌছলাম। মুগ্ধ ভাড়া চুকাচ্ছে। আমি সিএনজি থেকে নেমেই ওকে রেখে হনহন করে ক‍্যাম্পাসে ঢুকে গেলাম।

পুরো ক‍্যাম্পাস আজ বর্নিল সাজে সেজেছে। জাকজমকপূর্ন পরিবেশ। সেই সাথে ফুল বিটে গান বাজনা তো আছেই। সবার পোশাক আশাকে আজ অন‍্য একটা মার্ধূয‍্য ফুটে উঠেছে। মেয়েরা বাহারি রঙের শাড়ি পড়ুয়া।মাথায় ফুলের তোড়া। ছেলেরা একেক রঙের পান্জাবীতে! চোখ আমার খুশি আমোদিত লাগছিলো নবীন বরন উৎসব দেখে। এতো ভিড়, এতো কোলাহল তার উপর গানের উচ্চ আওয়াজ…সব মিলিয়ে জমজমাট অবস্থা। হৈ হুল্লোড় করে স্টেজ মাতিয়ে নাচছে একদল। মিউজিক ছিলো হিন্দি গানের….তাম্মা তাম্মা সং। মানুষের হৈচৈয়ের মধ্যেই আমার মনে হলো কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে। পিছনে ফিরে চোখ বুলাতেই দেখি তন্ময় আমার দিকে দ্রুত পায়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসছে। তার পোশাকও আজ চমৎকার লাগছে। মেয়েরা মুগ্ধের পাত্তা না পেলে তন্ময়ের দিকে তাকাতে সময় নিবেনা। কালো পান্জাবী পড়নে। বুকের কাছে দুটা বোতাম খোলা। হাতা ভাজ করা। বাম হাতে বড় কালো ঘড়ি। সাদা গ‍্যাবার্ডিন প‍্যান্ট। চুলগুলোতে জেল বসানো দাড়িয়ে আছে।। তন্ময় চুলের কানের পাশটা হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে আমার এসে দাড়ালো। মুখ জুড়ে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,

— হেই মিস! হোয়াটস আপ! ইউ আর লুকিং অস্থির!
আমি ওর প্রশংসা শুনে বিরক্তবোধ করলাম। কারন, ওর চোখের চাহনি ভালো না, ও সর্বত্র চোখ দিয়ে আমাকে আপাদমস্তক দেখছে। তন্ময় উত্তর না পেয়ে আবার বলল,
— হেই আজও তুমি মুখের পটকা ফুলিয়ে রাখবে? একটু হাসো! হাসলে কত বিউটিফুল লাগবে জানো? গিভ মি এ‍্যা স্মাইইইললল…
ওর কথা শুনে ব‍্যাঙ্গ করে ছোট বাচ্চার মতো বললাম,
— ভ‍্যা ভ‍্যা ভাইইই….তোর টা তুই দে! খরবদার আমার সাথে ভাব জমাতে আসবি না। তোদের একটাকেও আমার সহ‍্য না! তোদের লিডারকে বলিস আমার পিছে ঘুরে সময় নষ্ট না করতে! শুনছিস? মনে থাকে যেনো!

তন্ময় বোকার মতো চোয়াল ঝুলিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। মমর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, এই মেয়ে কি জীবনে গলবে না…এইটাকে মেয়ে না বানিয়ে ছেলে বানালে ঠিক হতো…কি আস্তা একটা পাষাণ হার্টের মানুষ…ইমোশন বলতে ইমোশন কাজ করেনা। অন‍্য মেয়েকে এমন তারিফ করলে গদগদ হয়ে যেত আর এই মেয়ে! ড‍্যামিশ গার্ল ! তন্ময় মমকে নিয়ে রাগী গলায় উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকে। তন্ময়কে ইগনোর করার কারনে তন্ময়ের মধ্যে মারাত্মক রাগ কাজ করছে..

— তুই কাকে ড‍্যামিশ গার্ল বললি ইয়ার! এইদিকে তাকিয়ে বলতো…

পাশ থেকে কারোর গলার আওয়াজ পেয়ে পাশে তাকায় তন্ময়। তাকাতেই গলার স্বর মিনমিনে হয়ে রাগ ভষ্ম হয়ে যায় তার। মুগ্ধ পান্জাবীর পকেটে হাত ঢুকিয়ে ভ্রু উচু করে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধের মুখের ভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে তন্ময়ের কথা সবই শুনেছে ও বুঝেছে। ভয়ে তন্ময় ঢোক গিলে একটা জোরপূর্বক হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলো। অতপর বলে উঠলো,

— ডড‍্যামিশ?? না তো বন্ধু।। কে বলছে?? কোন শালায় বলেছে রে…?যেই ভিড়! ‘ড‍্যামিশ’ বলা শালারে খুজবি কেমনে?
মুগ্ধ পকেট থেকে হাত বের করে তন্ময়ের বা কাধে জোরে হাতটা রাখলো। তন্ময় চমকে উঠলো কিছুটা কিন্তু ভেতরে যে ভয় পাচ্ছে তা বুঝতে দিলো না। মুগ্ধ আরেকহাত দিয়ে তন্ময়ের চুল ঠিক করার ব‍্যস্ততা দেখিয়ে বলে উঠলো,
— ভিড়ের মধ্যে কোন্ শালা বলছে মুগ্ধের কানে অবশ্যই গেছে। তারপরও ওই শালারে একটু স্পেশাল ওয়ার্নিং দিস! বলবি রাদিফ মুগ্ধের জিনিসের দিকে চোখ আর মন্তব‍্য না দিতে! যা দেওয়ার..চোখ,মন্তব্য ওইগুলো আমি-ই দিবো।। বুঝছিস তো ইয়ার? জিনিসটার জন‍্য হাই লেভেলে ডেম্পারেট!

তন্ময়ের মুখ ভয়ে ফ‍্যাকাশে আকার ধারন করেছে তবুও একচিলতে হাসি দিয়ে আছে। কারন মুগ্ধের সামনে এমতাবস্থায় না হাসলে বিপদ! মুগ্ধ চুলগুলো সম্পূর্ণ এলোমেলো করে কাধ থেকে হাত সরাতেই বলে উঠলো,

— কুইক.. স্টেজটা খালি কর তো! পাচঁ মিনিটের মধ্যে খালি করার ব্যবস্থা কর! আজকে কিছু করার ইচ্ছা আছে বুঝলি!! পুরোনো একটা হিসাব এখনো চুকানো বাকি।

বলেই বাকা হাসলো মুগ্ধ। তন্ময় অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের দিকে। ভেবে পাচ্ছেনা মুগ্ধের বদলে যাওয়া রূপের রহস্য।। কেন্ সে ইদানিং অন্যরকম করছে।

সবাই ধুমিয়ে নাচানাচি করছিলো হঠাৎ সাউন্ড বক্সটা অফ হয়ে হলো। উপস্থিত জনতার সবাই একপ্রকার খ্যাকিয়ে উঠলো। রিমি, জেনি, আহাদ, নাসিফ সবাই চত্বরের এক কোনা জুড়ে নাচানাচি করছিলো হঠাৎ গান বন্ধ হওয়াতে ওরাও থেমে গেলো। রামিম অস্ফুট কন্ঠে চেচিয়ে বলল, কোন্ আবালে গানটা বন্ধ করলো! কলিজা কতো বড়ো গানের সুইচে হাত লাগায়! রামিমের বকবক চলতে থাকলে হুট করে স্টেজে এন্ট্রি নিলো মুগ্ধ। রামিম কথা বলতে বলতে ঘুরে স্টেজের দিকে তাকাতেই জিহবায় কামড় দিয়ে বসলো! মুগ্ধ মাইক হাতে স্টেজে উঠৈ সবাইকে শান্ত হতে বলল। সবাই শোরগোল থামালে মুগ্ধ মাইক মুখের কাছে এনে বলে উঠে,
— সালাম আদাব নমস্কার সবাইকে!! কেমন কাটছে নবীন বরন উৎসব???
সবাই একযোগে চিৎকার করে বলল,
— ভালো!!
মুগ্ধ হালকা হেসে স্টেজে হাটতে লাগলো। হাটতে হাটতেই বলে উঠলো,
— গানটা হুট করে অফ করে দিয়েছি বলে মানুষ দেখি আমায় গালাগাল করছে!! ওহ্ মাই গড! আমি কি আপনাদের আনন্দে বেশি সমস্যা করে ফেলেছি গাইজ??
আগের মতোই সবাই চেচিয়ে বলে উঠলো,
— না!!
মুগ্ধ মাইকটা বা হাতে নিয়ে ডান হাতটা পকেটে পুড়ে নিলো। এরপর মুচকি হেসে বলে উঠলো,
— সবাই খুব এক্সাইটেড তাইনা!! রাদিফ মুগ্ধ কি করবে…নিউ কি করবে!! সবার মধ্যে দেখি এমন টাইপ ফিলিং কাজ করছে!! আচ্ছা আচ্ছা আমি আর ওয়েট না করাই। ডিরেক্ট কথাতে যাই কেমন!! একচুয়েলি এই বদমাইশ, গুন্ডা, বদ ছেলেটা কনফেস করতে এসেছে। হু সত্যি! অবাক হবেন না প্লিজ!! আমি সত্যি কনফেশান দিতে এসেছি। ভার্সিটি লাইফের লাস্ট ইয়ার কাটাচ্ছি। এবারই আমাদের ভার্সিটি ইয়ার শেষ। দেখতে দেখতে সময় কিভাবে গেলো জানি না, কিন্তু এই শেষ বছরটা অদ্ভুত কিছু দিয়েছে আমায়। আমি আজ তিনটা কনফেশান দিতে এসেছি। টোটাল তিনটা। এখান থেকে একটা আমার ফিউচার লাইফ সংক্রান্ত। বাকি দুইটা লাইফ নিয়ে বললেও বলতে পারেন যে মাস্তি ফান ছিলো। আচ্ছা আর কথা না বাড়িয়ে মেইন টপিকে আসি….

সবার মাঝে পিনপতন নিরবতা। কেউ একটা শব্দও করছেনা। রিমি, জেনি, পুরো হার্ন্টাস গ্যাং একধ্যানে মুগ্ধের কথা শ্রবন করছে। আমি স্টেজ থেকে দূরে গাছতলার কাছে দাড়িয়ে আছি। এখান থেকে স্টেজটা দেখতে পুরো স্পষ্ট।
— আমার কনফেশান নাম্বার এক. আমি ভার্সিটি লাইফে যতটা উগ্র আছি, রিয়েল লাইফে পরিবারের কাছে ঠিক ততোটাই নরম। কাজেই ভার্সিটির শিক্ষকগনকে আমি ছোট্ট পরিবার মনে করি। তাই তাদের কাছে নরম। অনেকের মনে প্রশ্ন, প্রিন্সিপাল আমার বিরুদ্ধে কেন নালিশ শুনেন না। আর শুনলেও কেন এ্যাকশান হিসেবে মামলাকারীকে রেস্ট্রিক্ট করা হয়। উত্তরটা হলো তারা আমাকে শ্রদ্ধা করেন। ভালোবাসেন তারা। তবে কেন শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসেন তা আমি সেটা বলবো না!! আপনারাই ঘেটেঘুটে জেনে নিয়েন…হা হা হা…

মুগ্ধের কথায় সবাই খুব মন দিয়ে শুনলেও শেষের কথাতে সবাই ভ্রু কুচকে যার যার পাশের জনের দিকে তাকালো। শুধু প্রিন্সিপাল স্যার হো হো করে হেসে দিলো। কারন কি বুঝলাম না!!
–আমার কনফেশান নাম্বার দুই. আমার বিপক্ষ দলের নেতার সাথে আমি একটা চিটিং করেছি। চিটিংটা বলতে গেলে বিগত তিনবছর ধরে করছি কিন্তু কেউ সেটা ধরতে পারেনি। যাইহোক আজ সেটা খুলে বলবো। ক্যাম্পাসে ‘ছাত্রনায়ক’ বা ‘ছাত্রনেতা’ হিসেবে যে নির্বাচন হতো সেখানে আমার দলের কজন ছেলে বিপক্ষ দলের ব্যালেট বাক্স গায়েব করে দিতো। তার বদলে সেই ব্যালেট বাক্সে ভরে দিতো আমার নামের ব্যালেট পেপার। যার ফলাফল হতো এই প্রতিবছর আমি সেই নির্বাচন জিততাম। বিপক্ষ দলের মেহেদি মাহবুব নাহ্। কারা অবশ্য আমার কাজে হেল্প করতো সেটা আমি মরলেও বলবো না…ইটস সিক্রেট!

এবার প্রিন্সিপাল স্যারের হাসির সাথে যোগ দিলো ফিসফিসানি হাসির শব্দ। কিন্তু কারা হাসছে ভিড়ের মধ্যে বুঝা বড় দায়!! বিপক্ষ দলের মাহবুবকে দেখে বুঝা গেলো রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেছে! সাঙ্গু পাঙ্গুর দল তাকে ঠান্ডা হতে বলছে।

— গাইজ?? এই কনফেশানটা না করলে চলে না?? আমার প্রচুর নার্ভাস লাগছে। আই নো, আমার মতো ট্রিপিক্যাল ছেলের মুখে এই কথা মানায় না। বাট আই কান্ট ডু! দেখুন…হাতও কাপছে। ভাবা যায়?? এই হাত দিয়ে কতো কান থেতলিয়ে মেরেছি! সেই হাতই কথা বলার জন্য কাপছে!!

মুগ্ধ মুখ থেকে মাইক সরিয়ে জোরে জোরে চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ছাড়ছে। সবাই খুব উদগ্রীব হয়ে আছে মুগ্ধ কি বলবে! হঠাৎ দেখি মেয়েরা নিজেদের মধ্যে কানাঘুসো শুরু করলো। কয়েকটা মেয়ে বলছে, শোন শোন!! আমার যা মনে হচ্ছেনা!! মুগ্ধ দ্যা সিনিয়র ভাই কাউকে প্রোপ্রোজ করবে বুঝলি!! আমার মন বলছে আজ কাউকে প্রোপ্রোজ করবেই!! আরেকটা মেয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ধুর ছাই! কি যে বলিস না! এই বেটা কারোর প্রেমে পড়বে?? তুই কুয়োয় ডুব দিলেও বিশ্বাস করবো না। পাশেরজন বললো, কেন? তোর আবার এই ধারনা কেন হচ্ছে?? তুই দেখোস নাই মুগ্ধ ডেভিল ইদানিং চুপিচুপি কি নিয়ে যেনো মনমরা থাকে?? প্রেমে পড়লেই এমন হয় ছাগল! মিলিয়ে নিস দেখিস! সবার কানাকানি চলতে থাকলে মাইক তুলে ফের হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিতে বলে উঠে মুগ্ধ,

— হুহ্…অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটাই তাহলে!! আমার কনফেশান নাম্বার তিন. বলতে গেলে আমি এমনেতে চুপচাপ কিন্তু কাজের বেলায় বাচাল। এটা সবাই জানে অবশ্য আমায় যারা চেনে। কিন্তু রিসেন্ট কি হচ্ছে জানেন? আমি কাজের বেলায় চুপ। অন্যবেলায় বাজ খাই অবস্থা। রোটেশন কিভাবে ঘুরলো কেউ বুঝতে পারছেন? রোটেশনটা কখন মানুষের জন্য হয় সেটা তো ধরতে পারবেন?? রোটেশন হচ্ছে ঘূর্নন! কিন্তু একটা মানুষের মধ্যে হুট করে রোটেশন ধরা পড়লে বিরাট প্রবলেম! সে দিন টু রাত ভুলে এমন একটা সিচুয়েশনে ফাসে যেটা তাকে বেহাল করে ছাড়ে। আমারো একই অবস্থা। দেখুন…চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়তে শুরু করেছে, গাল পাতলা হয়ে যাচ্ছে। মোটকথা মুগ্ধ এখন কিছু একটার মুগ্ধতায় উপচে পড়েছে।। ব্যাপারটা আরো ক্লিয়ারলি বুঝাই তাহলে বুঝবেন। আগে আমি পান থেকে চুন খসতে দেখলেই হুংকার দিয়ে উঠতাম। এখন পান থেকে চুন খসে গলে পড়ে যায় তাও আমার হুশঁজ্ঞান নেই। আমার এমন হাল কেনো হয়েছে বুঝেছেন তো? মানুষ লাইফে যেটা নিয়ে ভয়ে থাকে সেটাই তাকে গিলে ধরে। আমাকে গিলে ধরে তো গলাধকরন করে ফেলেছে। কি ডেন্জারাস দেখছেন?? কিসের মুগ্ধতায় এই মুগ্ধ এখন এলোমেলো হয়েছে…ইশারাটা আই হোপ বুঝে নিবেন।। আমার কনফেশান কিন্তু শেষ।। বিজ্ঞ বিজ্ঞ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষগুলা মেবি বুঝে নিয়েছেন। ধন্যবাদ!!

মুগ্ধের তিন নাম্বার কনফেশান নিয়ে আমি বাদে সবাই মিটিমিটি হাসছে। আমার সামনে দাড়ানো মেয়েদের গ্রুপটা আবারো গমগমে গলায় বলে উঠলো, ‘কিরে ফকিন্নি! দেখলি তো বেটা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!’ পাশে থাকা আরেকটা মেয়ে মুখের কথা ছিনিয়ে বললো, ‘আরে হারামীর দল! মেয়েটা কে ওইটা ভাবছোস? ওই মেয়েটা তো তুইও হতে পারিস! আমিও হতে পারি! বেটা কথা যে বললো বলতে গিয়েও কোয়েশ্চ্যান মার্ক মারলো।’ মেয়েগুলো নিজেদের মধ্যে হায়হায় করতে লাগলো। কেনো মুগ্ধ বিস্তারিত বললো না!! আমার পানির পিপাসা পেয়েছে। ঠা ঠা রোদে দাড়িয়ে থেকে গলা শুকিয়ে কাঠ। আমি পানি খেতে ওডিটোরিয়ামের উদ্দেশ্যে যাই। ওখানে লিখাই আছে ‘খাবার পানীয় ব্যবস্থা(ফিল্টারকৃত)’। আমি ওডিটোরিয়ামের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলে সাউন্ড বক্স আবারো মাতিয়ে বাজানো শুরু হয়। ভলিউম আগের তুলনায় তিনগুন বেশি। একতালু দূরত্ব থেকে কেউ যদি কথা বলে তাও কারোর কানে পৌছাবেনা। আমি কানে হাত চেপে চত্বর পেরিয়ে ওডিটোরিয়ামে ঢুকে যাই। উফ! শান্তি! এখানে সাউন্ড কিছুটা কম আসছে। কেননা চত্বর কি আর কম ছোট?? একটা উঠান সমান জায়গা ছিলো! আমি আচল দিয়ে কপালে আলতো চেপে ঘাম মুছে চলছি। একটা টেবিলের উপর ফিল্টার রাখা। ফিল্টারের সাথেই সারি সারি স্বচ্ছ পরিস্কার গ্লাস সাজানো। পানি খেতেই হঠাৎ আমার কাধে কেউ হাত রাখলো! তখন কেবল গ্লাসে চুমুক দিয়ে একঢোক গিলেছি! সেই হাতের স্পর্শ কাধ ছুয়ে ছুয়ে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে লাগলো। হাতের স্পর্শ পেয়ে আমার চোখ আটকে স্থির হয়ে গেছে! চুমুক বসানো পানির গ্লাস থরথর করে কাপতে লাগলো! তার স্পর্শ থামছেনা! আঙ্গুলের ছোয়া আমার শরীরে বসিয়ে ধীরেধীরে কোমরের দিকে যাচ্ছে! আমার সমস্ত তখন ভয়ের কারনে কাবু হয়ে শিরশির করছিলো! কি হচ্ছে আমার সাথে!

-চলবে?

-Fabiyah_Momo?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here